Friday 16 August 2019

ঈদের রাতের ফজিলতের বিশুদ্ধতা


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।
অনেক মুসলিম ভাই ও বোন ঈদের রাতকে মাহাত্ম্যপূর্ণ মনে করেন এবং এ রাতে বিশেষ ইবাদত করে থাকেন। আবার এ বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন করেন যে, সত্যিই ঈদের রাতের ফজিলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে কি না। একারণেই এ নিবন্ধটির অবতারণা। ঈদের রাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীসগুলো বিশুদ্ধ কি না, ঈদের রাত উপলক্ষে ইবাদত করা যাবে কি না এবং এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র ‘আলিমদের বক্তব্য কী, তা সংক্ষেপে নিম্নে উল্লিখিত হলো।
·
ঈদের রাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীস:
·
১. আবূ উমামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ.
“যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে, তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যে দিন অন্তরসমূহ মরে যাবে।” [ইবনু মাজাহ, হা/১৭৮২; সনদ: মাওদ্বূ‘/দ্ব‘ঈফ জিদ্দান/দ্ব‘ঈফ]
·
তাহক্বীক্ব:
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফ ইবনু মাজাহ’য় হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফ ইবনু মাজাহ, হা/৩৫৩।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৬৬।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাহ দ্ব‘ঈফাহ গ্রন্থে হাদীসটিকে “দ্ব‘ঈফ জিদ্দান (খুবই দুর্বল)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফাহ, হা/৫২১।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুল জামি‘ গ্রন্থে হাদীসটিকে “দ্ব‘ঈফ (দুর্বল)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুল জামি‘, হা/৫৭৪২।
·
২. ‘উবাদাহ বিন সামিত (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন,
ﻣﻦ ﺃﺣﻴﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻷﺿﺤﻰ ﻟﻢ ﻳﻤﺖ ﻗﻠﺒﻪ ﻳﻮﻡ ﺗﻤﻮﺕ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ.
“যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের রাত এবং ঈদুল আদ্বহার রাত জাগরণ করবে, তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যে দিন অন্তরসমূহ মরে যাবে।” [মাজমা‘উয যাওয়াইদ, ২/১৯৮; সনদ: মাওদ্বূ‘]
·
তাহক্বীক্ব:
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাহ দ্ব‘ঈফাহ গ্রন্থে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফাহ, হা/৫২০।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৬৮।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুল জামি‘ গ্রন্থে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুল জামি‘, হা/৫৩৬১।
·
৩. মু‘আয বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেন,
من أحيا اللياليَ الأربعَ، وجبت له الجنة: ليلةَ التروية، وليلة عرفة، وليلة النحر، وليلة الفطر.
“যে ব্যক্তি চারটি রাত জাগরণ করল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল—(১) তারবিয়াহ’র রাত তথা ৮ জিলহজের রাত, (২) ‘আরাফাহর রাত তথা ৯ জিলহজের রাত, (৩) কুরবানীর রাত তথা ১০ জিলহজের রাত এবং (৪) ঈদুল ফিতরের রাত।” [আল-আমালী, ২/১৮৬; সনদ: মাওদ্বূ‘]
·

তাহক্বীক্ব:
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সিলসিলাহ দ্ব‘ঈফাহ গ্রন্থে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফাহ, হা/৫২২।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৬৭।
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) দ্ব‘ঈফুল জামি‘ গ্রন্থে হাদীসটিকে “মাওদ্বূ‘ (বানোয়াট)” বলেছেন। দ্র.: দ্ব‘ঈফুল জামি‘, হা/৫৩৫৮।
·
এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে ‘আলিমদের বক্তব্য:
·
১. শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
ﺍﻷَﺣَﺎﺩِﻳﺚُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗُﺬْﻛَﺮُ ﻓِﻲ صِيَامِ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻌِﻴﺪَﻳْﻦِ ﻛَﺬِﺏٌ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ.
