Wednesday 9 December 2015

মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেয়ার বিধান


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার খুতবায় আল্লাহর তারীফ করতেন, দরুদ পড়তেন, কুরআন থেকে তেলাওয়াত করতেন এবং কিছু ওয়াজ-নছীহত ও করতেন। নবীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
“আমি সব নবীকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” (সূরা ইবরাহীম: ৪)

রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃভাষা যেহেতু আরবী ছিল এবং ছাহাবীদেরও ভাষা আরবী ছিল, তাই তিনি আরবীতেই তাদেরকে নছীহত করতেন। এখন যারা নবীজির নায়েব হয়ে জুমার খুতবা দিবেন তাদেরকেও উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ অনুসারে তাদের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়াটা শরীয়ত সম্মত এবং যুক্তি সংগত।
• এই কারণেই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন: প্রত্যেক খতীবকে জুমার সময় তাঁর মাতৃভাষায় ওয়াজ করা ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। (তানক্বীহুর রুওয়াত ১/২৬৪)
• আল্লামা তাহাভী হানাফী বলেন: জুমার খুতবা আরবী জানলেও ফারসী ভাষায় ও চলবে। (হাশিয়া তাহতাবী আলা মারাক্বিল ফালাহ ২৭)
• আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী হানাফী (রহ) বলেন: শ্রোতাদেরকে তাদের মাতৃভাষায় খুতবা বুঝিয়ে দেয়া জায়েজ। (মাজমূআহ ফাতাওয়া ১/২৪৫)
• হানাফী ফিক্বহ গ্রন্থ নিহায়া, মুজতাবা, ফাতাওয়া সিরাজিয়্যাহ, মুহীত প্রভৃতি গ্রন্থে আছে যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ফারসী ভাষাতে জুমার খুতবা দেয়া জায়েজ।
• হানাফী ফতোয়ার কিতাব শামীতে আছে, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া শর্ত নয়।
• হানাফী ফিকহ গ্রন্থ হিদায়ায় আছে, প্রত্যেক ভাষায় খুতবার নছীহত চলতে পারে। (কিতাবুল জুমআহ ৫৫-৫৬) (আলোচনা দ্র: আইনী তোহফা সলাতে মুস্তফা১/৯৮-৯৯)
খুতবারা আগে বয়ান একটি বিদআত:
নিজ ভাষায় খুতবা না দেয়ার কারণে যেহেতু তা মানুষের বোধগম্য হয় না এজন্যই এই খুতবার আগে খতীবগণ বয়ানের ব্যবস্থা রেখেছেন, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্যতম বিদআত। কারণ খুতবা দানের পূর্বে বয়ান দেয়া এবং ইহাকে এভাবে স্থায়ী রূপ দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আদৌ প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার পূর্বে কখনো এ ধরণের বয়ান দেন নি। দিতে বলেছেন বলে ও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এজন্যই এ সঊদী আরবের বরেণ্য মুফতী শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহ:)কে মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান সম্পর্কে সওয়াল করা হলে তিনি তা সরাসরি জায়েজ বলে মন্তব্য করেন এবং একথা স্পষ্ট ভাবে বলেন যে, খতীবকে নিজ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। (দেখুন: শাইখ ইবনে উসাইমীনের ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম)
বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু জামে মসজিদে মাতৃভাষায় খুতবা দেয়া হয়ে থাকে। বস্তুত: এটাই সুন্নত। এর বিপরীত সুন্নত বিরোধী কাজ যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক ইলম দান করুন এবং যাবতীয় বিদআত পরিত্যাগ করার তাওফীক দিন (আমীন)
লেখক: শাইখ আখতারুল আমান বিস আব্দুস সালাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

জুমার দিন জুমার সালাত আদায়ের আগে ওয়াজ-নসীহত করার বিধান কি?


প্রশ্ন: জুমার দিন জুমার সালাত আদায়ের আগে ওয়াজ-নসীহত করার বিধান কি?

উত্তর: জুমার দিন জুমার নামাজের আগে ওয়াজ-নসীহত বা দরস প্রদান করা উচিৎ নয়। কারণ প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনে শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন,
نَهَى عنِ التَّحلُّقِ يومَ الجمعةِ قبلَ الصَّلاةِ
রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার সালাতের আগে (ওয়াজ-নসীহতের) বৈঠক করতে নিষেধ করেছেন।”
(তিরমিযী, অধ্যায়: সালাত হা/৩৩২,নাসাঈ,অধ্যায়: মসজিদ হা/৭১৪, আবুদাউদ,অধ্যায়: সালাত হা/১০৭৯, হাদীসটি হাসান, সুয়ূতী ও আলবানী রহ)
কারণ,এটি জুমার সালাতের জন্য উপস্থিত মুসল্লীদেরকে যিকির, কুরআন তিলাওয়াত, নফল সালাত, কাতার বদ্ধ হয়ে বসা এবং যে খুতবা শুনার জন্য মহান আল্লাহ তার রাসূলের মাধ্যমে আমাদেরকে আদেশ করেছেন সেই খুতবা শোনার জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণে অমনোযোগী করে তোলে।
খুতবার আগে যদি নিয়মিতভাবে এবং অধিক পরিমানে ওয়াজ-নসীহত করা হয় তবে মানুষের অন্তরে জুমার খুতবার মর্যাদা এবং প্রভাব কমে যায়। সুতরাং এটা করা হলে আল্লাহ তায়ালা যে উদ্দেশ্যে এই খুতবার ব্যবস্থা করেছেন সে উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ হবে।
তাছাড়া জুমার সালাতের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তি (ইমাম বা খতীব সাহেব)যদি খুতবার মধ্যে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়াজ-নসীহত পেশ করার প্রতি যত্নবান হন তবে খুতবার আগে অন্য কোন ওয়াজ-নসীহতের প্রয়োজন থাকে না।
তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তারা খলাফায়ে রাশেদাগণ এমনটি করতেন না। অথচ প্রকৃত কল্যাণ নিহীত রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শের অনুসরণেই মধ্যেই।
অবশ্য যদি বিশেষ কোন প্রয়োজন দেখা যায় অথবা তা যদি জুমার সালাত বা খুতবা সংশ্লিষ্ট হয় তবে এতে কোন অসুবিধা নাই।তবে সতর্ক থাকতে হবে যে, এটা যেন প্রতিনিয়ত এবং নিয়মিত না করা হয়।তাহলে এ ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ কোন সমস্যা নাই।আল্লাহই তাওফীক দানকারী।
وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم
ফতোয়া প্রদানকারী:
প্রধান: আবদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ বিন বায
উপ-প্রধান: আবুর রাযযাক আফীফী
সদস্য: আবদুল্লাহ বিন হাসান বিন কুঊদ।
——————–
অনুবাদক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
——————-
উৎস: ফতোয়া এবং গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি, সউদী আরব

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...