Wednesday 15 January 2020

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের গালিদাতাকে হত্যা করতে হবে, কিন্তু যদি সে তাওবাহ করে?


.
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل تقبل توبة من سب الله عز وجل أو سب الرسول صلى الله عليه وسلم؟
الإجابة: اختلف في ذلك على قولين:
القول الأول: أنها لا تقبل توبة من سب الله، أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، وهو المشهور عند الحنابلة، بل يقتل كافراً، ولا يصلى عليه، ولا يدعى له بالرحمة، ويدفن في محل بعيد عن قبور المسلمين.
القول الثاني: أنها تقبل توبة من سب الله أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، إذا علمنا صدق توبته إلى الله، وأقر على نفسه بالخطأ، ووصف الله تعالى بما يستحق من صفات التعظيم، وذلك لعموم الأدلة الدالة على قبول التوبة كقوله تعالى: {قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعاً}، ومن الكفار من يسب الله ومع ذلك تقبل توبتهم، وهذا هو الصحيح إلا أن ساب الرسول، عليه الصلاة والسلام تقبل توبته ويجب قتله، بخلاف من سب الله فإنها تقبل توبته ولا يقتل؛ لأن الله أخبرنا بعفوه عن حقه إذا تاب العبد، بأنه يغفر الذنوب جميعاً.
أما ساب الرسول صلى الله عليه وسلم، فإنه يتعلق به أمران:
أحدهما: أمر شرعي، لكونه رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهذا يقبل إذا تاب.
الثاني: أمر شخصي، وهذا لا تقبل التوبة فيه لكونه حق آدمي لم يعلم عفوه عنه، وعلى هذا فيقتل ولكن إذا قتل، غسلناه، وكفناه، وصلينا عليه، ودفناه مع المسلمين.
وهذا اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية وقد ألف كتاباً في ذلك اسمه: «الصارم المسلول في تحتم قتل ساب الرسول»، وذلك لأنه استهان بحق الرسول صلى الله عليه وسلم، وكذا لو قذفه صلى الله عليه وسلم فإنه يقتل ولا يجلد.
فإن قيل: أليس قد ثبت أن من الناس من سب الرسول صلى الله عليه وسلم، في حياته وقبل النبي صلى الله عليه وسلم، توبته؟
أجيب بأن هذا صحيح، لكن هذا في حياته صلى الله عليه وسلم، والحق الذي له قد أسقطه، وأما بعد موته فإنه لا يملك أحد إسقاط حقه صلى الله عليه وسلم، فيجب علينا تنفيذ ما يقتضيه سبه صلى الله عليه وسلم، من قتل سابه، وقبول توبة الساب فيما بينه وبين الله تعالى.
فإن قيل: إذا كان يحتمل أن يعفو عنه لو كان في حياته، أفلا يوجب ذلك أن نتوقف في حكمه؟
أجيب: بأن ذلك لا يوجب التوقف لأن المفسدة حصلت بالسب، وارتفاع أثر هذا السب غير معلوم والأصل بقاؤه.
فإن قيل: أليس الغالب أن الرسول صلى الله عليه وسلم، يعفو عمن سبه؟
أجيب: بلى، وربما كان العفو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم، متضمناً المصلحة وهي التأليف، كما كان صلى الله عليه وسلم يعلم أعيان المنافقين ولم يقتلهم، «لئلا يتحدث الناس أن محمداً يقتل أصحابه»، لكن الآن لو علمنا أحداً بعينه من المنافقين لقتلناه، قال ابن القيم رحمه الله: «إن عدم قتل المنافق المعلوم إنما هو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم فقط».
প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ (عَزَّ وَجَلَّ) কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কি কবুল করা হবে?”
উত্তর: “এ ব্যাপারে ‘আলিমগণ দুটি মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
১ম মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে না। এটি হাম্বালীদের প্রসিদ্ধ অভিমত। বরং গালিদাতাকে (মুসলিম শাসক কর্তৃক) কাফির হিসেবে হত্যা করতে হবে। তার জানাযাহ’র নামাজ পড়া হবে না, তার জন্য রহমতের দু‘আ করা হবে না এবং মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরের কোনো স্থানে তাকে কবর দিতে হবে।
২য় মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে, যখন আমরা জানব যে, সে সত্যিকারার্থেই আল্লাহ’র কাছে তাওবাহ করেছে, ভুল করেছে বলে স্বীকার করেছে এবং মহান আল্লাহকে তাঁর প্রকৃত সিফাতে তা‘যীম (সম্মানসূচক বিশেষণ) দ্বারা বিশেষিত করেছে। যেহেতু ব্যাপকার্থবোধক দলিলসমূহ প্রমাণ করছে যে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহ’র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’।” (সূরাহ যুমার: ৫৩)

আনুগত্যের ক্ষেত্রে শির্ক


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
শির্কের অন্যতম একটি প্রকার হলো আনুগত্যের শির্ক। আনুগত্য পাওয়ার নিরঙ্কুশ অধিকার কেবল আল্লাহর। এক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে অন্যের আনুগত্য করা শির্কের আওতাভুক্ত। ‘উলামা ও পীর-দরবেশের অন্যায় আনুগত্য যেমন শির্কের অন্তর্ভুক্ত, আমীর-উমারা ও শাসকদের অন্যায় আনুগত্যও তেমনি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেছেন, وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰ أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ “আর শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্ররোচনা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো, তবে নিশ্চয় তোমরা মুশরিক।” (সূরাহ আন‘আম: ১২১)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আদী বিন হাতেম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত আছে, একদা তিনি শুনলেন, রাসূল ﷺ পাঠ করছেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ “তারা (ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতির লোকেরা) আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিতদেরকে রব হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল।” (সূরাহ তাওবাহ: ৩১) তখন আমি নবীজিকে বললাম, ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি না।’ তিন বললেন, ‘আচ্ছা আল্লাহর হালাল ঘোষিত জিনিসকে তারা হারাম বললে, তোমরা কি তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করো না? আবার আল্লাহর হারাম ঘোষিত জিনিসকে তারা হালাল বললে, তোমরা কি তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করো না? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন বললেন, ‘এটাই তাদের ইবাদত।’ [তিরমিযী, হা/৩০৯৫; সনদ: হাসান]
কিন্তু এই শির্কের মানদণ্ড কী, আর কখন অন্যায় আনুগত্য বড়ো শির্ক হয়, কখনই বা ছোটো শির্ক হয়—তা জানা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আমরা ‘উলামাদের থেকে তিনটি বক্তব্য পেশ করছি।
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন—

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কী?


ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
— মাদীনাহ ইউনিভার্সিটির হাদীস ফ্যাকাল্টির সাবেক ডিন এবং ‘আক্বীদাহ ডিপার্টমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান, আল-ইমাম, আল-‘আল্লামাহ ড. মুহাম্মাদ আমান ইবন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ):
.❝বর্তমানে এই শ্রেণির লোকদের সংখ্যা অনেক। বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা, যারা তাদের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলে, “ইসলামের বিধিবিধান বর্তমান যুগের জন্য উপযোগী নয়।”
প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কাফির এবং মুরতাদ (ধর্মত্যাগী), চাই সে প্রাচ্যবাসী হোক কিংবা পাশ্চাত্যবাসী। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইহুদি-ধর্ম ও খ্রিষ্টধর্মের চেয়ে ভয়ংকর কুফুরি। কেননা ইসলাম কিতাবধারী ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রাক-কিতাব তাওরাত ও ইনজীলকে মর্যাদা দিয়েছে এবং মুসলিমদের জন্য তাদের জবেহকৃত পশু ভক্ষণ করা হালাল করেছে।
আল্লাহ বলেছেন, وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَكُمْ “যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, তাদের খাবার তোমাদের জন্য বৈধ।” (সূরাহ মাইদাহ: ৫) মুসলিমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে তাদের জবেহ বৈধ। উক্ত আয়াতে ‘খাবার’ বলার মাধ্যমে তাদের জবেহকৃত পশু উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
ইসলাম তাদের মধ্যকার সতী মহিলাদের সাথে আমাদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে হালাল করেছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীর জবেহ হালাল নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নারী কোনো মুসলিমের জন্য হালাল নয়। কেননা তারা মুরতাদ।
মুরতাদ, অগ্নিপূজক ও মূর্তিপূজকদের সাথে হিন্দু ও বৌদ্ধদের কোনো পার্থক্য নেই। যারা ভূপৃষ্ঠের (মানবরচিত) ধর্মে বিশ্বাস করে। তাদের কোনো আসমানী ধর্ম নেই। তারা সবাই কুফফার। ইসলামের অনুযায়ী ইহুদি-খ্রিষ্টানদের চেয়েও কঠোর আচরণ করা হবে তাদের সাথে।
আমাদের জেনে রাখা উচিত, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা সবাই মুরতাদ ও কুফফার। আমাদের আরও জানা উচিত যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হলো—সকল ধর্মকে অস্বীকার করা এবং কোনো ধর্মের সাথে সম্পৃক্ততা না রাখা। তারা এটাকে বলে স্বাধীনতা! অথচ তা পশুর মতো স্বাধীনতা।❞
উৎস: @alandalussalafe
অনুবাদক: আব্দুর রহমান মৃধা

আল্লাহর জন্য দেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করার বিধান


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা ইমানের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। ব্যক্তির ‘আক্বীদাহর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণীত হয় এই মৌলিক বিষয়ের মাধ্যমে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কোনো অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান, ধরন বর্ণনা ও নিস্ক্রীয়করণ ছাড়াই আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কিছু মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে।
যেমন একটি মূলনীতি হলো—আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর, এতে বিবেকের কোনো স্থান নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যেসব নাম ও গুণ বর্ণনা করেছে, আমরা কেবল সেসবই সাব্যস্ত করব, কোনোরূপ কমবেশি করব না। যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে কমবেশি করে, সে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে বক্রপথ অবলম্বনকারী বিদ‘আতী। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্য, এবং এটাই তাদের মূলনীতি।
·
দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, সালাফিয়্যাহর দিকে নিজেকে সম্পৃক্তকারী কিছু দা‘ঈ এই মূলনীতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করেছে। আমরা মনে করি, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেরাই কুরআন-হাদীস পড়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার নিন্দার্হ প্রবণতা থেকেই এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।

বর্তমান নারীদের ব্যাপারে ইমাম আলবানীর গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন ও উপদেশ


·
বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
.
প্রশ্নকারী: “হে আমাদের শাইখ, আমরা শুনেছি যে কতিপয় নারী যারা কিছু ইউনিভার্সিটি, স্কুল, এবং কলেজে (অধ্যয়নরত) রয়েছে এবং কিছু নারী বক্তৃতা প্রদান করে, দারস দেয়, এমনকি কুরআন তিলাওয়াত করে, বিশেষ করে সকালবেলার বেতারে (রেডিয়ো বা টিভিতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে)। এই নারীদের স্বামীরা কখনো তাদের উপভোগ করতে পারে না। কারণ তারা মুতারাজ্জিলাত (পুরুষসুলভ)। প্রশ্নের এই প্রসঙ্গে আপনার কাছ থেকে আমরা স্পষ্টকরণ আশা করছি।”
.
আল-আলবানী: “এই বিষয়ের সাথে জড়িত মৌলিক কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ তারবিয়্যাহ (প্রতিপালন)। ত্রুটিপূর্ণ তারবিয়্যাহর কারণ হলো সামাজিক অবক্ষয় এবং পাঠ্যক্রমের অবক্ষয়, যার ওপর পুরুষ ও নারী অথবা তরুণ ও তরুণীদের শিক্ষাচর্চা ভিত্তিশীল হয়। এর কারণ—আমি প্রায় নিশ্চিত যে, স্কুলগুলোর ছাত্রীরা নাবী ﷺ এর এমন কথা শোনেনি, “পুরুষসুলভ নারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ।” [১] একইভাবে অন্য হাদীসটি, যেটি আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এই বলে বর্ণনা করেছেন, لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ “আল্লাহর রাসূল ﷺ নারীদের সাদৃশ্যতা অবলম্বনকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বনকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন।” [২]
.
আমি বিশ্বাস করি, ছাত্রীদের—যারা হাইস্কুল বা এর চেয়ে উচ্চস্তরের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গ্র্যাজুয়েট করে—কর্ণদ্বয় দিয়ে এ ধরনের হাদীস অতিক্রম করেনি। আর যদি এ দুটি হাদীসের কোনোটি তাদের কর্ণদ্বয় অতিক্রম করেও থাকে, তাহলে তা এক কান দিয়ে প্রবেশ করে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে গিয়েছে। কারণ যে ধরনের পাঠ্যক্রম তাদের শেখানো হয় বা তাদের যে ধরনের শিক্ষাদান করা হয়, তার ভিত্তিতে শিক্ষককে এসব বিষয় পড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয় না; এমনকি যদি সে দ্বীনদারও হয়ে থাকে।

বর্তমান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ইয়েমেনের আহলুস সুন্নাহর ইমাম ও মুজাদ্দিদ, আশ-শাইখ, আল-'আল্লামাহ মুক্ববিল বিন হাদী আল ওয়াদিঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হয়,


