Friday 16 August 2019

কখন একজন ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যায়?


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা। একজন ব্যক্তির আহলুস সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যাওয়া মানে ওই ব্যক্তির বিদ‘আতী হিসেবে পরিগণিত হওয়া। আর বিদ‘আতী হিসেবে পরিগণিত হওয়া মানে মুক্তিপ্রাপ্ত দল থেকে খারিজ হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া। ❝প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ’র কোনো একটি মূলনীতির বিরোধিতা করে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট সে আহলুস সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যায় তথা “বিদ‘আতী” হিসেবে পরিগণিত হয়।❞
·
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মহান ইমাম, শাইখুল ইসলাম আবূ ‘আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন,
ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻼﺯﻣﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﻣﻨﻬﺎ ﺧﺼﻠﺔ –ﻟﻢ ﻳﻘﺒﻠﻬﺎ ﻭﻳﺆﻣﻦ ﺑﻬﺎ– ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻠﻬﺎ.
“আবশ্যকীয় সুন্নাহ’র (মানহাজের) মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কোনো একটি বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করবে, তা গ্রহণ করবে না এবং তার প্রতি ঈমানও আনবে না, তবে সে সুন্নাহপন্থিদের তথা আহলুস সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত নয়।” [ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ), উসূলুস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৩; ছাপা ও তারিখ বিহীন; ইমাম আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]
ইমাম বুখারীর উস্তায, আমীরুল মু’মিনীনা ফিল হাদীস, আশ-শাইখুল ইমাম, আল-হুজ্জাহ আবুল হাসান ‘আলী বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন জা‘ফার বিন মাদীনী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৩৪ হি.]-ও এই কথা বলেছেন। [ইমাম আল লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৮; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৫৬; দারুল বাসীরাহ, আলেকজান্দ্রিয়া কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]
·
বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] ইমাম আহমাদের উক্তিটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,
‏ﺍﻧﺘﺒﻬﻮﺍ ﻟﻬﺬﺍ؛ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻔﻘﺮﺓ ﻣﻬﻤﺔ ﺟﺪﺍً، ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ﺳﻴﺼﻒ ﻟﻨﺎ ﺃﺻﻮﻻً ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺷﻴﺌﺎً ﻣﻨﻬﺎ ﻓﻠﻴﺲ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ؛ ﻳﻌﻨﻲ ﻳﺨﺮﺝ ﻋﻦ ﺩﺍﺋﺮﺓ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺇﻟﻰ ﺩﺍﺋﺮﺓ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ، ﺗﻨﺒﻬﻮﺍ ﻟﻬﺬﺍ.
‏(ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻼﺯﻣﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﻣﻨﻬﺎ ﺧﺼﻠﺔ) ﻓﺈﺫﺍ ﺗﺮﻛﻬﺎ ﻛﻠﻬﺎ ﺃﻭ ﻣﻌﻈﻤﻬﺎ ﻓﻬﺬﺍ ﻫﻮ ﺍﻟﺒﻼﺀ، ‏(ﻟﻢ ﻳﻘﺒﻠﻬﺎ‏) ﻳﻌﻨﻲ ﺃﺑﺎﻫﺎ، ‏(ﻟﻢ ﻳﻘﺒﻠﻬﺎ ﻭﻳﺆﻣﻦ ﺑﻬﺎ - ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻠﻬﺎ) ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﻭ ﺍﻟﻀﻼﻝ ﻭ ﺍﻟﻌﻴﺎﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ.
“তোমরা এ ব্যাপারে সতর্ক হও! এই অনুচ্ছেদটি খু্বই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম আহমাদ আমাদের নিকটে কিছু উসূল (মূলনীতি) বর্ণনা করবেন। যে ব্যক্তি তা থেকে কোনো কিছু পরিত্যাগ করবে, সে আহলুস সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, সে সুন্নাহ’র গণ্ডি থেকে বের হয়ে বিদ‘আতের দিকে চলে যাবে। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক হও।
আবশ্যকীয় সুন্নাহ’র (মানহাজের) মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কোনো একটি বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করবে (তার জন্যই এই কথা)। কিন্তু যে ব্যক্তি তার সকল বা অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করে, তবে সেটা তো (তার জন্য) এক দুর্যোগ।
((তা গ্রহণ করবে না)) অর্থাৎ, সে তা অস্বীকার করবে।

