সালাফীদের এটি একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে, তারা আহলুল হাদীসের নিয়মানুযায়ী হাদীসকে স্বহীহ ও যয়ীফে বিভক্ত মনে করেন এবং নিজ আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে স্বহীহাইন ছাড়া অন্য সূত্রে বর্ণিত হাদীস পৌঁছালে তা যাঁচাই বাছাই এর আওতায় মনে করেন ; কারণ হাদীস স্বহীহ হয় আবার দূর্বলও হয়। তারা অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে এমন মন্তব্য করেন না যে, আবু হুরাইরা (রাযিঃ) এর হাদীস কি ভাবে দূর্বল হয়? ইবনুমাজাহ ও তিরিমিযীর হাদীস কি ভাবে যয়ীফ হয়? কিংবা এমন অজ্ঞতাপূর্ণ অযৌক্তিক মন্তব্য করেন না যে, আমরাই বড় আহলে হাদীস; কারণ আমরা স্বহীহ হাদীস মানি, হাসান হাদীসও মানি, মুরসাল হাদীসও মানি, মুনক্বাত্বা ও মুআল্লাক হাদীসও মানি। এমন মন্তব্য তাঁরাই করতে পারে, যারা হাদীসের তাস্বহীহ ও তাযয়ীফের জ্ঞান থেকে অজ্ঞ কিংবা মুহাদ্দিসগণের সুক্ষ্ম, গভীর এবং অক্লান্ত প্রচেষ্টার বিনিময়ে অর্জিত স্বহীহ হাদীসের ভান্ডারকে হীন দৃষ্টিতে দেখে এবং তা যয়ীফ বর্ণনার সাথে মিশ্রিত করে সুকৌশলে যয়ীফ ও দূর্বল হাদীসকে মুসলিম উম্মার মাঝে ছাড়িয়ে দিতে চায়। যারা জ্ঞাত বা অজ্ঞতা স্বরূপ এমন করে তাদের জন্য ইমাম মুসলিমের এই মুকাদ্দামা থেকে জ্ঞান নেওয়া উচিৎ এবং স্বহীহ ও যয়ীফ বর্ণনার মাঝে পার্থক্য করা আর স্বহীহ বর্ণনাকে আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং দূর্বল বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করার নীতি শেখা উচিৎ।
ইমাম মুসলিম স্বীয় সনদে তাবেয়ী ইবনু সীরীন থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ
“إنّ هذا العلمَ دينٌ، فانظروا عمن تأخذون دينكم”
“এই জ্ঞান (হাদীসের সূত্রের জ্ঞান) হচ্ছে দ্বীন, তাই তোমারা চিন্তা করো কার থেকে দ্বীন গ্রহণ করছো? [মুকাদ্দামা স্বহীহ মুসলিম, ইমাম নবভীর শারহ সহ ১/৪৪]
অর্থাৎ যার তার থেকে হাদীস বর্ণনা করা যাবে না; বরং জেনে বুঝে সৎ বর্ণনাকারী কর্তৃক হাদীস বর্ণনা করা কাম্য। সৎ হলে গ্রহণীয় নচেৎ নয়।
ইমাম মালেক (রাহেঃ) বলেনঃ চার প্রকার লোক থেকে ইলম গ্রহণ অবৈধঃ বোকা যার বোকামি স্পষ্ট, নিজ প্রবৃত্তির দিকে আহব্বায়ক, যে আপসের কথা-বার্তায় মিথ্যা বলে যদিও সে হাদীসের ব্যাপারে মিথ্যুক না হয় এবং এমন সম্মানিত সৎ পরহেযগার ব্যক্তি যে নিজে বুঝে না যা সে বলে।
ইবনু সীরীনের বরাতে ইমাম মুলিম আরও বলেনঃ “ইতিপূর্বে লোকেরা হাদীসের সনদ/সূত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন না কিন্তু যখন ফিতনা প্রকাশ পেল, তখন তারা বলতেনঃ তোমরা তোমাদের হাদীসের সূত্রের বর্ণনা দাও (কার থেকে শুনেছো) অতঃপর দেখা হত, বর্ণনাকারী যদি সে আহলুস সুন্নার অন্তর্ভুক্ত হত, তাহলে তার হাদীস নেওয়া হত। আর যদি সে বিদআতপন্থী হত, তাহলে তার হাদীস গ্রহণ করা হত না।” [ভূমিকা স্বহীহ মুসলিম ১/৪৪]
বুঝা গেল, হাদীসের সনদ যাঁচাই-বাছাই এর আওতায় এবং আহলুল বিদআর হাদীস প্রত্যাখ্যাত।