Saturday, 3 January 2015

মীলাদুন্নবী বিদআত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ



প্রশ্ন: নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি : বিষয়টি তর্ক বরং ঝগড়ার রূপ নিয়েছে, যারা বলে মীলাদুন্নবী বিদআত এবং যারা বলে মীলাদুন্নবী বিদআত নয় উভয় পক্ষের মধ্যে। যারা বলে মীলাদুন্নবী বিদআত, তাদের দলিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অথবা সাহাবাদের যুগে অথবা কোন একজন তাবেঈর যুগে এ মীলাদুন্নবী ছিল না। অপরপক্ষ এর প্রতিবাদ করে বলে : তোমাদের কে বলেছে, আমরা যা কিছু করব, তার অস্তিত্ব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অথবা সাহাবাদের যুগে অথবা তাবীঈদের যুগে থাকা চাই। উদাহরণত আমাদের যুগে হাদিস শাস্ত্রের দু’টি শাখা “রিজাল শাস্ত্র” ও “জারহু ও তাদিল শাস্ত্র” ইত্যাদি বিদ্যমান, এগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল না, এ জন্য কেউ এর প্রতিবাদ করেনি। কারণ, নিষিদ্ধ হওয়ার মূল যুক্তি হচ্ছে নতুন আবিষ্কৃত বিদআত শরী‘আতের মূলনীতি বিরোধী হওয়া, কিন্তু মীলাদুন্নবী বা মীলাদ মাহফিল কোন মূলনীতি বিরোধী ? অধিকাংশ তর্ক এ নিয়েই সৃষ্টি হয়। তারা আরও দলিল পেশ করে যে, ইবন কাসির -রাহিমাহুল্লাহ- মীলাদুন্নবী সমর্থন করেছেন। দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধ কোনটি ?

উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :

প্রথমত জানা প্রয়োজন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় সম্ভব হয়নি, এ ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। ইবন আব্দুল বারর মনে করেন, তিনি রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখে জন্ম গ্রহণ করেছেন। ইবন হাজম প্রাধান্য দেন রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের দশ তারিখ, যেমন আবু জাফর বাকের। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ, যেমন ইবন ইসহাক। কেউ বলেছেন, তিনি রমযান মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যেমন ইবন আব্দুল বারর জুবাইর ইবন বাক্কার থেকে বর্ণনা করেছেন। দেখুন : “আস-সিরাতুন নববিয়াহ” পৃষ্ঠা : (১৯৯-২০০)

মীলাদুন্নবী উদযাপন এবং এতে অংশগ্রহণ না করার কারণে পরিবারের যারা তিরস্কার করে, তাদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি




প্রশ্ন: আমি মীলাদুন্নবী উদযাপন করি না, পরিবারের অন্যান্য সদস্য তা উদযাপন করে, তারা বলে : আমার ইসলাম নতুন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করি না, এ বিষয়ে আমার জন্য কোন উপদেশ আছে কি ?

উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :

প্রিয় ভাই, মীলাদুন্নবী ত্যাগ করে তুমি খুব ভাল কাজ করেছ, এটা মানুষের নিকট বহুল প্রচলিত একটি বিদআত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার কারণে যারা তোমাকে অপবাদ দেয়, ইসলামের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে যারা তোমাকে তিরস্কার করে, তাদের প্রতি তুমি ভ্রুক্ষেপ কর না আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন রাসূল প্রেরণ করেননি তার কওমের নিকট, যার সাথে তার কওম উপহাস করেনি, যারা তার বিবেক ও দ্বীনের উপর অপবাদ আরোপ করেনি আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
كَذَلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ
"এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে যে রাসূলই এসেছে, তারা বলেছে, 'এ তো একজন যাদুকর অথবা উন্মাদ'।" সূরা যারিয়াত : (৫২) 
এসব নবী-রাসূলগণ তোমার আদর্শ, তাদের সুন্নত পালন করার তোমার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তোমাকে যে কষ্ট স্পর্শ করে তার জন্য তুমি ধৈর্য ধারণ কর, আর তোমার রবের নিকট তার সাওয়াবের আশা কর

দ্বিতীয়ত :

Friday, 2 January 2015

মীলাদুন্নবীতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির নিকট মেয়ে বিয়ে দেয়ার বিধান



