Tuesday 26 November 2019

মিজানুর রাহমান আল আযহারী (হাদাহুল্লাহ) নামক এক ব্যক্তির কয়েকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর্যালোচনা

আমরা আজকে সুরেলা কণ্ঠের বক্তা মিজানুর রাহমান আল আযহারী (হাদাহুল্লাহ) নামক এক ব্যক্তির কয়েকটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের পর্যালোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
.
▶️ বক্তব্য - (এক)
"বিতির নামায তিনটি নিয়মে পড়া যায়। আমরা হানাফিরা যে পদ্ধতিতে বিতির নামায পড়ি তার আম দলিল রয়েছে। মৌলিক তিনটি পদ্ধতির যেকোনো একটি দিয়ে বিতির নামায পড়ুন, কিন্তু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাবেনা। আমরা কেউ তাবলীগ জামাত করি, কেউ জামাআতে ইসলামী করি, কেউ চরমোনাই পীরের মুরিদ, কেউ হেফাজতে ইসলাম, কেউ কওমী, কেউবা আলিয়া। কিন্তু এই ভূখণ্ডে আমাদের দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালাদের মাঝে রয়েছে শতবছরের ঐক্য। এজন্যই দাওয়াতের নামে, সহিহ হাদিসের নামে, ইসলামের নামে এদেশের ঐক্য আপনারা নষ্ট করবেন না। এই ঐক্য নষ্ট করার কোনো অধিকার আপনাদের নাই। অতএব, এই ভূখণ্ডে কঠিন ইসলাম প্রচার করা আপনাদের দরকার নেই!
► লিংকঃ
https://www.youtube.com/watch?v=FMKgSZTO1p4&t=9s
[মুলভাব সংক্ষেপিত]
.
এই বক্তব্যের পর্যালোচনাঃ
প্রথমত, বিতির নামায তিনটি নয়, দুইটি নিয়মে পড়ার বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় হাদিসে। এদেশের হানাফিরা যে পদ্ধতিতে বিতির নামায আদায় করেন তার পক্ষে কোনো গ্রহনযোগ্য দলিল পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয়ত, বক্তা অভিযোগ করেন, সহিহ হাদিসের নামে নাকি সমাজে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে, বিশুদ্ধ দ্বীনের দাওয়াতের কারণেই নাকি তাদের শতবছরের কথিত ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে!
আমি পাঠকদের কাছে জানতে চাই, কখন, কবে, কোথায় এদেশীয় বিভিন্ন ফিরকাবন্দী ওয়ালাদের ঐক্য ছিলো? দেওবন্দীদের একাংশের কাছে পীরপন্থীরা সবসময়ই ভ্রান্ত ছিলো। আবার মূলধারার দেওবন্দীদের কাছে জামাআতীরা পথভ্রষ্ট। এমনকি মওদুদী সাহেবকে রদ্দ করে তারা শত শত বই পর্যন্ত রচনা করেছেন। কওমীদের একাংশ ফুলতলীদের পিছনে নামাজ পড়ে না। আর জামাতীদের কাছে চরমোনাই হলো পথভ্রষ্ট। দেওয়ানবাগী সর্বমহলে গোমরাহ, কওমী আর আলিয়ার দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। এইতো গতবছরই ব্রেরলভীদের সাথে দেওবন্দীদের খুনাখুনির ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও তাবলীগের দুই গ্রুপের খুনাখুনির ঘটনাগুলি জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল!
হ্যায়াতিদের কাছে মামাতিরা বিভ্রান্ত, আবার মামাতিদের কাছে হ্যায়াতি! এবার আপনিই বলুন, এ সমাজে ঐক্য কখন ছিল?
মোদ্দা কথা হলো, বক্তা সাহেবকে তার জাহালতের উপর ক্রন্দন করা উচিত এইজন্য যে, তিনি আজও ঐক্যের মানদণ্ড সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল নন! কেনোনা ফিক্বহি মাসআলা মাসায়েল কখনো ঐক্যের ভিত্তি হতে পারেনা।
পাঠকদের জেনে রাখা জরুরী যে, এই বক্তা সাহেবগণ কিছু ভালো কথার আড়ালে বিভিন্ন মনভোলানো যুক্তি ও বচন দ্বারা আহলে সুন্নাহর বিরোধীতা। অতঃপর নিজ হস্তের কলম কিংবা মুখের বচন দ্বারা আহলে সুন্নাহর গর্দান উড়িয়ে দিয়ে বাতিলপন্থীদের রসদ জোগায়!

Sunday 10 November 2019

বড় বিপজ্জনক একটি বিষয়


আপনি কি জানেন ও মানেন যে, অনেক সময় আপনি নিজেকে অভিশাপ ও গালি দেন?
আপনি যদি নিরপরাধ অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে লানত দেন, তাহলে জানবেন আপনি নিজে মালঊন।
আপনি যদি এমন কাউকে অভিশাপ দিয়ে বলেন, 'তুই জাহান্নামে যা, ধ্বংস হ', নির্বংশ হ', কবরে যা, তোর মরণ হোক ইত্যাদি, আর সে যদি সেই অভিশাপের উপযুক্ত না হয়, তাহলে তা আপনার উপর এসে লাগে।
আপনি যদি কাউকে অন্যায়ভাবে গালি দেন, তাহলে সে গালি আপনাকে লাগে।
আপনি যদি কাউকে 'জানোয়ার' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে জানোয়ার।
আপনি যদি কাউকে 'কুকুর' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে কুকুর।
আপনি যদি কাউকে 'গাধা' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে গাধা।
আপনি যদি কাউকে 'বলদ' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে বলদ।
আপনি যদি কাউকে 'জারজ' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে জারজ।
আপনি যদি কাউকে 'খবীস' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে খবীস।
আপনি যদি কাউকে 'কাফের' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে কাফের।
আপনি যদি কাউকে 'আল্লাহর দুশমন' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে আল্লাহর দুশমন।
আপনি যদি কাউকে 'নবীর দুশমন' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে নবীর দুশমন।
আপনি যদি কাউকে 'শয়তান' বলেন, আর সে যদি তা না হয়, তাহলে আপনি নিজে শয়তান।
মহানবী ﷺ বলেছেন,
“বান্দা যখন কোন কিছুকে অভিশাপ করে, তখন অভিশাপ আকাশের প্রতি উঠে যায়, কিন্তু তাকে বাইরে রেখেই আকাশের দ্বারসমূহ বন্ধ করা হয়। অতঃপর তা পৃথিবীর প্রতি অবতরণ করে কিন্তু তাকে বাইরে রেখেই পৃথিবীর দ্বারসমূহও বন্ধ করা হয়। অতঃপর ডানে বামে ফিরতে থাকে, পরিশেষে যখন তা কোন যথার্থ স্থান পায় না, তখন অভিশপ্ত বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি ফিরে যায়, যদি সে এর (অভিশাপের) উপযুক্ত হয়, তাহলে (তাকে অভিশাপ লেগে যায়)। নচেৎ অভিশাপকারীর নিকট তা প্রত্যাবৃত্ত হয়।” (আবূ দাঊদ ৪৯০৭, সহীহুল জামে ১৬৭২নং)
“তোমরা হাওয়াকে অভিশাপ দিও না। যেহেতু হাওয়া তো আদেশপ্রাপ্ত, (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ। আর যে ব্যক্তি কোন নির্দোষ নিরপরাধ বস্তুকে অভিশাপ করে, তার প্রতিই সেই অভিশাপ প্রত্যাবৃত্ত হয়।” (আবু দাউদ ৪৭০৮, তিরমিযী ১৯৭৮, সহীহুল জামে ৭৪৪৭নং)
“যখন কেউ তার ভাইকে কাফের বলে, তখন তাদের উভয়ের মধ্যে একজনের উপর তা বর্তায়। যা বলেছে, তা যদি সঠিক হয় তো ভালো; নচেৎ তার (বক্তার) উপর ঐ কথা ফিরে যায়।” (বুখারী ৬১০৩-৬১০৪, মুসলিম ২২৫নং)
“যে কাউকে 'কাফের' বলে ডাকে অথবা 'আল্লাহর দুশমন' বলে অথচ বস্তুতঃ যদি সে তা না হয়, তবে তার (বক্তার) উপর তা বর্তায়।” (মুসলিম ২২৬নং)
সুতরাং খুব সাবধান! নিজের মুখে নিজে অভিশপ্ত হবেন না এবং নিজের মুখে নিজেকে গালি দেবেন না। 'নিজেরে করিতে গৌরব দান, নিজেরে কেবলই করি অপমান' যেন না হয়।
----আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

