Friday 16 August 2019

বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়ার মাসআলাহ’য় উদ্ভূত কয়েকটি বহুল প্রচলিত সংশয়ের জবাব


·
❏ ১ম সংশয়: বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়ার ক্ষেত্রে যারা বলে, ‘আমরা তাদের থেকে হকটা নিব, আর বাতিলটা বর্জন করব’ তাদের খণ্ডন
আমরা ইতোমধ্যে বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার বিধান জেনেছি। এখন আমরা একটি সংশয়ের জবাব জানব, যা কতিপয় ব্যক্তি উত্থাপিত করে থাকে। আর তা হলো—“বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা জায়েজ; কারণ আমরা তাদের থেকে হকটা নিব, আর বাতিলটা বর্জন করব।”
প্রথমত, সাধারণভাবে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা না-জায়েজ, যা আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি।
দ্বিতীয়ত, এই মূলনীতি সালাফদের মানহাজ বিরোধী। কেননা তাঁরা এই মূলনীতি অনুসরণ করে ‘ইলম গ্রহণ করেননি। বরং তাঁদের মূলনীতি ছিল—যার কাছ থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা হবে, তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং সে বিশ্বস্ত ও যোগ্য প্রমাণিত হওয়ার পর তার কাছ থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺰَّﻣَﺎﻥِ ﺩَﺟَّﺎﻟُﻮﻥَ ﻛَﺬَّﺍﺑُﻮﻥَ ﻳَﺄْﺗُﻮﻧَﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻷَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﺑِﻤَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻭَﻻَ ﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻓَﺈِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻫُﻢْ ﻻَ ﻳُﻀِﻠُّﻮﻧَﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻧَﻜُﻢْ “শেষ যুগে কিছু সংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনও তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোনোনি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনাহ’য় না ফেলতে পারে।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৭; ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৪]
·
প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন, ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺩِﻳﻦٌ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ “নিশ্চয় এ ‘ইলম হলো দ্বীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছ তা যাচাই করে নাও।” [সাহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫]
শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমাম মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন, لا يؤخذ العلم عن أربعةٍ: سفيهٍ يُعلن السفهَ وإن كان أروى الناس، وصاحب بدعةٍ يدعو إلى هواه، ومن يكذب في حديث الناس وإن كنتُ لا أتَّهمه في الحديث، وصالحٌ عابدٌ فاضلٌ إذا كان لا يحفظ ما يحدِّث به “চার ধরনের লোক থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা যাবে না: (১) সেই নির্বোধ লোক, যে প্রকাশ্যে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে; যদিও সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী হয়। (২) সেই বিদ‘আতী, যে তার প্রবৃত্তির দিকে মানুষকে আহ্বান করে। (৩) যে ব্যক্তি মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা বলে, যদিও আমি তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করি না। (৪) সেই সৎকর্মপরায়ণ ইবাদতগুজার মহৎ বান্দা, যে নিজের বর্ণিত হাদীস স্মরণে রাখতে পারে না।” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
সুতরাং সত্যবাদী, দ্বীনদার এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে ‘ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা আবশ্যক, বিদ‘আতীর কাছ থেকে নয়।
·
তৃতীয়ত, এই সংশয়ের ব্যাপারে তাই বলব, যা বলেছেন ফাদ্বীলাতুশ শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি বলেছেন, نعم، الحق يؤخذ من كل من قاله، والسلف الصالح لا يتوقفون عن قبول الحق، مع ذلك لم يقولوا خذ الحق من كتب أهل البدع واترك الباطل، بل نادوا بأعلى أصواتهم بتركها كلياً، بل وأوجبوا إتلافها، وذلك لأنّ الحق الموجود في كتب أهل البدع إنما هو مأخـوذ من الكتاب والسنّة، فوجب أن نأخذ الحق من مصادره الأصلية، التي لا يشوبها كدر ولا بدعة، إذ هي المعين الصافي والماء العذب “হ্যাঁ, যে ব্যক্তিই হক বলবে, তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ হক গ্রহণ করা থেকে বিরত হতেন না। এতৎসত্ত্বেও তাঁরা কখনো বলেননি যে, তোমরা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো। বরং তাঁরা উচ্চৈঃস্বরে বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পুরোপুরি বর্জনের আহ্বান করেছেন। এমনকি তাঁরা সেই বইপুস্তক ধ্বংস করা ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। এটা একারণে যে, বিদ‘আতীদের বইপুস্তকে বিদ্যমান হক মূলত কিতাব ও সুন্নাহ থেকে গৃহীত। সুতরাং আমাদের জন্য হকের প্রকৃত উৎস থেকেই হক গ্রহণ করা ওয়াজিব, যে উৎসগুলোতে কোনো পঙ্কিলতা ও বিদ‘আত সংমিশ্রিত হয়নি। যেহেতু এটাই হলো নির্মল ঝরনা এবং সুপেয় পানি।” [শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৪; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
·
❏ ২য় সংশয়: সাহাবী আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) নাকি শয়তানের কাছ থেকে শরিয়তের ‘ইলম নিয়েছিলেন?