প্রশ্ন : আমার একটি কঠিন প্রশ্ন, আমার শ্যালিকা ইদানীং বিয়ে করবে, কিন্তু সম্ভাব্য বরের প্রকৃতি সম্পর্কে সে শঙ্কিত। আমি স্পষ্ট করেই বলছি, সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে : মীলাদকে কঠিনভাবে সমর্থনকারী অথবা মীলাদুন্নবীর মাহফিল আয়োজনকারী ব্যক্তির সাথে বিয়ে কি বৈধ ? আমি জানি যে, ইসলামে এ কাজটি বিদ‘আত। কিন্তু আমার সন্দেহ, মীলাদুন্নবী উদযাপনকারী ব্যক্তির সাথে একজন মুসলিম নারীর বিয়ে কিভাবে হতে পারে ! কারণ যেসব শহরে এ মীলাদ পালন করা হয়, তারা এটাকে ইবাদাতের ন্যায়ই পালন করে। এখানে লোকদের আহ্বান করা হয়, কতক হাদিস পড়ে শোনানো হয়, গান-বাজনা হয় এবং প্রার্থনা করা হয়। লোকেরা মূলত দেখে ও গান গায় ! আমার প্রশ্ন হচ্ছে এসব কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির সাথে মুসলিম নারীর বিয়ে কি বৈধ ? এর চেয়েও কঠিন প্রশ্ন- আমি যা প্রকাশ করতেও সঙ্কোচ বোধ করছি— এ বিদ‘আতি কি মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে ?
  
উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
ঈদে মীলাদুন্নবী বা এ জাতীয় বিদআতি কাজ যারা করে, তাদের আমল ও কর্মকাণ্ডের ভিন্নতার ন্যায় তাদের হুকুমও ভিন্ন, যদিও মীলাদুন্নবী বিদআত। এ ধরণের মীলাদ আয়োজকদের পাপের ধরণ ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে এরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। কখনো এদের বিষয়গুলো শিরক পর্যন্ত পৌঁছে এবং তাদেরকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়, যদি এসব উৎসবে নির্দিষ্ট কোন কুফরি করা হয়, যেমন আল্লাহ ব্যতীত কারো নিকট প্রার্থনা করা, অথবা আল্লাহর রুবুবিয়াতের সিফাত দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষিত করা, অথবা এরূপ কোন শিরকে লিপ্ত হওয়া। আর যদি বিষয়গুলো এ পর্যায়ে না পৌঁছে, তাহলে এরা ফাসেক, কাফের নয়। আবার এদের ফাসেকির স্তর বিদআত ও ইসলামি বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে পৃথক ও আলাদা।

মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন দরূদ জমা করার বিদআত প্রসঙ্গ



প্রশ্ন : মীলাদুন্নবী উপলক্ষে নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিলিয়ন মিলিয়ন দরূদ জমা করার বিধান জানতে চাই। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিচিতদের নিকট নির্দিষ্ট সংখ্যক দরূদ ভাগ করে দেয়, অতঃপর তার পরিচিত, বন্ধু-বান্ধব ও নিজ পরিবারের দরূদ পাঠের সংখ্যা জমা করে। উদাহরণত : কোন এক ছাত্র গ্রামে গিয়ে প্রত্যেক বাড়ির দরোজা নক করে তাদের পরিবার কাছে ১০০০ (এক হাজার) অথবা তার চেয়ে অধিক সংখ্যক দরূদ পাঠের অনুরোধ করে, আর বলে আপনাদের সংখ্যা জানার জন্য এক সপ্তাহ পর আমি আবার আসছি। তাদের কেউ এক হাজার পুরো করে, কেউ অধিক পড়ে। এভাবে মিলিয়ন, আধা মিলিয়ন দরূদ জমা করে। আবার মাদরাসার ছাত্রদের প্রত্যেককে ৫০০ (পাঁচশত) বার দরূদ পড়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। এভাবে তিন মিলিয়ন দরূদ জমা করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করার বিধান কী ? এভাবে দরূদ জমা করার বিধান কী ? সংক্ষেপে উত্তর আশা করছি, আল্লাহ আপনাদের তাওফিক বৃদ্ধি করুন।

উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও আদর্শ সম্পর্কে যার জ্ঞান রয়েছে, কুরআন ও হাদিসের জ্ঞানে যে আলোকিত, ইসলামের ছায়ায় অবস্থান করার যে সুযোগ লাভ করেছে, শরী‘আত ও ইবাদাতের স্বাদ যে আস্বাদন করেছে, তার অবশ্যই জানার কথা যে, প্রশ্নে উল্লেখিত এসব কর্ম বিদআত ও গোমরাহী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের দাবিদার কোন মুসলমানের পক্ষে থেকে এসব কর্ম সম্পাদিত হতে পারে না। অন্যথায় আবু বকর ও সাহাবায়ে কেরাম কোথায় ছিলেন ? সাঈদ ইবন মুসাইয়্যেব ও অন্যান্য তাবেঈগণ কোথায় ছিলেন ? চার ইমাম ও ইসলামের অন্যান্য ইমামগণ কোথায় ছিলেন ? তারা কেন এমন করেননি। তাদের কারো থেকেই তো এ ধরণে কর্মের কোন প্রমাণ নেই, বরং এর সাদৃশ্য কোন আমলেরও নয়।
হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন, খোদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদেরকে এ জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন, কিন্তু তাকে সত্যিকার মহব্বতকারী ও সাওয়াবের জন্য অতি আগ্রহী কেউ তো এরূপ আমল বা এর সাদৃশ্য কোন আমল করেননি ?!
রুটিন তৈরিতে সময় অপচয় এবং মাদরাসা মাদরাসা, ঘরে ঘরে ও মজলিসে মজলিসে এসব বিতরণ করায় কোন ফায়দা নেই, উল্টো সময় নষ্ট, বরং পথভ্রষ্টতা ও বিবেকহীন কর্ম ব্যতীত কিছুই নয় !

