Thursday 11 October 2018

সাইয়েদ কুতুব

আস'সালামু আ'লাইকুম ওয়া রাহ'মাতুল্লাহি ওয়া বারা"কাত্বহ।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-র জন্য এবং অসংখ্য সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি।
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা,
আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি ইখোয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড), জামাতে ইসলামী, বা এমন অন্যান্য চরমপন্থী দলগুলোর আদর্শ গুরুদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তিত্ব " সাইয়েদ কুতুবের "আকিদা, মানহাজ এবং তার সম্পর্কে যুগ শ্রেষ্ঠ উলামাদের মতামত সম্বলিত প্রবন্ধ নিয়ে!
দ্বীন কায়েম, খিলাফত প্রতিষ্ঠা, ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত ‘ইসলামিক আন্দোলন’ এর মতাদর্শ প্রচারকারী এবং খাওয়ারিজদের ধর্মীয় গুরু হিসেবে পরিচিত "সাইয়েদ কুতুবের" নাম টা শুনে নি এমন মানুষ কম ই পাওয়া যাবে! কেউ কেউ তাকে "শহিদ কুতুব " বলেও অভিহিত করেন!
যাইহোক, "কে এই কুতুব "সেই সম্পর্কে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব (ওয়া'মা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ)
❒ কুতুবের জন্ম ও শৈশবঃ
-------------------------------------
সাইয়েদ কুতুব ১৯০৬ সালে মিসরের উসইউত জেলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন! সাইয়েদ কুতুবের মূল নাম হলো সাইয়েদ" এবং "কুতুব" হল তার বংশীয় উপাধি!যতটুকু জানা যায় তার পূর্বপুরুষরা আরব উপদ্বীপ থেকে এসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন।পিতার হাজী ইবরাহীম কুতুব ছিলেন একজন কৃষক! দুই ভাই এবং তিন বোনের মধ্যে "সাইয়েদ কুতুব "ই ছিলেন সবার বড়"! অন্য ভাই হলেন মুহাম্মাদ কুতুব আর বোনেরা হলেন হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব আরেকজনের নাম জানা যায়নি!
❒ শিক্ষা ও কর্মজীবন:
---------------------------------
প্রথমেই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষাজীবন শুরু হয়।তারপর কায়রোর বিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে সেখান থেকে বি.এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
কিছুকাল অধ্যাপনা করার পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। মিসরে এই পদটিকে অত্যন্ত সম্মানজনক বিবেচনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তাকে আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি পড়াশোনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
দু’বছরের কোর্স শেষ করে আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পর পরই ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলেন এবং ১৯৪৫ সালে তিনি ওই দলের সদস্য হয়ে যান। তারপরেই একে একে ভিবিন্ন কিতাবাদি রচনা শুরু করেন!
❒ সাইয়েদ কুতুবের আকিদাঃ
-----------------------------------------

Wednesday 10 October 2018

স্বালাতে মুবাশ্‌শির (৩য় পর্ব)



১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব

জুম'আ

জুমআর নামায
জুমআর নামায প্রত্যেক সাবালক জ্ঞান-সম্পন্ন পুরুষের জন্য জামাআত সহকারে ফরয।

মহান আল্লাহ বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ، ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিন নামাযের জন্য আহবান করা হবে, তখন তোমরা সত্বর আল্লাহর স্মরণের জন্য উপস্থিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (কুরআন মাজীদ ৬২/৯)


মহানবী (সাঃ) বলেন, “দুনিয়াতে আমাদের আসার সময় সকল জাতির পরে। কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা সকলের অগ্রবর্তী। (সকলের আগে আমাদের হিসাব-নিকাশ হবে।) অবশ্য আমাদের পূর্বে ওদেরকে (ইয়াহুদী ও নাসারাকে) কিতাব দেওয়া হয়েছে। আমরা কিতাব পেয়েছি ওদের পরে। এই (জুমআর) দিনের তা’যীম ওদের উপর ফরয করা হয়েছিল। কিন্তু ওরা তাতে মতভেদ করে বসল। পক্ষান্তরে আল্লাহ আমাদেরকে তাতে একমত হওয়ার তওফীক দান করেছেন। সুতরাং সকল মানুষ আমাদের থেকে পশ্চাতে। ইয়াহুদী আগামী দিন (শনিবার)কে তা’যীম করে (জুমআর দিন বলে মানে) এবং নাসারা করে তার পরের দিন (রবিবার)কে।” (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত)

