Friday 16 August 2019

মৃত ব্যক্তিকে ‘মরহুম’ বলার বিধান


·
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস, শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ما هي صحة العبارات التي تطلق على الأموات، فنحن نسمع أن فلان المغفور له أو المرحوم، هل هذه العبارات صحيحة وكيف توجهون الناس؟
الجواب: الواجب في هذا أن يقال: غفر الله له، رحمه الله، ولا يجزم بالمغفور له والمرحوم، هذا هو الذي ذكره أهل العلم، وكان أهل السنة والجماعة يقولون: لا يجوز الشهادة لمعين بجنة أو نار، إلا من شهد له الرسول ﷺ، أو شهد الله له في كتابه وإلا فلا، فممن شهد الله له في الكتاب العزيز بالنار أبو لهب ، شهد الله له بالنار، وهكذا من شهد له الرسول ﷺ بالجنة كـأبي بكر الصديق وعمر وعثمان وعلي وبقية العشرة وغيرهم ممن شهد لهم الرسول ﷺ، أو بالنار، هذا يشهد له.
أما من لم يشهد له الله ولا رسوله لا بجنة ولا بنار فإنا لا نشهد له بذلك لا هذا ولا هذا، ولكن أهل السنة يرجون للمحسن ويخافون على المسيء.
والذي يظهر أن قول القائل: المرحوم فلان، والمغفور له فلان في معنى الشهادة، في معنى الشهادة بالجنة والنار؛ لأن المرحوم والمغفور له معناه أنه في الجنة؛ لأن كل إنسان مرحوم ومغفور له فهو من أهل الجنة، هذا فيه جرأة وعدم تورع، فالذي ينبغي في مثل هذا أن يقول: رحمه الله، غفر الله له، هذا هو الذي ينبغي في هذا المقام. نعم.
প্রশ্ন: “মৃতদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দাবলির বিশুদ্ধতা কী? যেমন আমরা এরকম কথা শুনে থাকি যে, অমুক ‘মাগফূর লাহু’ অথবা ‘মরহুম’। এই পরিভাষাগুলো কি বিশুদ্ধ? আপনি এ ব্যাপারে মানুষকে কীভাবে দিকনির্দেশনা দিবেন?”
উত্তর: “এক্ষেত্রে ‘গাফারাল্লাহু লাহু (আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন)’, ‘রাহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন)’ প্রভৃতি বলা জরুরি। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ‘মাগফূর লাহু (ক্ষমাপ্রাপ্ত)’, ‘মরহুম (রহমতপ্রাপ্ত)’ প্রভৃতি বলা যাবে না। ‘আলিমগণ এমনটিই বলেছেন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত বলে, স্বয়ং আল্লাহ বা রাসূল ﷺ এর সাক্ষ্য ব্যতিরেকে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘বেহেশতবাসী’ বা ‘জাহান্নামবাসী’ বলে সার্টিফিকেট দেওয়া জায়েজ নয়। আল্লাহ যাদেরকে সম্মানিত কিতাবে ‘জাহান্নামী’ আখ্যা দিয়েছেন, তাদের একজন হলো আবূ লাহাব। আল্লাহ তাকে ‘জাহান্নামী’ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনুরূপভাবে রাসূল ﷺ যাকে ‘বেহেশতবাসী’ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন—যেমন আবূ বাকার আস-সিদ্দীক্ব, ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, আশারায়ে মুবাশশারাহ’র অবশিষ্ট সাহাবী এবং অন্যান্য আরও সাহাবী যাদেরকে রাসূল ﷺ ‘বেহেশতবাসী’ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন—অথবা ‘জাহান্নামী’ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তার ব্যাপারে সে সাক্ষ্য দেওয়া যাবে।
আর যার ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ ‘বেহেশতবাসী’ বা ‘জাহান্নামী’ আখ্যা দেননি, তাকে আমরাও ‘বেহেশতবাসী’ বা ‘জাহান্নামী’ আখ্যা দিব না। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ সৎকর্মশীল বান্দার জন্য কল্যাণের আশা করে, আর পাপী বান্দার ব্যাপারে অকল্যাণের আশঙ্কা করে।
