Saturday 28 March 2015

শার‘ঈ মানদণ্ডে তাবীয-কবচ এবং ঝাড়-ফুঁক




শার‘ঈ মানদণ্ডে তাবীয-কবচ এবং ঝাড়-ফুঁক

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌র জন্য। ছালাত এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর উপর।
যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করে না, তার ঈমান নেই। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٢٣ ﴾ [المائ‍دة: ٢٣] 
    ‘আর তোমরা আল্লাহর উপরই ভরসা কর- যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক’ (আল-মায়েদাহ, ২৩)। 
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢] 
‘যারা মুমিন, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সেই আয়াতসমূহ তাদের ঈমানকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’ (আল-আনফাল ৩)। 

বুঝা গেল, আল্লাহ্‌র উপর ভরসা ঈমানের অন্যতম একটি শর্ত। আর আল্লাহ্‌র উপর ভরসার অর্থ হচ্ছে, বান্দা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে যে, সবকিছুই আল্লাহ্‌র হাতে। তিনি যা চান, তা হয়। পক্ষান্তরে যা তিনি চান না, তা হয় না। উপকার ও ক্ষতি সাধন সবকিছুই তাঁর হাতে। তিনি যাকে যা খুশী দেন আর যাকে যা খুশী দেন না। নেই কোনো ক্ষমতা এবং নেই কোনো শক্তি তিনি ব্যতীত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন, 
‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাণী শিক্ষা দেব: (সেগুলি হচ্ছে) আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের হেফাযত করবে, তাহলে তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন। আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের হেফাযত করবে, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। আর যখন কিছু চাইবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই চাও এবং যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো, দুনিয়ার সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য যতটুকু লিখে রেখেছেন, তার বাইরে কিঞ্চিৎ পরিমাণ উপকারও তারা করতে পারবে না। পক্ষান্তরে তারা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, তাহলে আল্লাহ যতটুকু তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন, তার বাইরে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ক্ষতিও তারা করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কালি শুকিয়ে গেছে (অর্থাৎ তাক্বদীর লেখা শেষ হয়ে গেছে)’ (মুসনাদে আহমাদ, ১/২৯৩)। 

অতএব, আল্লাহ্‌র উপর ভরসা বান্দার কাঙ্খিত বস্তু হাছিলের এবং অনাকাঙ্খিত বস্তু প্রতিহতের অন্যতম কারণ ও মাধ্যম। সেজন্য যে ব্যক্তি এসব কারণকে অস্বীকার করবে, তার আল্লাহ্‌র উপর ভরসার বিষয়টি সঠিক প্রমাণিত হবে না। এসব কারণকে স্বীকার করার অর্থ এগুলির উপর ভরসা করা নয়। বরং এসব কারণের উপর নির্ভর না করা আল্লাহ্‌র উপর পূর্ণ ভরসার অন্তর্ভুক্ত। মূলকথা, বান্দার পূর্ণ ভরসা ও নির্ভরতা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উপর, অন্য কিছুর উপর নয়।

ফরয নামাযের সালাম শেষে প্রথমে ১ বার আল্লাহু আকবার, না ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ?




ফরয নামাযের সালাম শেষে প্রথমে ১ বার আল্লাহু আকবার, না ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ?

১-বিষয়টি অবতারণার কারণঃ
আমরা জানি, আমাদের সমাজে নামায শিক্ষার সময় সাধারণতঃ এই শিক্ষা নেওয়া হয় বা দেওয়া হয় যে, ফরয স্বালাতে সালাম ফিরানোর পর প্রথমে এক বার সশব্দে আল্লাহু আকবার বলতে হবে অতঃপর নিরবে তিন বার আস্তাগফিরুল্লাহ এবং আমাদের আহলুল হাদীস সমাজের বিভিন্ন মসজিদে মুস্বল্লীগণকে জোর শব্দে এই আমলটি করতেও দেখা যায়। এছাড়া সালাফী আলেমগণের প্রচলিত প্রসিদ্ধ বাংলা স্বালাত শিক্ষার বই-পুস্তকেও এই মাসআলা দেখা যায়। কিন্তু আশ্চর্য হলাম, যখন সউদী আরবের সমাজে মুস্বল্লীদের নামাযান্তে ১বার উচ্চ কন্ঠে আল্লাহু আকবার বলতে শুনলাম না; অথচ এখানে সালাম শেষে উচ্চ স্বরে কিছুক্ষণ যিকর ও দুআ পড়ার প্রচলন রয়েছে। আর না এখানকার বিজ্ঞ উলামাদের বই-পুস্তকে এবং ফতোয়ায় এই বিধানটি লক্ষ্য করলাম। আরো আশ্চর্য হলাম যখন প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকহের বই পুস্তকেও সালাম শেষে এক বার জোর শব্দে আল্লাহু আকবার বলতে হবে বলে কোনো বিধান অবলোকন করলাম না; বরং তারা সকলে প্রথমে ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার কথা উল্লেখ করেছেন, যা লেখার শেষ পয়েন্টে দেখা যেতে পারে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে বহু পূর্বে মনে কৌতুহল জেগেছিল। সাম্প্রতি সাধ্যানুযায়ী এ সম্বন্ধে দলীল-প্রমাণগুলির সাধারণ অধ্যয়ন করার চেষ্টা করলাম। অবশেষে যা অবগত হলাম, তা আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা ভাল মনে করছি। ওয়াল্লাহু হুআল্ মুআফ্ফিক্ ওয়াল্ মুস্তাআন।বক্ষ্যমাণ লেখাটির মূল বিষয় হল, সালাম ফিরানোর পর সর্ব প্রথম কি বলতে হবে এবং কত বার বলতে হবে?

