Friday 16 August 2019

সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার বিধান


·
সালাফী মানহাজ অনুসরণ করা ওয়াজিব। এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহ’র সুস্পষ্ট দলিল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: মহান আল্লাহ বলেছেন, وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ “যে আমার অভিমুখী হয়, তুমি তার পথ অনুসরণ করবে। তারপর আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে তা জানিয়ে দেব, যা তোমরা করছিলে।” [সূরাহ লুক্বমান: ১৫]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন,
كل الصحابة منيب إلى الله تعالى؛ فيجب اتباع سبيله، وأقواله و أفعاله واعتقاداته.
“প্রত্যেক সাহাবীই মহান আল্লাহ’র অনুবর্তী। সুতরাং তাঁদের পথ এবং তাঁদের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের অনুসরণ করা ওয়াজিব।” [ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৩০; গৃহীত: ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ), মা হিয়াস সালাফিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ২৮; দারুল ইস্তিক্বামাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৩ হি./২০১২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا “যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব, কতইনা মন্দ সে আবাস!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,
فمن أحب الكون مع السلف في الآخرة، وأن يكون موجودا بما وعدوا به من الجنات والرضوان؛ فليتبعهم بإحسان، ومن اتبع غير سبيلهم؛ دخل في عموم قوله تعالى: وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا.
“যে ব্যক্তি পরকালে (ন্যায়নিষ্ঠ) সালাফদের সাথে থাকতে এবং তাঁদেরকে যে জান্নাত ও সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা নিজের জন্য প্রস্তুত পেতে পছন্দ করে, সে যেন যথাযথভাবে তাঁদের অনুসরণ করে। আর যে তাঁদের পথ ভিন্ন অন্য কোনো পথের অনুসরণ করে, সে আল্লাহ তা‘আলার এই ব্যাপক কথার মধ্যে প্রবেশ করবে, “যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; কতই না মন্দ সে আবাস!” (সূরাহ নিসা: ১১৫)” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), যাম্মুত তা’উয়ীল, পৃষ্ঠা: ১০; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন]

·
জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল কেবল একটি। আর এই দলের সদস্য তো স্রেফ তারাই, যারা সালাফদের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। মুক্তিপ্রাপ্ত দলের ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেছেন, “আমি ও আমার সাহাবীগণ যে আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত (তার উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারা)।” [তিরমিযী, হা/২৬৪১; সনদ: হাসান]
মুক্তিপ্রাপ্ত দলটিই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, আহলুল হাদীস, আহলুল আসার, সালাফিয়্যাহ। এই নামগুলো একই মানহাজের পদনির্দেশ করে, আর তা হলো সালাফদের মানহাজ। যারা এই মানহাজের অনুসরণ করে তারা সালাফী, আর যারা এই মানহাজের বিরোধিতা করে তারা বিদ‘আতী।
·
এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
ومذهب أهل السنة والجماعة قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالكا والشافعي وأحمد؛ فإنه مذهب الصحابة الذين تلقوه عن نبيهم، ومن خالف ذلك كان مبتدعا عند أهل السنة.
“আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব একটি সুপরিচিত প্রাচীন মাযহাব (আদর্শ)। আল্লাহ তা‘আলা আবূ হানীফাহ, মালিক, শাফি‘ঈ ও আহমাদকে সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই এই মাযহাবের অস্তিত্ব ছিল। নিশ্চয় এটি সাহাবীদের মাযহাব, যাঁরা এই মাযহাব স্বয়ং তাঁদের নাবী’র কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। যে ব্যক্তি এই মাযহাবের বিরোধিতা করবে, সে আহলুস সুন্নাহ’র নিকট বিদ‘আতী হিসেবে পরিগণিত হবে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাউয়িয়্যাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬০১; প্রকাশনার নামবিহীন; প্রকাশকাল: ১৪০৬ হি./১৯৮৬ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,
ولا عــيبَ على من أظهر مذهب الـسـلـف، وانتسب إليه، واعتزى إليه؛ بل يجب قبول ذلك منه بالإتفاق؛ فإن مذهب السلف لا يكون إلا حقًا.
“যে ব্যক্তি সালাফদের মাযহাব প্রকাশ করে, তার দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে (অর্থাৎ, নিজেকে ‘সালাফী’ বলে) এবং ওই মাযহাবের সাথে নিজেকে যুক্ত করে, তার কোনো দোষ নেই। বরং সর্বসম্মতিক্রমে এই মাযহাব গ্রহণ করা ওয়াজিব। কেননা সালাফদের মাযহাব হক ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৪৯; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস; বাদশাহ ফাহাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...