Tuesday 13 February 2024

প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে (১৪ই ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন করার হুকুম কি? বিস্তারিত আলোচনাসহ।

 


▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: ইসলামী শরীয়তে ভালবাসা দিবস নামে কোন দিবস নেই। বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালন একটি রোমান জাহেলি উৎসব। রোমানরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পরেও এ দিবস পালনের প্রথা অব্যাহত রাখে। ইতিহাস থেকে জানা যায় খ্রিষ্টানরা ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ উদযাপন করে। দিবসটির উৎপত্তি খ্রিষ্টীয় ও প্রাচীন প্রথা থেকে। খ্রিষ্টানদের কাছে এটি একটি মহৎ ও পবিত্র দিন। গির্জায় গির্জায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এদিনে তারা তাদের যাজক ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’কে বিশেষভাবে স্মরণ করে। এ তারিখটি তাদের সংস্কৃতির অংশ। মধ্য ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ার কাউন্টির তরুণীরা এ দিনের মধ্যরাতে দলবেঁধে ৩ থেকে ১২ বার চার্চ প্রদক্ষিণ করত এবং সুর করে প্রেমগীতি আবৃত্তি করত। অর্থডক্স খ্রিষ্টানরা ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ উদযাপন করে ৭ জুলাই। তারাও এদিনে গির্জায় আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালন করে। দিবসটির অপর নাম ‘ফিস্ট অব সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’। ভ্যালেন্টাইন নামের ব্যক্তিটি নিজেই রহস্যাবৃত। তাকে নিয়ে স্বয়ং খ্রিষ্টসমাজ দ্বিধাবিভক্ত। এই ভ্যালেনটাইনকে নিয়ে যত কাহিনী প্রচলিত আছে সবগুলোর ভিত্তিই হলো পৌরাণিক ও খ্রিষ্টধর্মীয় উপকাহিনী। বর্তমানে প্রতি বছর ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিতে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই দিন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে চিঠি, কার্ড, ফুল, গহনা-সহ নানাবিধ উপহার সামগ্রী গিফট করে পাশ্চাত্য উচ্ছৃিংখলতা, নোংরামি, বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনার নোংরা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। বিভিন্ন মুসলিম ও অমুসলিম দেশে তথাকথিত মুসলিমরাও এই নোংরা খ্রিষ্টীয় উৎসবে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রেম ও প্রণয়লীলার অবৈধ সরোবরে ডুব দেয়। তারাও উদযাপন করে কথিত ভালোবাসা দিবস নামের এই হারাম খ্রিষ্টীয় উৎসবটি।আল-ইয়াযু বিল্লাহ।আপনি কি জানেন?১৪ই ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নিজের বউকে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানালেও মূলত দিনটিকে উদযাপন করা হয়। সুতরাং এটা থেকে বিরত থাকুন। কারন অমুসলিমদের অনুকরণে যেসব দিবস পালিত হয়, তার সাথে ইসলামের কোনই সম্পর্ক নেই। এগুলি স্রেফ জাহেলিয়াত এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি মাত্র।

.

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ!আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ নামে কোনো দিবস নেই। আমরা হুজুগে মাতালরা বেকুবের মতো ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’কে ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছি। এ দিবসটিতে ভালোবাসার নামে ‘মন্দবাসা’ ও কম হয় না। তরুণ-তরুণীদের পরস্পরকে আনন্দিত করতে নির্দ্বিধায় চলে নষ্টামি আর দেহপ্রদর্শনের নাটক। হাজার হাজার যুবক-যুবতী এ দিনে তার সতীত্ব ও চরিত্রকে বিসর্জন দিয়ে নিঃস্ব হয়ে ঘরে ফেরে। তাই অনেকে এ দিবসটিকে উল্লেখ করে থাকেন ‘বিশ্ব বেহায়া দিবস’, বিশ্ব নগ্নতা দিবস’, ‘বিশ্ব লুচ্চামি দিবস’ হিসেবে।অথচ ইসলামে সবধরনের অশ্লীলতা ও বেলাল্লাপনা নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার অশ্লীলতা করা তো দূরে থাক অশ্লীলতার নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছেন। (সূরা বনি-ইসরাইল; ৩২, আন‘আম; ১৫১)। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবু দাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭)। অপর বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) স্বীয় উম্মতকে সাবধান করে বলেন, তোমরা ইহূদী-নাসারাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে হাতে হাতে ও বিঘ’তে বিঘ’তে। তারা যদি গুই সাপের গর্তে ঢুকে পড়ে, তোমরাও সেখানে ঢুকবে।’(ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯৪, সনদ হাসান) আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,ইসরাইল সম্প্রদায় যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাহও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতোর একটি অপরটি মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মাহর মধ্যেও কেউ তাই করবে।” [তিরমিযি, হা/২৬৪১; সনদ: হাসান] কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমানে ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপনের মাধ্যমে মুসলিম যুবক যুবতীরা খ্রিষ্টানদের অনুসরণ করছে। এমনকি তথাকথিত সুশীল সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠরাও এ থেকে পিছিয়ে নেই।অথচ কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোন উৎসব পালন করা জায়েয নয়। কেননা উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে শরয়ি নির্দেশনার এক চুল বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি 

