Friday 16 August 2019

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত

আহলুস সুন্নাহ’র সাথে ঈদের সালাত আদায়ের ব্যাপারে ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আহলুস সুন্নাহর ইমাম ও মুজাদ্দিদ, আশ-শাইখ, আল-'আল্লামাহ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)’র উপদেশ:
প্রশ্ন: আমরা বাইতুল ফাক্বিহ শহর থেকে আহলুস সুন্নাহ’র যুব-সম্প্রদায়। আমাদের নিজেদের জন্যে কোনো ঈদগাহ নেই যেখানে আমরা ঈদের সালাত আদায় করতে পারি। তবে শহরের মধ্যে একটি সর্বজনীন ঈদগাহ রয়েছে, যেটির খতিব একজন সূফী, আর অন্যান্য এমন লোকেরা সেখানে রয়েছে যারা সুরূরী (আধুনিক যুগের অন্যতম খারিজী মুহাম্মাদ সুরূর যাইনুল ‘আবিদীনের অনুসারী)। একারণে আমরা পার্শ্ববর্তী আরেকটি শহরে যাই (ঈদের সালাত আদায়ের জন্য) যা আমাদের শহর থেকে ৫ কি.মি দূরে। তা করার কারণে আমরা আমাদের ভাইদের সমালোচনার সম্মুখীন হই, যারা বলে, “এটা মুসলিমদের ঐক্যের মধ্যে বিভেদ ঘটানো।” সুতরাং, এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন।
উত্তর: আমরা তোমাকে তামাইয়ুযের (স্পষ্টরূপে স্বতন্ত্র হওয়া) ব্যাপারে নসিহত করছি। তুমি কীভাবে একজন সূফীর পেছনে সালাত আদায় করবে যে তার সূফিয়্যাহ প্রচার করে?! অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে। তাও যদি না করতে পারে, তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে দুর্বলতম ঈমান।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৪৯]
আর বিদ‘আতীদের থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এবং উপকারী ‘ইলম ও আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেয়ার নিকটবর্তী থাকার মাধ্যমে ফিতনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। বারাকাল্লাহু ফীক।
আর যারা তোমার এই কাজের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে, হয় তারা আহলুস সুন্নাহ’র মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ইখওয়ানুল মুসলিমীনের (মুসলিম ব্রাদারহুড) সদস্য, আর না হয় তারা আহলুস সুন্নাহ, কিন্তু হিযবীদের ষড়যন্ত্রের সাথে পরিচিত না।
সুতরাং, আমরা আহলুস সুন্নাহ’র সবাইকে নসিহত করছি সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র হতে (অর্থাৎ, বিদ‘আতীদের থেকে আলাদা হতে, ঈদের সালাত, জুম‘আহর সালাত এবং মাসজিদ বা মাসজিদের বাইরের অন্যান্য সালাতের ব্যাপারে)। আত-তামাইয়ুয একটি পরম প্রয়োজনীয়তা। এটা করার পর ইন-শা-আল্লাহ লোকজন আসবে (তোমাদের ঈদগাহে) যদি তোমরা এমন একজন খতিব নিয়োগ করো, যে ‘ইলমের দিক থেকে ততটুক উপকৃত হয়েছে, যতটুক হলে সে অন্যদের উপকৃত করতে পারে। আল্লাহ’র অনুমতিতে (ইচ্ছায়) লোকেরা আসবে, তোমাদের সাথে সালাত আদায় করবে এবং ওই সূফীকে বর্জন করবে।

সুতরাং, আমি আল্লাহ’র কাছে আহলুস সুন্নাহ’র এই ভাইদের ব্যাপারে একটি অভিযোগ করছি। হতে পারে সে একজন সুন্নী, যে কল্যাণ ভালোবাসে, কিন্তু সে এসব বলে (অর্থাৎ, বলে যে ওই সূফী ইমামের পেছনে ও অন্যান্য সুরূরীদের সাথে ঈদের সালাত আদায় না করে আলাদাভাবে সালাত আদায় করা হলো মুসলিমদের ঐক্যে বিভেদ ঘটানো)! যারা এটা বলে তাদেরকে বর্জন করো। আল্লাহ বলেন, “যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো, তবে তোমাদের মাঝে ফিতনা-ফাসাদই বৃদ্ধি করত। আর তারা তোমাদের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দৌড়াদৌড়ি করে ফিরত।” [সূরাহ আত-তাওবাহ: ৪৭]
সুতরাং, আমরা বিদ‘আতী এবং রোগাক্রান্ত অন্তরের লোকদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি। এবং আমরা রাসূলুল্লাহ’র (ﷺ) সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর মহান কিতাবে বলেন, “নিজেকে তুমি রাখবে তাদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে তাদের রাব্বকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, ফলে সে তার খেয়ালখুশির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে, তুমি তার আনুগত্য কোরো না।” [সূরাহ কাহফ: ২৮]
সুতরাং, বিদ‘আতীদের কথার ব্যাপারে আমরা ন্যূনতম চিন্তিতও নই। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত খুশি হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের মতো বিদ‘আতী হয়ে যাও। সুতরাং, শুরু থেকেই আমরা নিজেদেরকে বিদ‘আতীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছি, আর আমরা বিদ‘আহ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখব। ওয়াল্লাহুল মুস্তা‘আন।
·
[ইমাম মুক্ববিলের ‘আল-ঈলাহ মিন
বাইতিল ফাক্বীহ’ নামক অডিয়ো ক্যাসেট থেকে]
·
উৎস: https://goo.gl/U8ZSsn
·
অনুবাদক: রিফাত রাহমান সিয়াম

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...