Saturday 21 September 2019

মাসজিদে ভিক্ষা চাওয়ার বিধান


·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال: يجلس كثير من المشوهين والسائلين في الحرم الشريف بمكة المكرمة يمدون أيديهم للحجاج والزوار والمعتمرين، ولا سيما في الطريق ما بين الصفا والمروة، وقد سمعت مرة أنه لا يجوز التصدق في المساجد، والسؤال هنا: هل يجوز إعطاء هؤلاء من الصدقات وهم في داخل الحرم، وهل تجوز الصدقة في الحرمين الشريفين خاصة وفي المساجد عامة؟ أفتونا جزاكم الله خيرا.
الجواب: أجاب شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله عن حكم السؤال في المسجد بما نصه: (أصل السؤال محرم في المسجد وخارج المسجد إلا لضرورة، فإن كان به ضرورة وسأل في المسجد ولم يؤذ أحدا؛ بتخطيه رقاب الناس، ولا غير تخطيه، ولم يكذب فيما يرويه ويذكر من حاله، ولم يجهر جهرا يضر الناس مثل أن يسأل والخطيب يخطب، أو وهم يستمعون علما يشغلهم به ونحو ذلك جاز والله أعلم).
أما الصدقة في المسجد فلا بأس بها، روى مسلم في صحيحه عن جرير قال: «كنا عند رسول الله صلى الله عليه وسلم في صدر النهار، قال: فجاءه قوم حفاة عراة مجتابي النمار أو العباء، متقلدي السيوف، عامتهم من مضر، بل كلهم من مضر، فتمعر وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم لما رأى بهم من الفاقة، فدخل ثم خرج فأمر بلالا فأذن وأقام فصلى ثم خطب فقال: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ...َ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا)، والآية التي في الحشر: (اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ)، تصدق رجل من ديناره، من درهمه، من ثوبه، من صاع بره، من صاع تمرة. حتى قال: ولو بشق تمرة، قال: فجاء رجل من الأنصار بصرة كادت كفه تعجز عنها، بل قد عجزت، قال: ثم تتابع الناس حتى رأيت كومين من طعام وثياب، حتى رأيت وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتهلل كأنه مذهبة ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من سن في الإسلام سنة حسنة، فله أجرها وأجر من عمل بها بعده من غير أن ينقص من أجورهم شيء، ومن سن في الإسلام سنة سيئة كان عليه وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيء». وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
প্রশ্ন: “অনেক বিকলাঙ্গ ও ভিখারী মক্কা মুকাররমায় হেরেম শরীফের মধ্যে হাজি, জেয়ারতকারী ও ওমরাকারীদের কাছে হাত পাতে। বিশেষ করে সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী রাস্তায় তারা হাত প্রসারিত করে। আমি একবার এরকম কথা শুনেছি যে, মাসজিদের মধ্যে দান-খয়রাত করা না-জায়েজ। প্রশ্ন হলো—হেরেমের মধ্যে তাদেরকে দান করা কি জায়েজ? বিশেষত দুই হেরেম শরীফে এবং আমভাবে সকল মাসজিদে দান-খয়রাত করা কি জায়েজ? আমাদেরকে বিষয়টি অবহিত করুন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”

Tuesday 17 September 2019

কী করলে নিজের দোষত্রুটি নিজের কাছেই ধরা পড়বে? (নিজেকে সংশোধনের উপায়)


উত্তর:
মানুষের দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা এবং অন্যকে সংশোধন করার পূর্বে নিজের দোষত্রুটি সংশোধন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অধিকাংশ মানুষ নিজে ভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকলেও অন্যকে সংশোধন করাতে বেশি উদগ্রীব! এটি কোনো ঈমানদারের নিকট কাম্য নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
"তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?" (সূরা বাকারা: ৪৪)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ
"হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই।" সূরা মায়িদা: ১০৫)
সুতরাং সংশোধনীটা শুরু করুন নিজেকে দিয়ে। আমি, আপনি সবাই যদি নিজেকে পরিবর্তন করি তাহলে পাল্টে যাবে সমাজ ব্যবস্থা।
🔷 কিভাবে আমরা নিজেদের দোষত্রুটি খুঁজে পাবো?

