Thursday 18 May 2017

দুর্বল ঈমান: আলামত, কারণ ও প্রতিকার


মূল: শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
-------------------------------------------------
☑ ১মত: দুর্বল ঈমানের কতিপয় আলামত
দুর্বল ঈমানের অনেক আলামত রয়েছে। তন্মধ্যে এখানে ১৮টি আলামত পেশ করা হল:
১) পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া:
কিছু মানুষ একই পাপ বারবার করে, কেউ আবার বিভিন্ন প্রকার পাপ করে। পাপ করতে করতে করতে যখন তা অভ্যাসে পরিণত হয় তখন পাপকে আর পাপ বলে মনে হয় না! পাপের কদর্যতা অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে মানুষ প্রকাশ্যে পাপ করা শুরু করে বা গোপনে পাপ করার পর মানুষের কাছে তা প্রকাশ করে দেয়!
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
كُلُّ أُمَّتِى مُعَافًى إِلاَّ الْمُجَاهِرِينَ ، وَإِنَّ مِنَ الْمَجَاهرة أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلاً ، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ ، فَيَقُولَ يَا فُلاَنُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا ، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ
“আমার উম্মতের সকলকেই ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঐ সকল লোককে ক্ষমা করা হবে না যারা পাপ করার পর তা অন্যের নিকট প্রকাশ করে দেয়। অন্যের নিকট প্রকাশ করার একটি দিক হল, কোন ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোন গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ তার পাপটা গোপন করে রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের নিকট বলল, হে উমুক, জানো, রাতে আমি এই এই কাজ করেছি। সারা রাত আল্লাহ তার পাপটাকে ঢেকে রেখেছিলেন কিন্তু ভোর হলে নিজেই আল্লাহর ঢেকে রাখা বিষয়টি প্রকাশ করে দিল।” (সহীহু বুখারী) (1)
__________________________
(1) টিকা:
আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত কতিপয় প্রকাশ্য পাপাচারের উদাহরণ পেশ করা হল:
১) প্রকাশ্যে ধূমপান করা।
২) পুরুষদের টাখনুর নিচে ঝুলিয় কাপড় পড়া।
৩) দাড়ি মুণ্ডন করা বা কাটা।
৪) মহিলাদের টাইট-ফিট, পাতলা এবং পুরুষদের মত পোশাক পরিধান করে পরপুরুষের নিকট সৌন্দর্য প্রকাশ করা।
৫) মহিলাদের সুগন্ধি মেখে বাইরে বের হওয়া।
৬) পুরুষদের সোনার আংটি বা রেশমের পোশাক পরিধান করা।
৭) উচ্চ আওয়াজে মিউজিক বাজানো।
৮) পর নারী বা পর পুরুষের সাথে বাইরে বের হওয়া।
৯) পহেলা বৈশাখ, ভালবাসা দিবস, ক্রিসমাস (বড়দিন), ঈদে মীলাদুন্নবী,থার্টি ফাস্ট নাইট,জন্ম দিবস,মৃত্যু দিবস ইত্যাদি পালন করা।
১০) ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোশাল নেটওয়ার্কে বা ব্লগ ও ওয়েব সাইটে গান-বাদ্য, ফিল্ম, অশ্লীল গল্প ইত্যাদি পোস্ট করা।
১১) বিলবোর্ড বা পোস্টারে বেপর্দা মহিলাদের এ্যাডভার্টাইজ দেয়া।
১২) কবর-মাযারপুজা,তথাকথিত অলি-আউলিয়াদের কবরের পাশে ওরস মাহফিল করা।
১৩) বিভিন্ন উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল করা।
১৪) কবর পাকা করা,কবরে চুনকাম করা এবং কবরে কিছু লেখা।
১৫)উচ্চ আওয়াজে সম্মিলিতভাবে জিকির করা ইত্যাদি।

২) অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া:
ঈমান দুর্বলতার একটি আলামত হল অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া। মনটা পাথরের মত এতটাই শক্ত হয় যে, তাতে কোন কিছুই প্রভাব সৃষ্টি করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوبُكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ فَهِيَ كَالْحِجَارَةِ أَوْ أَشَدُّ قَسْوَةً
“অতঃপর এ ঘটনা (তথা বিস্ময়কর মুজিযা দেখার পরে) তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন।” (সূরা বাকারা: ৭৪)
কঠিন অন্তরের মানুষের মনে মৃত্যু সম্পর্কিত নসিহত প্রভাব ফেলে না। মৃত্যু কিংবা জানাযা দেখেও মনে দাগ কাটে না। এমনকি কাঁধে লাশ বহন করলে বা লাশকে কবরের গর্তে রাখতে দেখেও কোন মনের মধ্যে ভাবান্তর ঘটে না। গোরস্থান দিয়ে হেঁটে গেলে তার কাছে মনে হয় যে, কতগুলো ইট-পাথরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে!!
৩) মজবুতভাবে ইবাদত না করা: 

