Friday 29 May 2015

কোনো এক স্থানের চাঁদ দেখা সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য কি?




আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিহিল্ আমীন, আম্মা বাদঃ
অতঃপর পবিত্র রামাযান মাস এবং ঈদ নিকটে আসলেই মুসলিম সমাজে একটি বিষয়ের চর্চা বৃদ্ধি পায়; বরং সাম্প্রতি বিষয়টির চর্চা একটু বেশীই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তা হল, পৃথিবীর কোনো স্থানে বা দেশে যদি হিলাল (১ম তারিখের চাঁদ) দেখা যায় এবং সেই সংবাদ যদি বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যায়, তাহলে সেই খবরটি সকল মুসলিমের সাউম শুরু করা বা ছাড়ার জন্য প্রযোজ্য কি না? অনেক স্থানে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। পক্ষে বিপক্ষে দলীল-প্রমাণ ও যুক্তি দিতেও দেখা যায়। আবার অনেকে এসবের তোয়াক্কা না করে অন্য দেশে চাঁদ দেখা দিলে বিশেষ করে সউদীতে দেখা দিলে তারা সউদীর সাথে সাউম পালন শুরু করে দেয় কিংবা ঈদ করে। এর ফলে একই দেশে ও সমাজে বসবাস করার পরেও কেউ এক-দুই দিন আগেই রোযা ধরে কিংবা ছাড়ে।

আর বিষয়টি এখন শুধু এই তর্কে সীমিত নেই যে, অন্য দেশে চাঁদ দেখা দিলে আমাদের জন্যও তা প্রযো‍জ্য না অপ্রযোজ্য বরং তা একধাপ এগিয়ে এই তর্কে পৌঁছেছে যে, সেই সংবাদের ভিত্তিতে পৃথিবীর সকল মুসলিমের প্রতি সাউম শুরু করা বা ছাড়া জরূরি কি না? বলতে পারেন এর থেকেও এক ধাপ এগিয়ে এখন এই তর্কে পৌঁছেছে যে, যারা এই সংবাদ পাওয়ার পরেও রোযা করে না বা ঈদ করে না, তাদের নাকি সাউম ও ঈদ হয় না, তারা নাকি বড় গুনাহগার, বিদআতী এমন কি তাদের মুসলমানিত্বেও এখন প্রশ্ন!

এই সময় কিছু নাম কে ওয়াস্তে মুসলিম এবং মডার্যাুট মুসলিমদেরও ইসলামের কথা বলতে শোনা যায়। তারা যেহেতু এক সাথে সীমাই খেতে পারে না, একই দিনে আনন্দ শেয়ার করতে পারে না, তাই উলামাদের লক্ষ্য করে বলেঃ এদের কারণে মুসলিম সমাজে ঐক্য আসে না, এদের কারণে মুসলিমরা এক হতে পারে না, এদের কারণেই মুসলিমদের এই দুরাবস্থা। এরা অন্যান্য বিষয়ে তো মতভেদ করেই কিন্তু ঈদের মত বড় বিষয়েও মতভেদ করতে ছাড়ে না। এদের কারণেই আমরা ঈদের মত একটি বড় পর্বকে একই দিনে পালন করতে পারছি না, এক সাথে আনন্দ শেয়ার করতে পারছি না। বিশ্বের অমুসলিমরা আমাদের দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। বড়ই পরিতাপের বিষয়!  অতঃপর শুরু হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাসের শুরু ও শেষ হওয়ার হিসেব নিকেশ।

আমরা বক্ষ্যমান লেখাতে উক্ত বিষয়ের পক্ষে বিপক্ষে শরীয়ার দলীল প্রমাণ এবং সালাফে সালেহীন ও উলামাগণের মন্তব্য পেশ করবো, অতঃপর সেই আলোকে একটি সমাধানে আসতে সচেষ্ট হব, ইন শাআল্লাহ। ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।

