Sunday 31 December 2023

প্রশ্ন : নববর্ষ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন আদান প্রদান কি বৈধ ?

 




উত্তর : না, এসব অনুমোদিত নয়। এগুলো জায়েযও নেই।

দেখুন: الإجابات المهمة فى المشاكل الملحة আল ইজাবাতুল মুহিম্মাহ ফিল মাশাকিলিল মুলিম্মাহ। পৃ: ২২৯

এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তি “অভিনন্দন নিষিদ্ধ” মর্মে বক্তব্যকে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এর কারণ অনেক। কিছু নিম্নে প্রদত্ব হল।

(১) এ অভিনন্দন কর্মটি বৎসরের এমন একটি দিনে সম্পাদিত হবে যা প্রতি বৎসর বার বার ফিরে আসবে। ফলে একে অন্যান্য উদযাপন যোগ্য দিনের সাথে গণ্য করা হবে অথচ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকটির বিবেচনায় নববর্ষে অভিনন্দন মুবারকবাদ বিনিময়কে নিষেধ করা হবে।

(২) এটি ইয়াহুদী-নাসারাদের স্বাদৃশ্যাবলম্বন | অথচ আমাদেরকে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহুদীরা হিব্রু (Hebrwe) বর্ষের শুরুতে যা (تسري) তাশরী নামক মাসে শুরু হয়, একে অপরকে অভিনন্দন জানায়। শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাশরী (تسري) হচ্ছে ইয়াহুদীদের প্রথম মাস। শনিবারের ন্যায় এদিনও যাবতীয় কাজ-কর্ম হারাম আর নাসারা (খৃষ্টান) রা ঈসায়ী বর্ষের শুরুতে পরস্পর অভিনন্দন আদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।

(৩) এর মাধ্যমে অগ্নিপূজক এবং আরব্য মুশরিকদের স্বাদৃশ্যাবলম্বন এবং তাদের অনুকরণ করা হয়। অগ্নিপূজকরা নওরোজ তথা তাদের শুরু বর্ষে অভিনন্দন বিনিময় করত। নওরোজ অর্থ হচ্ছে-নতুন দিন। আর জাহেলী যুগের আরবরা মুহররম মাসের প্রথমদিনে নিজ রাজাদেরকে মুবারকবাদ জানাত। আল্লামা কাযভীনী র. স্বীয় কিতাবু আজায়েবুল মাখলুকাত

এমনিটিই বর্ণনা করেছেন। দেখুন : الأعياد وأثرها على المسلمين আল আ’ইয়াদ ওয়া আছরুহা আলাল মুসলিমীন। ড. সুলাইমান আল সুহাইমী

(৪) নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দনকে বৈধতা প্রদান করা প্রকারান্তরে এ জাতীয় অনেক দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের রাস্তা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া। যেমন শিক্ষা বর্ষের সূচনা উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস অনুরূপ অনেক দিবস যা নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন জায়েয মর্মে মত প্রদান কারীরাও বলেনি। বরং এসকল দিবসে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার দাবি নববর্ষে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার চেয়েও জোরালো কেননা নবী কারীম ও সাহাবাদের যুগে এসব দিবসে অভিনন্দন প্রচলনের কার্যকারণ অনুপস্থিত ছিল আর নববর্ষ উপলক্ষে ছিল বিদ্যমান।

(৫) অভিনন্দনকে বৈধ বলে রায় দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাতে অনেক ব্যাপকতা ও সুযোগ প্রদান করা। যার কারণে মোবাইল ফোনে চিঠির আদান প্রদান, ভিউ কার্ডের আদান-প্রদান যদিও তারা একে অভিনন্দন বার্তা বলে থাকে। বেড়ে যাবে এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে, মিডিয়া তথা স্যাটেলাইট চ্যানেল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও বিশেষ আয়োজন করা হবে। বরং এক পর্যায়ে এসে অভিনন্দন জানানোর জন্যে ভ্রমণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে এটি কোন অলীক কাহিনি নয় বরং বিশ্বের কোন কোন রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ যদি এসব করে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এগুলো তাদের স্বভাবে পরিণত হয় তাহলে যারা এসকল (বাড়াবাড়ী পূর্ণ) কাজ করে আর নিষেধ করতে পারবে না। সুতরাং অভিনন্দনের রাস্তা বন্ধ করাই সংগত।

(৬) নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদানের মূলত কোন অর্থ নেই। কারণ অভিনন্দনের মূল অর্থতো হচ্ছে নতুন কোন নিয়ামত অর্জিত হওয়া বা কোন ক্ষতিকর জিনিসকে প্রতিহত করতে পারা এবং আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ অভিনন্দন বিনিময় করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি হিজরি বর্ষ শেষ হওয়ার মাধ্যমে কী নিয়ামত অর্জিত হল? বরং অধিক যুক্তিযুক্ত ও সংগত হচ্ছে, একটি বৎসর জীবন থেকে চলে গেল। বয়স কমে গেল মৃত্যু ঘনিয়ে আসল এসব নিয়ে চিন্তা করা এবং শিক্ষা গ্রহণ করা।

আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিদায়ি বর্ষের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরকে অভিনন্দন জানায় অথচ তাদের শত্রু তাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তখন তারা নিজেদের কি দিয়ে অভিনন্দিত করবে?

এসব দিক বিবেচনা করা আমরা বলব, অভিনন্দন- মুবারকবাদ নববর্ষ উপলক্ষে নিষিদ্ধ হওয়ারই দাবি রাখে এবং এটিই সঠিক যুক্তি সংগত। যদি কেউ আপনাকে এ উপলক্ষে অভিনন্দন জানায় আপনার উচিত হবে তাকে বুঝানো ও নসিহত করা। কারণ পাল্টা অভিনন্দন জানানো এবং প্রকার এর বৈধতাকে স্বীকার করে না।

সালামের আদান-প্রদানের উপর একে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা হলে, এটি হবে একটি অসংলগ্ন কাজ।

তবে বিষয়টি যেহেতু ইজতেহাদী তাই খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করা ঠিক হবে না। ইজতেহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন ইনকার নেই।

والله أعلم وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.

সূত্র-নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের বিধান

লেখক : শায়খ আলাভী বিন আব্দুল কাদির সাক্কাফ

অনুবাদ : ইকবাল হোসাইন মাসুম

সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার

ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

থার্টিফার্স্ট নাইট ইসলামী সংস্কৃতি নয়



▬▬▬▬✪💠✪ ▬▬▬▬

সারাবিশ্বে চলছে এখন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মহোত্সব। বছরের নানা দিন নানান দিবসের ছলনায় যুবক-যুবতীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয় এর মাধ্যমে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সমাজ। থার্টিফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন’স ডে, এপ্রিল ফুল ইত্যাদি বিভিন্ন নামে বছরজুড়ে যে উত্সব পালন করা হয় তার প্রধান টার্গেট মুসলিম সমাজের যুবক-যুবতীরা। এসব উত্সবের মধ্যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, নগ্নতা ও ধোঁকাবাজিসহ সচ্চরিত্র নষ্ট করার সব আয়োজন থাকে ব্যাপকভাবে। এসব অপসংস্কৃতি মূলত ভোগবাদী পশ্চিমা দেশ থেকে আমদানি করা। থার্টিফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ বরণ উত্সব এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আড়ম্বরতার সঙ্গে উদযাপিত হয়। প্রথমে পশ্চিমা বিশ্বে চালু হলেও মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি ও গ্লোবাইলাইজেশনের জোয়ারে বিশ্বের আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে এটি ব্যাপৃত হয়েছে। বাংলাদেশেও বিগত ১০ বছর যাবত ইংরেজি বর্ষবরণ খুব জোরেশোরে উদযাপিত হচ্ছে এবং এটি দিন দিন ডালপালা ছড়িয়ে মহীরুহে পরিণত হচ্ছে।

✪ এক.

আসলে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন একটি অপসংস্কৃতি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার জন্য ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শেষ রাত অবধি থাকে নানা ধরনের আয়োজন। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের মধ্যে থাকে গভীর রাতে নর-নারীরা রাস্তায় নেমে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ব্যাপক উদোম নৃত্য, নাইটক্লাবে গিয়ে নগ্ন ড্যান্স, মদ পান করে মাতলামি ও বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক অশ্লীল কর্মের ব্যাপক আয়োজন। থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা। কপোত-কপোতির মাঝে চলে দীর্ঘ চুম্বনের কঠিন প্রতিযোগিতা। থার্টিফার্স্ট নাইটে বল্গাহীন আনন্দে গা ভাসাতে সব যুবত-যুবতী একাকার হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। ব্যাপক হৈ-হুল্লোড়-চিত্কার, নানান তালের বাদ্য-বাজনা ও ধ্বনি দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। মোবাইল, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যমে একে অপরকে বিভিন্ন ধরনের গ্রিটিংস বা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন হোটেল, পতিতালয়, পানশালা, নাচঘর, ক্লাবঘর, নাইটক্লাব সেজে উঠে নতুন সাজে। তারা সবাই যেন করজোড়ে ডাকছে—‘চলে এস মোর ভুবনে, মেতে উঠ নব আনন্দে’।

✪ দুই.

থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে গিয়ে অন্যের কোনো ডিস্টার্ব হলো কিনা এসবের কোনো তোয়াক্কা নেই উত্সবকারীদের মাঝে। অন্যের ঘুম কিংবা অসুস্থতা এসবের ভ্রূক্ষেপ করার সময় যে তাদের নেই। এটি এমন এক অপসংস্কৃতি যা অন্যের সতীত্বকে কেড়ে নেয়। নারী, মদ ও বল্গাহীন অশ্লীলতা না হলে যেন নববর্ষ উদযাপনের ষোলকলা পূর্ণ হয় না। অপসংস্কৃতির এই জোয়ার এখন আর পশ্চিমা দেশে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ বাংলাদেশেও আছড়ে পড়েছে। প্রতি বছর এই রাতকে সামাল দিতে র্যাব-পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। কখন কার ইজ্জত লুণ্ঠন হবে এই ভয়ে সবাই থাকেন তটস্থ! বেশ কয়েক বছর আগে ঢাবির টিএসসিতে বাঁধন নামের এক মেয়ের ইজ্জত নিয়ে বিকৃত রুচির কিছু যুবক মেতে ওঠে অসভ্য আনন্দে। এরপর থেকে প্রত্যেক বছরই টিএসসি তো বটেই, রাজধানীর নানা স্থানে নানা অঘটনের মধ্য দিয়েই এ রাতটি উদযাপিত হয়।

✪ তিন.

যে উত্সব অন্যের পবিত্রতা কেড়ে নেয়, কেড়ে নেয় মানুষের ঘুম ও স্বস্তি, যে উত্সবকে শান্তিপূর্ণ রাখতে আর্মি-পুলিশ ও র্যাবকে নিয়োগ দিতে হয় সেটি আর যাই হোক কোনো ভালো উত্সব হতে পারে না। যারা উত্সবের কথা বলে অন্যের ইজ্জত ও সতীত্ব কেড়ে বিকৃত আনন্দে মেঠে উঠতে পারে তারা আর যা-ই হোক কোনোভাবেই সভ্য হতে পারে না। কোনো সভ্য মানুষ অন্যের অধিকার নষ্ট করে নিজের বিকৃত সুখ মেটাতে পারে না। ইসলাম ধর্ম এ ধরণের অপসংস্কৃতিকে সাপোর্ট করে না। ইসলামের কোনো আনন্দ উত্সবে অন্যের অধিকার নষ্ট হয় না। বরং ইসলামের উত্সবের মধ্যে রয়েছে নিজেকে উত্সর্গ করে অন্যকে আনন্দ দেয়ার সব ধরনের আয়োজন। এটিই পশ্চিমা সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে বড় তফাত। ইসলামী উত্সবকে কেন্দ্র করে র্যাব-পুলিশকেও তটস্থ হতে হয় না। সবকিছুই হয় শান্তিপূর্ণভাবে। অশান্তি সৃষ্টি করে কোনো উত্সবই ইসলাম বৈধ মনে করে না।

✪ চার.