যারা বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়ে এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শুনে তাদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করার জন্য উপরিউক্ত বিদ‘আতী মূলনীতি আবিষ্কার করেছে, তারা তাদের নবআবিষ্কৃত মূলনীতির পক্ষে একটি হাদীস পেশ করে। আর তা হলো—সাহাবী আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র সাথে শয়তানের ঘটনা সংবলিত হাদীস। তারা বলে, স্বয়ং আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শয়তানের নিকট থেকে আয়াতুল কুরসীর ফজিলত সম্পর্কিত ‘ইলম গ্রহণ করেছেন।
ঘটনাটির সারসংক্ষেপ হচ্ছে—একবার রাসূল ﷺ আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে যাকাতুল ফিত্বরের মাল পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরপর তিন রাতে শয়তান মানুষের রূপ ধরে সেই মাল চুরি করতে এসে আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কাছে ধৃত হয়েছিল। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাকে রাসূল ﷺ এর কাছে নিয়ে যেতে চাইলে প্রতিবারই সে অনেক অনুনয়-বিনয় করে এবং বলে যে, ‘আমি খুবই দরিদ্র।’ শেষদিন আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাকে রাসূল ﷺ এর কাছে নিয়ে যেতে চাইলে সে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব, যা দিয়ে আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন।’ আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ‘সেটা কী?’ শয়তান বলল, ‘যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়বে। তখন আল্লাহ’র তরফ হতে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ ফলে তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূল ﷺ কে বিষয়টি জানালে তিনি ﷺ বললেন, “সাবধান! এ কথা সে তোমাকে সত্য বলেছে বটে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক (أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ)।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৩১১]
·
বিদ‘আতীদের নিকট ‘ইলম নেওয়াকে বৈধ জ্ঞানকারী ব্যক্তিবর্গ এই হাদীস থেকে দলিল গ্রহণ করে বলেছে যে, আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শয়তানের নিকট থেকে ‘ইলম নিয়েছেন। সুতরাং বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা জায়েজ।
আমি বলছি, আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শয়তানের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করেছেন, এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শয়তানের কথা রাসূল ﷺ এর কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। রাসূল ﷺ সেই কথার সত্যায়ন করার পর তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সরাসরি শয়তানের কথা শুনে তার উপর আমল করা শুরু করে দেননি। এছাড়াও তাদের এই ইস্তিদলাল (দলিল গ্রহণ) যে বাতিল, তা উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণও বলেছেন।
·
‘আলিমগণের বক্তব্য: ❝শয়তানের সাথে সাহাবী আবূ হুরাইরাহ’র ঘটনায় কি বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণের দলিল রয়েছে?❞
১ম বক্তব্য:
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل يؤخذ من قصة أبي هريرة مع الشيطان قبول الحق إذا جاء به الكافر أو المبتدع وعدم رد كلامه جملا وتفصيلا؟
الشيخ: أبو هريرة حريص على الخير، والصحابة كذلك، فهو قبله لما عرضه على النبي ﷺ وصدقه النبي ﷺ.
السؤال: قصدي قبول الحق من الكافر أو المبتدع؟
الشيخ: هذا .. آخر؛ لأن هذا الدليل أبو هريرة ما قبله إلا بعدما عرضه على النبي ﷺ وصدقه النبي في الآية الكريمة.
প্রশ্ন: “শয়তানের সাথে আবূ হুরাইরাহ’র ঘটনা থেকে কি এই দলিল গৃহীত হবে যে, কাফির বা বিদ‘আতীও যদি হক নিয়ে আসে তাহলে তা গ্রহণ করতে হবে এবং তার কথা সংক্ষিপ্ত (ইজমালী) ও বিস্তারিতভাবে (তাফসীলী) রদ করা যাবে না?”