Wednesday 27 May 2015

মুনাজাতের জন্য জরুরী আরবী দুয়া সমূহ



______________________________
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আল্লাহ দরূদ ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর; আর তাঁর বংশধর, তাঁর সাহাবীগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা সুন্দরভাবে তাঁদের অনুসরণ করবে তাদের উপর (আমিন)।
দুয়া মানেই যে ওযু করে নামায পড়ে দুই হাত তুলে চাইতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। হ্যা, দুই হাত তুলে দুয়া করা ভালো। তবে আপনি যেকোনো সময় ওঠতে বসতে, কোথাও যেতে যেতে দুয়া করতে পারেন। এইভাবে দুয়া ও যিকিরের মাধ্যমে আমাদের অবসর সময়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তোওফিক দান করুন, আমিন।
নিচের এই দুয়াগুলো হাত তুলে বা হাত না তুলে, যেকোন মুনাজাতে, ফরয, সুন্নত বা নফল যেকোন নামাযের যেকোন সিজদাতে, নামাযে আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ার পরে সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরা হিসেবে, যেকোনো সময়েই পড়া যাবে। দুয়াগুলো ফরয নামাযের ভেতরে আরবীতে পড়তে হবে, আরবীতে না পারলে নফল-সুন্নত নামাযের সিজদাতে, সালাম ফেরানোর পূর্বে বা নামাযের বাইরে আরবী বা বাংলা, যেকোন ভাষাতেই দুয়াগুলো পড়া যাবে।
দিনে রাতে যে কোনো সময় আমল করার জন্য ‘হিসনুল মুসলিম’ বইয়ের সবগুলো দুয়াই সহীহ, আর দাম মাত্র ৫০ টাকা। ছোট্ট এই বইটা পকেটে রেখে দেওয়া যায়, রাস্তায়, জার্নিতে, বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় বা যে কোনো অবসব সময়ে বের করে দুয়াগুলো শিখে বা পড়ে সময়টা নষ্ট না করে কাজে লাগানোর জন্য।
বিঃদ্রঃ যারা অলসতা বশত বা ইমানের দুর্বলতার কারণে আরবী মুখস্থ করতে চান না বা পারেন না, তারা অন্তত বাংলাটা মুখস্থ করে রাখতে পারেন এবং মুনাজাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিসগুলো আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।
______________________________
১. সবচাইতে কম কথায় সবচাইতে বেশি কল্যান প্রার্থনা করার দুয়াঃ
এই দুয়াটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি বেশি করতেন।
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিকাংশ দো‘আ হতঃ
رَبَّنَا اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَـنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হা’সানাতাওঁ-ওয়াফিল আ-খিরাতি হা’সানাতাওঁ ওয়া-ক্বিনা আ’যাবান্নার।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান করো এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও। সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২০১।
কেউ যদি অন্য কোন দুয়া না জানেন আর যেকোন কল্যানের জন্য দুয়া করতে চান, অন্তরে সেই জিনিস পাওয়ার জন্য নিয়ত রেখে এই দুয়া পড়লেও হবে।

Monday 25 May 2015

শবে বরাত উপলক্ষে প্রচলিত কতিপয় বিদ'আতের উদাহরণ




শবে বরাত উপলক্ষে প্রচলিত কতিপয় বিদ'আতের উদাহরণ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় ভাই, আর ক’দিন পরই আমাদের সমাজে মহাসমারোহে পালিত হবে শবে বরাত। সে দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে। হালুয়া-রুটি খাওয়ার ধুম পড়ে যাবে। অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল ও জিকিরের মজলিস। সেই সাথে মুর্হুমূহু আতশবাজিতে কেঁপে কেঁপে উঠবে শবে বরাতের রাতের আকাশ। আরও দেখা যাবে মসজিদের আঙ্গিনাতে যাদের পদ যুগল পড়ত না সে রাতে তারাই আতর-সুগন্ধি মেখে টুপি-পাঞ্জাবী পরে মসজিদের প্রথম কাতারে মুসল্লী সেজে অবস্থান করছে আর বিশেষ কিছু এবাদত-বন্দেগী করে মনে করবে জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে গেছে। তারপর দিন সকাল থেকে লিপ্ত হবে যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম, দুর্নীতি আর আল্লাহর নাফরমানীতে। হয়ত সে দিনকার ফজরের নামায পড়ারও সময় হবে না। আর অপেক্ষায় থাকবে আগামী বছর শবে বরাতের। এভাবে আরও কত কি? আমাদের সমাজের এ অবস্থায় আমরা জানার চেষ্টা করি একাজগুলো কতটুকু ইসলাম সমর্থিত?

