Sunday 31 December 2023

প্রশ্ন : নববর্ষ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন আদান প্রদান কি বৈধ ?

 




উত্তর : না, এসব অনুমোদিত নয়। এগুলো জায়েযও নেই।

দেখুন: الإجابات المهمة فى المشاكل الملحة আল ইজাবাতুল মুহিম্মাহ ফিল মাশাকিলিল মুলিম্মাহ। পৃ: ২২৯

এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তি “অভিনন্দন নিষিদ্ধ” মর্মে বক্তব্যকে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এর কারণ অনেক। কিছু নিম্নে প্রদত্ব হল।

(১) এ অভিনন্দন কর্মটি বৎসরের এমন একটি দিনে সম্পাদিত হবে যা প্রতি বৎসর বার বার ফিরে আসবে। ফলে একে অন্যান্য উদযাপন যোগ্য দিনের সাথে গণ্য করা হবে অথচ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকটির বিবেচনায় নববর্ষে অভিনন্দন মুবারকবাদ বিনিময়কে নিষেধ করা হবে।

(২) এটি ইয়াহুদী-নাসারাদের স্বাদৃশ্যাবলম্বন | অথচ আমাদেরকে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহুদীরা হিব্রু (Hebrwe) বর্ষের শুরুতে যা (تسري) তাশরী নামক মাসে শুরু হয়, একে অপরকে অভিনন্দন জানায়। শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাশরী (تسري) হচ্ছে ইয়াহুদীদের প্রথম মাস। শনিবারের ন্যায় এদিনও যাবতীয় কাজ-কর্ম হারাম আর নাসারা (খৃষ্টান) রা ঈসায়ী বর্ষের শুরুতে পরস্পর অভিনন্দন আদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।

(৩) এর মাধ্যমে অগ্নিপূজক এবং আরব্য মুশরিকদের স্বাদৃশ্যাবলম্বন এবং তাদের অনুকরণ করা হয়। অগ্নিপূজকরা নওরোজ তথা তাদের শুরু বর্ষে অভিনন্দন বিনিময় করত। নওরোজ অর্থ হচ্ছে-নতুন দিন। আর জাহেলী যুগের আরবরা মুহররম মাসের প্রথমদিনে নিজ রাজাদেরকে মুবারকবাদ জানাত। আল্লামা কাযভীনী র. স্বীয় কিতাবু আজায়েবুল মাখলুকাত

এমনিটিই বর্ণনা করেছেন। দেখুন : الأعياد وأثرها على المسلمين আল আ’ইয়াদ ওয়া আছরুহা আলাল মুসলিমীন। ড. সুলাইমান আল সুহাইমী

(৪) নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দনকে বৈধতা প্রদান করা প্রকারান্তরে এ জাতীয় অনেক দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের রাস্তা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া। যেমন শিক্ষা বর্ষের সূচনা উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস অনুরূপ অনেক দিবস যা নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন জায়েয মর্মে মত প্রদান কারীরাও বলেনি। বরং এসকল দিবসে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার দাবি নববর্ষে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার চেয়েও জোরালো কেননা নবী কারীম ও সাহাবাদের যুগে এসব দিবসে অভিনন্দন প্রচলনের কার্যকারণ অনুপস্থিত ছিল আর নববর্ষ উপলক্ষে ছিল বিদ্যমান।

(৫) অভিনন্দনকে বৈধ বলে রায় দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাতে অনেক ব্যাপকতা ও সুযোগ প্রদান করা। যার কারণে মোবাইল ফোনে চিঠির আদান প্রদান, ভিউ কার্ডের আদান-প্রদান যদিও তারা একে অভিনন্দন বার্তা বলে থাকে। বেড়ে যাবে এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে, মিডিয়া তথা স্যাটেলাইট চ্যানেল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও বিশেষ আয়োজন করা হবে। বরং এক পর্যায়ে এসে অভিনন্দন জানানোর জন্যে ভ্রমণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে এটি কোন অলীক কাহিনি নয় বরং বিশ্বের কোন কোন রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ যদি এসব করে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এগুলো তাদের স্বভাবে পরিণত হয় তাহলে যারা এসকল (বাড়াবাড়ী পূর্ণ) কাজ করে আর নিষেধ করতে পারবে না। সুতরাং অভিনন্দনের রাস্তা বন্ধ করাই সংগত।