শাইখ: “আবূ হুরাইরাহ কল্যাণের অভিলাষী ছিলেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য সাহাবীগণও এরূপ ছিলেন। তিনি কথাটি তখনই গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি তা নাবী ﷺ এর কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নাবী ﷺ সে কথাটি সত্যায়ন করেছিলেন।”
প্রশ্ন: “আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে কাফির বা বিদ‘আতীর নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করার ইস্যু।”
শাইখ: “এটি... ভিন্ন বিষয়। কেননা এই দলিলে আবূ হুরাইরাহ (শয়তানের) কথাটি কেবল তখনই গ্রহণ করেছিলেন, যখন তিনি তা নাবী ﷺ এর কাছে উপস্থাপন করেছিলেন এবং নাবী ﷺ ওই মহান আয়াতটির ব্যাপারে সে কথা সত্যায়ন করেছিলেন।” [দ্র.: https://tinyurl.com/y9nnrpmx (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট– binbaz.org.sa এর আর্টিকেল লিংক)]
·
২য় বক্তব্য:
দক্ষিণ সৌদি আরবের মুফতী, আল-ফাক্বীহুল মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন-নাজমী (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: أحسن الله إليكم، فضيلة الشيخ يستدل بعض أهل الأهواء على جواز أخذ العلم من أهل البدع، كما أخذ أبو هريرة آية الكرسي من الشيطان، فما تقولون تجاه هذه الشبه؟
الجواب: لا حول ولا قوة إلا بالله، هذا استدلال في غير محله، فالنبي ﷺ قال: (صدقك وهو كذوب) ومتى تعتمد على ذلك الشيطان حتى نقول نستدل به، هذا كلام في غير محله واستدلال باطل، ثم أن الإنسان يقال له: أنتقي التتلمذ على من عنده بدعة وعلى من عنده انحراف، بل ويخشى أن ينفث شيئًا من انحرافه في الكلام الذي يقوله للطالب الذي عنده فيخرج مقتنعًا به.
الأمر الثالث: أن من تتلمذ على شخص راضيًا عنه يعني-يُجِلُّه-ويحترمه، وإذا كان هذا يعني صاحب عقيدة سيئة، فإن كونك تتعلم منه، يؤدي بك هذا تجل من لا يستحق الإجلال وتحترم من لا يستحق الاحترام.
والاحترام أخي بلال يكون لأهل الحق، هذا الواجب، أما أهل الباطل فلا يجوز احترامهم ولا إجلالهم.
প্রশ্ন: “আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। সম্মানিত শাইখ, কতিপয় বিদ‘আতী লোক বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণের বৈধতার ব্যাপারে এই দলিল গ্রহণ করেছে যে, আবূ হুরাইরাহ শয়তানের নিকট থেকে আয়াতুল কুরসী গ্রহণ করেছেন। এই সংশয়ের ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?”
উত্তর: “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত কারও কোনো শক্তি ও সামর্থ্য নেই)। এই দলিলগ্রহণ হয়েছে অপাত্রে। নাবী ﷺ বলেছেন, “সে তোমাকে সত্য বলছে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক।” তিনি কখন ওই শয়তানের উপর নির্ভর করলেন যে, আমরা এর দ্বারা দলিলগ্রহণের কথা বলব?! এটি অপাত্রে বলা কথা এবং বাতিল ইস্তিদলাল (দলিলগ্রহণ)। তারপর ওই ব্যক্তিকে বলতে হবে, আমরা কি ওই ব্যক্তির কাছে শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপদ, যার বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা আছে? বরং এই আশঙ্কা করা হয় যে, সে তার ছাত্রের উদ্দেশ্যে যে কথা বলে, সে কথায় স্বীয় ভ্রষ্টতার কিয়দংশ উৎক্ষেপণ করবে; ফলে ওই ছাত্র তার (উস্তাযের) ভ্রষ্টতায় পরিতুষ্ট হয়ে বের হবে। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে তুমি যার কাছে সন্তুষ্টচিত্তে শিক্ষাগ্রহণ করবে, তাকে সম্মান করতে হবে। যখন সে মন্দ ‘আক্বীদাহসম্পন্ন হবে, আর তুমি তার কাছে শিক্ষাগ্রহণ করছ, তখন তোমাকে এই শিক্ষাগ্রহণ এই বিষয়ের দিকে ঠেলে দিবে যে, তুমি এমন ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করছ যে মূলত শ্রদ্ধার হকদার নয়, এমন ব্যক্তিকে সম্মান করছ যে মূলত সম্মানের হকদার নয়। হে আমার ভাই বিলাল! সম্মান তো করতে হবে হকপন্থিদের। এটি ওয়াজিব। পক্ষান্তরে বাতিলপন্থিদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করা জায়েজ নয়।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php….]
·
৩য় বক্তব্য:
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: بعض أهل البدع يحتج بحديث أبي هريرة أنه يجوز الدراسة على أهل البدع لكون أبا هريرة أخذ العلم من الشيطان.
الجواب: أخذ العلم من الرسول ﷺ، ما أخذ عن الشيطان، الرسول هو الذي أخبره بذلك، ولم يأخذ هذا عن الشيطان، ولم يعتمد على قول الشيطان، وإنما اعتمد على قول الرسول ﷺ: (صدقك وهو كذوب). هذا من الإستدلال الباطل، هذا الكلام من الإستدلال الباطل، نعم.
