Friday 16 August 2019

আলিম কে?


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। যিনি বলেছেন, “তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো।” [সূরাহ নাহল: ৪৩]
দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে যে ‘ইলম দান করেছেন তা তোমাদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো তুলে নেবেন না। বরং ‘আলিম-‘উলামা তুলে নিয়ে ‘ইলম তুলে নেবেন। এমতাবস্থায় যখন কেবল জাহিল নেতাবর্গ অবশিষ্ট থাকবে, তখন লোকেরা তাদেরকেই ফাতওয়া জিজ্ঞেস করবে। আর তারা নিজেদের রায় দ্বারা ফাতওয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরা ভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও ভ্রষ্ট করবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/১০১]
·
প্রারম্ভিকা:
‘আলিম’ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি অবস্থান, যে অবস্থান আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী স্রেফ তাঁর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদেরকে দান করে থাকেন। ‘আলিমগণ সম্মানিত নাবীদের ওয়ারিশ। আল্লাহ’র কাছে তাঁদের বিশাল মর্যাদা রয়েছে। এই অবস্থানের অধিকারী নির্বাচিত বান্দারা ইসলাম প্রচার ও প্রসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দেন। তাঁরা দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং জনসাধারণকে শার‘ঈ পদ্ধতিতে পথনির্দেশ করেন।
কেউ চাইলেই ‘আলিম হতে পারে না, এমনকি সারাজীবন ‘ইলম অর্জনে ব্যাপৃত থাকার পরও কেউ ‘আলিম হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে ‘আলিম হিসেবে কবুল করেন।
সম্প্রতি উপমহাদেশীয় পরিমণ্ডলে একটি বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, আম জনসাধারণ—এমনকি কতিপয় দা‘ঈও—‘আলিম লকবটি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে। কেউ কওমি মাদরাসা থেকে দাওরা পাস করেই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে, কেউ আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে, কেউ ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে, আবার কেউ কেউ দুচারটা হাদীস ও ফিক্বহের কিতাব পড়েই ‘আলিম বিবেচিত হচ্ছে। আল্লাহুল মুস্তা‘আন।
অথচ বিষয়টি এরকম জলবত তরলং নয়। ‘আলিম হওয়ার জন্য বিস্তর ‘ইলম, ফিক্বহ ও হিকমাহ’র প্রয়োজন আছে, প্রয়োজন আছে প্রকৃত ‘আলিমদের পক্ষ থেকে ‘আলিম হওয়ার শাহাদাহ’র।
বর্তমান সময়ে উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষ ‘আলিমের পরিচয় সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে তারা অনির্ভরযোগ্য দা‘ঈ এবং সেলিব্রেটি বক্তাদেরকে ‘আলিম গণ্য করে তাদের কাছে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করে, ফলে তারা ভ্রষ্টতার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, “দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে আধা বক্তা, আধা ফাক্বীহ (‘আলিম), আধা ডাক্তার ও আধা ভাষাবিদ। আধা বক্তা ক্ষতি করে দ্বীনের, আধা ফাক্বীহ ক্ষতি করে দেশের, আধা ডাক্তার ক্ষতি করে শরীরের, আর আধা ভাষাবিদ ক্ষতি করে ভাষার।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১১৮-১১৯; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (বাদশাহ ফাহাদের রাজকীয় ফরমানে মুদ্রিত)]
এহেন বিপজ্জনক পরিস্থিতির নিরসনকল্পেই আমাদের এই নিবন্ধের অবতারণা। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা যথাক্রমে ‘আলিমের পরিচয়, ‘আলিম হওয়ার শর্ত এবং ‘আলিম চেনার উপায় প্রসঙ্গে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করেছি। আল্লাহ আমাদের এই সামান্য প্রয়াসকে সালাফী দা‘ওয়াহর অংশ হিসেবে কবুল করুন এবং এটাকে আমাদের জান্নাতে দাখিল হওয়ার মাধ্যমে পরিণত করুন। (আমীন)

‘কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড’ সিরিজের সব পর্বের লিংক


·
‘কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড’ একটি বৃহৎ কলেবরের নিবন্ধ, যার মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড বা জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে সামসময়িক বিশ্বের গ্রেট স্কলারদের ফাতাওয়া সংকলন করা হয়েছে। আমাদের জানামতে, আলোচ্য নিবন্ধটি বাংলা ভাষায় উক্ত বিষয়ের ওপর সর্বপ্রথম লিখন। ইতঃপূর্বে কোনো বাঙালি বিশদভাবে ব্রাদারহুড বা জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে সালাফী ‘আলিমদের ফাতাওয়া সংকলন করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
আর আমাদের জানামতে ব্রাদারহুডের ব্যাপারে এত বড়ো ফাতাওয়া সংকলন বাংলা তো দূরের কথা, আরবি এবং ইংরেজিতেও নেই। আমাদের নিবন্ধে পুনরুল্লেখ ছাড়া ৩০ জন সালাফী ‘আলিম ও সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সর্বমোট ১১৭টি ফাতাওয়া এবং পুনরুল্লেখ-সহ ১১৯টি ফাতাওয়া সংকলন ও অনুবাদ করা হয়েছে। ফাতওয়াগুলো মোট ৩১টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। একেকজন ‘আলিমের জন্য স্বতন্ত্র একেকটি অধ্যায় রচনা করা হয়েছে। আর প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতে অধ্যায়-সংশ্লিষ্ট ‘আলিমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সন্নিবেশিত হয়েছে।
ইতোমধ্যে আমরা ৩১টি অধ্যায় মোট ২০টি পর্বে পোস্ট করেছি। মুসলিম পাঠকবর্গ যেন সহজেই সবগুলো পর্ব একত্রে পড়তে পারেন এবং তা সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, সেজন্য আমরা সবগুলো পর্বের লিংক জমা করেছি। পর্ব ও অধ্যায়ের নাম-সহ লিংকগুলো নিম্নে উল্লিখিত হলো। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
১ম পর্ব | ১ম অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
·
২য় পর্ব | ২য় অধ্যায়: ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহিল কাফী আল-ক্বুরাইশী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ৩য় অধ্যায়: ‘আল্লামাহ ‘আলীমুদ্দীন নদিয়াভী (রাহিমাহুল্লাহ)
·
৩য় পর্ব | ৪র্থ অধ্যায়: ইমাম আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (রাহিমাহুল্লাহ)
·
৪র্থ পর্ব | ৫ম অধ্যায়: ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সা‘ঈদ রাসলান (হাফিযাহুল্লাহ)
·
৫ম পর্ব | ৬ষ্ঠ অধ্যায়: ‘আল্লামাহ সালিহ বিন ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ), ৭ম অধ্যায়: ‘আল্লামাহ ‘আলী আল-হুযাইফী (হাফিযাহুল্লাহ), ৮ম অধ্যায়: ‘আল্লামাহ ‘আব্দুস সালাম বিন বারজিস (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ৯ম অধ্যায়: গ্র্যান্ড মুফতী ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)
·
৬ষ্ঠ পর্ব | ১০ম অধ্যায়: ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)
·
৭ম পর্ব | ১১শ অধ্যায়: ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), ১২শ অধ্যায়: ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব আল-বান্না (রাহিমাহুল্লাহ), ১৩শ অধ্যায়: ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল ‘আযীয আর-রাজিহী (হাফিযাহুল্লাহ)

রোজাদার ব্যক্তির ইনহেলার ব্যবহার করার বিধান


বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: في بعض الصيدليات بخاخ يستعمله بعض مرضى الربو، فهل يجوز للصائم استعماله في نهار رمضان؟
الإجابة: استعمال هذا البخاخ جائز للصائم، سواء كان صيامه في رمضان أم في غير رمضان، وذلك لأن هذا البخاخ لا يصل إلى المعدة، وإنما يصل إلى القصبات الهوائية، فتنفتح لما فيه من خاصية، ويتنفس الإنسان تنفساً عادياً بعد ذلك، فليس هو بمعنى الأكل ولا الشرب، ولا أكلاً ولا شرباً يصل إلى المعدة، ومعلوم أن الأصل صحة الصوم حتى يوجد دليل يدل على الفساد من كتاب، أو سنة، أو إجماع، أو قياس صحيح.
প্রশ্ন: “কিছু ওষুধের ফার্মেসিতে ইনহেলার পাওয়া যায়, যা অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগীরা ব্যবহার করে থাকে। রোজাদারের জন্য রমজানের দিনের বেলায় তা ব্যবহার করা কি জায়েজ?”
উত্তর: “রোজাদারের জন্য এই ইনহেলার ব্যবহার করা জায়েজ, চাই তার রোজা রমজান মাসে হোক বা অন্য মাসে হোক। কেননা ইনহেলার পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে না। বরং এটা স্রেফ শ্বাসনালী পর্যন্ত পৌঁছে। ফলে শ্বাসনালীর অভ্যন্তরে যে সমস্যা থাকে, তা দূরীভূত হয়ে শ্বাসনালী খুলে যায় এবং এরপর রোগী স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে। এটা পানাহারের অর্থবোধক বিষয় নয়। এটা পানাহারও নয়, যা পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে। আর এটি সুবিদিত যে, মৌলিক বিষয় হলো—রোজাদারের রোজা বিশুদ্ধ থাকবে, যতক্ষণ না কুরআন, বা সুন্নাহ, বা ইজমা‘, বা বিশুদ্ধ কিয়াস থেকে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।”
·
তথ্যসূত্র:
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ২১০-২১১; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

