Thursday 22 June 2017

কোথা থেকে এবং কি ভাবে ইসলাম জানবেন?



মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সৃষ্টি করে এমনিই ছেড়ে দেন নি; বরং তাদের গাইড লাইন স্বরূপ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং নবী-রাসূল প্রেরণ করে সেই বিধান পৌঁছে দিয়েছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ব্যাখ্যাসহ বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই সহজে বলা যেতে পারে যে, ইসলাম জানার মূল উৎস হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন এবং প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদীস, যা তাঁর কথা, কাজ ও সম্মতির সমাহার। আর এ দুটিই হচ্ছে ইসলামী জ্ঞান ও বিধানের মূল উৎস। এছাড়াও সাহাবাগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এবং কুরআন ও সুন্নার আলোকে উম্মতের মুজতাহিদ উলামাগণের ঐক্যমতও ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম উৎস হিসাবে পরিগণিত। তাই ইসলামের প্রকৃত বিধান জানতে হলে এসব উৎস থেকে গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোনো নিরাপদ বিকল্প নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, তা জানবেন কিভাবে?
যেহেতু কিতাব এবং সুন্নাহর ভাষা আরবী এমনকি সাহাবা ও বিগত মুজতাদিগণের ভাষাও আরবী তাই কিতাব ও সুন্নাহকে নিজ ভাষায় বুঝাই হচ্ছে প্রকৃত বুঝা। আর এর যোগ্যতা অর্জন করার জন্য অনারবদের একটি দীর্ঘ সময় দিতে হয় এবং বিশেষ একাডেমিক নিয়মে তা শেখার জন্য ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয়। যারা এমন করার সাহস, সময় ও সুযোগ রাখেন, তাদের সেই নিয়মেই শেখা উচিৎ। আর যারা এমন করার ক্ষমতা রাখেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলবঃ আপনি এখন নিজ ভাষাতেও কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতু রাসূলিল্লাহ পড়তে পারেন। তা যদিও আরবী ভাষা শিখে যেভাবে বুঝা যায় সেরকম বুঝা যাবে না; কিন্তু অনেকটাই প্রয়োজন পূরণে সহায়ক হবে। এই ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হচ্ছে, কুরআন, সুন্নাহ কিংবা সালাফদের লেখা অন্যান্য আরবী বইগুলোর অনুবাদ পড়া। তাই আপনার আবশ্যকর্তব্য হচ্ছে, নির্ভযোগ্য ও যোগ্য অনুবাদকের অনুবাদ পড়া, যারতারটা না পড়া। অনুরূপ অনুবাদক ও লেখকের দ্বীনী ধ্যান-ধারনা ও নিয়ম-নীতি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা। কারণ লেখক যদি বিদআতী হয়, সালাফদের সহীহ আক্বীদা ও মানহাজের অনুসারী না হয়, বিশেষ মতবাদ ও চিন্তাধারার হয়, নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যা নিরাপদ বা সঠিক হবে না এটাই স্বাভাবিক। আজকাল কুরআন মজীদের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ অনুবাদ, হাদীসের মুখ্য গ্রন্থগুলোর অনুবাদ এবং বিভিন্ন আরবী বইয়ের অনুবাদ পাওয়া দুঃসাধ্য নয়। তবে পরামর্শ স্বরূপ বলবো, এগুলো নিজ ভাষায় পড়ার সময় অনেক পরিভাষা, শব্দ ও বাক্য নিজে নিজে বুঝা সম্ভবপর নাও হতে পারে। এই কারণে কিছু বিশ্বস্ত ও যোগ্য আলেমের সাথে আপনার সম্পর্ক থাকা জরুরী, যাদের কাছে আপনি স্বশরীরে অথবা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়গুলোর সমাধান জেনে নিতে সক্ষম হবেন।

মনে রাখা উচিৎ, নিজে নিজে বই পড়েই যদি সবকিছু বুঝা যেতো এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানী হওয়া যেত, তাহলে পৃথিবীতে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন থাকতো না।