প্রশ্ন: “কতিপয় বিদ‘আতী আবূ হুরাইরাহ’র হাদীসকে এই বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ পেশ করেছে যে, বিদ‘আতীদের কাছে অধ্যয়ন করা বৈধ; কারণ আবূ হুরাইরাহ শয়তানের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করেছেন।”
উত্তর: “তিনি রাসূল ﷺ এর নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করেছেন, শয়তানের নিকট থেকে নয়। রাসূল ﷺ তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছিলেন যে, কথাটি সত্য। তিনি এটা শয়তানের নিকট থেকে গ্রহণ করেননি। তিনি শয়তানের কথার উপর নির্ভরও করেননি। বরং তিনি রাসূল ﷺ এর এই কথার উপর নির্ভর করেছেন, “সে তোমাকে সত্য বলেছে, কিন্তু সে মহামিথ্যুক।” এটি বাতিল ইস্তিদলালের অন্তর্ভুক্ত। এই কথা বাতিল ইস্তিদলালের অন্তর্ভুক্ত। না‘আম।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/audio/1135.]
·
৪র্থ বক্তব্য:
প্রখ্যাত ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সা‘ঈদ রাসলান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৯৫৫ খ্রি.] বলেছেন,
بعض أهل الزيغ والضلال يقول: نحن نتعلم من أهل البدع والضلال والزيغ والهوى لأننا نتعلم حتى من الشيطان، بدليل أن أبا هريرة رضي الله عنه أطلق ذلك الشيطان لما قال له ما قال بشأن آية الكرسي، هؤلاء يريدون أن يتعلموا من الشيطان، فليتعلموا من الشيطان، وأما أهل السنة فيقولون لولا النبي ﷺ اعتمد هذا الذي قاله الشيطان ما التفتنا إليه، لولا أن النبي ﷺ قال: (صدقك) فاعتمده ما قبلناه. فأهل الزيغ والضلال، ختم الله على قلوبهم، يقولون: نأخذ من كل أحد، ولو من الشيطان! خذوا من الشيطان.
“কতিপয় ভ্রষ্ট বিপথগামী বলে, আমরা পথভ্রষ্ট বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করি। এমনকি আমরা খোদ শয়তানের নিকট থেকেও ‘ইলম গ্রহণ করব। এই দলিলের ভিত্তিতে যে, আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ওই শয়তানকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যখন সে তাঁকে আয়াতুল কুরসীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেছিল। তারা শয়তানের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করতে চায়! তো তোমরা শয়তানের নিকট থেকেই ‘ইলম গ্রহণ করো! পক্ষান্তরে আহলুস সুন্নাহ বলে, যদি নাবী ﷺ শয়তানের কথার স্বীকৃতি না দিতেন, তাহলে আমরা ওই কথার দিকে ভ্রুক্ষেপ করতাম না। যদি নাবী ﷺ “সে তোমাকে সত্য বলেছে”—কথাটি বলে সে কথার স্বীকৃতি না দিতেন, তাহলে আমরা তা গ্রহণ করতাম না। কিন্তু ভ্রষ্ট বিপথগামীদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন। ফলে তারা বলে, আমরা প্রত্যেকের নিকট থেকে ‘ইলম নিব, যদি সে শয়তান হয় তবুও। তাহলে যাও, তোমরা শয়তানের নিকট থেকেই ‘ইলম নাও!” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=qDppy7R-LkU (ভিডিয়ো ক্লিপ)]
·
৫ম বক্তব্য:
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের অধ্যাপক, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রাহীম আল-বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,
قال: كيف يرد على من يقول: خذ العلم من أي شخص حتى عن صاحب البدعة، ويستدل بأن أبا هريرة رضي الله عنه أخذ الحق من الشيطان، في قصة قراءة آية الكرسي، هذا يفهم ما يقرأ في حديث آية الكرسي؟ يفهم الحديث في الصحيح؟ يفهم؟ آخر الحديث ماذا قال النبي ﷺ؟ وهو في هذه يعني صدق وأراد التخلص، وهو كذوب، هكذا حاله، وهكذا حال أتباعه، هذا أمر. الأمر الثاني: نهجر ونترك أئمة السنة قاطبة الذين ما قالوا بهذا الإطلاق، ونأخذ بقول هذا الأخ الذي يفهم هذا الفهم الأعوج ويستدل هذا الإستدلال غير المنضبط، هل قال العلماء أهل السنة النبلاء: خذ العلم عن كل شخص حتى عن صاحب بدعة؟ هل يقول هذا الكلام رجل عرف معنى العلم ودرس على أصول أهله؟ لا يوجد هذا. ... والناظر في كلام الأئمة وتقريراتهم يظهر له بجلاء أن هذا الإطلاق إطلاق باطل، لا قائل به من علماء السنة.
“তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তিকে কীভাবে রদ করা যায়, যে বলে, যে কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে, এমনকি বিদ‘আতীর নিকট থেকেও ‘ইলম গ্রহণ করো এবং সে এই বিষয়ের মাধ্যমে দলিল গ্রহণ করে যে, আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) শয়তানের নিকট থেকেও হক গ্রহণ করেছেন, আয়াতুল কুরসী পাঠের ঘটনায়। সে কি আয়াতুল কুরসীর হাদীস থেকে যা পড়েছে তা বুঝেছে? সে কি ‘আস-সাহীহ’ গ্রন্থের হাদীসটি বুঝেছে? বুঝেছে? হাদীসের শেষাংশে নাবী ﷺ কী বলেছেন? শয়তান এক্ষেত্রে সত্য বলেছে এবং সে নিষ্কৃতি কামনা করেছে, তবে সে মহামিথ্যুক। এই হলো তার অবস্থা। তার অনুসারীদের অবস্থাও অনুরূপ। এটি একটি বিষয়। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে—আমরা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ’র ইমামগণকে পরিত্যাগ ও বর্জন করছি, যারা এই সরলীকরণের মত ব্যক্ত করেননি। আমরা এই ভাইয়ের কথাটি কবজা করব, যিনি এই বাঁকা বুঝ বুঝেছেন এবং নিয়মবহির্ভূত ইস্তিদলাল দিয়ে দলিল গ্রহণ করেছেন। আহলুস সুন্নাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘আলিমগণ কি বলেছেন যে, তোমরা প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট থেকে এমনকি বিদ‘আতীর নিকট থেকেও ‘ইলম গ্রহণ করো? যে ব্যক্তি ‘ইলমের মানে বুঝেছে এবং ‘আলিমদের মূলনীতির উপর অধ্যয়ন করেছে, সে কি এই কথা বলে? এরকমটা পাওয়া যায় না। ‘আলিমদের কথাবার্তা ও সিন্ধান্ত পর্যবেক্ষণ করেছে, এমন ব্যক্তির কাছে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হবে যে, এই সরলীকরণ একটি বাতিল সরলীকরণ। সুন্নাহ’র ‘আলিমদের মধ্যে কেউ এই কথা বলেননি।” [দ্র.: https://m.youtube.com/watch?v=DBCsfMysBxU (অডিয়ো ক্লিপ)]
উপরিউক্ত ‘আলিমগণের বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র সাথে শয়তানের ঘটনায় বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণের কোনো দলিল নেই।
·
❏ ৩য় সংশয়: সূরাহ যুমারের ১৮ নং আয়াতে না কি বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ সিদ্ধ হওয়ার দলিল রয়েছে?
কতিপয় বিদ‘আতী সূরাহ যুমারের ১৮ নং আয়াতকে দলিল হিসেবে পেশ করে বলে, বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা জায়েজ। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, فَبَشِّرْ عِبَادِ * الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ “অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে, তারপর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে, তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেন, আর তারাই বুদ্ধিমান।” [সূরাহ যুমার: ১৭-১৮] সুতরাং আমরা সবার কথা শুনব, কিন্তু তার মধ্য থেকে কেবল হকটাই গ্রহণ করব।
·
সংশয়ের জবাব:
প্রথমত, বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করার বিধান আমরা উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বাণী থেকে জেনেছি। বলাই বাহুল্য যে, বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা হারাম।
দ্বিতীয়ত, এই সংশয়ের জবাব হিসেবে বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, জারাহ ও তা‘দীলের ঝাণ্ডাবাহী মুজাহিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র ফাতওয়াই যথেষ্ট মনে করছি। ফাতওয়াটি নিম্নরূপ—
السؤال: ما هو التوجيه في قوله تعالى: (فبشر عباد الذين يستمعون القول فيتبعون أحسنه)، وبعض الناس يقولون: المراد بهذه الآية نسمع قول كل شخص ونأخذ أحسنه.