Tuesday 16 May 2017

নারীদের (হায়েয-নেফাস থেকে) পবিত্রতার মাসয়ালা-মাসায়েল‍:


সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি বিশ্ব জগতের পালনকর্তা। দরূদ ও সালাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের উপর বর্ষিত হোক।
ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা প্রত্যে মুসলিম নারীর উপর কর্তব্য। বিশেষ করে ইবাদত সংক্রান্ত বিধি-বিধান। কেননা তা না জানলে চলতেই পারবে না।
ঐ বিধানগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পবিত্রতার বিধান। যার অনেক কিছুই অনেকের জানা নেই। কখনো লজ্জার কারণে বিষয়গুলো জানতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
নিম্নে হায়েয বা ঋতু সম্পর্কে শরীয়তের বিধি-বিধান আলোচনা করা হলঃ
হায়েয কাকে বলে? নারীর জরায়ু থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিনা কারণে প্রাকৃতিকভাবে নির্গত রক্ত স্রাবকে হায়েয বা ঋতুস্রাব বলা হয়। অতএব অসুস্থতা, আঘাত, পড়ে যাওয়া, সন্তান প্রসব ইত্যাদি কোন কারণ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে নির্গত রক্ত স্রাবই হচ্ছে হায়েয।
আল্লাহ্ বলেন, وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى “আর তারা আপনাকে ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি বলে দিন উহা অসূচী বা নাপাক বস্তু।” (সূরা বাকারাঃ ২২২)
হায়েয সম্পর্কে কিছু নিয়ম-নীতি ও মাসআলা-মাসায়েলঃ
১- স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশী কখনো কখনো হায়েয হতে পারে। তখন বেশী দিনগুলোকে হায়েযের দিন হিসেবেই গণনা করতে হবে।
যেমনঃ জনৈক নারীর হায়েয ছিল পাঁচ দিন। এটা বৃদ্ধি হয়ে সাত হয়ে যায়। তখন তার হায়েযের সময় সাত দিন বলেই গণ্য করতে হবে।
২- কখনো নির্দিষ্ট দিনের চেয়ে কম হয়। তখন ঐ কম দিনই হায়েয হিসেবে গণনা করতে হবে।
যেমনঃ জনৈক নারীর ঋতু ছিল পাঁচ দিন। তা কমে গিয়ে হয়েছে চার দিন। তখন আর অপেক্ষা করতে হবে না। তার ঋতুর সময় শেষ হয়ে গেছে।
৩- হায়েযের সময় বৃদ্ধি হয় বিশেষ কোন কারণে। যেমন জন্মনিরোধক ঔষধ সেবন করার কারণে। তখন হায়েযের সময়টা বেড়ে যায়। যেমন পূর্বে পাঁচ দিন ছিল, ঔষধ সেবন করার কারণে তা বেড়ে গিয়ে আট দিন পর্যন্ত স্রাব চলতেই থাকল। তখন তার ঋতু আট দিন হয়েছে বলেই গণ্য করতে হবে। অবশ্য সে ক্ষেত্রে মুসলিম মহিলা ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেক করে নিশ্চিত হতে হবে যে, ঔষধ যথাস্থানে ব্যবহার করা হয়েছে এবং আঘাত, বা অন্য কোন অসুস্থতার কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে না।
৪- ঋতু কখনো সময় হওয়ার পূর্বেই হয়ে যেতে পারে। যেমন কারো ঋতু মাসের শেষে হওয়ার কথা, কিন্তু তা এক সপ্তাহ বা দশদিন পূর্বেই হয়ে গেল। এ অবস্থায় তা হায়েয বলে গণ্য করতে হবে।
৫- ঋতু কখনো দেরীতে আসে। যেমন, কারো ঋতু মাসের মাঝামাঝি সময়ে হয়ে থাকে, কিন্তু দেরী হয়ে তা মাসের শেষের দিকে হল। তখন তা হয়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে।

Monday 15 May 2017

ইমামের ভুল-ত্রুটি (সাজদায়ে সাহুর বিধান)