২-যাঁরা সালাম শেষে ১ বার জোর শব্দে আল্লাহুআকবার বলতে হবে বলে মত দিয়েছেন, তাঁদের মন্তব্য ও দলীলঃ
উল্লেখ্য যে, মুতাকাদ্দেমীন (প্রাচীন) উলামাদের কেউ এমন বলেছেন বলে আমার জানা নেই। কিন্তু বর্তমান যুগের বাংলা ও ঊর্দুভাষী আহলেহাদীস উলামা ও লেখকগণের নামায শিক্ষার বইতে উপরোক্ত মত পাওয়া যায়। আমরা প্রথমে তাদের লেখা বই থেকে কিছু বিবরণ তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।

বইঃ তাফসীর আহসানুল বায়ান - ফ্রি ডাউনলোড




বইঃ তাফসীর আহসানুল বায়ান - ফ্রি ডাউনলোড

তাফসীরটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

শিরোনাম: তাফসীর আহসানুল বায়ান
ভাষা: বাংলা
লেখক: সালাহউদ্দীন ইউসূফ
সম্পাদনা: শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী (লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদিআরব)
প্রকাশনায়: কমিউনিটি কেন্দ্রিক দাওয়াহ ও শিক্ষা প্রচার মূলক সহযোগী অফিস, মাজমাআ, সৌদিআরব
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১১৪(২০.১এমবি)

সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
তাফসীর আহসানুল বায়ান: সম্পূর্ণ কুরআন মাজীদের বিশুদ্ধ তাফসীরের সহজবোধ্য ও মানসম্মত বাংলা অনুবাদ। মূল তাফসীরটি উর্দু ভাষায় শাইখ সালাহুদ্দিন ইউসুফ কর্তৃক রচিত। উর্দু তাফসীরটি সম্পাদনা করেছেন রাহীকুল মাখতুমের বিশ্বখ্যাত লেখক শাইখ সফিউর রহমান আল-মুবারকপুরীসহ বেশ কয়েকজন আলেম; যা পরবর্তীতে মদীনাস্থ কিং ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং প্রেস কর্তৃক প্রিন্ট হয়েছে।
– তাফসীরটি উর্দু ভাষায় প্রথম ছাপা হয়েছিল সুবিখ্যাত দারুস সালাম লাইব্রেরীর তত্ত্বাবধানে। তাদের কাছ থেকে বঙ্গানুবাদ ও ছাপার অনুমতি নিয়ে বাংলাভাষী সাউদী আরবে বিভিন্ন দাওয়াহ সেন্টারে কর্মরত বেশ কয়েকজন দা‘ঈ অনুবাদ কর্মটি সম্পন্ন করেন। তারা হলেন:

নামায নষ্ট করলে সিয়াম কবুল হয় না




নামায নষ্ট করলে সিয়াম কবুল হয় না

প্রশ্ন: নামায না পড়ে সিয়াম পালন করা কি জায়েয?

উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

বে-নামাযীর যাকাত, রোজা, হজ্জ ইত্যাদি কোনো আমলই কবুল হয় না।

ইমাম বুখারী (৫২০) বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
( مَنْ تَرَكَ صَلاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ )
“যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়।”

“তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়” এর অর্থ হল: তা বাতিল হয়ে যায় এবং তা তার কোনো কাজে আসবে না। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, বেনামাযীর কোনো আমল আল্লাহ কবুল করেন না এবং বেনামাযী তার আমল দ্বারা কোন ভাবে উপকৃত হবে না। তার কোনো আমল আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হবে না।

ইবনুল কায়্যিম তাঁর ‘আস-স্বালাত’ (পৃ-৬৫) নামক গ্রন্থে এ হাদিসের মর্মার্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন – “এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নামায ত্যাগ করা দুই প্রকার:

Sunday 22 March 2015

প্রশ্নঃ ডা. জাকির নায়েক কি কোন মুফতি বা মুহাদ্দিস? তিনি কি ফতোয়া দেওয়ার মতো বড় কোন আলেম??




উত্তরঃ ডা. জাকির নায়েক একজন দ্বাইয়ী (যিনি মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেন) এবং যুক্তি দিয়ে সুন্দরভাবে ইসলামের বাণী মানুষের মাঝে প্রচার করেন। আলহামদুলিল্লাহ, তার দাওয়াতের কারণে অনেক কাফের ও মুসলমান উপকৃত হয়েছে এবং ইসলাম সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন মুফতি বা মুহাদ্দিস নন, ফতোয়া দেওয়ার মতো বড় কোন ‘আলেম’ তিনি নন।
ফতোয়া দিতে পারেন তারাই, যারা হচ্ছেন প্রকৃত ফকীহ, বা যারা ইজতেহাদ করার মতো যোগ্যতা ও জ্ঞান রাখেন। ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জনের জন্য তাকে সরাসরি বড় আলেমদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যায়ন করে, অনেক ইলম অর্জন করে নিতে হয়। আর ইলম অর্জনের যদি শুরু বলেন, সেটা হচ্ছে আরবী ভাষা, গ্রামার বা ব্যকরণ ও এর ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষ হওয়া যাতে করে একজন ব্যক্তি ক্বুরানের আয়াত ও হাদিসগুলোর প্রকৃত অর্থ ও ব্যখ্যা সরাসরি মূল আরবী থেকেই বুঝতে পারেন, কারো অনুবাদ বা ব্যখ্যার দ্বারস্থ না হতে হয়, নয়তো তিনি অন্যদের ব্যখ্যাটাকেই নকল করবেন, সেটা তার নিজস্ব ফতোয়া হবেনা। কারো অনুবাদ বা ব্যখ্যা পড়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, এটা এক প্রকার কপি-পেস্ট। এটা খারাপ কোন বিষয় না, সত্যি কথা বলতে যারা মুফতি বা বড় আলেম নন, তাদের উচিত হচ্ছে সত্যিকারে আলেমদের ফতোয়াগুলো জানা, বোঝা ও সেই অনুযায়ী উত্তর দেওয়া। তবে অন্যায় যেটা সেটা হচ্ছে, কেউ কপি-পেস্ট করতে করতে এক সময় নিজেই আন্দাজে বা মনগড়া ফতোয়া দেওয়া শুরু করে দেওয়া, যদিও তার সেই যোগ্যতা নেই!
ফতোয়া দেওয়া খুব জটিল ও কঠিন একটা কাজ। একটা আরবী শব্দের অনেক অর্থ থাকে, আবার সেইগুলোর ব্যবহার ভিন্ন, তার উপর আয়াতের সঠিক তর্জমা ও তাফসীর, শানে নুযুল জানা, হাদীসের শরাহ বা ব্যখ্যা, নাসেখ-মানসুখ জানা, ফিকহের মূল নীতিমালা ও তার প্রয়োগ জানা, সাহাবা ও পূর্ববর্তী আলেমরা বিষয়টাকে কিভাবে বুঝেছেন বা দেখেছেন, একই বিষয়ে কোন আলেমের কি ফতোয়া এবং কোনটা সঠিক কোনটা ভুল, কেনো সঠিক এবং যেটা ভুল সেটা কেনো ভুল. . .এমন অনেক বিষয় জানা ও বোঝার পরেই একজন আলেম বা প্রকৃত ফকীহ কোন একটা বিষয়ে ইসলামী হুকুম বা ‘ফতোয়া’ কি হবে সেটা নির্ণয় করতে পারেন।
