Monday 24 July 2017

বর্তমান যুগে কেনো সর্বপ্রথম সঠিক ‪আক্বীদার দিকে দাওয়াত দিতে হবে?


- লিখেছেন শায়খ আব্দুর রাক্বীব মাদানী হা’ফিজাহুল্লহ।
দ্বাইয়ী, খাফজী দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব।

(১) কারণ ইসলাম ঈমান (আক্বীদা) ও আমলের নাম। ইসলামের পন্ডিতগণ আক্বীদাকে বলেন উসূল (মূল) আর আমলকে (ফিকহকে) বলেন ফুরূ (গৌণ)। তাই মূল বিষয়ের দাওয়াত ছেড়ে গৌণ বিষয়ের দিকে দাওয়াত দেওয়া অজ্ঞতা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়াতের বিপরীত।
(২) কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে বিশ্বাসী করতো, কিন্তু তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মুসলিম বলে স্বীকার করেন নি। কিন্তু আজ বিশ্বের বহু লোক এই কারণে নিজেকে মুসলিম দাবী করছে বা লোকেরা তাকে মুসলিম ভাবছে, কারণ তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে বলে দাবী করে।
(৩) কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে যখন কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল এবং তাতে যখন আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলী উল্লেখ করা হচ্ছিল (যেমনঃ ‘আল্লাহ আরশে সমুন্নত’, ‘আল্লাহ দুই হাতে আদম আঃ কে সৃষ্টি করেছে’) তখন তাঁর সমুন্নত হওয়া ও তাঁর দুই হাত থাকা এই ভাবে অন্যান্য গুণাবলী তারা অস্বীকার করতেন না, আর না অপব্যাখ্যা দিতেন। কিন্তু আজকের সমাজের অনেক মুসলিমরা আল্লাহর আসমা ও সিফাতকে (নাম এবং গুণাবলীকে) অস্বীকার করে আর অনেকে সেইগুলোর অপব্যাখ্যা দেয়।
(৪) কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে একজন মানুষ মনে করতেন ও আল্লাহর বান্দা মনে করতেন। কিন্তু বর্তমান যুগের নামধারী মুসলিমরা নবী ও আল্লাহর মধ্যে পার্থক্য করতে চায় না। আর অনেকে বলেঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নূরের তৈরি (নাযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
(৫) কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ মনে করতেন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেছেন কিন্তু বর্তমান নামধারী অনেক মুসলিমরা বলেঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে দুনিয়ার মতই জীবিত, তাকে মরা বলা হারাম এবং বেয়াদবী!

কবরের জীবন, কবরের ফেতনা, কবরের আজাব থেকে বাঁচার উপায় (পর্ব-২)



কবরে আযাব হওয়ার কারণঃ
কবরের আযাব হওয়ার কারণ হচ্ছে দুনিয়ার জীবনে কবীরাহ গুনাহ বা বড়বড় পাপকাজে লিপ্ত থাকা। কবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত থাকা এবং তোওবা না করে, সংশোধন না করেই মৃত্যুবরণ করা। হাদীসে বিশেষ ২টি কারণ উল্লেখ করা আছে, যেই দুইটি পাপকে মানুষ ছোট মনে করে কিন্তু অনেকেই এই ২টি পাপ কাজের কারণে আযাব দেওয়া হবে।
১. চোগলখুরী করা (এক জনের গীবত আরেকজনের কাছে বলে মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করা)।
২. পেশাবের অপবিত্রতা থেকে সাবধান না থাকা।
একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা বা মক্কার কোন একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দু’জন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ বড় কোন অপরাধের কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেনঃ তাদের একজন পেশাব করার সময় আড়াল করতোনা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাত। বুখারীঃ কিতাবুল ওযু অধ্যায়।
কাতাদা (রঃ) বলেনঃ আমাদেরকে বলা হয়েছে কবরের আযাবের এক তৃতীয়াংশ হবে গীবতের কারণে, এক তৃতীয়াংশ পেশাব থেকে সাবধান না থাকার কারণে এবং এক তৃতীয়াংশ #চুগলখোরীর কারণে। যেহেতু গীবতকারী এবং চুগলখোর মিথ্যা কথাও বলে থাকে তাই সে #মিথ্যাবাদীর শাস্তিও ভোগ করবে।
কবরের আযাব থেকে বাঁচার উপায়ঃ
১. কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া ও দুয়া করাঃ
কবররে আযাব থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দুয়া করতে হবে, বিশেষ করা দুয়া মাসুরাতে বেশি বেশি দুয়া করতে হব। যেই দুয়া মাসুরা পড়তে হবেঃ
দুয়া মাসুরা অর্থ হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত দুয়া যেইগুলো রাসুল সাঃ করতেন। আমাদের দেশের মানুষ মনে করে, দুয়া মাসুরা শুধু একটাই (আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসান যুলমান কাসিরাও...), এটা ভুল। নামাযে সালাম ফিরানোর আগে পড়তে হয় এমন অনেক সুন্দর সুন্দর দুয়া আছে সহীহ হাদীসে। কারণ, ফরয নামাযে আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ার পরে, সালাম ফেরানোর আগে দুয়া বেশি কবুল করা হয়। দুয়া মাসুরা এক বা একের অধিক, যত ইচ্ছা পড়া যায়। এইগুলো মুখস্থ করে আমল করা উচিত।

