Friday 16 August 2019

ইখওয়ানীদের মিশর শাসনের হালহকিকত


মিশরের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সা‘ঈদ রাসলান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৯৫৫ খ্রি.] মুসলিম ব্রাদারহুডের মানহাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন,
حقوق المسلمين كبيرة جدًا، وحرمة المسلم عند الله أعظم من حرمة الكعبة، وحرمة المسلم عند الله جلّ وعلا أعظم من حرمة الكعبة، فماذا تنتظر؟ لو هدمت بنيان المسلم لكان أعظم إثمًا عند الله وأكبر ذنبًا من أن تأخذ مِعولا ثم تصعد الكعبة من أجل أن تهدمها حجرًا حجرًا، فهدم الكعبة أقلّ إثمًا عند الله من قتل المسلم، تقتل مسلمًا بغير حق! ومع ذلك فقد استحل أقوام قتل المسلمين، قتلًا أشوائيا من غير تفرقة، وكنا نجادلهم قديمًا في منتصف السبعينيات وما حولها، فكان التكفيريون يقولون: إنه يجوز أن يقتل الواحد منهم مفجرًا المركبةَ التي تحمل الناس، القطار الذي يستقله الناس، الموطن الذي يكون الناس فيه مجتمعين، فكنا نتعجب، نقول: قد يكون مع هؤلاء المقتولين الذين حكمتم بكفرهم، قد يكون معهم من هو مثلكم، من هو معكم على طريقتكم الباطلة واعتقادكم الفاسد، فكانوا يقولون: يموتون على ذلك ويبعثون على نياتهم، عندهم لكل مسألة تأويل عندهم لكل معضلة تخريج، عندهم لعب بالنصوص، كالخراطين في الأسواق، يلعبون بالنصوص وهم ليسوا من أهل العلم أصلًا، لأن الخوارج لا علمَ عندهم ولا فهمَ لكتاب الله، كما قال رسول الله ﷺ: يتلون كتاب الله لا يجاوز تراقيهم، أي لا يجاوز حناجرهم كما في رواية عن النبي ﷺ، فهؤلاء يرتلون أيات الله، يتلون كتاب الله ولا يفهمون المعاني ولا يتدبرون في المقاسد، ولا تنزل هذه الآيات الشريفات إلى قلوبهم، فتحدث فيها ذكرًا وذكرًا، لأنهم لا يفقهون ولا يعون، الخوارج هذا شأنهم كما قال رسول الله ونحن نعلمهم علم يقينٍ، ما أكثر ما رأينا مثل أولئك الخوارج، وهم المنتشرون تحت أسماء شتى: القاعدة، الجماعة الإسلامية، الإخوان المسلمون، كل هؤلاء من الخوارج، الذين قال فيهم رسول الله ﷺ: هم كلاب النار، هم كلاب النار، هم كلاب النار، وهم يتعودونكم يوم الجمعة المقبل بالخراب، جمعة خراب مصر، جمعة حرق مصر، ما ذنب ما يحرق؟ ما ذنب ما يخرب؟ ما هي المشكلة؟ ومع من؟ هذه المشكلة مع من؟ ثم من الذي يفتعلها؟ سيقول لك: لإقامة الدين وتطبيق الشريعة، قد كنتم في الحكم عامًا، فما الذي طبقتموه من الشريعة؟ كانت الكباريهات في شارع الحرم وغيره، لا تتحصلوا على الرخصة إلا كل عامَين، وفي عهد الإخوان جعلوها كل ثلاثة أعوام، كانت الخمور تفرض عليها الضرائب، ولا يعلم الناس أسمائها، فنزلت القائمة بالأسماء فعلم الناس أنواعًا من الخمور لم يكونوا يعلمونها، في كتاب «التربية القومية» للسنة الثانية الثانوية –وارجع إليه في الصفحةِ الحادية والثانية أو الرابعة والستين– تجد الحديث هكذا، في كتاب كتب، بمعرفة وزارة التربية والتعليم في ذلك العام، ماذا كتب؟ كتب يقول: من بدل دينه فاحترموه، والرسول يقول: من بدل دينه فاقتلوه، وهم يكتبون في عهد الإخوان: من بدل دينه فاحترموه، وتحتها –إرجع إليه– في كتاب «التربية القومية» للسنة الثانية الثانوية –وارجع إليه في الصفحةِ الحادية والثانية أو الرابعة والستين– إلى غير ذلك من النصوص من التوراة والإنجيل، فجعلوا ذلك مبثوثًا في ذلك الكتاب، وكتب تحت قوله: من بدل دينه فاحترموه، لأن لكل إنسان الحق في أن يختار من الدين ما يشاء، ما شاء الله، هذا كفر، هذا هو الدين؟! الحدود، كما قال الرئيس الإخواني في أثناء الفترة التمهيدية لأمور الرئاسة وقبل الإنتخابات، يقول: الحدود ليس لها وجود في الشريعة، هذه عمليات ديناميكية، من أنكر الحدود كفر، أي شيء هذا؟ تلعبون بالدين؟! تتاجرون ببشائر الوسطاء المساكين؟! ما الذي يريدون أن يصنعوا يوم الجمعة؟ قالوا: سنخرب مصر، سنحرق مصر، سيخرجون بعد صلاة الفجر، هنا وهنالك في مصر، ويريدون فجورًا، أن ينفصلوا بالصعيد: جمهورية مصر العليا، مصروع الإنفصال، وهذا الأمر معلوم، والإستمارات موجودة وكانت توزع جهارًا نهارًا، من أجل إنفصال الصعيد من مصر، نعم، مينا موحد القطرين، ومحمد مرسى مفرق القطرين.