“জুমু‘আহর দিনের রোজা এবং দুই ঈদের রাত সম্পর্কে যে হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়, সেগুলো নাবী ﷺ এর নামে মিথ্যাচার।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৩; পৃষ্ঠা: ১৩৫; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস কর্তৃক মুদ্রিত; সন: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
২. ইমাম আবূ যাকারিয়্যা মুহীউদ্দীন বিন শারফ আন-নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
قال أصحابنا: ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﻠﺘﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺑﺼﻼﺓ ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻫﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻄﺎﻋﺎﺕ، ‏(ﻭﺍﺣﺘﺞ‏) ﻟﻪ ﺃﺻﺤﺎﺑﻨﺎ ﺑﺤﺪﻳﺚ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ { ﻣﻦ ﺃﺣﻴﺎ ﻟﻴﻠﺘﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻟﻢ ﻳﻤﺖ ﻗﻠﺒﻪ ﻳﻮﻡ ﺗﻤﻮﺕ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ } ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ : { ﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﻟﻴﻠﺘﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻣﺤﺘﺴﺒﺎ ﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻟﻢ ﻳﻤﺖ ﻗﻠﺒﻪ ﺣﻴﻦ ﺗﻤﻮﺕ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ } ﺭﻭﺍﻩ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻣﻮﻗﻮﻓﺎ ، ﻭﺭﻭﻱ ﻣﻦ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﻣﻮﻗﻮﻓﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻣﺮﻓﻮﻋﺎ ﻛﻤﺎ ﺳﺒﻖ ، ﻭﺃﺳﺎﻧﻴﺪ ﺍﻟﺠﻤﻴﻊ ﺿﻌﻴﻔﺔ.
“আমাদের সাথীরা বলেন, নামাজ ও অন্যান্য ভালো আমলের মাধ্যমে দুই ঈদের রাত জাগরণ করা মুস্তাহাব। আমাদের সঙ্গীবর্গ আবূ উমামাহ’র এই হাদীস দিয়ে দলিল দেন...।... ইমাম শাফি‘ঈ হাদীসটি আবূ দারদা থেকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও আবূ উমামাহ থেকে হাদীছটি মাওকূফ ও মারফূ‘ উভয় সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি পূর্বে গত হয়েছে। (উল্লিখিত) সকল হাদীসের সনদ দ্ব‘ঈফ।” [ইমাম আন-নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ), আল মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৫০; ছাপা ও সন বিহীন]
·
৩. ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আলী আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৫০ হি./১৮৩৪ খ্রি.] বলেছেন,
لم يكن من هديه ﷺ اختصاص ليلة الفطر أو الأضحىٰ بقيام أو صلوة معينة، وكل ما يروى في ذلك موضوع.
“নির্দিষ্ট নামাজ বা ক্বিয়ামের (রাতের ইবাদত) মাধ্যমে ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার রাতকে খাস করা নাবী ﷺ এর আদর্শের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এ ব্যাপারে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তার সবই বানোয়াট।” [ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ), নাইলুল আওত্বার; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১১৭; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৭ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
৪. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ﻫﻞ ﻫﻨﺎﻙ ﺳﻨﺔ ﻣﻌﻴﻨﺔ ﺗﻔﻌﻞ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻌﻴﺪ؟
الجواب: ﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﺳﻨﺔ ﻣﻌﻴﻨﺔ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﺳﻮﻯ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻣﻌﺮﻭﻑ، ﻣﻦ ﺍﻟﺬﻛﺮ، ﻭﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺍﻟﺜﺎﺑﺖ ﺑﻘﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ﻭَﻟِﺘُﻜْﻤِﻠُﻮﺍْ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓَ ﻭَﻟِﺘُﻜَﺒِّﺮُﻭﺍْ ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻫَﺪَﺍﻛُﻢْ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ . ﻭﻗﺪ ﻭﺭﺩ ﺣﺪﻳﺚ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺇﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﻠﺘﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪ،ﻟﻜﻨﻪ ﺣﺪﻳﺚ ﺗﻜﻠﻢ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ، ﻭﻻ ﺃﺟﺴﺮ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺗﺜﺒﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺑﻤﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ.
প্রশ্ন: “ঈদের রাতে পালনীয় কোনো নির্দিষ্ট সুন্নাত আছে কি?”
উত্তর: “ঈদের রাতে কোনো নির্দিষ্ট সুন্নাত আছে বলে আমার জানা নেই। তবে সুবিদিত (ইবাদত) জিকির ও তাকবীর ব্যতীত, যা মহান আল্লাহ’র এ কথার দ্বারা সুসাব্যস্ত—“যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হিদায়াত দান করার দরুন আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা করো (তথা রমজান ও শাওয়ালের চাঁদ দেখে ‘আল্লাহু আকবার’ বলো), আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৮৫) অবশ্য ঈদের দুই রাত জাগরণের ফজিলত প্রসঙ্গে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এটি এমন একটি হাদীস, যে হাদীসের সমালোচনা করেছেন ‘আলিমগণ। আমি এ ধরনের হাদীস দিয়ে এই সুন্নাতকে সাব্যস্ত করার ঝুঁকি নিচ্ছি না।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২০৯-২১০; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৫. ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)’র আরেকটি ফাতওয়া—
ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ: ﺃﺣﺴﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻴﻜﻢ . ﻫﻞ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺤﻴﻲ ﻟﻴﻠﺘﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺑﺎﻟﻘﻴﺎﻡ ﺃﻭ ﻗﺮﺍﺀﺓ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ؟ ﻭﻫﻞ ﻳﻮﺟﺪ ﺣﺪﻳﺚ ﻟﻠﺘﺮﻏﻴﺐ ﻓﻲ ﻗﻴﺎﻡ ﻫﺎﺗﻴﻦ ﺍﻟﻠﻴﻠﺘﻴﻦ؟
ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ: ﻓﻴﻬﻤﺎ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﺿﻌﻴﻔﺔ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﺇﺣﻴﺎﺋﻬﻤﺎ، ﻭﺃﻣﺎ ﻣﻦ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﻔﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﺤﻴﻲ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻭﻣﺎ ﻗﺎﻡ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻛﻠﻪ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﺧﻴﺮﺓ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺭﺟﺎﺀً ﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ، ﻓﺈﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺃﺣﻴﺎ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻛﻠﻪ. ﻧﻌﻢ.