রোজাদার ব্যক্তির ইনজেকশন ব্যবহার করার বিধান


সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل يجوز استعمال الإبر المقوية للصائم في رمضان؟
الجواب: لا حرج في ذلك على الصحيح لا حرج في ذلك، الإبر المقوية والمسكنة للآلام كل هذا لا بأس به، الممنوع الإبر المغذية، الحقن التي تغذي هذه تفطر الصائم، لكن إذا اضطر إليها واحتاج إليها يعطى إياها ويفطر حكمه حكم المرضى، أما إبر للتقوية أو تسكين الألم أو أخذ عينة من الدم أو ما أشبه ذلك لا تفطر على الصحيح. نعم.
প্রশ্ন: “রমজান মাসে রোজাদারের জন্য শক্তিবর্ধক ইনজেকশন ব্যবহার করা কি জায়েজ?”
উত্তর: “বিশুদ্ধ মতানুসারে এতে কোনো সমস্যা নেই। এতে কোনো সমস্যা নেই। শক্তিবর্ধক ও ব্যথানাশক ইনজেকশন ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। তবে পুষ্টিকারক বা খাদ্য দানকারী ইনজেকশন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কেননা যেসব ইনজেকশন পুষ্টির জোগান দেয়, তা রোজাদারের রোজা ভেঙে ফেলে। কিন্তু কেউ যদি এই ইনজেকশন নিতে বাধ্য হয় এবং এই ইনজেকশন নিয়ে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার জন্য রোগীদের বিধান প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে শক্তিবর্ধনের জন্য, অথবা ব্যথা নাশ করার জন্য, বা কিছু রক্ত নেওয়ার জন্য কিংবা অনুরূপ কোনো কাজের জন্য ইনজেকশন নিলে, বিশুদ্ধ মতানুসারে এতে রোজা নষ্ট হবে না।”
·
তথ্যসূত্র:
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

রোজাদার ব্যক্তির সাপোজিটরি ব্যবহার করার বিধান


বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ما حكم استعمال التحاميل في نهار رمضان، إذا كان الصائم مريضاً؟
الإجابة: لا بأس أن يستعمل الصائم التحاميل التي تجعل في الدبر، إذا كان مريضاً، لأن هذا ليس أكلاً ولا شرباً، ولا بمعنى الأكل والشرب، والشارع إنما حرم علينا الأكل أو الشرب، فما كان قائماً مقام الأكل والشرب، أعطي حكم الأكل والشرب، وما ليس كذلك فإنه لا يدخل في الأكل والشرب لفظاً ولا معنى، فلا يثبت له حكم الأكل والشرب، والله أعلم.
প্রশ্ন: “রমজান মাসের দিবসে অসুস্থ রোজাদার ব্যক্তির জন্য সাপোজিটরি (মলদ্বার বা যোনিপথে প্রবেশযোগ্য গলনশীল ওষুধ-শলাকা) ব্যবহার করার বিধান কী?”
উত্তর: “রোজাদার যদি অসুস্থ হয়, তাহলে তার জন্য পায়ুপথে ব্যবহার্য সাপোজিটরি ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। কেননা এটা পানাহার না, আবার পানাহারের অর্থবোধক বিষয়ও না। শরিয়তপ্রণেতা আমাদের জন্য পানাহার হারাম করেছেন। যেসব দ্রব্য পানাহারের স্থলাভিষিক্ত, সেগুলোর ক্ষেত্রেও পানাহারের বিধানই প্রযোজ্য হবে। আর যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত না, তা শব্দগত বা অর্থগত—কোনোভাবেই পানাহারের আওতাভুক্ত হবে না। ফলে তার জন্য পানাহারের বিধানও সাব্যস্ত হবে না। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।”
·
তথ্যসূত্র:
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

মাসিক নিবারক ট্যাবলেট সেবন করে রমজান মাসে রোজা রাখার বিধান



·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: هل يجوز للمرأة استعمال دواء لمنع الحيض في رمضان أو لا؟
الجواب: يجوز أن تستعمل المرأة أدوية في رمضان لمنع الحيض إذا قرر أهل الخبرة الأمناء من الدكاترة ومن في حكمهم أن ذلك لا يضرها، ولا يؤثر على جهاز حملها، وخير لها أن تكف عن ذلك، وقد جعل الله لها رخصة في الفطر إذا جاءها الحيض في رمضان، وشرع لها قضاء الأيام التي أفطرتها ورضي لها بذلك دينا. وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.

প্রশ্ন: “মহিলার জন্য রমজান মাসে মাসিক নিবারক ট্যাবলেট সেবন করা কি জায়েজ, না কি না-জায়েজ?”

উত্তর: “মহিলার জন্য রমজান মাসে মাসিক নিবারক ট্যাবলেট সেবন করা জায়েজ, যদি অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত ডাক্তারবর্গ এবং তাদের স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিরা এই স্বীকৃতি দেয় যে, এটা কোনো ক্ষতি করবে না এবং গর্ভধারণের প্রক্রিয়ায় কোনো খারাপ প্রভাব ফেলবে না। তবে তার জন্য উত্তম হলো এ কাজ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ তার জন্য রোজা না করার অনুমতি দিয়েছেন, যখন রমজান মাসে তার মাসিক শুরু হয়। আর যে দিনগুলোতে সে রোজা রাখে না, সে দিনগুলোর কাজা আদায় করার বিধান দিয়েছেন এবং এটাকেই তার জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের উপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”

ফাতওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ভাইস চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন মানী‘ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ১২১৬; প্রশ্ন নং: ৫; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ১৫১]

·
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: حكم استعمال المرأة حبوباً مانعةً لنزول دم الحيض في شهر رمضان حتى تتمكن من إتمام صومها؟
الجواب: لا حرج في ذلك أن تأخذ الحبوب لمنع الحيض حتى تصلي مع الناس وتصوم مع الناس بشرط أن يكون ذلك سليماً لا يضرها عن المشاورة للطبيب، وعن موافقة لزوجها حتى لا تضر نفسها، وحتى لا تعصي زوجها، فإذا كان عن تشاور وعن احتياط من جهة السلامة من الضرر فلا بأس، وهكذا في أيام الحج.

প্রশ্ন: “মহিলার জন্য রমজান মাসে মাসিকের রক্ত নিরোধক ট্যাবলেট সেবন করার বিধান কী, যাতে করে সে তার রোজা সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়?”

উত্তর: “তার জন্য মাসিক নিবারক ট্যাবলেট সেবন করায় কোনো সমস্যা নেই, যাতে করে সে মানুষের সাথে সালাত পড়তে পারে এবং মানুষের সাথে রোজা রাখতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো এই ব্যবস্থাটি নিরাপদ হতে হবে, যা তার কোনো ক্ষতি করবে না। আর এই কাজ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এবং স্বামীর অনুমোদন নিয়ে সম্পন্ন করতে হবে। যাতে করে সে নিজের ক্ষতি করে না ফেলে এবং স্বীয় স্বামীর অবাধ্য না হয়। এটি যখন পরামর্শের ভিত্তিতে হবে এবং অনিষ্ট থেকে নিরাপদ হওয়ার মতো সতর্কতার ভিত্তিতে হবে, তখন এতে কোনো সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে হজের ক্ষেত্রেও একই বিধান।” [দ্র.: www.binbaz.org.sa/mat/18696.]

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

হুসী (حُوْثِيْ) কারা?


আল-ফাক্বীহ, আল-মুহাদ্দিস, আল-‘আল্লামাহ, আশ-শাইখ যাইদ বিন হাদী আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি.] বলেছেন—
“এই হুসীরা যারা বর্তমানে উপস্থিত রয়েছে, তারা খাওয়ারিজ ও রাফিদ্বাহ* ছাড়া আর কিছুই না। তারা দুটি ধ্বংসাত্মক ফিরক্বাহ একসাথে এনেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে রাফিদ্বাহ এবং খাওয়ারিজ। একারণে তারা কোনো ন্যায্য ও বৈধ কারণ ছাড়াই মুসলিমদের সর্বাধিক মারাত্মক উপায়ে ক্ষতি করে। এবং তারা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে সৌদি আরবকে পছন্দ করে, (যেটি এমন) একটি জায়গা যেখানে আল্লাহ শাসকবর্গ, ‘উলামা এবং জনগণের জন্য সফলতা দিয়েছেন। তিনি তাদের সফলতা দিয়েছেন সঠিক ‘আক্বীদাহ ও মানহাজের মাধ্যমে, এবং আল্লাহ’র হক ও আল্লাহ’র আইন প্রতিষ্ঠা করতে দেয়ার মাধ্যমে। এসব কিছু তাদের (হুসী) ক্রোধান্বিত করে।
এভাবে তারা তাদের সামরিক অভিযান প্রস্তুত করেছে, কিন্তু আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র তাদের গলাতেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। এবং তিনি তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা তাদের জন্যই ধ্বংসরূপে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারী তার ওপর সফল হবে না, যে কারও ওপর সীমালঙ্ঘন করে না। এটি সুবিদিত যে, সৌদি আরব তার শাসক, ‘উলামা অথবা জনগণের মাধ্যমে কারও ওপর সীমালঙ্ঘন করে না। তারা রাষ্ট্র বা দলসমূহের ওপর সীমালঙ্ঘন করে না, বরং তাদের ওপর সীমালঙ্ঘন করা হয় এবং বিবাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা ধৈর্যধারণ করে। সুতরাং আমি আল্লাহ (‘আযযা ওয়া জাল্লা)’র কাছে প্রার্থনা করছি হক এবং এর অনুসারীদের জন্য সাহায্য। এজন্য যে, তিনি যেন সীমালঙ্ঘনকারীদের অপদস্থ করেন, যারা ইসলামকে ধ্বংস করতে চায় এবং মুসলিমদের ক্ষতি করতে চায়।”
·
তথ্যসূত্র: https://youtu.be/bATX8Th4ClU
·
[*] শিয়াদের একটি উপদল হলো রাফিদ্বাহ। রাফিদ্বী শিয়ারাই হলো ইসনা ‘আশারিয়াহ তথা বারো ইমামিয়াহ নামক উপদল। তাদেরকে ‘জা‘ফারিয়্যাহ’-ও বলা হয়। বর্তমানে তাদেরকে ‘খুমাইনিয়্যাহ’ (খোমেনীর মতাদর্শের লোকজন) বলা হয়। অনুরূপভাবে তাদেরকে ইরানি শিয়াও বলা হয়। রাফিদ্বীরা সকল ‘আলিমের ঐক্যমতে কাফির। শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপদল এরাই। – অনুবাদক।
·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম

মক্কা মুকাররামাহকে টার্গেট করে ইয়েমেনের হুসী সম্প্রদায়ের মিসাইল অ্যাটাকের ব্যাপারে ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য


যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন—
“হুসী সম্প্রদায়, যারা মক্কা ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, তারা এই মীরাসের (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বিষয়) ওপর রয়েছে, তারা (তাদের পূর্বসূরি) ওই স্বেচ্ছাচারী তাগুতদের মীরাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর গৃহকে হেফাজত করেছেন। তারা কেবল নিজেদেরই ক্ষতি করেছে এবং নিজেদের আসল চেহারা প্রকাশ করেছে। তারা নিজেদেরকে ‘মুসলিম’ দাবি করে। কিন্তু আল্লাহ তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন, তাদের এই জঘন্য অপরাধের মাধ্যমে। যে অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রবর্তী সালাফ হলো ইথিওপিয়ার নিকৃষ্ট রাজা আবরাহা। মহান আল্লাহ তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন এবং তাদের মুসলিম হওয়ার দাবিকে বাতিল প্রমাণ করেছেন।
বস্তুত এই গৃহ স্বয়ং আল্লাহ’র হেফাজত ও রক্ষণাবেক্ষণে নিরাপদ রয়েছে। কেননা এটি আল্লাহ’র গৃহ। একারণে এই গৃহকে ‘বাইতুল আতীক্ব’ তথা ‘প্রাচীন গৃহ’ বলা হয়। যেহেতু আল্লাহ এই গৃহকে সীমালঙ্ঘনকারী স্বেচ্ছাচারীদের (আক্রমণ) থেকে সুরক্ষিত করেছেন, যারা এই গৃহের অকল্যাণ করতে চায়। যেমন এ কাজের দৃষ্টান্ত রয়েছে ইতিহাসে, তারা নিজেরাই যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেছে। তারা ইথিওপিয়ার রাজা আবরাহার ইতিহাসকে পুনরায় বাস্তবায়ন করেছে, কাবাগৃহের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার মাধ্যমে। আর তাদের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে, যা ঘটেছিল আবরাহার ক্ষেত্রে। মহান আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন, তাঁর সুপ্রাচীন গৃহকে হেফাজত করেছেন এবং তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।”
·
উৎস: বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপটি শাইখ ফাওয়্যায বিন ‘আলী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে গালিদাতার তাওবাহ কি কবুল করা হবে?


বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل تقبل توبة من سب الله عز وجل أو سب الرسول صلى الله عليه وسلم؟
الإجابة: اختلف في ذلك على قولين:
القول الأول: أنها لا تقبل توبة من سب الله، أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، وهو المشهور عند الحنابلة، بل يقتل كافراً، ولا يصلى عليه، ولا يدعى له بالرحمة، ويدفن في محل بعيد عن قبور المسلمين.
القول الثاني: أنها تقبل توبة من سب الله أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، إذا علمنا صدق توبته إلى الله، وأقر على نفسه بالخطأ، ووصف الله تعالى بما يستحق من صفات التعظيم، وذلك لعموم الأدلة الدالة على قبول التوبة كقوله تعالى: {قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعاً}، ومن الكفار من يسب الله ومع ذلك تقبل توبتهم، وهذا هو الصحيح إلا أن ساب الرسول، عليه الصلاة والسلام تقبل توبته ويجب قتله، بخلاف من سب الله فإنها تقبل توبته ولا يقتل؛ لأن الله أخبرنا بعفوه عن حقه إذا تاب العبد، بأنه يغفر الذنوب جميعاً.
أما ساب الرسول صلى الله عليه وسلم، فإنه يتعلق به أمران:
أحدهما: أمر شرعي، لكونه رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهذا يقبل إذا تاب.
الثاني: أمر شخصي، وهذا لا تقبل التوبة فيه لكونه حق آدمي لم يعلم عفوه عنه، وعلى هذا فيقتل ولكن إذا قتل، غسلناه، وكفناه، وصلينا عليه، ودفناه مع المسلمين.
وهذا اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية وقد ألف كتاباً في ذلك اسمه: «الصارم المسلول في تحتم قتل ساب الرسول»، وذلك لأنه استهان بحق الرسول صلى الله عليه وسلم، وكذا لو قذفه صلى الله عليه وسلم فإنه يقتل ولا يجلد.
فإن قيل: أليس قد ثبت أن من الناس من سب الرسول صلى الله عليه وسلم، في حياته وقبل النبي صلى الله عليه وسلم، توبته؟
أجيب بأن هذا صحيح، لكن هذا في حياته صلى الله عليه وسلم، والحق الذي له قد أسقطه، وأما بعد موته فإنه لا يملك أحد إسقاط حقه صلى الله عليه وسلم، فيجب علينا تنفيذ ما يقتضيه سبه صلى الله عليه وسلم، من قتل سابه، وقبول توبة الساب فيما بينه وبين الله تعالى.
فإن قيل: إذا كان يحتمل أن يعفو عنه لو كان في حياته، أفلا يوجب ذلك أن نتوقف في حكمه؟
أجيب: بأن ذلك لا يوجب التوقف لأن المفسدة حصلت بالسب، وارتفاع أثر هذا السب غير معلوم والأصل بقاؤه.
فإن قيل: أليس الغالب أن الرسول صلى الله عليه وسلم، يعفو عمن سبه؟
أجيب: بلى، وربما كان العفو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم، متضمناً المصلحة وهي التأليف، كما كان صلى الله عليه وسلم يعلم أعيان المنافقين ولم يقتلهم، «لئلا يتحدث الناس أن محمداً يقتل أصحابه»، لكن الآن لو علمنا أحداً بعينه من المنافقين لقتلناه، قال ابن القيم رحمه الله: «إن عدم قتل المنافق المعلوم إنما هو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم فقط».
প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ (عَزَّ وَجَلَّ) কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কি কবুল করা হবে?”
উত্তর: “এ ব্যাপারে ‘আলিমগণ দুটি মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
১ম মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে না। এটি হাম্বালীদের প্রসিদ্ধ অভিমত। বরং গালিদাতাকে কাফির হিসেবে হত্যা করতে হবে। তার জানাযাহ’র নামাজ পড়া হবে না, তার জন্য রহমতের দু‘আ করা হবে না এবং মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরের কোনো স্থানে তাকে কবর দিতে হবে।
২য় মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে, যখন আমরা জানব যে, সে সত্যিকারার্থেই আল্লাহ’র কাছে তাওবাহ করেছে, ভুল করেছে বলে স্বীকার করেছে এবং মহান আল্লাহকে তাঁর প্রকৃত সিফাতে তা‘যীম (সম্মানসূচক বিশেষণ) দ্বারা বিশেষিত করেছে। যেহেতু ব্যাপকার্থবোধক দলিলসমূহ প্রমাণ করছে যে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহ’র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’।” (সূরাহ যুমার: ৫৩)
কাফিরদের কেউ কেউ আল্লাহকে গালি দেয়, তথাপি তাদের তাওবাহ কবুল করা হয়। এটিই বিশুদ্ধ মত। তবে রাসূল ﷺ কে গালিদাতার কথা ভিন্ন। তার তাওবাহ কবুল করা হবে, কিন্তু তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে আল্লাহকে গালিদাতার তাওবাহ কবুল করা হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে না। কেননা আল্লাহ আমাদেরকে অবহিত করেছেন যে, বান্দা তাওবাহ করলে তিনি তাঁর হকের ক্ষেত্রে (বান্দার কৃত গুনাহ) মাফ করে দেন, আর তিনি সকল গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন।

মক্কা মুকাররামাহকে টার্গেট করে ইয়েমেনের হুসী সম্প্রদায়ের মিসাইল অ্যাটাকের ব্যাপারে ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য


