মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সৃষ্টি করে এমনিই ছেড়ে দেন নি; বরং তাদের গাইড লাইন স্বরূপ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং নবী-রাসূল প্রেরণ করে সেই বিধান পৌঁছে দিয়েছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ব্যাখ্যাসহ বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই সহজে বলা যেতে পারে যে, ইসলাম জানার মূল উৎস হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন এবং প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদীস, যা তাঁর কথা, কাজ ও সম্মতির সমাহার। আর এ দুটিই হচ্ছে ইসলামী জ্ঞান ও বিধানের মূল উৎস। এছাড়াও সাহাবাগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এবং কুরআন ও সুন্নার আলোকে উম্মতের মুজতাহিদ উলামাগণের ঐক্যমতও ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম উৎস হিসাবে পরিগণিত। তাই ইসলামের প্রকৃত বিধান জানতে হলে এসব উৎস থেকে গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনো নিরাপদ বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, তা জানবেন কিভাবে?
যেহেতু কিতাব এবং সুন্নাহর ভাষা আরবী এমনকি সাহাবা ও বিগত মুজতাদিগণের ভাষাও আরবী তাই কিতাব ও সুন্নাহকে নিজ ভাষায় বুঝাই হচ্ছে প্রকৃত বুঝা। আর এর যোগ্যতা অর্জন করার জন্য অনারবদের একটি দীর্ঘ সময় দিতে হয় এবং বিশেষ একাডেমিক নিয়মে তা শেখার জন্য ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয়। যারা এমন করার সাহস, সময় ও সুযোগ রাখেন, তাদের সেই নিয়মেই শেখা উচিৎ। আর যারা এমন করার ক্ষমতা রাখেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলবঃ আপনি এখন নিজ ভাষাতেও কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতু রাসূলিল্লাহ পড়তে পারেন। তা যদিও আরবী ভাষা শিখে যেভাবে বুঝা যায় সেরকম বুঝা যাবে না; কিন্তু অনেকটাই প্রয়োজন পূরণে সহায়ক হবে। এই ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হচ্ছে, কুরআন, সুন্নাহ কিংবা সালাফদের লেখা অন্যান্য আরবী বইগুলোর অনুবাদ পড়া। তাই আপনার আবশ্যকর্তব্য হচ্ছে, নির্ভযোগ্য ও যোগ্য অনুবাদকের অনুবাদ পড়া, যারতারটা না পড়া। অনুরূপ অনুবাদক ও লেখকের দ্বীনী ধ্যান-ধারনা ও নিয়ম-নীতি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা। কারণ লেখক যদি বিদআতী হয়, সালাফদের সহীহ আক্বীদা ও মানহাজের অনুসারী না হয়, বিশেষ মতবাদ ও চিন্তাধারার হয়, নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা নিরাপদ বা সঠিক হবে না এটাই স্বাভাবিক। আজকাল কুরআন মজীদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ অনুবাদ, হাদীসের মুখ্য গ্রন্থগুলোর অনুবাদ এবং বিভিন্ন আরবী বইয়ের অনুবাদ পাওয়া দুঃসাধ্য নয়। তবে পরামর্শ স্বরূপ বলবো, এগুলো নিজ ভাষায় পড়ার সময় অনেক পরিভাষা, শব্দ ও বাক্য নিজে নিজে বুঝা সম্ভবপর নাও হতে পারে। এই কারণে কিছু বিশ্বস্ত ও যোগ্য আলেমের সাথে আপনার সম্পর্ক থাকা জরুরী, যাদের কাছে আপনি স্বশরীরে অথবা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়গুলোর সমাধান জেনে নিতে সক্ষম হবেন।
মনে রাখা উচিৎ, নিজে নিজে বই পড়েই যদি সবকিছু বুঝা যেতো এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানী হওয়া যেত, তাহলে পৃথিবীতে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন থাকতো না।
Courtesy Shaykh Abdur Raquib Bukhari Hafizahullah