Tuesday 5 November 2019

আল্লাহর জন্য দেহ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করার বিধান

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। অতঃপর:
আল্লাহর আসমা ও সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করা ইমানের একটি অন্যতম মৌলিক বিষয়। ব্যক্তির ‘আক্বীদাহর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণীত হয় এই মৌলিক বিষয়ের মাধ্যমে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কোনো অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান, ধরন বর্ণনা ও নিস্ক্রীয়করণ ছাড়াই আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে। আল্লাহর নাম ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত কিছু মূলনীতি অনুসরণ করে থাকে।
যেমন একটি মূলনীতি হলো—আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফিয়্যাহ তথা বিলকুল কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর, এতে বিবেকের কোনো স্থান নেই। অর্থাৎ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ যেসব নাম ও গুণ বর্ণনা করেছে, আমরা কেবল সেসবই সাব্যস্ত করব, কোনোরূপ কমবেশি করব না। যে ব্যক্তি এক্ষেত্রে কমবেশি করে, সে আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে বক্রপথ অবলম্বনকারী বিদ‘আতী। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বক্তব্য, এবং এটাই তাদের মূলনীতি।
·
দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, সালাফিয়্যাহর দিকে নিজেকে সম্পৃক্তকারী কিছু দা‘ঈ এই মূলনীতি লঙ্ঘন করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করেছে। আমরা মনে করি, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন না করেই এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া এবং ‘উলামায়ে সুন্নাহর বক্তব্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেরাই কুরআন-হাদীস পড়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করার নিন্দার্হ প্রবণতা থেকেই এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের ﷺ সুন্নাহয় আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ আছে নাকি নেই—তা বর্ণিত হয়নি। তাই আমাদেরকে এ বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা বলব না, এসব বিষয় আল্লাহর আছে। আবার এও বলব না যে, এসব বিষয় আল্লাহর নেই। আল্লাহর ওপর খবরদারি করে আল্লাহর জন্য ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা হলো কঠিন বিদ‘আত এবং ভয়াবহ কাবীরাহ গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বলো না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ, আর অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকের বিষয়ে অবশ্যই তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরাহ ইসরা: ৩৬]
·
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ—যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরিক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর ব্যাপারে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’।” [সূরাহ আ‘রাফ: ৩৩]
সম্মানিত পাঠক, হাত (ইয়াদ), চোখ (‘আইন), পা (ক্বাদাম) আল্লাহর সিফাত তথা গুণ। কিন্তু এসব গুণ থেকে আল্লাহর ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ সাব্যস্ত করা যায় না। এরকম কাজ সালাফদের কেউ করেননি। তাই যারা এরকম করছেন, তারা বড়ো ধরনের ভুল করছেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অবলোকন করে আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি তাওক্বীফী হওয়ার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মহান ইমামদের বক্তব্য পেশ করেছি। তারপর আল্লাহর শানে ‘দেহ’ ও ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ প্রভৃতি শব্দাবলি ব্যবহার করার ব্যাপারে আইম্মায়ে সুন্নাহর বক্তব্য পেশ করেছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।

Wednesday 23 October 2019

বুধবার যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময় দুয়া কবুলের বিশেষ একটি সময়


জাবির বিন আ’বদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আল ফাতহ’ মসজিদে তিন দিন দুয়া করেছেন। সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার। কিন্তু, বুধবার দিবসের দুয়া দুই সালাত (যোহর ও আসরের) মধ্যবর্তী সময়ে কবুল হয়েছে। ফলে তাঁর চেহারা মোবারকে আনন্দের উজ্জলতা দেখা গেছে।”
জাবের রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “এরপর থেকে আমি যখনই কোন কঠিন বিষয়ের সম্মুখীন হতাম, আমি উক্ত (বুধবার) দিবসের ঐ (যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী) সময়কে দুয়ার জন্য নির্বাচন করতাম এবং দুয়া করতাম। অতঃপর আমি বুঝতে পারতাম যে, আমার দুয়া কবুল হয়েছে।”
ইমাম বুখারী রাহি’মাহুল্লাহ ‘আদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আরো বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও বাযযার। ইমাম আলবানী রাহি’মাহুল্লাহ হাদীটিকে ‘হাসান’ বলেছেন, সহীহ আদাবুল মুফরাদঃ ১/২৪৬, হাদীস নং-৭০৪, সহীহ তারগীব ও তারহীবঃ ১১৮৫।
শায়খ আলবানী রাহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসের ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “সম্মানিত সাহাবী (জাবির বিন আ’বদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু) আমাদেরকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন যে, দুয়ার জন্য বুধবার দিবসের সেই সময়টি ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে উদ্দেশিত সময়। উপস্থিত ব্যক্তি যা দেখতে ও জানতে পারে, অনুপস্থিত ব্যক্তি তা দেখতে ও জানতে পারে না। আর স্বচক্ষে দেখা সংবাদের মত সঠিক ও সত্য অন্য কোন সংবাদ হতে পারে না। এই সাহাবী যদি আমাদেরকে সংবাদটি না জানাতেন, তবে হয়তো আমরা বলতাম যে, ঘটনাক্রমে ঐ দিনের ঐ সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়া করেছেন এবং তাঁর দুয়া কুবল হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, উক্ত সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে যা করতে দেখেছেন, সেই দিন ও সময় অনুযায়ী নিজে আমল করেছেন এবং তিনি-ও তার ফলও পেয়েছেন। অতএব, এই সাহাবীর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, এটা একটা সুন্নাতী আমল।”
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়া রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আমাদের একদল আলেম এই হাদীসের প্রতি আমল করে বুধবার দিনের এই সময়ে দুয়া করতে প্রয়াস চালাতেন। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে জাবির রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে। কিন্তু জাবির রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে একথা বর্ণিত হয়নি, যে তিনি দুয়ার জন্য স্থানটিকে (ফাতহ মসজিদ) উদ্দেশ্য করতেন। বরং তিনি শুধু ঐ সময়টিকেই অনুসন্ধান করতেন।” ইক্বতেদা সিরাতুল মুসতাকীমঃ ১/ ৪৩৩।
ইমাম বায়হাক্বী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “দুয়ার জন্য উপযুক্ত সময়, অবস্থা ও স্থান অনুসন্ধান করা উচিত। যাতে করে দুয়া কবুল হওয়ার আশা পূর্ণরূপে করা যায়। আর দুয়া কবুল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে বুধবার দিনে যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়।” শুআ’বুল ঈমানঃ ২/৪৬।
ফুটনোটঃ
(১) লেখাটির জন্য কৃতজ্ঞতা শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী ও আবুল আলিয়া ব্লগ, এড্রেস
http://www.abuaaliyah.com/
(২) বুধবার দুয়া কবুল সংক্রান্ত হাদীসটিকে কিছু আলেম সহীহ বলে গ্রহণ করেন নি, আবার অনেক আলেম হাদীসটিক ‘হাসান’ বলে কবুল করছেন, যাদের মাঝে রয়েছে ইমাম বায়হাক্বী, ইমাম আলবানী, আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন। এছাড়া ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ “একদল আলেম এই হাদীসের প্রতি আমল করেছেন” বলে এটিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সুতরাং, দুয়া কবুলের আশা নিয়ে বুধবার উক্ত সময়ে দুয়া করা করা যাবে, বিদআ’ত হবে না। তবে কেউ যদি ভিন্ন মত পোষণকারী আলেমদের উপরে নির্ভর করে উক্ত হাদীসকে ‘জইয়ীফ’ বা এই আমলকে সঠিক মনে না করেন, তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। অনেক ফিক্বহী মাসলা-মাসায়েলে আলেমরা দ্বিমত করেন, সেই সমস্ত বিষয়ে একজন আরেকজনকে কোন মত চাপিয়ে দেওয়া বা বাধ্য করার সুযোগ নেই।

Courtesy facebook page তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও

Monday 21 October 2019

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের গালিদাতাকে হত্যা করতে হবে, কিন্তু যদি সে তাওবাহ করে?