মীলাদুন্নবী ও জন্ম দিনের সিয়াম পালন করা



প্রশ্ন : মীলাদুন্নবীর দিন সিয়াম পালন করা কি বৈধ, যেমন সহীহ মুসলিম, নাসায়ী ও আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন : এ দিন আমি জন্ম গ্রহণ করছি... এ হাদীসের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তেবায় কোন ব্যক্তির নিজের জন্ম দিনে সিয়াম পালন করা কি বৈধ ? আশা করছি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।

উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :
তিরমিযীতে ইমাম মুসলিম আবু কাতাদা আল-আনসারী থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিনের সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন : "এ দিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এ দিনেই আমার উপর ওহি নাযিল করা হয়েছে।” মুসলিম : (১১৬২) ইমাম তিরমিযি আবু হুরায়রা -রাদিআল্লাহু আনহু- থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়, আমি চাই সিয়াম অবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।” তিনি হাদিসটি হাসান বলেছেন। আল-বানি সহীহ তিরমিযীতে হাদিসটি সহীহ বলেছেন।
উপরের বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্মের শোকর আদায় কল্পে সোমবার দিন সিয়াম পালন করেছেন। আবার এ দিনের ফজিলতের কারণেও তিনি সিয়াম পালন করেছেন, যেমন এ দিনেই তার উপর ওহি নাযিল করা হয়েছে এবং দিনেই বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়, তাই তিনি পছন্দ করেন, তার আমল সিয়াম অবস্থায় পেশ করা হোক। অতএব সোমবার দিন সিয়াম পালন করার কয়েকটি কারণের একটি কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম।

মীলাদুন্নবীর মিষ্টি ক্রয় করা


প্রশ্ন : মীলাদুন্নবীর মিষ্টি খাওয়া কি হারাম, মাহফিলের আগের দিন, পরের দিন এবং মাহফিলের দিন, এ উপলক্ষে মিষ্টি খরিদ করার বিধান কী ? কারণ ইদানীং এর প্রচল দেখছি, আশা করছি উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :
মীলাদুন্নবী বিদআত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তার কোন সাহাবি অথবা কোন তাবেঈ অথবা কোন ইমাম থেকে এর প্রচলন নেই, বরং এর প্রচলন শুরু করেছে আবিদী সম্প্রদায়, যেরূপ তারা অন্যান্য বিদআত ও গোমরাহী সৃষ্টি করেছে।

দ্বিতীয়ত :
ক্ষতিকর কোন উপাদান না থাকলে মিষ্টি খাওয়া ও কেনা বৈধ, যদি এতে নিষিদ্ধ কর্মের প্রতি উৎসাহ না থাকে অথবা নিষিদ্ধ কর্মের প্রচার ও স্থায়িত্বের কারণ না হয়।
তবে আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, মীলাদুন্নবীর সময় মিষ্টি খরিদ করা মীলাদুন্নবী প্রচার করা এবং তার প্রতি এক ধরণের সমর্থন, বরং প্রকারান্তরে মীলাদুন্নবীউদযাপন করা হয়। কারণ, মানুষের অভ্যাসে যা পরিণত হয় তাই ঈদ, যদি তাদের অভ্যাস হয় এ দিনে এ ধরণের খাদ্য ভক্ষণ করা, অথবা মীলাদুন্নবী উপলক্ষে মিষ্টি তৈরি করা, বছরের অন্যান্য দিন যেরূপ হয় না, তাহলে এ দিনে এ মিষ্টি বিকিকিনি করা, খাওয়া অথবা হাদিয়া দেয়া এক ধরণের মীলাদ মাহফিলউদযাপন করার শামিল, তাই এ দিনে এসব পরিহার করাই উত্তম।

গান-বাজনা ও হারাম জিনিসের আয়োজন ব্যতীত মীলাদুন্নবী উদযাপন



প্রশ্ন : আমরা স্পাহানবাসী, আমরা সভা সমাবেশকে একতা, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি, দ্বীনের প্রতি তাদের গর্ব ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি এবং আমাদের প্রজন্মের চরিত্র ও আচরণের উপর প্রভাব সৃষ্টিকারী বিধর্মীদের মনগড়া উৎসব যেমন ভালবাসা দিবস ইত্যাদি থেকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে আমরা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করি, এ কাজ কি বৈধ ?

উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ

প্রথমত :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতবিরোধ রয়েছে, তবে এ ব্যাপারে তারা একমত যে, হিজরির এগারতম বছর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়েছে ! বর্তমান যুগে এ মৃত্যু দিবসেই কিছু লোক মাহফিলের আয়োজন করে “ঈদে মীলাদুন্নবী” উদযাপন করছে

দ্বিতীয়ত :
ইসলামি শরী‘আতে “ঈদে মীলাদুন্নবী” নামে কোন অনুষ্ঠান নেই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও কোন ইমাম এ জাতীয় ঈদের সাথে পরিচিত ছিলেন না, এসব অনুষ্ঠান পালন করা তো পরের কথা মূর্খ বাতেনী গ্রুপের কতক লোক এ ঈদের সূচনা করলে কতিপয় শহরের লোকেরা এ বিদআতের দিকে ধাবিত হয়

মীলাদুন্নবী নামে মসজিদে সমবেত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা



প্রশ্ন: আমাদের সবার নিকট পরিচিত মীলাদুন্নবী বিদআত, কিন্তু অনেকেই মীলাদুন্নবী নামে অনুষ্ঠান করে নবীর জন্মানুষ্ঠান পালন করার জন্য নয়, বরং নবীর জীবন চরিত ও আনুষঙ্গিক বিষয় আলোচনার জন্য, নবীর জন্ম দিন ও তারিখ মোতাবেক না হলে এ অনুষ্ঠান কি হারাম ? মীলাদ নামকরণই কি এ অনুষ্ঠান হারাম হওয়ার কারণ ? অথবা মীলাদ শব্দ বা পরিভাষা পরিহার করে নবীর জীবন চরিত আলোচনার অনুষ্ঠান কি হারাম ? উল্লেখ্য এ অনুষ্ঠানে লোকদের খানা পরিবেশন করা হবে। আমার জিজ্ঞাসার কারণ আগামী সপ্তাহের শেষে রবিবার ছুটির দিনে নতুন দুলহানদের উপলক্ষে নৈশ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে যেহেতু লোকের সমাগম হবে, তাই এর আয়োজকরা নৈশ ভোজের পর মসজিদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত আলোচনার ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু তার নামকরণ করেছে মীলাদ, তবে এ দিন নবীর জন্ম দিনের মোতাবেক নয়, নবীর জন্মদিন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না, তবে নবীর জীবন চরিত আলোচনা করা হবে, এ আলোচনা মূলত নাচ-গানের পরিবর্তে, যেন লোকেরা নবীর জীবন চরিত শোনে অধিকতর উপকৃত হয়, আমি আপনাদের সৎ উপদেশ কামনা করছি। দ্বিতীয়ত : নবীর জীবন চরিত ও খাদ্য পরিবেশন করার জন্য মসজিদে অনুষ্ঠান আয়োজন করা কি হারাম ?

উত্তর :

আল-হামদুলিল্লাহ

কোন মানুষের জন্মানুষ্ঠান পালন করা বা মীলাদ অনুষ্ঠান বৈধ নয়, না কোন নবীর না কোন মনীষীর ? কারণ শরীআতে এর কোন ভিত্তি নেই, বরং এসব অনুষ্ঠান অমুসলিম তথা ইহুদী, নাসারা ও অন্যান্য জাতি-ধর্মের লোকদের থেকে আমদানি করা।

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী প্রবর্তন ও প্রবর্তক: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা



পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা। সালাত ও সালাম মহান রাসূল, আল্লাহর হাবীব ও মানবতার মুক্তিদূত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গীদের উপর। আজকের বিশ্বে মুসলিম উম্মার অন্যতম উৎসবের দিন হচ্ছে ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’। সারা বিশ্বের বহু মুসলিম অত্যন্ত জাঁকজমক, ভক্তি ও মর্যাদার সাথে আরবী বৎসরের ৩য় মাস রবিউল আউআল মাসের ১২ তারিখে এই ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বা নবীর জন্মের ঈদ পালন করেন। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমই  এই ‘‘ঈদের’’ উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত নন। যে সকল ব্যক্তিত্ব এই উৎসব মুসলিম উম্মার মধ্যে প্রচলন করেছিলেন তাঁদের পরিচয়ও আমাদের অধিকাংশের অজানা রয়েছে। এই নিবন্ধে আমি উপরোক্ত বিষয়গুলি আলোচনার চেষ্টা করব।

১) ঈদে মীলাদুন্নবী: পরিচিতি:

