Friday 16 August 2019

মিউজিক হারাম হওয়ার মাসআলাহ কি ইখতিলাফী? [২য় পর্ব]


প্রাবন্ধিক: ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ‘আব্দুল ক্বাদির বিন মুহাম্মাদ আল-জুনাইদ (হাফিযাহুল্লাহ)
·
আর ইজমা‘র ব্যাপারটি হলো, মিউজিক বাজানো ও শোনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘আলিমদের মধ্যে কোনো মতদ্বৈধতা নেই। বিভিন্ন যুগ, অঞ্চল ও মাযহাবের অসংখ্য ‘আলিম ও ফাক্বীহ এ ব্যাপারে ইজমা‘ (মতৈক্য) বর্ণনা করেছেন।
আমি এ ব্যাপারে যেসব ‘আলিম কর্তৃক ইজমা‘র বর্ণনা সম্পর্কে অবগত হয়েছি, নিম্নে তাঁদের কতিপয়ের নাম সূত্র-সহ উল্লেখ করছি:
১. ইমাম মুহাম্মাদ বিন হুসাইন আল-আজুর্রী—যিনি স্বীয় যুগে মক্কার হেরেমের শাইখ ছিলেন—রাহিমাহুল্লাহ (জন্ম: ২৮০ হিজরী, ভিন্ন মতানুযায়ী ২৬৪ হিজরী)। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী প্রণীত “নুযহাতুল আসমা‘ ফী মাসআলাতিস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ২৫)।
২. শাফি‘ঈদের শাইখ ক্বাদ্বী আবূ ত্বাইয়্যিব আত্ব-ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৩৪৮ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী প্রণীত “নুযহাতুল আসমা‘ ফী মাসআলাতিস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ৬২-৬৪)।
৩. শাইখ আবূল ফাতহ সালীম বিন আইয়ূব আর-রাযী আশ-শাফি‘ঈ আল-মুক্বরি’ আল-মুহাদ্দিস (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৩৬০ হিজরীর কিছু পরে]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু হাজার আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ প্রণীত “কাফফুর রা‘আ‘ ‘আন মুহাররামাতিল লাহউয়ি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ১২৪) এবং “আয-যাওয়াজির ‘আন ইফতিরাক্বিল কাবাইর” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৩৪৭)।
৪. ইমাম হুসাইন বিন মাস‘ঊদ আল-বাগাউয়ী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৪৩৬ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে “শারহুস সুন্নাহ” গ্রন্থে (খ. ১২; পৃ. ৩৮৩)।
৫. আরব উপদ্বীপের অধিবাসীদের বিদ্বান শাইখ জামালুল ইসলাম ইবনুল বিযরী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৪৭১ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু হাজার আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ প্রণীত “কাফফুর রা‘আ‘ ‘আন মুহাররামাতিল লাহউয়ি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ১১৪) এবং “আয-যাওয়াজির ‘আন ইফতিরাক্বিল কাবাইর” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৩৪২)।
·

৬. সিরিয়াবাসীদের বিদ্বান শাইখ ক্বাদ্বী বিন আবূ ‘আসরূন ‘আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আত-তামীমী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৪৯২ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু হাজার আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ প্রণীত “কাফফুর রা‘আ‘ ‘আন মুহাররামাতিল লাহউয়ি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ১১৫)।
৭. আল-ফাক্বীহ আবূ বাকার মুহাম্মাদ বিন ওয়ালীদ আত্ব-ত্বারতূশী আল-আনদালুসী আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৫২০ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে “তাহরীমুল গিনা ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ২২৩; অনুচ্ছেদ নং: ৮৭)।
৮. ইমাম মুওয়াফফাকুদ্দীন ইবনু কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৫৪১ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা “মুগনী” গ্রন্থে (খ. ১২; পৃ. ৪৫৭) এবং ইবনু বাদরান আদ-দাশতী আল-হানাফী প্রণীত “আন-নাহয়ু ‘আনির রাক্বসি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৫৫৮)।