যাই হোক, কেউ যদি আরবী না জানে আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রকৃত আলেমদের ফতোয়া না নিয়ে, নিজে থেকে উত্তর দিতে গেলে কি মারাত্মক ভুল হতে পারে সেটা, নিচে আমি তার একটা উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
ডা. জাকির নায়েককে প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ জান্নাতে পুরুষেরা যদি হুর পায়, তাহলে নারীরা কি পাবে?
এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাকির নায়েক বলেন,
“জান্নাতে নারীরাও হুর পাবে!?”
তার মতে, হুরের কোন gender নেই, আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী ক্বুরানের ‪#‎হুর‬ শব্দের সঠিক অর্থ করেছেন – companion বা সংগী (অর্থাৎ, নারী অথবা উভয়ই)। সুতরাং এই অনুবাদ অনুযায়ী জান্নাতে নারীরাও সুন্দর পবিত্র ‘পুরুষ হুর’ পাবে! সেই প্রশ্ন ও উত্তরে লিংক -
https://www.youtube.com/watch?v=J1_4wzQi4eUআব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী হচ্ছে ‪#‎বোহরা‬ নামের শীয়াদের চরমপন্থী কুফুরী একটা ফেরকার অনুসারী, যে ক্বুরানের অনুবাদ করতে গিয়ে অনেক কুফুরী ও মারাত্মক অপব্যখ্যা লিখে রেখেছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডা. জাকির নায়েক সেই ক্বুরানের অপতাফসীর পড়ে ফতোয়া দিয়ে দিয়েছেন!
____________________________
‘জান্নাতে নারীরা পুরুষ হুর পাবে’ - এটা সম্পূর্ণ বাজে একটা কথা। জান্নাতে নারীদের জন্য তাদের দুনিয়ার জীবনের স্বামী থাকবেন, যাদের স্বামী জান্নাতে যাবেনা তাদের সাথে অবিবাহিত জান্নাতী পুরুষদের বা যাদের স্ত্রীরা জান্নাতে যেতে পারেনি তাদের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পুরুষদের জন্য দুনিয়ার স্ত্রী ছাড়াও যেমন জান্নাতের হুর থাকবে নারীদের তেমনি ‘পুরুষ হুর’ নামের কোন কিছু থাকবেনা। দেখুন ক্বুরানের আয়াত দ্বারাই এই জাহালতপূর্ণ অনুবাদ ও ফতোয়ার বিভ্রান্তি কতো স্পষ্টভাবে ভুল প্রমানিত হয়ঃ
সুরা ওয়াক্বিয়ায় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন,
৩৫. আমি জান্নাতী রমণীদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি।
৩৬. অতঃপর তাদেরকে করেছি ‪#‎চিরকুমারী‬
৩৭. ‪#‎কামিনী‬, সমবয়স্কা।
৩৮. ডান দিকের লোকদের জন্যে।
=> ‘হুরদের’ এই বর্ণনা কি কখনো কোন পুরুষের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে!? বুদ্ধিমান লোকদের জন্য চিন্তার খোরাক হিসেবেই প্রশ্নটা রেখে দিলাম।
সুরা আন-নাবায় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন,
৩১. নিশ্চয়ই মুত্ত্বাকীদের জন্যে রয়েছে সাফল্য।
৩২. উদ্যান, আঙ্গুর,
৩৩. সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণীরা।
৩৩ নাম্বার আয়াত, وَكَوَاعِبَ أَتْرَاباً এর অর্থ করা হয়েছে – “সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী”।
এখানে আরবীতে كَواعِبَ (ক্বাওয়ায়ি’বা) শব্দটির অর্থ হচ্ছে এমন নারী যার বক্ষ হচ্ছে উঁচু ও স্ফীত, যা সাধারণত কুমারী নারীদেরই হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, এটা জান্নাতী নারীদের বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্যই হছে – তারা চিরকুমারী থাকবে, যা সুর ওয়াকিয়াতেও বলা হয়েছে। রেফারেন্স দেখুন সুরা ওয়াকিয়া ও সুরা নাবার তাফসীর, তাফসীর ইবনে কাসীর।
(Kawa`ib) - "This means round breasts. They meant by this that the breasts of these girls will be fully rounded and not sagging, because they will be virgins, equal in age."
See more at:
http://www.alim.org/library/quran/AlQuran-tafsir/TIK/78/31