বর্তমান যুগে জারাহ ওয়াত তা‘দীলের ঝাণ্ডাবাহী মুজাহিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-মুহাদ্দিসুল ফাক্বীহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] বলেছেন—
“পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ’র প্রতি এবং তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও তাঁর আদর্শ অবলম্বনকারী ব্যক্তিবর্গের ওপর।
অতঃপর: মুসলিমরা অবগত হয়েছে যে, রাফিদ্বী শিয়াদের নিকট কত বড়ো বড়ো ভ্রষ্টতা রয়েছে, যার কোনো হিসাব নেই। সেসব ভ্রষ্টতার অন্যতম হলো—তারা সাহাবীগণ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ও মুসলিমদেরকে কাফির ফাতওয়া দেয়, সম্মানিত নাবী পরিবারের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে থাকে। আল্লাহ তাঁদেরকে (নাবী পরিবার) রাফিদ্বী শিয়া ও তাদের বাড়াবাড়িমূলক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করেছেন।
তাদের বাড়াবাড়ি ও চরমপন্থার অন্তর্ভুক্ত হলো—(নিজেদের) ইমামদের ব্যাপারে তাদের এ কথা বলা যে, তাঁরা গায়েব জানেন এবং বিশ্বজগতের প্রতিটি অণুতে স্বীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন! তাহলে রাফিদ্বী শিয়ারা এই বিশ্বজগতে আল্লাহ’র জন্য কী অবশিষ্ট রাখল? এই ক্ষেত্রে তাদের কতই না কুফরি রয়েছে!
বর্তমান সংকটসংকুল সময়ে রাফিদ্বী শিয়ারা মুসলিমদের দেশে—যেমন ইয়েমেন, সিরিয়া প্রভৃতি—ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করেছে। যেসব যুদ্ধে তারা লাখো মুসলিমের রক্ত হালাল গণ্য করছে, মুসলিম সন্তানদের নষ্ট করছে, তাদেরকে রাফিদ্বী শিয়া হিসেবে কনভার্ট করছে। ফলে তারা রাফিদ্বীদের সাথে যোগ দিয়েছে, তাদের কুফরি ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে এবং তাদের পরিবারের লোকজনের রক্তপাত ঘটানোর ক্ষেত্রে।
তারা এসব জঘন্য কাজ করেই ক্ষান্ত হয়নি। বরং তাদের গুপ্ত হিংসা তাদেরকে মক্কা মুকাররমাহ’র দিকে ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করতে প্ররোচিত করেছে। আর তারা এসব করেছে আল্লাহ’র মর্যাদা লঙ্ঘন করার জন্য, যে মর্যাদার প্রতি তারা বিশ্বাস করে না এবং তার কানাকড়ি মূল্যও দেয় না।
মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, وَمَنْ يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ “আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে সেখানে (মাসজিদে হারামে) পাপকাজ করতে চায়, তাকে আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।” (সূরাহ হাজ্ব: ২৫)
ইতঃপূর্বে এদের পূর্বসূরি ক্বারামিত্বাহ শিয়ারা এই সীমালঙ্ঘন করেছিল। তারা আল্লাহ’র হারাম মাসে ও তাঁর প্রাচীন গৃহে শত শত হাজিকে হত্যা করেছিল, হাজারে আসওয়াদ নিয়ে তাদের সীমালঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডের রাষ্ট্র ‘হাজার’ তথা ‘আল-আহসা’ নামক জায়গায় অবস্থিত—তাদের (কথিত) কা‘বার মধ্যে তা স্থাপন করেছিল।

যে ব্যক্তি বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়তে উৎসাহিত করে, সে ধোঁকাবাজ হিসেবে পরিগণিত


যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
উপস্থাপক: “এই প্রশ্নকারী বলছেন, যে ব্যক্তি বিদ‘আতী ও তাকফীরীদের বইপুস্তককে ডিফেন্ড করে, যুবকদেরকে সেসব বই পড়ার নসিহত করে এবং সেসব বই থেকে সতর্ক করেন—এমন ব্যক্তিবর্গের বিরোধিতা করে, সে ব্যক্তির বিধান কী? জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”
শাইখ: “এই লোক উম্মতকে ধোঁকাদানকারী হিসেবে বিবেচিত। যে ব্যক্তি ভ্রষ্ট ও সংশয়মূলক বইপুস্তক পড়তে উৎসাহিত করে, সে উম্মতকে ধোঁকাদানকারী হিসেবে বিবেচিত। অনুরূপভাবে সে আল্লাহ’র কিতাব এবং রাসূল ﷺ এর সুন্নাহকেও ধোঁকাদানকারী হিসেবে বিবেচিত। যেহেতু রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘নসিহত করাই দ্বীন।’ আমরা (সাহাবীগণ) জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল, কার জন্য নসিহত?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ, তাঁর কিতাব ও তাঁর রাসূলের জন্য এবং মুসলিম শাসকবর্গ ও মুসলিম জনগণের জন্য।’ (সাহীহ মুসলিম, হা/৫৫; ‘ঈমান’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ২৩) অবশ্যই হক বর্ণনা করতে হবে, হক স্পষ্ট করতে হবে এবং হকের দিকে দা‘ওয়াত দিতে হবে। এতে যে সন্তুষ্ট হওয়ার সে সন্তুষ্ট হোক, আর যে অসন্তুষ্ট হওয়ার সে অসন্তুষ্ট হোক। না‘আম।”
·
উৎস: ফাতওয়া’র অডিয়ো ক্লিপটি ইউটিউব থেকে সংগৃহীত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

শবেকদর কোন রাতটি?


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।
অতঃপর: লাইলাতুল ক্বদর বা শবেকদর কোন রাতে রয়েছে, তা নির্ধারণ করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ অনেকগুলো মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ ‘আলিমগণ লাইলাতুল ক্বদর নির্ধারণের ব্যাপারে বিশাল মতানৈক্য করেছেন। আমাদের নিকট এ ব্যাপারে ‘আলিমগণের চল্লিশেরও অধিক মত রয়েছে।” [হাফিয ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ), ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৬২; হা/২০২২ এর ভাষ্য; আল-মাকতাবাতুস সালাফিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন]
এরপর তিনি ৪৬ টি মত উল্লেখ করেছেন এবং পরিশেষে বলেছেন, “এই মতগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য মত হলো এই রাতটি শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে রয়েছে এবং এই রাতটি স্থানান্তরিত হয়, যেমনটি এই অধ্যায়ের হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়। শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি আশাব্যঞ্জক।” [প্রাগুক্ত, খণ্ড ৪; পৃষ্ঠা: ২৬৬]
·
কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশকের জোড় রাতগুলোতেও হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। আমরা পর্যায়ক্রমে দলিলসমূহ উল্লেখ করব। প্রথমেই উল্লেখ করব বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার দলিল। আরেকটি কথা বলে রাখছি। কলেবর ছোটো করার জন্য আরবি টেক্সট উল্লেখ করছি না। আগ্রহী পাঠকবর্গ আরবি টেক্সট পড়তে চাইলে মূল সোর্স থেকে পড়ে নিবেন। বারাকাল্লাহু ফীকুম।
১. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রমজান মাসের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ই‘তিকাফ করেছিলেন, তাঁদের সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ই‘তিকাফ করেন ওই মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন। তারপর বলেন, আমি এই দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, শেষ দশকে ই‘তিকাফ করব। যে আমার সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছিল, সে যেন তার ই‘তিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ’র রাসূল ﷺ বললেন, “শেষ দশকে ওই রাতের তালাশ করো এবং প্রত্যেক বিজোড় রাতে তা তালাশ করো। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ওই রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি।” ওই রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মাসজিদে আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর নামাজের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের নামাজ শেষে ফিরে বসেন, তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমণ্ডল কাদা-পানি মাখা।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭]
২. ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। আল্লাহ’র রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০১৭]

অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায়ের ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ তিনটি প্রসিদ্ধ মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
এক. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে না। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটা মালিকী, শাফি‘ঈ এবং হাম্বালী মাযহাবের মত। [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৯৫; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
দুই. অর্থ বা খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা যথেষ্ট হবে এবং খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করাই উত্তম। এটি হানাফী মাযহাবের মত। [ইমাম কাসানী (রাহিমাহুল্লাহ), বাদাই‘উস সানা’ই‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫৪৩; দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
তিন. প্রয়োজন দেখা দিলে বা কল্যাণকর মনে হলে খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ আছে। একটি অপ্রসিদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী এটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি মত। এই মতকে পছন্দ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৮২-৮৩; বাদশাহ ফাহাদ বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
আমরা এই তিনটি মতের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্বানের মতটিকে অগ্রগণ্য ও সঠিক বলে থাকি। আর আমরা তা বলি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য কারণে। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করছি।
·
এক. রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য দিতে বলেছেন। এ ব্যাপারে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসগুলোতে স্রেফ খাদ্যদ্রব্যের কথা এসেছে, খাদ্যমূল্য বা অর্থের কথা আসেনি। যেমন: ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَرَضَ زَكَاةَ الفِطرِ صَاعًا مِن تَمرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ، أو عَبدٍ ذَكَرٍ أو أُنثَى مِنَ المُسلِمِينَ.
“প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নর-নারী, ছোটো-বড়ো সকল মুসলিমের ওপর আল্লাহ’র রাসূল ﷺ ফিতরা হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক তা এক সা‘ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪]
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
كُنَّا نُخرِجُ فِي عَهدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَومَ الفِطرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ. وَقَالَ أبُو سَعيدٍ: وَكَانَ طَعَامُنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأقِطُ وَالتَّمرُ.
“আমরা আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর যুগে ঈদের দিন এক সা‘ পরিমাণ খাদ্য ফিতরা হিসেবে আদায় করতাম। আবূ সা‘ঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, ‘আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর’।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১০]
রাসূল ﷺ এর যুগে অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোনো বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়নি যে, তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ খাদ্যমূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।
·
দুই. রাসূল ﷺ ফিতরাকে মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফরজ করেছেন, অর্থস্বরূপ ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.
“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রোজা অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে রোজাদারকে পরিশুদ্ধকারীস্বরূপ এবং মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরাকে ফরজ করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; সনদ: হাসান]

ফিতরা কি যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে?


