Friday 16 August 2019

শবেকদর কোন রাতটি?


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।
অতঃপর: লাইলাতুল ক্বদর বা শবেকদর কোন রাতে রয়েছে, তা নির্ধারণ করার ব্যাপারে ‘আলিমগণ অনেকগুলো মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ ‘আলিমগণ লাইলাতুল ক্বদর নির্ধারণের ব্যাপারে বিশাল মতানৈক্য করেছেন। আমাদের নিকট এ ব্যাপারে ‘আলিমগণের চল্লিশেরও অধিক মত রয়েছে।” [হাফিয ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ), ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৬২; হা/২০২২ এর ভাষ্য; আল-মাকতাবাতুস সালাফিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ বিহীন]
এরপর তিনি ৪৬ টি মত উল্লেখ করেছেন এবং পরিশেষে বলেছেন, “এই মতগুলোর মধ্যে অগ্রগণ্য মত হলো এই রাতটি শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে রয়েছে এবং এই রাতটি স্থানান্তরিত হয়, যেমনটি এই অধ্যায়ের হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়। শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি আশাব্যঞ্জক।” [প্রাগুক্ত, খণ্ড ৪; পৃষ্ঠা: ২৬৬]
·
কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশকের জোড় রাতগুলোতেও হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। আমরা পর্যায়ক্রমে দলিলসমূহ উল্লেখ করব। প্রথমেই উল্লেখ করব বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার দলিল। আরেকটি কথা বলে রাখছি। কলেবর ছোটো করার জন্য আরবি টেক্সট উল্লেখ করছি না। আগ্রহী পাঠকবর্গ আরবি টেক্সট পড়তে চাইলে মূল সোর্স থেকে পড়ে নিবেন। বারাকাল্লাহু ফীকুম।
১. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আল্লাহ’র রাসূল ﷺ রমজান মাসের মাঝের দশকে ই‘তিকাফ করেন। বিশ তারিখ অতীত হওয়ার সন্ধ্যায় এবং একুশ তারিখের শুরুতে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ই‘তিকাফ করেছিলেন, তাঁদের সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে প্রস্থান করেন এবং তিনি যে মাসে ই‘তিকাফ করেন ওই মাসের যে রাতে ফিরে যান সে রাতে লোকদের সামনে ভাষণ দেন। আর তাতে মাশাআল্লাহ, তাদেরকে বহু নির্দেশ দান করেন। তারপর বলেন, আমি এই দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, শেষ দশকে ই‘তিকাফ করব। যে আমার সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছিল, সে যেন তার ই‘তিকাফস্থলে থেকে যায়। আমাকে সে রাত দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ’র রাসূল ﷺ বললেন, “শেষ দশকে ওই রাতের তালাশ করো এবং প্রত্যেক বিজোড় রাতে তা তালাশ করো। আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, ওই রাতে আমি কাদা-পানিতে সিজদা করছি।” ওই রাতে আকাশে প্রচুর মেঘের সঞ্চার হয় এবং বৃষ্টি হয়। মাসজিদে আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর নামাজের স্থানেও বৃষ্টির পানি পড়তে থাকে। এটা ছিল একুশ তারিখের রাত। যখন তিনি ফজরের নামাজ শেষে ফিরে বসেন, তখন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, তাঁর মুখমণ্ডল কাদা-পানি মাখা।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭]
২. ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। আল্লাহ’র রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০১৭]

৩. ‘আব্দুল্লাহ বিন উনাইস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “আমাকে ক্বদরের রাত দেখানো হয়েছিল। তারপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে ওই রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্নে আরও দেখানো হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করছি।” বর্ণনাকারী বলেন, তারপর ত্রয়োবিংশ (২৩ তম) রাতে বৃষ্টি হলো এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সাথে (ফজরের) নামাজ আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। [সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৮]
·
পক্ষান্তরে জোড় রাতগুলোতেও লাইলাতুল ক্বদর সংঘটিত হতে পারে। এর দলিলসমূহ নিম্নরূপ:
১. ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ’র রাসূল ﷺ বলেছেন, “তা শেষ দশকে, তা (প্রথম দিক থেকে গণনায়) অতিবাহিত নবম রাতে, অথবা (শেষ দিক থেকে গণনায়) অবশিষ্ট সপ্তম রাতে; অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদর।” ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, “তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ করো।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০২২]
