Saturday 17 January 2015

মুশরেদের গান ও কবিতা ও নাটক, মুসলমানদের মাঝে শিরকের থাবা

...
ভারতীয় একজন গীতিকার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন যা আজকাল নামধারী মুসলমান সমাজ দেশপ্রেমের গান হিসেবে গাইছে ও শুনছে!
“ও আমার দেশের মাটি…
তোমার পরে’ ঠেকাই মাথা” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
রবি ঠাকুরের বাপ-দাদা ছিলো হিন্দু, তিনি নিজে হিন্দুধর্ম থেকে ব্রাহ্মধর্মে কনভার্ট হন। নতুন ধর্মে গেলেও, ব্রাহ্মধর্মের অনেক কিছুই আসলে হিন্দুধর্ম বিশ্বাস দ্বারাই প্রভাবিত ছিলো। কয়েক হাজার বছরের ‘শিরকের’ সংস্কৃতি নিশ্চয়ই ২০-৩০ বছরেই মুছে ফেলা যায়না। একারণেই নতুন কেউ ‘ইসলাম’ গ্রহণ করলে তাকে শিরকি নাম পরিবর্তন করতে হয়, মুশরেকদের সংস্কৃতি ও সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়। এইজন্য দেখবেন, নতুন যারা ইসলাম কবুল করে ২-১ বছরের মাঝেই তারা ২০-৩০ বছর ধরে জন্মগত মুসলিমদের থেকে দ্বীনের ব্যপারে অনেক এগিয়ে থাকে। ফা লিল্লাহিল হা’মদ, এটাই হচ্ছে আল্লাহর দ্বীন ও মানুষের বানানো কল্পিত ধর্মের মাঝে পার্থক্য।
যাই হোক যেই কথা বলছিলাম, হিন্দুরা গাছ, পাথর, মূর্তি, সাপ-বিচ্ছু, বাঁদর-হনুমান, নারী-পুরুষের প্রজনন অংগ...এমন কোন কিছুই বাকি নেই, যার পূজা তারা করেনা। এর কারণ হচ্ছে, তারা মনে করেঃ “মহাবিশ্বের সবকিছুর মাঝেই সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ আছেন, তাই যা কিছুরই পূজা হোক না কেনো, তাতে আল্লাহর পূজা করা হয়, যাকে বলা হয় pantheism বা সর্বেশ্বরবাদ।”. এজন্য সর্বেশ্বরবাদীরা সবকিছুরই, বিশেষ করে বড় নদী, বড় গাছ, আশ্চর্য কোন জিনিস দেখলেই সেইগুলোর পূজা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ক্বুরান হাদীসের আলোকে মুসলমানদের আকীদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস হচ্ছে, “আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা আরশে আযীমের উর্দ্বে রয়েছেন, তিনি তাঁর সৃষ্ট জগতে বিরাজমান নন। অর্থাৎ খালিক (সৃষ্টিকর্তা) ও মাখলুক (সৃষ্টিজগত) আলাদা। তবে তিনি আরশের উপরে থেকে সারা বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে তিনি তা জানেন, দেখেন, শুনেন এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রন একমাত্র তিনিই করেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআ’লার জ্ঞান, ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রন সব জায়গায় বিরাজমান, কিন্তু সত্ত্বাগতভাবে তিনি নিজে সব জায়গায় বিরাজমান নন, তিনি রয়েছেন আরশের উপরে।”
এমনিভাবে মুশরেকরা মনে করে, ‘আমাদের দেশ’ আমাদের খাওয়ায় পরায়। একারণে দুর্গা, কালীকে যেমন ভক্তি করে তারা “মা” ডাকে, তেমনি দেশকেও তারা “মা” ডাকতে ভালোবাসে (দেশ মা, দেশ মাতা, দেশ মাতৃকা), এবং দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁর প্রতি মাথা নত করতেও তাদের কোন আপত্তি নেই। সেই চেতনা ও বিশ্বাস থেকেই রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, “তোমার পরে ঠেকাই মাথা”।
অথচ মুসলমানেরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত (রুকু, সেজদা) করেনা। উল্লেখ করা যেতে পারে, হিন্দু দেশ ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতাও এই রবি ঠাকুর। সেটাতে তিনি লিখেছিলেন,
“জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা”!
অর্থাৎ বন্দনা করতে করতে তিনি ভারত সরকারকে (তৎকালীন বৃটিশ রাজাকে!) ভারতের ‘ভাগ্য বিধাতা’ বানিয়ে দিলেন, এবং অত্যাচারী, খুনি রাজা যে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের উপরে নির্যাতনের স্টিম রুলার চালিয়ে তাদের অধিকার হরণ করে রেখেছিলো, তার জয়ের জন্য স্তুতি গেয়েছেন। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, ইয়াহুদী খ্রীস্টানদের কাছ থেকে সম্মান (নোবেল পুরষ্কার) পাওয়ার জন্য স্বজাতির সাথে একটু গাদ্দারি করতেই হয় বৈকি, যার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে পাকিস্থানের অভিনেত্রী মালালা!
আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ‘ভাগ্যবিধাতা’ মনে করা ডাহা শিরক, যার কারনে একজন মানুষের ঈমান নষ্ট হয়ে সে মুশরেক হয়ে যাবে। একারণে ভারতীয় সমস্ত আলেম-ওলামারাই ভারতের মুসলমানদের জাতীয় সংগীত গাওয়া হারাম ও শিরক বলে ফতোয়া দিয়েছেন, এবং মাদ্রাসাগুলোতে এবং ইসলামিক স্কুলগুলোতে এই গান গাওয়া হয়না।
উল্লেখ্য, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক ১৮৮২ সালে রচিত আনন্দমঠ উপন্যাসের একটি গান, যা নাকি আধুনিককালে একজন পথভ্রষ্ট মুসলমান (এ.আর. রহমান) সুর দিয়ে এর জনপ্রিয়তাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন,
“বন্দে মাতরম্”
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক এই গানের বঙ্গানুবাদঃ “বন্দনা করি মায়”!
শ্রী অরবিন্দ কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদঃ “Mother, I bow to thee”!
যারা বন্দনা অর্থ বুঝেন নাঃ আরবীতে আমরা যাকে “রুকু” (আল্লাহর সামনে নত হওয়া) বলি ইংরেজীতে তাকে bow বলা হয়।
সর্বশেষ, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত...
“চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস...”