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
ফিতরা পাওয়ার হকদার কারা, বা ফিতরা কয় খাতে বণ্টিত হবে, তা নিয়ে ‘আলিমগণ দুটি প্রসিদ্ধ মতে মতানৈক্য করেছেন। যথা:
এক. ফিতরার খাত যাকাতের মতো। অর্থাৎ ফিতরা যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে। এই মতের স্বপক্ষে দলিল হলো সূরাহ তাওবাহ’র ৬০ নং আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে সাদাক্বাহ তথা যাকাত ৮ খাতে বণ্টিত হবে। আর ফিতরাও যেহেতু এক ধরনের সাদাক্বাহ বা যাকাত, কিংবা ফিতরা যেহেতু যাকাতের মতো, তাই এটাও যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে। এটাই অধিকাংশ বিদ্বানের অভিমত। এটি হানাফী, শাফি‘ঈ ও হাম্বালী মাযহাবের মত। [কিতাবুল ফিক্বহি ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ, পৃষ্ঠা: ৩৩৯; আদ-দারুল ‘আলামিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); সাহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৫; আল-মাকতাবাতুত তাওফীক্বিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন]
দুই. ফিতরা পাওয়ার হকদার শুধু ফকির-মিসকীন। অর্থাৎ, ফিতরা যাকাতের মতো ৮ খাতে বণ্টিত হবে না। কেননা ফিতরা যাকাতের মতো নয়, আর ফিতরাকে ফরজ করা হয়েছে স্রেফ মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ। এটি মালিকী মাযহাবের মত এবং হাম্বালী মাযহাবের একটি অপ্রসিদ্ধ মত। এই মতটিকে পছন্দ করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম-সহ আরও অনেক বরেণ্য ফাক্বীহ (রাহিমাহুমুল্লাহু আজমা‘ঈন)। [কিতাবুল ফিক্বহি ‘আলাল মাযাহিবিল আরবা‘আহ, পৃষ্ঠা: ৩৪০; আদ-দারুল ‘আলামিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৫ হি./২০১৪ খ্রি. (১ম প্রকাশ); সাহীহ ফিক্বহুস সুন্নাহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৫; আল-মাকতাবাতুত তাওফীক্বিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন]
·
আমরা এ দুটি মতের মধ্যে মালিকী মাযহাবের মতটিকে প্রাধান্য দিই এবং এই মতটিকে সঠিক বলি। আর আমরা তা বলি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য কারণে। তার মধ্যে কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করছি।
·
এক. রাসূল ﷺ মিসকীনদের খাদ্যস্বরূপ ফিতরাকে ফরজ করেছেন। তিনি অন্য কোনো খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য ফিতরাকে ফরজ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الفِطرِ طُهرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغوِ وَالرَّفَثِ، وَطُعمَةً لِلمَسَاكِينِ.
“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রোজা অবস্থায় কৃত অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণ থেকে রোজাদারকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এবং মিসকীনদের আহারের সংস্থান করার জন্য ফিতরাকে ফরজ করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; সনদ: হাসান]
এই হাদীসের দাবি হলো ফিতরা কেবল ফকির-মিসকীনকে দিতে হবে, অন্য কোনো খাতে দেওয়া যাবে না।
·

ফিতরা আদায়ের সঠিক সময়


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ফিতরা আদায় করার দুটো সময় রয়েছে। যথা: (১) বৈধ সময়: আর তা হলো ঈদের এক দিন বা দুই দিন আগে, (২) উত্তম সময়: আর তা হলো ঈদের দিন ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ২৬৬; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
সুতরাং বুঝা গেল যে, ফিতরা আদায় করার দুটো সময় আছে। আমরা এ ব্যাপারে সুন্নাহ থেকে দলিল বর্ণনা করছি।
·
১. বৈধ সময়: ঈদের একদিন বা দুইদিন আগে ফিতরা আদায় করা জায়েজ। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে (তাঁর আমল) বর্ণিত হয়েছে,
أنَّهُمْ كَانُوا يُعطُونَ قَبلَ الفِطرِ بِيَومٍ أوْ يَومَينِ.
“তিনি ফিতরার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে ফিতরা দিতেন, ঈদের এক দিন বা দুই দিন পূর্বেই।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫১১]
·
২. উত্তম সময়: ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজের পূর্বে ফিতরা আদায় করা উত্তম। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أمَرَ بِزَكَاةِ الفِطْرِ أنْ تُؤَدَّى قَبلَ خُرُوجِ النَّاسِ إلَى الصَّلَاةِ.
“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ লোকজনের ঈদের নামাজে বের হবার পূর্বেই ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪]
·
এখন আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাহ নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। মাসআলাহটি বৈধ সময়ের আগেই তথা ২৮শে রমজানের আগেই ফিতরা আদায় করার বিধান প্রসঙ্গে। আমাদের উল্লিখিত বৈধ সময়ের আগে ফিতরা আদায় করা যাবে কি না তা নিয়ে ‘আলিমগণ তিনটি প্রসিদ্ধ মতে মতানৈক্য করেছেন। যথা:
১. ফিতরা ঈদুল ফিতরের এক দিন বা দুই দিনের চেয়ে বেশি আগে বের করা জায়েজ নয়। এটি মালিকী ও হাম্বালী মাযহাবের মত।
২. নিঃশর্তভাবে সময় হওয়ার আগেই যে কোনো সময় ফিতরা আদায় করা জায়েজ। এটি হানাফী মাযহাবের মত।
৩. নিঃশর্তভাবে রমজান আসার পর যে কোনো সময় ফিতরা আদায় করা জায়েজ। এটি শাফি‘ঈ মাযহাবের মত। [শাইখ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আত-তারজীহু ফী মাসাইলিস সাওমি ওয়ায যাকাত; পৃষ্ঠা: ১৭১; দারুল হিজরাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৫ হি./১৯৯৫ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
এক্ষেত্রে আমরা প্রথমোক্ত মতটিকে প্রাধান্য দিই এবং তা সঠিক বলি। আর আমরা তা বলি বেশ কয়েকটি গ্রহণযোগ্য কারণে। তার মধ্যে কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করছি।
·
এক. রাসূল ﷺ স্পষ্টভাবে ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৩] তবে সাহাবীগণের কর্ম ও রাসূল ﷺ এর যুগের আমল থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, ঈদুল ফিতরের এক দিন বা দুই দিন পূর্বে ফিতরা দেওয়ার অনুমতি আছে। যেমন নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُؤَدِّيهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِالْيَوْمِ وَالْيَوْمَيْنِ.
“ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ঈদের এক দিন ও দুই দিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করতেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১৬১০; সনদ: সাহীহ]
·
দুই. ফিতরাকে ‘যাকাতুল ফিত্বর’ তথা ‘রোজা ভাঙার যাকাত’ বলা হয়। কেননা রমজানের রোজা ভাঙার কারণে ফিতরা ফরজ হয়। আর রমজানের রোজা ভাঙা বা সমাপ্ত করা হয় মাসের শেষে। সুতরাং মাস শেষ হওয়ার আগে ফিতরা বের করা ফিতরাকে আবশ্যককারী বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। তবে সুস্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতে ঈদের একদিন বা দুইদিন পূর্বে ফিতরা বের করা জায়েজ সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব এর চেয়ে বেশি আগে বের করা যাবে না।
·

ফিতরায় সা‘ এর পরিমাণের ব্যাপারে ‘আলিমগণের বক্তব্য


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
ফিতরার পরিমাণ হিসাব করতে হবে কাইল (কাঠা বা পরিমাপের পাত্র) দিয়ে, ওজন দিয়ে নয়। ফিতরা পরিমাপ করা হবে সা‘ দ্বারা, আর সে সা‘ হলো নাবী ﷺ এর সা‘। যেমন আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন,
كُنَّا نُعطِيهَا فِي زَمَانِ النَّبيِّ ﷺ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ.
“আমরা নাবী ﷺ এর যুগে এক সা‘ খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতাম।” [সাহীহ বুখারী, হা/১৫০৮; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৮৫]
বলাই বাহুল্য, সা‘ যে দ্রব্যের দ্বারা পূর্ণ করা হবে, সে দ্রব্য আলাদা হলে ওজনও আলাদা হবে। অর্থাৎ, এক সা‘ খেজুরের ওজন এক সা‘ গম বা এক সা‘ চাউলের চেয়ে আলাদা হবে। সুতরাং ফিতরাদাতা যখন ওজন দ্বারা ফিতরা আদায় করার ইচ্ছা করবেন, তখন অবশ্যই এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে যে, তিনি যে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করবেন তা পূর্ণ এক সা‘ এর সমপরিমাণ।
·
এখানে দুটো জানার বিষয় রয়েছে। যথা:
এক. ফিতরা ওজন দিয়ে পরিমাপ করার চেয়ে কাইল দ্বারা পরিমাপ করাই অধিক সতর্কতামূলক পদ্ধতি। আর হাত দ্বারা পরিমাপ করলেও তা ‘কাইল দ্বারা পরিমাপ’ বলে গণ্য হবে। ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এক (নাবাউয়ী) সা‘ এর পরিমাণ হচ্ছে মধ্যম আকৃতির দুই হাত দিয়ে ৪ মুঠোর সমপরিমাণ শুকনো খাবার। যেমন: খেজুর, গম প্রভৃতি।... যখন একজন মুসলিম কাইল দিয়ে শুকনো খাবার (ফিতরা হিসেবে) বের করবে—যেমন: শুকনো খেজুর, ভালো গম, চাল, শুকনো কিসমিস, পনির প্রভৃতি—তখন তা ওজন দিয়ে বের করার চেয়ে অধিক সতর্কতামূলক বলে বিবেচিত হবে।” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·