الجواب: تسمع إلى اليهود والنصارى والشيوعيين وأنت جاهل وإلى الخرافيين والمبتدعين وأنت جاهل ولك أن تميز بين الحق والباطل، أنت ما تعرف الحسن والأحسن والباطل والضلال، فطبعا السلف أفقه منا بهذا المنهج في تفسير هذه الآية ومنها مما أقوله لكم أن رسول الله تلى قول الله تبارك وتعالى : هُوَ الَّذِيَ أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ فَأَمَّا الَّذِينَ في قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاء الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاء تَأْوِيلِهِ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلاَّ اللّهُ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلاَّ أُوْلُواْ الألْبَابِ، تلى هذه الآية ثم قال: (فإذا رأيت الذين يتبعون ما تشابه منه، فأولئك الذين سمى الله فاحذروهم). فأخذ السلف من هذا -كبار أئمة السلف- أن أهل البدع أهل خبث ومقاصد سيئة فلا تسمع له، حتى مثل ابن سيرين وهو من أئمة الإسلام لا يسمع القرآن من المبتدع، القرآن! لمذا؟ لأنه يسوق المتشابه ليضلك، يعني يدخل الفتنة، ويقصد صرفك عن الحق، فهذا عرف من واقع أهل البدع ومكايدهم ومما استفاده من القرآن ومن التوجيه النبوي أنك لا تسمع لأهل الباطل ولا تسمع للباطل، وهذا فهم السلف أطبقوا على ذلك، وأجمعوا على التحذير من أهل البدع وهجرانهم ومقاطعتهم، واتفقوا على التحذير من قراءة كتبهم، وهذا يرجع إلى نفس المكيدة التي حكيتها لكم سابقا: يقول: اقرأ وخذ الحق ودع الباطل، وأنت لا تميز بين الحق والباطل فتقع في هوة الضلال، فإذا كنت أنت مميزا، عالما ثابتا على المنهج السلفي تدرك من نفسك أنك تستطيع أن تقرع الحجة بالحجة وتبين بعض الشبه، تقرأ لأهل البدع لا لتستفيد، إنما تقرأ لتعرف باطلهم فتحذر الناس منه، وإذا عرفت من نفسك ضعفا -ولو كنت عالما- فعليك أن نبتعد عن مجالسة أهل البدع وعن قراءة كتبهم والنظر فيها، وقد سقت لكم أمثلة لبعض الشخصيات الكبيرة وقعت في الضلال والبدعة بسبب ركونهم في شيء -ولو قليل- لأهل البدع، بارك الله فيكم، فليس مراد الآية إنك تسمع الحق والباطل وتأخذ الحق، الباطل تبتعد عنه خاصة إذا كنت ضعيفا، بارك الله فيكم.
প্রশ্ন: “মহান আল্লাহ’র এই বাণীর দিকনির্দেশনা কী, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে, তারপর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে।” (সূরাহ যুমার: ১৭-১৮)? কতিপয় লোক বলছে, এই আয়াতের উদ্দিষ্ট অর্থ হলো—আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কথা শুনব, আর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করব।”
উত্তর: “তুমি ইহুদি, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টদের কথা শুনবে, অথচ তুমি জাহিল তথা অজ্ঞ! তুমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের এবং বিদ‘আতীদের কথা শুনবে অথচ তুমি অজ্ঞ! তোমাকে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে, অথচ তুমি জানো না কোনটা ভালো, আর কোনটা অধিক ভালো, কোনটা বাতিল, আর কোনটা ভ্রষ্টতা! স্বভাবতই সালাফগণ এই আয়াতের তাফসীর করার ক্ষেত্রে এই মানহাজ সম্পর্কে আমাদের চেয়ে অধিক সমঝদার ছিলেন। তন্মধ্যে আমি তোমাদেরকে বলছি, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ মহান আল্লাহ’র এই বাণী তেলাওয়াত করলেন—“তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে দ্ব্যর্থহীন আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো দ্ব্যর্থবোধক। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে দ্ব্যর্থবোধক আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ব, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেকসম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ৭)
তিনি এই আয়াত পাঠ করার পর বললেন, “যারা মুতাশাবাহাত (দ্ব্যর্থবোধক) আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে, তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা ক্বুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে।” (সাহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৫)
