Tuesday 5 November 2019

আল্লাহর জন্য দেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করার বিধান

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা ইমানের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। ব্যক্তির ‘আক্বীদাহর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণীত হয় এই মৌলিক বিষয়ের মাধ্যমে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কোনো অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান, ধরন বর্ণনা ও নিস্ক্রীয়করণ ছাড়াই আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কিছু মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে।
যেমন একটি মূলনীতি হলো—আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর, এতে বিবেকের কোনো স্থান নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যেসব নাম ও গুণ বর্ণনা করেছে, আমরা কেবল সেসবই সাব্যস্ত করব, কোনোরূপ কমবেশি করব না। যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে কমবেশি করে, সে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে বক্রপথ অবলম্বনকারী বিদ‘আতী। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্য, এবং এটাই তাদের মূলনীতি।
·
দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, সালাফিয়্যাহর দিকে নিজেকে সম্পৃক্তকারী কিছু দা‘ঈ এই মূলনীতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করেছে। আমরা মনে করি, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেরাই কুরআন-হাদীস পড়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার নিন্দার্হ প্রবণতা থেকেই এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহয় আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ আছে নাকি নেই—তা বর্ণিত হয়নি। তাই আমাদেরকে এ বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা বলব না, এসব বিষয় আল্লাহর আছে। আবার এও বলব না যে, এসব বিষয় আল্লাহর নেই। আল্লাহর ওপর খবরদারি করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা হলো কঠিন বিদ‘আত এবং ভয়াবহ কাবীরাহ গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বলো না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ, আর অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকের বিষয়ে অবশ্যই তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরাহ ইসরা: ৩৬]
·
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ—যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরিক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’।” [সূরাহ আ‘রাফ: ৩৩]
সম্মানিত পাঠক, হাত (ইয়াদ), চোখ (‘আইন), পা (ক্বাদাম) আল্লাহর সিফাত তথা গুণ। কিন্তু এসব গুণ থেকে আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা যায় না। এরকম কাজ সালাফদের কেউ করেননি। তাই যারা এরকম করছেন, তারা বড়ো ধরনের ভুল করছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অবলোকন করে আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফী হওয়ার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মহান ইমামদের বক্তব্য পেশ করেছি। তারপর আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ প্রভৃতি শব্দাবলি ব্যবহার করার ব্যাপারে আইম্মায়ে সুন্নাহর বক্তব্য পেশ করেছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...