ভ্যালেন্টাইনস ডে (তথাকথিত ভালোবাসা দিবস) উপলক্ষে নিজ স্ত্রীকে উইশ করাও জায়েয নেই। কারণ এর দ্বারা মূলত এই জঘন্য দিবসটিকে পালন করা হয় এবং বৈধতা দেওয়া হয়। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা সারাবছর দেখান, বছরের যেকোনো দিন দেখান। 

.

▪️এবার ইতিহাস বিখ্যাত এবং যুগশ্রেষ্ঠ কয়েকজন ইমামের ফাতওয়া দেখুন:

________________________________________

(১).ভালোবাসা দিবস পালন সম্পর্কে হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন: 

Sunday 11 February 2024

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গি



▌বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গি

·

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। যিনি বলেছেন, “প্রকাশ্য বা গোপন কোনো অশ্লীলতার কাছেও যেও না।” [সুরা আনআম: ১৫১]

শতসহস্র সালাত ও সালাম ধার্য হোক প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহর জন্য। যিনি বলেছেন, “যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমনসব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।” [ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৯; সনদ: হাসান]

·

প্রাক্‌কথন:

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা ভালোবাসা দিবস একটি খ্রিষ্টীয় বার্ষিক উৎসবের নাম, যা প্রতি বছর ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিতে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই দিন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে চিঠি, কার্ড, ফুল, গহনা-সহ নানাবিধ উপহার সামগ্রী গিফট করে পাশ্চাত্য উচ্ছৃংখলতা, নোংরামি, বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনার নোংরা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। বিভিন্ন মুসলিম ও অমুসলিম দেশে তথাকথিত মুসলিমরাও এই নোংরা খ্রিষ্টীয় উৎসবে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রেম ও প্রণয়লীলার অবৈধ সরোবরে ডুব দেয়। তারাও উদ্‌যাপন করে কথিত ভালোবাসা দিবস নামের এই হারাম খ্রিষ্টীয় উৎসবটি। আল-ইয়াযু বিল্লাহ।

এই দিনে ভালোবাসা প্রদানের নামে বহু নারী নিজের সতীত্ব বিসর্জন দেয়। নিজের আদর্শকে ভুলে, স্বীয় ভূষণকে বর্জন করে বহু মুসলিম এই দিন বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে অবাধ ও উন্মত্ত ভালোবাসায় মেতে উঠে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরে আসা এই দিবসটি ১৯৯৩ সাল থেকে এদেশেও উদযাপিত হয়। কথিত সুশীল সমাজের মোড়লরা দেশের উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদেরকে নোংরামি ও অশ্লীলতায় উসকে দেয়। কিন্তু এ থেকে উত্তরণ প্রয়োজন, প্রয়োজন মুক্তির।

প্রিয় পাঠক, বক্ষ্যমাণ নিবন্ধটিতে আমরা এই দিবসটির উৎপত্তি এবং এ ব্যাপারে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি দলিলপ্রমাণ সহকারে আলোচনা করেছি। ফালিল্লাহিল হামদ। তাহলে আসুন, জেনে নেই এই উৎসবের ব্যাপারে ইসলামী বিধিবিধান। ওয়াল্লাহুল মুওয়াফফিকু ওয়াল মুয়িন।

·

ইতিহাস:

ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তিগত ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। [বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: দৈনিক সংগ্রাম; সম্পাদকীয় পাতা; রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ; (অনলাইন ভার্শন)]

তার মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনাটি আমরা উল্লেখ করছি। ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্মপ্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...