.
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل تقبل توبة من سب الله عز وجل أو سب الرسول صلى الله عليه وسلم؟
الإجابة: اختلف في ذلك على قولين:
القول الأول: أنها لا تقبل توبة من سب الله، أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، وهو المشهور عند الحنابلة، بل يقتل كافراً، ولا يصلى عليه، ولا يدعى له بالرحمة، ويدفن في محل بعيد عن قبور المسلمين.
القول الثاني: أنها تقبل توبة من سب الله أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، إذا علمنا صدق توبته إلى الله، وأقر على نفسه بالخطأ، ووصف الله تعالى بما يستحق من صفات التعظيم، وذلك لعموم الأدلة الدالة على قبول التوبة كقوله تعالى: {قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعاً}، ومن الكفار من يسب الله ومع ذلك تقبل توبتهم، وهذا هو الصحيح إلا أن ساب الرسول، عليه الصلاة والسلام تقبل توبته ويجب قتله، بخلاف من سب الله فإنها تقبل توبته ولا يقتل؛ لأن الله أخبرنا بعفوه عن حقه إذا تاب العبد، بأنه يغفر الذنوب جميعاً.
أما ساب الرسول صلى الله عليه وسلم، فإنه يتعلق به أمران:
أحدهما: أمر شرعي، لكونه رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهذا يقبل إذا تاب.
الثاني: أمر شخصي، وهذا لا تقبل التوبة فيه لكونه حق آدمي لم يعلم عفوه عنه، وعلى هذا فيقتل ولكن إذا قتل، غسلناه، وكفناه، وصلينا عليه، ودفناه مع المسلمين.
وهذا اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية وقد ألف كتاباً في ذلك اسمه: «الصارم المسلول في تحتم قتل ساب الرسول»، وذلك لأنه استهان بحق الرسول صلى الله عليه وسلم، وكذا لو قذفه صلى الله عليه وسلم فإنه يقتل ولا يجلد.
فإن قيل: أليس قد ثبت أن من الناس من سب الرسول صلى الله عليه وسلم، في حياته وقبل النبي صلى الله عليه وسلم، توبته؟
أجيب بأن هذا صحيح، لكن هذا في حياته صلى الله عليه وسلم، والحق الذي له قد أسقطه، وأما بعد موته فإنه لا يملك أحد إسقاط حقه صلى الله عليه وسلم، فيجب علينا تنفيذ ما يقتضيه سبه صلى الله عليه وسلم، من قتل سابه، وقبول توبة الساب فيما بينه وبين الله تعالى.
فإن قيل: إذا كان يحتمل أن يعفو عنه لو كان في حياته، أفلا يوجب ذلك أن نتوقف في حكمه؟
أجيب: بأن ذلك لا يوجب التوقف لأن المفسدة حصلت بالسب، وارتفاع أثر هذا السب غير معلوم والأصل بقاؤه.
فإن قيل: أليس الغالب أن الرسول صلى الله عليه وسلم، يعفو عمن سبه؟
أجيب: بلى، وربما كان العفو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم، متضمناً المصلحة وهي التأليف، كما كان صلى الله عليه وسلم يعلم أعيان المنافقين ولم يقتلهم، «لئلا يتحدث الناس أن محمداً يقتل أصحابه»، لكن الآن لو علمنا أحداً بعينه من المنافقين لقتلناه، قال ابن القيم رحمه الله: «إن عدم قتل المنافق المعلوم إنما هو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم فقط».
প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ (عَزَّ وَجَلَّ) কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কি কবুল করা হবে?”
উত্তর: “এ ব্যাপারে ‘আলিমগণ দুটি মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
১ম মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে না। এটি হাম্বালীদের প্রসিদ্ধ অভিমত। বরং গালিদাতাকে (মুসলিম শাসক কর্তৃক) কাফির হিসেবে হত্যা করতে হবে। তার জানাযাহ’র নামাজ পড়া হবে না, তার জন্য রহমতের দু‘আ করা হবে না এবং মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরের কোনো স্থানে তাকে কবর দিতে হবে।
২য় মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে, যখন আমরা জানব যে, সে সত্যিকারার্থেই আল্লাহ’র কাছে তাওবাহ করেছে, ভুল করেছে বলে স্বীকার করেছে এবং মহান আল্লাহকে তাঁর প্রকৃত সিফাতে তা‘যীম (সম্মানসূচক বিশেষণ) দ্বারা বিশেষিত করেছে। যেহেতু ব্যাপকার্থবোধক দলিলসমূহ প্রমাণ করছে যে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহ’র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’।” (সূরাহ যুমার: ৫৩)

Monday 14 October 2019

#অযু #শিক্ষা (বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষা দিন)

#অযু #শিক্ষা (বিশেষ করে শিশুদের শিক্ষা দিন)
=====================
অযু শিক্ষা
অযু একটি ইবাদত যা ছাড়া নামায হয় না। নামায ছাড়াও বহু এমন ইবাদত রয়েছে যা অযুর উপর নির্ভশীল। অযু যেমন একটি ইবাদত তেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ারও এটি একটি সুন্দর শারঈ উপায়। মহান আল্লাহ বলেন:
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ(
অর্থ: (হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করবে এবং পা গিঁঠ পর্যন্ত ধুয়ে নিবে।) [সূরা মায়িদাহ/৬)
নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বায়ু নির্গত হলে তার নামায হয় না যতক্ষণে সে অযু না করে”। [বুখারী]
অযু করার নিয়ম:
১-মনে মনে অযু করার ইচ্ছা করবে।
২-তারপর বিসমিল্লাহ বলবে।
৩-তারপর দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। দু’বার কিংবা এক বারও ধৌত করতে পারো।
৪-অত:পর মুখে পানি নিয়ে তিনবার কুল্লি করবে। ঠিক তেমনি নাকের ভিতর পানি টেনে নিয়ে বাইরে ঝেড়ে ফেলে দিবে তিন বার। এই দুটি কাজের জন্য এক সাথে পানি নেওয়া যায় কিংবা উভয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পানি ব্যবহার করা যায়। কুল্লি করা ও নাক ঝাড়ার কাজটি দুইবার কিংবা একবার করলেও তা বৈধ হবে।
৫-অত:পর মুখমন্ডল তিন বার ধৌত করবে। দু’বার কিংবা এক বার ধোয়াও বৈধ। মুখমন্ডলের সীমা হচ্ছে, কপালের উপরিভাগ যেখান থেকে চুল গজায় সেখান থেকে নিয়ে থুতিনর নিম্নভাগ পর্যন্ত। আর এক কানপট্টি থেকে অপর কানপট্টি পর্যন্ত।

Saturday 5 October 2019

বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে খুশি হওয়া সালাফী মানহাজের অন্তর্ভুক্ত


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিরা ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি করে। তাদের দ্বারা হকপন্থি মুসলিমরা কষ্ট পায়। তাই তারা যখন মারা যায়, তখন হকপন্থি মু’মিনের হৃদয় প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভ করে। আহলুস সুন্নাহ’র লোকেরা বিদ‘আতীদের মৃত্যুসংবাদ শুনে খুশি হয়। কারণ তারা এই আশ্বাস লাভ করে যে, ওই সদ্য প্রয়াত বিদ‘আতীর দ্বারা মানুষের আর বিপথগামী হওয়ার সুযোগ থাকছে না, অথবা সুযোগ থাকলেও তা অচিরেই দুর্বল ও ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে।
·
অনিষ্টকারী বিদ‘আতীদের মৃত্যুতে মু’মিনের অন্তর যে প্রশান্তি লাভ করে, তা বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ক্বাতাদাহ ইবনু রিব‘ঈ আল-আনসারী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেছেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مُرَّ عَلَيْهِ بِجِنَازَةٍ فَقَالَ مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ مَا الْمُسْتَرِيحُ وَالْمُسْتَرَاحُ مِنْهُ قَالَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا إِلَى رَحْمَةِ اللهِ وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وَالْبِلاَدُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ “একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পাশ দিয়ে একটি জানাযাহ নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি বললেন, সে শান্তিপ্রাপ্ত অথবা (অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ’র রাসূল, ‘শান্তিপ্রাপ্ত’ আর ‘(অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী’—এর অর্থ কী? তিনি বললেন, মু’মিন বান্দা মারা গেলে, দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহ’র রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দা মারা গেলে, তার অনিষ্ট থেকে (মুক্তি পেয়ে) সকল বান্দা, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শান্তি লাভ করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫১২; সাহীহ মুসলিম, হা/৯৫০]
সালাফগণ বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থিদের মৃত্যুতে খুশি হতেন। আমরা নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু দলিল পেশ করব। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।
·
১. সাহাবী ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এক খারিজী বিদ‘আতীর মৃত্যুতে খুশি হয়ে সিজদা দিয়েছিলেন। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, وقاتل أمير المؤمنين علي بن أبى طالب رضي الله عنه الخوارجَ، وذكر فيهم سنَّة رسول الله المتضمنة لقتالهم، وفرح بقتلهم، وسجد لله شكراً لما رأى أباهم مقتولاً وهو ذو الثُّدَيَّة “আমীরুল মু’মিনীন ‘আলী বিন ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) খারিজীদের সাথে স্বশস্ত্র জিহাদ করেছেন। তাদের ব্যাপারে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ’র কথা আলোচনা করেছেন, যেখানে খারিজীদের সাথে স্বশস্ত্র জিহাদের কথা শামিল রয়েছে। তিনি তাদেরকে হত্যা করে খুশি হয়েছেন। এমনকি তিনি যখন তাদের নেতাকে—সে ছিল যুস সুদাইয়্যাহ—নিহত অবস্থায় দেখেন, তখন তিনি শোকরানা সিজদা দিয়েছিলেন।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৩৯৫]
অনুরূপভাবে ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, وقد سجد أبو بكر الصِّدِّيق لما جاءه قتلُ مُسَيْلِمة الكذَّاب، وسجد علىُّ بن أبى طالب لما وجد ذا الثُّديَّةِ مقتولاً فى الخوارج “আবূ বাকার আস-সিদ্দীক্বের নিকট যখন মুসাইলামাতুল কাযযাবের নিহত হওয়ার সংবাদ পৌঁছেছিল, তখন তিনি সিজদা দিয়েছিলেন। একইভাবে ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব যখন খারিজীদের মধ্যে যুস সুদাইয়্যাহকে নিহত অবস্থায় দেখেন, তখন তিনি সিজদা দিয়েছিলেন।” [যাদুল মা‘আদ, পরিচ্ছেদ: শোকরানা সিজদা সাহাবীদের আদতের অন্তর্ভুক্ত (فصل في سجود الشكر من عادة الصحابة)]
·