২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, “হে লোক সকল, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু দুইজন ব্যক্তি পরস্পর ঝগড়া করতে করতে উপস্থিত হল এবং তাদের সাথে ছিল শয়তান। তাই আমি তা ভুলে গেছি। অতএব তোমরা তা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে অন্বেষণ করো, তোমরা তা ৯ম, ৭ম ও ৫ম রাতে অন্বেষণ করো।”
বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ‘হে আবূ সাঈদ! আপনি সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী।’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরাই এ বিষয়ে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার।’ আমি বললাম ‘৯ম, ৭ম, ৫ম সংখ্যাগুলো কী?’ তিনি বললেন, “যখন একবিংশ রাত অতিবাহিত হয়ে যায় এবং দ্বাবিংশ রাত শুরু হয় তখন তা হচ্ছে ৯ম তারিখ, ত্রয়োবিংশ রাত অতিক্রান্ত হবার পরবর্তী রাত হচ্ছে ৭ম তারিখ এবং পঞ্চবিংশ রাত অতিবাহিত হবার পরের রাতটি হচ্ছে ৫ম তারিখ।” [সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭]
৩. ‘আমভাবে রাসূল ﷺ শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে বলেছেন। আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা রমজান শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০২০; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৯]
·
তবে বিজোড় রাতগুলো বেশি আশাব্যঞ্জক। আর বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২৭শের রাত সবচেয়ে বেশি আশাব্যঞ্জক। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যার (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন উবাই বিন কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলা হলো, ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, “যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে নামাজ আদায় করবে, সে লাইলাতুল ক্বদর প্রাপ্ত হবে।” তখন তিনি বললেন, “যিনি ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই, সেই মহান আল্লাহ’র কসম! নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল ক্বদর রমজান মাসে। এ কথা বলতে তিনি ক্বসম করলেন কিন্তু ইনশাআল্লাহ বললেন না (অর্থাৎ তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝতেন যে, রমজান মাসের মধ্যেই লাইলাতুল ক্বদর আছে)।” এরপর তিনি আবার বললেন, “আল্লাহ’র কসম! কোন রাতটি ক্বদরের রাত তাও আমি জানি। সেটি হলো সেই রাত, যে রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নামাজ আদায় করতে আদেশ করেছেন। ২৭শে রমজান তারিখ সকালের পূর্বের রাতটি সেই রাত। আর ওই রাতের নিদর্শন হলো—সে রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে, তা উজ্জ্বল হবে কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাৎ, অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৭৬২]
মু‘আবিয়াহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমরা ২৭শের রাতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করো।” [সাহীহুল জামি‘, হা/১২৪০; সনদ: সাহীহ]
·
আবার শেষ দশকের মধ্যে শেষ সাতদিন অধিক আশাব্যঞ্জক। ইবনু ‘উমার (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত, নাবী ﷺ এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমজানের শেষের সাত রাতে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহ’র রাসূল ﷺ বললেন, “আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধানপ্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে তা সন্ধান করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/২০১৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৫]
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ২৭শের রাতই লাইলাতুল ক্বদর বা শেষ সাতদিনেই লাইলাতুল ক্বদর রয়েছে অথবা কেবলমাত্র বিজোড় রাতগুলোতে অনুসন্ধান করলেই এই রাত পাওয়া যাবে। বরং শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতে হবে। এমনটিই বুঝেছেন ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ, ইমাম ইবনু বায, ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন প্রমুখ বিদ্বানগণ (রাহিমাহুমুল্লাহু আজমা‘ঈন)। আমরা তাঁদের গবেষণালব্ধ ফাতাওয়া নিম্নে উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