যে ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি বা মূর্তি আছে সে ঘরে সালাত আদায় করার বিধান


———🎀🎀———
প্রশ্ন: আমাদের ঘরে খাতা-পত্র, প্যাকেট ইত্যাদিতে ছবির মতো কার্টুন থাকে। কিছু ঘরে মানুষ, পশু-পাখি ইত্যাদির ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয় অথবা শোকেস-আলমরিতে পশু-পাখির ছোট ছাট মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়। ঘরের আসবাব-পত্রেও বাঘ-সিংহ, ময়ূর, পাখি ইত্যাদির ছবি অংকিত থাকে। এ সব ঘরে নামায পড়লে কি তা সহিহ হবে?
এতে করে কি ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করবে না?
উত্তর:
ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ، وَلَا صُورَةٌ
“ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। (সুনানে আন-নাসায়ী হা/৫৩৪৭-সহিহ)
ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী মাইমূনাহ রা. আমার নিকট বর্ণনা করেন:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জিবরাঈল আলাহিস সালাম আমার সাথে রাতে সাক্ষাত করার ওয়াদা করেছিলেন কিন্তু সাক্ষাত করেননি।
অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা আছে। তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেলেন।
এরপর জিবরাঈল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন: “যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না।”
সকালবেলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর মারতে আদেশ দিলেন। এমনকি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া।

মুহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বর্ণিত ১৪টি সহিহ হাদিস


----------------------
নিম্নে মহররম মাসের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ১৪টি হাদিস পেশ করা হল:
🔰 ১) প্রখ্যাত সাহাবী আবু বাকরা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: আল্লাহ তাআলা আসমান সমূহ এবং জমিন সৃষ্টির দিন যে আকৃতিতে সময়কে সৃষ্টি করেছিলেন সেটা আবার তার নিজস্ব কৃতিতে ফিরে এসেছে। এবং বারো মাসে এক বছর। তম্মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক। সেগুলো হল: যুল কা’দাহ (যিলকদ), যুল হিজ্জা (যিলহজ্জ) এবং মুহররম এবং আরেকটি হল মুযার সম্প্রদায়ের রজব মাস যা জুমাদাল ঊলা এবং শাবানের মধ্যখানে রয়েছে। (বুখারি ও মুসলিম)
🔰 ২) আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: রমাযানের পর সর্বোত্তম রোযা হল আল্লাহর মাস মুহররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হল রাতের নামায।” (মুসলিম)
🔰 ৩) আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “জাহেলি যুগে কুরাইশগণ আশুরার রোযা পালন করত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে নিজে আশুরারা রোযা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু‘ যখন রমাযানের রোযা ফরয হল তখন তা পরিত্যাগ করা হল। যার ইচ্ছা রাখত যার ইচ্ছা রাখত না।” (বুখারি)

বাবা-মা’দের প্রতি জরুরি সতর্ক বার্তা এবং একটি জিজ্ঞাসা


“বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা গান-বাজনা করলে তাদের কবরের আজাব বৃদ্ধি পায়” এ কথা কি সঠিক?
▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা জানি, ইসলামে গান-বাজনা হারাম। এখন প্রশ্ন হল, ”বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যদি গান-বাজনায় লিপ্ত হয় তাহলে কবরে বাবা-মার উপর শাস্তি বৃদ্ধি যায়” এ কথাটি কি সত্য?
উত্তর:
ইসলামে গান-বাজনা করা বা শোনা হারাম। এ দ্বারা অন্তর কলুষিত হয়, মনের সুপ্ত বাসনা (কু প্রবৃত্তি) জাগ্রত হয়, অন্তর রোগাক্রান্ত হয় ফলে ধীরে ধীরে অন্তরে , কুরআন ও হাদিসের বক্তব্য ও উপদেশপূর্ণ ভালো কথার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় এবং কুরআন তিলাওয়াত শুনার আগ্রহ হারিয়ে যায় ইত্যাদি। সুতরাং গানবাজনা থেকে দূরে থাকা জরুরি।
তবে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যদি গান-বাজনা করে তাহলে তাদের কবরে শাস্তি বৃদ্ধি পায়-এ কথা ঠিক নয়।
অবশ্য যদি বাবা-মা দুনিয়াতে বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানকে গানবাজনা শিক্ষার ব্যবস্থা করে যায় বা তাদেরকে এতে বাধা না দেয় বা তাদেরকে দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা না দিয়ে থাকে তাহলে বাবা-মার কবরে থেকেও সন্তানের সকল পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের ভাগীদার হবে। কারণ তারাই সন্তানের বিপথে যাওয়ার পেছনে মূল দায়ী।
তাদের দায়িত্ব ছিলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে গড়ে তোলা, বাল্যকাল থেকে হারাম, অশ্লীল, গান-বাজনা ইত্যাদি আল্লাহর নাফরমানি মূলক কার্যক্রম থেকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে নি। আল্লাহ তাআলা বলেন:

আশুরার শোক উদযাপন বিদআত কেন?