Courtesy Shaykh Abdur Raquib Bukhari Hafizahullah

Wednesday 21 June 2017

মুসলিম আমীর বা শাসকদের অধিকারঃ



মুসলিম আমীর বা শাসকদের ব্যপারে আমাদের দৃষ্টিভংগি কেমন হওয়া উচিত?
ইমাম তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৩২১ হিজরী), তার বিখ্যাত আহলে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুয়া করব।”
আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।

মুসলিম আমীর বা শাসক অত্যাচারী জালেম হলে তাদের ব্যপারে ধৈর্য ধরতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধঃ
হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এক সময় আমরা অকল্যাণ ও মন্দের মধ্যে (কুফরীর মধ্যে) ডুবে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের (ঈমানের) মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন আমরা সেই কল্যাণের মধ্যে বহাল আছি। তবে এই কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, সেই অকল্যানের যুগের পর কি পুনরায় কল্যানের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ হাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যানের পর কি আবার অকল্যানের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ আসবে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ “আমার পরে এমন কিছু ইমামের (শাসক) আগমন ঘটবে, তারা আমার প্রদর্শিত পথে চলবে না এবং আমার সুন্নাত (জীবন বিধান) গ্রহন করবে না। (অর্থাৎ তারা নিজেদের খোয়াল-খুশী মত চলার পথ আবিষ্কার করে নেবে)। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে দাঁড়াবে যাদের মানব দেহে থাকবে শয়তানের অন্তর”।
আমি (হুজাইফা রাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি সেই যুগে উপনীত হই তাহলে আমি কি করব?
তিনি (সাঃ) বললেনঃ “তুমি আমীরের নির্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য কর। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত (নির্যাতন) করে এবং তোমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয় তবুও তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর”।
সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুল ইমারাহ (প্রশাসন ও নেতৃত্ব) অধ্যায়, হাদীস নং- ৪৫৫৪।
এই হাদিসে রাসুল সাঃ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেনঃ

Sunday 18 June 2017

ফিতরার হকদার কারা?



ফিতরা পাবার যোগ্য কারা বা ফিতরার হকদার কোন্ কোন্ প্রকারের লোকেরা ? এ বিষয়ে ইসলামী বিদ্বানগণের মতভেদ রয়েছে।
একদল বিদ্বান মনে করেন: যারা সাধারণ সম্পদের যাকাতের হকদার তারাই ফিতরের যাকাতের (ফিতরার) হকদার। আর তারা হল আট প্রকারের লোক:
১- ফকীর
২- মিসকিন
৩- সাদাকা আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী
৪- যাদের অন্তর ইসলামের পথে আকর্ষণ করা প্রয়োজন
৫-দাস-মুক্তির জন্যে
৬- ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে
৭- আল্লাহর রাস্তায়
৮- মুসাফিরদের সাহায্যার্থে ( সূরা তওবা /৬০]
🔊এই মত পোষণকারীদের দলীল হল : ফিতরের সাদাকাকে অর্থাৎ ফিতরাকে নবীজী যাকাত ও সাদাকা বলেছেন তাই যেটা মালের যাকাতের খাদ হবে, সেটাই ফিতরারও হবে। সাদাকার যেই খাদ আল্লাহ সূরা তওবায় উল্লেখ করেছেন সেই খাদ সাদাকাতুল ফিতরের জন্যও হবে।
অন্য এক দল বিদ্বান মনে করেন : সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকীর মিসকিনদের হক, অন্যদের নয়।
📖এই মত পোষণকারীদের দলীল হল : ইবনে আব্বাস (রাযি:) এর হাদীস, তিনি বলেন :
আল্লাহর রাসূল ফিতরের যাকাত (ফিতরা) ফরয করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ .. ’’ [আবু দাউদ, যাকাতুল ফিতর নং ১৬০৬/ হাদীস হাসান, ইরওয়াউল গালীল নং ৮৪৩]
এই মতকে সমর্থন জানিয়েছেন ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যূম, শাওকানী, আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীন সহ আরও অনেকে। [ দেখুন: মাজমুউ ফাতাওয়া ২৫/৭৩,যাদুল মাআদ ২/২২, নায়লুল আউত্বার ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা’বূদ ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি ৬/১৮৪]
💰এই মতটিই অধিক সহীহ কারণ :

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...