"কিছু লোক 'উলামা ইস-সুন্নাহর একজনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে যিনি কিছু বিদ'আতীকে সমালোচনা করেছেন, এবং তাদের অজুহাত হলো, যার সমালোচনা করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে 'উলামা ইস-সুন্নাহর বাকিরা কথা বলেননি। সুতরাং সে বলে, অমুক এবং অমুক('আলিম) কোথায়? তাঁরা কেন কথা বলেননি? যদি এটা হাক্ব হতো তাহলে তাঁরা তাঁকে (সমালোচনাকারী 'আলিম) অনুসরণ করতেন।" সুতরাং কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে কথা ও তার ব্যাপারে সমালোচনার জন্য এটা কি শর্ত যে, 'উলামা ইস-সুন্নাহর বেশিরভাগ বা সবাই তার সমালোচনা করবেন? বিশেষ করে যখন সমালোচনাকারী দলীলের ভিত্তিতে এই বিদ'আতির কথা পর্যবেক্ষণ করেছে, তার বক্তব্য ও কিতাবাদির মাধ্যমে।
.
উত্তর: না'আম(হ্যা), না'আম! হে ভাইয়েরা, বিষয়টি হলো লোকেরা হাদিসের পরিভাষা (মুস্তালাহ আল-হাদিস) শিখেনি, অথবা তারা শিখেছে, কিন্তু ধোঁকা দেয়। আমরা আপনাদের এরচেয়ে বড় একটা উদাহরণ দিবো। আহমাদ বিন হাম্বাল এক লোক সম্বন্ধে বলেছেন তিনি হলেন ছিক্বাহ(বিশ্বস্ত), এবং ইয়াহইয়া ইবন মাঈন বলেছেন সে হলো কাযযাব। তো ইয়াহইয়া ইবন মাঈনের কথা কি তার ক্ষতি করবে, যেখানে আহমাদ বিন হাম্বাল তাঁর বিরোধিতা করেছেন? না'আম(অর্থাৎ ক্ষতি করবে)। ইয়াহইয়ার বক্তব্য হলো জারহুন মুফাসসার(বিস্তারিত সমালোচনা)। তিনি এমন কিছু দেখেছেন যা আহমাদ বিন হাম্বাল দেখেননি। সুতরাং কি? তাকে পরিত্যাগ করুন! যদিও তাকে সমালোচনাকারী ব্যক্তি শুধু ইয়াহইয়া ইবন মাঈন একা হন। এবং এর ভিত্তিতে, যদি এই যুগের 'উলামাদের মধ্য হতে কোন একজন 'আলিম স্পষ্টতম দলীল নিয়ে আসে মুহাম্মাদ আল-গাযালী, অথবা ইউসুফ আল-ক্বারদাউয়ী, অথবা ইখওয়ান আল-মুফলিসীনের মানহাজের বিরুদ্ধে, তাহলে আমরা তা গ্রহণ করি এবং এটা গ্রহণ করা ওয়াজিব।

বিদ্রোহের একটি শর্ত কুফর আল-বাওয়াহ, কিন্তু কুফর বাওয়াহ কোনগুলো?


·
প্রখ্যাত সৌদি বিদ্বান, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) শীর্ষস্থানীয় বিদ‘আতী সাইয়্যিদ কুতুব ও হাসান আল-বান্নার প্রশংসা করেছেন এবং তাদের পক্ষ নিয়ে আহলুস সুন্নাহর একাধিক ন্যায়নিষ্ঠ ও প্রাজ্ঞ ‘আলিমের নিন্দা করেছেন। সেকারণে স্বাভাবিকভাবেই তিনি ইখওয়ানী ও কুতুবীদের নিকট খুবই প্রিয়ভাজন ব্যক্তি। তাই আমরা আশা করছি, ইখওয়ানী ও কুতুবীরা তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য এই শাইখের নিম্নোক্ত ফতোয়াটি সাদরে গ্রহণ করে নেবে।
‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] বলেছেন,
❝এটি সুবিদিত যে, কুফর আল-বাওয়াহ হলো একটি প্রকাশ্য, বাহ্যিক বিষয়। যেমন যখন কেউ ইসলামী শিক্ষা বিলুপ্ত করে দেয়, অথবা আমরা তাকে—উদাহরণস্বরুপ—মাসজিদগুলো ধ্বংস করতে দেখি। কিংবা সে মাসজিদের লোকদের সাথে লড়াই করে, অথবা সে শারী‘আহ কোর্টগুলো বিলুপ্ত করে দেয়। অথবা উদাহরণস্বরূপ, সে দ্বীনি শিক্ষাদান বিলুপ্ত করে দেয়, অথবা আমরা আমরা তাকে কুরআনের কপি পোড়াতে দেখি। কিংবা সে এগুলো পোড়ানোর আদেশ দেয়, এবং সে ভ্রষ্টতাপূর্ণ কিতাবাদি প্রোমোট করে ও সেগুলো (প্রচারে) সাহায্য করে, (যেমন) খ্রিষ্টানদের বইপুস্তক ও এগুলোর সাথে সাদৃশ্যতাপূর্ণ যা কিছু আছে, এবং সে সেগুলো প্রচার করে, আর সেগুলো পড়া বাধ্যতামূলক করে। অথবা আমরা তাকে সেসব জিনিস স্থাপন করতে দেখি, আল্লাহর সাথে সাথে যেগুলোর উপাসনা করা হয়; যেমন মূর্তি ও এ ধরনের কিছু। এসব কিছু প্রকাশ্য ও স্পষ্ট কুফর হিসেবে বিবেচিত হবে।
আর সেসব বিষয়, যেগুলোতে ইজতিহাদ প্রবেশ করতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা গতরাতে এমন একটি প্রকারের ব্যাপারে উল্লেখ করেছি। আর এর ওপরই বেশিরভাগ শাসক রয়েছে, যেটাকে বলা হয় সেক্যুলার আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা। যেমন এই আইনগুলো; অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ব্যাপারে দেখা যায়, তারা এগুলোর মধ্যে কল্যাণ আছে বলে মনে করে। কিন্তু তারা শারী‘আহকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে দেয়নি, এভাবে যে, তারা এর কোনো কিছু থেকে একেবারেই বিচার করে না (অর্থাৎ তারা শারী‘আহ আইন সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেনি)।
যেহেতু আল্লাহ বলেছেন, “আর যে কেউ আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করে না, তারা হলো কাফির।” (সূরাহ মায়িদাহ: ৪৪) সুতরাং এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ, যাদের নিকটে (এমন) দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তাদের ওপর আমরা কুফরের হুকুম লাগাই না। তবে আমরা এই ইজতিহাদে তাদের ভুলকারী মনে করি, যেটি শারী‘আহর কিছু পরিবর্তন করাকে যুক্ত করে, যদিও এটা ইজতিহাদ করতে গিয়ে হয়। সুতরাং উদাহরণস্বরূপ, তাদের কর্তৃক উভয় পক্ষের সম্মতিতে ব্যভিচারের বৈধতা দেওয়া, অথবা তাদের কর্তৃক ইসলামী দণ্ডবিধান পরিত্যাগ বা বিলুপ্ত করা, (যেমন) চুরি করার শাস্তি, মিথ্যা অপবাদের শাস্তি, মদপানের শাস্তি, অথবা মদের অনুমোদন দেয়া, এবং মদ বা এ ধরনের জিনিসগুলো বিক্রয়ের ঘোষণা দেওয়া।
কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি হলো মহাপাপ। তবে হতে পারে তাদের অজুহাত আছে, উদাহরণস্বরূপ, যেসব ক্ষেত্রে তারা মনে করে যে, তাদেরকে ওজরগ্রস্ত বলে গণ্য করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, তারা এই বলে নিজেদের জন্য অজুহাত দেখায় যে, তাদের রাষ্ট্রে অমুসলিম জনগণ রয়েছে, এবং তাদের ওপর কঠোর হওয়াটা তাদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ হবে। সুতরাং যাদের (এমন) দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, আল্লাহই তাদের হিসাব নিবেন। সর্বোপরি, যদি আমরা (সবক্ষেত্রে) শারী‘আহ দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করতাম, এবং এর শিক্ষা বাস্তবায়ন করতাম, তাহলে এর মধ্যেই পর্যাপ্ততা ও অধিক কল্যাণ থাকতো।❞
·
তথ্যসূত্র:
·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম
সম্পাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