আর মানুষের বলা—অমুক ‘মরহুম’, অমুক ‘মাগফূর লাহু’—এই কথাগুলো জান্নাত ও জাহান্নামের সার্টিফিকেট দেওয়ার নামান্তর। কেননা মরহুম (রহমতপ্রাপ্ত), মাগফূর লাহু (ক্ষমাপ্রাপ্ত)—কথা দুটির অর্থ হলো, উক্ত ব্যক্তি জান্নাতে রয়েছে। কেননা প্রত্যেক মরহুম ও মাগফূর লাহু—ব্যক্তি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত। এই কথার মধ্যে রয়েছে স্পর্ধা ও তাক্বওয়া-শূন্যতা। তাই এসব ক্ষেত্রে ‘রাহিমাহুল্লাহ’, ‘গাফারাল্লাহু লাহু’ প্রভৃতি বলাই বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে এটাই বাঞ্ছনীয়। না‘আম।” [দ্র.: https://tinyurl.com/y4dyo65k (ইমাম ইবনু বাযের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট– binbaz.org.sa এর আর্টিকেল)]
·
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ما حكم قول: فلان المغفور له، فلان المرحوم؟

الإجابة: بعض الناس يُنكر قول القائل: «فلان المغفور له»، «فلان المرحوم»، ويقولون: إننا لا نعلم هل هذا الميت من المرحومين المغفور لهم أو ليس منهم؟
وهذا الإنكار في محله إذا كان الإنسان يخبر خبراً أن هذا الميت قد رحم أو غفر له، لأنه لا يجوز أن نخبر أن هذا الميت قد رحم، أو غفر له بدون علم، قال الله تعالى: {ولا تقف ما ليس لك به علم}، لكن الناس لا يريدون بذلك الإخبار قطعاً، فالإنسان الذي يقول: المرحوم الوالد، المرحومة الوالدة ونحو ذلك لا يريد بهذا الجزم أو الإخبار بأنهم مرحومون، وإنما يريد بذلك الدعاء أن الله تعالى قد رحمهم والرجاء، وفرق بين الدعاء والخبر، ولهذا نحن نقول: «فلان رحمه الله»، «فلان غفر الله له»، «فلان عفا الله عنه»، ولا فرق من حيث اللغة العربية بين قولنا: «فلان المرحوم» و«فلان رحمه الله»، لأن جملة «رحمه الله» جملة خبرية، والمرحوم بمعنى الذي رحم فهي أيضاً خبرية، فلا فرق بينهما أي بين مدلوليهما في اللغة العربية فمن منع: «فلان المرحوم» يجب أن يمنع «فلان رحمه الله».
على كل حال نقول: لا إنكار في هذه الجملة أي في قولنا: «فلان المرحوم، فلان المغفور له» وما أشبه ذلك لأننا لسنا نخبر بذلك خبراً، ونقول: إن الله قد رحمه، وإن الله قد غفر له، ولكننا نسأل الله ونرجوه فهو من باب الرجاء والدعاء وليس من باب الإخبار، وفرق بين هذا وهذا.
প্রশ্ন: “অমুক ব্যক্তি মাগফূর লাহু (ক্ষমাপ্রাপ্ত), অমুক ব্যক্তি মরহুম (রহমতপ্রাপ্ত)—এসব কথা বলার বিধান কী?”
উত্তর: “কিছু লোক ‘অমুক মাগফূর লাহু’, আর ‘অমুক মরহুম’—বলার বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, যেহেতু আমরা জানি না যে, এই মৃত ব্যক্তি রহমতপ্রাপ্ত ও ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত কি না। এই বিরোধিতা সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেক্ষেত্রে ব্যক্তি এ মর্মে সংবাদ প্রদান করে যে, এই মৃত লোককে রহম করা হয়েছে, বা তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। কেননা না জেনে আমাদের জন্য এ সংবাদ দেওয়া জায়েজ নয় যে, এই মৃত মানুষকে রহম করা হয়েছে, কিংবা তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বোলো না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই।” (সূরাহ ইসরা: ৩৬)
কিন্তু মানুষ এ কথা বলার মাধ্যমে এরূপ অকাট্যতা উদ্দেশ্য করে না। যখন মানুষ বলে, ‘মরহুম পিতা’, ‘মরহুম মাতা’ প্রভৃতি, তখন সে এর দ্বারা দৃঢ়তা উদ্দেশ্য করে না, অথবা ‘তারা রহমতপ্রাপ্ত’—এমন সংবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যও করে না। বরং সে এর মাধ্যমে এ দু‘আ ও আশা উদ্দেশ্য করে যে, মহান আল্লাহ যেন তাঁদেরকে ক্ষমা করেন।
