Saturday 5 October 2019

বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে খুশি হওয়া সালাফী মানহাজের অন্তর্ভুক্ত


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিরা ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি করে। তাদের দ্বারা হকপন্থি মুসলিমরা কষ্ট পায়। তাই তারা যখন মারা যায়, তখন হকপন্থি মু’মিনের হৃদয় প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ করে। আহলুস সুন্নাহ’র লোকেরা বিদ‘আতীদের মৃত্যুসংবাদ শুনে খুশি হয়। কারণ তারা এই আশ্বাস লাভ করে যে, ওই সদ্য প্রয়াত বিদ‘আতীর দ্বারা মানুষের আর বিপথগামী হওয়ার সুযোগ থাকছে না, অথবা সুযোগ থাকলেও তা অচিরেই দুর্বল ও ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে।
·
অনিষ্টকারী বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে মু’মিনের অন্তর যে প্রশান্তি লাভ করে, তা বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ক্বাতাদাহ ইবনু রিব‘ঈ আল-আনসারী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেছেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْمُسْتَرِيحُ وَالْمُسْتَرَاحُ مِنْهُ قَالَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللهِ وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وَالْبِلاَدُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ “একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পাশ দিয়ে একটি জানাযাহ নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি বললেন, সে শান্তিপ্রাপ্ত অথবা (অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ’র রাসূল, ‘শান্তিপ্রাপ্ত’ আর ‘(অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী’—এর অর্থ কী? তিনি বললেন, মু’মিন বান্দা মারা গেলে, দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহ’র রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে, তার অনিষ্ট থেকে (মুক্তি পেয়ে) সকল বান্দা, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শান্তি লাভ করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫১২; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৫০]
সালাফগণ বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিদের মৃত্যুতে খুশি হতেন। আমরা নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু দলিল পেশ করব। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।
·
১. সাহাবী ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এক খারিজী বিদ‘আতীর মৃত্যুতে খুশি হয়ে সিজদা দিয়েছিলেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, وقاتل أمير المؤمنين علي بن أبى طالب رضي الله عنه الخوارجَ، وذكر فيهم سنَّة رسول الله المتضمنة لقتالهم، وفرح بقتلهم، وسجد لله شكراً لما رأى أباهم مقتولاً وهو ذو الثُّدَيَّة “আমীরুল মু’মিনীন ‘আলী বিন ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) খারিজীদের সাথে স্বশস্ত্র জিহাদ করেছেন। তাদের ব্যাপারে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ’র কথা আলোচনা করেছেন, যেখানে খারিজীদের সাথে স্বশস্ত্র জিহাদের কথা শামিল রয়েছে। তিনি তাদেরকে হত্যা করে খুশি হয়েছেন। এমনকি তিনি যখন তাদের নেতাকে—সে ছিল যুস সুদাইয়্যাহ—নিহত অবস্থায় দেখেন, তখন তিনি শোকরানা সিজদা দিয়েছিলেন।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৩৯৫]
অনুরূপভাবে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, وقد سجد أبو بكر الصِّدِّيق لما جاءه قتلُ مُسَيْلِمة الكذَّاب، وسجد علىُّ بن أبى طالب لما وجد ذا الثُّديَّةِ مقتولاً فى الخوارج “আবূ বাকার আস-সিদ্দীক্বের নিকট যখন মুসাইলামাতুল কাযযাবের নিহত হওয়ার সংবাদ পৌঁছেছিল, তখন তিনি সিজদা দিয়েছিলেন। একইভাবে ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব যখন খারিজীদের মধ্যে যুস সুদাইয়্যাহকে নিহত অবস্থায় দেখেন, তখন তিনি সিজদা দিয়েছিলেন।” [যাদুল মা‘আদ, পরিচ্ছেদ: শোকরানা সিজদা সাহাবীদের আদতের অন্তর্ভুক্ত (فصل في سجود الشكر من عادة الصحابة)]
·

Wednesday 2 October 2019

লেখাচুরি

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের মহান প্রভু আল্লাহ’র জন্য। যিনি নিজে মহাপবিত্র, আর পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া তিনি গ্রহণও করেন না। [সাহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; যাকাত অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১৯]
অজস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রাণপ্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। যিনি বলেছেন, “যা তোমাকে দেয়া হয়নি, তা দেয়া হয়েছে বলা ঐরূপ প্রতারকের কাজ, যে প্রতারণার জন্য দু’প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরিধান করেছে।”
[সাহীহ বুখারী, হা/৫২১৯; সাহীহ মুসলিম, হা/২১৩০]
·
প্রারম্ভিকা:
লেখা, ভাব, ভাষা, চিন্তা, গবেষণা প্রভৃতি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি), যা অনুমতি ছাড়া নিজের নামে চালানো সম্পূর্ণরূপে ক্রাইম এবং অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ও চুরি করার শামিল। এটাও এক ধরণের চৌর্যবৃত্তি বা তস্করবৃত্তি, যা শরী’আহর দৃষ্টিতে হারাম। অথচ বর্তমানে অনেকেই নির্দ্বিধায় এই গর্হিত কাজটি করে যাচ্ছেন। এমনকি অনেকে নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে এটাকে বৈধ পর্যন্ত মনে করছেন।
মনে পড়ে, এক সালাফী দাবিদার ভাই বলেছিলেন, ফেসবুকে অন্যের গবেষণালব্ধ পোস্ট অনুমতি ছাড়া কপি করা বৈধ, যেহেতু এতে দা’ওয়াতী কাজ হচ্ছে! লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। ইসলামী দা’ওয়াহ কি তবে নিকৃষ্ট চৌর্যবৃত্তির মুখাপেক্ষী?! আল ‘ইয়াযু বিল্লাহ। অনেক সালাফী ভাইয়ের দ্বারাও জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে এহেন অন্যায় কাজ সঙ্ঘটিত হচ্ছে। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু এটা একটা আমানাত, ‘ইলমী আমানাত। প্রিয় পাঠক, বক্ষমান ছোট্ট আর্টিকেলটিতে আমরা উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ‘আলিমদের ক্বওল উল্লেখপূর্বক এই বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন, পুরো বিষয়টি আপনার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার উপর দয়া বর্ষণ করুন।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...