যে সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে ইসলাম সমর্থন দেয় নি সেটা ইসলামের নামে করাই তো বিদআত। বিদআতের পরিণাম অতি ভয়ানক। এ ব্যাপারে কুরআনও হাদীসে অসংখ্য সতর্কতা উচ্চারিত হয়েছে। তাই আসুন, আমরা নিজেরা বিদআত থেকে বাঁচি সেই সাথে বাঁচানোর চেষ্টা করি আমাদের সমাজকে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

আমাদের সমাজে শবে বরাত উপলক্ষে প্রচলিত কতিপয় বিদআতের উদাহরণ:

১) শবে বরাত উপলক্ষে ১৪ শাবান দিনে রোযা রাখা এবং ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ১৫ শাবানে একশত নামায আদায় করা:
এ রাতে এক অদ্ভূত পদ্ধতিতে একশত রাকাআত নামায আদায় করা হয়। যাকে বলা হয় সালাতুল আলাফিয়া। একশত রাকাআত নামায পড়ার পদ্ধতিটি হল নিম্নরূপ:
মোট একশত রাকাআত নামায পড়তে হয়। প্রতি দু রাকাত পর সালাম ফিরাতে হবে। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। একশত রাকাআত নামাযে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয় মোট এক হাজার বার। তাই এ নামাযকে সালাতে আলফিয়া বলা হয়।[1]

• শবে বরাতে একশত রাকাআত নামায পড়ার বিধান:
ইসলামে এ ধরণের নামায পড়ার নিয়ম সম্পূর্ণ নতুন আবিস্কৃত বিদআত। এ ব্যাপারে সর্ব যুগের সমস্ত আলেমগণ একমত। কারণ, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীন কখনো তা পড়েন নি। তাছাড়া ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল, সুফিয়ান সাওরী, আওযাঈ, লাইস প্রমূখ যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ কেউ এ ধরণের বিশেষ নামায পড়ার কথা বলেন নি। এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসটি হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে বানোয়াট এবং জাল। যেমন, ইব্‌নুল জাওযী উক্ত হাদীসটি মাওযু’আত (জাল হাদীস সংগ্রহ) কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশরই পরিচয় অজ্ঞাত। আরো কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দূর্বল। সুতরাং হাদীসটি নিশ্চিতভাবে জাল।[2]

শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদ'আত সমাদৃত




শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদ'আত সমাদৃত

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রাণ প্রিয় ভাই, রামাযানুল মোবারকের প্রস্তুতির মাস শাবান আমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে আমাদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। রয়েছে কিছু বর্জনীয়। এ বিষয়টি নিয়েই আজকের এই পোস্টের অবতারণা। এতে মোট ৭টি বিষয় আলোচিত হয়েছে। যথা:
১) শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বর্ণিত সহীহ হাদীস সমূহ।
২) শাবান মাসের পনের তারিখের ব্যাপারে একটি হাদীস পর্যালোচনা ও তার শিক্ষা।
৩) শাবান মাস সম্পর্কে কতিপয় প্রচলিত জাল ও যঈফ হাদীস|
৪) কুরআন কোন রাতে অবর্তীণ হয়? শাবান মাসের শবে বরাতে নাকি রামাযান মাসের শবে কদরে?
৫) শবে বরাত উদ্‌যাপন করা বিদআত।
৬) শাবান মাসে প্রচলিত কতিপয় বিদআত।
৭) সারাংশ।

১) শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বণির্ত সহীহ হাদীস সমূহ:

শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কীত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হল:
ক) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না। তবে তাঁকে রামাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”[1]
খ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা সল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন।[2]
গ) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন: “রজব এবং রামাযানে মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে। অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”[3]
ঘ) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বণির্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রাখিও না।” [4] এ হাদীসের অর্থ হল: যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রথম থেকে রোযা রাখে নি সে যেন অর্ধ শাবানের পর আর রোযা শুরু না করে করে। তবে যে ব্যক্তি শাবান মাসের শুরু থেকে রোযা রেখেছে, বা যার উপর গত বছরের রোযা কাজা আছে অথবা যার প্রতি সোম ও বৃহ:বার রোযা রাখা অভ্যাস সেও পনের তারিখের পর রাখতে পারে।
ঙ) কারো যদি রামাযানের রোযা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে। যেমন, আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি, আমার রামাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।[5]অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন।

মাহে শাবান ও শবে বরাতঃ করণীয় ও বর্জনীয়




মাহে শাবান ও শবে বরাতঃ করণীয় ও বর্জনীয়

হিজরী সনের ৮ম মাস হচ্ছে শাবান মাস। তার পরই আসে বছরের শ্রেষ্ঠ রামাযান মাস। সে হিসেবে মুসলিমের জীবনে এ মাসের যথেষ্ঠ গুরুত্ব রয়েছে। দীর্ঘ টানা একমাস তাকে সিয়াম সাধনা করতে করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন মানসিক, শারিরিক ও আর্থিক প্রস্তুতি। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে প্রস্তুতি স্বরূপ অন্য মাসের তুলনায় শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلاَّ رَمَضَانَ ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِى شَعْبَانَ
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রামাযন ব্যতীত অন্য কোন পূর্ণ মাসে রোযা রাখতে দেখে নি। আর তাঁকে আমি শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা অন্য কোন মাসে রাখতে দেখি নি। (বুখারী) 
সুতরাং শাবান মাসে আমরাও রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী বেশী বেশী করে রাখবো এবং আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দুআ করবো, তিনি যেন আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত হায়াত দান করেন এবং রামাযানের ফজীলত ও বরকত হাসিল করার তাওফীক দেন।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই শাবান মাস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে প্রচলিত আছে সমাজের বিরাট এক অংশে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে কিয়াম করা তথা নফল নামায পড়া এবং পরের দিন ছিয়াম পালন করার চিরাচরিত নিয়ম। যদিও রাসূল (সাঃ) থেকে এই রাতের নফল নামায এবং দিনের বেলা রোযা রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীছ পাওয়া যায়না। এরাতকে আমাদের দেশের পরিভাষায় শবে বরাত বলা হয়ে থাকে। এ রাত সম্পর্কে মানুষের বিদআতী ধারণা এবং এরাতে মানুষ যেসমস্ত বিদআতী আমল করে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রয়োজন। নিম্মে তার কিছু বিবরণ পেশ করা হলঃ


শবে বরাতে কুরআন নাযিল হয়েছে বলে ধারণা



শবে বরাত পালনকারীদের বক্তব্য হল, শবে বরাতের রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। সূরা দুখানের ৩নং আয়াতকে তারা দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে। আল্লাহ বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِىْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ
“আমি কুরআনুল কারীমকে একটি বরকতপূর্ণ রাতে অবতীর্ণ করেছি। 
এবরকতপূর্ণ রাতই হল শবে বরাতের রাত। কতিপয় আলেম এভাবেই অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন।
তাদের এব্যাখ্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়; বরং এখানে বরকতপূর্ণ রাত বলতে লাইলাতুল ক্বদর উদ্দেশ্য। 
আল্লামা ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন, অত্র বরকতপূর্ণ রাতই হল লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত। যেমন অন্যত্র সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য কথা হল, কুরআনের কোন অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা যদি অন্য কোন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়, তাহলে কুরআনের ব্যাখ্যাই গ্রহণ করতে হবে। আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ সূরা কদরের শুরুতে বলেন,