২৭শের রাতকে শবেকদর হিসেবে উদ্‌যাপন করার বিধান


সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া—
ﺱ : ﻣﺎ ﺣﻜﻢ ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻠﻴﻠﺔ ﺳﺒﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ؟
ﺟـ : ﺧﻴﺮ ﺍﻟﻬﺪﻱ ﻫﺪﻱ ﻣﺤﻤﺪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭﺷﺮ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﻣﺤﺪﺛﺎﺗﻬﺎ، ﻓﻬﺪﻱ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻹﻛﺜﺎﺭ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﻣﻦ ﺻﻼﺓ ﻭﻗﺮﺍﺀﺓ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻭﺻﺪﻗﺔ ﻭﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﻭﺟﻮﻩ ﺍﻟﺒﺮ، ﻭﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮﻳﻦ ﺍﻷﻭﻝ ﻳﻨﺎﻡ ﻭﻳﺼﻠﻲ ﻓﺈﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﺧﻴﺮ ﺃﻳﻘﻆ ﺃﻫﻠﻪ ﻭﺷﺪ ﺍﻟﻤﺌﺰﺭ ﻭﺃﺣﻴﺎ ﻟﻴﻠﻪ ﻭﺣﺚ ﻋﻠﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻗﻴﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻓﻘﺎﻝ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : - ﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎً ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎً ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ. ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ. ﻭﺑﻴﻦ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺃﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺍﺧﺮ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺃﻧﻬﺎ ﻓﻲ ﺃﺣﺪ ﺃﻭﺗﺎﺭﻩ ﻓﻘﺎﻝ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : - ﺍﻟﺘﻤﺴﻮﻫﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺍﺧﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻮﺗﺮ ﻣﻨﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ. ﻭﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﺟﺎﺀ ﻓﻴﻪ : ﺍﻟﺘﻤﺴﻮﻫﺎ ﻓﻲ ﺗﺴﻊ ﻳﺒﻘﻴﻦ ﺃﻭ ﺳﺒﻊ ﻳﺒﻘﻴﻦ ﺃﻭ ﺧﻤﺲ ﻳﺒﻘﻴﻦ ﺃﻭ ﺛﻼﺙ ﻳﺒﻘﻴﻦ ﺃﻭ ﺁﺧﺮ ﻟﻴﻠﺔ. ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﺑﻌﺪ ﺇﺧﺮﺍﺟﻪ : ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ، ﻭﻋﻠﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻋﺎﺋﺸﺔ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ - ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺍﻟﺬﻱ ﺗﺪﻋﻮ ﺑﻪ ﺇﻥ ﻭﺍﻓﻘﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ، ﻓﻘﺪ ﺭﻭﻯ ﺃﺣﻤﺪ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ ﻋﻨﻬﺎ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ - ﻗﺎﻟﺖ : ﻳﺎ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻥ ﻭﺍﻓﻘﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻣﺎ ﺃﻗﻮﻝ ﻓﻴﻬﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺗﻘﻮﻟﻴﻦ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﻚ ﻋﻔﻮ ﺗﺤﺐ ﺍﻟﻌﻔﻮ ﻓﺎﻋﻒ ﻋﻨﻲ. ﻭﻗﺪ ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺃﻳﻀﺎ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﻭﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﺑﻌﺪ ﺇﺧﺮﺍﺟﻪ : ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ، ﻫﺬﺍ ﻫﺪﻱ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻠﻴﻠﺔ ﺳﺒﻊ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﻬﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻓﻬﻮ ﻣﺨﺎﻟﻒ ﻟﻬﺪﻱ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓﺈﻧﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻟﻢ ﻳﺤﺘﻔﻞ ﺑﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻓﺎﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻬﺎ ﺑﺪﻋﺔ. ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﻭﺳﻠﻢ.
প্রশ্ন: “২৭শের রাতকে লাইলাতুল ক্বদর তথা শবেকদর হিসেবে উদ্‌যাপন করার বিধান কী?”
উত্তর: “শ্রেষ্ঠ আদর্শ হলো মুহাম্মাদ ﷺ এর আদর্শ। সর্বনিকৃষ্ট কাজ হলো নব আবিষ্কৃত বিষয়সমূহ। রমজানে নাবী ﷺ এর আদর্শ হলো, বেশি বেশি ইবাদত করা। যেমন: নামাজ, কুরআন পাঠ, দান খয়রাত ও অন্যান্য ইবাদত। তিনি প্রথম বিশ রমজানে ঘুমাতেন এবং নামাজ পড়তেন। তারপর যখন শেষ দশক এসে যেত, তখন তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে জাগাতেন, লুঙ্গি কষে বাঁধতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং এই দশকের রাতগুলো জাগরণ করতেন। তিনি রমজান মাসের ক্বিয়াম ও লাইলাতুল ক্বদরের ক্বিয়ামের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত (ক্বিয়াম) করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত (ক্বিয়াম) করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (সাহীহ বুখারী, হা/৩৫, ৩৭; সাহীহ মুসলিম, হা/৭৬০)
নাবী ﷺ বর্ণনা করেছেন, লাইলাতুল ক্বদর রমজানের শেষ দশকে রয়েছে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন, এই রাত শেষ দশকের বিজোড় রাতে রয়েছে। তিনি ﷺ বলেছেন, “তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে এই রাত অনুসন্ধান কর।” (মুসনাদে আহমাদ)
ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ)-ও বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনায় এসেছে, “তোমরা এই রাত অবশিষ্ট নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় ও শেষ রাতে অনুসন্ধান কর।” তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন, হাদীসটি হাসান সাহীহ।
যদি আপনি এই রাতে উপনিত হন, তাহলে নাবী ﷺ ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে যে দু‘আ শিক্ষা দিয়েছিলেন, সে দু‘আর মাধ্যমে আপনি দু‘আ করবেন। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, “হে আল্লাহ’র রাসূল, আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর পাই, তবে আমি তাতে কী দু‘আ বলব?” তিনি বললেন, তুমি বল,
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ، ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ، ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ.
উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুঊ উন, তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমাকে পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।” (তিরমিযী, হা/৩৫১৩; সনদ: হাসান সাহীহ)
এই হলো রমজানে ও লাইলাতুল ক্বদরে রাসূল ﷺ এর আদর্শ। পক্ষান্তরে ২৭শের রাতকে লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে উদ্‌যাপন করা রাসূল ﷺ এর আদর্শ পরিপন্থি কাজ। তিনি ﷺ লাইলাতুল ক্বদর উদ্‌যাপন করেননি। সুতরাং লাইলাতুল ক্বদর উদ্‌যাপন করা বিদ‘আত!
আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
·
তথ্যসূত্র:
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ৩৭; পৃষ্ঠা: ১৬৪-১৬৫; ফাতওয়া নং: ১৬৭; সংগৃহীত: alifta.net
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

ঈদ মুবারক, না কি ভিন্ন সম্ভাষণ?


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের মহান প্রভু আল্লাহ তা‘আলার জন্য। যিনি বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বোলো না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ, আর অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকের বিষয়ে অবশ্যই তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরাহ ইসরা: ৩৬]
দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “বিনা ‘ইলমে যাকে ফাত‌ওয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফাত‌ওয়া দ্বারা সে ভুলকর্ম করে), তবে তার পাপ ওই মুফতীর ওপর বর্তাবে।” [আবূ দাউদ, হা/৩৬৫৯; সনদ: হাসান]
·
প্রাক্‌কথন:
হাল আমলে আমাদের সোনার বাংলাদেশে বেশ কিছু দা‘ঈর আভির্ভাব ঘটেছে, যাঁরা ‘আলিমদের সাথে কানেক্টেড না থেকে নিজেরাই ইজতিহাদ করে ফাত‌ওয়া দিচ্ছেন। শরিয়তের সাধারণ উসূল তথা মূলনীতি (basic principle) সম্পর্কে না জানার কারণে তাঁরা বিভ্রান্তিকর ফাতওয়া প্রদান করছেন। তাঁদেরই কতিপয়কে ইদানীং দেখা যাচ্ছে—তাঁরা বলছেন, ঈদ মুবারাক বলা বিদ‘আত অথবা না-জায়েজ অথবা কমপক্ষে মাকরূহ। এই বিষয়টি নিয়ে সেই দা‘ঈগণ এবং তাদের অন্ধ অনুসারীরা খুতবায়, সেমিনারে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্ভট ও মূর্খতামূলক কথা বলছেন।
জনৈক দা‘ঈকে—যিনি কিনা পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রাবন্ধিক—তাঁর এক লেকচারে বলতে শোনা গেছে, “ঈদ মুবারক শব্দটিই উদ্ভট, এর কোনো অর্থই হয় না! অতএব এই সম্ভাষণ বর্জন করুন।” লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। কী ধরনের অজ্ঞতামূলক কথাবার্তা! তাই মনে করলাম, এ বিষয়ে সালাফী ভাইদের অমূলক ও ভুল ধারণা দূর করা দরকার। সে লক্ষ্যেই ‘আলিমদের বক্তব্য ও ফাতওয়া উল্লেখপূর্বক এই নিবন্ধটির অবতারণা। নিম্নে আমরা এই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ‘আলিমদের বক্তব্য থেকে কিছু জানব, ইনশাআল্লাহ।
শুরুতেই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা বলে দিচ্ছি। প্রথমত, ঈদের মুবারকবাদ কাকে বলে এবং শরিয়তে এর দলিল আছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আলোচনা বুঝার জন্য ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয়ত, ঈদে মুবারকবাদ জানানো যে ইবাদত নয়, তা প্রমাণ করা হয়েছে। চতুর্থত, ‘ঈদ মুবারক’ বলার ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। পঞ্চমত, ঈদের মুবারকবাদ জানানোর সময় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হয়েছে। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
ঈদের মুবারকবাদ কী?