৯. আল-মুহাদ্দিসুল ফাক্বীহ আবূ ‘আমর ইবনুস সালাহ আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৫৫৭ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে “ফাতাওয়া ইবনিস সালাহ ফিত তাফসীরি ওয়াল হাদীসি ওয়াল উসূলি ওয়াল ফিক্বহ” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৫০০; মাসআলাহ নং: ৪৮৭)।
১০. মালিকীদের ফাক্বীহ আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘উমার আল-কুরতুবী আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৫৭৮ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ “কাশফুল ক্বানা‘ ‘আন হুকমিল ওয়াজদি ওয়াস সামা‘” (পৃ. ৭২) ও “আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি মুসলিম” (খ. ৩; পৃ. ৪০৩) এর মধ্যে এবং ইবনু হাজার আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ প্রণীত “আয-যাওয়াজির ‘আন ইফতিরাক্বিল কাবাইর” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৩৪২) ও ইবরাহীম আল-হালাবী আল-হানাফী প্রণীত “আর-রাহসু ওয়াল ওয়াক্বস লি মুসতাহিল্লির রাক্বস” গ্রন্থে (পৃ. ৭২)।
·
১১. শাইখ মাহমূদ বিন আবুল ক্বাসিম ইসফাদনার বিন বাদরান আদ-দাশতী আল-কুর্দী আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৬০৪ বা ৬০৫ হিজরী বা এ দুয়ের নিকটবর্তী সময়ে]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা “আন-নাহয়ু ‘আনির রাক্বসি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৫১১, ৫৪৬, ৫৫০, ৬৭৬, ৭২৯, ৭৪৪ ও ৩৬৭)।
১২. ইমাম আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৬৩১ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে “মাজমূ‘উল ফাতাওয়া” গ্রন্থে (খ. ২৮; পৃ. ১১৮; খ. ১১; পৃ. ৫৭৬-৫৭৭, ৫৯৭, ৬০৩)।
১৩. হাফিয আবুল ফিদা ইসমা‘ঈল বিন ‘উমার বিন কাসীর আল-ক্বারশী আদ-দিমাশক্বী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৭০০ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর একটি (প্রশ্নের) উত্তরে, যে উত্তরটি রয়েছে ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ প্রণীত “আল-কালামু ‘আলা মাসআলাতিস সামা‘” গ্রন্থের পরিশিষ্টে (পৃ. ৪৭২)।
১৪. আশ-শাইখ আল-ফাক্বীহ শিহাবুদ্দীন আযরা‘ঈ আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৭০৮ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু হাজার আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ প্রণীত “কাফফুর রা‘আ‘ ‘আন মুহাররামাতিল লাহউয়ি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (পৃ. ১২০)।
১৫. আশ-শাইখ আল-ফাক্বীহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আয-যারাকশী আল-মিসরী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭২ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা “শারহে মুখতাসারুল খিরাক্বী” গ্রন্থে (খ. ৬; পৃ. ৩৫১)।
·
১৬. হাফিয যাইনুদ্দীন আবুল ফারজ ‘আব্দুর রহমান বিন শিহাব—যিনি ইবনু রজব আল-হাম্বালী নামে প্রসিদ্ধ—রাহিমাহুল্লাহ (জন্ম: ৭৩৬ হি.)। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ “ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী” (খ. ৬; পৃ. ৮৩; হা/৯৫২ – এর পার্শ্ববর্তী আলোচনা) এবং “নুযহাতুস সাম্মা‘ ফী মাসআলাতিস সামা‘” (পৃ. ৬০ ও ২৫) এর মধ্যে।
১৭. শাইখ মুহাম্মাদ আল-বাযযাযী আল-কারদারী আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৮২৭ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু নুজাইম আল-হানাফী প্রণীত “আল-বাহরুর রা’ইক্ব শারহু কানযিদ দাক্বাইক্ব” গ্রন্থে (খ. ৭; পৃ. ৮৯) এবং ইবরাহীম আল-হালাবী আল-হানাফী প্রণীত “আর-রাহসু ওয়াল ওয়াক্বস লি মুসতাহিল্লির রাক্বস” গ্রন্থে (পৃ. ৭২ ও ৮৫)।
১৮. শাইখ আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ‘আলী বিন হাজার আল-মাক্কী আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৯০৯ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ “কাফফুর রা‘আ‘ ‘আন মুহাররামাতিল লাহউয়ি ওয়াস সামা‘” (পৃ. ১২৪) এবং “আয-যাওয়াজির ‘আন ইফতিরাক্বিল কাবাইর” (খ. ২; পৃ. ৩৪৭-৩৪৮) এর মধ্যে।