শাবানের পনেরতম রজনী উদযাপন, শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি




শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য আলেম শায়খ আবদুল আযীয আবদুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ এর প্রবন্ধ -
حكم الاحتفال بليلة النصف من شعبان للشيخ عبد العزيز بن عبد الله بن باز رحمه الله
‘মধ্য শাবানের রাত উদযাপনের বিধান’ এর সার-সংক্ষেপ তুলে ধরব। তার এ প্রবন্ধে অনেক উলামায়ে কিরামের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ 
اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا. (المائدة : ৩)
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের জন্য আমার নেআমাত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে মনোনীত করলাম। (সূরা আল - মায়িদা: ৩) 
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনঃ
أم لهم شركاء شرعوا لهم من الدين ما لم ياذن به الله.(الشورى : ২১)
অর্থঃ তাদের কি এমন কতগুলো শরীক আছে যারা তাদের জন্য ধর্মের এমন বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?   (সূরা আশ শুরা: ২১)
হাদীসে এসেছেঃ
عن عائشة رضى الله عنها عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد.
  (رواه البخاري ومسلم)
অর্থঃ যে আমাদের এ ধর্মে এমন কিছুর প্রচলন করবে যা ধর্মের মধ্যে ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসে আরও এসেছেঃ
عن جابر رضى الله عنه أن النبى صلى الله عليه وسلم كان يقول في خطبة يوم الجمعة : أما بعد فإن خير الحديث
كتاب الله وخير الهدى هدى محمد صلى الله عليه وسلم وشر الأمور محدثاتها وكل بدعة ضلالة.
(رواه مسلم
অর্থঃ সাহাবী জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমু‘আর খুতবায় বলতেনঃ আর শুনে রেখ! সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাব ও সর্বোত্তম পথ-নির্দেশ হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ-নির্দেশ। আর ধর্মে নতুন বিষয় প্রচলন করা হল সর্ব নিকৃষ্ট বিষয়। এবং সব ধরনের বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সহীহ মুসলিম)

এ বিষয়ে অনেক আয়াতে কারীমা ও হাদীস রয়েছে যা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কোন রকম অলসতা করেননি বা কার্পণ্যতা দেখাননি। ইসলাম ধর্মের সকল খুটিনাটি বিষয় তিনি স্পষ্টভাবে তাঁর উম্মতের সামনে বর্ণনা করে গেছেন যা আজ পর্যন্ত সুরক্ষিত রয়েছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর যে সমস্ত নতুন আচার-অনুষ্ঠান, কাজ ও বিশ্বাস ধর্মের আচার বলে যা চালিয়ে দেয়া হবে তা সবগুলো প্রত্যাখ্যাত বিদআত বলেই পরিগণিত হবে, উহার প্রচলনকারী যে কেউ হোক না কেন এবং উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ও তাদের পরবর্তী উলামায়ে ইসলাম এ ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন বলে তারা বিদআতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন ও অন্যদের বিদ‘আতের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

এ ধারাবাহিকতায় উলামায়ে কিরাম মধ্য শাবানের রাত উদযাপন ও ঐদিন সিয়াম পালন করাকে বিদআত বলেছেন। কারণ এ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আমল করা যেতে পারে এমন কোন দলীল নেই। যা আছে তা হল কিছু দুর্বল হাদীস যার উপর ভিত্তি করে আমল করা যায় না। উক্ত রাতে সালাত আদায়ের ফযীলাতের যে সকল হাদীস পাওয়া যায় তা বানোয়াট। এ ব্যাপারে হাফেয ইবনে রজব রহ. তার কিতাব লাতায়িফুল মায়ারিফে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

একটি কথা অবশ্যই বলতে হয় যে, দুর্বল হাদীস ঐ সকল আমল ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যায় যে সকল আমল কোন সহীহ হাদীস দ্বারা ইতোপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু মধ্য শাবানের রাতে একত্র হয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করার ক্ষেত্রে কোন সহীহ হাদীস নেই। এ মূল নীতিটি ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. উল্লেখ করেছেন।