Wednesday 2 October 2019

লেখাচুরি

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের মহান প্রভু আল্লাহ’র জন্য। যিনি নিজে মহাপবিত্র, আর পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া তিনি গ্রহণও করেন না। [সাহীহ মুসলিম, হা/১০১৫; যাকাত অধ্যায়; পরিচ্ছেদ- ১৯]
অজস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রাণপ্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি। যিনি বলেছেন, “যা তোমাকে দেয়া হয়নি, তা দেয়া হয়েছে বলা ঐরূপ প্রতারকের কাজ, যে প্রতারণার জন্য দু’প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরিধান করেছে।”
[সাহীহ বুখারী, হা/৫২১৯; সাহীহ মুসলিম, হা/২১৩০]
·
প্রারম্ভিকা:
লেখা, ভাব, ভাষা, চিন্তা, গবেষণা প্রভৃতি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি), যা অনুমতি ছাড়া নিজের নামে চালানো সম্পূর্ণরূপে ক্রাইম এবং অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ও চুরি করার শামিল। এটাও এক ধরণের চৌর্যবৃত্তি বা তস্করবৃত্তি, যা শরী’আহর দৃষ্টিতে হারাম। অথচ বর্তমানে অনেকেই নির্দ্বিধায় এই গর্হিত কাজটি করে যাচ্ছেন। এমনকি অনেকে নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে এটাকে বৈধ পর্যন্ত মনে করছেন।
মনে পড়ে, এক সালাফী দাবিদার ভাই বলেছিলেন, ফেসবুকে অন্যের গবেষণালব্ধ পোস্ট অনুমতি ছাড়া কপি করা বৈধ, যেহেতু এতে দা’ওয়াতী কাজ হচ্ছে! লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। ইসলামী দা’ওয়াহ কি তবে নিকৃষ্ট চৌর্যবৃত্তির মুখাপেক্ষী?! আল ‘ইয়াযু বিল্লাহ। অনেক সালাফী ভাইয়ের দ্বারাও জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে এহেন অন্যায় কাজ সঙ্ঘটিত হচ্ছে। অথচ এক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু এটা একটা আমানাত, ‘ইলমী আমানাত। প্রিয় পাঠক, বক্ষমান ছোট্ট আর্টিকেলটিতে আমরা উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ‘আলিমদের ক্বওল উল্লেখপূর্বক এই বিষয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন, পুরো বিষয়টি আপনার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার উপর দয়া বর্ষণ করুন।

Sunday 22 September 2019

যদি তিনি (আল্লাহ্‌) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, তাহলে ‘আরশ কি শূন্য হয়ে যায় ? পারে অনুসন্ধান না করা। এবং যে আমাকে এই প্রশ্নটি করেছে তাকে বলছি, তুমি একজন বিদ‘আতী

বর্তমান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আল ইমাম, আল 'আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়,
"যদি তিনি (আল্লাহ্‌) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, তাহলে ‘আরশ কি শূন্য হয়ে যায় ?"
উত্তর: “আমি বলছি: প্রশ্ন করার আদবের একটি দিক হলো, এই ব্যাপারে অনুসন্ধান না করা। এবং যে আমাকে এই প্রশ্নটি করেছে তাকে বলছি, তুমি একজন বিদ‘আতী, আমি তোমাকে একজন বিদ‘আতী ব্যতীত অন্য কিছু মনে করি না। আর তোমার রব্ব-এর প্রশংসা করো এজন্য যে, আমি (এখনো) তোমাকে এই দারসে অবস্থান করতে দিচ্ছি। অন্যথায় তোমাকে আমি বের করে দিতাম, যেমনটা মালিক (ইমাম মালিক) করেছিলেন ঐ লোকের সাথে যে তাঁকে আল্লাহ’র (‘আরশের উপর) সমুন্নত হওয়া ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলো। কারণ নাবী যখন সাহাবাদের এই ব্যাপারে বলেছিলেন, তাঁরা কি বলেছিলেন, “আল্লাহ’র (অবতরণের) ফলে ‘আরশ কি শূন্য হয়ে যায়, হে আল্লাহর রাসূল?”
আমি বিস্মিত যে, (এমনকি) শাইখুল ইসলাম (ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ)-ও এসব ব্যাপারে কথা বলেছেন ও গবেষণা করেছেন। কিন্তু তিনি এরূপ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ লোকেরা এই ব্যাপারে কথা বলছিলো, সুতরাং যারা এই ব্যাপারে কথা বলছিলো, মূলত তিনি তাদের অনুসরণ করেন। তাছাড়া তুমি সাহাবীগণ কর্তৃক উচ্চারিত একটি অক্ষরও পাবেনা যে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছেন, “আল্লাহ’র (অবতরণের) ফলে ‘আরশ কি শূন্য হয়ে যায়?” এটা জানা কি আমাদের ওপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে? যদি আমাদের ওপর বাধ্যতামূলক করা হতো, তাহলে আল্লাহ্‌ অথবা তাঁর রাসূল আমাদের শিখিয়ে দিতেন। সুতরাং (আমাদের ওপর) জরুরি হলো এই ব্যাপারে চুপ থাকা।
কিন্তু আমাদের যদি এই ব্যাপারে টেনে আনা হয়, তাহলে আমরা এই বলে উত্তর দিই যে, ‘উলামারা এই বিষয়ে তিনটি অবস্থান নিয়েছেন। প্রথম বক্তব্য হলো ‘আরশ শূন্য হয়ে যায়, দ্বিতীয় বক্তব্য হলো ‘আরশ শূন্য হয় না, আর তৃতীয় মতটি হলো এই ব্যাপারে কথা বলা হতে বিরত থাকা এবং (এরূপ) বলা যে, আল্লাহ্‌ ভালো জানেন। আর শাইখুল ইসলাম এই মতের দিকে ধাবিত হয়েছেন যে, এর (আল্লাহ’র অবতরণ) কারণে ‘আরশ শূন্য হয় না। কারণ আল্লাহ্‌ (তাঁর সম্পর্কে) এর (‘আরশ) ওপরে সমুন্নত হওয়ার কথা বলেছেন, কোন নির্দিষ্ট সময়ে এর ব্যতিক্রম অবস্থার কথা বলা ছাড়াই। এবং তিনি (শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ) বলেন আল্লাহ্‌র জন্য এর (‘আরশের) ওপরে সমুন্নত হওয়া এবং অবতরণ করা সম্ভব যা মাখলুক্বের বিপরীত। কারণ মাখলুক্ব সীমাবদ্ধ, এটি যদি কোন দিকে ঘোরে অথবা কোন অবস্থান নেয় তাহলে অন্য অবস্থান থেকে প্রস্থিত হয়ে যাবে। আর রাব্ব এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি হলো, তাঁকে মাখলুক্বের সাথে তুলনা করা হবে না। তবে আমার মত হলো ব্যক্তির জন্য উচিৎ প্রথমেই প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা।”
উৎস: abdalla508 (সালাফী ইউটিউব চ্যানেল)
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম
সম্পাদক: মুহাম্মাদ 'আবদুল্লাহ মৃধা

