Saturday 28 March 2020

সম্মিলিত আজান' প্রসঙ্গে বিদআতিদের পেশকৃত হাদিস সমূহের পর্যালোচনা এবং খণ্ডন


আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি যে, মহামারী, মহা দুর্যোগ, ভাইরাস ইত্যাদি থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সম্মিলিতভাবে আজান দেয়া দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত-বিদআত। ইসলামি শরিয়তে এর নূন্যতম কোন ভিত্তি নাই। মহামারীর সময় সাহাবিগণও কখনো এমনটি করেন নি। কিন্তু বিদআতিরা তাদের বিদআত ঠিক রাখার জন্য এর সপক্ষে কয়েকটি হাদিস পেশ করে সহজ-সরল মুসলিমদেরকে ভুল বুঝিয়ে তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। আর কিছু নিতান্ত জাহেল শ্রেণীর মানুষ এসব হাদিস অন্ধের যষ্টির মতো একমাত্র সম্বল হিসেবে পেয়ে মহাখুশিতে ফেসবুকের যত্রতত্র শেয়ার করে চলেছে!

সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাস ও মহামারী থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে আজানের পক্ষে বিদআতিরা যে সকল হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করেছে সেগুলো আসলে কতটুক সঠিক বা গ্রহনযোগ্য সে সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া আমাদের সকলের জন্য খুবই জরুরি।

তাহলে এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।

মূলত: মহামারী, রোগ-ব্যাধি বা ব্যাপক দুর্যোগে সম্মিলিত অথবা একাকী আজানের পক্ষে একটিও সহিহ হাদিস নাই। এ প্রসঙ্গে তারা মৌলিকভাবে চারটি হাদিস পেশ করে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এগুলোর মধ্যে দুটি জঈফ (দুর্বল) পাশাপাশি অপব্যাখ্যার শিকার আর দুটি বানোয়াট বা জাল।

নিম্নে উক্ত চারটি হাদিস সম্পর্কে জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের মতামতের আলোকে হাদিসের মান এবং প্রাসঙ্গিক সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরা হল:

▮ ১ম হাদিস: জঈফ (দুর্বল)

Monday 23 March 2020

রমাদানের মাঝে একটি বিকট শব্দে অনেক মানুষ মারা যাওয়ার হাদিস টির তাহকিক জানতে চাই



এ হাদিস সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মতামত:
◉ শাইখ আলবানী বলেন: হাদিসটি موضوع বা বানোয়াট।
◉ ইবনুল জাওযী তার আল মাউযুআত বা বানোয়াট হাদিস সংকলন গ্রন্থে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। (৩/১৯১)
তিনি বলেন: "هذا حديث لا يصح এ হাদিসটি সহিহ নয়। কারণ এর সনদে আব্দুল ওয়াহাব নামক একজন বর্ণনাকারী আছে, তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ শক্ত আপত্তি করেছেন। যেমন:
○ ক. উকাইলী বলেন: عبد الوهاب ليس بشيء “আব্দুল ওয়াহাব কিছুই নয়।” (এ বাক্যটি দ্বারা বর্ণনাকারীর প্রতি কঠোর সমালোচনা বুঝায়।)
○ খ. ইবনে হিব্বান বলেন: كان يسرق الحديث ؛ لا يحل الاحتجاج به “সে হাদিস চুরি করত। তার বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা বৈধ নয়।”
○ গ. দারাকুতনী বলেন: منكر الحديث মুনকারুল হাদিস। এ ছাড়াও সনদে আরও সমস্যা আছে।
(শাইখ আলবানী রহ. এর সিলসিলা যঈফার ৬০৭৮ ও ৬০৭৯ নং হাদিস পর্যালোচনা থেকে সংক্ষেপিত)
◉ ইমাম যাহাবী বলেন: :باطل এ হাদিসটি বাতিল। (তারতীবুল মাউযুআত, ২৭৮)
◉ হাইসামী বলেন, এই হাদিসের বর্ণনা সূত্রে আব্দুল ওহাব ইবনুয যাহহাক নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যে মুহাদ্দিসীনদের দৃষ্টিতে মাতরূক বা পরিত্যাজ্য। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/৩১৩)
◯ ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন:
في أحاديث لا تصح في التواريخ المستقبلية
“অগ্রিম তারিখ নির্ধারণ করে বিভিন্ন ঘটনার ঘটার বেশ কিছু হাদিস পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো সহিহ নয়।” সে সব হাদিসের মধ্যে একটি হল:
يكون صوت في رمضان إذا كانت ليلة النصف منه ليلة جمعة ، يصعق له سبعون ألفا ، ويصم سبعون ألفا
“অর্ধ রমজানের জুমার রাতে একটি আওয়াজ হবে। এতে সত্তর হাজার মানুষ বেহুশ হয়ে পড়ে যাবে....সত্তর হাজার মানুষ বোবা হয়ে যাবে.....।” (আল মানারুল মুনীফ ৯৬ পৃষ্ঠা)
সুতরাং পরিশেষে বলব, আমাদের কর্তব্য, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা এবং মিথ্যা, বানোয়াট বা বিশুদ্ধ সূত্রে অপ্রমানিত হাদিস থেকে সাবধান হওয়া। কেননা বানোয়াট, জাল-জঈফ হাদিস দ্বারা ইসলামের লাভ হয় না বরং ক্ষতি হয়। পরিণতিতে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, যে ব্যক্তি জেনেশুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করে তার পরিণত হয় জাহান্নাম।
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং হকের পথে অবিচল রাখুন। আমীন।
▬▬▬▬▬●●●▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...