সকল উলামায়ে.কেরামের একটি ব্যাপারে ইজমা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, যে সকল ব্যাপারে বিতর্ক বা ইখতিলাফ রয়েছে সে সকল বিষয় কুরআন ও সুন্নাহর কাছে ন্যস্ত করা হবে। কুরআন অথবা হাদীস যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই মোতাবেক আমল করা ওয়াজিব।

এ কথা তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (النساء : ৫৯)
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তাহলে আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে (ধর্মীয় জ্ঞানে ও শাসনের ক্ষেত্রে) ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ হলে তা ন্যস্ত কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর। এটাই উত্তম ও পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা আন নিসা:  ৫৯)
এ বিষয়ে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে।

শাবানের পনেরতম রজনী উদযাপনের বিধান




শাবানের পনেরতম রজনী উদযাপনের বিধান
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রদান করেছেন পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান। 
এরশাদ হচ্ছে :
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ﴿ المائدة : ৩﴾
আজ আমি তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম। পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম আমার নেয়ামত ; তোমাদের জন্য ইসলাম ধর্ম মনোনীত ও পছন্দ করলাম। (সূরা মায়েদা : ৩)
অপর স্থানে এরশাদ হয়েছে :
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ ﴿ الشورى:২১﴾
তাদের কি আল্লাহর সমকক্ষ শরিক-দেবতা আছে ?—যারা তাদের জন্য আল্লাহকে পাশ কাটিয়ে এমন ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি তিনি প্রদান করেননি ?’ শুরা-২১।
হাদিসে এসেছে :
وفي الصحيحين عن عائشة رضي الله عنها، عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال : (من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد).
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমাদের ধর্মে এমন কিছু আবিষ্কার করল, যা এতে নেই, তা পরিত্যক্ত। বোখারি, মুসলিম। 
অপর হাদিসে এসেছে :
وفي صحيح مسلم عن جابر رضي الله تعالى عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقول في خطبته يوم الجمعة: (أما بعد : فإن خير الحديث كتاب الله، وخير الهدي هدي محمد (صلى الله عليه وسلم)، وشر الأمور محدثاتها، وكل بدعة ضلالة).
জাবের রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় প্রায় বলতেন: সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম আদর্শ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শ। ধর্মের ভেতর নতুন আবিষ্কার ঘৃণিত ও নিন্দিত। প্রত্যেক বেদআত বিচ্যুতি ও গোমরাহি। মুসলিম।

আরো অনেক আয়াত, অসংখ্য হাদিস বিদ্যমান, যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় : এ দ্বীন পরিপূর্ণ, তাতে সংযোজন-বিয়োজনের কোন সুযোগ নেই-সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ এ উম্মতের ধর্ম পূর্ণ করে দিয়েছেন, প্রদান করেছেন সমূহ নেয়ামত। দ্বীন সম্পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তর্ধাম হয়নি। তিনি আল্লাহর প্রণয়নকৃত, মনোনীত সমস্ত আমল ও বিধি-নিষেধের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। বাণী ও কাজের মাধ্যমে পেশ করেছেন বাস্তব নমুনা। আরো বলেছেন : যে নতুন কোন বাণী বা আমল আবিষ্কার করে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করবে, সংশ্লিষ্ট করবে তার আহকামের সাথে, সে আমল বা বাণী খোদ আবিষ্কারকের উপর নিক্ষিপ্ত হবে—যদিও তার নিয়ত ভাল হয়। সাহাবায়ে কেরাম রা. এবং ওলামায়ে ইসলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী যথার্থভাবে উপলব্ধি ও হৃদয়ংগম করেছেন। প্রত্যাখ্যান করেছেন-নিন্দাবাদ জানিয়েছেন নতুন আবিষ্কৃত আমল তথা বেদআতের প্রতি। ইবনে ওদ্দাহ, তরতুশি, ইবনে শামাদের মত যারা সুন্নত, বেদআতের উপর কিতাব প্রণয়ন করেছেন, তারাও বর্ণনা করেছেন এ বিষয়টি স্পষ্ট করে।