প্রশ্নঃ ওহাবী কারা?


উত্তরঃ যেই সমস্ত সুন্নী ভাই ও বোনেরা
১. ‘তাওহীদ’ বা আল্লাহর একত্ববাদকে মনে-প্রাণে ভালোবাসেন,
২. জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর ‘সুন্নাহ’ বা আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করেন,
৩. পীরপূজা, কবর-মাযার পূজা, অন্ধ দলীয় গোড়ামি থেকে দূরে থাকেন এবং
৪. ধর্মের নামে যাবতীয় শিরক-বিদাত ও কুসংস্কারকে অন্তর থেকে ঘৃণা করেন
সেই সমস্ত প্রকৃত মুসলমানদেরকে বিদাতপন্থী সূফীরা ‘ওহাবি’ বলে গালি দেয়। অজ্ঞ লোকেরা না জেনে শিরক বেদাতকে ধর্ম বলে মনে করে এবং শিরক বিদাতের বিরোধীতাকারী সম্মানিত আলেমদেরকে ইসলামের দুশমন বলে মনে করে, তাদের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করে বেড়ায়, আল্লাহু মুস্তাআ’ন! মূলত পীরের মুরিদ আর মাযারভক্ত সূফীরা একজন সৌদি ‘মুজাদ্দিদ’ আলেম, ‘শায়খুল ইসলাম’ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব রহঃ এর নাম অনুসারে এই গালি দিয়ে থাকে।
মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব রহঃ কে ছিলেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআ’লা প্রতি একশ বছরের মাথায় এই উম্মতের জন্য এমন একজনকে পাঠাবেন যিনি দ্বীন-ইসলামকে সংস্কার করবেন।”
সুনানে আবু দাউদঃ হাদিস নং- ৪২৯১, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
সৌদি আরবের ‘শায়খুল ইসলাম’ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব রহঃ (জন্ম ১৭০৩, মৃত্যু ১৭৯২ ইং) ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও তাঁর সময়ের একজন ‘মুজাদ্দিদ’ বা দ্বীনের সংস্কারক। তাঁর সময়ে বর্তমান আরব বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ওলি আওলিয়াদের ভালোবাসা, তাদের ওসীলা ধরে জান্নাত যাওয়া ও তাদের মাযারকে কেন্দ্র করে অনেক শিরক ও বেদাত প্রচলিত ছিলো। এমনকি আমাদের দেশের অজ্ঞ লোকেরা যেমন আজমীর, বায়েজিদ বোস্তামি, শাহ জালাল ইত্যাদি মাযারে যায় সন্তান ও টাকা-পয়সা পাওয়ার জন্য, ঠিক তেমনি আরবের নামধারী মুসলমান সমাজের অনেক নারীরা হজ্জ-ওমরা করে মক্কার অদূরে একটা পুরুষ খেজুর গাছ জডিয়ে ধরে তার কাছে সন্তান কামনা করতো, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।