প্রশ্ন: “আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। রাসূল ﷺ কি ক্বিয়াম ও কুরআন পাঠের মাধ্যমে দুই ঈদের রাত জাগরণ করতেন?”
উত্তর: “এই দুই রাত জাগরণের ব্যাপারে কিছু দ্ব‘ঈফ হাদীস রয়েছে। পক্ষান্তরে রাসূল ﷺ এর কর্মে এটা পাওয়া যায় না যে, তিনি এমনটি করেছেন। তিনি ক্বদরের রাত পাওয়ার আশায় রমজানের শেষ দশক ছাড়া অন্য কোনো রাত সম্পূর্ণ জাগরণ করেননি। যখন শেষ দশক আগমন করত, তখন তিনি ﷺ সম্পূর্ণ রাত জাগরণ করতেন।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দার্ব; ৩৪১ নং অডিয়ো ক্লিপ; সংগৃহীত: binothaimeen.net/content/12387.]
·
৬. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া—
ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ: ﻗﻴﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ - ﺻﻼﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ - ﺑﺎﻟﻤﺴﺠﺪ ﻣﺎ ﺣﻜﻢ ﺫﻟﻚ، ﻭﻫﻞ ﻫﻲ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺃﻡ ﻣﻦ ﺷﻮﺍﻝ؟“
ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ: ﺗﺨﺼﻴﺺ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﺑﻘﻴﺎﻡ ﺩﻭﻥ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻳﻌﺘﺒﺮ ﺑﺪﻋﺔ؛ ﻷﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺳﻨﺔ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻋﻤﻼً ﻟﻴﺲ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ، ﺳﻮﺍﺀً ﻗﺎﻣﻬﺎ ﻣﻨﻔﺮﺩًﺍ ﺃﻭ ﻣﻊ ﺟﻤﺎﻋﺔ، ﻭﺃﻣﺎ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻗﻴﺎﻡ ﻣﻌﺘﺎﺩ ﻓﻲ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ، ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﻳﻔﻌﻠﻪ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻌﻴﺪ، ﻟﻜﻦ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﻤﺎﻋﺔ. ﻭﻟﻴﻠﺔ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻟﻴﺴﺖ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﺫﺍ ﺛﺒﺖ ﺩﺧﻮﻝ ﺷﻬﺮ ﺷﻮﺍﻝ. ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ، ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﻭﺳﻠﻢ.
প্রশ্ন: “ঈদুল ফিতরের রাতে মাসজিদে ক্বিয়াম—তারাবির নামাজ—করার বিধান কী? এই রাত কি রমজানের অন্তর্ভুক্ত, না কি শাওয়াল মাসের অন্তর্ভুক্ত?”
উত্তর: “অন্যান্য সকল রাত বাদ দিয়ে স্রেফ ঈদের রাতকে ক্বিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত হিসেবে পরিগণিত হবে। কেননা তা নাবী ﷺ এর সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত নয়। আর নাবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের (শার‘ঈ) নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮) ব্যক্তি একাকী ক্বিয়াম করুক, চাই জামা‘আতবদ্ধভাবে করুক (সবক্ষেত্রেই একই বিধান, অর্থাৎ বিদ‘আত)।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির সকল রাতে ক্বিয়ামের অভ্যাস আছে। তার জন্য ঈদের রাতে ক্বিয়াম করায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তা জামা‘আতবদ্ধভাবে হবে না। আর ঈদুল ফিতরের রাত রমজানের অন্তর্ভুক্ত নয়, যখন প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, শাওয়াল মাস আগমন করেছে।
আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীবর্গের ওপর দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
ফাতওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ বাকার আবূ যাইদ (রাহিমাহুল্লাহ)। [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৯৬; ফাতওয়া নং: ১৭১৫৪; সংগৃহীত: alifta.net]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, ঈদের রাতের ফজিলত বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত না, বিধায় এ রাতের ইবাদতও সুন্নাহ হিসেবে সাব্যস্ত না। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...