ক) ‘‘মীলাদ’’ শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা:
মীলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: জন্মসময়। এই অর্থে ‘‘মাওলিদ’’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়[1]। আল্লামা ইবনে মানযূর তাঁর সুপ্রসিদ্ধ আরবী অভিধান ‘‘লিসানুল আরবে’’ লিখছেন: ميلاد الرجل: اسم الوقت الذي ولد فيه"" অর্থাৎ: ‘‘লোকটির মীলাদ: যে সময়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম।’’[2] স্বভাবত:ই মুসলিমগণ ‘‘মীলাদ’’ বা ‘‘মীলাদুন্নবী’’ বলতে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সময়ের আলোচনা করা বা জন্ম কথা বলা বোঝান না। বরং তাঁরা ‘‘মীলাদুন্নবী’’ বলতে রাসূলুল্লাহ্র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্মের সময় বা জন্মদিনকে বিশেষ পদ্ধতিতে উদযাপন করাকেই বোঝান। আমরা এই আলোচনায় ‘‘মীলাদ’’ বা ‘‘ঈদে মীলাদুন্নবী’’ বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম উদযাপন বুঝাব। তাঁর জন্ম উপলক্ষে কোন আনন্দ প্রকাশ, তা তাঁর জন্মদিনেই হোক বা জন্ম উপলক্ষে অন্য কোন দিনেই হোক যে কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর জন্ম পালন করাকে আমরা ‘‘মীলাদ’’ বলে বোঝব। শুধুমাত্র তাঁর জীবনী পাঠ, বা জীবনী আলোচনা, তাঁর বাণী, তাঁর শরী‘আত বা তাঁর হাদীস আলোচনা, তাঁর আকৃতি বা প্রকৃতি আলোচনা করা মূলত: মুসলিম সমাজে মীলাদ বলে গণ্য নয়। বরং জন্ম উদযাপন বা পালন বা জন্ম উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করাই মীলাদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী হিসেবে মুসলিম সমাজে বিশেষভাবে পরিচিত।

ঈদে মীলাদুন্নবী (শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ)



কয়েক বছর পূর্বে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এক মসজিদে উপস্থিত হলাম প্রতিদিনের মত এশার নামাজ আদায় করতে। দেখলাম আজ মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ। অন্য দিনের চেয়ে কম হলেও মুসল্লীদের সংখ্যা দশগুণ বেশী। সাধারণত এ দৃশ্য চোখে পড়ে রমজান ও শবেকদরে। মনে করলাম হয়তো আজ কারো বিবাহ অনুষ্ঠান কিংবা জানাযা। এত লোক সমাগমের কারণ জিজ্ঞেস করলাম ইমাম সাহেবকে। তিনি বললেন আজ ১২ই রবিউল আউয়ালের রাত। মীলাদুন্নবীর উৎসবের রাত। 

সম্মানিত পাঠক!
এ রাত ও পরবর্তী দিন ১২ ই রবিউল আউয়াল অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে এক সময় পালিত হত বৃহত্তর চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও পালিত হত তবে তুলনামুলক কম গুরুত্বে । এ রাতে খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ উৎসবে মুখর হয়ে উঠে অনেক পাড়া- মহল্লা। যারা এটা পালন করে তাদের উৎসব মুখরতা দেখলে মনে হবে নিশ্চয়ই এটা হবে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। আর এটা তাদের অনেকে বিশ্বাসও করে। তাইতো শ্লোগান দেয়, দেয়ালে লিখে “ সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদ।”
কিন্তু বাস্তবে কি তাই? ইসলাম ধর্মে ঈদে মীলাদ বলতে কি কিছু আছে? ইসলামে ঈদ কয়টি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত বা মৃত্যু দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল নয়? যে দিনে রাসূলে কারীম সা.  ইন্তেকাল করলেন সে দিনে আনন্দ উৎসব করা কি নবী প্রেমিক কোন মুসলমানের কাজ হতে পারে? শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদ পালন করা কি জায়েয? এটা কি বিধর্মীদের অনুকরণ নয়?
এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুজতে যেয়ে এ সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।

রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্ম দিবস কবে?