Tuesday 13 January 2015

বিয়ের প্রস্তাবকারী পাত্রের পক্ষ থেকে পাত্রীর হিযাব পরিধানে অসম্মতি



প্রশ্ন: আমি তিউনিসিয়ার অধিবাসী একজন ধার্মিক মেয়ে। আমার সমস্যা হচ্ছে- আমাকে বিয়ের প্রস্তাবকারী ছেলে আমার হিযাব পরাকে মেনে নিচ্ছে না, এমনকি সেটা যদি আধুনিক যুগের হিযাব হয় সেটাও না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আমি কি তার সাথে সম্পর্ক করব; নাকি প্রত্যাখ্যান করব? উল্লেখ্য, অধিকাংশ তিউনিসিয়ান ছেলে এ ধরনের মানসিকতার হয়ে থাকে।
উত্তর:
 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
 সম্মানিত বোন, আপনার জন্য আমাদের উপদেশ হচ্ছে- পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দেয়া উপদেশ। যে উপদেশের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বস্তুতঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে – ‘তোমরা সবাই আল্লাহকে ভয় কর।’[সূরা নিসা, আয়াত: ১৩১]
 আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে দুনিয়ায় কি ভাল কিছু পাওয়া যাবে! আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ ছাড়া কি সুখের কোন পথ আছে! কোন মুমিন কি আখেরাতকে ধ্বংস করে দুনিয়া পেতে চাইবে! আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারেরা, আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি চিন্তা করে দেখুক আগামী দিনের জন্য সে কী (পূণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই পাপাচারী।” [সূরা হাশর, আয়াত: ১৮-২০]

বিভিন্ন বার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করার শরয়ি বিধান



প্রশ্ন: বিভিন্ন বার্ষিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার শরয়ি বিধান কী? যেমন- বিশ্ব পরিবার দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ বছর। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন- মেরাজ দিবস পালন, মিলাদুন্নবী বা নবীর জন্মবার্ষিকী কিংবা হিজরত বার্ষিকী পালন করার হুকুম কি। অর্থাৎ এ উপলক্ষে মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করার উদ্দেশ্যে কিছু প্রচারপত্র প্রস্তুত করা, আলোচনাসভা বা ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা ইত্যাদি।
উত্তর:
 আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
 আমার কাছে যা অগ্রগণ্য তা হচ্ছে- যে দিবসগুলো বা সমাবেশগুলো প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে সেগুলো বিদআতী ঈদ বা নবপ্রচলিত উৎসব। এগুলো ইসলামি শরিয়তে নব-সংযোজন; যেগুলোর পক্ষে আল্লাহ তাআলা কোন দলিল-প্রমাণ নাযিল করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা নব-প্রচলিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ প্রতিটি অভিনব বিষয়— বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হচ্ছে— ভ্রান্তি।” [মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি]
 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন: “প্রতিটি কওমের ঈদ (উৎসব) আছে। এটি আমাদের ঈদ।”[সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম]