কোনো মুসলিম যুবক-যুবতী অমুসলিমদের মতো নিজেদের অপসংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিতে পারে না। কেননা অমুসলিমদের ওইসব আনন্দ ফুর্তিতে তাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ওটাই তাদের সংস্কৃতি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওটাই তাদের ধর্ম। কিন্তু একজন মুসলমানের রয়েছে ধর্মীয় নির্দেশনা। যে নির্দেশনার আলোকে প্রত্যেক মুসলমান চলতে বাধ্য। আনন্দ-ফুর্তি করা যাবে কিন্তু তা অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। মদ, জুয়া, জিনা-ব্যভিচার ও কোনো ধরনের অশ্লীলতা ইসলাম সহ্য করে না। অন্যের আনন্দ কেড়ে নিজে আনন্দ করাকে ইসলাম পছন্দ করে না।

✪ পাঁচ. 

মুসলমান হিসেবে একজন ব্যক্তির বছর শেষে অনুশোচনা করা উচিত। আমি বিগত বছর কীভাবে কাটালাম, কতগুলো পাপ ও অন্যায় করলাম—এই হিসাব কষা উচিত। আমার ভালো কাজের চেয়ে যদি মন্দ কাজের পরিমাণ বেশি হয় তার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে আগামী দিনে সুন্দর কর্মের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা দরকার। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের হায়াত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই নির্ধারিত জীবন থেকে আমার একটি বছর ঝরে গিয়ে আমি মৃত্যুর দিকে একধাপ এগিয়ে গেলাম। আমি কী করে মৃত্যুর কাছাকাছি এসে এত আনন্দ-ফুর্তি করি? একবারের জন্য হলেও এটি মনে করা উচিত। আমরা একজন ফাঁসির আসামির দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখি, তিনি নির্দিষ্ট দিনের জন্য অপেক্ষা করেন এবং তওবা-ইস্তেগফার করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হন। অথচ আমরা ওই একই পথের পথিক হয়েও পরপারে পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি না নিয়ে বিকৃত আনন্দে মেতে ওঠি!

পরিশেষে বলব, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে অবশ্যই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করতে হবে। কোনো রকম বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে লালন করা যাবে না। অপসংস্কৃতির মধ্যে আছে হারানোর মর্মবেদনা; পাওয়ার নেই কিছুই। যে আনন্দ অন্যের অধিকার, শান্তি, সুখ ও সতীত্বকে কেড়ে নেয় সেসব সংস্কৃতিকে আমরা ধিক্কার জানাই। আর যেসব উত্সব-আনন্দ অন্যকে কোনো রকম কষ্ট না দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ধনী-গরিব সবাইকে আনন্দ দিতে পারে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। সব সুস্থ ও সুন্দর সংস্কৃতির বিকাশ হোক, এই প্রজন্মের নর-নারীর কাছে এই প্রত্যাশাই করছি ইংরেজি নববর্ষের শুরুতে। আল্লাহ সবাইকে কল্যাণ করুন। আমীন।

------------------------------------

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস:আমার দেশ অনলাইন। 

সংগ্রহে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

নববর্ষ আরবি হোক, বা বাংলা হোক, বা ইংরেজি, তা পালন করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে কয়েকজন যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানের বক্তব্য নিম্নরূপ—




১. সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন,

من مر ببلاد الأعاجم فصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.

“যে ব্যক্তি (অগ্নিপূজক) পারসিকদের দেশে গমন করে, অতঃপর তাদের নওরোজ (নববর্ষ) ও মেহেরজান (উৎসবের দিবস) পালন করে, আর তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং এ অবস্থাতেই মারা যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার হাশর তাদের সাথেই হবে।” [বাইহাক্বী, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২৩৪; গৃহীত: ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ), আহকামু আহলিয যিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ১২৪৮; ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুমাল্লাহ) হাদীসটিকে সাহীহ বলেছেন]

·

২. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ليس من السنة أن نحدث عيدا لدخول السنة الهجرية أو نعتاد التهاني ببلوغه.

“হিজরী নববর্ষের আগমন উপলক্ষে উৎসব করা কিংবা নববর্ষের দিবস উপলক্ষে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানানোর রীতি চালু করা সুন্নাহ বহির্ভূত কর্ম।” [আদ্ব-দ্বিয়াউল লামি‘, পৃষ্ঠা: ৭০২; গৃহীত: sahab.net]

·

৩. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: إذا قال لي شخص كل عام وانتم بخير فهل هذه الكلمة مشروعة في هذه الأيام؟

الجواب: لا. ليست بمشروعة، ولا يجوز هذا.

প্রশ্ন: “যদি কোনো ব্যক্তি আমাকে বলে, ‘সকল বছরে আপনি ভালো থাকুন’, তাহলে এই (নববর্ষের) দিনগুলোতে এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা কি শরিয়তসম্মত হবে?”

উত্তর: “না, এই শব্দগুচ্ছ শরিয়তসম্মত নয়। এটি অবৈধ, না-জায়েজ।” [আল-ইজাবাতুল মুহিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ২৩০; গৃহীত: sahab.net]

·

৪. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,

لا تجوز التهنئة بالسنة الهجرية الجديدة، لأن الاحتفاء بها غير مشروع.

“হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে মুবারকবাদ জানানো জায়েজ নয়। কেননা নববর্ষকে অভ্যর্থনা জানানো শরিয়তসম্মত নয়।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ২০৭৯৫; গৃহীত: sahab.net]

·

স্মর্তব্য যে, ইসলামী শরিয়ত মুসলিমদের জন্য স্রেফ দুটি ‘ঈদ (উৎসব) নির্ধারণ করেছে। তাই এই দুই উৎসব ব্যতীত অন্য কোনো উৎসব পালন করা মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ মাদীনাহ’য় পৌঁছে দেখতে পান যে, সেখানকার অধিবাসীরা দুইটি দিন (নওরোজ ও মেহেরজান) খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এই দুটি দিন কীসের?’ তারা বলে, ‘জাহেলি যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি উত্তম দিন দান করেছেন। আর তা হলো, ‘ঈদুল আদ্বহা (কোরবানীর ‘ঈদ) এবং ‘ঈদুল ফিত্বর (রোজার ‘ঈদ)’।” [আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪; সনদ: সাহীহ]

আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে দুটি দিবস নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যে দুটি দিবসে তারা উৎসব পালন করবে। রাসূল ﷺ তো বলতে পারতেন যে, তোমাদের দুই দিন থাক। সাথে এই দুটিও নাও। কিন্তু তিনি তা বলেননি। কারণ ইসলাম এসেছে জাহেলিয়াতকে অপসৃত করতে। ইসলাম চায় জাহেলিয়াতের অপনোদন। ইসলাম আর জাহেলিয়াত কখনো এক হতে পারে না। এ হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মুসলিমদের জীবনে এই দুটি দিবস ছাড়া অন্য কোনো দিবস থাকতে পারে না। সুতরাং নববর্ষ পালন করা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। [ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আলী বিন আদাম আল-আসয়ূবী (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু সুনানিন নাসাঈ (যাখীরাতুল ‘উক্ববা ফী শারহিল মুজতাবা); খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা: ১৫৩-১৫৪; দারু আলি বারূম, মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·

অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

Tuesday 26 December 2023

৩০ জন মহিলা সাহাবির নাম


অনেকেই নারী সাহাবীদের নামে মেয়ে সন্তানের নাম রাখতে চান। এটা প্রশংসনীয়। সাহাবীরাও জেনেবুঝে সাহাবীদের নামে তাঁদের সন্তানদের নাম রাখতেন। ৩০ জন নারী সাহাবীর নাম দেয়া হলো। আপনারা চাইলে নিজেদের সন্তান, আত্মীয়-স্বজনদের সন্তানের জন্য প্রস্তাব রাখতে পারেন।

১। রুমাইসা (রুমাইসা বিনতে মিলহান রা.)

২। নুসাইবা (নুসাইবাহ বিনতে কা’ব রা.)  

৩। ফারিয়াহ (ফারিয়াহ বিনতে আসয়াদ রা.)

৪। আনিসা (আনিসা বিনতে তালহা রা.)

৫। আতিকা (আতিকা বিনতে যায়িদ রা.)

৬। লুবাবা (লুবাবা বিনতে হারিস রা.)

৭। নাফিসা (নাফিসা বিনতে উমাইয়্যা রা.)

৮। জুয়াইরিয়া (জুয়াইরিয়া বিনতে আবি জাহেল রা.)

৯। সাওদা (সাওদা বিনতে জাম’আ রা.)

১০। উমামা (উমামাহ বিনতে আবিল আ’স রা.)

১১। তামিমা (তামিমাহ বিনতে ওয়াহাব রা.)

১২। বারাকাহ (বারাকাহ বিনতে ইয়াসির রা.)

১৩। খাওলা (খাওলা বিনতে হাকিম রা.)

১৪। আরওয়া (আরওয়া বিনতে কুরাইজ রা.)

১৫। জামিলা (জামিলাহ বিনতে সা’দ রা.)

১৬। সুহাইলাহ (সুহাইলাহ বিনতে মাসউদ রা.)

১৭। খালিদা (খালিদাহ বিনতে হারিস রা.)

১৮। সাবিয়াহ (সাবিয়াহ আসলামিয়া রা.)

১৯। লুবনা (লুবনা বিনতে সাওয়ার রা.)

২০। আফরা (আফরা বিনতে উবাইদ রা.)

২১। সালমা (সালমা বিনতে উমাইস রা.)

২২। মাইমুনা (মাইমুনা বিনতে হারিস রা.)

২৩। মারিয়া (মারিয়া কিবতী রা.)

২৪। সুমাইয়া (সুমাইয়া বিনতে খুববাত রা.)

২৫। শিফা (শিফা বিনতে আব্দিল্লাহ রা.)

২৬। আসমা (আসমা বিনতে উমাইস রা.)

২৭। শায়মা (শায়মা বিনতে হারিস রা.)

২৮। বুশরা (বুশরা বিনতে সাফওয়ান রা.)

২৯। লাইলা/লায়লা (লাইলা বিনতে মিনহাল রা.)

৩০। রুফাইদা (রুফাইদা আল আসলামিয়া রা.)

[এই ত্রিশজন সাহাবীর নাম অনেকেই রাখেন, কিন্তু বেশিরভাগই জানেন না যে এগুলো সাহাবীর নাম। এই কারণে এখানে তুলনামূলক ‘আনকমন’ ত্রিশটি নাম দেয়া হয়েছে। সাহাবীদের কমন নাম প্রায় সবাই জানেন। নাম পছন্দের পর সিদ্ধান্ত নেবার আগে আশেপাশের কোনো আলেমের কাছ থেকে অর্থ জেনে নিবেন।]

আরো পড়ুন :


Saturday 16 December 2023

বাংলাদেশে ৩৪৫টি সালাফী আকিদার মাদ্রাসার নাম ও ঠিকানা ও ফোন নাম্বার

 বাংলাদেশে ৩৪৫টি  সালাফী আকিদার মাদ্রাসার নাম ও ঠিকানা ও ফোন নাম্বার নিচে দেওয়া হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।  🌹🌹

.