১৯. শাইখ ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ আল-হানাফী আল-মাশহূরু বিল হালাবী (রাহিমাহুল্লাহ)। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা “আর-রাহসু ওয়াল ওয়াক্বস লি মুসতাহিল্লির রাক্বস” গ্রন্থে (পৃ. ৭৫, ৮৫-৮৬ ও ৯২)।
২০. শাইখ আবূ লাইস আস-সামারক্বানদী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৬০৪ বা ৬০৫ হিজরী বা এ দুয়ের নিকটবর্তী সময়ে]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু বাদরান আদ-দাশতী আল-হানাফী প্রণীত “আন-নাহয়ু ‘আনির রাক্বসি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৫৪৮)।
·
২১. শাইখ আবুল মাহাসিন আল-হাররানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ৬০৪ বা ৬০৫ হিজরী বা এ দুয়ের নিকটবর্তী সময়ে]। যেমনটি বলা হয়েছে ইবনু বাদরান আদ-দাশতী আল-হানাফী প্রণীত “আন-নাহয়ু ‘আনির রাক্বসি ওয়াস সামা‘” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৫৪৯)।
২২. শাইখ মুহাম্মাদ আনওয়ার শাহ বিন মু‘আযযাম শাহ আল-কাশ্মীরী আল-হিন্দী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৫৩ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা “ফাইদ্বুল বারী ‘আলা সাহীহিল বুখারী” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৪৬৩)।
২৩. ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রহমান বিন ক্বাসিম আল-‘আসিমী আন-নাজমী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩১২ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা “হাশিয়াতুর রাওদ্বিল মুরবি‘” গ্রন্থে (খ. ৭; পৃ. ৩৫৭)।
২৪. ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৩০ হি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর “মাজমূ‘উ ফাতাওয়া” গ্রন্থে (খ. ৩; পৃ. ৩৯৩)।
২৫. ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী আদ-দিমাশক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৯২৪ খ্রি.]। যেমনটি বলা হয়েছে তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ “তাহরীমু আলাতিত্ব ত্বার্ব” (পৃ. ১০৫) এবং “সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহাহ ওয়া শাইউম মিন ফিক্বহিহা” (খ. ৫; পৃ. ৩৩০) এর মধ্যে।
·
মিউজিক হালাল করার অনেক অনিষ্ট, দুর্যোগ ও ক্ষতি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো:
তারা জনসাধারণের নিকট মিথ্যাচার করেছে, যখন তারা এ ধারণা করেছে যে, মিউজিকের মাসআলাহ’য় ‘আলিমগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) মতদ্বৈধতা করেছেন। তাঁদের (‘আলিমদের) কেউ কেউ এটাকে হালাল বলেছেন, আর কেউ কেউ হারাম বলেছেন। অথচ কিছুপূর্বে গত হয়ে গেল বিভিন্ন যুগ, অঞ্চল ও মাযহাবের প্রায় ২৪ জন ‘আলিমের এ কথার বর্ণনা যে, মিউজিক হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘আলিম ও ফাক্বীহগণের (রাহিমাহুমুল্লাহ) মধ্যে কোনো মতদ্বৈধতা নেই। বরং অসংখ্য ‘আলিম কোনো আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপন ব্যতিরেকেই তাঁদের ইজমা‘র কথা বর্ণনা করেছেন।
হাফিয ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, وأما استماع آلات الملاهي المطربة المتلقاة من وضع الأعاجم، فمحرم مجمع على تحريمه، ولا يُعلم عن أحد منهم الرخصة في شيء من ذلك، ومن نقل الرخصة فيه عن إمام يعتد به فقد كذب وافترى “বিজাতীয়দের উদ্ভাবনা থেকে গৃহীত বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শোনা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। ‘আলিমদের কেউ এ ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা যায় না। যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে কোনো গ্রহণযোগ্য ইমাম কর্তৃক অনুমতি আছে বলে বর্ণনা করে, সে মিথ্যা বলে এবং অপবাদ দেয়।” [ইবনু রজব আল-হাম্বালী, ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৮৩; হা/৯৫২ – এর পার্শ্ববর্তী আলোচনা]
