Friday 16 August 2019

বাহাস-মুনাযারার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ’র মানহাজ


·
ইমাম আস-সাবূনী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৪৯ হি.] বিদ‘আতীদের ব্যাপারে সালাফদের মানহাজ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আর তারা আহলুল বিদ‘আহ—যারা দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করে—তাদের ঘৃণা করতেন। তারা তাদের ভালোবাসতেন না, তাদের সাথে সম্পর্কও রাখতেন না। তারা তাদের কথা শুনতেন না, তাদের সাথে বসতেনও না। তারা তাদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে তর্ক করতেন না, বিতর্কও করতেন না।”
·
ইমাম আস-সাবূনী (রাহিমাহুল্লাহ)’র উক্ত কথার ব্যাখ্যায় ইমাম ফিস সুন্নাহ, ‘আল্লামাহ ড. রাবী‘ বিন হাদী ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] বলেন, “এ ব্যাপারটি কেমন? এটা কি তারা নিজেরা আবিষ্কার করেছিলেন না কি এটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর পক্ষ থেকে হিদায়াত, এবং ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের আদর্শ?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আহলুল বিদ‘আহর ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং আমাদের জন্য স্পষ্ট করেছেন যে, তারা হলো প্রবৃত্তির অনুসারী এবং তারা মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থবোধক আয়াতসমূহ) এর অনুসরণ করে।
‘আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়াতটি পাঠ করলেন هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ ............ إِلاَّ أُولُو الأَلْبَابِ– ❝তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন।❞ এগুলো কিতাবের মূল অংশ; আর অন্যগুলো রূপক; যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাই ফিতনাহ এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থবোধক—তার অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তাঁরা বলেন: ❝আমরা এতে ঈমান এনেছি, এসবই আমাদের প্রভুর তরফ থেকে এসেছে। জ্ঞানবানরা ব্যতীত কেউ সদুপদেশ গ্রহণ করে না।❞ [সূরাহ আলে ‘ইমরান: ৭]
নাবী ﷺ আয়াতটি পাঠ করলেন। ‘আয়িশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে, তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৫]
আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের সাথে রয়েছে (মন্দ) প্রবৃত্তি ও গোমরাহি, এবং তারা তাদের নিজেদের ও অন্যদের পথভ্রষ্ট করতে চায়! তারা ফিতনা চায় এবং লোকদের পথভ্রষ্ট করতে চায়। আর একারণেই রাসূল ﷺ বলেছেন, “আমার উম্মাতের মধ্যে এমন এমন দলের আবির্ভাব ঘটবে, যাদের সর্বশরীরে (বিদ‘আতের) প্রবৃত্তি এমনভাবে অনুপ্রবেশ করবে যেমন পাগলা কুকুর কামড়ালে রোগীর সর্বশরীরে জলাতঙ্ক সঞ্চারিত হয়।” [সাহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৭]