সালাফগণ—সালাফদের মধ্যে বড়ো বড়ো ইমামগণ—এই হাদীস থেকে এই বুঝ গ্রহণ করেছেন যে, বিদ‘আতীরা দুষ্কর্মকারী এবং মন্দ অভিলাষ পোষণকারী। সুতরাং তুমি তাদের কথা শুনো না। এমনকি ইবনু সীরীন—যিনি ইসলামের একজন অন্যতম ইমাম—বিদ‘আতীর নিকট থেকে ক্বুরআন পর্যন্ত শুনতেন না। ক্বুরআন! কেন? কেননা সে (বিদ‘আতী) দ্ব্যর্থবোধক আয়াত বর্ণনা করবে, তোমাকে বিপথগামী করার জন্য। মানে সে ফিতনাহ প্রবিষ্ট করবে এবং তোমাকে হক গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে চাইবে।
এটা বিদ‘আতীদের ঘটনা ও চক্রান্ত থেকে জানা গেছে। আর ক্বুরআন ও নাবাউয়ী নির্দেশনা যে বিষয়টি অবহিত করে, তা হচ্ছে—তুমি বাতিলপন্থিদের শ্রবণ কোরো না এবং বাতিলকেও শ্রবণ কোরো না। এটাই সালাফদের বুঝ, যে ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন। বিদ‘আতীদের থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে এবং বিদ‘আতীদের বর্জন ও তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন। অনুরূপভাবে তাদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করার ব্যাপারেও একমত হয়েছেন। আর এটাই (বইপুস্তক পড়া) তাদের চক্রান্তের মূলে ফিরে যায়, যে চক্রান্তের কথা আমি ইতঃপূর্বে তোমাদের কাছে বর্ণনা করেছি। তারা বলে, পড়ো, হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো। অথচ তুমি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে জানো না। ফলে তুমি ভ্রষ্টতার গর্তে পতিত হও।
তুমি যদি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী এবং সালাফী মানহাজের উপর অবিচল ‘আলিম হও, আর তুমি নিজের ব্যাপারে আস্থাবান হও যে, তুমি দলিল দিয়ে দলিলকে আঘাত করতে পারবে এবং কিছু সংশয় বিশদভাবে বর্ণনা করতে পারবে, তাহলে তুমি বিদ‘আতীদের লেখা পড়ো। তাদের লেখা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য নয়। বরং তুমি তাদের বাতিল বিষয় জানার জন্য তাদের লেখা পড়বে, যাতে করে তুমি তাদের বাতিল কর্ম থেকে মানুষকে সতর্ক করতে পার। আর যখন তুমি জানো যে, তোমার মধ্যে দুর্বলতা আছে—যদিও তুমি একজন ‘আলিম—তাহলে তোমার জন্য বিদ‘আতীদের সাথে ওঠাবসা থেকে এবং তাদের বইপুস্তক পড়া থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
আমি তোমাদের কাছে কয়েকজন বড়ো বড়ো ব্যক্তিত্বের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি, যারা কোনো কোনো বিষয়ে—যদিও তা অল্প কিছু ক্ষেত্রে—বিদ‘আতীদের প্রতি নির্ভর করার কারণে ভ্রষ্টতা ও বিদ‘আতে পতিত হয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বরকত দিন। আয়াতের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তুমি হক-বাতিল উভয়ই শুনবে আর কেবল হকটাই গ্রহণ করবে। বরং তুমি বাতিল থেকে দূরে থাকবে। বিশেষ করে যখন তুমি (‘ইলমে) দুর্বল হও। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বরকত দিন।” [দ্র.: www.rabee.net/ar/questions.php?cat=31&id=670.]
·
❏ ৪র্থ সংশয়: মুহাদ্দিসগণ বিদ‘আতীদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন, সুতরাং বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়া যাবে
কতিপয় বিদ‘আতী ও ধোঁকাগ্রস্ত সালাফী এই সংশয় উত্থাপন করে যে, মুহাদ্দিসগণ যেহেতু বিদ‘আতীদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন, সুতরাং তাদের নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়া যাবে।
সংশয়ের জবাব: দশ দিক থেকে এই সংশয়ের জবাব দেওয়া যায়। যথা—
প্রথমত, সালাফদের নিকট গৃহীত মূলনীতি হলো বিদ‘আতীর বর্ণনা (রিওয়াইয়াত) গ্রহণ না করা। পক্ষান্তরে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর কথা স্বতন্ত্র। যেমন প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন, “এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত না। কিন্তু পরে যখন ফিতনাহ (হাদীসের নামে মিথ্যা কথার আমদানী) দেখা দিলো, তখন লোকেরা হাদীস বর্ণনাকারীদেরকে বলল, ‘তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করেছ, আমাদের কাছে তাদের নাম বল।’ ফলে দেখা হতো তারা আহলুস সুন্নাহ কি না? যদি তারা আহলুস সুন্নাহ হতো, তাহলে তাদের হাদীস গ্রহণযোগ্য হতো। আর যদি দেখা যেত তারা বিদ‘আতী, তাহলে তাদের হাদীস গ্রহণ করা হতো না।” [সাহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫]
দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ ‘আলিম—যাঁদের মধ্যে আছেন ইমাম আহমাদ—এ দিকে গিয়েছেন যে, বিদ‘আতীর কাছ থেকে কেবল তখনই রিওয়াইয়াত করা হবে, যখন সে গাইরে দা‘ইয়াহ (বিদ‘আতের দিকে আহ্বানকারী নয় এমন) হবে। তাহলে কীভাবে এই বিষয়কে আমভাবে বৈধ বলে দাবি করা যায়?