·
১ম ফাতওয়া:
হিজরী ৮ম শতাব্দীর অবিস্মরণীয় মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ্ আল হার্রানী আল হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] কে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন—
“লাইলাতুল ক্বদর রমজান মাসের শেষ দশকে রয়েছে। বিশুদ্ধসূত্রে নাবী ﷺ থেকে এরূপই বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, এই রাত রমজান মাসের শেষ দশকে রয়েছে। এটা শেষ দশকের বিজোড় রাতেও হতে পারে।
কিন্তু বিজোড় (রাত) গত হয়ে যাওয়ার বিবেচনাতেও হতে পারে। তখন তুমি লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করবে একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ ও ঊনত্রিশতম রাতগুলোতে। (অর্থাৎ, শুরু থেকে এই দশকের রাতগুলো অতিবাহিত বা গত হওয়ার ভিত্তিতে শুরু হবে এই বিজোড় রাতের গণনা। যেমন: এই দশকের প্রথম রাত একুশতম। এই রাত থেকে বিজোড় গণনা শুরু হবে। এভাবে হবে ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতগুলোও। – অনুবাদক)
আবার বিজোড় (রাত) অবশিষ্ট থাকার বিবেচনাতেও হতে পারে। যেমনটি নাবী ﷺ বলেছেন, ‘অবশিষ্ট নবম রাত্রি, অবশিষ্ট সপ্তম রাত্রি, অবশিষ্ট পঞ্চম রাত্রি ও অবশিষ্ট তৃতীয় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো।’ (অর্থাৎ, শেষ দশক শুরু হলে অবশিষ্ট রাতগুলো হয় শেষের দিকে। অর্থাৎ, ৩০ বা ২৯তম রাত থেকে ২১তম রাত পর্যন্ত। সুতরাং এই বিবেচনায় বিজোড় গণনা শুরু হবে শেষের দিক থেকে। শেষের দিক থেকে বিজোড় গণনা করলে হয়, অবশিষ্ট ১ম রাত্রি হলো ৩০তম রাত্রি, অবশিষ্ট ৩য় রাত্রি হলো ২৮তম রাত্রি, অবশিষ্ট ৫ম রাত্রি হলো ২৬তম রাত্রি, অবশিষ্ট ৭ম রাত্রি হলো ২৪তম রাত্রি, আর অবশিষ্ট ৯ম রাত্রি হলো ২২তম রাত্রি। ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ—রাহিমাহুল্লাহ—এটাই বুঝাতে চেয়েছেন। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। – অনুবাদক)
এর ওপর ভিত্তি করে মাস যখন ত্রিশে হবে, তখন পূর্বোক্ত রাতগুলো (অর্থাৎ, গত হয়ে যাওয়ার বিবেচনায় ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতগুলো) জোড় রাত্রি হবে। তখন ২২তম রাতটি হবে অবশিষ্ট ৯ম রাত্রি এবং ২৪তম রাতটি হবে অবশিষ্ট ৭ম রাত্রি। বিশুদ্ধ হাদীছে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সাহাবী আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। (সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭) আর নাবী ﷺ এভাবেই রমজান মাসে শেষ দশক সম্পন্ন করেছেন।
পক্ষান্তরে মাস যদি ঊনত্রিশে হয়, তবে যে তারিখ অবশিষ্ট থাকার বিবেচনায় হয়েছে, তা গত হয়ে যাওয়ার বিবেচনায় যে তারিখ, তার মতো হবে। (গত হয়ে যাওয়ার বিবেচনায় তারিখগুলো হয় ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তম রাতগুলো। আর অবশিষ্ট থাকার বিবেচনায় ২৯শে মাস হলে, শেষের দিক থেকে গণনা করতে হবে। তখনও তারিখগুলো বিজোড়ই হবে। অর্থাৎ ২৯, ২৭, ২৫, ২৩ ও ২১তম রাত হবে। – অনুবাদক)
বিষয়টি যখন এমনই, তখন মু’মিনের উচিত পুরো শেষ দশকেই ওই রাত তালাশ করা। যেমনটি নাবী ﷺ বলেছেন, ‘তোমরা ওই রাতটি শেষ দশকে তালাশ করো।’ (সাহীহ বুখারী, হা/২০২০; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৯) তবে ওই রাতটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেষ সাতটি রাতের মধ্যে হয়ে থাকে। আর সাতাশের রাতটিতেও লাইলাতুল ক্বদর বেশি হয়ে থাকে। যেমন: সাহাবী উবাই ইবনু কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হলফ করে বলেছেন যে, ওই রাতটি হলো সাতাশের রাত। তাঁকে বলা হলো, কীসের মাধ্যমে আপনি এটা জেনেছেন? তিনি বললেন, নিদর্শনের মাধ্যমে, যে নিদর্শনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে অবহিত করেছেন। তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ওই দিন সকালে সূর্য উদিত হবে, সেদিন সকালের সূর্যটা হবে একটা প্লেটের মতো, আর তার কোনো কিরণ থাকবে না।