মানবরচিত বিধান দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে ইমাম ইবনু বায, শাইখ ইবনু জিবরীন, সালমান আল-‘আওদাহ, ‘আইদ্ব আল-ক্বারনী প্রমুখের মধ্যকার আলোচনা ·


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
অধুনা দ্বীনী পরিমণ্ডলে একটি ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয় হলো—ওই ব্যক্তির ব্যাপারে শারী‘আহর হুকুম, যে আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করে না। আর এই বিতর্কিত বিষয়ে রয়েছে দুটি পক্ষ—সালাফী বা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত বিভিন্ন গাইরে-সালাফী দল এবং তাদের নেতৃবর্গ ও অনুসারীবৃন্দ। এই বিষয়ে সালাফীদের অবস্থান যথারীতি সালাফদের মানহাজেই রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
তাদের অবস্থান হলো—যে আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করবে না সে কাফির, যদি তা হয় আল্লাহর আইনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে, অথবা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করতে নিজেকে বাধ্য মনে না করার কারণে, অথবা আল্লাহর আইনকে যুগের জন্য অনুপযোগী মনে করার কারণে, বা আল্লাহর আইনকে অপছন্দ করার কারণে, অথবা মানবরচিত কোনো আইনকে আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম বা সমপর্যায়ের মনে করার কারণে, বা আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোনো আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা হালাল মনে করার মাধ্যমে। আর এসব কারণ ছাড়াই যদি কেউ আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকে, তাহলে সালাফীরা তাকে কাফির ঘোষণা করে না, বরং সালাফীদের মতে তারা জালেম, অথবা ফাসিক্ব।
তবে এই বিষয়ের বিতর্কে সালাফীদের বিরোধী পক্ষ তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত বিভিন্ন গাইরে-সালাফী দল, তাদের নেতৃবর্গ এবং অনুসারীবৃন্দ—আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করে না এমন ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির ঘোষণা করে থাকে। আবার অনেক সময় তারা বলে থাকে, আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে শুধু তখনই কাফির হবে না, যখন এটি করা হবে দুএকটা বা সামান্য কিছু বিষয়ে।
এই ধরনের মত পোষণকারীদের দা‘ঈ পর্যায়ের লোকেরা তাদের লেকচার, কিতাব, আর্টিকেল, দারস প্রভৃতির মাধ্যমে এই বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করে আসছে। আর সালাফীদের দা‘ঈ পর্যায়ের লোকেরাও একই কাজ করে আসছেন। এসব বিষয়ে দুই পক্ষের প্রধান ব্যক্তিবর্গের সামনাসামনি আলোচনা হয়নি বললেই চলে। তবে ব্যতিক্রম একটি ঘটনা ঘটে নব্বই দশকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ের এক দিনে।
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একদল শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আহলুস সুন্নাহর ইমাম, শাইখুল ইসলাম ‘আব্দুল আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)। শাইখ তাঁর বক্তব্যে তাঁর শিক্ষক এবং তাঁর পূর্বে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী পদে আসীন আহলুস সুন্নাহর এক যুগশ্রেষ্ঠ ‘আলিম ও ফাক্বীহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখের (রাহিমাহুল্লাহ) স্মৃতিচারণ করেন এবং তা করতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ করে কাঁদতে শুরু করেন। একারণে বক্তব্য রেকর্ডকারী এই বক্তব্যের অডিয়ো ক্লিপটির নামকরণ করেন—

খারিজী ও বুগাতের মধ্যে পার্থক্য


·
❏ অনুবাদকের ভূমিকা:
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
আমরা একটি বিষয় অনেকদিন থেকেই লক্ষ করে আসছি যে, সুবিদিত সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদে উসকানিদাতা খারিজী সম্প্রদায়কে যখন আহলুস সুন্নাহর ‘উলামাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘খারিজী’ আখ্যা দেওয়া হয়, তখন একদল দরদী ভাই—যাদের কিনা খারিজী সন্ত্রাসীদের প্রতি প্রবল অনুরাগ আছে—আহলুস সুন্নাহর ‘উলামাদের বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমাদের ওই ভাইয়েরা খারিজী নয়, বরং তাঁরা বুগাত।’ এমনকি এ নিয়ে তাদেরকে সালাফীদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতেও দেখা যায়।
অনুরূপভাবে আরেকটি দল রয়েছে, যারা শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-আন্দোলন ও সশস্ত্র বিপ্লব করার মানহাজ লালন করে। তাদেরকে যখন বলা হয়, শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা নিষিদ্ধ এবং এরকম বিদ্রোহ বৈধ মনে করা খারিজীদের কাজ, তখন তারা বিদ্রুপ করে বলে, ‘তাহলে অমুক শাসক খারিজী, কারণ তিনি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন, আর তার আনুগত্য দাবি করার কারণে তোমরাও খারিজী!’ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
·
এদের অনেককে আবার মিশরের শাসক জেনারেল সিসির কথা উত্থাপন করতে দেখা যায়, যিনি সেনা অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ইখওয়ানী শাসক মুহাম্মাদ মুরসীকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। তো যখন বলা হয়, ভালো কাজে জেনারেল সিসির আনুগত্য করা মিশরবাসীর জন্য আবশ্যক এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারিজীদের কর্ম, তখন ইখওয়ানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠে, ‘বরং সিসিই খারিজী, আর তার আনুগত্যের দাবিদাররাও খারিজী।’ উল্লেখ্য যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মতে জবরদখলকারী শাসকের আনুগত্য করা ওয়াজিব। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: https://tinyurl.com/vx6r98t
প্রকৃতপক্ষে খারিজী ও বুগাতের মধ্যে পার্থক্য না জানার কারণে এসব প্রমাদযুক্ত বাতিল কথার উদ্ভব ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। বেশ কয়েকবছর আগে সৌদি আরবের খ্যাতনামা দা‘ঈ, মাসজিদে কুবার ইমাম, জনাব সালিহ আল-মুগামিসী (হাদাহুল্লাহ) মুসলিমদের রক্ত হালালকারী ও বোমা বিস্ফোরণকারী সন্ত্রাসীদেরকে ‘বুগাত’ আখ্যা দিয়ে তাদের অপরাধকর্মকে হালকা করার চেষ্টা করেন। এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে তাঁর এহেন উদ্ভট কথার জবাবে সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ ফাদ্বীলাতুশ শাইখ আবূ ফুরাইহান জামাল বিন ফুরাইহান আল-হারিসী (হাফিযাহুল্লাহ) একটি প্রামাণ্য নিবন্ধ রচনা করেন।

মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার বিধান


·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়ায় বলা হয়েছে—
لا يجوز شرعا استحلاب الأمهات والاحتفاظ بحليبهن وتغذية طفل آخر به؛ لما في ذلك من الجهالة المؤدية إلى هتك حرمات الرضاع التي يقع التحريم بها شرعا من جهة المرضعة، ومن جهة صاحب اللبن، ومن جهة الرضيع، إذ إنه يحرم من الرضاع ما يحرم من النسب، وقد قال النبي صلى الله عليه وسلم: «من اتقى الشبهات فقد استبرأ لدينه وعرضه». وبناء على ذلك لا يجوز إنشاء بنوك لجمع حليب النساء لإرضاعه للأطفال المحتاجين لذلك. وبالله التوفيق، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
“মাতৃগণের দুগ্ধ গ্রহণ করা, তাঁদের দুগ্ধ সংরক্ষণ করা এবং সেই দুধ থেকে অন্য শিশুকে পান করানো শার‘ঈভাবে নিষিদ্ধ। কেননা এর মধ্যে এমন অজ্ঞতা রয়েছে, যা মাতৃদুগ্ধ পানের মাধ্যমে সাব্যস্ত হওয়া সম্পর্ক (হুরমাতুর রিদ্বা‘) বিনষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেই সম্পর্কের মাধ্যমে দুধ-মা, দুগ্ধপায়ী শিশু এবং দুগ্ধপিতার (দুধমাতার স্বামী) মধ্যে এমন আত্মীয়তার সম্পর্কে তৈরি হয়, যাদের মধ্যে আপসে বিবাহ করা হারাম। কেননা বংশগত কারণে যাদের সাথে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হয়, স্তন্যপান বা দুগ্ধপানের মাধ্যমেও তাদের সাথে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হয়। [১] আর নাবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকল, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে নিরাপদে রাখল।” [২] এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, মহিলাদের দুধ জমা করে ওই দুধের মুখাপেক্ষী—এমন শিশুদেরকে তা পান করানোর জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা না-জায়েজ।
আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
ফতোয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ বাকার আবূ যাইদ (রাহিমাহুল্লাহ)
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. সূরাহ নিসা: ২৩; সাহীহ বুখারী, হা/২৬৪৫।
[২]. সাহীহ বুখারী, হা/৫২; সাহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯।
·
তথ্যসূত্র:
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ২১; পৃষ্ঠা: ৪৪; ফতোয়া নং: ১৫৯৯০; দারুল মু’আইয়্যাদ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হিজরি (১ম প্রকাশ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

নববর্ষ আরবি হোক, বা বাংলা হোক, বা ইংরেজি, তা পালন করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে কয়েকজন যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানের বক্তব্য নিম্নরূপ—


·
১. সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন,
من مر ببلاد الأعاجم فصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.
“যে ব্যক্তি (অগ্নিপূজক) পারসিকদের দেশে গমন করে, অতঃপর তাদের নওরোজ (নববর্ষ) ও মেহেরজান (উৎসবের দিবস) পালন করে, আর তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং এ অবস্থাতেই মারা যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার হাশর তাদের সাথেই হবে।” [বাইহাক্বী, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২৩৪; গৃহীত: ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ), আহকামু আহলিয যিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ১২৪৮; ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুমাল্লাহ) হাদীসটিকে সাহীহ বলেছেন]
·
২. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
ليس من السنة أن نحدث عيدا لدخول السنة الهجرية أو نعتاد التهاني ببلوغه.
“হিজরী নববর্ষের আগমন উপলক্ষে উৎসব করা কিংবা নববর্ষের দিবস উপলক্ষে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানানোর রীতি চালু করা সুন্নাহ বহির্ভূত কর্ম।” [আদ্ব-দ্বিয়াউল লামি‘, পৃষ্ঠা: ৭০২; গৃহীত: sahab.net]
·
৩. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: إذا قال لي شخص كل عام وانتم بخير فهل هذه الكلمة مشروعة في هذه الأيام؟
الجواب: لا. ليست بمشروعة، ولا يجوز هذا.
প্রশ্ন: “যদি কোনো ব্যক্তি আমাকে বলে, ‘সকল বছরে আপনি ভালো থাকুন’, তাহলে এই (নববর্ষের) দিনগুলোতে এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা কি শরিয়তসম্মত হবে?”
উত্তর: “না, এই শব্দগুচ্ছ শরিয়তসম্মত নয়। এটি অবৈধ, না-জায়েজ।” [আল-ইজাবাতুল মুহিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ২৩০; গৃহীত: sahab.net]

যার জন্য তাক্বলীদ বৈধ, আর যার জন্য বৈধ নয়


·
মক্কাস্থ উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং মাসজিদুল হারামের সম্মানিত মুদার্রিস, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. ওয়াসিউল্লাহ বিন মুহাম্মাদ ‘আব্বাস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৬৭ হি./১৯৪৮ খ্রি.] বলেছেন—
❝আমরা এ ব্যাপারে বলি, মহান আল্লাহ কিতাব ও সুন্নাহর মাধ্যমে তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। যাঁরা তাঁর দ্বীনের প্রতি ইমান আনয়ন করেছেন, তাঁদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীবর্গ ছিলেন প্রথম সারির অগ্রণী। যাঁরা ইসলাম ও ইমানকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সাহাবীগণই ছিলেন সবচেয়ে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। তাঁরা ইমামুল আইম্মাহ ﷺ ব্যতীত অন্য কারও তাক্বলীদ (অনুসরণ) করতেন না।
তারপরে তাবি‘ঈ ও তাঁদের পরবর্তীগণকে কিতাব, সুন্নাহ ও সাহাবীবর্গের আসার (বর্ণনা) থেকে যে ফতোয়া দেওয়া হতো, তাঁরা কেবল তারই অনুসরণ করতেন। তখন উম্মতের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির তাক্বলীদ করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই ছিল না।
তাক্বলীদের ইতিহাস থেকে এটা সুবিদিত হয়েছে যে, উক্ত কথা (নির্দিষ্ট ব্যক্তির তাক্বলীদ করা ওয়াজিব মর্মের বক্তব্য) সোনালী (তিন) যুগ সমাপ্ত হওয়ার পরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিভিন্ন দলিলের ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘ইলমের ক্ষেত্রে মানুষ নিম্নোক্ত কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা:
১. বড়ো ‘উলামা, যাঁরা উম্মতের মধ্যে মুজতাহিদ হিসেবে পরিচিত। তাঁদেরকে ‘উলামা ও তালিবুল ‘ইলমরা চিনতে পারেন।

সংবিধান প্রণয়ন করা কি বড়ো কুফর?