মানুষের আবিষ্কৃত একটি বেদআতের উদাহরণ : শাবান মাসের পনেরো তারিখের রাতে মাহফিলের আয়োজন করা, দিনের বেলায় রোজা রাখা। বাস্তবতা হল, এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। তবে, এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে কয়েকটি দুর্বল হাদিসের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা হাদিস নিরীক্ষার বিচারে গ্রহণযোগ্য নয় কোনভাবে। এ রাতে নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত সব কটি হাদিস জাল, বানোয়াট। নিম্নে বিষয়টি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার প্রয়াস পাব।

শবে বরাতঃ সঠিক দৃষ্টিকোণ



শবে বরাতঃ সঠিক দৃষ্টিকোণ

আলোচ্যসূচি
১। লেখকের কৈফিয়ত
২। কতিপয় মূলনীতি
৩। ‘শবে বরাত’ এর অর্থ
৪। আল-কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ নেই
৫। শবে বরাত নামটি হাদীসের কোথাও উল্লেখ হয়নি
৬। ফিকহের কিতাবে শবে বরাত
৭। শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত আকীদাহ-বিশ্বাস ও ‘আমল
৮। শবে বরাতের সম্পর্ক শুধু ‘আমলের সাথে নয়
৯। শাবানের মধ্যরজনীর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীসসমূহের পর্যালোচনা
১০। শাবানের মধ্যরজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ পর্যালোচনার সারকথা
১১। ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা সম্পর্কিত একটি হাদীস ও উহার পর্যালোচনা
১২। সৌভাগ্য রজনী ধর্ম বিকৃতির শামিল
১৩। শবে বরাত সম্পর্কে উলামায়ে কিরামের বক্তব্য
১৪। শবে বরাত সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান
১৫। শবে বরাত সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার দায়িত্ব উলামায়ে কিরামের
১৬। একটি বিভ্রান্তির নিরসন
১৭। বিদ‘আত সম্পর্কে কিছু কথা
১৮। বিদ‘আতের কুফল
১৯। সন্দেহজনক নফল ‘আমল থেকে দূরে থাকা উত্তম
২০। সর্বশেষ আহ্বান
২১। প্রমাণপঞ্জী




লেখকের কৈফিয়ত

সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে আমাদেরকে ইসলাম দান করেছেন, যে দ্বীনে মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হয় না। সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, যিনি আল্লাহর দ্বীনের রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছেন, কোথাও কোন কার্পণ্য করেননি। দ্বীন হিসাবে যা কিছু এসেছে তিনি তা উম্মতের কাছে পৌছে দিয়েছেন ও নিজের জীবনে বাস-বায়ন করে গেছেন। তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক, যারা ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর আদর্শ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে সকলের চেয়ে অগ্রগামী। 

শবে বরাতের মত একটি বিষয় নিয়ে কিছু লেখার কি প্রয়োজন ছিল? আমি এর কৈফিয়ত স্বরূপ কিছু কথা না বলে পারছিনা। 

