গৃহ, ঘরঃ
আরবরা স্ত্রীকে ‘ঘর’ বলে থাকে। যেহেতু সেই সাধারণতঃ ঘরে থাকে। আর পুরুষ রুযী-রুটির সন্ধানে অধিকাংশ সময় বাইরে অবস্থান করে। যদিও অধিকাংশ মহিলাদের ঘর নেই। সে থাকে মায়ের বাড়িতে, নচেৎ শ্বশুর বাড়িতে। স্বামীর ঘর তার নিজস্ব না হলেও মহান আল্লাহর নির্দেশ,
{أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُم مِّن وُجْدِكُمْ} (6) سورة الطلاق
এই নির্দেশের ফলেই সে গৃহে থাকার অধিকার পায় এবং গৃহের গৃহিণী হয়ে যায়। আর স্বামীর ঘর তার নিজের ঘর হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবের অনেক জায়গায় মহিলাদের ব্যাপারে কিছু বলার সময় ঘরের কথা এলে ঘরকে স্ত্রীর সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে স্বামীর ঘরকে তার ঘর বলা হয়েছে।
যেমন মহান আল্লাহ ইউসুফ-যুলাইখার কাহিনীর বর্ণনায় বলেছেন,
{وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَن نَّفْسِهِ} (23) سورة يوسف
“সে যে স্ত্রীলোকের গৃহে ছিল সে তার কাছে (উপাচিকা হয়ে) যৌন-মিলন কামনা করল।” (ইউসুফ ও ২৩)
ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)- মিসরের বাদশা আযীযের গৃহে পালিত হচ্ছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ আযীযের গৃহ না বলে (তার) স্ত্রীলোকের গৃহ বলেছেন।
তিনি মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন,
{وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا} (33) سورة الأحزاب
“তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান কর এবং (প্রাক-ইসলামী) জাহেলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না। তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর ও যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রসূলের অনুগতা হও; হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো কেবল তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দুর করতে চান। এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।” (আহযাব : ৩৩)
তিনি আরো বলেছেন,
{وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا} (34) سورة الأحزاب
“আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সমস্ত গোপন রহস্য জানেন, খবর রাখেন সর্ববিষয়ের। (আহযাব : ৩৪)
তিনি বলেছেন, 'তোমাদের গৃহে' অথচ গৃহ ছিল তাদের স্বামী মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মালিকানাভুক্ত। তবুও গৃহের সম্পর্ক তাদের সাথে জোড়া হল কেন? যেহেতু স্বামীর গৃহ স্ত্রীর গৃহ। এ যেন প্রত্যেক পুরুষের নিকট একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, পুরুষ যদিও কাগজপত্রে গৃহের মালিক, তবুও স্ত্রী হল তার আভ্যন্তরিক মালকিন। সেই তার মালিকাহ’ (রাণী) এবং তা হল তার মামলাকাহ’ (রাজত্ব)।
পুরুষ ঘরে-বাইরে অবস্থান করে, কিন্তু নারী অবস্থান করে কেবল ঘরে। ঘরই তার প্রধান ঠিকানা। সেই ঘরেই তার জীবন-সংসার। সেই ঘরের সেই হিফাযত করে। বাইরের কোন কাজে যুক্ত হলেও ঘর-সংসারই তার মৌলিক কাজ। সেখানেই সে নিরাপদ থাকে, সেখানেই সে শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে। সেখানেই সে দৈহিক ও মানসিক নির্বিঘ্নতা অনুভব করে।