((এবং তার প্রতি ঈমানও আনবে না, তবে সে সুন্নাহপন্থিদের তথা আহলুস সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত নয়)) যখন সে আহলুস সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত থাকবে না, তখন সে বিদ‘আতী এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ’র কাছে এ থেকে পানাহ চাই।” [ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু উসূলিস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ১২; প্রকাশনার নাম ও তারিখ বিহীন; মাজমূ‘উশ শাইখ রাবী‘; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩৭৩; দারুল ইমাম আহমাদ, মিশর কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখ বিহীন]
·
বর্তমান যুগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইমাম, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ড. সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন,
كل من خالف أهل السنة والجماعة ممن ينتسبون إلى الإسلام في الدعوة، أو في العقيدة، أو في شيئ من أصول الإيمان؛ فإنه يدخل في الإثنين وسبعين فرقة.
“ইসলামের সাথে নিজেকে সম্পৃক্তকারী যে ব্যক্তিই দা‘ওয়াহ কিংবা ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে অথবা ঈমানের কোনো মূলনীতির ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে, সে ব্যক্তিই (পথভ্রষ্ট) ৭২ ফিরক্বাহ’র অন্তর্ভুক্ত হবে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৩৫; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)]
·
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
إذا وافق عالم من علماء السنةِ أهلَ البدع في مسألة من مسائل الإعتقاد، فهل يلحق بهم؟
“আহলুস সুন্নাহ’র একজন ‘আলিম যদি বিদ‘আতীদের সাথে ‘আক্বীদাহর কোনো একটি মাসআলাহ’য় একমত হয়, তাহলে কি তিনি তাদের (বিদ‘আতীদের) একজন হিসেবেই গণ্য হবেন?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
نعم، إذا وافقهم في مسألة من مسائل الإعتقاد ومن أصول العقيدة، صار مبتدعا؛ نعم.
“হ্যা; সে যদি ‘আক্বীদাহর মাসায়েল ও ‘আক্বীদাহর মূলনীতির কোনো একটি মাসআলাহ’য় তাদের সাথে একমত হয়, তবে সে বিদ‘আতী হয়ে যাবে।” [দ্র.: www.youtube.com/watch?v=4gJJZ2IQH9Q (অডিয়ো ক্লিপ)]
·
মাদীনাহ’র প্রখ্যাত ফাক্বীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] কে প্রশ্ন করা হয়েছে,
ﻣﺘﻰ ﻳﺨﺮﺝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻨﻬﺞ ﺍﻟﺴﻠﻔﻲ ﻭﻳﺤﻜﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺄﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﺳﻠﻔﻴﺎ؟
“কখন একজন ব্যক্তি সালাফী মানহাজ থেকে বেরিয়ে যায়? আর কখন তার উপর এই হুকুম লাগানো যায় যে, সে সালাফী না?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন,
ﻫﺬﺍ ﺑﻴﻨﻪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻭﺿﻤﻨﻮﻩ ﻛﺘﺒﻬﻢ ﻭﻧﺼﺎﺋﺤﻬﻢ ﻭﻫﻮ ﺿﻤﻦ ﻣﻨﻬﺠﻬﻢ، ﻭﺫﻟﻚ ﺃﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻳﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻔﻴﺔ ﺇﺫﺍ ﺧﺎﻟﻒ ﺃﺻﻼ ﻣﻦ ﺃﺻﻮﻝ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻗﺎﻣﺖ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺬﻟﻚ ﻭﺃﺑﻰ ﺍﻟﺮﺟﻮﻉ، ﻫﺬﺍ ﻳﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻔﻴﺔ ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺣﺘﻰ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﺮﻭﻉ ﺇﺫﺍ ﺧﺎﻟﻒ ﻓﺮﻋﺎ ﻣﻦ ﻓﺮﻭﻉ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻓﺄﺻﺒﺢ ﻳﻮﺍﻟﻲ ﻭﻳﻌﺎﺩﻱ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ، ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻔﻴﺔ.
“ ‘আলিমগণ এই বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এবং তাঁদের গ্রন্থ ও নসিহতসমূহে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এটা তাঁদের মানহাজেরই অন্তর্ভুক্ত। আর তা হলো—ওই ব্যক্তি সালাফিয়্যাহ থেকে বেরিয়ে যাবে, যখন সে আহলুস সুন্নাহ’র মূলনীতিসমূহের কোনো একটি মূলনীতির বিরোধিতা করবে। আর তার উপর এ ব্যাপারে দলিল প্রতিষ্ঠা (হুজ্জত কায়েম) করা সত্ত্বেও সে যদি (তার ভ্রষ্টতা) থেকে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তাহলে সে সালাফিয়্যাহ থেকে বেরিয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে ‘আলিমগণ ফুরূ‘ঈ (শাখাগত) মাসআলাহর ক্ষেত্রেও একথা বলেছেন যে, যে ব্যক্তি দ্বীনের ফুরূ‘ঈ (শাখাগত) বিষয়সমূহের কোনো একটি ফারা‘র (শাখার) বিরোধিতা করে এবং এরই ভিত্তিতে মিত্রতা ও শত্রুতা পোষণ করে, সেও সালাফিয়্যাহ থেকে বেরিয়ে যাবে।” [ইমাম ‘উবাইদ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ), জিনায়াতুত তামায়ু‘ঈ ‘আলাল মানহাজিস সালাফী; পৃষ্ঠা: ৪৯; আল-মীরাসুন নাবাউয়ী, আলজিয়ার্স কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৩ হি./২০১২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
আর তাইতো আমরা সালাফদের মধ্যে দেখতে পাই, তাঁরা ওই সকল লোকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং তাদেরকে “বিদ‘আতী” বলেছেন, যারা সুন্নাহ’র কোনো একটি মূলনীতিতে আহলুস সুন্নাহ’র বিরোধিতা করেছে। এ ব্যাপারে অসংখ্য দলিল বিদ্যমান রয়েছে। কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় আমরা সেসব উল্লেখ করছি না।
পরিশেষে প্রার্থনা, আল্লাহ আমাদেরকে সালাফিয়্যাহ’র সকল মূলনীতিতে আহলুস সুন্নাহ’র সাথে একমত হওয়ার এবং বিদ‘আতী মানহাজ থেকে দূরে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
সংকলক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...