“মুসলিমদের সুবিশাল অধিকার রয়েছে। একজন মুসলিমের মর্যাদা আল্লাহ’র কাছে কা‘বাহগৃহের মর্যাদার চেয়েও বেশি। একজন মুসলিমের মর্যাদা মহামহিমান্বিত আল্লাহ’র কাছে কা‘বাহগৃহের মর্যাদার চেয়েও বেশি। সুতরাং তুমি কী প্রত্যাশা করছ? তুমি যদি একজন মুসলিমের বাড়ি ধ্বংস করো, তবে তা আল্লাহ’র কাছে অধিক পাপের এবং অধিক গুনাহর কাজ হবে এই কাজের চেয়ে যে, তুমি একটি কুঠার নিয়ে কা‘বাহগৃহের উপর আরোহন করবে, তা পাথরের মতো টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলার জন্য! কা‘বাহ ধ্বংস করা আল্লাহ’র কাছে একজন মুসলিম হত্যার চেয়ে অধিকতর কম পাপের কাজ। অথচ তুমি অন্যায়ভাবে মুসলিমকে হত্যা করছ?! এতৎসত্ত্বেও একদল লোক মুসলিমদের হত্যা করা বৈধ করে নিয়েছে। কোনো বাছবিচার ছাড়াই যথেচ্ছভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা বৈধ মনে করছে।

আমরা এদের সাথে বহুপূর্বেই ৭০ দশকের মাঝের দিকে বিতর্ক করেছি। তখন তাকফীরীরা বলত, ‘তাদের যে কারও জন্য মানুষ বহনকারী গাড়িতে, মানুষ আরোহন করে এমন ট্রেনে এবং মানুষ জমায়েত হয়েছে এমন জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ করে মানুষ হত্যা করা জায়েজ।’ আমরা অবাক হয়ে বলেছিলাম, ‘যেই নিহত ব্যক্তিদেরকে তোমরা কাফির ফাতওয়া দিয়েছ, তাদের সাথে তো তোমাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তিরাও থাকতে পারে। তাদের সাথে তোমাদের বাতিল পন্থা ও নষ্ট ‘আক্বীদাহর উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গও থাকতে পারে।’ তখন তারা বলেছিল, ‘তারা এই অবস্থায় মারা যাবে, আর তাদের নিয়্যাতের ভিত্তিতে পুনরুত্থিত হবে।’ তাদের কাছে প্রত্যেকটি মাসআলাহ’র তা’উয়ীল (অপব্যাখ্যা) রয়েছে, প্রত্যেকটি সমস্যার একটি সমাধানপূর্ণ ব্যাখ্যা আছে। তারা কুরআন-সুন্নাহ’র নস (টেক্সট) নিয়ে খেলা করে। যেমনভাবে বাজারগুলোতে কেঁচো নিয়ে খেলা করা হয়। তারা কুরআন-সুন্নাহ’র নস (টেক্সট) নিয়ে খেলা করে।
প্রকৃতপক্ষে তারা ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা খারিজীদের ‘ইলম নেই, আল্লাহ’র কিতাবের সমঝ নেই। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না।” (সাহীহ বুখারী, হা/৩৬১০; সাহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪) তারা আল্লাহ’র আয়াতসমূহ পাঠ করে। তারা আল্লাহ’র কিতাব তেলাওয়াত করে। কিন্তু তারা অর্থ বোঝে না, তারা এর উদ্দেশ্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে না। আর এই মহান আয়াতসমূহ তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। ফলে তাদের অন্তরে এগুলো উপদেশ তৈরি করেনি। কেননা তারা এগুলো বুঝেও না, আর উপলব্ধিও করে না। খারিজীদের এই অবস্থা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন। আর আমরাও তাদের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে জানি। আমরা তাদের মধ্যে কত খারিজীই না দেখেছি!