▌আপনার সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে অনেক মাদ্রাসার ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়াও যেকোন সময় ভর্তি নিতে পারেন। সন্তানকে আলেম ও হাফেজ বানানোর প্রস্তুতি নিন ইন শা আল্লাহ

.

▌অবশ্যই সালাফী আকিদা মাদ্রাসায় ভর্তি করাবেন যেন শিরিক বিদআত মুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞানের আলেম ও হাফেজ তৈরি হতে পারে ইনশাআল্লাহ।

.

▌ঢাকা জেলা:

১। মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া

ঠিকানা – ৭৯/ক , উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-১২০৪। ফোনঃ ০১৭৩২৬৭৫৩৮৫, ০১৭২০১১৩১৮০

২। দারুল হুদা আল-জামি'আহ আল-ইসলামিয়াহ আমতলা রোড, বাহির টেংরা, সারুলিয়া, ডেমরা, ঢাকা। ফোনঃ +880 1689-194286

৩। বিসাল ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসা। পরিচালনায়ঃ মুহাম্মদীয়া আরবীয়া মাদ্রাসা কমিটি।

(হোল্ডিং নং-৭৯/গ/২) মহল্লাঃ ডেমরা রোড, বিবির বাগিচা(৩নং গেটের পুর্ব পাশ), ওয়ার্ড নং-৪৮, থানাঃ যাত্রাবাড়ী, ঢাকাঃ১২০৪, ফোনঃ01758789958

৪। দোলেশ্বর ইসলামিয়া ও হাফিজিয়া মাদরাসা।ফোনঃ +880 1761-558197

৫। মাদরাসা দারুস সুন্নাহ মিরপুর, ঢাকা। ফোনঃ 01795315440, 01962705452 (শাইখ আব্দুর নূর মাদানী)

৬। শরীফবাগ কামিল মাদ্রাসা, ধামরাই, সাভার, ঢাকা। ০১৮১৮৩৪০১২৩

৭। উম্মুল ক্ববুরা মাসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্স। গোড়াবন, মুকসুদপুর, দোহার, ঢাকা- ১৩৩৩। 01711036980, 01914401493, 01302604654

৮। আসসাআদাত ইন্টারন্যাশনাল মডেল মাদ্রাসা, কাজীবাড়ী, উত্তরখান ঢাকা ১২৩০। ০১৭৮৭৬১১৪২২। (এটা শাইখ সাইফুউদ্দিন বেলাল মাদানী কর্তৃক পরিচালিত)

৯। মাদ্রাসাতুল হাদিস, ৯৪ কাজী আলাউদ্দিন রোড(নাজির বাজার), ঢাকা। ফোনঃ ০১৯৫৩৫৭০২৩৮, ০১৭২৬-৯৪২৮৫১, ০১৯২৪-৮৯৬৭৯০।

১০। দারুল হাদিস সালাফিয়া মহিলা মাদ্রাসা। পূর্ব মাদারটেক শরিফবাগ রোড, ঢাকা ১২১৪। ০১৭১৮৭৫৫৩৫৫ (শাইখ আমানুল্লাহ বিন ইসমাইল মাদানী মাদ্রাসার সভাপতি)

১১। দারুল হাদিস সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসা ও ইয়াতীমখানা। ৭৯/এ বিবির বাগিচা ৪নং গেট উত্তর যাত্রাবাড়ী। ঢাকা ১২০৪। ফোনঃ 01819507854, 01947782403

১২। আমিরুন নেসা ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট। দক্ষিনখান, উত্তরা শাখা, ঢাকা। বালক/ বালিকা। আবাসিক/অনাবাসিক। 

01915210309, 01780427232, 01707210309   (এটা শাইখ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম আল মাদানী কর্তৃক পরিচালিত)

১৩। আলহাজ রাহীমুল্লাহ মোল্লা মাদরাসা ও এতিমখানা। বারাইদ, বাড্ডা, ঢাকা ১২১২। 01799642919, 01728737166

১৪। ধামালকোট মুহাম্মাদীয়া মাদরাসা। এ্যারাবিক ও জেনারেল। আবাসিক/অনাবাসিক/ডে-কেয়ার/ফুল টাইম। ১৬৭/এ ধামালকোট (কাঁচা বাজার সংলগ্ন) থানা: ভাষানটেক, ঢাকা ক্যান্টঃ, ঢাকা-১২০৬। 01910001243, 01709-068082

১৫। মারকাযুল উলূম সালাফিয়া মহিলা মাদরাসা ও এতিমখানা। শরীফবাগ উত্তর-পশ্চিমপাড়া ধামরাই, ঢাকা ১৩৫০। +880 1865-475513, 01624427965

১৬। আয়েশা দারুল হাদীস মাদরাসা। ১৩২, আয়েশা জামে মসজিদ (মসজিদ বাড়ী), পূর্ব কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। 01951670843, 01770991336

১৭। মাদ্রাসা দারুস সুন্নাহ। পল্লবী, ব্লক= ধ, মিরপুর সাড়ে এগারো, মুসলিম বাজারের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে। 01726828065

১৮। মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া। পশ্চিম ভাষাটেক, (মিরপুর ১৪) 01999954154, 01676547968

১৯। দারুত তাওহীদ আইডিয়াল মাদরাসা। ৫৩/১, পুরান পল্টন লেন, ঢাকা। 01580799860, 01404311522, 01855525150

২০। আত তাওহীদ মহিলা মাদ্রাসা। বাসা ১৭, রোড১৭, ব্লক সি, সেকশন১২। পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা। 01715205453 

২১। দারুল হুসা আল-জামিআহ আল-ইসলামিয়া। 

ডেমরা। ঢাকা।

Sunday 23 July 2023

আপনি জানেন কি, শিয়ারা কেন হুসাইন রা. এর প্রতি এত দরদ দেখায়?

 


অবাক করা তথ্য!

আপনি জানেন কি? শিয়ারা কেন হুসাইন রা. এর প্রতি এত দরদ দেখায়?

▬▬▬◈◈◈▬▬▬

শিয়া সম্প্রদায় কেন আলী রা. এর ছেলেদের মধ্যে কেবল হুসাইন রা. এর এত গুণগান করে এবং তার প্রতি এত দরদ দেখায়? কখনও কি এ বিষয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছেন? কখনো কি বিস্ময়কর মনে হয়েছে বিষয়টি?

এই তথ্য জানার পরে বিশ্বের অনেক মুসলিম হোঁচট খেয়েছে, বিশেষ করে আরব দেশের শিয়ারা। এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আসুন, আলী রা. এর সন্তানদের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নি।

আলী রা. এর মোট ছেলে ছিল ১১ জন । তাদের নাম নিম্নরূপ:

১) হাসান বিন আলী বিন আবু তালিব

২) হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব

৩) মুহসিন বিন আলী বিন আবু তালিব

৪) আব্বাস বিন আলী বিন আবু তালিব

৫) হেলাল বিন আলী বিন আবু তালিব

৬) আব্দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব

৭) জাফর বিন আলী বিন আবু তালিব

৮) উসমান বিন আলী বিন আবু তালিব

৯) উবায়দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব

১০) আবু বকর বিন আলী বিন আবু তালিব

১১) উমর বিন আলী বিন আবু তালিব

আপনি কি কখনও দেখেছেন, শিয়াদের পতাকায় ‘ইয়া হাসান’,‘ইয়া মুহসিন’ ‘ইয়া আব্বাস’…বা তাঁর অন্য কোন ছেলের নাম লেখা আছে? না কখনও নয়। আমরা দেখি নি।

তাহলে প্রশ্ন হল, কী করণে শুধু ‘ইয়া হুসাইন’ লেখা হয়? কেন সাহায্য প্রার্থনা করা হয় কেবল হুসাইন রা. এর কাছে? অথচ হাসান ও হুসাইন রা. সহোদর ভাই, তাদের উভয়ের মা ফাতেমা রা., উভয়ের পিতা আলী রা., উভয়েই আলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত!!

Saturday 22 July 2023

মাহরাম ও নন মাহরাম সম্পর্কীত ১০টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর যে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ



▬▬▬🌐🔰🌐▬▬▬

আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কিছু মানুষ তারা মাহরাম না কি মাহরাম নয়- এ ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই সংশয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়। তাই এখানে এ জাতীয় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর একত্রিত করা হল যেগুলো বিভিন্ন সময় আমার কাছে করা হয়েছিলো।

🔶 মাহরাম কাকে বলে?

 মাহরাম বলা হয় ঐ সকল পুরুষ অথবা নারীকে যাদেরকে স্থায়ীভাবে বিবাহ করা হারাম-চাই তা নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে হোক অথবা দুগ্ধপান করার কারণে হোক অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হোক।

❒ ১) চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো এবং খালাতো ভাই-বোনের সন্তানরা মাহরাম নয়:

প্রশ্ন: চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো ও খালাতো ভাই ও বোনের মেয়েরা কি আমার জন্য মহারাম?

উত্তর: 

যেখানে স্বয়ং চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো এবং খালাতো ভাই-বোনরাই মাহরাম নয় সেখানে তাদের সন্তানদের মাহরাম হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ তারা সম্পর্কের দিক দিয়ে আরও নিম্ন স্তরের।

মোটকথা, চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো এবং খালাতো ভাই কিংবা বোনের মেয়েরা ছেলের জন্য এবং ছেলেরা মেয়েদের জন্য মাহরাম নয় বরং তাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ। সমাজে যদিও এদেরকে ভাগ্নে/ভাগ্নি বা ভাতিজা/ভাতিজি বলা হয় কিন্তু তারা যেহেতু আপন ভাই ও বোনের সন্তান নয় সেহেতু তারা মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে না।

এ কথা স্বত:সিদ্ধ যে, আলী বিন আবি তালিব রা. তার চাচাতো ভাই নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা রা. কে বিয়ে করেছিলেন।

❒ ২) খালা মাহরাম কিন্তু চাচী মাহরাম নয়:

প্রশ্ন: আমি জানি যে, চাচী মাহরাম নয়। সুতরাং ভাতিজাকে চাচীর স্পর্শ করা বৈধ নয়। আর খালার ক্ষেত্রে উল্টো হুকুম। আমি কি ঠিক বলেছি?

উত্তর: আপনি ঠিক বলেছেন। খালা মাহরাম কিন্তু চাচী মাহরাম নয়। 

সুতরাং চাচী-ভাতিজার মাঝে পর্দা রক্ষা করা ফরজ এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একে অপরকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। তবে খালা মা’র মতই মাহরাম। সুতারাং খালা-ভাগিনার মাঝে পর্দা রক্ষা করা আবশ্যক নয়।

❒ ৩) চাচী মাহরাম নয়-সুতরাং  ভাতিজার সাথে চাচীর বিবাহ বন্ধন বৈধ:

প্রশ্ন: চাচীর সাথে কি বিবাহ জায়েয?