মহানবী (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক সাবালক পুরুষের জন্য জুমআয় উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব।” (নাসাঈ, সুনান ১৩৭১নং)

হযরত ইবনে মসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “আমি ইচ্ছা করেছি যে, এক ব্যক্তিকে লোকেদের ইমামতি করতে আদেশ করে ঐ শ্রেণীর লোকেদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিই, যারা জুমআতে অনুপস্থিত থাকে।” (মুসলিম ৬৫২নং,হাকেম)

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তাঁরা শুনেছেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাঁর মিম্বরের কাঠের উপর বলেছেন যে, “কতক সম্প্রদায় তাদের জুমুআহ ত্যাগ করা হতে অতি অবশ্যই বিরত হোক, নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে অবশ্যই মোহ্‌র মেরে দেবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই অবহেলাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” (মুসলিম, সহীহ ৮৬৫ নং, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)

হযরত আবুল জা’দ যামরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমুআহ ত্যাগ করবে সে ব্যক্তি মুনাফিক।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ তারগিব ৭২৬নং)

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী (সাঃ) জুমআর দিন খাড়া হয়ে খুতবা দানকালে বললেন, “সম্ভবত: এমনও লোক আছে, যার নিকট জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদ্বীনা থেকে মাত্র এক মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাযির হয় না।” দ্বিতীয় বারে তিনি বললেন, “সম্ভবত: এমন লোকও আছে  যার নিকট জুমুআহ উপস্থিত হয়; অথচ সে মদ্বীনা থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাজির হয় না।” অতঃপর তৃতীয়বারে তিনি বললেন, “সম্ভবত: এমন লোকও আছে যে মদ্বীনা থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে থাকে এবং জুমআয় হাজির হয় না তার হৃদয়ে আল্লাহ মোহ্‌র মেরে দেন।” (আবূ য়্যা’লা, সহিহ তারগিব ৭৩১নং)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি পরপর ৩ টি জুমুআহ ত্যাগ করল, সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পিছনে ফেলে দিল।” (ঐ, সহিহ তারগিব৭৩২নং)

জুমুআহ যাদের উপর ফরয নয়
১-২-৩। মহিলা, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি।

নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জামাআত সহকারে জুমুআহ ফরয। অবশ্য ৪ ব্যক্তির জন্য ফরয নয়; ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও অসুস্থ।” (আবূদাঊদ, সুনান ১০৬৭নং)

৪। যে ব্যক্তি (শত্রু, সম্পদ বিনষ্ট, সফরের সঙ্গী ছুটে যাওয়ার) ভয়ে, অথবা বৃষ্টি, কাদা বা অত্যন্ত শীত বা গ্রীষ্মের কারণে মসজিদে উপস্থিত হতে অক্ষম।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মুআযযিনের (আযান) শোনে এবং কোন ওজর (ভয় অথবা অসুখ) তাকে জামাআতে উপস্থিত হতে বাধা না দেয়, তাহলে যে নামায সে পড়ে, তার সে নামায কবুল হয় না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৫৫১নং)

একদা ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক বৃষ্টিময় জুমআর দিনে তাঁর মুআযযিনকে বললেন, ‘তুমি যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌’ বলবে তখন বল, ‘তোমরা তোমাদের ঘরে নামায পড়ে নাও।’ এ কথা শুনে লোকেরা যেন আপত্তিকর মনোভাব ব্যক্ত করল। কিন্তু তিনি বললেন, ‘এরুপ তিনি করেছেন যিনি আমার থেকে শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ, আল্লাহর রসূল (সাঃ) এরুপ করেছেন। আর আমিও তোমাদেরকে এই কাদা ও পিছল জায়গার মাঝে বের হওয়াকে অপছন্দ করলাম।’ (বুখারী ৯০১, মুসলিম, সহীহ ৬৯৯নং)

প্রকাশ থাকে যে, যারা দূরের মাঠে অথবা জঙ্গলে অথবা সমুদ্রে কাজ করে এবং আযান শুনতে পায় না, তাছাড়া কাজ ছেড়ে শহর বা গ্রামে আসাও সম্ভব নয়, তাদের জন্য জুমুআহ ফরয নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪১৪, ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৯৯)

