Wednesday 15 August 2018

যারা শুধু সফর অবস্থায় শরীকানায় কুরবানী করা বৈধ মনে করেন তাদের দলীল নির্ভর প্রতিবাদ


আল হামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ:
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরবানী করা একটি প্রমাণিত ইবাদত, যাকে অধিকাংশ উলামা সুন্নতে মুআক্কাদাহ (তাগিদী সুন্নত) বলেছেন এবং ক্ষমতাবানদের তা পরিত্যাগ করা অনুচিত মনে করেছেন। [আল্ মুগনী, ইবনু কুদামাহ, ১৩/৩৬০, ফিকহুস্ সুন্নাহ, সাইয়্যেদ সাবেক,৩/১৯৫]
তাই প্রতি বছর যখন কুরবানীর সময় উপস্থিত হয়, তখন মুসলিম সমাজে এই ইবাদতটি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। মুসলিম ভাইয়েরা তাদের সাধ্যানুযায়ী ছাগল, ভেড়া, গরু ও উট দ্বারা কুরবানী দিয়ে থাকেন। অনেকে গরু বা উটে শরীক হয়ে ৭ ভাগের এক-দুই ভাগেও কুরবানী দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই সময় একটি প্রসঙ্গ প্রায় প্রায় উঠে আসে যে, এই রকম শরীকানায় কুরবানী দেওয়া বৈধ না অবৈধ? অনেকের ধারণা, মুকীম ব্যক্তি [মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি] উট-গরুর সাত ভাগের কোন এক ভাগে অংশী হয়ে কুরবানী দিতে পারে না। কারণ স্বরূপ তারা মনে করেন, শরীকানায় কুরবানী দেয়াটা মুসাফির বা সফরের সাথে সম্পৃক্ত; মুকীমের সাথে নয়। তাই এই বিষয়টির শারয়ী সমাধানার্থে কিছু আলোকপাত করার মনস্থ করেছি। ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।
এ বিষয়ের দুটি পরিভাষা: আমরা শুরুতে কুরবানী সংক্রান্ত দুটি পরিভাষা জেনে নিব যা, আমাদের আলোচ্য বিষয়টি ভাল ভাবে জানতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
উযহিয়া: (আমাদের সমাজে যা কুরবানী নামে পরিচিত) সেই গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুকে বলা হয়, যা কুরবানীর দিন সমূহে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে বাড়িতে যবাই করা হয়। [আল্ মুলাখ্খাস আল্ ফিকহী/২১৩]হাদ্ঈ: সেই চতুষ্পদ জন্তুকে বলা হয়, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানীর দিনগুলিতে হারামে (মক্কায়) যবাই করা হয় ‘তামাত্তু’ কিংবা ‘কিরান’ হজ্জ করার কারণে কিংবা হজ্জ বা উমরার কোন ওয়াজিব কাজ ছুটে যাওয়ার কারণে কিংবা ইহরাম অবস্থার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার কারণে। [ফিক্হ বিশ্বকোষ,৫/৭৪, শব্দ উয্হিয়্যাহ] যেহেতু এই পশুকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাদীয়া করা হয়, তাই তাকে হাদ্ঈ বলে। [আল্ মুলাখ্খাস আল ফিকহী, ড.ফাউযান,৩১৩]
উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্যটি হচ্ছে, হাদ্ঈ হজ্জ বা উমরা পালনকারীর পক্ষ থেকে মক্কায় যবাই করা হয় এবং উযহিয়া হজ্জ বা উমরা পালনকারী নয়, এমন ব্যক্তির মাধ্যমে নিজ বাসস্থানে যবাই করা হয়।
হজ্জ ও উমরায় হাদ্ঈতে শরীক হওয়ার প্রমাণ: হজ্জ কিংবা উমরা করার সময় একটি হাদ্ঈতে সাত ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী দেয়ার একাধিক প্রমাণ সহীহ হাদীসে বিদ্যমান। আমরা এখানে তারই কয়েকটি উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
عن جابرٍ، قال: خرجنا مع رسولِ الله صلى الله عليه و سلم مُهِلِّيْنِ بالحَجِّ فأمرنا رسول الله صلى الله عليه و سلم أن نشترِكَ في الإبل والبقرِ، كل سبعةٍ منا في بَدَنَةٍ. رواه مسلم
“জাবের (রাযি:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নবী (সা:) এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলাম। অতঃপর তিনি (সা:) আমাদের উট ও গরুতে শরীক হওয়ার আদেশ দেন। আমাদের মধ্যে প্রত্যেক সাত জনকে একটি উটে”। [মুসলিম, অধ্যায়, হাজ্জ, অনুচ্ছেদ নং ৬২, হাদীস নং ৩৫১]
عن جابر بن عبد الله، قال: حججنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم، فنحرنا البعير عن سبعة، والبقرة عن سبعة. رواه مسلم
আবদুল্লার পুত্র জাবির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ করলাম। অতঃপর সাত জনের পক্ষে একটি উট নহর করলাম এবং সাত জনের পক্ষে একটি গাভী। [মুসলিম, অধ্যায়, হাজ্জ, অনুচ্ছেদ নং৬২, হাদীস নং ৩৫১]
এ প্রসঙ্গে জাবের (রাযি:) কর্তৃক বর্ণিত আরো কয়েকটি হাদীস সহীহ মুসলিমের উপরোক্ত অনুচ্ছেদে দেখা যেতে পারে।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...