Thursday 28 June 2018

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর ব্যাখ্যা

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم ِ এর ব্যাখ্যা

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِপরম করুণাময় এবং দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

ব্যাখ্যা: শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) আল্লাহ তাআলার কিতাবের অনুসরণ করে বিসমিল্লাহ দ্বারা পুস্তকটি লিখা শুরু করেছেন। সূরা তাওবা ব্যতীত প্রত্যেক সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ লিখা রয়েছে। বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতেরও অনুসরণ হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাজা-বাদশাহদের কাছে পত্র লিখতেন তখন শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখতেন।

بسم اللهবিসমিল্লাহ এর ব্যাখ্যা: এখানে با হরফে জারটি استعانة (ইস্তেআনা) তথা সাহায্য প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আভিধানিক অর্থে যে শব্দ কোনো ব্যক্তি, বস্ত্ত বা বিষয়ের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করে, তাকে ইসম বলা হয়। আরবী ব্যাকরণ বিদদের পরিভাষায় যে শব্দ কোন কালের সাথে যুক্ত না হয়েই সরাসরি নিজের অর্থ প্রকাশ করে, তাকে اسم (ইসম) বলা হয়।

جر (জার) এবং مجرور মাজরুর মিলে একটি উহ্য বিষয়ের সাথে متعلق (সম্পৃক্ত) হয়েছে। সেই উহ্য বিষয়টি ‘আল্লাহ’ শব্দের পরে হওয়া উচিত। যাতে করে এটি ‘হাসর’ তথা সীমিত অর্থ প্রদান করে। অর্থাৎ অর্থটি যেন এমন হয় যে, আমি আল্লাহর নামেই শুরু করছি, অন্য কারো নামে নয় এবং তাঁর কাছেই কাজটি সম্পাদনের ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি, অন্য কারো কাছে নয়।

কেউ কেউ বলেছেনঃ এখানে উহ্য শব্দটি হচ্ছে فعل বা ক্রিয়া। অর্থাৎ بسم الله أقرأ أو أكتب ‘‘আমি আল্লাহর নামে পড়ছি বা লিখছি। এমনি যখন যে কাজ শুরু করা হবে, তখন সেই কাজের অর্থবোধক একটি فعل (ক্রিয়া) উহ্য থাকবে।

আবার কেউ কেউ মাসদার উহ্য মেনে থাকেন। অথাৎ بسم الله ابتدائي তথা আল্লাহ তাআলার নামেই আমার শুরু।

الله আল্লাহ এর ব্যাখ্যা

শব্দটি মহান পবিত্র সত্তার জন্য নির্দিষ্ট একটি নাম। এর অর্থ হচ্ছে, তিনিই সমস্ত মাখলুকের এবাদত ও উলুহীয়াতের একমাত্র অধিকারী ও হকদার। এই মহান নামটি أله يأله ألوهة থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে عُبِدَ يُعْبَدُ عبادة অর্থাৎ তার এবাদত ও দাসত্ব করা হয়েছে। সুতরাং আল্লাহই একমাত্র সত্য ইলাহ বা মাবুদ।

الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ আর্ রাহমান আর রাহীম
আল্লাহ্ তাআলার পবিত্র ও অতি সুন্দর নামসমূহের মধ্য হতে রাহমান ও রাহীম দু’টি সম্মানিত নাম। এই নাম দু’টি প্রমাণ করে, যেমন রহমত আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য শোভনীয়, তিনি তেমন রহমত ও দয়ার গুণেই গুণান্বিত।
আল্লাহ্ তাআলার الرحمن‘রাহমান’ নামটি সমস্ত সৃষ্টির উপর তাঁর ব্যাপক রহমতের প্রমাণ বহন করে। আর الرحيم ‘রাহীম’ নামটির মধ্যে এমন রহমত রয়েছে, যা শুধু মুমিনদের জন্যই নির্দিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ﴾ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا ﴿ ‘‘এবং তিনি মুমিনদের প্রতি খুবই দয়াবান’’। (সূরা আহযাব: ৪৩)

শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া।
ডঃ সালেহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ।
অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী।

Monday 25 June 2018

খারেজী কারা? বর্তমানে কি কোন খারেজী আছে?