মুহররম মাসের দশ তারিখ আশুরার দিন হিসেবে পরিচিত। ৬১ হিজরির ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা অনেক উন্নীত করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর ব্যাপারে এ শুভ সংবাদ প্রদান করে গেছেন যে, তারা হবেন জান্নাতের যুবকদের নেতা।
আর এ কথা চির সত্য, যে যত বড় মর্যাদা লাভ করে তাকে তত বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, মানব জাতির মধ্যে কে সব চেয়ে বেশি পরীক্ষা ও বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন? তিনি বললেন, নবীগণ, তারপর আল্লাহর নেককার বান্দাগণ।
তারপর অন্যদের মধ্যে যারা যে পরিমাণ ঈমান ও পরহেযগারিতার অধিকারী তারা সে পরিমাণ পরীক্ষা সম্মুখীন হয়েছেন। মানুষ তার দীনদারি অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। কেউ যদি মজবুত দ্বীনের অধিকারী হয় তবে সে বেশি পরিমাণ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। আর কারো দ্বীনদারিতে কমতি থাকলে তার বিপদাপদ কম আসে এবং পরীক্ষাও কম হয়। মুমিন বান্দা যতদিন পৃথিবীতে চলা ফেরা করে ততদিন তার উপর বিপদাপদ পতিত হতে থাকে এবং এভাবে তার আর কোন গুনাহ বাকী থাকে না।” (মুসনাদ আহমদ ও তিরমিযী, সনদ হাসান)
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের এই মর্যাদা পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছেন। ইসলামের মর্যাদা নিয়েই তারা দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা সহকারে তারা প্রতিপালিত হয়েছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংস্পর্শ, স্নেহ-মমতা, আদর ও ভালবাসা পেয়ে তাদের জীবন সৌভাগ্য মণ্ডিত হয়েছে। যার কারণে মুসলমানগণ তাদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন।

জন্মদিন পালন করা এবং এ উপলক্ষে উইশ করা ও উপহার লেনদেন করার বিধান


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা জানি জন্মদিন পালন করা বিদআত যেহেতু এইটা বিজাতীয়দের কালচার। এখন কেউ যদি আমাকে জন্মদিন এর সময় উইশ করে বা গিফট দেয় এতে আমার করণীয় কি? আমাকে উইশ করলে কি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা যাবে?
উত্তর:
জন্মদিন (Birthday) পালন করা এবং এ উপলক্ষে উইশ (wish) করা বা গিফট লেনদেন করা শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ তা অমুসলিমদের সংস্কৃতি। আর ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:
❖ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
"যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।" [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ]

নির্জনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পর্দা কতটুকু?


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: যখন স্বামী-স্ত্রী নির্জনে সময় কাটায় তখন তাদের মাঝে কতটা পর্দা রক্ষা করা জরুরি? (একান্ত ঘনিষ্ঠ সময় ছাড়া বাকি সময়গুলোতে)। কেননা আমাদের আশে পাশে সর্বদা জিন ও ফেরেশতাগণ ঘুরা ফেরা করে।
উত্তর:
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনও পর্দা নেই। আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের জন্য 'পোশাক' বলে অভিহিত করেছেন এবং একে অপরের জন্য সম্পূর্ণ হালাল করেছেন। সুতরাং তারা নির্জনে যেভাবে খুশি একে অপরের সামনে থাকতে পারে এবং আনন্দ-বিনোদন করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
"তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাক।" (সূরা বাকারা: ১৮৬)
❖ তাফসিরে কুরতুবিতে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:
"পোশাক মূলত: কাপড়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য পোশাক বলা হয়েছে এ জন্য যে, দেহের সাথে দেহের সংযোগ ঘটে, একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং পোশাকের মত একে অপরের সঙ্গে থাকে।" (সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা, তাফসিরে কুরতুবী)
❖ এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