আশুরার দিন 'শোক' বা 'কালো দিন' নয় বরং বিজয় ও কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন:



হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্য, আশুরার দিন আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী বনী ইসরাইলকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তাগুত নিজেকে 'সুউচ্চ রব' দাবীদার অহংকারী শাসক ফেরাউন এবং তার বিশাল সেনাবাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে মুসা আলাইহিস সালাম সে দিন রোযা রেখেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিন রোযা রেখেছেন এবং তার উম্মতকে রোযা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

সুতরাং নি:সন্দেহে এ দিনটি শত্রুর উপর বিজয় ও আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন।

হ্যাঁ, ইতিহাসের এক ক্রান্তি লগ্নে ৬১ হিজরির এ দিনে হুসাইন রা. নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। এতে নি:সন্দেহে মুসলিম বিশ্ব ব্যথিত ও মর্মাহত। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, সাহাবীদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। যেমন: হুসাইন রা. এর পিতা ৪র্থ খলীফা আলী রা., ৩য় খলীফা উসমান রা, মুসলিম জাহানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. প্রমূখ সাহাবীগণের নির্মম ও হৃদয় বিদারক হত্যাকাণ্ড, বীরে মাউনার ঘটনায় ৭০জন হাফেজে কুরআন সাহাবীর নির্মম হত্যাকাণ্ড, ওহুদের প্রান্তরে ৭০জন সাহাবীর শাহাদত বরণ....ইত্যাদি অসংখ্য ঘটনা।

সুতরাং কারো নিহত হওয়া বা শাহাদাত বরণের দিনকে যদি 'শোক ও কালো দিবস' হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তাহলে উপরের সবগুলো দিনকেই ধরতে হয়। কিন্তু ইসলামে 'কালো দিবস' বা 'শোক দিবস' বলে কিছু নেই। কেননা যারা আল্লাহর জন্য জীবনকে সমর্পণ করে তারা কখনো শোকে হতবিহবল হয় না, তারা কোনও দিনকে 'কালো দিন' মনে করে না। ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ-শাহাদাত বরণ অতি গৌরবের, সফলতার এবং প্রতিটি মুমিন জীবনের এক পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়।

সুতরাং আসুন,

শিয়াদের কণ্ঠে কণ্ঠ না মিলেয়ে

এবং তাদের দেখানো অভিশপ্ত রাস্তায় না চলে

মিথ্যার উপর সত্যের বিজয়ের দিনে...

ফেরাউনের মত তাগুতের পতনের দিনে...

মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলের আনন্দের দিনে...

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে...

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের অংশ হিসেবে আশুরার সিয়াম পালন করি এবং এর মাধ্যমে আমাদের পূর্বের এক বছরের গুনাহ মোচনের জন্য চেষ্টা করি।

নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।আমীন।

-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি

Friday 21 July 2023

মুহররম মাসের ১০ তারিখ বা আশুরা সম্পর্কে ভুল ধারনা দূর করন-



#আশূরার সাথে হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের কোন সম্পর্ক নেই। হুসাইন (রাঃ) মৃত্যু ৬১ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর মৃত্যুর ৫০ বছর পরে।

৬১ হিজরির ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা অনেক উন্নীত করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর ব্যাপারে এ শুভ সংবাদ প্রদান করে গেছেন যে, তারা হবেন জান্নাতের যুবকদের নেতা। আর এ কথা চির সত্য, যে যত বড় মর্যাদা লাভ করে তাকে তত বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:

হুসাইন রা. এর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে শয়তান মানুষের মধ্যে দুটি বিদআত আবিষ্কার করল। একটি হল, আশুরার দিন শোক ও কান্নাকাটি করার বিদআত। যে দিন শরীরে আঘাত করা, চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, পিপাষার্ত থাকা, মর্সিয়া পালন ইত্যাদি কার্যক্রম করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় বরং এ দিন পূর্বপুরুষদেরকে গালাগালি করা হয়, তাদের উপর অভিশাপ দেয়া হয় এবং এমন সব লোকদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয় যারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী নয় এবং হুসাইন রা. এর মৃত্যু সংক্রান্ত এমন সব কাহিনী বয়ান করা হয় যেগুলো অধিকাংশই মিথ্যা এবং বানোয়াট।

#তাহলে আশুরায় আমরা কি করবো?

সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন—

❝কেউ চাইলে পুরো মহরম মাস, অথবা মহরম মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রাখতে পারে। [১] তবে এই মাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো দশ তারিখের রোজা। আশুরার (মহরম মাসের দশ তারিখের) রোজা রাখলে বিগত এক বছরের (ছোটো) গুনাহ মোচন করা হয়। [২] তবে ইহুদিদের বিরোধিতা করার জন্য দশ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন রোজা রাখা সুন্নাত। কেননা ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে।

Monday 17 July 2023

হুসাইন রা. এর শাহাদাত এবং আশুরার শোক পালন প্রসঙ্গে এক ঝলক



▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃

▐ ▌ মুহাররম মাসের দশ তারিখ আশুরার দিন হিসেবে পরিচিত। ৬১ হিজরির ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা অনেক উন্নীত করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর ব্যাপারে এ শুভ সংবাদ প্রদান করে গেছেন যে, তারা হবেন জান্নাতের যুবকদের নেতা। আর এ কথা চির সত্য, যে যত বড় মর্যাদা লাভ করে তাকে তত বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। 

عَنْ سَعْد بن أبي وقاص رضي الله عنه قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ , أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلاءً ؟ قَالَ : الأَنْبِيَاءُ , ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ , فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ , فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلاؤُهُ , وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ , فَمَا يَبْرَحُ الْبَلاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ . صححه الألباني في السلسلة الصحيحة (143) .

সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, মানব জাতির মধ্যে কে সব চেয়ে বেশি পরীক্ষা ও বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন?

 তিনি বললেন, নবীগণ, তারপর আল্লাহর নেককার বান্দাগণ। তারপর অন্যদের মধ্যে যারা যে পরিমাণ ঈমান ও পরহেযগারিতার অধিকারী তারা সে পরিমাণ পরীক্ষা সম্মুখীন হয়েছেন। মানুষ তার দীনদারী অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। কেউ যদি মজবুত দ্বীনের অধিকারী হয় তবে সে বেশি পরিমাণ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। আর কারো দ্বীনদারীতে কমতি থাকলে তার বিপদাপদ কম আসে এবং পরীক্ষাও কম হয়। মুমিন বান্দা যতদিন পৃথিবীতে চলা ফেরা করে ততদিন তার উপর বিপদাপদ পতিত হতে থাকে এবং এভাবে তার আর কোন গুনাহ বাকী থাকে না।” (মুসনাদ আহমদ ও তিরমিযী হা/২৩৯৮, হাসান। সিলসিলা সহিহা, হা/১৪৩)

আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের এই মর্যাদা পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছেন। ইসলামের মর্যাদা নিয়েই তারা দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা সহকারে তারা প্রতিপালিত হয়েছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংস্পর্শ, স্নেহ-মমতা, আদর ও ভালবাসা পেয়ে তাদের জীবন সৌভাগ্য মণ্ডিত হয়েছে। যার কারণে মুসলমানগণ তাদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন।

Friday 14 July 2023

তাওহীদ কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি?



তাওহীদ শব্দটি (وحد) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ কোন জিনিসকে একক হিসাবে নির্ধারণ করা। ‘না’ বাচক ও ‘হ্যাঁ’ বাচক উক্তি ব্যতীত এটির     বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ একককৃত বস্ত ব্যতীত অন্য বস্ত হতে কোন বিধানকে অস্বীকার করে একককৃত বস্তর জন্য তা সাব্যস্ত করা। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলব, “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই” একথার সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন ব্যক্তির তাওহীদ পূর্ণ হবে না। যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য প্রদান করবে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সকল বস্ত হতে উলুহিয়্যাতকে (ইবাদত) অস্বীকার করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করবে। কারণ শুধুমাত্র নাফী বা ‘না’ বাচক বাক্যের মাধ্যমে কোন বস্তকে গুণাগুণ থেকে মুক্ত করা হয়। আর শুধুমাত্র ‘হ্যাঁ’ বাচক বাক্যের মাধ্যমে কোন বস্তর জন্য কোন বিধান সাব্যস্ত করলে সেই বিধানে অন্যের অংশ গ্রহণকে বাধা প্রদান করে না। যেমন উদাহরণ স্বরূপ যদি আপনি বলেন, ‘অমুক ব্যক্তি দাঁড়ানো’। এই বাক্যে আপনি তার জন্য দন্ডায়মান হওয়াকে সাব্যস্ত করলেন। তবে আপনি তাকে দন্ডায়মান গুণের মাধ্যমে একক হিসাবে সাব্যস্ত করলেন না। হতে পারে এই গুণের মাঝে অন্যরাও শরীক আছে। অর্থাৎ অমুক ব্যক্তির সাথে অন্যান্য ব্যক্তিগণও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর যদি বল, “যায়েদ ব্যতীত আর কেউ দাঁড়ানো নেই” তবে আপনি দন্ডায়মান হওয়াকে শুধুমাত্র যায়েদের সাথে সীমিত করে দিলেন। এই বাক্যে আপনি দন্ডায়মানের মাধ্যমে যায়েদকে একক করে দিলেন এবং দাঁড়ানো গুণটিকে যায়েদ ব্যতীত অন্যের জন্য হওয়াকে অস্বীকার করলেন। এভাবেই তাওহীদের প্রকৃত রূপ বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ নাফী (না বোধক) ও ইছবাত (হ্যাঁ বোধক) বাক্যের সমন্বয় ব্যতীত তাওহীদ কখনো প্রকৃত তাওহীদ হিসাবে গণ্য হবে না। মুসলিম বিদ্বানগণ তাওহীদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

১)      তাওহীদুর্‌ রুবূবীয়্যাহ

২)      তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ

৩)      তাওহীদুল আসমা অস্‌ সিফাত

   কুরআন ও হাদীছ গভীরভাবে গবেষণা করে আলেমগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাওহীদ উপরোক্ত তিন প্রকারের মাঝে সীমিত।

প্রথমতঃ তাওহীদে রুবূবীয়্যার বিস্তারিত পরিচয়ঃ

   সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক হিসাবে বিশ্বাস করার নাম তাওহীদে রুবূবীয়্যাহ্‌।

১- সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্বঃ আল্লাহ একাই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ

) هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالاَرْضِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ (

“আল্লাহ ছাড়া কোন স্রষ্টা আছে কি? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই।” (সূরা ফাতিরঃ ৩) কাফিরদের অন্তসার শুন্য মা’বূদদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে আল্লাহ বলেন,

 )أَفَمَنْ يَخْلُقُ كَمَنْ لاَ يَخْلُقُ أَفَلاَ تَذَكَّرُوْنَ(

“সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?” (সূরা নাহলঃ ১৭) সুতরাং আল্লাহ তাআ’লাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি সকল বস্ত সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআ’লার কর্ম এবং মাখলুকাতের কর্ম সবই আল্লাহর সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। তাই আল্লাহ তাআ’লা মানুষের কর্মসমূহও সৃষ্টি করেছেন্ত একথার উপর ঈমান আনলেই তাকদীরের উপর ঈমান আনা পূর্ণতা লাভ করবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