(৬) নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদানের মূলত কোন অর্থ নেই। কারণ অভিনন্দনের মূল অর্থতো হচ্ছে নতুন কোন নিয়ামত অর্জিত হওয়া বা কোন ক্ষতিকর জিনিসকে প্রতিহত করতে পারা এবং আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ অভিনন্দন বিনিময় করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি হিজরি বর্ষ শেষ হওয়ার মাধ্যমে কী নিয়ামত অর্জিত হল? বরং অধিক যুক্তিযুক্ত ও সংগত হচ্ছে, একটি বৎসর জীবন থেকে চলে গেল। বয়স কমে গেল মৃত্যু ঘনিয়ে আসল এসব নিয়ে চিন্তা করা এবং শিক্ষা গ্রহণ করা।

আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিদায়ি বর্ষের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরকে অভিনন্দন জানায় অথচ তাদের শত্রু তাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তখন তারা নিজেদের কি দিয়ে অভিনন্দিত করবে?

এসব দিক বিবেচনা করা আমরা বলব, অভিনন্দন- মুবারকবাদ নববর্ষ উপলক্ষে নিষিদ্ধ হওয়ারই দাবি রাখে এবং এটিই সঠিক যুক্তি সংগত। যদি কেউ আপনাকে এ উপলক্ষে অভিনন্দন জানায় আপনার উচিত হবে তাকে বুঝানো ও নসিহত করা। কারণ পাল্টা অভিনন্দন জানানো এবং প্রকার এর বৈধতাকে স্বীকার করে না।

সালামের আদান-প্রদানের উপর একে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা হলে, এটি হবে একটি অসংলগ্ন কাজ।

তবে বিষয়টি যেহেতু ইজতেহাদী তাই খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করা ঠিক হবে না। ইজতেহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন ইনকার নেই।

والله أعلم وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.

সূত্র-নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের বিধান

লেখক : শায়খ আলাভী বিন আব্দুল কাদির সাক্কাফ

অনুবাদ : ইকবাল হোসাইন মাসুম

সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার

ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ

থার্টিফার্স্ট নাইট ইসলামী সংস্কৃতি নয়



▬▬▬▬✪💠✪ ▬▬▬▬

সারাবিশ্বে চলছে এখন সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মহোত্সব। বছরের নানা দিন নানান দিবসের ছলনায় যুবক-যুবতীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয় এর মাধ্যমে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সমাজ। থার্টিফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইন’স ডে, এপ্রিল ফুল ইত্যাদি বিভিন্ন নামে বছরজুড়ে যে উত্সব পালন করা হয় তার প্রধান টার্গেট মুসলিম সমাজের যুবক-যুবতীরা। এসব উত্সবের মধ্যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, নগ্নতা ও ধোঁকাবাজিসহ সচ্চরিত্র নষ্ট করার সব আয়োজন থাকে ব্যাপকভাবে। এসব অপসংস্কৃতি মূলত ভোগবাদী পশ্চিমা দেশ থেকে আমদানি করা। থার্টিফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ বরণ উত্সব এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আড়ম্বরতার সঙ্গে উদযাপিত হয়। প্রথমে পশ্চিমা বিশ্বে চালু হলেও মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি ও গ্লোবাইলাইজেশনের জোয়ারে বিশ্বের আনাচে-কানাচে, অলিতে-গলিতে এটি ব্যাপৃত হয়েছে। বাংলাদেশেও বিগত ১০ বছর যাবত ইংরেজি বর্ষবরণ খুব জোরেশোরে উদযাপিত হচ্ছে এবং এটি দিন দিন ডালপালা ছড়িয়ে মহীরুহে পরিণত হচ্ছে।

✪ এক.