আশা করি এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট, জান্নাতের হুরদের কোন জেন্ডার আছে কি নেই, আর থাকলে সেটা কোন জেন্ডার!? তারপরেও যারা আরো বিস্তারিত আলোচনা জানতে চান, তারা আল-ফকীহ, ইমাম ইবনে উসায়মিন রহঃ এর ‘ফতওয়া আরকানুল ইসলাম’ বইয়ে হুরদের নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে দেখুন।
সর্বশেষঃ ২-৩ মাস পূর্বে, কাছাকাছি একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট দিলে একজন প্রবাসিনি আমাকে মেসেজে ইংরেজীতে কিছু কথা বলেন, তার কথা থেকে মনে হলো - সে হাদীসের ব্যপারে সন্দেহের মাঝে আছে, তিনি হাদীস মানতে রাজি নন। তিনি আরো তার অভিজ্ঞতা বললেন, কিভাবে তিনি এমেরিকান আলেম (আসলে রাশেদ খলিফার উম্মত, আহলে ক্বুরান) এর কাছ থেকে হুরের সঠিক অর্থ পেয়েছেন যে, নারীদের জন্যও ‘পুরুষ হুর’ থাকবে। যাইহোক, কিছু কথা বলে আমি তাকে উপদেশ দিয়েছিলাম – সম্ভব হলে মুসলিম কোন দেশে হিজরত করা ও মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য। বিদেশে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানরা মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার জন্য অনেক ভ্রান্ত দল ও মতবাদ তৈরী করে রেখেছে, তাদের বই-পত্র ছাপায়। একজন সাধারণ মুসলমান যদি নূন্যতম জরুরী জ্ঞান না থাকে, বিভিন্ন-যুক্তি তর্কের ফাঁদে পড়ে সেই সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদকেই সঠিক মনে করে পরকাল নষ্ট করবে। সেইজন্য সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনদের সকলের কাছে অনুরোধ, আপনারা দ্বীন শিক্ষা করুন। নিজেকে হেফাজত করুন, ইসলামের খেদমতে আত্মনিয়োগ করুন।
প্রশ্নঃ husband and wife 2jon e jodi jannati hoy tahole o ki purush ti hur biye korbe?
হ্যা করবে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য নিয়ামত। এটা নিয়ে স্ত্রীদের চিন্তিত বা মন খারাপ করার কিছু নেই। জান্নাতে নারী বা পুরুষ যে যাই চাইবে তা-ই পাবে। তবে কেউ কখনো হারাম বা আল্লাহ যা করবেন না, এমন কোন কিছু কখনো চাইবেনা। জান্নাতী নারী ও পুরুষদের অন্তর থেকে লোভ, হিংসা বিদ্বেষ দূর করে দেওয়া হবে। দুনিয়ার জীবনে মতো জান্নাতে একজন অন্যজনের বিবির প্রতি কামনা বা লোভ করবেনা, এক স্ত্রী স্বামীর অন্য স্ত্রী থাকা নিয়ে অভিযোগ করবেনা। রাসুল সাঃ এর একাধিক বিবি ছিলো, তাঁরা জান্নাতে এটা নিয়ে কষ্ট পাবেনা বা এর পরিবর্তে অন্য কোন কিছু চাইবেন না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস ঈমান আনে ও নেক কাজ করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে থাকবে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, তার পরিবর্তে অন্য কোন কিছু চাইবে না।” [সুরা আল-কাহফঃ ১০৭-১০৮]
মোট কথা যে জান্নাতে যাবে সে সর্ব রকম সুখ ও শান্তির মাঝে থাকবে, তার অন্তরে অণু পরিমান কষ্ট থাকবেনা। তাই আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত হওয়ার থেকে, কিভাবে সেই নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে পা রাখতে পারবো সেই চিন্তাই বেশী করা উচিত।
সর্বশেষঃ ডা. জাকির নায়েকের অনেক ভালো কাজ আছে, আমরা দুয়া করি আল্লাহ্‌ তার ভুলগুলো ক্ষমা করে নেক আমলগুলো কবুল করে নিন। কিন্তু আমরা তার ভুলগুলোর পক্ষ নিয়ে অন্ধভাবে তর্ক করিনা। আমরা আলেম নন এমন কাউকে অতি প্রসংসা করতে করতে ‘আল্লামাহ’ বানিয়ে দেই না। ইসলাম হচ্ছে মধ্যপন্থা, কারো প্রতি বিদ্বেষবশত আমরা যেমন তার ভালো কাজগুলোকে অস্বীকার করিনা, আবার কারো প্রতি অন্ধ ভালোবাসার কারনে তার ভুলগুলোও সব ঠিক, তিনি ভুল করতেই পারেন না, এমন চরমপন্থার শিকার হইনা। যিনি আলেম নন এমন কাউকে দুনিয়ার এক নাম্বার আলেম বানিয়ে অন্যদের সাথে মিথ্যা তর্কেও লিপ্ত হইনা।
সংরহঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...