Friday 30 June 2023

রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার

১. খাদীজাহ বিনতে খুওয়াইলিদ (রাঃ) (خَدِيْجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ): হিজরতের পূর্বে মক্কায় নাবী কারীম (সাঃ)-এর পরিবারের সদস্য ছিলেন তাঁর প্রথমা পত্নী খাদীজাহ (রাঃ)। বিবাহের সময় নাবী কারীম (সাঃ)-এর বয়স ছিল পঁচিশ বছর এবং খাদীজাহ (রাঃ)-এর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। তাঁর জীবদ্দশায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অন্য কাউকেও বিবাহ করেন নি। নাবী কারীম (সাঃ)-এর সন্তানাদির মধ্যে ইবরাহীম ছাড়া পুত্র কন্যাদের সকলেই খাদীজাহ (রাঃ)-এর গর্ভে জন্মলাভ করেন। পুত্র সন্তানগণের মধ্যে কেউই জীবিত ছিলেন না, কিন্তু কন্যা সন্তানগণ সকলেই জীবিত ছিলেন। তাঁদের নাম হচ্ছে যথাক্রমে, যায়নাব, রোকাইয়্যা, উম্মু কুলসুম এবং ফাত্বিমাহ (রাঃ)। যায়নাব (রাঃ)-এর বিবাহ সম্পন্ন হয় তাঁর ফুফাত ভাই আবুল আস বিন রাবীর সঙ্গে হিজরতের পূর্বে। রোকাইয়্যা এবং উম্মু কুলসুম (রাঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন (একজনের পর অন্য জন) উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গে। ফাত্বিমাহ (রাঃ)-এর বিবাহ সম্পাদিত হয় আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে, বদর এবং উহুদ যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে। ফাত্বিমাহ (রাঃ)-এর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন হাসান ও হুসাইন, যায়নাব এবং উম্মু কুলসুম (রাযি.)। এটি একটি বিদিত বিষয় যে, উম্মতবর্গের তুলনায় তাঁর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল এ রকম যে, আল্লাহর দ্বীনের খুঁটিনাটি প্রচারার্থে চারটিরও অধিক পত্মীগ্রহণের জন্য তিনি আদিষ্ট হয়েছিলেন। এ প্রেক্ষিতে যে সকল মহিলার সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তাঁদের সংখ্যা ছিল এগার জন। এদের মধ্যে নাবী কারীম (সাঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত জীবিত ছিলেন নয় (৯) জন। নাবী কারীম (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন দু’জন। এ দু’জন ছিলেন খাদীজাহ (রাঃ) এবং উম্মুল মাসাকীন যায়নাব বিনতে খুযায়মাহহ (রাঃ)। অধিকন্তু, আরও দু’জন মহিলার সঙ্গে নাবী কারীম (সাঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন কিনা সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে একটি ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এ দু’জনকে নাবী কারীম (সাঃ)-এর নিকট বিদায় করা হয় নি। নাবী কারীম (সাঃ)-এর পবিত্র বিবিগণ (রাযি.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনা করা হল। ২. সাওদাহ বিনতে যাম’আহ (রাঃ) (سَوْدَةُ بِنْتُ زَمْعَةَ): খাদীজাহ (রাঃ)-এর মৃত্যুর কয়েক দিন পর নুবওয়াতের দশম বর্ষ শাওয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাওদাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাবী কারীম (সাঃ)-এর সঙ্গে বিবাহের পূর্বে সাওদাহ (রাঃ) তাঁর চাচাত ভাই সাকরান বিন আমরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর কারণে তাঁকে বৈধব্য বরণ করতে হয়েছিল। সাওদাহ (রাঃ) ৪৫ হিজরীতে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। ৩. আয়িশাহ সিদ্দীকা বিনতে আবূ বাকর (রাঃ) (عَائِشَةُ بِنْتُ أَبِيْ بَكْرِ الصِّدِّيْق): আয়িশা (রাঃ)-এর সঙ্গে নাবী কারীম (সাঃ) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন একাদশ নবুওয়াত বর্ষের শাওয়াল মাসে। অর্থাৎ সাওদাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে বিবাহের এক বছর পর এবং হিজরতের দু’ বছর পাঁচ মাস পূর্বে। ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর। অতঃপর হিজরতের সাত মাস পর প্রথম হিজরীর শাওয়াল মাসে তাঁকে বিদায় জানানো হয়। সে সময় তাঁর বয়স হয়েছিল নয় বছর। তিনি কুমারী। আয়িশাহ (রাঃ) ছাড়া আর অন্য কোন স্ত্রীকেই তিনি কুমারী অবস্থায় বিবাহ করেন নি। আয়িশাহ (রাঃ) ছিলেন নাবী কারীম (সাঃ)-এর সব চাইতে প্রিয়পাত্রী অধিকন্তু, নাবী পত্মীগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সব চাইতে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতী। তিনি ৫৭ বা ৫৮ হিজরীর ১৮ রামাযান মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাক্বী’তে দাফন করা হয়। ৪. হাফসাহ বিনতে উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) (حَفْصَةُ بِنْتُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّاب): তিনি ছিলেন বিধবা তাঁর পূর্ব স্বামীর নাম ছিল খুনাইস বিন হুযাফাহ, (রাঃ) বদর এবং উহুদ যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। খুনাইসের মৃত্যুর পর হাফসাহ (রাঃ) ইদ্দত শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সঙ্গে তৃতীয় হিজরীর শা’বান মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হাফসাহ (রাঃ) হিজরীর শা’বান মাসে মদীনায় ইনতিকাল করেন এবং তাঁকে বাক্বী’ কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।br ৫. যায়নাব বিনতে খুযায়মাহ (রাঃ) (زَيْنَبُ بِنْتُ خُزَيْمَةَ): এ মহিলার সম্পর্ক ছিল বনু হিলাল বিন আমরে বিন সা’সাহ গোত্রের সঙ্গে। মিসকীনদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য, দানশীলতা ও সহানুভূতিশীল হওয়ার কারণে তার পদবী হয়েছিল উম্মুল মাসাকীন। তাঁর প্রথম স্বামী ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন জাহশ।

Tuesday 27 June 2023

আরাফা দিবসে বেশী বেশী দুআ

আরাফা দিবসে বেশী বেশী দুআ করা কাম্য। ***********----------------------************" দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর সমস্ত দুআই করুন। তন্মধ্যে এই যিকরটি: لا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ» (حسن، رواه الترمذي). হে মহান আল্লাহ! আমাদের প্রকৃত মুমিন হওয়ার তৌফিক দান করো। হে আল্লাহ্! আমাদের ছোটো বড় গুনাহ্ মাফ করো। হে আল্লাহ্! আমাদের আমল সমূহ কবূল করো। হে আল্লাহ্! আমাদের তোমার মনোনিত দ্বীন ইসলাম ঐ ভাবে বুঝার ও ঐ ভাবে আমল করার তৌফিক দিও যেভাবে বুঝেছিলেন তোমার হাবীব নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার একনিষ্ঠ সঙ্গীগণ। হে আল্লাহ্! ফেত্নার যুগে তুমি আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করো, যে পথে ছিলেন নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শুহাদা ও নেক মুমিনগণ। হে আল্লাহ্! তুমি জগতের মুসলিমদের তাওহীদ বুঝার ও তার প্রতি আমল করার তৌফিক দান করো। হে আল্লাহ্! তুমি আমাদের ইলম, রুজি ও আমলে বরকত দাও। হে আল্লাহ্! আমাদের হালাল রোজগারের তৌফিক দান করো এবং হারাম থেকে দূরে রাখো। হে আল্লাহ্! আমাদের সন্তানদের হেদায়েত দাও তাদের অন্তরে ইসলামের ঈমানের ভালোবাসা দাও এবং তাদের নেক বানাও। হে আল্লাহ্! আমাদের বৃষ্টি দাও। তোমার রহমত থেকে বঞ্চিত করো না। হে আল্লাহ্! আমাদের প্রিয়জন, আত্মীয় স্বজন, পূর্বসূরি যাঁরা মারা গেছেন, আল্লাহ্ তুমি তাদের ক্ষমা করো। বিশেষ করে আমাদের পিতা ও মাতার উপর রহম কর যেমন তারা ছোটবেলায় আমাদের উপর রহম করে ছিল। হে আল্লাহ্! আমাদের অসুস্থদের সুস্থতা দান করো। হে আল্লাহ্! আমাদের গীবত, চুগলি, আপস দ্বন্দ্ব ইত্যাদি থেকে হেফাজতে রাখো। হে আল্লাহ্! আমাদের অজ্ঞতা ও পাপের কারণে আমাদের পাকড়াও করি ও না। হে মহান আরশের মালিক, আকাশ জমিনের মালিক, কেয়ামত দিবসের মালিক! আমাদের ক্ষমা করে দাও, তোমার রহমতে ঢেকে দাও, তোমার সুরক্ষায় স্থান দাও, জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দাও, তোমার আরশের নিচে, তোমার নবীর সান্নিধ্যে, তোমার একান্ত প্রিয় বান্দাদের সাথে। আমীন ইয়া রাব্বিল আলামীন ইয়া আরহামার রহিমীন। Shaykh Abdur Raquib Bukhari Hafizahullah

Tuesday 25 April 2023

হেযবুত তওহীদ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা

প্রসঙ্গ : ‘হেযবুত তওহীদ’ ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা!


‘হেযবুত তওহীদ’ বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ভয়ংকর পথভ্রষ্ট ধর্মীয় সংগঠন। ২০০৮ সালে সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার (সুত্র:উইকিপিডিয়া)। ১৯৯৫ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়ার গ্রামের পন্নী পরিবারের সন্তান মোহাম্মাদ বায়াজিদ খান পন্নী (১৯২৫-২০১২ খ্রি.) দলটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রাজনীতিক, শিকারী ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। প্রথম যৌবনে তিনি এনায়াতুল্লাহ মাশরেক্বী (১৮৮৮-১৯৬৩ খ্রি.)-এর বৃটিশবিরোধী ‘খাকসার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংস্রব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরিবিলি জীবন-যাপন শুরু করেন। এক সময় তার ধারণা হয় যে, বর্তমান ইসলাম বিকৃত ইসলাম। এজন্য তিনি মানুষকে ‘প্রকৃত ইসলাম’-এর পথ দেখাতে দলটির সূচনা করেন। বর্তমান যুগে একশ’ বিশ কোটি মুসলমানের মধ্যে কেবল তার অনুসারী ‘পাঁচ লক্ষ’ মানুষকে তিনি ‘প্রকৃত মুসলমান’ মনে করেন (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১১)। তিনি নিজেকে এই যুগের ইমাম বা এমামুয্যামান হিসাবে দাবী করেন। এই দলের অনুসারীদের বিশ্বাস হ’ল, বায়াজিদ খান পন্নীকে আল্লাহ বর্তমান যুগে সমগ্র মানবজাতির ত্রাতা হিসাবে পাঠিয়েছেন (হিজবুত তওহীদের গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৩)।

তাদের মতে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর একশত বছরের মধ্যেই ইসলাম বিকৃত হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ তেরশ’ বছর এই উম্মাহকে (হেযবুত তওহীদের) এই পবিত্র কর্মসূচি থেকে মাহরুম, বঞ্চিত রাখার পর আল্লাহ তাঁর অসীম করুণায় তাঁর দেয়া কর্মসূচির পরিচয় মাননীয় এমামুয্যামানকে বোঝার তাওফীক দিয়েছেন (ঐ, পৃ. ৬৯, ৭১)।

Thursday 6 April 2023

ফিরে এলো রামাযান কিন্তু আমরা কখন ফিরবো?