আসলে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন একটি অপসংস্কৃতি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার জন্য ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শেষ রাত অবধি থাকে নানা ধরনের আয়োজন। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের মধ্যে থাকে গভীর রাতে নর-নারীরা রাস্তায় নেমে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ব্যাপক উদোম নৃত্য, নাইটক্লাবে গিয়ে নগ্ন ড্যান্স, মদ পান করে মাতলামি ও বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক অশ্লীল কর্মের ব্যাপক আয়োজন। থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা। কপোত-কপোতির মাঝে চলে দীর্ঘ চুম্বনের কঠিন প্রতিযোগিতা। থার্টিফার্স্ট নাইটে বল্গাহীন আনন্দে গা ভাসাতে সব যুবত-যুবতী একাকার হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। ব্যাপক হৈ-হুল্লোড়-চিত্কার, নানান তালের বাদ্য-বাজনা ও ধ্বনি দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। মোবাইল, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যমে একে অপরকে বিভিন্ন ধরনের গ্রিটিংস বা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন হোটেল, পতিতালয়, পানশালা, নাচঘর, ক্লাবঘর, নাইটক্লাব সেজে উঠে নতুন সাজে। তারা সবাই যেন করজোড়ে ডাকছে—‘চলে এস মোর ভুবনে, মেতে উঠ নব আনন্দে’।

✪ দুই.

থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে গিয়ে অন্যের কোনো ডিস্টার্ব হলো কিনা এসবের কোনো তোয়াক্কা নেই উত্সবকারীদের মাঝে। অন্যের ঘুম কিংবা অসুস্থতা এসবের ভ্রূক্ষেপ করার সময় যে তাদের নেই। এটি এমন এক অপসংস্কৃতি যা অন্যের সতীত্বকে কেড়ে নেয়। নারী, মদ ও বল্গাহীন অশ্লীলতা না হলে যেন নববর্ষ উদযাপনের ষোলকলা পূর্ণ হয় না। অপসংস্কৃতির এই জোয়ার এখন আর পশ্চিমা দেশে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ বাংলাদেশেও আছড়ে পড়েছে। প্রতি বছর এই রাতকে সামাল দিতে র্যাব-পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। কখন কার ইজ্জত লুণ্ঠন হবে এই ভয়ে সবাই থাকেন তটস্থ! বেশ কয়েক বছর আগে ঢাবির টিএসসিতে বাঁধন নামের এক মেয়ের ইজ্জত নিয়ে বিকৃত রুচির কিছু যুবক মেতে ওঠে অসভ্য আনন্দে। এরপর থেকে প্রত্যেক বছরই টিএসসি তো বটেই, রাজধানীর নানা স্থানে নানা অঘটনের মধ্য দিয়েই এ রাতটি উদযাপিত হয়।

✪ তিন.

যে উত্সব অন্যের পবিত্রতা কেড়ে নেয়, কেড়ে নেয় মানুষের ঘুম ও স্বস্তি, যে উত্সবকে শান্তিপূর্ণ রাখতে আর্মি-পুলিশ ও র্যাবকে নিয়োগ দিতে হয় সেটি আর যাই হোক কোনো ভালো উত্সব হতে পারে না। যারা উত্সবের কথা বলে অন্যের ইজ্জত ও সতীত্ব কেড়ে বিকৃত আনন্দে মেঠে উঠতে পারে তারা আর যা-ই হোক কোনোভাবেই সভ্য হতে পারে না। কোনো সভ্য মানুষ অন্যের অধিকার নষ্ট করে নিজের বিকৃত সুখ মেটাতে পারে না। ইসলাম ধর্ম এ ধরণের অপসংস্কৃতিকে সাপোর্ট করে না। ইসলামের কোনো আনন্দ উত্সবে অন্যের অধিকার নষ্ট হয় না। বরং ইসলামের উত্সবের মধ্যে রয়েছে নিজেকে উত্সর্গ করে অন্যকে আনন্দ দেয়ার সব ধরনের আয়োজন। এটিই পশ্চিমা সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে বড় তফাত। ইসলামী উত্সবকে কেন্দ্র করে র্যাব-পুলিশকেও তটস্থ হতে হয় না। সবকিছুই হয় শান্তিপূর্ণভাবে। অশান্তি সৃষ্টি করে কোনো উত্সবই ইসলাম বৈধ মনে করে না।

✪ চার.