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
এটি আমাদের কাছে সুবিদিত যে, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান বাদ দিয়ে অন্য বিধান দিয়ে ফায়সালা করা কঠিন গুনাহের কাজ। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তা বড়ো কুফরের পর্যায়েও পৌঁছে, যা ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করার আবশ্যকতা অস্বীকার করে, কিংবা অন্য আইন দিয়ে ফায়সালা করা বৈধ মনে করে, অথবা অন্য আইনকে আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম বা সমপর্যায়ের মনে করে, কিংবা অন্য আইনকে আল্লাহর আইন বলে চালিয়ে দেয়, তাহলে উক্ত কাজের কাজি নিঃসন্দেহে কাফির হয়ে যাবে।
কিন্তু কেউ যদি সেসব না করে স্রেফ অন্য আইন দিয়ে ফায়সালা করে, তাহলে সে কাফির হবে না। তবে উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোর মতো আরেকটি ক্ষেত্র আছে, যাকে বলা হয় তাক্বনীন বা তাশরী‘। এর অর্থ—বিধান রচনা করা বা আইন প্রণয়ন করা। কোনো ব্যক্তি যদি বিধান রচনা করে সেই বিধান দিয়ে ফায়সালা করে, তাহলে সে কাফির হবে কিনা তা নিয়ে ‘উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। আমি আবারও বলছি, এই মাসআলাহয় ‘উলামাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে।
·
সৌদি আরবের প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)’র মতে সংবিধান প্রণয়নকারী শাসক কাফির হয়ে যাবে। কেননা তিনি মনে করেন, তার দ্বারা সংবিধান প্রণীত হওয়াই প্রমাণ করে, সে এই কাজ বৈধ মনে করে। পক্ষান্তরে আইম্মায়ে সালাসাহ তথা সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায, ইমাম আলবানী ও ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহ)’র মতে সংবিধান প্রণয়নকারী কাফির হবে না।
খারিজীদের সাথে ইমাম মুহাম্মাদের বিশাল পার্থক্যটি এখানেই যে, তিনি সংবিধান প্রণয়ন করাকে বড়ো কুফর মনে করলেও সরাসরি শাসককে ‘কাফির’ আখ্যা দেন না। কিন্তু খারিজীরা সংবিধান প্রণেতা শাসককে তাকফীরের শর্তাবলি পূরণ না হতেই এবং তাকফীরের প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিলীন না হতেই ‘কাফির’ ফতোয়া দিয়ে বসে।
·
প্রিয় পাঠক, এখন কথা হলো, এই মাসআলাহয় দুটো মতের মধ্যে সঠিক কোনটি। শরিয়তের দলিলপ্রমাণ থেকে প্রতীয়মান হয়েছে যে, সংবিধান প্রণয়ন করা ছোটো কুফর—এই মতটিই সঠিক। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ বুনদার বিন নায়িফ আল-‘উতাইবী (হাফিযাহুল্লাহ)’র লেখা নান্দনিক গ্রন্থ ‘আল-হুকমু বি গাইরি মা আনযালাল্লাহ’ থেকে একটি অধ্যায় অনুবাদ করে পেশ করছি। যে গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সদস্য ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন হাসান আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)।
শাইখ বুনদার (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থের আলোচ্য অধ্যায়ে সংবিধান প্রণয়ন করা যে বড়ো কুফর নয়—তা খুবই চমৎকারভাবে অনেক দলিলপ্রমাণ দিয়ে তুলে ধরেছেন। তাহলে চলুন, পড়ে ফেলি প্রামাণ্য নিবন্ধখানি। আল্লাহ আপনার সহায় হোন।

মুফাউয়্যিদ্বাহ ও সুন্নী-রাফিদ্বী ঐক্যকামী মুফতি থেকে ফতোয়া নেওয়ার বিধান


·
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “সম্মানিত শাইখ, আল্লাহ আপনাকে সৎকর্মের তৌফিক দিন। কতিপয় আশ‘আরী, যারা তাফউয়ীদ্ব [১] করার ‘আক্বীদাহকে সালাফদের দিকে সম্পৃক্ত করে, আর মনে করে যে, আশ‘আরী ‘আক্বীদাহই হলো বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ, এবং যারা রাফিদ্বী শিয়াদের সাথে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা বৈধ মনে করে—তাদের থেকে ফিক্বহ সংক্রান্ত ফতোয়া নেওয়া কি জায়েজ হবে?”
উত্তর: “না। এরকম লোক হলো নিজে ভ্রষ্ট এবং অপরকে ভ্রষ্টকারী। যে পথভ্রষ্ট ব্যক্তিবর্গের দিকে মানুষকে আহ্বান করে, আবার আল্লাহর সিফাতকে তা’উয়ীল করার দিকে মানুষকে আহ্বান করে। এ ধরনের ব্যক্তির নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়া যাবে না এবং তাকে ফতোয়াও জিজ্ঞেস করা যাবে না; যতক্ষণ সেখানে মুহাক্বক্বিক্ব ‘উলামা রয়েছেন, সালাফী মানহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘উলামা রয়েছেন। কেবল তাঁদের কাছে প্রশ্ন করতে হবে এবং তাঁদের কাছেই ফতোয়া চাইতে হবে।”
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. তাফউয়ীদ্ব শব্দের অর্থ ন্যস্ত করা, সোপর্দ করা প্রভৃতি। আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এর পারিভাষিক অর্থ—সিফাতের শব্দাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, আর শব্দের অর্থ ও প্রকৃতত্বের ব্যাপারে স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি কোনোটাই না করে এরূপ বলা যে, এগুলো আমি আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলাম।
[২]. তা’উয়ীল শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করা। আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এর পারিভাষিক অর্থ—কোনো সিফাতের প্রকাশ্য অর্থকে অগ্রহণীয় কোনো অর্থে রূপান্তর করা। যেমন: আল্লাহর সিফাত ‘ইয়াদ’—যার অর্থ ‘হাত’—এর তা’উয়ীল করে এরূপ বলা যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুদরত বা ক্ষমতা।
·
তথ্যসূত্র:
https://www.youtube.com/watch?v=76PoZMll2GY (অডিয়ো ক্লিপ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

যারা রাফিদ্বী শিয়াদেরকে ‘কাফির’ বলে না—তাদের বিধান


·
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “হে সম্মাননীয়, আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করুন। রাফিদ্বী শিয়া, যারা সাহাবীদের গালিগালাজ করে, মুমিনদের মা ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, এবং বলে, ‘কুরআন অসম্পূর্ণ’—তাদেরকে যে ব্যক্তি ‘কাফির’ আখ্যা দেয় না, অথচ সে জানে যে তারা এগুলো সবই করে থাকে, সেই ব্যক্তির বিধান কী?”
উত্তর: “এটি ইসলাম বিনাশী কর্মাবলির মধ্যে অন্যতম একটি কর্ম। যারা আল্লাহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং আল্লাহ যে দোষ থেকে ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে মুক্ত ঘোষণা করেছেন, সে দোষে তাঁকে অভিযুক্ত করে, তারা কাফির। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে, তাঁরা মুসলিমদের ইজমা‘কে (মতৈক্যকে) অস্বীকার করছে। আর তা ব্যাপারে যে, মুনাফিক্বরা ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে যে অপবাদ দিয়েছিল, তা থেকে আল্লাহ তাঁকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন। যে ব্যক্তি তাঁকে উক্ত দোষ থেকে মুক্ত মনে করে না, সে কাফির।
কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে এবং সে মুসলিমদের ইজমা‘কে অস্বীকার করছে। আর যারা বলে, ‘কুরআন অসম্পূর্ণ’, অথবা বলে, ‘এটা সেই কুরআন নয়, যেটা মুহাম্মাদের ﷺ ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল’, অথবা বলে, ‘নবুয়ত মূলত আলীর জন্যই বরাদ্দ ছিল, কিন্তু জিবরীল ভুল করে তা মুহাম্মাদের ﷺ ওপর অবতীর্ণ করেছে’, অথবা বলে, ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হলেন উপাস্য’—তাদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
অনুরূপভাবে যে সাহাবীদেরকে কাফির আখ্যা দেয়, সেও কাফির। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ “নিশ্চয় মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বাই‘আত গ্রহণ করল, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।” [১] তিনি আরও বলেছেন, لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ “আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতিও, যারা (তাদের) সংকটকালেও নাবীর অনুগামী হয়েছিল।” [২]
তিনি আরও বলেছেন, وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ “আর যে সব মুহাজির ও আনসার (ইমান আনায়) প্রথম সারির অগ্রণী, আর যে সব লোক যথাযথভাবে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” [৩] নাবী ﷺ বলেছেন, لَا تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ “তোমরা আমার সাহাবীদের গালি দিয়ো না।” [৪]
সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবীদেরকে কাফির আখ্যা দেয়, সে কাফির। কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং সে মুসলিমদের ইজমা‘কে অস্বীকার করেছে।”
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. সূরাহ ফাতহ: ১৮।
[২]. সূরাহ তাওবাহ: ১১৭।
[৩]. সূরাহ তাওবাহ: ১০০।
[৪]. সাহীহ বুখারী, হা/৩৬৭৩; সাহীহ মুসলিম, হা/২৫৪০।
·
তথ্যসূত্র:
https://m.youtube.com/watch?v=Y9Nmt5IXYmI (অডিয়ো ক্লিপ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