মুহররমের বিদআত ও অন্যায় কার্যক্রম


▬▬▬◆◆◆▬▬▬
মুহাররম মাস-বিশেষ করে এ মাসের ১০ তারিখে (আশুরার দিন) শিআ-রাফেযী সম্প্রদায় কর্তৃক অনেক বাড়াবাড়ি, হিংসাত্মক এবং নান ধরণের শরীয়ত বহির্ভূত/বিদআতী কার্যক্রম পালিত হয়ে থাকে। নিম্নে এ ধরণের কতিপয় কার্যক্রম তুলে ধরা হল:
১) হুসাইন রা. এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রতি মিথ্যা সমবেদনার প্রকাশ হিসেবে গালে চপেটাঘাত করা, বুক থাপড়ানো, শরীর রক্তাক্ত করা, তলোয়ার বা ছুরির আঘাতে মাথা থেকে রক্ত প্রবাহিত করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, কান্নাকাটি করা, শরীরের পোশাক ছেঁড়া, নিজেকে নানাভাবে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।
২) কারবালা যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে আশুরায় ‘লাঠি খেলা’র আয়োজন করা।
৩) মুহররমের ১০ তারিখে শোক দিবস পালন করা।
৪) হুসাইন রা. এর প্রতীকী কবর তৈরি করে তা সুসজ্জিত করা বা তাতে সম্মান করা।
৫) কালো পতাকা নিয়ে তাজিয়া মিছিল করা এবং তাতে পানি বিতরণ করা।
৬) মুহররমের দশ তারিখে কালো জামা-কাপড় পরিধান করা।
৭) মুহররম উপলক্ষে গান-বাদ্য, কাওয়ালী, জারি, সারি, মুর্সিয়া বা পালা গানের আসর বসানো।
৮) হুসাইন রা. এর মৃত্যুতে শোক পালনার্থে মুহররমের প্রথম দশ দিন গোস্ত, মাছ, ডিম ইত্যাদি
খাওয়া, বিয়েশাদী করা বা দেয়া থেকে বিরত থাকা।
৯) এ উপলক্ষে মুহররমের প্রথম দশ দিন মাটিতে ঘুমানো।
১০) কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করে ফেতনার আগুন উসকিয়ে দেয়া এবং পূর্ব যুগের বিভিন্ন নিরপরাধ মানুষের প্রতি অভিশাপ দেয়া।
এ কাজগুলো মূলত: পথভ্রষ্ট শিয়া সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে আর অনেক অজ্ঞ মুসলিম নাজানার কারণে তাদের সাথে এ সব কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে!
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬▬▬▬▬▬
গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত নারীগণ


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: মহিলা সাহাবীদের মধ্যে কি কেউ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন? হলে তাদের নাম কি?
উত্তর:
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহির মারফতে কতিপয় পুরুষ সাহাবীর পাশাপাশি কতিপয় মহিলার ব্যাপারে জান্নাতবাসী হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করেছেন। কিন্তু পুরুষ সাহাবীদের বিষয়টি সুপ্রসিদ্ধ হলেও মহিলাদের মধ্যে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে।
তাই নিম্নে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সৌভাগ্যবতী মহিলাদের মধ্যে ১২ জনের নামের একটি তালিকা তুলে ধরা হল: (যদিও তাদের সংখ্যা আরও বেশি):
১) আসিয়া আ. (ফেরআউনের স্ত্রী)
২) মরিয়ম বিনতে ইমরান আ. (আল্লাহর রাসূল ঈসা আলাইহিস সালাম এর মা)
৩) খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম এর স্ত্রী)
৪) আয়েশা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী এবং আবু বকর সিদ্দীক রা. এর কন্যা)
৫) ফাতিমা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ও আলী রা. এর স্ত্রী)
৬) হাফসা রা. (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী এবং উমর রা. এর কন্যা)
৭) উম্মে সুলাইম রা. (আবু তালহা রা. এর স্ত্রী)
৮) গুমায়সা বিনতে মিলহান রা.
৯) রবী বিনতে মুআওয়ায (মদীনার আনসারী মহিলা সাহাবী- যিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট যুদ্ধের বাইআত নিয়েছিলেন। বাইআত গ্রহণকারী সর্বমোট দু জন মহিলার মধ্যে তিনি একজন)
১০) সুমাইয়া রা. (ইসলামের ইতিহাসে প্রথম শহিদ)
১১) সুয়াইরা আল আসাদিয়া রা.
১২) উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (আনাস রা. এর খালা)
যে সব হাদিসের মধ্যে এ সকল সৌভাগ্যবতী মহিলা সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো জানতে এই বইটি পড়ুন:
“জান্নাতও জাহান্নাম এর সংবাদপ্রাপ্ত নারী-পুরুষগণ”
বইটির ওয়ার্ড ফাইল ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন এই লিংকে:
উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত ১২ জন ছাড়াও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলার সংখ্যা আরও রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান ঐ সকল সৌভাগ্যবান পুরুষ ও সৌভাগ্যবতী নারীদের দলভুক্ত হয়ে মুমিন জীবনের অভীষ্ট লক্ষ এবং অবর্ণনীয় নিয়ামত সমৃদ্ধ চূড়ান্ত প্রত্যাশার নীড় জান্নাতে প্রবেশের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