শাইখ ইবনু হাজার আল-মাক্কী আল-হাইতামী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, الأوتار والمعازف كالطنبور والعود والصنج ـ أي ذي الأوتار ـ والرباب والجنك والكمنجة والسنطير والدريج، وغير ذلك…، هذه كلها محرمة بلا خلاف، ومن حكى فيها خلافًا فقد غلظ، أو غلب عليه هواه، حتى أصمه وأعماه، ومنعه هُداه، وزل به عن سَنن تقواه، وممن حكى الإجماع على تحريم ذلك كله الإمام أبو العباس القرطبي، وهو الثقة العدل “বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তথা তাম্বুরা, বীণা, মন্দিরা, রবাব (rubab), বেহালা, হার্প, জিথার, দিররীজ (তাম্বুরার মতো বহুতারবিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র) প্রভৃতির সবই সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে মতদ্বৈধতা রয়েছে বলে বর্ণনা করেছে, সে ভুল করেছে, অথবা তার প্রবৃত্তি তাকে পরাভূত করেছে, এমনকি তাকে কানা ও বধির করে ফেলেছে, হেদায়াত থেকে বঞ্চিত করেছে এবং তাক্বওয়ার রাস্তা থেকে বিচ্যুত করেছে। সকল বাদ্যযন্ত্র হারাম হওয়ার ব্যাপারে যাঁরা ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইমাম আবুল ‘আব্বাস আল-কুরতুবী, যিনি হলেন ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত (বর্ণনাকারী)।” [ইবনু হাজার আল-হাইতামী, কাফফুর রা‘আ‘ ‘আন মুহাররামাতিল লাহউয়ি ওয়াস সামা‘; পৃষ্ঠা: ১২৪]
নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর মু’মিন বান্দাদের কাছে মিথ্যা হলো সবচেয়ে বড়ো ও ভয়ংকর গুনাহ। আর সে অপরাধ আরও বড়ো ও ভয়াবহ হয়, যখন তা দ্বীনের মাসায়েল এবং শরিয়তের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেহেতু এর ফলে লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করা হয়, হারাম কর্মাবলির দিকে পরিচালিত করা হয় এবং সবচেয়ে বড়ো, ভয়াবহ ও কদর্য বিষয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আর তা হলো—মহান আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল বলে বিশ্বাস করা। যেমন মিউজিক শ্রবণ এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানোকে হালাল বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।
·
মিউজিক হালাল করার অনিষ্ট, দুর্যোগ ও ক্ষতির অন্তর্ভুক্ত হলো:
তাদের কারণে মুসলিমদের মধ্যে, মুসলিমদের বাড়ি, গাড়ি, আড্ডা, সাক্ষাৎ, রাস্তাঘাট ও সমগ্র দেশে এই হারাম কাজ বিস্তার লাভ করেছে এবং এর প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, ছোটোবড়ো ও নারীপুরুষ-নির্বিশেষে সবার নিকট থেকে। অথচ মানুষকে ভ্রষ্টতা, নিষিদ্ধতা ও পাপাচারিতার দিকে আহ্বান করার ব্যাপারে এবং যারা আহ্বান করে তাদের ব্যাপারে কঠিন ভর্ৎসনা, ভয়ংকর হুঁশিয়ারি ও সতর্কীকরণের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা শুনে অন্তর হয় প্রকম্পিত, আর শরীর হয় শিহরিত।
আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেছেন, مَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا “যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করে, তার ওপর সে কথার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি থেকে সামান্য পরিমাণ হ্রাস করা হবে না।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪; ‘ইলম অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ৬]
ইমাম ‘আব্দুর রহমান আস-সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) এই হাদীস উল্লেখ করার পর বলেছেন, هذا الحديث وما أشبهه من الأحاديث فيه: التحذير من الدعاء إلى الضلالة والغي، وعِظم جُرم الداعي وعقوبته “এই হাদীস এবং অনুরূপ হাদীসগুলোর মধ্যে আলোচিত হয়েছে ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তির দিকে আহ্বান করা থেকে সতর্কীকরণের বর্ণনা এবং আহ্বানকারীর ভয়াবহ অপরাধ ও পরিণামের আলোচনা।” [জাওয়ামি‘উল আখবার, হা/১০]