আহলুস সুন্নাহ আহলুল বিদ‘আহকে ঘৃণা করে—কোনো সন্দেহ নেই—এবং ইমাম (আস-সাবূনী) তাঁদের (আহলুস সুন্নাহ’র ইমামদের) বেশ কয়েকজনের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, তাঁরা সবাই তাদের (আহলুল বিদ‘আহ) প্রতি ঘৃণা পোষণের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে রয়েছে দু‘আত (দা‘ঈবৃন্দ), তাদের সাথে বসা হবে না, মুনাযারাও করা হবে না, প্রয়োজন ও মাসলাহাতের জন্য ছাড়া। অন্যথায় তাদের সাথে মুনযারা করা জায়েজ নেই। কোনো একজন রাফিদ্বী শিয়ার সাথে বিশেষ মুনাযারায় প্রবেশ করা জায়েজ নয়, যদি তুমি দুর্বল হও (‘ইলম ও দক্ষতার দিক দিয়ে)। তবে যদি এমন কেউ থেকে থাকে, যে ‘ইলম ও দ্বীনের ক্ষেত্রে শক্ত ভিত্তিসম্পন্ন, দলিল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে (অত্যন্ত দক্ষ), বুদ্ধিমান এবং (দক্ষতা ও দৃঢ়তার) অধিকারী, সে যদি মুনাযারা করার মধ্যে কোনো কল্যাণ দেখে, তাহলে সে তাদের সাথে মুনাযারা করবে।
আল্লাহ বলেন: ❝তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান করো হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে উত্তম পন্থায় বিতর্ক করো।❞ [সূরাহ নাহল: ১২৫]
এটি হলো শারী‘আহ সমর্থিত মুনাযারা। আল্লাহ মুনাযারার পথ শতভাগ রুদ্ধ করে দেননি। সুতরাং যদি আমাদের দলিল প্রতিষ্ঠিত করার এবং লোকদেরকে উত্তম দিকে পথপ্রদর্শন করার উপায় থাকে, তাহলে আমরা তার অনুসরণ করব। যার সাথে মুনাযারা করা হচ্ছে, সে হয়তো উপকৃত হবে না, কিন্তু অন্যরা উপকৃত হতে পারে।
আর দুর্বল ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তাহলে না (সে মুনাযারা করবে না)। এমনকি ‘উলামাদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছেন, যিনি দুর্বল এবং শুবুহাত (সন্দেহ) দ্বারা ভুল করার দিকে পরিচালিত হন। তিনি একজন ‘আলিম হয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু তাঁর চরিত্র দুর্বল। সুতরাং তিনি আহলুল বিদ‘আহর উপস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়েন, যদিও তারা বয়সে তাঁর চেয়ে ছোটো এবং তাদের ‘ইলম তাঁর চেয়ে কম! নিশ্চয়ই (নিজেদের) সুন্নাহ ও হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত করেন এমন অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে যে, তারা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছেন তাদের দুর্বলতা ও সালাফদের মানহাজের বিরোধিতা করার কারণে। উদাহরণস্বরূপ: আল-বাইহাক্বী ছিলেন জ্যেষ্ঠ আহলুল হাদীস ও তাদের ‘উলামাদের একজন, এবং (তিনি) কিছু আশ‘আরী, যেমন ইবন ফাওরাক্ব ও তার শিষ্যের দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন, এবং আশ‘আরী মতবাদে পতিত হয়েছিলেন!
আর এই যুগে! তরুণদের কতজন আহলুল বিদ‘আহর হাতে নষ্ট হয়েছে?! কতো তরুণ, মধ্যবয়স্ক লোক ও ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট আহলুল বিদ‘আহ কর্তৃক প্রতারিত হয়েছে, এবং এভাবে তাদের বাহুতে পতিত হয়েছে?! তারা বিভিন্ন দলের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে এবং তাদের বাহুতে পতিত হয়েছে। এটা কেন? কারণ তারা রাসূলের ﷺ এ কথার ওপর আমল করেনি—“যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে, তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৫]
শক্তিশালী (‘ইলম, দক্ষতা ও দৃঢ়তার দিক দিয়ে) ব্যক্তি আহলুল বিদ‘আহকে দাওয়াত দিবে। সে খ্রিষ্টানদের দাওয়াত দিবে। আল্লাহ’র পথে দাওয়াত হতে হবে এবং শক্তিশালী ‘উলামা থাকতে হবে, যাঁরা আল্লাহ’র দ্বীন ছড়িয়ে দেন, এবং যখন দরকার হয় তখন তাঁরা মুনাযারা করেন, যাতে করে দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যার উপকৃত হওয়ার সে উপকৃত হয়।”
·
তথ্যসূত্র:
শারহু ‘আক্বীদাতিস সালাফ ওয়া আসহাবিল হাদীস, পৃষ্ঠা: ৩০১-৩০৪; সংক্ষেপিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত।
·
উৎস: https://bit.ly/2QaiEr5
·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...