মিলাদুন্নবী পালনের বিধান


সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য, কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবীজী মুহাম্মাদ(সঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।

কুরআন এবং সুন্নাহতে খুব স্পষ্টভাবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলী অনুসরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় ব্যাপারে নতুন কিছু সূচনা করাকে স্পষ্টত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

ভাবার্থ:

“বলুন [হে নবী]: যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৩১)

ভাবার্থ:

“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল হয়েছে, তোমরা তার [কুরআন ও সুন্নাহ] অনুসরণ কর, আর তাঁকে [আল্লাহ] ছাড়া আর কোন আউলিয়ার [সেই সব সত্তা যারা আল্লাহর সাথে শরীক করার নির্দেশ দেয়] অনুসরণ করো না…” (সূরা আল আরাফ, ৭:৩)

ভাবার্থ:

“আর এটিই আমার সরল-সঠিক পথ, অতএব তোমরা এ পথেই চল এবং অন্যান্য পথে পরিচালিত হয়োনা, কেননা সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।…” (সূরা আল আনআম, ৬:১৫৩)

এবং নবীজী(সঃ) বলেছেন:
“সবচেয়ে সত্য ভাষণ হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদের দিকনির্দেশনা, আর সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে (দ্বীনের ব্যাপারে) নব উদ্ভাবিত বিষয়।”
এবং তিনি(সঃ) বলেছেন:

ঈদে মীলাদুন নবী (সা.) কেন বিদ'আত?



বর্তমানে মুসলিমদের বিরাট একটি অংশ ঈদে মীলাদুন্ নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এমন কি যারা ইসলামের বুনিয়াদী বিষয়গুলো পালন করতে আগ্রহী নয় তারাও এটি পালনে বেশ তৎপর। আমাদের দেশের পত্রপত্রিকা, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও এক শ্রেণীর পীর-মাশায়েখ এবং আলেম-উলামার বক্তব্যেও এর বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। বেশ কিছু মুসলিম দেশে এ উপলক্ষে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়। আজ আমি এই প্রবন্ধে রবিউল ও ঈদে মীলাদুন নবী উপলক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা উপস্থাপন করছি। আশা করি এটি পাঠ করে অনেকেরই ভুল ভাঙবে।

ঈদে মীলাদুন্নবী মূলত: অমুসলিমদের অনুকরণ

মূলত: অমুসলিম ইয়াহুদ-নাসারাদের অনুসরণ থেকেই এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্ম দিবস উপলক্ষে ঈদে মীলাদুন্ নবীর অনুষ্ঠান। অজ্ঞ মুসলিমরা এবং একদল গোমরাহ আলেম প্রতি বছর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্ম উপলক্ষে রবিউল আওয়াল মাসে এই অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। কেউ কেউ মসজিদে এ অনুষ্ঠান করে থাকে। আবার কেউ ঘর বা বিশেষভাবে এর জন্য প্রস্তুতকৃত স্থানে এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। আর এতে শত শত সাধারণ লোক উপস্থিত হয়। তারা নাছারাদের অন্ধ অনুসরণ করেই এ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকে।
এ অনুষ্ঠানে বিদআত ও নাসারাদের সাদৃশ্য থাকার সাথে সাথে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার শিরক ও অপছন্দনীয় কর্ম-কাণ্ড। এতে এমন কিছু কবিতা আবৃতি করা হয়, যাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ব্যাপারে এমন বাড়াবাড়ি রয়েছে, যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দু’আ করা এবং আশ্রয় প্রার্থনা করা পর্যন্ত নিয়ে যায়। অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রশংসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:
لَا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ
“নাসারাগণ যেমন মরিয়ম পুত্র ঈসা (আঃ)এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছিল, তোমরা আমার ব্যাপারে সেরূপ বাড়াবাড়ি করোনা। আমি কেবলমাত্র আল্লাহর একজন বান্দা। তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল বল।”
নাসারারা ঈসা (আঃ)এর মর্যাদা বাড়াতে বাড়াতে আল্লাহর পুত্র হওয়ার আসনে বসিয়েছিল। আবার কেউ কেউ তাঁকে স্বয়ং আল্লাহ হিসাব বিশ্বাস করে তাঁর ইবাদত শুরু করেছে। কেউ বা তাঁকে তিন আল্লাহর এক আল্লাহ হিসাবে নির্ধারণ করে নিয়েছে। কিছু কিছ বিদআতী নবী প্রেমিক বিশ্বাস করে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হন।

আমরা কি উদযাপন করব?




বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

নিশ্চয় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তার প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি আর আমাদের অন্তরের যাবতীয় কদর্যতা ও মন্দ কাজ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন তাকে পথভ্রষ্ট করবে এমন কেউ নেই আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো পথপ্রদর্শনকারী নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল; আল্লাহ তার উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথী সকলের উপর সালাত ও অগণিত সালাম পেশ করুন।
অতঃপর...
একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে জরুরি যে বিশ্বাস রয়েছে তন্মধ্যে হলো, আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন, তাকে পাঠানোর মাধ্যমেই তার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন আর মুস্তাফা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর কোনো ব্যক্তিকে তাঁর দ্বীনে বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ দেন নি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾ [المائ‍دة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [মায়েদা: ৩]
রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেন,
«قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لَا يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلَّا هَالِكٌ»
“আমি তোমাদেরকে এমন একটি সুস্পষ্ট পথের উপর রেখে গেলাম যার রাত্রি দিনের মত; এর থেকে ধ্বংসে পতিত ব্যক্তি বাদে কেউ বিচ্যুত হবে না।” [ইবনে মাজাহ] (হাদীসটি সহীহ)