এ কথার সত্যায়ন রয়েছে মহান আল্লাহ’র এই বাণীতে, لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ أَلا سَاءَ مَا يَزِرُونَ “ফলে তারা কেয়ামতের দিনে নিজেদের পাপের বোঝা পুরোটাই বহন করবে এবং তাদের পাপের বোঝাও, যাদেরকে তারা অজ্ঞতাবশত পথভ্রষ্ট করে। তারা যা বহন করবে, তা কতই না নিকৃষ্ট!” [সূরাহ নাহল: ২৫] মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَعَ أَثْقَالِهِمْ وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ “আর অবশ্যই তারা বহন করবে তাদের বোঝা এবং তাদের বোঝার সাথে আরও কিছু বোঝা। আর তারা কেয়ামতের দিন অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে সে সম্পর্কে, যা তারা মিথ্যা বানাত।” [সূরাহ ‘আনকাবূত: ১৩]
সিরিয়াবাসীদের মধ্যে স্বীয় যুগে ফিক্বহ ও হাদীসের ইমাম আবূ ‘আমর আল-আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, كَتَبَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْوَلِيدِ كِتَابًا فِيهِ: وَإِظْهَارُكَ الْمَعَازِفَ وَالْمِزْمَارَ بِدْعَةٌ فِي الْإِسْلَامِ، وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ إِلَيْكَ مَنْ يَجُزُّ جُمَّتَكَ جُمَّةَ السُّوءِ “একবার ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয চিঠি লেখেন ‘উমার বিন ওয়ালীদের কাছে। তিনি তাতে লিখেছিলেন, তুমি যে বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশি প্রদর্শন করো, তা বিদ‘আত। নিশ্চয়ই আমি ইচ্ছা করেছি যে, তোমার কাছে আমি এমন কাউকে প্রেরণ করব, যে তোমার নিকৃষ্ট দলকে কর্তন করবে।” [সুনানে নাসাঈ, হা/৪১৩৫] ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সুনানে নাসাঈর টীকায় বলেছেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদের।
·
মিউজিক হালাল করার অনিষ্ট, দুর্যোগ ও ক্ষতির অন্তর্ভুক্ত হলো:
সময়ের পরিক্রমায় তারা বর্তমানে অসংখ্য (বাদ্যযন্ত্র) বাদক এবং মিউজিক শ্রোতাকে বাধা দেয় তাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তন (তাওবাহ) করতে, এই ঘৃণ্য পাপকাজ থেকে ফিরে আসতে এবং এই কদর্য কাজ ও কঠিন গুনাহকে বর্জন করতে। বিশেষত সেই ব্যক্তি এর শিকার হয়, যার অন্তর তাকে তাওবাহ’র দিকে আহ্বান করে, কিন্তু তার পার্শ্ববর্তী লোকেরা তাকে পাপকাজ চালিয়ে যেতে বলে।
বর্তমান যুগে প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া আমাদেরকে কিছু ব্যক্তির সাক্ষাৎকার ও বক্তব্যের ব্যাপারে অবহিত করেছে, যারা গান ও মিউজিক থেকে অনেক বছর আগে তাওবাহ করেছিল, কিন্তু তারা পুনরায় গানবাজনার দিকে ফিরে গেছে, এ ব্যাপারে কতিপয়ের বাতিল ফতোয়ার কারণে।
আল্লাহ তাঁর সকল বান্দার ওপর যাবতীয় গুনাহ ও পাপাচারিতা বর্জন করাকে ওয়াজিব করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ’র কাছে তাওবাহ করো, খাঁটি তাওবাহ; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত।” [সূরাহ তাহরীম: ৮]
‘উমার বিন খাত্বত্বাব ও ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-সহ আরও অনেক ন্যায়নিষ্ঠ সালাফ বলেছেন, التَّوْبَةُ النَّصُوحُ أَنْ يَتُوبَ ثُمَّ لَا يَعُودُ “তাওবাহ করার পর পুনরায় পাপকাজের দিকে ফিরে না যাওয়াই হলো খাঁটি তাওবাহ।” [তাফসীরে বাগাউয়ী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১৬৯]
যেহেতু তাওবাহকারী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া আর কেউ কল্যাণের আশা করতে পারে না, তাই মহান আল্লাহ মু’মিনদেরকে তাওবাহ করতে আদেশ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ “হে মু’মিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহ’র নিকট তাওবাহ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরাহ নূর: ৩১]
ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللهِ، فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ “হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহ’র নিকট তাওবাহ করো। কেননা আমি আল্লাহ’র নিকট প্রতিদিন একশ বার তাওবাহ করে থাকি।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৭০২; ‘জিকির’ অধ্যায় (৪৯); পরিচ্ছেদ- ১২]
মহান আল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ “আর যারা তাওবাহ করে না, তারাই তো জালেম।” [সূরাহ হুজুরাত: ১১]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এই আয়াত প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, قسَّم العباد إلى تائب وظالم، وما ثَمَّ قَسْم ثالث البتة، وأوقع اسم الظالم على من لم يتب، ولا أظلم منه، لجهله بربه، وبحقه، وبعيب نفسه، وآفات أعماله “তিনি বান্দাদেরকে দুভাগে ভাগ করেছেন—(ক) তাওবাহকারী ও (খ) জালেম। এখানে তৃতীয় কোনো প্রকার নেই। তিনি ‘জালেম’ নামটি তাদের ওপরই প্রয়োগ করেছেন, যারা তাওবাহ করে না। তার চেয়ে বড়ো জালেম কেউ নেই। যেহেতু সে স্বীয় রব ও তাঁর হক সম্পর্কে জানে না, নিজের দোষত্রুটি সম্পর্কে জানে না এবং নিজের কৃতকর্মের আপদ সম্পর্কেও জানে না।” [ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম, মাদারিজুস সালিকীন; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৯৬]
আল-ফাক্বীহ আবূ ‘আব্দুল্লাহ আল-কুরতুবী আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ولا خلاف بين الأمة في وجوب التوبة، وأنها فرض متعين “তাওবাহ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে (মুসলিম) উম্মাহ’র মধ্যে কোনো মতদ্বৈধতা নেই। তাওবাহ হলো ফরজে আইন তথা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ফরজ।” [তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড: ১২; পৃষ্ঠা: ২৩৮]
·
মিউজিক হালাল করার অনিষ্ট, দুর্যোগ ও ক্ষতির অন্তর্ভুক্ত হলো:
তারা মিউজিক হালাল করার মাধ্যমে এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ‘আলিমদের এ কর্মপন্থার বিরোধিতা করেছে যে, তাঁরা সবাই মিউজিক হারাম হওয়ার ওপর একমত ছিলেন। সুতরাং তাদের ও অন্যান্যদের জন্য মিউজিক হালাল নয়। কেননা উম্মত কখনো ভ্রষ্টতার ওপর ঐক্যবদ্ধ হবে না। আর এর বিরোধিতা করা হলো মন্দ, অকল্যাণ এবং ধ্বংস। মহান আল্লাহ ‘আক্বীদাহ, বা আমল বা বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের কর্মপন্থার বিরোধিতা করা থেকে সতর্ক করে বলেছেন, وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا “যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; কতোইনা মন্দ সে আবাস!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]
ইমাম ‘আব্দুর রহমান আস-সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন, “এই মহান আয়াত থেকে এ দলিল গ্রহণ করা হয়েছে যে, এই উম্মতের ইজমা‘ হলো হুজ্জাহ (দলিল)। আর তা ভুল থেকে সুরক্ষিত। এই দলিল গ্রহণের দিক হলো—নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত ও জাহান্নামী হওয়ার ভয় দেখিয়েছেন, যারা মু’মিনদের (অনুসৃত) পথের বিরোধিতা করে। আর মু’মিনদের পথ (سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ) হলো মুফরাদ মুদ্বাফ, যা মু’মিনদের সমস্ত ‘আক্বীদাহ ও আমলকে শামিল করে। সুতরাং যখন তারা কোনো কিছু ওয়াজিব, বা মুস্তাহাব, কিংবা হারাম, বা মাকরূহ, বা মুবাহ (বৈধ) হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত হয়, তখন সেটাই তাদের পথ। তাই এসবের কোনো কিছুর ওপর তাদের ইজমা‘ সংঘটিত হওয়ার পর যে ব্যক্তি তার বিরোধিতা করে, সে-ই মূলত তাদের পথের বিরোধিতা করে।
এর প্রমাণ হলো মহান আল্লাহ’র এই বাণী, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ “তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে।” (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১১০)