এই নিদর্শনটি নাবী ﷺ থেকে উবাই ইবনু কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেছেন। এটা হাদীসে বর্ণিত প্রসিদ্ধ নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই এরূপ নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে যে, “নিশ্চয়ই ঐ রাতের ঊষার আলো হবে অনেক উজ্জ্বল।” এই রাতটি হবে প্রশান্তিদায়ক রাত; না হবে খুব গরম, আর না হবে খুব ঠাণ্ডা। কখনো কখনো আল্লাহ তা‘আলা কোনো কোনো ব্যক্তিকে ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় এই রাতটি জানিয়ে দিতে পারেন। সে হয়ত তখন এর আলো দেখবে, বা কোনো ব্যক্তিকে দেখবে, যে তাকে বলছে, এটা হলো ক্বদরের রাত। আল্লাহ তাঁকে এই রাতটি প্রত্যক্ষ করার জন্য তার অন্তরকে উন্মুক্ত করে দিবেন, যার মাধ্যমে তার কাছে প্রকৃত বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ২৮৪-২৮৬; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
২য় ফাতওয়া:
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন—
“নাবী ﷺ জানিয়েছেন যে, লাইলাতুল ক্বদর রমজানের শেষ দশকে রয়েছে। আর তা বিজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে সংঘটিত হওয়া বেশি আশাব্যঞ্জক। যেমন নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমরা তা অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকে, তোমরা তা অনুসন্ধান করো প্রত্যেক বিজোড় রাতে।” (সাহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭)
রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই রাতটি শেষ দশকের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। প্রতি বছর নির্দিষ্ট এক রাতে হয় না। তাই তা কখনো ২১শের রাতে হতে পারে, কখনো ২৩শের রাতে হতে পারে, কখনো ২৫শের রাতে হতে পারে, কখনো ২৭শের রাতে হতে পারে; ২৭শের এই রাতটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কখনো ২৯শের রাতে হতে পারে, আবার কখনো জোড় রাতগুলোতেও হতে পারে।
সুতরাং, কেউ যদি শেষ দশকের প্রত্যেক রাতে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ক্বিয়াম করে, তবে নিঃসন্দেহে সে ওই রাতটি পেয়ে যাবে। আর আল্লাহ যে অঙ্গীকার এই রাতের অধিবাসীদের (যারা এই রাতে ক্বিয়াম করে) দিয়েছেন তা লাভ করে সফলকাম হবে। নাবী ﷺ এই দশকের রাতগুলোতে বিশেষ গুরুত্বের সাথে ইবাদত করতে যে অতিরিক্ত চেষ্টা প্রচেষ্টা করতেন, সেটা তিনি প্রথম বিশ রমজানে করতেন না। ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেছেন, “নাবী ﷺ রমজানের শেষ দশকে ইবাদত করতে যে প্রচেষ্টা করতেন, সে প্রচেষ্টা তিনি অন্য সময় করতেন না।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১১৭৫)
তিনি আরও বলেছেন, “রমজানের শেষ দশক শুরু হবার সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ সারা রাত জেগে থাকতেন ও নিজ পরিবারের সদস্যদের ঘুম থেকে জাগাতেন। তিনি নিজেও ইবাদতের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাতেন এবং লুঙ্গি কষে বাঁধতেন (ইবাদতে খুব সচেষ্ট থাকতেন)।” (সাহীহ বুখারী, হা/২০২৪; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৭৪)” [ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ১৫; পৃষ্ঠা: ৪২৬-৪২৮; দারুল ক্বাসিম, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২১ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
·
৩য় ফাতওয়া:
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন—
“লাইলাতুল ক্বদর নির্ধারণের ব্যাপারে ‘আলিমগণ চল্লিশেরও অধিক মত পেশ করে মতানৈক্য করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বুখারীর ভাষ্যে মতগুলো উল্লেখ করেছেন।
আর লাইলাতুল ক্বদরের ব্যাপারে কিছু আলোচনা আছে—
প্রথম আলোচনা:
লাইলাতুল ক্বদর কি এখনও অবশিষ্ট আছে, না কি এটা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: বিশুদ্ধ মতানুসারে, কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা অবশিষ্ট আছে। আর যে হাদীসে এটা উঠিয়ে নেওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে, তার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সেই বছরে নির্দিষ্টভাবে ওই রাতটি জানার ‘ইলম তথা জ্ঞানকে উঠিয়ে নেওয়া। কেননা ওই বছর নাবী ﷺ সেই রাতটি দেখেছিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গীবর্গকে এ ব্যাপারে জানানোর জন্য বের হন। তখন দুইজন ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হলো, ফলে ওই বছরে নির্দিষ্টভাবে রাতটি জানার ‘ইলমকে উঠিয়ে নেওয়া হল। (সাহীহ বুখারী, হা/২০২৩)
দ্বিতীয় আলোচনা:
এই রজনী কি রমজান মাসে, না কি কোনো অন্য মাসে?