ঈদের দিন কোলাকুলি করার বিধান


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।
ঈদের দিন কোলাকুলি করার বিধান সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। যে কারণে এই সংশয়ে পতিত হই যে, এটা বৈধ না কি অবৈধ। তাই এ ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ ৩ জন ‘আলিমের ফাতওয়া অনুবাদ করে পেশ করলাম। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।
·
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
ﻣﺎ ﻧﻌﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﻌﺎﻧﻖ ﺃﺻﻼ ﺇﻻ ﻋﺎﺩﺓ ﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻤﺴﻨﻮﻥ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﺑﻞ ﺃﺧﺎﻩ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻓﻬﺬﺍ ﻣﻦ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺴﻠﻒ، ﺃﻣﺎ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻘﺔ ﻷﺟﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺨﺼﻮﺹ ﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﻟﻬﺎ ﺃﺻﻼً ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﻋﺎﺩﺓ ﻟﻠﻨﺎﺱ. ﻓﺎﻷﻓﻀﻞ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ ﻭﻳﻜﺘﻔﻰ ﺑﻬﺎ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻘﺎﺀ، ﻳﺼﺎﻓﺢ ﺃﺧﺎﻩ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﻟﻪ : ﻫﻨﺄﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻌﻴﺪ، ﺑﺎﺭﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻚ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﻴﺪ، ﺃﻭ ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻚ ﻭﻣﺎ ﺃﺷﺒﻪ ﺫﻟﻚ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ.
“লোকদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা ছাড়া কোলাকুলির কোনো ভিত্তি আছে বলে আমরা জানি না। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হলো, (ইবাদত) কবুল হওয়ার দু‘আ করা। যখন সে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তার জন্য (ইবাদত) কবুলের দু‘আ করবে। এটা সালাফদের কর্ম। পক্ষান্তরে এ উপলক্ষে কোলাকুলি করার ভিত্তি আমি জানি না। এটি লোকদের আচার বা প্রথা মাত্র। সবচেয়ে উত্তম হলো, সাক্ষাতে শুধু করমর্দন করা এবং এটাতেই ক্ষান্ত হওয়া। সে তার ভাইয়ের সাথে করমর্দন করবে এবং তাকে বলবে, ‘হান্নাআকাল্লাহু বি হাযাল ঈদ (আল্লাহ তোমাকে এই ঈদের মাধ্যমে খুশি করুন)’, ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফী হাযাল ঈদ (আল্লাহ তোমাকে এই ঈদে বরকত দিন)’ অথবা ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ তোমার ও আমার পক্ষ থেকে এই ঈদ কবুল করুন)’; কিংবা অনুরূপ কিছু বলবে। এতে কোনো অসুবিধা নাই।” [দ্র.: binbaz.org.sa/fatwas/1533/حكم-المعانقة-في-الاعياد.]
·
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ﻣﺎ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ، ﻭﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻘﺔ ﻭﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﻌﺪ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻌﻴﺪ؟
الجواب: ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻬﺎ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻻ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﻭﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻌﺎﺩﺓ، ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺣﺘﺮﺍﻡ، ﻭﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﻋﺎﺩﺓ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﺑﺎﻟﻨﻬﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻹﺑﺎﺣﺔ ﻛﻤﺎ ﻗﻴﻞ : ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﺣﻞ، ﻭﻣﻨﻊ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺇﻻ ﺑﺈﺫﻥ ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ.
প্রশ্ন: “ঈদের নামাজের পর করমর্দন, কোলাকুলি এবং মুবারকবাদ জানানোর বিধান কী?”
উত্তর: “এগুলো করায় কোনো সমস্যা নেই। কেননা লোকেরা এগুলো ইবাদত বা আল্লাহ’র নৈকট্য অর্জনের জন্য করে না। বরং তারা এগুলো দেশাচারমূলক প্রথা হিসেবে করে এবং একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের জন্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথার ব্যাপারে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মৌলিক মান হলো বৈধতা। যেমন বলা হয়—‘সকল (প্রথাগত) বিষয়ের মৌলিক মান হলো বৈধতা, আর শরিয়তপ্রণেতার অনুমতি ছাড়া সকল ইবাদতের মৌলিক মান হলো নিষিদ্ধতা’।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২০৯; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আচার্য, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: الآن عندنا في المنا سبات وفي أيام الأعياد يعني يتعانق الناس؟
الجواب: والله الذي يبدو لي بأن هذه تشبه المجيء من السفر الذي كانوا يتعانقون فيه كونهم في الفرح والسرور فلا بأس في ذالك, مثل أيضا لو إنسان عنده زواج فرح بالزواج كونه يعني يهنأ ويعانق كل هذا فيه السرور مثل الفرح بالمسافر والفرح بالزواج والفرح بالعيد نعم.
প্রশ্ন: “বর্তমানে আমাদের এখানে বিভিন্ন উপলক্ষে এবং ঈদের দিনগুলোতে লোকেরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে।”
উত্তর: “আল্লাহ’র কসম, আমার কাছে এটা প্রতীয়মান হয়েছে যে, এটা সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার সাথে লোকেরা কোলাকুলি করে থাকে। আর তারা তা খুশি ও আনন্দের উপস্থিতির কারণে করে। সুতরাং এ কাজে কোনো ক্ষতি নেই। উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির যদি বিবাহ উপস্থিত হয়, আর সে তার বিয়েতে আনন্দিত হয়, ফলে সে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় এবং কোলাকুলি করে। এগুলোর (উল্লিখিত প্রকারগুলোর) প্রত্যেকটিতেই খুশি ও আনন্দ রয়েছে। যেমন: সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তিকে নিয়ে খুশি হওয়া, বিয়েতে খুশি হওয়া এবং ঈদে খুশি হওয়া।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php….]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, ঈদের দিন কোলাকুলি করা প্রথাগত বিষয় হওয়ার কারণে তা করায় কোনো সমস্যা নেই, এটি একটি বৈধ বিষয়। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত আদায়ের ব্যাপারে ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আহলুস সুন্নাহর ইমাম ও মুজাদ্দিদ, আশ-শাইখ, আল-'আল্লামাহ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)’র উপদেশ:
প্রশ্ন: আমরা বাইতুল ফাক্বিহ শহর থেকে আহলুস সুন্নাহ’র যুব-সম্প্রদায়। আমাদের নিজেদের জন্যে কোনো ঈদগাহ নেই যেখানে আমরা ঈদের সালাত আদায় করতে পারি। তবে শহরের মধ্যে একটি সর্বজনীন ঈদগাহ রয়েছে, যেটির খতিব একজন সূফী, আর অন্যান্য এমন লোকেরা সেখানে রয়েছে যারা সুরূরী (আধুনিক যুগের অন্যতম খারিজী মুহাম্মাদ সুরূর যাইনুল ‘আবিদীনের অনুসারী)। একারণে আমরা পার্শ্ববর্তী আরেকটি শহরে যাই (ঈদের সালাত আদায়ের জন্য) যা আমাদের শহর থেকে ৫ কি.মি দূরে। তা করার কারণে আমরা আমাদের ভাইদের সমালোচনার সম্মুখীন হই, যারা বলে, “এটা মুসলিমদের ঐক্যের মধ্যে বিভেদ ঘটানো।” সুতরাং, এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন।
উত্তর: আমরা তোমাকে তামাইয়ুযের (স্পষ্টরূপে স্বতন্ত্র হওয়া) ব্যাপারে নসিহত করছি। তুমি কীভাবে একজন সূফীর পেছনে সালাত আদায় করবে যে তার সূফিয়্যাহ প্রচার করে?! অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে। তাও যদি না করতে পারে, তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯]
আর বিদ‘আতীদের থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এবং উপকারী ‘ইলম ও আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার নিকটবর্তী থাকার মাধ্যমে ফিতনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। বারাকাল্লাহু ফীক।
আর যারা তোমার এই কাজের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে, হয় তারা আহলুস সুন্নাহ’র মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ইখওয়ানুল মুসলিমীনের (মুসলিম ব্রাদারহুড) সদস্য, আর না হয় তারা আহলুস সুন্নাহ, কিন্তু হিযবীদের ষড়যন্ত্রের সাথে পরিচিত না।
সুতরাং, আমরা আহলুস সুন্নাহ’র সবাইকে নসিহত করছি সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হতে (অর্থাৎ, বিদ‘আতীদের থেকে আলাদা হতে, ঈদের সালাত, জুম‘আহর সালাত এবং মাসজিদ বা মাসজিদের বাইরের অন্যান্য সালাতের ব্যাপারে)। আত-তামাইয়ুয একটি পরম প্রয়োজনীয়তা। এটা করার পর ইন-শা-আল্লাহ লোকজন আসবে (তোমাদের ঈদগাহে) যদি তোমরা এমন একজন খতিব নিয়োগ করো, যে ‘ইলমের দিক থেকে ততটুক উপকৃত হয়েছে, যতটুক হলে সে অন্যদের উপকৃত করতে পারে। আল্লাহ’র অনুমতিতে (ইচ্ছায়) লোকেরা আসবে, তোমাদের সাথে সালাত আদায় করবে এবং ওই সূফীকে বর্জন করবে।