Saturday 21 September 2019

মাসজিদে ভিক্ষা চাওয়ার বিধান


·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: يجلس كثير من المشوهين والسائلين في الحرم الشريف بمكة المكرمة يمدون أيديهم للحجاج والزوار والمعتمرين، ولا سيما في الطريق ما بين الصفا والمروة، وقد سمعت مرة أنه لا يجوز التصدق في المساجد، والسؤال هنا: هل يجوز إعطاء هؤلاء من الصدقات وهم في داخل الحرم، وهل تجوز الصدقة في الحرمين الشريفين خاصة وفي المساجد عامة؟ أفتونا جزاكم الله خيرا.
الجواب: أجاب شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله عن حكم السؤال في المسجد بما نصه: (أصل السؤال محرم في المسجد وخارج المسجد إلا لضرورة، فإن كان به ضرورة وسأل في المسجد ولم يؤذ أحدا؛ بتخطيه رقاب الناس، ولا غير تخطيه، ولم يكذب فيما يرويه ويذكر من حاله، ولم يجهر جهرا يضر الناس مثل أن يسأل والخطيب يخطب، أو وهم يستمعون علما يشغلهم به ونحو ذلك جاز والله أعلم).
أما الصدقة في المسجد فلا بأس بها، روى مسلم في صحيحه عن جرير قال: «كنا عند رسول الله صلى الله عليه وسلم في صدر النهار، قال: فجاءه قوم حفاة عراة مجتابي النمار أو العباء، متقلدي السيوف، عامتهم من مضر، بل كلهم من مضر، فتمعر وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم لما رأى بهم من الفاقة، فدخل ثم خرج فأمر بلالا فأذن وأقام فصلى ثم خطب فقال: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ...َ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)، والآية التي في الحشر: (اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ)، تصدق رجل من ديناره، من درهمه، من ثوبه، من صاع بره، من صاع تمرة. حتى قال: ولو بشق تمرة، قال: فجاء رجل من الأنصار بصرة كادت كفه تعجز عنها، بل قد عجزت، قال: ثم تتابع الناس حتى رأيت كومين من طعام وثياب، حتى رأيت وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتهلل كأنه مذهبة ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من سن في الإسلام سنة حسنة، فله أجرها وأجر من عمل بها بعده من غير أن ينقص من أجورهم شيء، ومن سن في الإسلام سنة سيئة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيء». وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
প্রশ্ন: “অনেক বিকলাঙ্গ ও ভিখারী মক্কা মুকাররমায় হেরেম শরীফের মধ্যে হাজি, জেয়ারতকারী ও ওমরাকারীদের কাছে হাত পাতে। বিশেষ করে সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী রাস্তায় তারা হাত প্রসারিত করে। আমি একবার এরকম কথা শুনেছি যে, মাসজিদের মধ্যে দান-খয়রাত করা না-জায়েজ। প্রশ্ন হলো—হেরেমের মধ্যে তাদেরকে দান করা কি জায়েজ? বিশেষত দুই হেরেম শরীফে এবং আমভাবে সকল মাসজিদে দান-খয়রাত করা কি জায়েজ? আমাদেরকে বিষয়টি অবহিত করুন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”

Tuesday 17 September 2019

কী করলে নিজের দোষত্রুটি নিজের কাছেই ধরা পড়বে? (নিজেকে সংশোধনের উপায়)


উত্তর:
মানুষের দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা এবং অন্যকে সংশোধন করার পূর্বে নিজের দোষত্রুটি সংশোধন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অধিকাংশ মানুষ নিজে ভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকলেও অন্যকে সংশোধন করাতে বেশি উদগ্রীব! এটি কোনো ঈমানদারের নিকট কাম্য নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
"তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?" (সূরা বাকারা: ৪৪)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ
"হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই।" সূরা মায়িদা: ১০৫)
সুতরাং সংশোধনীটা শুরু করুন নিজেকে দিয়ে। আমি, আপনি সবাই যদি নিজেকে পরিবর্তন করি তাহলে পাল্টে যাবে সমাজ ব্যবস্থা।
🔷 কিভাবে আমরা নিজেদের দোষত্রুটি খুঁজে পাবো?

যে ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি বা মূর্তি আছে সে ঘরে সালাত আদায় করার বিধান


———🎀🎀———
প্রশ্ন: আমাদের ঘরে খাতা-পত্র, প্যাকেট ইত্যাদিতে ছবির মতো কার্টুন থাকে। কিছু ঘরে মানুষ, পশু-পাখি ইত্যাদির ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয় অথবা শোকেস-আলমরিতে পশু-পাখির ছোট ছাট মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়। ঘরের আসবাব-পত্রেও বাঘ-সিংহ, ময়ূর, পাখি ইত্যাদির ছবি অংকিত থাকে। এ সব ঘরে নামায পড়লে কি তা সহিহ হবে?
এতে করে কি ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করবে না?
উত্তর:
ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ، وَلَا صُورَةٌ
“ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। (সুনানে আন-নাসায়ী হা/৫৩৪৭-সহিহ)
ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী মাইমূনাহ রা. আমার নিকট বর্ণনা করেন:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জিবরাঈল আলাহিস সালাম আমার সাথে রাতে সাক্ষাত করার ওয়াদা করেছিলেন কিন্তু সাক্ষাত করেননি।
অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা আছে। তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেলেন।
এরপর জিবরাঈল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন: “যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না।”
সকালবেলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর মারতে আদেশ দিলেন। এমনকি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া।

মুহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বর্ণিত ১৪টি সহিহ হাদিস


----------------------
নিম্নে মহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ১৪টি হাদিস পেশ করা হল:
🔰 ১) প্রখ্যাত সাহাবী আবু বাকরা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: আল্লাহ তাআলা আসমান সমূহ এবং জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার তার নিজস্ব কৃতিতে ফিরে এসেছে। এবং বারো মাসে এক বছর। তম্মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হল: যুল কা’দাহ (যিলকদ), যুল হিজ্জা (যিলহজ্জ) এবং মুহররম এবং আরেকটি হল মুযার সম্প্রদায়ের রজব মাস যা জুমাদাল ঊলা এবং শাবানের মধ্যখানে রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম)
🔰 ২) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: রমাযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায।” (মুসলিম)
🔰 ৩) আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “জাহেলি যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোযা পালন করত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে নিজে আশুরারা রোযা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু‘ যখন রমাযানের রোযা ফরয হল তখন তা পরিত্যাগ করা হল। যার ইচ্ছা রাখত যার ইচ্ছা রাখত না।” (বুখারি)

বাবা-মা’দের প্রতি জরুরি সতর্ক বার্তা এবং একটি জিজ্ঞাসা


“বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা গান-বাজনা করলে তাদের কবরের আজাব বৃদ্ধি পায়” এ কথা কি সঠিক?
▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা জানি, ইসলামে গান-বাজনা হারাম। এখন প্রশ্ন হল, ”বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যদি গান-বাজনায় লিপ্ত হয় তাহলে কবরে বাবা-মার উপর শাস্তি বৃদ্ধি যায়” এ কথাটি কি সত্য?
উত্তর:
ইসলামে গান-বাজনা করা বা শোনা হারাম। এ দ্বারা অন্তর কলুষিত হয়, মনের সুপ্ত বাসনা (কু প্রবৃত্তি) জাগ্রত হয়, অন্তর রোগাক্রান্ত হয় ফলে ধীরে ধীরে অন্তরে , কুরআন ও হাদিসের বক্তব্য ও উপদেশপূর্ণ ভালো কথার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় এবং কুরআন তিলাওয়াত শুনার আগ্রহ হারিয়ে যায় ইত্যাদি। সুতরাং গানবাজনা থেকে দূরে থাকা জরুরি।
তবে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যদি গান-বাজনা করে তাহলে তাদের কবরে শাস্তি বৃদ্ধি পায়-এ কথা ঠিক নয়।
অবশ্য যদি বাবা-মা দুনিয়াতে বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানকে গানবাজনা শিক্ষার ব্যবস্থা করে যায় বা তাদেরকে এতে বাধা না দেয় বা তাদেরকে দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা না দিয়ে থাকে তাহলে বাবা-মার কবরে থেকেও সন্তানের সকল পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের ভাগীদার হবে। কারণ তারাই সন্তানের বিপথে যাওয়ার পেছনে মূল দায়ী।
তাদের দায়িত্ব ছিলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে গড়ে তোলা, বাল্যকাল থেকে হারাম, অশ্লীল, গান-বাজনা ইত্যাদি আল্লাহর নাফরমানি মূলক কার্যক্রম থেকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে নি। আল্লাহ তাআলা বলেন:

আশুরার শোক উদযাপন বিদআত কেন?