উত্তর: এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই রজনী রমজান মাসেই রয়েছে। এটা দলিলের আলোকেই সাব্যস্ত। তার মধ্যে প্রথমত মহান আল্লাহ’র বাণী, “রমজান মাস, যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৮৫) সুতরাং কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে রমজান মাসে। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি ক্বদরের রাতে।” (সূরাহ ক্বদর: ১) সুতরাং যখন তুমি এই আয়াতকে আগের ওই আয়াতের সাথে মিলাবে, তখন লাইলাতুল ক্বদর রমজান মাসেই নির্দিষ্ট গণ্য হবে। কেননা এই রাত যদি রমজান মাসে না হয়, তবে এ কথা বলা বিশুদ্ধ হবে না যে, “রমজান মাস, যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।” (সূরাহ বাক্বারাহ: ১৮৫)
এটা হলো যৌগিক দলিল। আর যৌগিক দলিল হলো সেই দলিল, যাতে একটি দলিলকে আরেকটির সাথে না মিলানো পর্যন্ত তা থেকে ইস্তিদলাল (দলিল গ্রহণ করা) পূর্ণ হয় না। যৌগিক দলিলের অনেক দৃষ্টান্ত আছে। তার মধ্যে এই দৃষ্টান্ত একটি। সেটা হলো—গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়কাল হচ্ছে ছয় মাস, যখন বাচ্চা জীবিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এটা আমরা জেনেছি মহান আল্লাহ’র বাণী থেকে, “তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধপান ছাড়ানোয় সময় লাগে ত্রিশ মাস।” (সূরাহ আহক্বাফ: ১৫) তিনি অন্যত্র বলেছেন, “তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।” (সূরাহ লুক্বমান: ১৪)
সুতরাং, যখন আমরা ত্রিশ মাস থেকে দুই বছর বাদ দিব, তখন অবশিষ্ট থাকবে ছয় মাস। আর এটাই হল গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়কাল।
তৃতীয় আলোচনা:
রমজানের কোন রাতে লাইলাতুল ক্বদর সংঘটিত হয়?
উত্তর: কুরআনে এই রাত নির্দিষ্টকরণের ব্যাপারে কোনো বর্ণনা নেই। কিন্তু হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, এই রাত রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ রমজান মাসের প্রথম দশকে ই‘তিকাফ করলেন। এরপর তিনি মাঝের দশকেও ই‘তিকাফ করলেন। তারপর তাঁকে বলা হলো, লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশকে নিহিত আছে। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ওই রাতটি স্বপ্নেও দেখানো হলো, তিনি যেন সে রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের (নামাজের) সিজদাহ করছেন। সেটা ছিল রমজানের একবিংশ রাতে। তিনি ﷺ ই‘তিকাফরত অবস্থায় ছিলেন। সে রাতে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ফলে ছাদ থেকে মাসজিদে পানি বর্ষিত হলো। তখন নাবী ﷺ এর মাসজিদের ছাদ ছিল খেজুর ডাটায় তৈরি। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন। তিনি জমিনের উপর সিজদা দিলেন। (বর্ণনাকারী) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, তিনি কাদা ও পানিতে সিজদা দিলেন। এমনকি আমি স্বচক্ষে তাঁর কপালে কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। (সাহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭)
একদল সাহাবী (রমজানের) শেষ সাত রাতে লাইলাতুল ক্বদর প্রত্যক্ষ করেছেন। রাসূল ﷺ বলেছেন, “আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে।” অর্থাৎ, একই রকম হয়েছে। “অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধানপ্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে এর সন্ধান করে।” এর ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, শেষ দশকের মধ্যে শেষ সাত রাত হলো বেশি আশাব্যঞ্জক। যদি না রাসূল ﷺ এর কথাটির দ্বারা এই উদ্দেশ্য হয় যে, এটা কেবলমাত্র সেই বছরের জন্যই নির্দিষ্ট—“আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে।” (সাহীহ বুখারী, হা/২০১৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৫) এটি একটি সম্ভবনাপূর্ণ বিষয়। কেননা নাবী ﷺ মৃত্যুঅবধি সম্পূর্ণ শেষ দশকে ই‘তিকাফ করেছেন। সুতরাং এ সম্ভবনা রয়েছে যে, তাঁর কথা “আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে”– এর অর্থ হলো, এটা সেই বছরের জন্য নির্দিষ্ট ছিল যে, শেষ সাত রাতের মধ্যেই লাইলাতুল ক্বদর নিহিত রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, আগামী সমস্ত রমজানে লাইলাতুল ক্বদর শেষ সাত রাতের মধ্যে থাকবে। বরং এই ভাগ্য রজনীটি শেষ দশকের পুরোটার মধ্যেই অবশিষ্ট থাকবে।
চতুর্থ আলোচনা:
প্রত্যেক বছর লাইলাতুল ক্বদর কি এক রাতেই হয়ে থাকে, না কি এটা স্থানান্তরিত হয়?