এই আয়াত থেকে দলিল গ্রহণের দিক হলো—নিশ্চয় আল্লাহ এ সংবাদ দিয়েছেন যে, এই উম্মতের মু’মিনরা স্রেফ ভালো কাজেরই আদেশ দেয়। সুতরাং তারা যখন কোনো কিছুর ওয়াজিব, বা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়, তখন সেটা তাঁদের আদেশকৃত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হয়। কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সেটা ভালো কাজ। আর ভালো কাজের পরে মন্দ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
অনুরূপভাবে তারা যখন কোনো কিছুর নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়, তখন সেটা তাদের নিষেধকৃত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হয়। সেটা মন্দ ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এর দৃষ্টান্ত হলো মহান আল্লাহ’র এই বাণী, وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاس “আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থি উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৪৩)
মহান আল্লাহ এ সংবাদ দিয়েছেন যে, এই উম্মতকে আল্লাহ মধ্যপন্থি তথা শ্রেষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ণ বানিয়েছেন। যাতে তারা মানুষের ওপর সাক্ষী হয়, সকল ক্ষেত্রে। সুতরাং তারা যখন কোনো বিধানের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ এ কাজের আদেশ করেছেন, বা এ থেকে নিষেধ করেছেন, বা এ কাজকে বৈধ করেছেন, তখন তাদের সাক্ষ্য মা‘সূম তথা ভুল থেকে সুরক্ষিত বলে গণ্য হয়। যেহেতু তারা যে ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়, সে ব্যাপারে তারা জানে এবং তারা তাদের সাক্ষ্যের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ। ফলে বিষয়টি যদি (তাদের প্রদত্ত সাক্ষ্যের) বিপরীত হয়, তাহলে এটা সাব্যস্ত হয় যে, তারা নিজেদের সাক্ষ্যের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণ নয়, এবং সে ব্যাপারে অবগতও নয়।
এর দৃষ্টান্ত হলো মহান আল্লাহ’র এই বাণী, فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ “এরপর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও।” (সূরাহ নিসা: ৫৯)
এই আয়াত থেকে উপলব্ধ হয়, যে বিষয়ে মু’মিনরা মতবিরোধ করেনি, বরং একমত হয়েছে, সে বিষয়টিকে তারা কুরআন ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যার্পণ করাতে আদিষ্ট হয়নি। আর সে বিষয়টি অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কুরআন-সুন্নাহ’র বিরোধী নয়। এ সমস্ত দলিল অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, এই উম্মতের ইজমা‘ (মতৈক্য) হলো অকাট্য দলিল।” [তাফসীরে সা‘দী, পৃষ্ঠা: ২০২]
আল-ফাক্বীহ আহমাদ বিন ‘আলী বিন বুরহান আল-বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, وحقيقته أنا رأينا السابقين من السلف الصالحين يُعْظِمون النكير، ويُشدِّدون النَّفير على من خالف إجماع الأمة قبله “এর প্রকৃতত্ব হলো, আমরা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মধ্যে যাঁরা অগ্রগামী তাঁদেরকে দেখেছি, যে ব্যক্তি তার অগ্রগামী উম্মতের ইজমা‘র বিরোধিতা করত, তাকে তাঁরা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করতেন এবং কঠিনভাবে অপছন্দ করতেন।” [আল-উসূল ইলাল উসূল, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৭৫]
আমি আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন ছোটোবড়ো ও নারীপুরুষ-নির্বিশেষে তাঁর সকল মুসলিম বান্দাকে এ সমস্ত ফতোয়া, বইপুস্তক, প্রবন্ধ ও টুইটের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। তিনি যেন তাদের মধ্যে এবং এ জাতীয় কথাবার্তার দিকে আহ্বানকারী দা‘ঈ, চ্যানেল, বইপুস্তক ও ওয়েবসাইটের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেন। আর তিনি যেন সবাইকে খাঁটি তাওবাহ করার তাওফীক্ব দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রার্থনা কবুলকারী।
·
তথ্যসূত্র:
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...