৫। মুসাফির :

মহানবী (সাঃ) জুমআর দিন সফরে থাকলে, জুমআর নামায না পড়ে যোহরের নামায পড়তেন। বিদায়ী হজ্জের সময় তিনি আরাফাতে অবস্থানকালে জুমআর নামায পড়েননি। বরং যোহ্‌র ও আসরের নামাযকে অগ্রিম জমা করে পড়েছিলেন। অনুরুপ আমল ছিল খুলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) দেরও।

উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য জুমআর নামায ফরয নয়। কিন্তু যোহরের নামায অবশ্যই ফরয। পরন্তু যদি তারাও জুমআর মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতে জুমুআহ পড়ে নেয়, তাহলে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে তাদের জুমুআহ হয়ে যাবে এবং যোহরের নামায মাফ হয়ে যাবে।

একাধিক হাদীস এ কথা প্রমাণ করে যে, মহানবী (সাঃ) এবং খুলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) দের যুগে মহিলারা জুমুআহ ও জামাআতে উপস্থিত হয়ে নামায আদায় করত।

উল্লেখ্য যে, কোন মুসাফির জুমুআহ খুতবা দিলে ও ইমামতি করলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৩)

জুমআর জামাআতে কোন মুসাফির যোহরের কসর আদায় করার নিয়ত করতে পারে না। কারণ, যোহ্‌র অপেক্ষা জুমআর ফযীলত অনেক বেশী। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৫৭৪)

জুমআর সময়
অধিকাংশ সাহাবা, তাবেঈন ও ইমামগণের নিকট জুমআর সময় যোহরের সময় একই। অর্থাৎ, সূর্য ঢলার পর থেকে নিয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া (আসরের আগে) পর্যন্ত।

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) জুমুআহ তখন পড়তেন, যখন সূর্য পশ্চিম আকাশেঢলে যেত।’ (আহমাদ, মুসনাদ, বুখারী, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, বায়হাকী)

ইমাম বুখারী বলেন, ‘জুমআর সময় সূর্য ঢলার পরই শুরু হয়। হযরত উমার, আলী, নু’মান বিন বাশীর এবং আম্‌র বিন হুয়াইরিষ কর্তৃক এ ব্যাপারে বর্ণনা পাওয়া যায়।’ (বুখারী)

হযরত সালামাহ্‌ বিন আকওয়া’ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা যখন নবী (সাঃ)-এর সাথে জুমআর নামায পড়ে ঘরে ফিরতাম, তখন দেওয়ালের কোন ছায়া থাকত না।’ (বুখারী, মুসলিম,  আবূদাঊদ, সুনান)

হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘ঠান্ডা খুব বেশী হলে নবী (সাঃ) জুমআর নামায সকাল সকাল পড়তেন এবং গরম খুব বেশী হলে দেরী করে পড়তেন।’ (বুখারী)

অবশ্য সূর্য ঢলার পূর্বেও জুমুআহ পড়া বৈধ। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্‌, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্‌, মুহাদ্দিস আলবানী ২২-২৫পৃ:) তবে সূর্য ঢলার পরই জুমুআহর (খুতবার) আযান হওয়া উত্তম। কারণ, প্রথমত: এতে অধিকাংশ উলামার সাথে সহ্‌মত প্রকাশ হয়। দ্বিতীয়ত: যারা জুমআয়হাজির হয় না এবং সময়ের খবর না রেখে আযান শুনে নামায পড়তে অভ্যাসী (ওযরগ্রস্ত ও মহিলারা) সময় হওয়ার পূর্বেই নামায পড়ে ফেলে না। (লিকাউবাবিল মাফতূহ্‌, ইবনে উষাইমীন ৫/৩৪)

প্রকাশ থাকে যে, সকাল সকাল মসজিদে গিয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদ সহ্‌ অন্যান্য নফল পড়া সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকার সময়ে হলেও তা নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। (ঐ)

জুমআর জন্য নিম্নতম নামাযী সংখ্যা

জুমআর নামায যেহেতু জামাআত সহকারে ফরয, সেহেতু যে কয় জন লোক নিয়ে জামাআত হবে, সে কয় জন লোক নিয়ে জুমআহও প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট লোক সংখ্যা হাদীস থেকে প্রমাণিত নয়।