‘সাহু’ ও সাজদায়ে সাহুঃ
সাহুর আভিধানিক অর্থ, ভুল, অমনোযোগ এবং বেখেয়াল। তাই নামাযে সাহু হওয়া মানে নামায সম্পাদনের সময় ভুলে তথা বেখায়ালে কিছু ছেড়ে দেওয়া বা বেশী করে দেওয়া বা সন্দেহে পড়া। আর সাজদায়ে সাহু হচ্ছে, সেই ভুল সংশোধনের উদ্দেশ্যে সালাম ফিরানোর পূর্বে বা পরে দুটি সাজদা করা।

১-সাজদায়ে সাহুর মাধ্যমে কি ধরণের ভুল সংশোধিত হয়?
নামাযে সংঘটিত ভুলগুলি সমমানের নয়। কিছু ভুল বড় পর্যায়ের, যা সাজদায়ে সাহুর মাধ্যমে সংশোধন হয় না; বরং তা হলে অনেক সময় নামায বাতিল হয়ে যায়, আর অনেক সময় ছুটে যাওয়া সেই কাজটি পুনরায় করা ব্যতীত নামায শুদ্ধ হয় না। এই সব বড় ভুলের উদাহরণ হচ্ছে, নামাযের রুকন ছুটে যাওয়া। সেই রুকন গুলির মধ্যে যদি কেউ তাকবীরে তাহরীমা ভুলে ছেড়ে দেয়, তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে এবং সাজদায়ে সাহুর মাধ্যমে তা পূরণ হবে না। এ ছাড়া অন্য কোনো রুকন ছুটে গেলে, যেমন রুকু কিংবা সাজদা ছুটে গেলে অতঃপর তার পরের রাকাআতের কিরাআত শুরু করার পূর্বে স্মরণ হলে তৎক্ষণাৎ তা করতে হবে এবং তার পরের বাকি কাজও করতে হবে। আর যদি পরের রাকাআত শুরু করার পর স্মরণ হয়, তাহলে যেই রাকাআতে সেই রুকন ছুটে গেছে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং তার পূর্বে সংঘটিত রাকাআতটি সেই স্থানে স্থলাভিষিক্ত হবে। [দেখুন, শারহুল মুমতি,৩/৩৭১-৩৭২/ আল্ মুলাখ্খাস আল্ ফিকহী, ড. ফাউযান/৭৫]

এতদ্ব্যতীত নামাযের কোনো ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে, তা সাজদায়ে সাহুর মাধ্যমে পূরণ তথা সংশোধন হয়ে যায়। যেমন প্রথম তাশাহ্হুদ ছুটে যাওয়া, তকবীরে তাহরীমা ব্যতীত বাকি তাকবীর সমূহের কোনো একটি ছুটে যাওয়া, সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ ভুলে না বলা ইত্যাদি। নবী (সাঃ) একদা প্রথম তাশাহ্হুদ ভুলে ছেড়ে দিলে সাহুর দুটি সাজদা করেন। [আহমদ, ৪/২৫৩, তিরমিযী, আবু দাঊদ ও বায়হাক্বী]

নামাযের সুন্নাহ কিছু ছুটে গেলে সাজদায়ে সাহু দেয়া জরুরী নয়; বরং অনেক উলামার নিকট তা না দেয়াই ভাল। কারণ নামাযের সুন্নাহ ছুটে যাওয়ার ফলে নবী (সাঃ) সাজদায়ে সাহু করেছেন মর্মে কোনো দলীল পাওয়া যায় না। তবে একটি আম (ব্যাপক অর্থবোধক) হাদীস তা বৈধতার ইঙ্গীত করে। নবী (সাঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক সাহুর বদলে রয়েছে দু’টি সাজদা”। [ইবনু মাজাহ নং ১২১৯, আবু দাঊদ নং১০৩৮, সূত্র হাসান দেখুন ইরওয়াউল গালীল ২/৪৭]

উল্লেখ থাকে যে, নামাযের রুকন ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ছুটে গেলে নামায হয় না যতক্ষণে তা না করা হয়। ওয়াজিব ইচ্ছাকৃত ছাড়লে নামায বাতিল হয়ে যায় কিন্তু অনিচ্ছায় ছাড়লে সাজদায়ে সাহুর মাধ্যমে তা সংশোধন হয়ে যায়। আর নামাযের সুন্নাহ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ছুটে গেলে নামায বাতিল হয় না, তবে পূর্ণ সওয়াব হতে বঞ্ছিত হয়। [মুলাখ্খাস আল ফিকহী/৬৩]

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...