Sunday 23 July 2017

কবরের জীবন, কবরের ফেতনা, কবরের আজাব থেকে বাঁচার উপায় (পর্ব-১)



পরকালের অনন্তকালের জীবনের জন্য আমাদের প্রথম স্টেশান হচ্ছে কবর। শুধুমাত্র যাদের উপর কেয়ামত কায়েম হবে তারা ছাড়া, আর সকলকেই এই কবরের মধ্য দিয়ে পরকালের জীবন শুরু করবে। প্রথম এই স্টেশানটা যিনি নিরাপদে পার করতে পারবে, মোটামুটি আশা করা যায় - রোয কেয়ামতের দিন, হাশর ও মীযানের সময়ও তিনি নিরাপদে পার করতে পারবেন। তাই আমাদের সকলের চেষ্টা করা উচিত, কবরের জীবনে যাতে করে শান্তিতে থাকতে পারি তার জন্য আত্মনিয়োগ করা।
কবরের জীবনের ফেতনাঃ
প্রতিটি আদম সন্তান, সে কাফের হোক, ঈমানদার বা মুনাফেক হোক – সকলকেই কবরে ৩টি প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হবে।
১. ‘মার-রব্বুকা’ - তোমার রব্ব কে?
২. ‘ওয়ামা দ্বীনুকা’ – তোমার দ্বীন (ধর্ম/জীবন ব্যবস্থা) কি?
৩. এই ব্যক্তি কে (রাসুল সাঃ এর ব্যপারে প্রশ্ন করা হবে)?
একে কবরের #ফেতনা বলা হয়। শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান রেখে এবং ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী নেক আমল করে, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত যথাযথভাবে পালন করে, দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে যারা আল্লাহর অনুগত থাকবেন, শুধুমাত্র তারাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন, চাই সে আরবী জানুক আর না জানুক। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে সেখানে তারা কেয়ামত পর্যন্ত সুখের ঘুমানো, জান্নাতের বিছানা ইত্যাদি নেয়ামতের মাঝে থাকবে।
আর কাফের, মুশরেক, মুনাফেক বা নামকাওয়াস্তে মুসলমান, বেনামাযী, কবর-মাযারপূজারী, হালাল-হারাম সম্পর্কে বেপরোয়া, ফাসেক, পাপাচারী, পাপিষ্ঠ – এরা দুনিয়ার জীবনে যতই নিজেকে মুসলমান দাবী করুক না কেনো, তারা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কস্মিন কালেও দিতে পারবেনা। তারা হায় আফসোস! আমি জানিনা, আমি জানিনা বলে আহাজারি করবে এবং কঠিন শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
কবরের আযাবঃ
দুনিয়ার জীবনে পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তিদের যারা তোওবা করবেনা, আল্লাহর রহমত অর্জন করতে ব্যর্থ হবে, তাদের জাহান্নামের শাস্তি কবরের জীবনেই শুরু হয়ে যাবে। এই শাস্তি চলবে কেয়ামত পর্যন্ত, আর জাহান্নামের শাস্তিতো আরো কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী। এইজন্য রাসুল সাঃ আমাদেরকে বারবার কবরের আযাব থেকে বাঁচার জন্য, আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও নামাযের ভেতরে ও বাইরে কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। কবরের আযাবের ভয়াবহতা চিন্তা করে সাইয়্যিদিনা উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) কবরের কথা স্মরণ করলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন, এমনকি তাঁর কাপড় ভিজে যেত চোখের পানিতে।
কবরের শাস্তি হিসেবে যা থাকবে তার উদাহরণঃ

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...