কোনো মুসলিম যুবক-যুবতী অমুসলিমদের মতো নিজেদের অপসংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিতে পারে না। কেননা অমুসলিমদের ওইসব আনন্দ ফুর্তিতে তাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ওটাই তাদের সংস্কৃতি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওটাই তাদের ধর্ম। কিন্তু একজন মুসলমানের রয়েছে ধর্মীয় নির্দেশনা। যে নির্দেশনার আলোকে প্রত্যেক মুসলমান চলতে বাধ্য। আনন্দ-ফুর্তি করা যাবে কিন্তু তা অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। মদ, জুয়া, জিনা-ব্যভিচার ও কোনো ধরনের অশ্লীলতা ইসলাম সহ্য করে না। অন্যের আনন্দ কেড়ে নিজে আনন্দ করাকে ইসলাম পছন্দ করে না।

✪ পাঁচ. 

মুসলমান হিসেবে একজন ব্যক্তির বছর শেষে অনুশোচনা করা উচিত। আমি বিগত বছর কীভাবে কাটালাম, কতগুলো পাপ ও অন্যায় করলাম—এই হিসাব কষা উচিত। আমার ভালো কাজের চেয়ে যদি মন্দ কাজের পরিমাণ বেশি হয় তার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে আগামী দিনে সুন্দর কর্মের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা দরকার। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের হায়াত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই নির্ধারিত জীবন থেকে আমার একটি বছর ঝরে গিয়ে আমি মৃত্যুর দিকে একধাপ এগিয়ে গেলাম। আমি কী করে মৃত্যুর কাছাকাছি এসে এত আনন্দ-ফুর্তি করি? একবারের জন্য হলেও এটি মনে করা উচিত। আমরা একজন ফাঁসির আসামির দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখি, তিনি নির্দিষ্ট দিনের জন্য অপেক্ষা করেন এবং তওবা-ইস্তেগফার করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হন। অথচ আমরা ওই একই পথের পথিক হয়েও পরপারে পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি না নিয়ে বিকৃত আনন্দে মেতে ওঠি!

পরিশেষে বলব, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে অবশ্যই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করতে হবে। কোনো রকম বিজাতীয় অপসংস্কৃতিকে লালন করা যাবে না। অপসংস্কৃতির মধ্যে আছে হারানোর মর্মবেদনা; পাওয়ার নেই কিছুই। যে আনন্দ অন্যের অধিকার, শান্তি, সুখ ও সতীত্বকে কেড়ে নেয় সেসব সংস্কৃতিকে আমরা ধিক্কার জানাই। আর যেসব উত্সব-আনন্দ অন্যকে কোনো রকম কষ্ট না দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ধনী-গরিব সবাইকে আনন্দ দিতে পারে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। সব সুস্থ ও সুন্দর সংস্কৃতির বিকাশ হোক, এই প্রজন্মের নর-নারীর কাছে এই প্রত্যাশাই করছি ইংরেজি নববর্ষের শুরুতে। আল্লাহ সবাইকে কল্যাণ করুন। আমীন।

------------------------------------

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস:আমার দেশ অনলাইন। 

সংগ্রহে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

নববর্ষ আরবি হোক, বা বাংলা হোক, বা ইংরেজি, তা পালন করা বৈধ নয়। এ ব্যাপারে কয়েকজন যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানের বক্তব্য নিম্নরূপ—




১. সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন,

من مر ببلاد الأعاجم فصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.