 

লেখকঃ আব্দুর রাকীব বুখারী মাদানী হাফিঃ।


আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিহিল কারীম, আম্মা বাদ।
আমাদের মাঝে প্রতি বছরে রামাযান মাস আসে আর চলে যায়। আগমনের সাথে সাথে মুসলিম সমাজে ও মুসলিম পরিবারে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।
-দেখা যায় মসজিদের কাতারে নামাযীর আধিক্য।
-আযানের সাথে সাথে বেশ কিছু লোকের মসজিদে আগমন।
-এবং তারাবীহর নামায আদায়ের জন্য ছোট-বড় অনেক লোকের মসজিদে অপেক্ষা।
দেখা যায় কিছু লোকের পরিধানে পরিবর্তন।
-সুন্দর পাঞ্জাবী ও টুপি, যা তারা অন্য দিনে খুব কমই গায়ে দেয় কিন্তু এই মাসে প্রায় সময় তাদের শরীরে এই রকম লেবাস সজ্জা পায়।
দেখা যায় বিনোদনে পরিবর্তন।
-যারা অন্য দিনে আশঙ্কামুক্ত হয়ে টেলিভিশন, নেট, ফেসবুক ও মোবাইলে গান-বাজনা সহ অন্যান্য হারাম বিনোদনে লিপ্ত থাকতো, তারা অনেকে এই মাসে অনেকটা সংযত হয়ে যায়।
-অনেকে টেলিভিশনের ক্যাবেল সংযোগ কেটে দেয়, মোবাইলের রিং টোন পাল্টে দেয় এবং এই রকম আরো অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
দেখা যায় বাড়ির ভিতরের পরিবেশে পরিবর্তন।
অনেকের বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসতে শুরু করে কুরআন তেলাওয়াতের সুর।
মহিলারা মাথায় ঘোমটা টেনে গুণ গুণ সুরে পড়তে থাকে কুরআন মজীদ।
অনেকের টেপ রেকোর্ডার ও ডি.ভি.ডি. প্লেয়ারে গানের বদলে বাজতে লাগে কারী সাহেবের তিলাওয়াত নচেৎ গজল ও ইসলামী সঙ্গীত।
দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সাধুত্ব।
অন্য দিনে যারা দুধে পানি মিশ্রণ করে বিক্রি করত, কলাই, গম এবং সরিষায় পাথরের কুচি মিশ্রণ করে মালের ওজন বৃদ্ধি করত, মুদিখানার বিভিন্ন সামগ্রীতে বিভিন্ন কিছু মিক্চার করে বিনা দ্বিধায় গ্রাহকের হাতে তুলে দিত, তারা অনেকে এই মাসে এইসব অসাধু কাজে লাগাম দিয়ে এক মাসের জন্য সাধু ব্যবসায়ী হওয়ার চেষ্টা করে।
দেখা যায় বদান্যতা। অনেক মুসলিম ভাইর হাত এই মাসে প্রশস্ত হয়ে যায়।
তাই কেউ কাপড়-চপড় বিতরণ করে,
কেউ মসজিদ মাদ্রাসায় দান-খয়রাত করে
এবং কেউ যাকাত বের করে। যার ফলে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে চাঁদা আদায়কারীর সংখ্যাও বেড়ে যায়।
দেখা যায় ধুমপায়ী ও নেশাখোর ব্যক্তিদের সংযত হতে।
তাই দিনের বেলায় তাদের বিড়ি-সিগারেট টানতে দেখা যায় না,
হাতে খয়নি ডলে তাতে ফুৎকার দিতে দেখা যায় না।

Thursday 19 January 2023

আক্বীদার স্পর্শকাতরতা এবং তা অনুধাবনে আমাদের অক্ষমতা:

আব্দুর রাকীব বুখারী-মাদানী হাফিজাহুল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ: 

সম্মানিত পাঠকমন্ডলী! মুসলিম জীবনে আক্বীদা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার সারমর্ম হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের এমন কিছু বিষয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি। অর্থাৎ ইসলামের বিশ্বাসগত বিষয়াদিকে আক্বীদা বলা হয়, যা মূলত: ছয়টি বিষয়ের সমষ্টি। ১- মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। ২-মহান আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস। ৩-মহান আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ গ্রন্থাদির প্রতি বিশ্বাস। ৪-মহান আল্লাহ প্রদত্ত রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস। ৫-শেষ দিন তথা কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস। ৬-ভাগ্য এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস এবং এ সবের আনুসাঙ্গীক বিষয়াদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নাম হচ্ছে আক্বীদা। 

আক্বীদার সম্পর্ক অন্তরের সাথে যা, দেখার বা মাপ করার বাহ্যত কোন যন্ত্র নেই। তবে মানুষ যা বিশ্বাস করে, যা আস্থা রাখে, তার ফলাফল সাধারণত: তার কথা ও কাজে ফুটে উঠে। তাই মানব সমাজ যাকে উপাস্য বিশ্বাস করে, সে তার উপাসনা করে। অর্থাৎ তার এই বিশ্বাসটি যদিও তার অন্তরের ব্যাপার কিন্তু তার ফলাফল তার উপাসনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু জগতের মানুষ মুমিন এবং মুশরিক দুই দলে বিভক্ত। এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু মানুষ ভাল ও মন্দ দুই ভাগে বিভক্ত। মানব সমাজ বাহ্যত দেখতে একই রকমের হলেও এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু জগতবাসীর মধ্যে পার্থক্য ও তফাৎ বিরাজমান।

আক্বীদার স্পর্শকাতরতার উদাহারণ: 

১-ইসলামী আক্বীদার মৌল বিষয়াদির একটি হচ্ছে, আল্লাহর প্রেরিত রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এর বহু দিক রয়েছে তন্মধ্যে ধরুন: যে সব নবীগণের নাম কুরআনে উল্লেখ হয়েছে সে সমস্ত নবীগণকে তাঁদের নাম সহ বিশ্বাস করা। এ মর্মে যে, তারা সকলে নবী এবং রাসূল ছিলেন। আর যে সব নবীদের নাম বর্ণনা হয়নি সে সব নবীগণকে সাধারণভাবে বিশ্বাস করা যে, কুরআনে উল্লেখিত নবীগণ ছাড়াও আরোও যে সমস্ত নবী এই ধরাধমে এসেছিলেন আমরা তাদেরকেও নবী হিসাবে বিশ্বাস করি। অত:পর তাদের প্রথম ছিলেন আদম আলাইহিস সালাম এবং তাদেঁর শেষ হচ্ছেন প্রিয়নবী মুহাম্মদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এখন যদি কেউ বলে, আমি এ সকল নবীগণের প্রতি বিশ্বাস রাখি শুধু এতটুকু ছাড়া যে, শেষ নবী মুহাম্মদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি শেষ নবী আমি এটা বিশ্বাস করি না; বরং শেষ নবী আরো কেউ হতে পারে, তাহলে সে আর মুসলিম হতে পারে না। এটাই ইসলামের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখানে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা লক্ষণীয়। সে সবকিছুর প্রতি বিশ্বাস রাখার পর শুধু এই বিশ্বাস পরিত্যাগ করায় ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে গেল। এমন নয় যে, সে কোনো পাপ করল বরং এটি অমার্জনীয় অপরাধ।

এখানে এতটুকু আক্বীদার বিচ্যুতিতে বহু বড় বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে বাধ্য যা,  ইসলামের মূল উদ্দেশ্যে আঘাত হানবে এবং ইসলাম বিধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন এই বিচ্যুতির ফলে আরো নবীর আগমণের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এবং নবী মুহাম্মদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর নবুওতের ভন্ড দাবীদার প্রকাশ পাবে। তাদেরও অনেকে নবী হিসাবে স্বীকার করবে। তারাও কিছু বাণী তথা বিধান প্রনয়ণ করবে এবং সে সবকে আল্লাহর বাণী আখ্যা দিবে অথচ তা হবে ডাহা মিথ্যা। এভাবে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ হয়ে মূল উদ্দেশ্য ধ্বংস হবে। আর জগতবাসী পথহারা হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়বে। যে উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ নবী ও রাসূলগণ প্রেরণ করেছিলেন তাই ধ্বংস হয়ে যাবে।  

২-ইসলামী আক্বীদার মৌলিক বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ মর্মে বিশ্বাস রাখা যে তিনি এক। তিনিই একমাত্র সত্য উপাস্য। তিনি ছাড়া অন্যের উপাসনা নিষিদ্ধ। তিনি জগতের পরিচালক, ব্যবস্থাপক এবং নিয়ন্ত্রক। তিনি যা চান তাই হয় আর যা চান না তা হয় না। তাঁর বহু নাম ও গুণ রয়েছে যেমন তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক, ক্ষমতাবান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ইত্যাদি। এখন যদি কেউ বলে, আমি আল্লাহর সমস্ত গুণ স্বীকার করি কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না যে, তিনি বাক্যালাপ করেন, কথা বলেন। এই গুণ আমি মানি না। আমি এটা বিশ্বাস করি না। তাহলে সে আর মুসলিম থাকতে পারে না। 

প্রশ্ন করতে পারেন: কেন সে আর মুলিম থাকতে পারে না? কারণ ইসলামী বিশ্বাসে তার এতটুকু বিচ্যুতির ফলে বহু বড় বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে। যেমন, মহান আল্লাহ যদি বাক্যালাপের গুণে গুণান্বিত না হন, তাহলে কুরআন আল্লাহর বাণী বা আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হতে পারে না। আর তা না হলে কুরআন অকাট্ট প্রমাণ হতে পারে না এমনকি মর্যাদাবান গ্রন্থ ও হতে পারে না। তার তিলাওয়াতে অক্ষরে অক্ষরে সওয়াবও হতে পারে না, তা পড়তে পাক-পবিত্রতারও প্রয়োজন হতে পারে না। নবী-রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত অহী গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে কারণ তা তাদের নিজের বাণী আল্লাহর নয়, ইত্যদি। 

আর এখানেই রয়েছে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা, যা আমরা অনেকে বুঝি না বা বুঝতে চাই না।   

উল্লেখ্য, আক্বীদা ত্বহাভিয়ার ব্যাখ্যায় জাআদ বিন দিরহাম নামক এক জাহমী ব্যক্তির হত্যার ঘটনা উল্লেখ হয়েছে। সে মহান আল্লাহর বাক্যালাপ করা অস্বীকার করলে ইরাক এবং পূর্ব প্রদেশের গভর্ণর খালেদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাসরী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। কুরবানীর দিনে গভর্ণর প্রথমে খুত্ববা দেন। তারপর বলেন: “হে লোকেরা তোমরা কুরবানী করো, আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের কুরবানী কবুল করুক। আর আমি কুরবানী করতে যাচ্ছি জাআদ বিন দিরহামকে। সে বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ নবী ইবরাহীম আ: কে খলীল অর্থাৎ পরম বন্ধু বানান নি এবং তিনি মুসা আ: এর সাথে বাক্যালাপ করেন নি। একথা বলার পর তিনি মেম্মাবর থেকে নেমে সেই ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দেন। এই দন্ড সেই সময়কার তাবেঈনদের বড় বড় উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়”। [শারহুল আক্বীদা আত্বহাভিয়্যা ১/২৭৩]

৩-স্বহীহ মুসলিমে ইয়াহইয়া বিন ইয়া’মুর এবং হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান হিময়ারী দুই জন তাবেয়ীর একটি সুন্দর ঘটনা উল্লেখ হয়েছে। তারা উভয়ে হজ্জ কিংবা উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা রওয়ানা দেন। যে সময় বাসরায় তক্বদীর অস্বীকারকারী লোক প্রকাশ পেয়েছিল। তারা দুজনে মক্কায় পৌঁছানোর পর রাসূলুল্লাহর কোনো সাথী অর্থাৎ সাহাবীর সাক্ষাতের আকাংখা করেন। যেন এই কাদারী সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। ইতিমধ্যে উমার বিন খাত্তাবের পুত্র আব্দুল্লাহর সাথে তাদের মসজিদে সাক্ষাৎ ঘটে। তারা অধীর আগ্রহের সাথে তাঁর সান্নিধ্যে বসে প্রশ্ন করেন: হে আবু আব্দুর রহমান! (উব্দুল্লার উপনাম) আমাদের দিকে কিছু এমন লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা কুরআন পড়ে এবং শরীয়তের খুব সুক্ষ্ম বিষয়গুলির অনুসন্ধান করে। অত:পর বললেন: তারা মনে করে তকদীর বলে কোনো কিছু নেই। বিষয়াদি এমনি এমনি হয়ে থাকে। তখন আব্দুল্লাহ তাদের বললেন: ওদের সাথে সাক্ষাৎঘটলে তাদের বলে দিবে: আমি তাদের থেকে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ঘোষণা করছি এবং তাদের সম্পর্ক আমার থেকে বিচ্ছিন্ন। উমারের পুত্র আব্দুল্লাহ কসম খাচ্ছে, তাদের কারো নিকট যদি উহুদ পর্বত সমতুল্য স্বর্ণ থাকে আর সে তা আল্লাহর রাহে খরচ করে দেয়, তবুও আল্লাহ তার কোনো দান কবুল করবেন না; যতক্ষণে সে ভাগ্যের প্রতি ঈমান না আনে। অত:পর তিনি তাদের হাদীসে জিবরীল বয়ান করেন। [স্বহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদীস নং ৯৩] 