মুহররম মাসের দশ তারিখ আশুরার দিন হিসেবে পরিচিত। ৬১ হিজরির ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা অনেক উন্নীত করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর ব্যাপারে এ শুভ সংবাদ প্রদান করে গেছেন যে, তারা হবেন জান্নাতের যুবকদের নেতা।
আর এ কথা চির সত্য, যে যত বড় মর্যাদা লাভ করে তাকে তত বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, মানব জাতির মধ্যে কে সব চেয়ে বেশি পরীক্ষা ও বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন? তিনি বললেন, নবীগণ, তারপর আল্লাহর নেককার বান্দাগণ।
তারপর অন্যদের মধ্যে যারা যে পরিমাণ ঈমান ও পরহেযগারিতার অধিকারী তারা সে পরিমাণ পরীক্ষা সম্মুখীন হয়েছেন। মানুষ তার দীনদারি অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। কেউ যদি মজবুত দ্বীনের অধিকারী হয় তবে সে বেশি পরিমাণ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। আর কারো দ্বীনদারিতে কমতি থাকলে তার বিপদাপদ কম আসে এবং পরীক্ষাও কম হয়। মুমিন বান্দা যতদিন পৃথিবীতে চলা ফেরা করে ততদিন তার উপর বিপদাপদ পতিত হতে থাকে এবং এভাবে তার আর কোন গুনাহ বাকী থাকে না।” (মুসনাদ আহমদ ও তিরমিযী, সনদ হাসান)
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের এই মর্যাদা পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছেন। ইসলামের মর্যাদা নিয়েই তারা দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা সহকারে তারা প্রতিপালিত হয়েছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংস্পর্শ, স্নেহ-মমতা, আদর ও ভালবাসা পেয়ে তাদের জীবন সৌভাগ্য মণ্ডিত হয়েছে। যার কারণে মুসলমানগণ তাদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন।

জন্মদিন পালন করা এবং এ উপলক্ষে উইশ করা ও উপহার লেনদেন করার বিধান


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা জানি জন্মদিন পালন করা বিদআত যেহেতু এইটা বিজাতীয়দের কালচার। এখন কেউ যদি আমাকে জন্মদিন এর সময় উইশ করে বা গিফট দেয় এতে আমার করণীয় কি? আমাকে উইশ করলে কি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা যাবে?
উত্তর:
জন্মদিন (Birthday) পালন করা এবং এ উপলক্ষে উইশ (wish) করা বা গিফট লেনদেন করা শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ তা অমুসলিমদের সংস্কৃতি। আর ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:
❖ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
"যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।" [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]

নির্জনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পর্দা কতটুকু?


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: যখন স্বামী-স্ত্রী নির্জনে সময় কাটায় তখন তাদের মাঝে কতটা পর্দা রক্ষা করা জরুরি? (একান্ত ঘনিষ্ঠ সময় ছাড়া বাকি সময়গুলোতে)। কেননা আমাদের আশে পাশে সর্বদা জিন ও ফেরেশতাগণ ঘুরা ফেরা করে।
উত্তর:
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনও পর্দা নেই। আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের জন্য 'পোশাক' বলে অভিহিত করেছেন এবং একে অপরের জন্য সম্পূর্ণ হালাল করেছেন। সুতরাং তারা নির্জনে যেভাবে খুশি একে অপরের সামনে থাকতে পারে এবং আনন্দ-বিনোদন করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
"তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাক।" (সূরা বাকারা: ১৮৬)
❖ তাফসিরে কুরতুবিতে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:
"পোশাক মূলত: কাপড়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য পোশাক বলা হয়েছে এ জন্য যে, দেহের সাথে দেহের সংযোগ ঘটে, একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং পোশাকের মত একে অপরের সঙ্গে থাকে।" (সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা, তাফসিরে কুরতুবী)
❖ এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

মুহররমের বিদআত ও অন্যায় কার্যক্রম


▬▬▬◆◆◆▬▬▬
মুহাররম মাস-বিশেষ করে এ মাসের ১০ তারিখে (আশুরার দিন) শিআ-রাফেযী সম্প্রদায় কর্তৃক অনেক বাড়াবাড়ি, হিংসাত্মক এবং নান ধরণের শরীয়ত বহির্ভূত/বিদআতী কার্যক্রম পালিত হয়ে থাকে। নিম্নে এ ধরণের কতিপয় কার্যক্রম তুলে ধরা হল:
১) হুসাইন রা. এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রতি মিথ্যা সমবেদনার প্রকাশ হিসেবে গালে চপেটাঘাত করা, বুক থাপড়ানো, শরীর রক্তাক্ত করা, তলোয়ার বা ছুরির আঘাতে মাথা থেকে রক্ত প্রবাহিত করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, কান্নাকাটি করা, শরীরের পোশাক ছেঁড়া, নিজেকে নানাভাবে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।
২) কারবালা যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে আশুরায় ‘লাঠি খেলা’র আয়োজন করা।
৩) মুহররমের ১০ তারিখে শোক দিবস পালন করা।
৪) হুসাইন রা. এর প্রতীকী কবর তৈরি করে তা সুসজ্জিত করা বা তাতে সম্মান করা।
৫) কালো পতাকা নিয়ে তাজিয়া মিছিল করা এবং তাতে পানি বিতরণ করা।
৬) মুহররমের দশ তারিখে কালো জামা-কাপড় পরিধান করা।
৭) মুহররম উপলক্ষে গান-বাদ্য, কাওয়ালী, জারি, সারি, মুর্সিয়া বা পালা গানের আসর বসানো।
৮) হুসাইন রা. এর মৃত্যুতে শোক পালনার্থে মুহররমের প্রথম দশ দিন গোস্ত, মাছ, ডিম ইত্যাদি
খাওয়া, বিয়েশাদী করা বা দেয়া থেকে বিরত থাকা।
৯) এ উপলক্ষে মুহররমের প্রথম দশ দিন মাটিতে ঘুমানো।
১০) কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করে ফেতনার আগুন উসকিয়ে দেয়া এবং পূর্ব যুগের বিভিন্ন নিরপরাধ মানুষের প্রতি অভিশাপ দেয়া।
এ কাজগুলো মূলত: পথভ্রষ্ট শিয়া সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে আর অনেক অজ্ঞ মুসলিম নাজানার কারণে তাদের সাথে এ সব কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে!
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬▬▬▬▬▬
গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত নারীগণ