·
তৃতীয়ত, একটি বিষয় সালাফদেরকে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে রিওয়াইয়াত করতে বাধ্য করেছিল। সেটা হলো—রাসূল ﷺ এর হাদীসের সংরক্ষণ। কেননা ঢালাওভাবে রিওয়াইয়াত বর্জন করলে সুন্নাহ’র একটি বড়ো অংশ বাদ পড়ে যাবে, যা নিঃসন্দেহে ক্ষতির কারণ।
চতুর্থত, কিছু সালাফ বিদ‘আতীদের জীবিতাবস্থায় তাদের নিকট থেকে রিওয়াইয়াত করেননি, তাদেরকে হেয় করার জন্য এবং সাধারণ মানুষ যাতে তাদের দ্বারা ফিতনাহগ্রস্ত না হয় সেজন্য। বরং তাঁরা তাদের মৃত্যুর পর এবং তাদের ফিতনাহ অপসৃত হওয়ার পর তাদের বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেছেন, ফলে তাদের দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দূরীভূত হয়েছে।
·
পঞ্চমত, বিদ‘আতীদের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনার বিষয়টি রিওয়াইয়াতের যুগেই সীমাবদ্ধ। তাহলে রাসূল ﷺ এর হাদীস বর্ণিত হয়ে যাওয়ার পর এবং রিওয়াইয়াতের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই যুগে এসে তাদের নিকট হাদীস গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে কি?! তাহলে আমরা এখন আসল বা মূলের দিকে ফিরে যাব। আর তা হচ্ছে বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা নিষিদ্ধ, যেমনটি ইমাম ইবনু সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র কথায় বর্ণিত হয়েছে।
ষষ্ঠত, হাদীস বর্ণনা করার বিষয়টি ‘ইলম গ্রহণ করার বিষয় থেকে ভিন্নতর। এরকম কোনো শর্ত নেই যে, আমরা কারও বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করলে আমাদেরকে তার নিকট থেকে সাধারণ ‘ইলমও গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং আমরা বিদ‘আতীদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছি মাত্র, কিন্তু হাদীসের সমঝ আমরা আহলুস সুন্নাহ’র ‘আলিমদের নিকট থেকেই গ্রহণ করি।
·
সপ্তমত, কতিপয় সালাফের মতে, বিদ‘আতীর নিকট থেকে কেবল তখনই রিওয়াইয়াত করা হবে, যখন হাদীস বর্ণনা করার জন্য তার সনদ ছাড়া অন্য কোনো সনদ পাওয়া যায় না। নতুবা যদি অন্য কাউকে পাওয়া যায়, তাহলে বিদ‘আতীর দিকে ভ্রুক্ষেপও করা হবে না, তাকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য। ইমাম ইবনু হাজার আল-‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৫২ হি.] বলেছেন, “বিদ‘আতীর নিকট থেকে কোনো কিছু বর্ণনা করা উচিত নয়, যখন সে বিষয়ে কোনো গাইরে বিদ‘আতী তার সাথে বর্ণনায় শরিক হয়।” [ইমাম ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ), নুযহাতুন নাযার ফী তাওদ্বীহি নুখবাতিল ফিকার; পৃষ্ঠা: ১২৩; তাহক্বীক্ব: ড. ‘আব্দুল্লাহ বিন দ্বইফুল্লাহ আর-রুহাইলী; বাদশাহ ফাহাদ লাইব্রেরি কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
অথচ বিরুদ্ধবাদীরা নিঃশর্তভাবে বিদ‘আতীর নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করার দাবি করছে, যদি কোনো সালাফী পাওয়া যায় তবুও।
অষ্টমত, ‘আলিমগণ এই সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন যে, বিদ‘আতীদের নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা কেবল হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে খাস, হাদীস সংরক্ষণ করার কারণে। অথচ তারা এই বিষয়কে নিঃশর্ত করে নিয়েছে। ফলে তারা বিদ‘আতীদের নিকট থেকে সকল শাস্ত্রের ‘ইলম গ্রহণ করছে।
·
নবমত, কিছু ‘আলিমের মতে (যেমন ইমাম যাহাবী) বিদ‘আতীর নিকট থেকে কেবল তখনই রিওয়াইয়াত করা হবে, যখন তার বিদ‘আত ছোটো হবে। অথচ তারা বিদ‘আতীর নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণের বিষয়টিকে ‘নিঃশর্ত’ বানিয়ে নিয়েছে।
দশমত, বিদ‘আতীর বর্ণিত বিষয়গুলোর মধ্যে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করা এবং বিদ‘আতীর নিকট থেকে রিওয়াইয়াত করার বিষয়টি দক্ষ মুহাদ্দিসদের জন্য। তাহলে কীভাবে আমরা সাধারণ জনসাধারণকে বিদ‘আতীর নিকট থেকে ‘ইলম গ্রহণ করার দিকে আহ্বান করি, যাদের কাছে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার মতো তমিজ নেই?! [শেষোক্ত সংশয়ের জবাব শাইখ ফাওয়্যায বিন ‘আলী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট থেকে সংগৃহীত; পোস্ট লিংক: https://tinyurl.com/y978ktxo]
·
পরিশেষে, আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি, শরিয়তের জ্ঞানার্জন করার জন্য আমাদেরকে আহলুস সুন্নাহ’র দ্বারাই যথেষ্ট করুন এবং বিদ‘আতীদের সংশয় থেকে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...