উত্তর: এ বিষয়ে ‘আলিমদের মধ্যে মতনৈক্য রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ মত হলো, এই রাতটি স্থানান্তরিত হয়। সুতরাং কোনো বছর ২১তম রাতটিও লাইলাতুল ক্বদর হতে পারে, আবার কোনো বছর ২৯তম রাতে, কোনো বছর ২৫তম রাতে, কোনো বছর ২৪তম রাতেও লাইলাতুল ক্বদর হতে পারে এবং অনুরূপভাবে (শেষ দশকের বাকি রাতগুলোতেও) হতে পারে। কেননা এই কথা ব্যতীত আর অন্য কোনো কথার উপর এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব নয়। তবে অধিক আশাব্যঞ্জক রাত হলো ২৭শের রাত। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে এই রাতটিই লাইলাতুল ক্বদর নয়, যেমনটি কতিপয় লোক ধারণা করে থাকে। কোনো কোনো ব্যক্তি তার ধারণার ওপর ভিত্তি করে, এই একটি রাতেই অধিক পরিমাণে পরিশ্রম করে এবং অন্যান্য রাতগুলোতে শিথিলতা প্রদর্শন করে। এই রাতটি (নির্দিষ্টভাবে একই রাতে না হয়ে, বিভিন্ন রাতে) স্থানান্তরিত হওয়ার পিছনে হিকমাহ এই যে, এই ভাগ্য রজনীটি যদি নির্দিষ্ট কোনো রাতে হতো, তবে অলস বান্দা এই একটি রাতে ক্বিয়াম করেই ক্ষান্ত হয়ে যেত। কিন্তু যখন রাতটি স্থানান্তরিত হবে এবং প্রতিটি রাতেই লইলাতুল ক্বদর হওয়ার সম্ভবনা থাকবে, তখন ব্যক্তি পুরো শেষ দশকেই ক্বিয়াম করবে। এ ব্যাপারে আরো হিকমাহ এই যে, এতে অলসতা পরিহার করে এই রাত তালাশ করার ব্যাপারে আগ্রহী বান্দার জন্য রয়েছে পরীক্ষা।” [ইমাম ইবনু ‘উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আশ-শারহুল মুমতি‘ ‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪৮৯-৪৯২; দারু ইবনিল জাওযী, দাম্মাম কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “তবে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলো অধিক আশাব্যঞ্জক। নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমরা শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো, আর তা প্রত্যেক বিজোড় রাতে তালাশ করো।” (সাহীহ বুখারী, হা/২০১৮; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭) শেষ দশকের বিজোড় রাত কোনগুলো? উত্তর: ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তম; এই পাঁচটি রাত এই দশকের মধ্যে অধিক আশাব্যঞ্জক। এর অর্থ এই নয় যে, লাইলাতুল ক্বদর কেবলমাত্র বিজোড় রাতেই সংঘটিত হয়। বরং এই রাতটি জোড়-বিজোড় উভয় রাতগুলোতে হতে পারে।” [প্রাগুক্ত, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪৯৪]
কিছু দূর এগিয়ে ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে ক্বদরের রাত হওয়ার সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ও সম্ভবনাপূর্ণ রাত হলো ২৭ তম রাত। কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর নির্দিষ্টভাবে ২৭ তম রাতে হবে না।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ৪৯৫]
·
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, অগ্রগণ্য মতানুসারে লাইলাতুল ক্বদর তথা শবেকদর শেষ দশকের মধ্যে রয়েছে। তাই এই রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকের জোড়-বিজোড় সব রাতেই তাকে তালাশ করতে হবে। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...