দু‘আ ও সংবাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। একারণে আমরা বলি, ‘অমুক রাহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার ওপর রহম করুন)’, ‘অমুক গাফারাল্লাহু লাহু (আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন)’, “অমুক ‘আফাল্লাহু ‘আনহু (আল্লাহ তাকে মার্জনা করুন)”। আরবি ভাষাগত দিক থেকে ‘অমুক মরহুম’ আর ‘অমুক রাহিমাহুল্লাহ’—এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বাক্যটি বিবৃতিমূলক বাক্য। আর ‘মরহুম’ শব্দের অর্থ—‘যার ওপর রহম করা হয়েছে (কিংবা তার ওপর রহম করা হোক)’, সুতরাং এটিও বিবৃতিমূলক। আরবি ভাষায় এ দুয়ের মর্মার্থের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তাই যে ব্যক্তি ‘অমুক মরহুম’ বলতে নিষেধ করে, তার জন্য ‘অমুক রাহিমাহুল্লাহ’ বলতে নিষেধ করাও জরুরি হয়ে যায়।
সর্বাবস্থায় আমরা বলি, ‘অমুক মরহুম’, আর ‘অমুক মাগফূর লাহু’ প্রভৃতি বলায় কোনো সমস্যা নেই। কেননা আমরা এর দ্বারা এ সংবাদ প্রদান করি না যে, নিশ্চয় আল্লাহ তার ওপর রহম করেছেন, অথবা নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। বরং আমরা আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে আশা করি। তাই এটা হলো আশা ও প্রার্থনার অন্তর্ভুক্ত, সংবাদ বা বিবৃতি প্রদানের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১৩৫-১৩৬; দারুল ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৩ হিজরী (সর্বশেষ প্রকাশ)]
·
সম্মানিত পাঠক, নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, উপরিউক্ত ফাতওয়া দুটির মধ্যে সমন্বয় করা দরকার। যেহেতু ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে মরহুম বলা যাবে না। কারণ মরহুম মানে হলো রহমতপ্রাপ্ত, আর রহমতপ্রাপ্ত কেবল জান্নাতী ব্যক্তিরাই হয়ে থাকে। আর যেহেতু দুনিয়ায় কোনো ব্যক্তিকে ‘জান্নাতী’ সার্টিফিকেট দেওয়া নিষিদ্ধ, তাই মৃত ব্যক্তিকে মরহুম বলা যাবে না। পক্ষান্তরে ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে মরহুম বলা যাবে। কারণ ‘মরহুম’ শব্দটি প্রার্থনামূলক বাক্য ‘রাহিমাহুল্লাহ (আল্লাহ তার ওপর রহম করুন)’—এর সমার্থবোধক। আর যেহেতু ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বলে প্রার্থনা করা সিদ্ধ, সেহেতু মৃত ব্যক্তিকে ‘মরহুম’ বলা যাবে।
আমরা উক্ত দুটি সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, কেউ যদি মরহুম বলার মাধ্যমে ‘রহমতপ্রাপ্ত বেহেশতবাসী’ উদ্দেশ্য করে, তাহলে মরহুম বলা না-জায়েজ। পক্ষান্তরে কেউ যদি মরহুম বলার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য রহমতের দু‘আ উদ্দেশ্য করে, তাহলে মরহুম বলা জায়েজ। উল্লেখ্য যে, ‘রহমতপ্রাপ্ত’ হলো মরহুম শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ। কিন্তু মরহুম শব্দের আরেকটি প্রসিদ্ধ অর্থ আছে। আর তা হলো—মৃত, প্রয়াত, লোকান্তরিত, পরলোকগত প্রভৃতি। যেমন মু’জামুর রা’ইদ নামক আরবি অভিধানে বলা হয়েছে, “মরহুম মানে মৃত (مرحوم : ميت)।” অনুরূপভাবে মু‘জামুল গনী নামক আরবি অভিধানে বলা হয়েছে, “মরহুম মানে মৃত, প্রয়াত, পরলোকগত (المرحوم السيد..: المتوفى، الميت، الفقيد)।” [আল-মা‘আনী ডিকশনারি থেকে গৃহীত]
তাই কেউ যদি মরহুম বলার দ্বারা ‘মৃত’ উদ্দেশ্য করে, তাহলে তার জন্য মরহুম বলা জায়েজ। আমাদের জানামতে, দেশীয় পরিমণ্ডলে ‘মরহুম’ শব্দের যে বহুল প্রচলন রয়েছে, তা মূলত ‘মৃত’ অর্থেই। তবে কেউ যদি এর দ্বারা দু‘আ উদ্দেশ্য করেন, তাহলে তা খুবই ভালো। আর কেউ যদি ‘রহমতপ্রাপ্ত বেহেশতবাসী’ উদ্দেশ্য করেন, তাহলে তা না-জায়েজ হবে, যা ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...