উত্তরঃ “খারেজী” হচ্ছে ৭২টি বেদাতী জাহান্নামী তরীকার একটা তরীকা। এরা অত্যন্ত চরমপন্থী একটি দল যারা সাহাবা রাঃ ও মুসলিম শাসকদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অনেক মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত আমলের দিক থেকে তারা হচ্ছে এই উম্মতের মাঝে সবচাইতে বেশী ইবাদত করনেওয়ালা ফেরকা – তারা সবচাইতে বেশী নামায পড়তো, সবচাইতে বেশি রোযা রাখতো, সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়তো, কুরান পড়তো – এইগুলো রাসুল সাঃ আগেই বলেছিলেন তাদের গুণাবলী সম্পর্কে। কিন্তু তাদের ভ্রান্ত আকীদা (ধর্মীয় বিশ্বাস) ও চরমপন্থা অবলম্বনের কারণে তারা এতো নামায রোযা করেও এতোটাই নিকৃষ্ট যে, রাসুল সাঃ তাদেরকে “কিলাবু আহলিন-নার’’ জাহান্নামের কুকুর বলেছেন। তাই কোন দলের লোক অনেক আমল করলেই তারা হক্ক হয়ে যায়না, দেখতে হবে তাদের আকীদা কি, তাদের মানহাজ (চলার পথ বা পদ্ধতি/উসূল বা মূলনীতি) কি? তারা যদি আহলে সুন্নতের অনুসারী হয় তাহলেই সে নাজাত পাবে, আর আহলে সুন্নতের বিপরীত চললে যতই আমল করুক, জাহান্নামে যাবে।
বর্তমান যুগেও এমন কিছু খারেজী লক্ষ্য করা যায়, বা এমন অনেক ব্যক্তি বা দল আছে যাদের মাঝে খারেজীদের গুণ দেখা যায়। যেমন, ১৯৭৯ সালে সৌদি আরবের সরকারের বিরুদ্ধে “জুহাইমান আল-ওতাইবি” নামে এক লোক বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করে। আনুমানিক ৩০০-৪০০ লোক নিয়ে সে প্রথম কাবা দখল করে এবং সেখানে তাদের মধ্য থেকে একজনকে “ইমাম মাহদী” দাবী করে তার হাতে বায়াত করে তাকে শাসক হিসেবে মেনে নিতে দাবী করে। এরা “মসজিদুল হারাম” যেখানে কেয়ামত পর্যন্ত রক্তপাত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, সেখানে অনেক মানুষদেরকে হত্যা করে। অবস্থা এতো সংকটময় দেখে ইমাম বিন বাজ রহঃ সহ তখনকার বড় আলেমরা ফতোয়া দেন – এ খারেজী হয়ে গেছে – এর ক্ষতি থেকে মুসলিমদের বাচানোর জন্য কাবাঘরে এদের উপর আক্রমন করা জায়েজ হবে, যদিও হারামে রক্তপাত চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু সংকটপূর্ণ অবস্থায় মাসয়ালা পরিবর্তন হয়ে যায়, আর এর মতো লোককে না সরালে সে আরো ফেতনা ছড়াবে, তাই এইক্ষেত্রে হারামে তাদের উপর আক্রমন করলে গুনাহ হবেনা। যাইহোক তাদের উপর আক্রমন করা হলে তারা একটা টানেলে আশ্রয় নেয় যেখান থেকে তাদেরকে ধরা যাচ্ছিলোনা, তাদেরকে ধরতে কোন সৈন্য গেলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করতো। পরে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে ও টানেলে পানি ঢেলে তাতে কারেন্ট দিয়ে তাদেরকে আহত করে জুহাইমানসহ তার প্রায় ৭৭জন সাথীকে গ্রেফতার করা হয়। কথিত ইমাম মাহদী আগেই মারা গিয়েছিল আক্রমনের সময়। গ্যাসে জুহাইমানের চেহারা কালো হয়ে যায়, পরে শরিয়াহ মোতাবেক জুহাইমানসহ অনেককে প্রকাশ্যে কতল করে হত্যা করা হয়। জুহাইমানকে এই ভিডিওতে দেখতে পারবেন।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...