শিয়া-সুন্নি ঐক্য কি আদৌ সম্ভব?

·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
পর সমাচার এই যে, অধুনা জনপ্রিয় এক ‘সুন্নি দাবিদার’ মুফতি সাহেবকে বলতে শোনা গেছে, তিনি শিয়া সম্প্রদায়কে মুসলিম মনে করেন এবং তিনি শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মত পোষণ করেন। আমরা ইতোমধ্যে শিয়াদের মৌলিক কুফরি ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে জেনেছি এবং ইরানের শিয়ারা মুসলিম কি না সে সম্পর্কেও অবগত হয়েছি। ফালিল্লাহিল হামদ। তারপরেও যাঁরা জানেন না, তাঁরা “ইরানেরা শিয়ারা কি মুসলিম”– শীর্ষক নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন। নিবন্ধের লিংক: https://tinyurl(ডট)com/tfzoctf।
এখন কথা হচ্ছে, শিয়া-সুন্নির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কি না, অথবা এর বাস্তবতা কতটুকু, আর যারা এরকম ঐক্য কামনা করে তাদের বিধানই বা কী—তা জানা দরকার। আসুন দেখি, যুগশ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণ কী বলেন।
·
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
التقريب بين الرافضة وبين أهل السنة غير ممكن؛ لأن العقيدة مختلفة، فعقيدة أهل السنة والجماعة توحيد الله وإخلاص العبادة لله سبحانه وتعالى، وأنه لا يدعى معه أحد لا ملك مقرب ولا نبي مرسل، وأن الله سبحانه وتعالى هو الذي يعلم الغيب، ومن عقيدة أهل السنة محبة الصحابة رضي الله عنهم جميعا والترضي عنهم، والإيمان بأنهم أفضل خلق الله بعد الأنبياء، وأن أفضلهم أبو بكر الصديق، ثم عمر، ثم عثمان، ثم علي، رضي الله عن الجميع، والرافضة خلاف ذلك فلا يمكن الجمع بينهما، كما أنه لا يمكن الجمع بين اليهود والنصارى والوثنيين وأهل السنة، فكذلك لا يمكن التقريب بين الرافضة وبين أهل السنة لاختلاف العقيدة التي أوضحناها.
“রাফিদ্বী শিয়া এবং আহলুস সুন্নাহকে পরস্পরের কাছে আনা অসম্ভব। কেননা (এদের) ‘আক্বীদাহ আলাদা আলাদা। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ হলো আল্লাহকে এক বলে গণ্য করা, ইবাদতকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা, এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, দু‘আর ক্ষেত্রে তাঁর সাথে আর কাউকে শরিক করা যাবে না, না কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতাকে, আর না কোনো প্রেরিত নাবীকে এবং এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলাই গায়েব জানেন।
আহলুস সুন্নাহর ‘আক্বীদাহর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে—সকল সাহাবীকে (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ভালোবাসা এবং তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, আর এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, তাঁরা হলেন নাবীগণের পরে আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি, আর তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন আবূ বাকার আস-সিদ্দীক্ব, তারপর ‘উমার, তারপর ‘উসমান, তারপর ‘আলী। আল্লাহ তাঁদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। পক্ষান্তরে রাফিদ্বীরা এর বিপরীত। তাই রাফিদ্বী এবং আহলুস সুন্নাহর মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব নয়। যেমনভাবে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মূর্তিপূজারীদের সাথে আহলুস সুন্নাহর সমন্বয় করা সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে রাফিদ্বী সম্প্রদায় এবং আহলুস সুন্নাহকে পরস্পরের কাছে আনা সম্ভব নয় ‘আক্বীদাহর ভিন্নতার কারণে, যে ‘আক্বীদাহ আমরা বর্ণনা করলাম।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ২৭; পৃষ্ঠা: ৩২৫]
·
ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এবং সালাফী দা‘ওয়াতের মুজাদ্দিদ, ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

ইরানের শিয়ারা কি মুসলিম?