কাফেরদের ধর্মীয় উৎসবের হাদিয়া গ্রহণ করা



প্রশ্ন: আমার প্রতিবেশিনী একজন আমেরিকান খ্রিস্টান। খ্রিস্টমাস উপলক্ষে তিনি আমাকে কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছেন। আমি তাকে এ হাদিয়াগুলো ফেরত দিতে পারছি না; যাতে তিনি রেগে না যান!! আমি কি এ হাদিয়াগুলো গ্রহণ করতে পারি যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের পাঠানো হাদিয়া গ্রহণ করেছেন।
উত্তর:
 আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
 এক:
মূলতঃ কাফেরের দেয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয; এতে করে তার সাথে সখ্যতা তৈরি হয়, তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা যায়। ঠিক যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুকাওকাস ও অন্যান্য কিছু কিছু কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ করেছিলেন।
 ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: “মুশরিকদের হাদিয়া গ্রহণ শীর্ষক পরিচ্ছেদ”। বুখারি (রহঃ) বলেন: আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: ইব্রাহিম (আঃ) সারাকে নিয়ে সফরে বের হলেন। তিনি এমন একটি গ্রামে প্রবেশ করলেন যেখানে ছিল একজন বাদশাহ বা প্রতাপশালী। তিনি বললেন: সারাকে উপঢৌকন হিসেবে ‘হাজেরা’ কে দাও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে (রোস্টকরা) বিষযুক্ত বকরী হাদিয়া পাঠানো হয়েছিল। আবু হুমাইদ বলেন: আইলার বাদশাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একটি সাদা রঙের খচ্চর ও একটি চাদর উপহার পাঠিয়েছিল এবং তাঁর নিকট তাদের কবিতার ছন্দ ব্যবহার করে চিঠি লিখেছিল। এক ইহুদি নারী কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিষমাখা ছাগল হাদিয়া দেওয়ার ঘটনাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
 দুই:

যে শাসক আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করে না তাকে কি নির্বাচিত করা যাবে



প্রশ্ন: 
মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য এমন কোন শাসককে নির্বাচিত করা কি জায়েয হবে যে আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করে না? উল্লেখ্য, তাকে যদি নির্বাচিত করা না হয় তাহলে সে নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখবে; এমন কি গ্রেফতারও করতে পারে।
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
ঈমানদারেরা সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম কোন আইন নেই। আল্লাহর আইন বিরোধী সকল বিধান জাহেলী বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন: তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?[সূরা মায়েদা, ০৫:৫০] আল্লাহর উপর ঈমান ও রাসূলদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন গ্রহণ করার প্রবণতাকে আল্লাহ তাআলা ‘বিস্ময়কর’ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে[সূরা নিসা ০৪:৬০]
শানকিতি (রহঃ) বলেন: “আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইনে শাসন করে আল্লাহ তাদের ঈমানের দাবীর প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ তাগুতের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়ার পরেও ঈমানের দাবী- মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এমন মিথ্যা সত্যিই বিস্ময়কর।” সমাপ্ত

Monday 12 January 2015

নিঃস্ব ও নির্যাতিত ভাইদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশের পদ্ধতি কী



প্রশ্ন: বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা যে নির্যাতন নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য কী?
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
 আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই”। আল্লাহ তাদের ব্যাপারে আরো বলেছেন: “তারা কাফেরদের ব্যাপারে বজ্রকঠোর, পরস্পরের মাঝে অতিশয় দয়ালু”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এক মুমিন আরেক মুমিনের নিকট মাথা যেমন দেহের নিকট। ঈমানদারের দুঃখ-কষ্টে মুমিন দুঃখ-কষ্ট অনুভব করে যেভাবে মাথায় ব্যথার কারণে গোটা দেহ ব্যথাতুর হয়ে পড়ে।”[মুসনাদে আহমাদ] এক মুমিনের প্রতি অপর মুমিনের সমবেদনার প্রকারগুলো ইবনুল কাইয়্যেম খুব সুন্দরভাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন: মুমিনের প্রতি সমবেদনা জানানো কয়েকভাবে হতে পারে। সম্পদ দিয়ে সমবেদনা। প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে সমবেদনা। শারীরিক ও কায়িক শ্রম দিয়ে সমবেদনা। উপদেশ ও সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে সমবেদনা। তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যমে সমবেদনা। তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার মাধ্যমে সমবেদনা। ব্যক্তির ঈমানের সবলতা ও দুর্বলতার ভিত্তিতে এ সমবেদনার তারতম্য ঘটে। ব্যক্তির ঈমান সবল হলে সমবেদনা তীব্র হয়। ঈমান দুর্বল হলে সমবেদনাও দুর্বল হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের প্রতি উল্লেখিত সকল প্রকার সমবেদনার মাধ্যমে সবচেয়ে উত্তম সমব্যথী ছিলেন।[আল-ফাওয়ায়েদ, ১/১৭১]
 খলিল ইবনে আহমাদ একবার তাঁর এক বন্ধুর সাথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে তার বন্ধুর জুতাটি ছিড়ে গেল। তখন তাঁর বন্ধু ছেঁড়া জুতাটি হাতে নিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে লাগলেন। তা দেখে খলিলও তাঁর জুতাজোড়া খুলে হাতে নিলেন এবং খালি পায়ে হেঁটে চললেন। তখন তাঁর বন্ধু তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি জুতা খুললে কেন? খলিল বললেন: তুমি খালি পায়ে হাঁটছ তাই তোমার প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