“যে ব্যক্তি (অগ্নিপূজক) পারসিকদের দেশে গমন করে, অতঃপর তাদের নওরোজ (নববর্ষ) ও মেহেরজান (উৎসবের দিবস) পালন করে, আর তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং এ অবস্থাতেই মারা যায়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার হাশর তাদের সাথেই হবে।” [বাইহাক্বী, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২৩৪; গৃহীত: ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ), আহকামু আহলিয যিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ১২৪৮; ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুমাল্লাহ) হাদীসটিকে সাহীহ বলেছেন]

·

২. ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ليس من السنة أن نحدث عيدا لدخول السنة الهجرية أو نعتاد التهاني ببلوغه.

“হিজরী নববর্ষের আগমন উপলক্ষে উৎসব করা কিংবা নববর্ষের দিবস উপলক্ষে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানানোর রীতি চালু করা সুন্নাহ বহির্ভূত কর্ম।” [আদ্ব-দ্বিয়াউল লামি‘, পৃষ্ঠা: ৭০২; গৃহীত: sahab.net]

·

৩. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত ফাতওয়া—

السؤال: إذا قال لي شخص كل عام وانتم بخير فهل هذه الكلمة مشروعة في هذه الأيام؟

الجواب: لا. ليست بمشروعة، ولا يجوز هذا.

প্রশ্ন: “যদি কোনো ব্যক্তি আমাকে বলে, ‘সকল বছরে আপনি ভালো থাকুন’, তাহলে এই (নববর্ষের) দিনগুলোতে এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা কি শরিয়তসম্মত হবে?”

উত্তর: “না, এই শব্দগুচ্ছ শরিয়তসম্মত নয়। এটি অবৈধ, না-জায়েজ।” [আল-ইজাবাতুল মুহিম্মাহ, পৃষ্ঠা: ২৩০; গৃহীত: sahab.net]

·

৪. সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া’য় বলা হয়েছে,

لا تجوز التهنئة بالسنة الهجرية الجديدة، لأن الاحتفاء بها غير مشروع.

“হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে মুবারকবাদ জানানো জায়েজ নয়। কেননা নববর্ষকে অভ্যর্থনা জানানো শরিয়তসম্মত নয়।” [ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ; ফাতওয়া নং: ২০৭৯৫; গৃহীত: sahab.net]

·

স্মর্তব্য যে, ইসলামী শরিয়ত মুসলিমদের জন্য স্রেফ দুটি ‘ঈদ (উৎসব) নির্ধারণ করেছে। তাই এই দুই উৎসব ব্যতীত অন্য কোনো উৎসব পালন করা মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ মাদীনাহ’য় পৌঁছে দেখতে পান যে, সেখানকার অধিবাসীরা দুইটি দিন (নওরোজ ও মেহেরজান) খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এই দুটি দিন কীসের?’ তারা বলে, ‘জাহেলি যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি উত্তম দিন দান করেছেন। আর তা হলো, ‘ঈদুল আদ্বহা (কোরবানীর ‘ঈদ) এবং ‘ঈদুল ফিত্বর (রোজার ‘ঈদ)’।” [আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪; সনদ: সাহীহ]

আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে দুটি দিবস নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যে দুটি দিবসে তারা উৎসব পালন করবে। রাসূল ﷺ তো বলতে পারতেন যে, তোমাদের দুই দিন থাক। সাথে এই দুটিও নাও। কিন্তু তিনি তা বলেননি। কারণ ইসলাম এসেছে জাহেলিয়াতকে অপসৃত করতে। ইসলাম চায় জাহেলিয়াতের অপনোদন। ইসলাম আর জাহেলিয়াত কখনো এক হতে পারে না। এ হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মুসলিমদের জীবনে এই দুটি দিবস ছাড়া অন্য কোনো দিবস থাকতে পারে না। সুতরাং নববর্ষ পালন করা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। [ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আলী বিন আদাম আল-আসয়ূবী (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু সুনানিন নাসাঈ (যাখীরাতুল ‘উক্ববা ফী শারহিল মুজতাবা); খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা: ১৫৩-১৫৪; দারু আলি বারূম, মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

·

অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...