জুমআর স্থান
জুমুআহ যেমন শহরবাসীর জন্য ফরয, তেমনি ফরয গ্রামবাসীর জন্যও। এর জন্য খলীফা হওয়া, শহর হওয়া, জামে মসজিদ হওয়া বা ৪০ জন নামাযী হওয়া শর্ত নয়। বরং যেখানেই স্থানীয় স্থায়ী বসবাসকারী জামাআত পাওয়া যাবে, সেখানেই জুমুআহ ফরয। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২২/৭৫, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৪২৪)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ)-এর মসজিদে জুমুআহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইসলামে সর্বপ্রথম যে জুমুআহ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হল বাহ্‌রাইনের জুয়াষা নামক এক গ্রামে।’ (বুখারী ৮৯২, ৪৩৭১, আবূদাঊদ, সুনান ১০৬৮নং)

স্বালাতে মুবাশ্‌শির (২য় পর্ব)


১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব

দরুদ

তাশাহহুদের পর নবী মুবাশ্‌শির (সাঃ) নিজের উপর দরুদ পাঠ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ৫/৩৭৪, হাকেম, মুস্তাদরাক) আর উম্মতের জন্যও তাঁর উপরের সালামের পর দরুদ পড়াকে বিধিবদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহর সাধারণ আদেশ রয়েছে, “--- হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর দরুদ পাঠ কর এবং উত্তমরুপে সালাম পেশ কর।” (কুরআন মাজীদ ৩৩/৫৬)

আর মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর ১০ বার রহ্‌মত বর্ষণ করবেন।” (মুসলিম,  মিশকাত ৯২১ নং)


অন্য এক বর্ণনায় আছে, “---এবং তার ১০টি পাপ মোচন হবে ও সে ১০টি মর্যাদায় উন্নীত হবে।” (নাসাঈ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৫৫০, মিশকাত ৯২২নং)

সাহাবাগণ তাঁকে বললেন, ‘আমরা আপনার উপর দরুদ কিভাবে পাঠ করব?’ তখন তিনি তাঁদেরকে দরুদ শিক্ষা দিলেন। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ৯১৯-৯২০নং)

দরুদের শব্দবিন্যাস কয়েক প্রকার:-

১।اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
 উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ:- হে আল্লাহ! তুমি হযরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্‌মত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হযরত ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর রহ্‌মত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।

হে আল্লাহ! তুমি হযরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হযরত ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (বুখারী, মিশকাত ৯১৯নং)

২।  اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى أَزْوَاجِهِ وَ ذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلىآلِ إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।
  উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউঅ আলা আযওয়া-জিহী অ যুরিয়্যাতিহী কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অ বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আযওয়া-জিহী অ যুরির্য়াতিহী কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অর্থ:- হে আল্লাহ! তুমি হযরত মুহাম্মাদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের  উপর রহ্‌মত বর্ষণ কর যেমন তুমি হযরত ইবরাহীমের বংশধরের উপর রহ্‌মত বর্ষণ করেছ। এবং তুমি হযরত মুহাম্মাদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের  উপর বর্কত বর্ষণ কর যেমন তুমি হযরত ইবরাহীমের বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত  গৌরবান্বিত। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ৯২০নং)

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ
كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ،
 উচ্চারণ:- আল্লা- হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মা দিঁ উঅআলা আহ্‌লি বাইতিহি অআলা আযওয়া-জিহি অযুরিGয়্যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউঅআলা আহ্‌লি বাইতিহি অআলা আযওয়া-জিহি অযুরির্য়াতিহী কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ। (আহমাদ, মুসনাদ ৫/৩৭৪, ত্বাহাকেম, মুস্তাদরাক)

Tuesday 9 October 2018

স্বালাতে মুবাশ্‌শির

স্বালাতে মুবাশ্‌শির (১ম পর্ব) 




শুরুর কথা 

শুরুর কথা সমূহ
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে ‘স্বালাতে মুবাশ্‌শির’-এর দ্বিতীয় খন্ড পাঠকের হাতে উপস্থিত হল। তার জন্য তাঁর দরবারে লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। দ্বীনের অন্যতম খুঁ টির একটি কাঠামো পেশ করতে পেরে আমি নিজেকে যেমন ধন্য মনে করছি, তেমনি আশা করছি দুআ ও সওয়াব লাভের।