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: মহিলা সাহাবীদের মধ্যে কি কেউ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন? হলে তাদের নাম কি?
উত্তর:
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহির মারফতে কতিপয় পুরুষ সাহাবীর পাশাপাশি কতিপয় মহিলার ব্যাপারে জান্নাতবাসী হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করেছেন। কিন্তু পুরুষ সাহাবীদের বিষয়টি সুপ্রসিদ্ধ হলেও মহিলাদের মধ্যে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে।
তাই নিম্নে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সৌভাগ্যবতী মহিলাদের মধ্যে ১২ জনের নামের একটি তালিকা তুলে ধরা হল: (যদিও তাদের সংখ্যা আরও বেশি):
১) আসিয়া আ. (ফেরআউনের স্ত্রী)
২) মরিয়ম বিনতে ইমরান আ. (আল্লাহর রাসূল ঈসা আলাইহিস সালাম এর মা)
৩) খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম এর স্ত্রী)
৪) আয়েশা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী এবং আবু বকর সিদ্দীক রা. এর কন্যা)
৫) ফাতিমা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ও আলী রা. এর স্ত্রী)
৬) হাফসা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী এবং উমর রা. এর কন্যা)
৭) উম্মে সুলাইম রা. (আবু তালহা রা. এর স্ত্রী)
৮) গুমায়সা বিনতে মিলহান রা.
৯) রবী বিনতে মুআওয়ায (মদীনার আনসারী মহিলা সাহাবী- যিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট যুদ্ধের বাইআত নিয়েছিলেন। বাইআত গ্রহণকারী সর্বমোট দু জন মহিলার মধ্যে তিনি একজন)
১০) সুমাইয়া রা. (ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহিদ)
১১) সুয়াইরা আল আসাদিয়া রা.
১২) উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (আনাস রা. এর খালা)
যে সব হাদিসের মধ্যে এ সকল সৌভাগ্যবতী মহিলা সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো জানতে এই বইটি পড়ুন:
“জান্নাতও জাহান্নাম এর সংবাদপ্রাপ্ত নারী-পুরুষগণ”
বইটির ওয়ার্ড ফাইল ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন এই লিংকে:
উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত ১২ জন ছাড়াও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলার সংখ্যা আরও রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান ঐ সকল সৌভাগ্যবান পুরুষ ও সৌভাগ্যবতী নারীদের দলভুক্ত হয়ে মুমিন জীবনের অভীষ্ট লক্ষ এবং অবর্ণনীয় নিয়ামত সমৃদ্ধ চূড়ান্ত প্রত্যাশার নীড় জান্নাতে প্রবেশের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

মুহররম মাসে বিয়ে-শাদী নিষিদ্ধ!!


▬▬▬◈◆◈▬▬▬
প্রশ্ন: লোকমুখে শোনা যায় যে, মুহররম মাসে না কি বিয়ে-শাদী নিষিদ্ধ? এ কারণে অনেক মানুষ এ মাসে বিয়ে করে না এবং বিয়ে দেয়ও না। এটা কি সঠিক?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। বরং বছরের কোন মাসেই কোন সময়ই বিয়ে-শাদী নিষিদ্ধ নয়। এ মর্মে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে সব‌ই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।
◆◆ মুহররম মাস নিয়ে শিয়াদের বাড়াবাড়ি:
মুহররম মাসে বিয়ে-শাদী করা ঠিক নয়- মর্মে প্রচলিত কথাটি শিয়া-রাফেযী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে। কেননা, এ মাসে (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) হুসাইন রা. কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মিথ্যা মায়াকান্না আর অতিভক্তি দেখিয়ে এ মাসে অনেক বিদআতি কার্যক্রম করে থাকে এবং শরীয়তের অনেক বৈধ জিনিসকে অবৈধ করে থাকে। যেমন তারা বলে, মুহররম মাসে নতুন জামা পড়া যাবে না, গোস্ত-মাছ ইত্যাদি ভালো খাবার খাওয়া যাবে না বরং কেবল নিরামিষ খেতে হবে, বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শুতে হবে, বিয়াশাদী দেয়া বা করা বৈধ নয়...ইত্যাদি। অথচ এ সব কথা শুধু দলীল বহির্ভূত নয় বরং দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইসলামী শরিয়ত যা নিষেধ করে নি তা নিষেধ করা মানে দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘন এবং ধৃষ্টতা প্রদর্শন।

শিয়ারা কেন হুসাইন রা. এর প্রতি এত দরদ দেখায়?

অবাক করা তথ্য!
আপনি জানেন কি? শিয়ারা কেন হুসাইন রা. এর প্রতি এত দরদ দেখায়?
▬▬▬◈◈◈▬▬▬
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
▬▬▬◈◈◈▬▬▬
শিয়া সম্প্রদায় কেন আলী রা. এর ছেলেদের মধ্যে কেবল হুসাইন রা. এর এত গুণগান করে এবং তার প্রতি এত দরদে দেখায়? কখনও কি এ বিষয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছেন? কখনো কি বিস্ময়কর মনে হয়েছে বিষয়টি?
এই তথ্য জানার পরে বিশ্বের অনেক মুসলিম হোঁচট খেয়েছে, বিশেষ করে আরব দেশের শিয়ারা। এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আসুন, আলী রা. এর সন্তানদের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নি।
আলী রা. এর মোট ছেলে ছিল ১১ জন । তাদের নাম নিম্নরূপ:
১) হাসান বিন আলী বিন আবু তালিব
২) হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব
৩) মুহসিন বিন আলী বিন আবু তালিব
৪) আব্বাস বিন আলী বিন আবু তালিব
৫) হেলাল বিন আলী বিন আবু তালিব
৬) আব্দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব
৭) জাফর বিন আলী বিন আবু তালিব
৮) উসমান বিন আলী বিন আবু তালিব
৯) উবায়দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব
১০) আবু বকর বিন আলী বিন আবু তালিব
১১) উমর বিন আলী বিন আবু তালিব

আশুরা তথা মুহররমের ১০ তারিখে রোযা রাখার ফযিলত কি? এ দিন ভালো খাবারের আয়োজন করলে সারা বছর ভালো খাওয়া যায়-এ কথা কি ঠিক?


▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর:
◈◈ আশুরার রোযা রাখার ফযিলত:
বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আশুরা তথা মুহররম মাসের ১০ তারিখে রোযা রাখলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা পেছনের এক বছরের গুনাহ মোচন করে দিবেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আবু কাতাদা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন:
ثَلاثٌ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ فَهَذَا صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
“প্রতি মাসে তিন দিন এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান পর্যন্ত রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার সাওয়াব অর্জিত হয়। আরাফার দিন রোযা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের এক বছরের এবং সামনেরে এক বছরের (মোট দু বছরের) গুনাহ মোচন করবেন। আর আশুরার দিন (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) রোযা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের এক বছরের গুনাহ মোচন করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/১১৬২)
➤ উল্লেখ্য যে, ৯ ও ১০- দু দিন রোযা রাখা অধিক উত্তম। তবে কোনো কারণে ৯ তারিখে রোযা রাখা সম্ভব না হলে ১০ ও ১১ তারিখে রাখা জায়েজ।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহঃ বলেন: ”মাসের শুরু চিনতে অসুবিধা হলে (৯, ১০ ও ১১ এ) তিন দিন রোযা রাখবে। যেন ৯ ও ১০ তারিখে রোযা নিশ্চিতভাবে সম্পন্ন করা যায়। (মুগনী ৩/১৭৪)
◈◈ আশুরার দিন ভালো খাবারের আয়োজন করা:

আলেম ও দ্বীনদার মানুষকে হুজুর বলা কি ঠিক?



প্রশ্ন: আমাদের দেশে মসজিদের ইমামকে ‘হুজুর’ বলা হয়। এভাবে কাউকে ‘হুজুর’ বলাটা কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
‘হুজুর’ শব্দটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। সাধারণত: আলেম, মসজিদের ইমাম ও দ্বীনদার-পরহেযগার মানুষদেরকে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করা হয়।
নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হল:
 'হুজুর' শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
 ‘হুজুর’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল, উপস্থিত হওয়া।
 “পরিভাষায় এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।” (ফার্সী অভিধান গিয়াসুল লুগাত, পৃষ্ঠা/১৭৪)
 অনলাইন ভিত্তিক অভিধান ebanglalibrary.com এ বলা হয়: হুজুর [ hujura] বি. নৃপতি, বিচারপতি, মনিব প্রভৃতিকে সম্মানসূচক সম্বোধন।
 বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।

বদমেজাজি ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি এবং এমন স্বামীর সাথে আচরণের ১৫টি কৌশল


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক বিপদে আছি। আমাদের একটা ছেলে আছে।আমাদের দুজনের সাথে সারাদিন সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে। সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে তর্ক হতে থাকে। এক পর্যায় মারামারি। সে আমাকে মারে। স্বামী পরকীয়া করে না কিন্তু তার রাগ-জিদটা একটু বেশী। আমি কি করব বুঝতে পারি না।
আমার মা নাই। আমাদের কেউ যাদু গ্রস্ত কি না কিভাবে বুঝব? প্লিজ আমাকে হেল্প করুন। আমাদের সংসার না টিকার মত অবস্থা।
উত্তর:
আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন এবং আপনার স্বামীকে হেদায়েত ও সুবুদ্ধি দান করুন। আমীন।
নিচে বদমেজাজি ব্যক্তিদের করুণ পরিণতি এবং এ জাতীয় স্বামীর সাথে ঘর-সংসার ও আচরণের ১৫টি কৌশল তুলে ধরা হল:
🌀 বদমেজাজি কাকে বলে এবং তাদের কী পরিণতি?
বদমেজাজি বলতে বুঝায় যে ব্যক্তি, সামান্য বিষয়ে রাগারাগি করে, বকাঝকা ও গালাগালি করে। সে যা বলে সেটাই করে। যার মধ্যে কারো মতামত শুনা বা আপোষ-মীমাংসার মনোভাব নাই। এরা অহংকারী, উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে।

শিয়া সম্প্রদায় যে প্রতি বছর ১০ মুহররমে মাতম করে, তাজিয়া মিছিল করে, নিজেদের শরীরে আঘাত করে-এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। এ কাজগুলো কি শরিয়ত সম্মত?