(এক) গত ৪/১২/১৯৯৮ ইংরেজী তারিখে আমি গাজীপুরের একটি মাসজিদে জুমু‘আর খুতবাহ ও আলোচনায় শবে বরাত সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলাম। আলোচনা শেষে উপসি'ত মুসল্লীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকে বলেছেনঃ “শবে বরাত সম্পর্কে এমন স্পষ্ট কথা আগে কোথাও শুনিনি।” আবার অনেকে “যতসব নুতন নুতন মাসালা” আখ্যায়িত করে আমার আলোচনাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। সেখানে উপসি'ত ছিলেন প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন, লেখক ও গবেষক আবুল বাশার মুহাম্মাদ ইকবাল (রহঃ)। তিনি আমাকে বললেন: আপনার এ বক্তব্যটি একটি প্রবন্ধ আকারে লিখে ফেলুন। তিনি আমাকে বার বার অনুরোধ করছিলেন, আর আমি লিখব লিখব বলে ওয়াদা করে যাচ্ছিলাম। কিন' এর পরের বছর যখন ১৫ শাবান এলো তখন তিনি আবারো বললেন, “আপনাকে এ বিষয়ে লেখার জন্য বলেছিলাম, আপনি কিন' এখনো লিখেননি। আগামী দশ দিনের মধ্যে লেখা জমা দিবেন। আমরা আমাদের মাসিক পত্রিকার শাবান সংখ্যায় আপনার শবে বরাত সম্পর্কিত লেখাটি প্রকাশ করতে চাই।” কিন' আমি তখনো তার অনুরোধ রক্ষা করতে পারিনি। তিনি প্রায়ই আক্ষেপ করে বলতেন, “আপনি লিখলেন না!” কয়েক মাস পর তিনি ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর থেকে আমি নিজেকে অপরাধী মনে করতে থাকি। তার জীবদ্দশায় তার একটি ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারিনি। এর প্রায়শ্চিত্ত করার অনুভূতি আমাকে তাড়া করতে থাকে। 

শবে বরাত ও প্রাসংগিক কিছু কথা



রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লেখক : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
পিএইচডি (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা), সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান- ফেকাহ্ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

শবে বরাত (বারাত) আভিধানিক অর্থ অনুসন্ধান

‘শব’ ফারসি শব্দ। অর্থ রাত বা রজনী। বরাত শব্দটিও মূলে ফারসি। অর্থ ভাগ্য। দু’শব্দের একত্রে অর্থ হবে, ভাগ্য-রজনী। বরাত শব্দটি আরবি ভেবে অনেকেই ভুল করে থাকেন। কারণ ‘বরাত’ বলতে আরবি ভাষায় কোন শব্দ নেই।
যদি বরাত শব্দটি আরবি বারা’আত শব্দের অপভ্রংশ ধরা হয় তবে তার অর্থ  হবে— সম্পর্কচ্ছেদ বা বিমুক্তিকরণ। কিন্তু কয়েকটি কারণে এ অর্থটি এখানে অগ্রাহ্য, মেনে নেয়া যায় না-
  • ১. আগের শব্দটি ফারসি হওয়ায় ‘বরাত’ শব্দটিও ফারসি হবে, এটাই স্বাভাবিক
  • ২. শা’বানের মধ্যরজনীকে আরবি ভাষার দীর্ঘ পরম্পরায় কেউই বারা’আতের রাত্রি হিসাবে আখ্যা দেননি।
  • ৩. রমযান মাসের লাইলাতুল ক্বাদরকে কেউ-কেউ লাইলাতুল বারা’আত হিসাবে নামকরণ করেছেন, শা‘বানের মধ্য রাত্রিকে নয়।

আরবি ভাষায় এ রাতটিকে কি বলা হয়?

আরবি ভাষায় এ রাতটিকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা‘বান’ — শাবান মাসের মধ্য রজনী — হিসাবে অভিহিত করা হয়।

শাবানের মধ্যরাত্রির কি কোন ফযীলত বর্ণিত হয়েছে?

শাবান মাসের মধ্য রাত্রির ফযীলত সম্পর্কে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে:
১. আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গিয়েছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।
হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিযি তার সুনানে (২/১২১,১২২) বর্ণনা করে বলেন, এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী দুর্বল বলতে শুনেছি। অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ দুর্বল বলে সমস্ত মুহাদ্দিসগণ একমত।
২. আবু মূসা আল আশ’আরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা শাবানের মধ্যরাত্রিতে আগমণ করে, মুশরিক ও ঝগড়ায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যতীত, তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতকে ক্ষমা করে দেন। হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৫৫, হাদীস নং ১৩৯০),এবং তাবরানী তার মু’জামুল কাবীর (২০/১০৭,১০৮) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...