কেবল সহীহ হাদীসকে ভিত্তি করেই, অধিক ক্ষেত্রে কে কি বলেছেন তা উল্লেখ না করেই কেবল সহীহ দিকটা তুলে ধরেছি আমার এই পুস্তিকায়। মানুষের মনে সহীহ শিক্ষার চেতনা ও বাসনার কথা খেয়াল রেখেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আল্লাহ যেন তা কবুল করেন, তাই আমার কামনা।

বিভিন্ন বিতর্কিত মাসায়েলে আমি বর্তমান বিশ্বের প্রধান ৩টি রত্ন; বর্তমান বিশ্বের অদ্বিতীয় মুহাদ্দিস আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দ্বীন আলবানী, আল্লামা শায়খ ইবনে বায এবং আল্লামা ও ফকীহ্‌ শায়খ ইবনে উষাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহু জামীআন)গণের হাদীস লব্ধ ও সহীহ দলীল ভিত্তিক মতকে প্রাধান্য দিয়েছি। আর এ কথা অবশ্যই প্রমাণ করে যে, আমি তাঁদের প্রত্যেকের; বরং প্রত্যেক হ্‌ক-সন্ধানী রব্বানী আলেমের ভক্ত ও অনুরক্ত। তা বলে কারো অন্ধভক্ত নই। পক্ষান্তরে প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য অধিকারীর অধিকার সঠিকরুপে আদায় করা। উলামার যথার্থ কদর করা। প্রত্যেক হ্‌ক-সন্ধানীর অনুরক্ত হওয়া; যদিও বা তাঁদের কোন কোন অভিমত আমার-আপনার বুঝের অনুকূল নয়। বলা বাহুল্য, খাঁটি সোনা স্বর্ণকারই চিনতে পারে; স্বর্ণ-ব্যবসায়ী নয়।

‘নামায’ ইসলামের প্রধান ইবাদত। ‘নামায’ শব্দটি ফারসী, উর্দু , হিন্দী ও আমাদের বাংলা ভাষায় আরবী ‘সালাত’ অর্থেই পরিপূ র্ণ রুপে ব্যবহৃত বলেই আমি ‘সালাত’-এর স্থানে ‘নামায’ই ব্যবহার করেছি। তাছাড়া বাংলাভাষীর অধিকাংশ মানুষ ‘সালাত’ শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। তাই পরিচিত ও প্রসিদ্ধ শব্দই ব্যবহার করতে আমি প্রয়াস পেয়েছি। আর এতে শরয়ী কোন বাধাও নেই। সুতরাং এ বিষয়ে সুহৃদ পাঠকের কাছে আমার ইজতিহাদী  কৈফিয়ত পেশ করে সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিনীত
আব্দুল হামীদ আল-মাদানী
আল-মাজমাআহ সঊদীআরব

প্রয়োজনের তাকীদে যা কিছু লিখি, সবই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আল্লাহ যেন তা আমাকে দান করেন এবং কাল কিয়ামতে এরই অসীলায় আমাকে, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা ও ওস্তাযগণকে, আর এ বই-এর উদ্যোক্তা, প্রকাশক ও সকল আমলকারী পাঠককে তাঁর মেহ্‌মান-খানা বেহেশ্তে স্থান দেন। আমীন।


নিয়ত

নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত

আমল ও ইবাদত শুদ্ধ-অশুদ্ধ এবং তাতে সওয়াব পাওয়া-না পাওয়ার কথা নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত শুদ্ধ হলে আমল শুদ্ধ; নচেৎ না। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “যাবতীয় আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির তা-ই প্রাপ্য হয়, যার সে নিয়ত করে থাকে। যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব কোন বিষয় লাভের উদ্দেশ্যে হয়, সে ব্যক্তির তা-ই প্রাপ্য হয়। যার হিজরত কোন মহিলাকে বিবাহ্‌ করার উদ্দেশ্যে হয়, তার প্রাপ্যও তাই। যে যে নিয়তে হিজরত করবে সে তাই পেয়ে থাকবে।” (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ১নং)

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...