এখানে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা লক্ষ্য করুন, ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অঙ্গ। আর তা অস্বীকারকারী রাসূলের যুগে ছিল না। তাবেয়ীদের যুগে বাসরায় এর প্রথম প্রকাশ ঘটে। এর ফলে সেখানকার লোকেরা কত চিন্তিত ছিলেন যে, তারা মক্কায় এসে সাহাবীয়ে রাসূল খোঁজ করেন এবং সাক্ষাৎ হলে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। অত:পর সাহাবীর উত্তর এবং উত্তরের কঠোরতা লক্ষ্য করুন। কি ভাষায় এই ভ্রান্ত আক্বীদার তিনি কঠোর খন্ডন করেন এবং হুশিয়ারি দেন। 

৪-মুসলিম জামাআত হতে প্রথম বিচ্ছিন্ন ফেরকার নাম হচ্ছে, খাওয়ারিজ। তাদের বিশ্বাস যে, কাউকে ততক্ষণে মুমিন বলা যেতে পারে না, যতক্ষণে সে ইসলামের সমস্ত ওয়াজিব কাজ না করে এবং সমস্ত বড় পাপ থেকে দূরে না থাকে। তাই যদি কেউ কোনো একটি বড় পাপ করে ফেলে তাহলে সে তৎক্ষণাত ঈমান হতে বের হয়ে যায়। তাদের মন্তব্যসমূহের সারাংশ হচ্ছে, আল্লাহ এবং তার রাসূল যা আদেশ করেছেন তার সমষ্টির নাম ঈমান তা বিভক্তযোগ্য নয়। যদি ঈমানের কিছু অংশ চলে যায় তাহলে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় এবং সে ব্যাক্তি কাফেরে পরিণত হয়। [মাওসূআতুল ফিরাক আল মুন্তাসাবাহ লিল্ ইসলাম, মাকতাবা শামেলা হতে গৃহীত ৩/৫৩]

উল্লেখ্য, এটিও একটি আক্বীদা কিন্তু তা ভ্রান্ত আক্বীদা। এর ফলাফল এত মারাত্বক যে, কালিমা পাঠকারী এবং বিভিন্ন আমলকারী এক জন মুসলিমকে তারা কোনো একটি বড় পাপের ফলে ইসলাম হতে বিচ্ছিন্ন মনে করে এবং তাকে কাফির গণ্য করে। 

এই আক্বীদা কত স্পর্শকাতর বিষয় তা, খারেজীদের এই আক্বীদা থেকে অনুমান করা যেতে পারে।

৫-ইসলামের নামে আত্বপ্রকাশকারী আর এক ফেরকার নাম হচ্ছে, মুরজিয়া ফেরকা। তারা মনে করে, ঈমান কেবল আল্লাহকে বিশ্বাস করার নাম বা তার পরিচয় লাভ করার নাম। আর তাদের কেউ কেউ আবার এমনও বলেছে যে, ঈমান কেবল আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করার নাম। এর সাথে সাথে আমল করার দরকার নেই। অর্থাৎ তারা ঈমান কেবল মুখে স্বীকার করাকে মনে করে, আমল করাকে ঈমানের অংশ মনে করে না। [আল কাদারিয়া ওয়াল মুরজিয়া, নাসের আল আক্বল পৃ: ৭৭]

এটি সেই ভ্রান্ত দলের আক্বীদা। আপনি এখানে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা অনুধাবন করুন। যদি শুধু আল্লাহর পরিচয় লাভ করা কিংবা আল্লাহকে অন্তরে স্বীকার করার নাম ঈমান হয়, তাহলে এর ফলাফল দাঁড়ায় যে, ইবলিশ শয়ত্বান এবং আল্লাহর বড় শত্রু ফিরআউন ও মুমিন; কারণ ইবলিশ আল্লাহকে স্বীকার করে এবং ফেরাউন উপরে উপরে আল্লাহকে অস্বীকার করলেও অন্তরে সে আল্লাহকে বিশ্বাসকারী ছিল যেমনটি আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন। [ সূরা নামল/১৪ ] এমনকি মক্কার মুশরিকরা এবং এ যুগের হিন্দু বৌদ্ধ ও অন্যান্য গোষ্ঠিরাও মুমিন কারণ এরা সকলে আল্লাহকে স্বীকার করে, তাঁকে অন্তরে মানে। তাইতো তারা কোনো না কোনোরূপে ঈশ্বরের আরাধনা করে।

অন্তরে আল্লাহর পরিচয় এবং মুখে তা স্বীকার করাই যদি ঈমান হয়ে যায়, তাহলে স্বলাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত সহ ইসলামের বহু মৌল বিধানের কোনো প্রয়োজন থাকে না! 

৬-এবার বর্তমান যুগের কিছু লোকের আক্বীদার একটি উদাহরণ পেশ করবো। অনেকে বলে থাকে: “আল্লাহর নূরে নবী সৃষ্টি আর নবীর নূরে সারা জগত সৃষ্টি”। অর্থাৎ তারা নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহর নূর বিশ্বাস করেন। এখন আক্বীদার স্পর্শকাতরতা অনুধাবন করুন। যদি মহান আল্লাহর নূরে নবী সৃষ্টি হন, তাহলে নূরী নবী আল্লাহর অংশ হয়ে যান। অত:পর যদি নবীর নূরে সারা জগৎ সৃষ্টি হয়, তাহলে যমিন-আসমান, গাছ-গছালি, পশু-পাখি এমনকি মানব সম্প্রদায়ও নবীর নূরে সৃষ্টি হবে। ফলে কাফের মুশরিক, গরু ছাগল, কুকুর-বেড়াল এমনকি শুকরও নবীর নূরের অংশ গণ্য হবে। আর গভীরভাবে চিন্তা করলে স্পষ্ট হবে যে, পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর অংশ। কারণ আল্লাহর নূরে নবী সৃষ্টি আর নবীর নূরে জগত সৃষ্টি। ফলাফল স্বরূপ মহান আল্লাহর সত্ত্বা আর একক অদ্বিতীয় থাকে না; বরং তাঁর সত্ত্বা হতে সবকিছু সৃষ্টি হলে তাঁর সত্ত্বায় অংশী করা হয়। আর এর চেয়েও জঘন্য ফলাফল দাঁড়ায় যে, জগতের সবকিছু আল্লাহর অংশ আর এটিই তো হচ্ছে, সর্বেশ্বরবাদের কুফরি আক্বীদা!  

৭- ইসলামের মৌলিক আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, মহান আল্লাহ জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়কে তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: (আমি জ্বিন এবং ইনসানকে কেবল আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি) [যারিয়াত/৫৬] অনুরূপ ইসলামে এটিও একটি মৌল আক্বীদা যে, মহান আল্লাহ সমস্ত নবী ও রাসূলগণকে এ কারণে প্রেরণ করেছিলেন যেন, তারা জগতবাসীকে কেবল তাঁর ইবাদত করার জন্য আহব্বান করে। মহান আল্লাহ বলেন: ([হে নবী] তোমার পূর্বে আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের এটাই প্রত্যাদেশ করেছি যে, আমি ব্যতীত সত্য কোনো মাবুদ (উপাস্য) নেই তাই তোমরা সকলে আমার ইবাদত করো) [আম্বিয়া/২৫] এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহব্বান হচ্ছে, তাওহীদের আহব্বান এবং একমাত্র তাঁর ইবাদত করা হচ্ছে তাওহীদ বাস্তবায়ন করা।

এখন যদি কেউ এমন বিশ্বাস করে যে, নবী এবং রাসূলগণ পৃথিবীতে তাওহীদ নয় বরং ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে এসেছিলেন এবং এই কাজটিই ছিল তাদের বড় দায়িত্ব। আর এটিই হচ্ছে, সব ফরযের বড় ফরয। যেমন জনকৈ লেখক বলেছেন: “সব ফরযের বড় ফরয হিসেবে ইক্বামতে দ্বীনের দায়িত্বকে বুঝবার পর কারো পক্ষেই ইসলামের কতক মূল্যবান খেদমত করেই সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয়”। [ইকামতে দ্বীন, অধ্যাপক গোলাম আযম পৃ: ৩০] তাহলে এটা আক্বীদায় বিচ্যুতি নয় কি? নবী এবং রাসূলগণের প্রেরণের উদ্দেশ্যের অপব্যাখ্যা নয় কি? এটা স্পর্শকাতর বিষয় নয় কি?  তাই এই আক্বীদারও কিছু স্পর্শকাতর দিক রয়েছে যেমন উপরুল্লিখিত বিভিন্ন আক্বীদার স্পর্শকাতর দিকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নিম্নে এই বিচ্যুত আক্বীদার স্পর্শকাতর দিকগুলি অবলোকন করুন:

ক-এই আক্বীদার ফলে নবী ও রাসূলগণের মিশন তাওহীদ তথা এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহব্বান করা না হয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়ে যায় এবং তাদের প্রেরণের মুখ্য উদ্দেশ্য তাওহীদ না হয়ে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা হয়ে যায়  যা, উপরুল্লিখিত কুরআনের আয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে বিচ্যুতি। 

খ-অত:পর রাসূলগণ যদি হুকুমতে ইসলামিয়া কায়েমের জন্য এসে থাকেন, তাহলে তাদের রাষ্ট্র তৈরির জন্য প্রচেষ্টা করা হবে মৌল দায়িত্ব আর বাকি বিধান প্রচারের প্রচেষ্টা হয়ে পড়বে গৌণ কাজ। ফলে যে সমস্ত নবীগণ মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতা পান নি, তাদের মিশনের ফলাফল দাঁড়াবে, তারা তাদের মৌল দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হয়েছিলেন এবং তাদের অধিকাংশই কেবল গৌণ দায়িত্ব পালনকারী ছিলেন; অথচ সম্মানিত নাবী ও রাসূলগণের ক্ষেত্রে এমন ব্যাখ্যা একটি গর্হিত অপরাধ। আমাদের বিশ্বাস হবে যে, তারা তাদের দায়িত্বে কোনো ঘাটতি করেন নি।

গ-একজন সাধারণ মুসলিম যখন সে তার পরিসরে দ্বীনের কাজ করে, যেমন স্বলাত আদায় করে, সাউম পালন করে, যাকাত দেয়, কুরআন শিখে ও শিক্ষা দেয়, মানুষকে শিরক থেকে সতর্ক করে তাওহীদের আহব্বান করে, সন্তানদের ইসলামী তরবিয়ত দেয়, পিতা-মাতার সেবা করে, বিভিন্ন দ্বীনের কাজ করে, তখন সে যেন একগুচ্ছ দ্বীনের গৌণ কাজ করে কিন্তু মৌল কাজ ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের কোনো প্রচেষ্টা তার জীবনে নেই বলে তার এসব কাজ উপরোক্ত আক্বীদা পোষণকারীদের দৃষ্টিতে শুধু মাত্র দ্বীনের সেবা করা হিসাবে গণ্য হয়, ইকামতে দ্বীন হয় না। জনৈক লেখক বলেন: “একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, মাদ্রাসা, ওয়ায, খানকাহ ও তাবলীগ দ্বারা দ্বীনের বড় বড় খেদমত হচ্ছে। এসব খেদমতই ইকামতে দ্বীনের জন্য বিশেষ সহায়ক। কিন্তু খেদমতগুলো দ্বারা আপনা আপনিই দ্বীন কায়েম হতে পারে না”। [ইকামতে দ্বীন পৃ ৩০]

ঘ-সব ফরযের বড় ফরয যদি ইকামতে দ্বীন বা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা হয়, তাহলে বলা সঙ্গত হবে যে, আক্বীদার মূলনীতিতে বর্ণিত হয়েছে, মুসলিম ব্যক্তি তখন পূর্ণ মুমিন হয়, যখন সে ইসলামের ফরজ-ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজসমূহ সম্পাদন করে এবং হারাম ও মাকরুহ কাজগুলি পরিত্যাগ করে। কিন্তু এই প্রকার লোকেরাও তাদের দৃষ্টিতে পূর্ণ মুমিন নয়; কারণ সে সব ফরযের বড় ফরয ইকামতে দ্বীনের কাজ করে নি। ফলে, তাদের সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে তাদের কাজ-কর্ম না করলে পৃথিবীতে কেউ পাকা মুমিন হতেই পারে না!