মুহররম মাসে বিয়ে-শাদী নিষিদ্ধ!!


▬▬▬◈◆◈▬▬▬
প্রশ্ন: লোকমুখে শোনা যায় যে, মুহররম মাসে না কি বিয়ে-শাদী নিষিদ্ধ? এ কারণে অনেক মানুষ এ মাসে বিয়ে করে না এবং বিয়ে দেয়ও না। এটা কি সঠিক?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে মুহররম মাসে বিয়ে-শাদি নিষিদ্ধ নয়। বরং বছরের কোন মাসেই কোন সময়ই বিয়ে-শাদী নিষিদ্ধ নয়। এ মর্মে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে সব‌ই ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।
◆◆ মুহররম মাস নিয়ে শিয়াদের বাড়াবাড়ি:
মুহররম মাসে বিয়ে-শাদী করা ঠিক নয়- মর্মে প্রচলিত কথাটি শিয়া-রাফেযী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে। কেননা, এ মাসে (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) হুসাইন রা. কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা মিথ্যা মায়াকান্না আর অতিভক্তি দেখিয়ে এ মাসে অনেক বিদআতি কার্যক্রম করে থাকে এবং শরীয়তের অনেক বৈধ জিনিসকে অবৈধ করে থাকে। যেমন তারা বলে, মুহররম মাসে নতুন জামা পড়া যাবে না, গোস্ত-মাছ ইত্যাদি ভালো খাবার খাওয়া যাবে না বরং কেবল নিরামিষ খেতে হবে, বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শুতে হবে, বিয়াশাদী দেয়া বা করা বৈধ নয়...ইত্যাদি। অথচ এ সব কথা শুধু দলীল বহির্ভূত নয় বরং দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইসলামী শরিয়ত যা নিষেধ করে নি তা নিষেধ করা মানে দ্বীনের মধ্যে সীমালঙ্ঘন এবং ধৃষ্টতা প্রদর্শন।

শিয়ারা কেন হুসাইন রা. এর প্রতি এত দরদ দেখায়?

অবাক করা তথ্য!
আপনি জানেন কি? শিয়ারা কেন হুসাইন রা. এর প্রতি এত দরদ দেখায়?
▬▬▬◈◈◈▬▬▬
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
▬▬▬◈◈◈▬▬▬
শিয়া সম্প্রদায় কেন আলী রা. এর ছেলেদের মধ্যে কেবল হুসাইন রা. এর এত গুণগান করে এবং তার প্রতি এত দরদে দেখায়? কখনও কি এ বিষয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছেন? কখনো কি বিস্ময়কর মনে হয়েছে বিষয়টি?
এই তথ্য জানার পরে বিশ্বের অনেক মুসলিম হোঁচট খেয়েছে, বিশেষ করে আরব দেশের শিয়ারা। এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আসুন, আলী রা. এর সন্তানদের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নি।
আলী রা. এর মোট ছেলে ছিল ১১ জন । তাদের নাম নিম্নরূপ:
১) হাসান বিন আলী বিন আবু তালিব
২) হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব
৩) মুহসিন বিন আলী বিন আবু তালিব
৪) আব্বাস বিন আলী বিন আবু তালিব
৫) হেলাল বিন আলী বিন আবু তালিব
৬) আব্দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব
৭) জাফর বিন আলী বিন আবু তালিব
৮) উসমান বিন আলী বিন আবু তালিব
৯) উবায়দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব
১০) আবু বকর বিন আলী বিন আবু তালিব
১১) উমর বিন আলী বিন আবু তালিব

আশুরা তথা মুহররমের ১০ তারিখে রোযা রাখার ফযিলত কি? এ দিন ভালো খাবারের আয়োজন করলে সারা বছর ভালো খাওয়া যায়-এ কথা কি ঠিক?


▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর:
◈◈ আশুরার রোযা রাখার ফযিলত:
বিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আশুরা তথা মুহররম মাসের ১০ তারিখে রোযা রাখলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা পেছনের এক বছরের গুনাহ মোচন করে দিবেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
আবু কাতাদা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন:
ثَلاثٌ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ فَهَذَا صِيَامُ الدَّهْرِ كُلِّهِ صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
“প্রতি মাসে তিন দিন এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান পর্যন্ত রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার সাওয়াব অর্জিত হয়। আরাফার দিন রোযা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের এক বছরের এবং সামনেরে এক বছরের (মোট দু বছরের) গুনাহ মোচন করবেন। আর আশুরার দিন (মুহররম মাসের ১০ তারিখে) রোযা রাখলে আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর বিনিময়ে পেছনের এক বছরের গুনাহ মোচন করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/১১৬২)
➤ উল্লেখ্য যে, ৯ ও ১০- দু দিন রোযা রাখা অধিক উত্তম। তবে কোনো কারণে ৯ তারিখে রোযা রাখা সম্ভব না হলে ১০ ও ১১ তারিখে রাখা জায়েজ।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহঃ বলেন: ”মাসের শুরু চিনতে অসুবিধা হলে (৯, ১০ ও ১১ এ) তিন দিন রোযা রাখবে। যেন ৯ ও ১০ তারিখে রোযা নিশ্চিতভাবে সম্পন্ন করা যায়। (মুগনী ৩/১৭৪)
◈◈ আশুরার দিন ভালো খাবারের আয়োজন করা:

আলেম ও দ্বীনদার মানুষকে হুজুর বলা কি ঠিক?



প্রশ্ন: আমাদের দেশে মসজিদের ইমামকে ‘হুজুর’ বলা হয়। এভাবে কাউকে ‘হুজুর’ বলাটা কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
‘হুজুর’ শব্দটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। সাধারণত: আলেম, মসজিদের ইমাম ও দ্বীনদার-পরহেযগার মানুষদেরকে ‘হুজুর’ বলে সম্বোধন করা হয়।
নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হল:
 'হুজুর' শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
 ‘হুজুর’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল, উপস্থিত হওয়া।
 “পরিভাষায় এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।” (ফার্সী অভিধান গিয়াসুল লুগাত, পৃষ্ঠা/১৭৪)
 অনলাইন ভিত্তিক অভিধান ebanglalibrary.com এ বলা হয়: হুজুর [ hujura] বি. নৃপতি, বিচারপতি, মনিব প্রভৃতিকে সম্মানসূচক সম্বোধন।
 বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।

বদমেজাজি ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি এবং এমন স্বামীর সাথে আচরণের ১৫টি কৌশল


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক বিপদে আছি। আমাদের একটা ছেলে আছে।আমাদের দুজনের সাথে সারাদিন সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে। সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে তর্ক হতে থাকে। এক পর্যায় মারামারি। সে আমাকে মারে। স্বামী পরকীয়া করে না কিন্তু তার রাগ-জিদটা একটু বেশী। আমি কি করব বুঝতে পারি না।
আমার মা নাই। আমাদের কেউ যাদু গ্রস্ত কি না কিভাবে বুঝব? প্লিজ আমাকে হেল্প করুন। আমাদের সংসার না টিকার মত অবস্থা।
উত্তর:
আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন এবং আপনার স্বামীকে হেদায়েত ও সুবুদ্ধি দান করুন। আমীন।
নিচে বদমেজাজি ব্যক্তিদের করুণ পরিণতি এবং এ জাতীয় স্বামীর সাথে ঘর-সংসার ও আচরণের ১৫টি কৌশল তুলে ধরা হল:
🌀 বদমেজাজি কাকে বলে এবং তাদের কী পরিণতি?
বদমেজাজি বলতে বুঝায় যে ব্যক্তি, সামান্য বিষয়ে রাগারাগি করে, বকাঝকা ও গালাগালি করে। সে যা বলে সেটাই করে। যার মধ্যে কারো মতামত শুনা বা আপোষ-মীমাংসার মনোভাব নাই। এরা অহংকারী, উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে।

শিয়া সম্প্রদায় যে প্রতি বছর ১০ মুহররমে মাতম করে, তাজিয়া মিছিল করে, নিজেদের শরীরে আঘাত করে-এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। এ কাজগুলো কি শরিয়ত সম্মত?