ঈদের রাতের ফজিলতের বিশুদ্ধতা


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।
অনেক মুসলিম ভাই ও বোন ঈদের রাতকে মাহাত্ম্যপূর্ণ মনে করেন এবং এ রাতে বিশেষ ইবাদত করে থাকেন। আবার এ বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন করেন যে, সত্যিই ঈদের রাতের ফজিলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে কি না। একারণেই এ নিবন্ধটির অবতারণা। ঈদের রাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীসগুলো বিশুদ্ধ কি না, ঈদের রাত উপলক্ষে ইবাদত করা যাবে কি না এবং এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র ‘আলিমদের বক্তব্য কী, তা সংক্ষেপে নিম্নে উল্লিখিত হলো।
·
ঈদের রাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীস:
·
১. আবূ উমামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ.
“যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে, তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যে দিন অন্তরসমূহ মরে যাবে।” [ইবনু মাজাহ, হা/১৭৮২; সনদ: মাওদ্বূ‘/দ্ব‘ঈফ জিদ্দান/দ্ব‘ঈফ]
·
তাহক্বীক্ব:
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফ ইবনু মাজাহ’য় হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফ ইবনু মাজাহ, হা/৩৫৩।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৬৬।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাহ দ্ব‘ঈফাহ গ্রন্থে হাদীসটিকে “দ্ব‘ঈফ জিদ্দান (খুবই দুর্বল)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফাহ, হা/৫২১।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুল জামি‘ গ্রন্থে হাদীসটিকে “দ্ব‘ঈফ (দুর্বল)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুল জামি‘, হা/৫৭৪২।
·
২. ‘উবাদাহ বিন সামিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন,
ﻣﻦ ﺃﺣﻴﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻷﺿﺤﻰ ﻟﻢ ﻳﻤﺖ ﻗﻠﺒﻪ ﻳﻮﻡ ﺗﻤﻮﺕ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ.
“যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের রাত এবং ঈদুল আদ্বহার রাত জাগরণ করবে, তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যে দিন অন্তরসমূহ মরে যাবে।” [মাজমা‘উয যাওয়াইদ, ২/১৯৮; সনদ: মাওদ্বূ‘]
·
তাহক্বীক্ব:
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাহ দ্ব‘ঈফাহ গ্রন্থে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফাহ, হা/৫২০।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৬৮।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুল জামি‘ গ্রন্থে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুল জামি‘, হা/৫৩৬১।
·
৩. মু‘আয বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন,
من أحيا اللياليَ الأربعَ، وجبت له الجنة: ليلةَ التروية، وليلة عرفة، وليلة النحر، وليلة الفطر.
“যে ব্যক্তি চারটি রাত জাগরণ করল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল—(১) তারবিয়াহ’র রাত তথা ৮ জিলহজের রাত, (২) ‘আরাফাহর রাত তথা ৯ জিলহজের রাত, (৩) কুরবানীর রাত তথা ১০ জিলহজের রাত এবং (৪) ঈদুল ফিতরের রাত।” [আল-আমালী, ২/১৮৬; সনদ: মাওদ্বূ‘]
·

ঈদের দিনে যা করণীয়


প্রাবন্ধিক: যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)
[বক্ষ্যমাণ লেখাটি সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড ও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য আশ-শাইখ আল-‘আল্লামাহ আল-ফাক্বীহ আল-ইমাম ড. সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “আহকামু সালাতিল ‘ঈদ” শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধটি সংক্ষিপ্ত, সারগর্ভ ও দলিলসমৃদ্ধ হওয়ায়, আমরা প্রবন্ধটির একাংশের সরল বঙ্গানুবাদ বাঙালি মুসলিম পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করছি। – অনুবাদক]
·
এক. গোসল ও সুন্দর পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, أن ابن عمر رضي الله عنهما كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدو إلى المصلى “ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।” [মুওয়াত্বত্বা ইমাম মালিক, সনদ: সাহীহ]
ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ثبت عن ابن عمر مع شدة اتباعه للسنة أنه كان يغتسل يوم العيد قبل خروجه “ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)—যিনি কি না প্রচণ্ডভাবে সুন্নাহ’র অনুসরণ করতেন—থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি ঈদের দিন (নামাজে) বের হওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।” [যাদুল মা‘আদ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৪২]
ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে এটাও সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি দুই ঈদের দিন সুন্দর পোশাক পরিধান করতেন। ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, روى ابن أبي الدنيا والبهيقي بإسناد صحيح إلى ابن عمر أنه كان يلبس أحسن ثيابه في العيدين “ইবনু আবী দুনইয়া ও বাইহাক্বী (রাহিমাহুমাল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) পর্যন্ত বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) দুই ঈদের দিন সুন্দর পোশাক পরিধান করতেন।” [ফাতহুল বারী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫১]
অত্র দুটি আসার ও অন্যান্য বর্ণনা থেকে অসংখ্য ‘আলিম দুই ঈদের দিন গোসল করা ও সুন্দর পোশাক পরিধান করাকে মুস্তাহাব সাব্যস্ত করেছেন।
·
দুই. ঈদুল ফিতরের দিন নামাজে বের হওয়ার পূর্বে বিজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া সুন্নাত। তিনটি, বা পাঁচটি, বা এর চেয়ে বেশি সংখ্যক খেজুর খাবে, কিন্তু বিজোড় সংখ্যায় খাবে। যেহেতু আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন, كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ لَا يَغْدُوْ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ وَيَأْكُلَهُنَّ وِتْرًا “রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে (ঈদগাহে) বের হতেন না। আর তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৯৫৩]
·
তিন. ঈদের দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে ঈদগাহে যাওয়া পর্যন্ত তাকবীর দেওয়া এবং তা সজোরে পাঠ করা—তবে মহিলারা চুপে চুপে তাকবীর দিবেন—সুন্নাত। ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, أن رسول الله كان يكبر يوم الفطر من حيث يخرج من بيته حتى يأتي المصلى “রাসূল ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে ঈদগাহে আসার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর দিতেন।” [দারাকুতনী, সনদ: সাহীহ (শাইখ ফাওযানের মতে)]
নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أن ابن عمر كان إذا غدا يوم الفطر ويوم الأضحى يجهر بالتكبير حتى يأتي المصلى، ثم يكبر حتى يأتي الإمام، فيكبر بتكبيره “ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন যখন (নামাজের জন্য) বের হতেন, তখন ঈদগাহে আসার পূর্ব পর্যন্ত উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতেন। এরপর ইমাম আসার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাকবীর দিতেন। তারপর তিনি ইমামের তাকবীরের সাথে তাকবীর দিতেন।” [দারাকুত্বনী, সনদ: সাহীহ (শাইখ ফাওযানের মতে)]

সালাফিয়্যাহ বা সালাফী মানহাজের পরিচয়


·
‘মানহাজ’ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো রাস্তা, সড়ক, সুস্পষ্ট পথ প্রভৃতি (المنهج هو السبيل والطريق الواضح)। [শাইখ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ), আল-মানহাজুস সালাফী তা‘রীফুহু ওয়া সিমাতুহু ওয়া দা‘ওয়াতুহুল ইসলাহিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৪] আর ‘সালাফী’ শব্দটি এসেছে ‘সালাফ’ থেকে। আপনার অগ্রবর্তী বা পূর্ববর্তী প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ‘সালাফ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, َفَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَمَثَلًا لِلْآخِرِيْن “এভাবে আমি তাদেরকে করলাম সালাফ (অতীতের মানুষ), আর পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত।” [সূরাহ যুখরুফ: ৫৬]
ইমাম বাগাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন, “পূর্বসূরিদের মধ্যে যাঁরা আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছেন, তাঁরাই ‘সালাফ’। আমরা তাঁদেরকে আগের মানুষ বানালাম বা অগ্রবর্তী করলাম, যাতে করে তাঁদের দেখে পরবর্তীরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।” [তাফসীরে বাগাউয়ী, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১২৮; গৃহীত: ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ), মা হিয়াস সালাফিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১১; দারুল ইস্তিক্বামাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৩ হি./২০১২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
নাবী ﷺ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় কন্যা ফাত্বিমাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে নিজের মৃত্যুক্ষণ এগিয়ে আসার কথা জানিয়েছিলেন। তখন তিনি তাঁকে এ কথা বলেছিলেন, ِفَإِنَّهُ نِعْمَ ﺍﻟﺴَّﻠَﻒُ أَنَا لَك “নিশ্চয় আমি তোমার উত্তম অগ্রগমনকারী (সালাফ)।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬২৮৬]
ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) এই কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, “এর অর্থ হলো, আমি তোমার অগ্রগমনকারী, কিছুকাল পরেই তুমি আমার কাছে পৌঁছবে।” [শারহু মুসলিম, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬; গৃহীত: ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ), মা হিয়াস সালাফিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১৩; দারুল ইস্তিক্বামাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৩ হি./২০১২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
এ তো হলো ‘সালাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ। কিন্তু ‘সালাফ’ কারা? সালাফদের পরিচয় দিতে গিয়ে সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,
السلفية: نسبة إلى السلف، والسلف: هم صحابة رسول الله ﷺ وأئمة الهدى من أهل القرون الثلاثة الأولى –رضي الله عنهم– الذين شهد رسول الله ﷺ بالخير في قوله: خير الناس قرني، ثم الذين يلونهم، ثم الذين يلونهم.
“সালাফদের দিকে নিসবত করে ‘সালাফিয়্যাহ’ বলা হয়। আর সালাফগণ হলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ এবং প্রথম তিন যুগের সুপথপ্রাপ্ত ইমামগণ। যাঁদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ কল্যাণের সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, “আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, তারপর যারা তাদের নিকটবর্তী, তারপর যারা তাদের নিকটবর্তী।” (সাহীহ বুখারী, হা/২৬৫২)” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, ফাতওয়া নং: ১৩৬১]
·
সালাফগণ যে মানহাজ অবলম্বন করেছেন এবং যে আদর্শ অনুসরণ করেছেন, তাই ‘সালাফী মানহাজ’ বা ‘সালাফিয়্যাহ’। এই মানহাজ স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত মানহাজ। যে মানহাজের ব্যাপারে সুপথপ্রাপ্তদের ইমাম নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.
“বানী ইসরাঈল সম্প্রদায় ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল, সে দল কোনটি?’ তিনি বললেন, আমি ও আমার সাহাবীগণ যে আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত (তার উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারা)।” [তিরমিযী, হা/২৬৪১; সনদ: হাসান]
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...