তারা বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন: আল-কায়েদা, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম ব্রাদারহুড; এরা সবাই খারিজী। যাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তারা জাহান্নামের কুকুর, তারা জাহান্নামের কুকুর, তারা জাহান্নামের কুকুর।” (ইবনু মাজাহ, হা/১৭৩; সনদ: সাহীহ)
তারা (ব্রাদারহুড) আগামী শুক্রবার (মিশরে) ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের হুমকি দিয়েছে। মিশর ধ্বংসের শুক্রবার, মিশরকে জ্বালিয়ে দেওয়ার শুক্রবার। যা জ্বালিয়ে দেওয়া হবে তার অপরাধ কী? যা ধ্বংস করা হবে তার অপরাধ কী? কী সমস্যা? আর কাদের সাথে? এই সমস্যা কাদের সাথে? আর এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে কে বা কারা? তারা তোমাকে বলবে, এগুলো দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও শরিয়ত বাস্তবায়নের জন্য করা হচ্ছে। তোমরা এক বছর শাসনক্ষমতায় ছিলে। কিন্তু তোমরা শরিয়তের কী বাস্তবায়ন করেছ? আল-হারাম স্ট্রিট ও অন্যান্য জায়গায় ক্যাবারেটস [রেস্তোরাঁ, নাইটক্লাব প্রভৃতিতে পানাহাররত অতিথিদের সামনে আয়োজিত বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান – সংকলক] ছিল। প্রত্যেক দুবছরের মেয়াদ ছাড়া তোমরা এর অনুমতি লাভ করতে পারতে না। আর ব্রাদারহুডের শাসনামলে তারা প্রত্যেক তিন বছরের মেয়াদে অনুমতি নেওয়ার নিয়ম চালু করে।
মদের ওপর ট্যাক্স নির্ধারিত ছিল। মানুষ বিভিন্ন ধরনের মদের নাম জানত না। অথচ বিভিন্ন ধরনের মদের নাম-সহ লিস্ট বের করা হলো, ফলে মানুষ এগুলোর নাম জানতে পারল, যা তারা আগে জানত না। উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের “আত-তারবিয়াতুল ক্বাওমিয়্যাহ” বইয়ে—আপনি ৬১, ৬২ বা ৬৪ পৃষ্ঠায় দেখুন—আপনি এরকম কথা পাবেন। সে বছর (মিশরে ব্রাদারহুডের শাসনামলে) শিক্ষা ও শিক্ষাদান বিভাগ সম্পর্কে জানার জন্য যেই বইটি লেখা হয়েছিল, সেই বইয়ে এমন কথা আছে। কী লিখেছে? বইয়ের লেখক লিখেছে, “যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে তোমরা সম্মান করো।” অথচ রাসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে তোমরা হত্যা করো।” (সাহীহ বুখারী, হা/৩০১৭)
তারা ব্রাদারহুডের শাসনামলে লিখেছে, “যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে তোমরা সম্মান করো।” উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের “আত-তারবিয়াতুল ক্বাওমিয়্যাহ” বইয়ে—আপনি ৬১, ৬২ বা ৬৪ পৃষ্ঠায় দেখুন—এই কথার নিচে তাওরাত ও ইনজীল থেকে বেশ কিছু নস (টেক্সট) নিয়ে আসা হয়েছে। তারা এগুলো ওই বইয়ে প্রচার করছে। ওই বইয়ের লেখক তার এই কথা—“যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে তোমরা সম্মান করো”– এর নিচে লিখেছে, “কেননা প্রত্যেক মানুষের স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী নিজের জন্য যে কোনো ধর্ম পছন্দ করার অধিকার রয়েছে।” মাশাআল্লাহ। এটা কুফর! এটা কি দ্বীন?!
শরিয়তের দণ্ডবিধির ব্যাপারে ইখওয়ানী প্রেসিডেন্ট (মুরসী) নেতৃত্বের বিষয়াদি প্রস্তুত করার সময় এবং নির্বাচনের পূর্বে বলেছেন, “শরিয়তে হুদূদ তথা দণ্ডবিধির কোনো অস্তিত্ব নেই। এগুলো প্রগতিশীল কর্মাবলি।” অথচ যে ব্যক্তি দণ্ডবিধি অস্বীকার করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। তাহলে এসব কী? তোমরা দ্বীন নিয়ে খেলা করছ?! তোমরা সাধারণ দরিদ্র মানবতার ইমোশন নিয়ে বাণিজ্য করছ?! তারা শুক্রবারে কী করতে চায়? তারা বলে, আমরা মিশর ধ্বংস করব, আমরা মিশর জ্বালিয়ে দিব। তারা ফজরের নামাযের পর মিশরের এখানে-ওখানে বের হবে। তারা অন্যায় কর্ম সম্পাদন করতে চায়। তারা নিজেদের ভূমি ‘দ্য সুপ্রিম রিপাবলিক অফ ইজিপ্ট’– কে আলাদা করতে চায়। ভূমি আলাদা করার প্রজেক্ট।
এটি সুবিদিত বিষয়। বিবরণপত্র মজুত রয়েছে, যা প্রকাশ্য দিবালোকে বিলি করা হয়েছে, মিশরের জমিনকে আলাদা করার জন্য। মেনেস [প্রাচীন মিশরের রাজা, যিনি ৩১০০ খ্রিষ্টপূর্বে মিশরের রাজা হয়েছিলেন – সংকলক] হলেন মিশরের দুই অংশকে একত্রিতকারী। আর মুহাম্মাদ মুরসী হলেন দুই অংশকে আলাদাকারী।”
·
উৎস: বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপটি ইউটিউব থেকে সংগৃহীত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...