নারীর জন্য অপর নারী বা মোহরেম পুরুষের সামনে যা কিছু খোলা রাখা জায়েয



প্রশ্ন: বর্তমান যামানায় অনেক নারী পুরুষ মানুষ না থাকলে মহিলাদের সামনে এত সংকীর্ণ পোশাক পরে থাকেন যে তাদের পিঠ ও পেটের বড় একটা অংশ খোলা থাকে। আবার অনেকে ঘরে সন্তানদের সামনে একই ধরনের শর্ট পোশাক পরে থাকেন - এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কি?
উত্তর:
 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
 ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন:
 সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। আমাদের নবী মুহাম্মদের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
 ইসলামের প্রথম যুগের নারীগণ আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের বরকতে পুতঃপবিত্রতা, লজ্জাশীলতা ও শালীনতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিলেন। সে সময়ে নারীগণ পরিপূর্ণ শরীর আচ্ছাদনকারী পোশাক পরতেন। নারীদের সামনে অথবা মোহরেম পুরুষের মধ্যে অবস্থানকালে তারা খোলামেলা চলতেন বা অনাবৃত থাকতেন বলে জানা যায় না। শতাব্দীর পর শতাব্দী, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, এমনকি নিকট অতীত পর্যন্ত মুসলিম নারীসমাজ এভাবেই চলে এসেছেন। এরপর নানা কারণে অনেক নারীর মধ্যে পোশাক ও চরিত্রের অবক্ষয় শুরু হয়েছে। সে বিষয়ে বিশদ আলোচনার স্থান এটি নয়।
 নারীর প্রতি নারীর দৃষ্টি ও মেয়েদের উপর আবশ্যকীয় পোশাকের ব্যাপারে প্রচুর ফতোয়া আসার পরিপ্রেক্ষিতে ফতোয়া কমিটি মুসলিম নারীকুলকে এই মর্মে অবহিত করছে যে, লজ্জার ভূষণে নিজেকে অলংকৃত করা নারীর উপর ফরজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লজ্জাকে ঈমানের শাখা আখ্যায়িত করেছেন। শরিয়তের বিধান ও সামাজিক প্রথাগত লজ্জা হচ্ছে- নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে, শালীনতা বজায় রেখে চলবে এবং এমন চরিত্র লালন করবে যা তাকে ফেতনা ও সন্দেহ-সংশয়ের উৎস থেকে দূরে রাখবে। কুরআনের সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ করে- কোন নারী অপর নারীর সামনে তার দেহের ততটুকু অংশ খোলা রাখতে পারবে যতটুকু মোহরেমদের সামনে খোলা রাখা জায়েয। অর্থাৎ সাধারণতঃ বাড়িঘরে থাকাকালে ও গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে যতটুকু উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ততটুকু। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩১]