·
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: ما تقولون في رجل قال: ليس هناك فرق بين سني وشيعي، بل كلهم مسلمون وهو مفت في إحدى ديار المسلمين، حيث إنهم أجريت معه مقابلة في إحدى المجلات منذ شهر ويقول: حرام علينا أن نقول هذا سني وهذا شيعي، فهل هذا الكلام لا بأس به أو ما ترون فيه؟
الجواب: هذا الكلام فيه إجمال خطأ، فإن الشيعة أقسام وليسوا قسمًا واحدًا، الشيعة أقسام، ذكر الشهرستاني أنهم اثنتان وعشرون فرقة، وهم يختلفون فيهم من بدعته تكفره، وفيهم من بدعته لا تكفره، مع أنهم في الجملة مبتدعون، الشيعة في الجملة مبتدعون، وأدناهم من فضل عليًّا على الصديق وعمر قد أخطأ وخالف الصحابة. ولكن أخطرهم الرافضة -أصحاب الخميني- هؤلاء أخطرهم، وهكذا النصيرية أصحاب حافظ الأسد وجماعته في سوريا، فالباطنية الذين في سوريا والباطنية الذين في إيران والباطنية في الهند وهم الإسماعيلية هذه الطواف الثلاثة هم أشدهم وأخطرهم، وهم كفرة، هؤلاء كفرة لأنهم والعياذ بالله يضمرون الشر للمسلمين ويرون المسلمين أخطر عليهم من الكفرة، ويبغضون المسلمين أكثر من بغضهم الكفرة، ويرون أهل السنة حل لهم دماءهم وأموالهم، وإن جاملوا في بعض المواضع التي يجاملون فيها ويرون أن أئمتهم يعلمون الغيب وأنهم معصومون ويعبدون من دون الله بالاستغاثة والذبح لهم والنذر لهم، هذه حالهم مع أئمتهم.
فالرافضة الذين هم الطائفة الاثنا عشرية ويقال لهم: الجعفرية ويقال لهم الآن: الخمينية الذين يدعون إلى الباطل الآن وهم من شر الطوائف، وهكذا طائفة النصيرية من شر الطوائف، هكذا طائفة الإسماعيلية هؤلاء باطنية .. يرون إمامة الصديق وعمر وعثمان يرونها باطلة، ويرون الصحابة كفارًا ارتدوا عن الإسلام إلا نفرًا قليلا منهم كعلي والحسن والحسين وعمار بن ياسر واثنين أو ثلاثة أو أربعة من بقية الذين يرون أنهم يوالون عليًّا فقط، وأما بقية الصحابة فعندهم أنهم مرتدون قد خرجوا عن الإسلام وظلموا عليًّا إلى غير هذا مما يقولون، نسأل الله العافية.
مع ما عندهم من غلو في أهل البيت ودعواهم أنهم يعلمون الغيب، وأن الواجب إمامتهم، وأن هذه الإمامات التي بعد علي وقبل علي كلها باطلة، وأن ما عندهم ولاية حق إلا ولاية علي والحسين فقط، أما الولايات التي من عهد النبي ﷺ إلى يومنا كلها باطلة عند الرافضة، نسأل الله السلامة.
المقصود: أن الشيعة أقسام ليسوا قسمًا واحدًا، ومنهم الزيدية المعروفون في اليمن هؤلاء عندهم التفضيل ليسوا بكفار إلا من عبد الأوثان منهم وغلا في أهل البيت ودعاهم من دون الله، أما مجرد تفضيل عليّ على الصديق وعلى عمر لا يكون كفرا ولكنه بدعة وغلط، الواجب تفضيل الصديق ثم عمر ثم عثمان على علي، علي هو الرابع رضي الله عنه وأرضاه هذا هو الحق الذي أجمع عليه الصحابة رضي الله عنهم وأرضاهم.
فالذي يفضل عليًّا عليهم يكون أخطأ ولا يكون كافرًا وإنما الكفار منهم الرافضة والنصيرية والإسماعيلية الذين يغلون في أهل البيت ويعبدونهم من دون الله ويرون أن عبادتهم جائزة وأن أئمتهم يعلمون الغيب إلى غير هذا مما يقولون نسأل الله السلامة. فالحاصل: أنهم ينظر في عقائدهم بالتفصيل ولا يقال الشيعة كلهم كفار لا، بل فيهم تفصيل وهم أقسام كثيرة.
প্রশ্ন: “ওই ব্যক্তির ব্যাপারে আপনি কী বলেন, যে বলে, সুন্নি ও শিয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই? এই ব্যক্তি একটি মুসলিম রাষ্ট্রের মুফতি। এমনকি একটি পত্রিকার সাথে তাঁর একমাস ধরে সাক্ষাৎকার চলেছে, যেখানে তিনি বলেছেন, আমাদের জন্য একথা বলা হারাম যে, এই লোক সুন্নি, আর এই লোক শিয়া। এই কথা কি ঠিক? এই কথার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”
উত্তর: “এটা সংক্ষিপ্ত কথা এবং এতে ভুল রয়েছে। কেননা শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু শ্রেণি রয়েছে, তারা স্রেফ এক শ্রেণিভুক্ত নয়। শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি শ্রেণি বা উপদল রয়েছে। শাহরাস্তানী উল্লেখ করেছেন যে, তাদের ২২টি উপদল রয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। তাদের কারও বিদ‘আত তাকে কাফির করে দেয়, আবার কারও বিদ‘আত তাকে কাফির করে না। এতৎসত্ত্বেও তারা সবাই বিদ‘আতী। শিয়ারা সবাই বিদ‘আতী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো বিদ‘আতী সে, যে আস-সিদ্দীক্ব এবং ‘উমারের ওপর ‘আলীকে প্রাধান্য দিয়েছে। বস্তুত সে ভুল করেছে এবং সাহাবীদের বিরোধিতা করেছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো রাফিদ্বীরা, যারা হলো খোমেনীর সাঙ্গপাঙ্গ। তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক শিয়া। অনুরূপভাবে নুসাইরিয়াহ সম্প্রদায়, যারা হলো সিরিয়ার হাফিজ আসাদের সাঙ্গপাঙ্গ ও তার দলের ব্যক্তিবর্গ। আর সিরিয়া, ইরান ও ভারতের বাত্বিনী সম্প্রদায়, যারা হলো ইসমা‘ঈলী সম্প্রদায়। এই তিনটি উপদল সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর শিয়া। তারা কাফির সম্প্রদায়। তারা কাফির। কেননা তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অনিষ্টকে লুকিয়ে রাখে এবং নিজেদের ওপর মুসলিমদেরকে কাফিরদের চেয়েও বিপজ্জনক মনে করে। তারা কাফিরদের চেয়ে মুসলিমদেরকে বেশি ঘৃণা করে। তারা আহলুস সুন্নাহ’র জান ও মাল নিজেদের জন্য হালাল মনে করে। যদিও তারা কিছু ক্ষেত্রে মোসাহেবি করে থাকে। তারা মনে করে, তাদের ইমামরা গায়েব (অদৃশ্য) জানে, তাদের ইমামরা নিষ্পাপ, আল্লাহকে ব্যতিরেকে ইমামদেরও ইবাদত করা যায় ফরিয়াদ, জবেহ ও মানত করার মাধ্যমে। তাদের ইমামদের ব্যাপারে এই হলো তাদের অবস্থান।
আর রাফিদ্বীরা হলো ইসনা ‘আশারিয়াহ তথা বারো ইমামিয়াহ নামক উপদল। তাদেরকে ‘জা‘ফারিয়্যাহ’-ও বলা হয়। অবশ্য এখন তাদেরকে ‘খুমাইনিয়্যাহ’ (খোমেনীর মতাদর্শের লোকজন) বলা হয়, যারা এখনও মানুষকে বাতিলের দিকে আহ্বান করে। তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপদল। অনুরূপভাবে ‘নুসাইরিয়াহ’-ও নিকৃষ্ট উপদলগুলোর অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে ইসমা‘ঈলী শিয়ারাও নিকৃষ্ট, যারা হলো বাত্বিনী শিয়া। তারা গুটিকয়েক সাহাবী ছাড়া সমস্ত সাহাবীকে ইসলাম থেকে খারিজ—মুরতাদ কাফির মনে করে। আর সেই গুটিকয়েক সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত হলেন ‘আলী, হাসান, হুসাইন, ‘আম্মার বিন ইয়াসার এবং আরও দুই, তিন বা চারজন সাহাবী, যাদেরকে তারা মনে করে যে, কেবল তারাই ‘আলীর সাথে মিত্রতা পোষণ করেছিল। পক্ষান্তরে বাকি সাহাবী তাদের কাছে মুরতাদ। তাঁরা ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছেন এবং ‘আলীর ওপর জুলুম করেছেন, ইত্যাদি আরও কথাবার্তা তারা বলে থাকে। আমরা আল্লাহ’র কাছে সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...