উত্তর:
৬১ হিজরির মুহররম মাসের দশ তারিখে হুসাইন বিন আলী রা. রাজনৈতিক কারণে ফিতনায় পতিত হয়ে ইরাকের কারবালার প্রান্তরে তৎকালীন মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা ইয়াজিদ বিন মুআবিয়া এর সেনাবাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার প্রতি সমবেদনার বর্হি:প্রকাশ হিসেবে শিয়া সম্প্রদায় প্রতি বছর ১০ম মুহররমে নিজেদের শরীরকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে, মাথা মুণ্ডন করে, রাস্তায় রাস্তায় ‘হায় হুসাইন..হাই হুসাইন’ বলে কান্নাকাটি ও মাতম করে, কালো ব্যাচ ধারণ করে, তাজিয়া মিছিল বের করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো সব, বিদআত, জাহেলিয়াত পূর্ণ ও হারাম কাজ। নিম্নাক্ত আলোচনা থেকে তা প্রমাণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
 মৃত্যুশোকে কান্নাকাটি করা, মাতম করা, শরীরে আঘাত করা ইত্যাদির বিধান কি?
মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيَحْزَنُ الْقَلْبُ وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَاللَّهِ يَا إِبْرَاهِيمُ إِنَّا بِكَ لَمَحْزُونُونَ
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।” [সহীহ বুখারী: অনুচ্ছেদ: সে আমাদের লোক নয় যে, গালে চপেটাঘাত করে। হাদিস নং ১২৯৭,মাকতাবা শামেলা]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন, মাথার চুল, জুতা, লাঠি, পাগড়ি ইত্যাদি) এবং আমাদের করণীয়:


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: বিভিন্ন স্থানে এবং সামাজিক মিডিয়ায় অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন: তাঁর জামা, জুতা, চুল, চাদর, তলোয়ার ইত্যাদি) প্রদর্শন করে চলেছে। সরলমনা মানুষ সেগুলো বিশ্বাস করছে এবং সেগুলোর প্রতি ভক্তি ও বিনয় প্রকাশ করছে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি এগুলো রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যবহৃত আসবাব-সমগ্রী?
উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যেমন তা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হওয়া জরুরি ঠিক তদ্রূপ তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, জুতা, জামা, জুব্বা, চাদর, পাগড়ি, মাথার চুল, লাঠি, ঘটি-বাটি ও অন্যান্য ব্যবহৃত আসবাব-পত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে সব বস্তুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ করা হচ্ছে সেগুলোর পেছনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই যে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আশুরার দিন 'শোক' বা 'কালো দিন' নয় বরং বিজয় ও কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন:


হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্য, আশুরার দিন আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী বনী ইসরাইলকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তাগুত নিজেকে 'সুউচ্চ রব' দাবীদার অহংকারী শাসক ফেরাউন এবং তার বিশাল সেনাবাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে মুসা আলাইহিস সালাম সে দিন রোযা রেখেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিন রোযা রেখেছেন এবং তার উম্মতকে রোযা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সুতরাং নি:সন্দেহে এ দিনটি শত্রুর উপর বিজয় ও আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায়ের দিন।
হ্যাঁ, ইতিহাসের এক ক্রান্তি লগ্নে ৬১ হিজরির এ দিনে হুসাইন রা. নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। এতে নি:সন্দেহে মুসলিম বিশ্ব ব্যথিত ও মর্মাহত। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, সাহাবীদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। যেমন: হুসাইন রা. এর পিতা ৪র্থ খলীফা আলী রা., ৩য় খলীফা উসমান রা, মুসলিম জাহানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর খলীফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. প্রমূখ সাহাবীগণের নির্মম ও হৃদয় বিদারক হত্যাকাণ্ড, বীরে মাউনার ঘটনায় ৭০জন হাফেজে কুরআন সাহাবীর নির্মম হত্যাকাণ্ড, ওহুদের প্রান্তরে ৭০জন সাহাবীর শাহাদত বরণ....ইত্যাদি অসংখ্য ঘটনা।
সুতরাং কারো নিহত হওয়া বা শাহাদাত বরণের দিনকে যদি 'শোক ও কালো দিবস' হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তাহলে উপরের সবগুলো দিনকেই ধরতে হয়। কিন্তু ইসলামে 'কালো দিবস' বা 'শোক দিবস' বলে কিছু নেই। কেননা যারা আল্লাহর জন্য জীবনকে সমর্পণ করে তারা কখনো শোকে হতবিহবল হয় না, তারা কোনও দিনকে 'কালো দিন' মনে করে না। ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ-শাহাদাত বরণ অতি গৌরবের, সফলতার এবং প্রতিটি মুমিন জীবনের এক পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়।
সুতরাং আসুন,
শিয়াদের কণ্ঠে কণ্ঠ না মিলেয়ে
এবং তাদের দেখানো অভিশপ্ত রাস্তায় না চলে
মিথ্যার উপর সত্যের বিজয়ের দিনে...
ফেরাউনের মত তাগুতের পতনের দিনে...
মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী বনি ইসরাইলের আনন্দের দিনে...
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে...
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের অংশ হিসেবে আশুরার সিয়াম পালন করি এবং এর মাধ্যমে আমাদের পূর্বের এক বছরের গুনাহ মোচনের জন্য চেষ্টা করি।
নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল
আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।আমীন।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