ঙ-বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম এবং অমুসলিম দেশে বসবাসকারী মুসলিমগণ যদি তারা ইকামতে দ্বীন ছাড়া বাকি ইসলামের সকল বিধান পালন করে মারা যান; তারপরেও হয়তো তারা জান্নাতবাসী হতে পারবেন না; কারণ তারা সব ফরযের বড় ফরয ইকামতে দ্বীন পরিত্যাগকারী। আর বড় ফরযই যদি ছুটে যায়, তাহলে কেবল ছোট ফরয পালনকারী কি করে জান্নাতে যেতে পারে??

চ-তাওহীদ নয় বরং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে দ্বীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই ভ্রান্ত আক্বীদারই প্রভাব হচ্ছে, একজন নিষ্ঠাবান দাঈ যখন সে তার সমাজে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এবং নবী-রাসূলগণের মহৎ কাজ তাওহীদের প্রচার করে এবং সবচেয়ে বড় পাপ শিরক থেকে সতর্ক করে তখন, তার এই মহান কাজসমূহ ছোট কাজে পরিণত হয়। এমনকি এসব কাজকে চুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়; কারণ সে গৌণ কাজ করছে সব ফরযের বড় ফরয পালন করছে না। হয়তো এ কারণেই পৃথিবীর বহু প্রান্তে এবং বিশেষ করে সউদী আরবে যে সমস্ত দাওয়াতী অফিসের মাধ্যমে সম্মানিত দাঈগণ দ্বীনের তাবলীগ বিশেষ করে তাওহীদের প্রচার এবং শির্ক ও বিদআত হতে সমাজকে সতর্ক করার দায়িত্বে নিয়োজিত,তাদের এমন মহৎ কাজকে তারা গুরুত্ব দেয় না আর না তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন করে। বরং ভিন্নভাবে তারা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের সংগঠন করে এবং নিজ কাজকে প্রাধান্য দেয়। আর কখনও কিছুটা সমর্থন দেখা গেলে সেটা হয় সেই নিজ ইকামতে দ্বীনের সংগঠনের স্বার্থে। [এটা আমি আমার ১২ বছরের অভিজ্ঞতায় বিনা কোনো সংকোচে বলতে পারি]    

ছ-ইসলামের মূল কথা, একমাত্র মহান আল্লাহর ইবাদত নয় বরং তা হচ্ছে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা। এই বিচ্যুত আক্বীদার কারণে এই প্রকার লোকদের দৃষ্টি কেবল সরকারী কার্যকলাপ এবং রাজনীতির উপর থাকে। উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, দোকান পাটে, অফিস আদালতে এমনকি রাস্তা-ঘাটেও শুধু সরকারের সমালোচনা চলে। কারণ এমন করার মাধ্যমে তাদের মতে ইসলামী হকুমতের রাস্তা প্রশস্ত হয়। শুধু তাই নয় বরং এমন করাটা তারা ইবাদত মনে করে কারণ তাদের মতে তারা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের প্রচেষ্টা করছে। আর এটা তাদের সেই আক্বীদারই প্রভাব যে, সব ফরযের বড় ফরয ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা।

জ-একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, হরতাল, বিদ্রোহ ইত্যাদি করা বড় ইবাদত হয়ে যায়। কারণ তারা সবচেয়ে বড় ফরযের জন্য আন্দোলনকারী। এ কারণেই হয়তো তারা এসব কার্যকলাপে নিহত ব্যক্তিকে শহীদী মর্যাদা প্রদান করে; কারণ সে বড় ইবাদত করতে করতে মৃত্যু বরণ করেছে!  

ঝ-আল্লাহর রাহে খরচ করা মানে তাদের দৃষ্টিতে এক পর্যায়ে কেবল ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমকারী সংগঠনের যাবতীয় কার্যকলাপের জন্য খরচ করা হয়ে পড়ে। মিটিং, মিছিল, হরতাল এবং এসব করতে গিয়ে যেমন গাড়ি ভাড়া, চা-নাস্তা করার খরচ, ব্যানার লেখার খরচ, দেওয়াল লেখার খরচ, হোটেলের বিল, স্ট্যেজ সাজানোর খরচ ইত্যাদি কাজে ব্যায় করা আল্লাহর রাহে খরচ করার সমতুল্য হয়ে যায়। কারণ যদি একটি ফকির কিংবা মিসকিনকে দান করা ইবাদত হয়, তাহলে বড় ফরয রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য খরচ করা ইবাদত হবে না কেন? তাই এই প্রকার ভাইয়েরা সংগঠনের জন্য মাসিক চাঁদা দিতে যত আগ্রহী মসজিদ, মাদ্রাসা এবং গরিব-দু:খীকে দিতে তত আগ্রহী নয়।  

ঞ-ইসলামে দাওয়াতী নীতি, ইসলাহী নীতি এবং পরিশুদ্ধির নীতি হচ্ছে, নিজেকে দিয়ে শুরু করা। অত:পর নিজ পরিবার। তারপর স্থান, কাল এবং পাত্র ভেদে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে পরিসর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কারো আক্বীদা যদি এই হয় যে, সবচেয়ে বড় ফরয ও বড় দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা, তাহলে নিজ, নিজ পরিবার এবং নিজ পাড়া প্রতিবেশীর উপর দ্বীন কায়েম করার তুলনায় দেশে দ্বীন কায়েমের চিন্তা-ফিকির বেশী হয়। আর সে কারণে আমরা এমন ভাইদের দেখতে পাই তারা নিজ দেহে এবং নিজ পরিবারে এখনও দ্বীন কায়েম করেনি কিন্তু সে দেশে ইসলাম কায়েম নিয়ে চিন্তা করছে; বরং সারা বিশ্বে ইসলাম কায়েম নিয়ে চিন্তিত রয়েছে!


সুচিন্তাশীল পাঠক মহোদয়! হয়তো আপনারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, আক্বীদার বিষয় কতখানি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এর প্রভাব কত গভীর এবং গম্ভীর। ইসলামের ইতিহাসে খারেজী, রাফেযী, কাদারী, মুরজিয়া, মুতাযেলী বিভিন্ন বিদআতী ফেরকার আবির্ভাব আক্বীদার কোনো একটি মৌল বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়েছিল। এর ফলে তারা ইসলামী পন্ডিতগণের নিকট বিদআতী দল হিসাবে পরিচিত। আজও যদি কেউ ইসলামের মৌলিক আক্বীদা তাওহীদ তথা এক আল্লাহর ইবাদতের আক্বীদার অপব্যাখা দিয়ে দল ও সংগঠণ তৈরি করে। আর সেই দলের নবাবিষ্কৃত আক্বীদার কুপ্রভাব যদি সঠিক আক্বীদা ও আমলের উপর পড়ে এবং প্রকৃত ইসলামকে কলুষিত করে, তাহলে তারা পূর্বের ফেরকাদের মত বিদআতী ফেরকার অন্তর্ভুক্ত হবে না কি? তাদের সেই ভ্রান্ত নীতি থেকে সতর্ক করা এবং সতর্ক থাকা জরুরি নয় কি? মনে রাখা উচিৎ, আমলগত বিদআতের প্রভাব এবং আক্বীদাগত বিদআতের প্রভাব এক নয়। যেটা হয়তো অনেকটা আপনারা এই লেখায় উপলব্ধি করতে পেরেছেন। 

এ ক্ষেত্রে এমন বিচ্যুত আক্বীদার দলের সাধারণ সমর্থকদের তুলনায় এই আক্বীদার প্রবর্তক ও পন্ডিতদের দোষ অনেক বেশী। ইবনু আবিল ইয্ আল্ হানাফী বলেন: “কিছু সংখ্যক সালাফ বলেছেন: বিচ্যুত উলামাদের মাঝে ঈহুদীদের ধরণ রয়েছে। আর বিচ্যুত আবেদগণের মধ্যে খৃষ্টানদের ধরণ রয়েছে। একারণে অধিকাংশ যুক্তিবাদী দল যেমন মুতাযিলা ইত্যদির মধ্যে ঈহুদীদের সদৃশ রয়েছে। তাই ঈহুদী পন্ডিতরা মুতাযিলা পন্ডিতদের গ্রন্থ পড়ে এবং তাদের প্রশংসা করে। এভাবে মুতাযেলী পন্ডিতরা ঈহুদীদের সমর্থন করে এবং তাদের খৃষ্টানদের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর অধিকাংশ আবেদ সূফী ইত্যাদির মধ্যে খৃষ্টানদের সাদৃশ্য রয়েছে। একারণে তারা সন্যসবাদ, সর্বেশ্বরবাদ এবং অনুপ্রবেশবাদের দিকে আকৃষ্ট। এদের পন্ডিতরা যুক্তিবাদীদের অপছন্দ করে। আর তাদের পন্ডিতরা এদের নিয়ম-নীতিকে অপছন্দ করে এবং বৈরাগ্যবাদ, সামা, ওয়াজদ (সূফী সাধকদের এক প্রকার গান নাচ) ইত্যদির নিন্দায় গ্রন্থ রচনা করে যা এই সম্প্রদায় আবিষ্কার করেছে”। [শারহুল আক্বীদা আতত্বহাবিয়্যা ২/৮০১] 

লেখার শেষে একটি আবশ্যিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া জরুরি মনে করছি। প্রশ্নটি হল, তাহলে আমরা কি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করবো না? এর বিধান কি ইসলামে নেই?

আমরা বলবো, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েম করাকে দ্বীনের মৌল বিষয় মনে করা এবং দ্বীনের পরিপুরক বিষয় মনে করা দুটি ভিন্ন যিনিস। এটি দ্বীনের মূল বিষয় নয় বরং পরিপূরক বিষয়। আপনি তা কায়েমের চেষ্টা করবেন কিন্তু তাওহীদ ও ইসলামের স্তম্ভগুলি সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে। আর এর ধরণ হবে, আপনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রথমে নিজের মধ্যে, অত:পর নিজ পরিবারের মধ্যে অর্থাৎ নিজ পরিসরে তা কায়েম করার চেষ্টা করবেন। যেমনটি প্রিয় নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছিলেন। আর এভাবে সবাই নিজ পরিসরে দায়িত্ব পালন করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে ইন শা’আল্লাহ।

ওয়া স্বল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ তাসলীমান মাযীদা।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...