উত্তর:
৬১ হিজরির মুহররম মাসের দশ তারিখে হুসাইন বিন আলী রা. রাজনৈতিক কারণে ফিতনায় পতিত হয়ে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা ইয়াজিদ বিন মুআবিয়া এর সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার প্রতি সমবেদনার বর্হি:প্রকাশ হিসেবে শিয়া সম্প্রদায় প্রতি বছর ১০ম মুহররমে নিজেদের শরীরকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে, মাথা মুণ্ডন করে, রাস্তায় রাস্তায় ‘হায় হুসাইন..হাই হুসাইন’ বলে কান্নাকাটি ও মাতম করে, কালো ব্যাচ ধারণ করে, তাজিয়া মিছিল বের করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সব, বিদআত, জাহেলিয়াত পূর্ণ ও হারাম কাজ। নিম্নাক্ত আলোচনা থেকে তা প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
 মৃত্যুশোকে কান্নাকাটি করা, মাতম করা, শরীরে আঘাত করা ইত্যাদির বিধান কি?
মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيَحْزَنُ الْقَلْبُ وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَاللَّهِ يَا إِبْرَاهِيمُ إِنَّا بِكَ لَمَحْزُونُونَ
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।” [সহীহ বুখারী: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭,মাকতাবা শামেলা]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন, মাথার চুল, জুতা, লাঠি, পাগড়ি ইত্যাদি) এবং আমাদের করণীয়:


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: বিভিন্ন স্থানে এবং সামাজিক মিডিয়ায় অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন: তাঁর জামা, জুতা, চুল, চাদর, তলোয়ার ইত্যাদি) প্রদর্শন করে চলেছে। সরলমনা মানুষ সেগুলো বিশ্বাস করছে এবং সেগুলোর প্রতি ভক্তি ও বিনয় প্রকাশ করছে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি এগুলো রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যবহৃত আসবাব-সমগ্রী?
উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যেমন তা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হওয়া জরুরি ঠিক তদ্রূপ তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, জুতা, জামা, জুব্বা, চাদর, পাগড়ি, মাথার চুল, লাঠি, ঘটি-বাটি ও অন্যান্য ব্যবহৃত আসবাব-পত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে সব বস্তুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ করা হচ্ছে সেগুলোর পেছনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই যে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আশুরার দিন 'শোক' বা 'কালো দিন' নয় বরং বিজয় ও কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন:


হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্য, আশুরার দিন আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী বনী ইসরাইলকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তাগুত নিজেকে 'সুউচ্চ রব' দাবীদার অহংকারী শাসক ফেরাউন এবং তার বিশাল সেনাবাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে মুসা আলাইহিস সালাম সে দিন রোযা রেখেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিন রোযা রেখেছেন এবং তার উম্মতকে রোযা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সুতরাং নি:সন্দেহে এ দিনটি শত্রুর উপর বিজয় ও আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন।
হ্যাঁ, ইতিহাসের এক ক্রান্তি লগ্নে ৬১ হিজরির এ দিনে হুসাইন রা. নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। এতে নি:সন্দেহে মুসলিম বিশ্ব ব্যথিত ও মর্মাহত। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, সাহাবীদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। যেমন: হুসাইন রা. এর পিতা ৪র্থ খলীফা আলী রা., ৩য় খলীফা উসমান রা, মুসলিম জাহানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. প্রমূখ সাহাবীগণের নির্মম ও হৃদয় বিদারক হত্যাকাণ্ড, বীরে মাউনার ঘটনায় ৭০জন হাফেজে কুরআন সাহাবীর নির্মম হত্যাকাণ্ড, ওহুদের প্রান্তরে ৭০জন সাহাবীর শাহাদত বরণ....ইত্যাদি অসংখ্য ঘটনা।
সুতরাং কারো নিহত হওয়া বা শাহাদাত বরণের দিনকে যদি 'শোক ও কালো দিবস' হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তাহলে উপরের সবগুলো দিনকেই ধরতে হয়। কিন্তু ইসলামে 'কালো দিবস' বা 'শোক দিবস' বলে কিছু নেই। কেননা যারা আল্লাহর জন্য জীবনকে সমর্পণ করে তারা কখনো শোকে হতবিহবল হয় না, তারা কোনও দিনকে 'কালো দিন' মনে করে না। ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ-শাহাদাত বরণ অতি গৌরবের, সফলতার এবং প্রতিটি মুমিন জীবনের এক পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়।
সুতরাং আসুন,
শিয়াদের কণ্ঠে কণ্ঠ না মিলেয়ে
এবং তাদের দেখানো অভিশপ্ত রাস্তায় না চলে
মিথ্যার উপর সত্যের বিজয়ের দিনে...
ফেরাউনের মত তাগুতের পতনের দিনে...
মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলের আনন্দের দিনে...
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে...
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের অংশ হিসেবে আশুরার সিয়াম পালন করি এবং এর মাধ্যমে আমাদের পূর্বের এক বছরের গুনাহ মোচনের জন্য চেষ্টা করি।
নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।আমীন।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

আমি যদি এই দোআটি না পড়তাম তবে ইহুদীরা জাদু করে আমাকে গাধা বানিয়ে ফেলত”


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: কা’ব বিন আহবার রহ. বলেছেন, “আমি যদি এই দোআটি না পড়তাম তবে ইহুদীরা তাদের জাদু দ্বারা আমাকে গাধা বানিয়ে ফেলত” এই হাদিসটা কি সহিহ?
উত্তর:
কাকা ইবনে হাকিম রহ. বলেন, কা’ব আল আহবার আমাকে বলেছেন, “একটি দোয়া যদি আমি না পড়তাম তাহলে ইহুদিরা আমাকে [জাদুর মাধ্যমে] গাধা বানিয়ে ফেলত।” তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, সেটি কোন দোয়া? তখন তিনি এ দোয়াটির কথা বললেন:
" أَعُوذُ بِوَجْهِ اللهِ الْعَظِيمِ الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ، وَبِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لاَ يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلاَ فَاجِرٌ، وَبِأَسْمَاءِ اللهِ الْحُسْنَى كُلِّهَا، مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمُ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ "
বাংলা উচ্চারণ :
আউযুবি ওয়াজহিল্লাযী লাইসা শাইয়ুন আ’যামা মিনহু
ওয়া বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতিল লাতি লা ইউজাভিযুহুন্না বাররুন ওয়া লা ফাজিরুন। ওয়াবি আসমা-ইল্লাহিল হুসনা কুল্লাহা মা আলিমতু মিনহা ওয়া মা লাম আ’লামু
মিন শাররি মা খলাকা ওয়া বারাআ ওয়া জারাআ।
বাংলা অর্থ :

দেনমোহর ও কাবিননামা



প্রশ্ন: আমি জানতে চাই কাবিননামা এবং দেনমোহর কি এক? যদি এক না হয় তাহলে পার্থক্য কি?

উত্তর: দেনমোহর এবং কাবিননামা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। নিম্নে এ দুটি জিনিসের পরিচয় ও পার্থক্য প্রদান করা হল:

🔸 দেনমোহর কী?

মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হল বিয়ের অন্যতম শর্ত। এই শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পায় বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে। দেনমোহর বিয়ের সময়ই ধার্য বা ঠিক করা হয়। এটি স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার।
আল্লাহ কুরআনে বলেন:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশী মনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” (সূরা নিসা: ৪)

🔸 কাবিননামা কী?

কাবিননামা বলতে বিবাহ সম্পাদনের লিখিত চুক্তি বোঝায়। একে নিকাহনামা বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিবাহ সম্পাদনের জন্য বা বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’ অপরিহার্য নয়। কাবিননামা একটি আইনি বাধ্যবাধকতা।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিননামা একটি আইনি দলিল। (বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ই-তথ্যকোষ)
--------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...