বইঃ কিয়ামতের আলামত - ফ্রি ডাউনলোড



বইঃ কিয়ামতের আলামত 
লিখেছেনঃ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল-মাদানী। 
লিসান্সঃ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এম,এম, ফাস্ট ক্লাশ ।
প্রকাশনায়: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: বইটি এ বিষয়ে এক কথায় অসাধারণ। প্রতিটি বিষয়ে কুরআন ও হাদীস থেকে রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এ বইটি সৌদী আরবের জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার এর পক্ষ থেকে ছাপিয়ে হাজার হাজার কপি বিতরণ করা হয়েছে। আশাকরি বইটি থেকে আমরাও উপকৃত হব। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানার এবং তা মানার তাওফীক দান করুন।


বইটি ডাউনলোড করুন (ওয়ার্ড ভার্সন)

বইটি ডাউনলোড করুন (পিডিএফ ভার্সন)

বই – কবীরা গুনাহ (ফ্রি ডাউনলোড)





শিরোনাম: কবীরা গুনাহ

সংকলন: ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী ( রহ.)
অনুবাদক: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
প্রকাশনায়: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

সংক্ষিপ্ত বিবরণ:: কবীরা গুনাহ : ইমাম শামসুদ্দীন আয যাহবী সংকলিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুখতাসার আল কাবায়ের, যা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে নাম দেয়া হয়েছে কবীরা গুনাহ। এ বইটি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মানুষ এ বইয়ের সাহায্যো প্রমাণসহ জানতে পারে আল্লাহ কি কি বিষয় নিষিদ্ধ করেছেন। বড় বড় গুনাহ চিহ্নিত করা ও সেগুলো থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এ বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক।

বইটি পিডিএফ ভার্সনে দেয়া হয়েছে। তাই বইটি ডাউনলোড করে পড়ার জন্য আপনার কম্পিউটারে ‘এডোব রিডার’ সফটোওয়্যারটি থাকা আবশ্যক। এটি আপনার কম্পিউটারে আগে থেকে না থাকলে http://get.adobe.com/reader/ লিংকে ক্লিক করে এখনই তা ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন।






Thursday, 1 January 2015

আকীদার মানদণ্ডে তাবীজ




সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য এবং দরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহর সা. প্রতি।

তাবীজ সম্পর্কে হরেক রকমের বই পুস্তক বাজারে রয়েছে। ঐ সব বইয়ে তাবীযের স্বপক্ষে কোন সমর্থনযোগ্য বর্ণনা নেই, অথচ অনেক কিচ্ছা কাহিনীসহ অসংখ্য তাবীযের বর্ণনা ও ফাযায়েলে ভরপুর। এই সব বই পড়ে যে কোন মানুষ বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, রোগ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের আশায় তাবীজ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। তাবীযের ব্যবহার আজ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে উঠেছে।

প্রখ্যাত গবেষক ড: আলী আল-উলাইয়ানী তাঁর আকীদার মানদণ্ডে তাবীজ নামক পুস্তিকায় সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গিতে তাবীযের গ্রহণযোগ্যতা পর্যালোচনা করেছেন। তাবীজ ব্যবহার শরীয়ত সম্মত কিনা- এর পক্ষের ও বিপক্ষের দলীল সমূহ তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন। এতে তিনি উভয় পক্ষের বক্তব্য পেশ করার পর এটা প্রমাণ করেছেন যে, তাবীযের যে রেওয়াজ বর্তমানে প্রচলিত আছে তার অধিকাংশই সহীহ 'আকীদার পরিপন্থী এবং সরলপ্রাণ মুসলিমদেরকে তাদের অজ্ঞতার সুযোগে ভাল মন্দ, সুখ দুঃখ তথা বাঁচা মরার অবলম্বন হিসাবে বেছে নিতে প্ররোচিত/ উদ্বুদ্ধ করছে এবং এর ফলে তারা নিজেদের অজান্তে বিদ'আত ও শিরকের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন:
وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴿المائدة২৩﴾
অর্থাৎ ((তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা কর, যদি মুমিন হয়ে থাক))। (সুরা মায়িদা ২৩ আয়াত)।
রাসূল সা. বলেছেন:

ভ্রান্ত তাবিজ-কবচ



সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্ব জগতের ঘটনা প্রবাহের জন্য সঙ্গত কারণ বা মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন। আবার কখনো কখনো এ সমস্ত কারণ ও মাধ্যমকে তিনি পরিহার করেছেন। যাতে করে মানুষ এসব কিছুকে তাদের রব বা প্রতিপালক মনে না করে। এবং তিনি এ সমস্ত কারণ ও ঘটনা প্রবাহকে এমন এক অমোঘ নিয়মে বেঁধে দিয়েছেন যার ফলে কোন কিছুই বৃথা যাবার নয় । সালাত ও সালাম ঐ রাসূলের উপর যাঁকে তিনি সমস্ত জগতের জন্য রহমত করে প্রেরণ করেছেন, যাতে করে সকলই তাঁর প্রিয় হতে পারে। অতঃপর, আল্লাহ এ বিশ্ব জগতকে অনস্তিত্ব থেকেই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি একে তাঁর ইচছা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে যেভাবে চান সেভাবেই পরিচালনা করেন এবং তিনিই তাঁর সৃষ্টির সকল বস্তুকে একটির উপর অপরটির অস্তিত্ব বিন্যাস করেছেন, আর এ কারণেই একটি বস্তুকে অপরটির জন্য কারণ বা মাধ্যম বানিয়েছেন । 
পূর্বেকার মুশরিকরা আল্লাহকে এই পৃথিবীতে পরিপূর্ণ ক্ষমতা, পরিচালনা, পরিকল্পনা এবং সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করত।  
তারা এমন বিশ্বাস পোষণ করতনা যে, তাদের বাতিল উপাস্য বা দেবতাগুলো বিশ্ব জগতের কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, অথবা সেগুলো কোন প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের ক্ষমতা রাখে। বরং তাদের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল যে, এসব কিছু একমাত্র আল্লাহই পরিচালনা করে থাকেন, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ 
“অতঃপর যখন তোমাদেরকে অকল্যাণ ¯পর্শ করে তখন তোমরা তাঁর (আল্লাহর) নিকট বিনয় সহকারে প্রার্থনা কর। ”(সূরা আননাহাল ৫৩) 
আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেন :

তাবীজ-কবজ, রিং, বালা, সুতা ইত্যাদী ব্যবহার



প্রশ্নঃ তাবীজ লটকানো, রিং, তাগা পরিধান করা, হাতে লোহা বা রাবারের আংটা লাগানো, সুতা, পুঁতির মালা বা অনুরূপ বস্তু ব্যবহারের হুকুম কি?    

উত্তরঃ উপরোক্ত জিনিষগুলো ব্যবহার করা হারাম। নিন্মে রেফারেন্স সহ দলীল সমূহ পেশ করা হল:

1)     নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
 (من علق شيئا وكل إليه)
“যে ব্যক্তি কোন জিনিষ লটকাবে, তাকে ঐ জিনিষের দিকেই সোপর্দ করে দেয়া হবে”।[১]

2)    কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোক পাঠিয়ে বলে দিলেন যেঃ
أَنْ لاَ يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ
 “কোন উটের গলায় ধনুকের রশি বা গাছের ছাল দিয়ে তৈরী হার ঝুলানো থাকলে অথবা যে কোন মালা থাকলে সেটি যেন অবশ্যই কেটে ফেলা হয়।”[2]

3)    নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় জিজ্ঞাসা ও সেগুলোর জবাব






বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

প্রিয় মুসলিম ভায়েরা, আকীদা বিষয়ক বারটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং কুরআন, সহীহ হাদীস ও বিশ্ববরেণ্য ওলামাগণের ফাতওয়ার আলোকে সেগুলোর উত্তর প্রদান করা হল। আমাদের বিশ্বাসকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং সঠিক আকীদার উপর চলার জন্য এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুব জরুরী। আসুন, আমরা প্রশ্নগুলো পড়ি এবং সেগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে পরিশুদ্ধ আকীদা ও বিশ্বাস সহকারে সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করেন।

প্রশ্ন-১: জ্যোতির্বিদ, গণক, হস্তরেখা বিদ, যাদুকর প্রভৃতির কাছে যাওয়া বা তাদের কথা বিশ্বাস করার বিধান কি? 
উত্তর: কোন জ্যোতির্বিদ, গণক, হস্তরেখা বিদ, যাদুকর প্রভৃতির কাছে যাওয়া বা তাদের কথা বিশ্বাস করা বৈধ নয়। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি কোন গণৎকারের কাছে গিয়ে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল করা হবে না। (ছয় শতাধিক মুসলিম) গণৎকার বলতে ভাগ্য গণনাকারী দৈবজ্ঞ, জ্যোতিষী, যাদুকর সকলেই উদ্দেশ্য। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোন জ্যোতির্বিদের কাছে যাবে, অত:পর সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের সাথে কুফরী করবে। (মুসনাদ আহমাদ ও সুনান গ্রন্থ সমূহ)

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...