যাদুটোনা থেকে নিরাময়ের উপায়



প্রশ্ন: যিনি বিদ্বেষন, বশীকরণ বা অন্য কোন যাদুটোনা দ্বারা আক্রান্ত তার চিকিৎসার উপায় কি? মুমিন ব্যক্তি যাদুটোনা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন অথবা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে যাদুটোনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কুরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কিত কোন দুআ-দরুদ বা যিকির-আযকার আছে কি?
উত্তর:
 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
 যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
 এক: যাদুকর কিভাবে যাদু করেছে সেটা আগে জানতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল নির্দিষ্ট কোন স্থানে অথবা চিরুনির মধ্যে অথবা অন্য কোন স্থানে রেখে দিয়েছে। যদি স্থানটি জানা যায় তাহলে সে জিনিসটি পুড়িয়ে ফেলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা বাতিল হয়ে যায়।
 দুই: যদি যাদুকরকে শনাক্ত করা যায় তাহলে তাকে বাধ্য করতে হবে যেন সে যে যাদু করেছে সেটা নষ্ট করে ফেলে। তাকে বলা হবে: তুমি যে তদবির করেছ সেটা নষ্ট কর নতুবা তোমার গর্দান যাবে। সে যাদুর তদবিরটি ধ্বংস করে ফেলার পর মুসলিম শাসক তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিবেন। কারণ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, যাদুকরকে তওবার আহ্বান জানানো ছাড়া হত্যা করা হবে। যেমনটি করেছেন- উমর (রাঃ)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তরবারির আঘাতে তার গর্দান ফেলে দেয়া।” যখন হাফসা (রাঃ) জানতে পারলেন যে, তাঁর এক বাঁদি যাদু করে তখন তাকে হত্যা করা হয়।
 তিন: যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে: এর পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে। বিশেষতঃ যে দুআটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:

যে ব্যক্তি কোন খতীবকে বিভ্রান্তির দিকে অথবা বিদআতের দিকে আহ্বান করতে শুনে সে কী করবে


প্রশ্ন: আমাদের স্থানীয় ইমাম মানুষকে কতিপয় বিদআতের দিকে আহ্বান করেন। কিছু দ্বীনদার ভাই দলিল-প্রমাণসহ এ ব্যাপারে তাঁকে সাবধান করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি এ বিদআতগুলোর পক্ষে অটল অবস্থানে রয়েছেন। যদি জানা যায় যে, আজকের খোতবায় খতীবসাহেব বিদআতের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করবেন যেমন- মিলাদ, শবে বরাত, ইত্যাদি সেক্ষেত্রে আপনারা কি এ পরামর্শ দিবেন যে, সে ব্যক্তি জুমার খোতবা শুনতে যাবে না। কেউ যদি মসজিদে গিয়ে শুনতে পায় যে, খতীবসাহেব বিদআতের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করছেন তখন সে ব্যক্তির করণীয় কী? সে কী খোতবার মাঝখানে উঠে বাড়ীতে এসে যোহরের নামায আদায় করবে? অন্যথায় সে কী করবে? এ ধরণের খোতবা শুনায় হাজির থাকলে ব্যক্তি কি গুনাহগার হবে? কারণ কিছু ভাই নসিহত করার পরও খতীবসাহেব তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির উপর অটল অবস্থানে রয়েছেন। কেউ যদি খোতবার মধ্যে দুর্বল ও বানোয়াট হাদিস উল্লেখ করে তার ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম প্রযোজ্য? আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।
উত্তর:

 আলহামদুলিল্লাহ।

 এক:

যে ব্যক্তির এলাকার মসজিদে কোন বিদআতপন্থী ইমাম ইমামতি করেন: তার বিদআত হয়তো কুফরি বিদআত হবে অথবা সাধারণ কোন বিদআত হবে। যদি কুফরি বিদআত হয় তাহলে ঐ ইমামের পিছনে সাধারণ নামায কিংবা জুমার নামায কোনটা পড়া জায়েয হবে না। আর যদি ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় এমন কোন বিদআত না হয় তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী- তার পিছনে জুমা পড়া ও জামাতে নামায পড়া জায়েয। এ হুকুমটি এত বেশি প্রচার পেয়েছে যে, এটা এখন সুন্নাহ অনুসারীদের নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, যদি কেউ এমন ইমামের পিছনে নামায আদায় করে ফেলে তাহলে তাকে সে নামায শোধরাতে হবে না। এ বিষয়ক নীতি হচ্ছে- “যে ব্যক্তির নিজের নামায শুদ্ধ; সে ব্যক্তির ইমামতিও শুদ্ধ”।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...