আমি যদি এই দোআটি না পড়তাম তবে ইহুদীরা জাদু করে আমাকে গাধা বানিয়ে ফেলত”


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: কা’ব বিন আহবার রহ. বলেছেন, “আমি যদি এই দোআটি না পড়তাম তবে ইহুদীরা তাদের জাদু দ্বারা আমাকে গাধা বানিয়ে ফেলত” এই হাদিসটা কি সহিহ?
উত্তর:
কাকা ইবনে হাকিম রহ. বলেন, কা’ব আল আহবার আমাকে বলেছেন, “একটি দোয়া যদি আমি না পড়তাম তাহলে ইহুদিরা আমাকে [জাদুর মাধ্যমে] গাধা বানিয়ে ফেলত।” তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, সেটি কোন দোয়া? তখন তিনি এ দোয়াটির কথা বললেন:
" أَعُوذُ بِوَجْهِ اللهِ الْعَظِيمِ الَّذِي لَيْسَ شَيْءٌ أَعْظَمَ مِنْهُ، وَبِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ الَّتِي لاَ يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلاَ فَاجِرٌ، وَبِأَسْمَاءِ اللهِ الْحُسْنَى كُلِّهَا، مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمُ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَبَرَأَ وَذَرَأَ "
বাংলা উচ্চারণ :
আউযুবি ওয়াজহিল্লাযী লাইসা শাইয়ুন আ’যামা মিনহু
ওয়া বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতিল লাতি লা ইউজাভিযুহুন্না বাররুন ওয়া লা ফাজিরুন। ওয়াবি আসমা-ইল্লাহিল হুসনা কুল্লাহা মা আলিমতু মিনহা ওয়া মা লাম আ’লামু
মিন শাররি মা খলাকা ওয়া বারাআ ওয়া জারাআ।
বাংলা অর্থ :

দেনমোহর ও কাবিননামা



প্রশ্ন: আমি জানতে চাই কাবিননামা এবং দেনমোহর কি এক? যদি এক না হয় তাহলে পার্থক্য কি?

উত্তর: দেনমোহর এবং কাবিননামা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। নিম্নে এ দুটি জিনিসের পরিচয় ও পার্থক্য প্রদান করা হল:

🔸 দেনমোহর কী?

মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হল বিয়ের অন্যতম শর্ত। এই শর্ত অনুযায়ী স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে বিয়ের সময় কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পায় বা পাওয়ার অধিকার লাভ করে। দেনমোহর বিয়ের সময়ই ধার্য বা ঠিক করা হয়। এটি স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার।
আল্লাহ কুরআনে বলেন:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশী মনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” (সূরা নিসা: ৪)

🔸 কাবিননামা কী?

কাবিননামা বলতে বিবাহ সম্পাদনের লিখিত চুক্তি বোঝায়। একে নিকাহনামা বলেও উল্লেখ করা হয়।
বিবাহ সম্পাদনের জন্য বা বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য ‘কাবিননামা’ অপরিহার্য নয়। কাবিননামা একটি আইনি বাধ্যবাধকতা।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত কাজী সরকার নির্ধারিত ছকে কাবিননামা সম্পাদন করে থাকেন। স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর আদায়, স্ত্রীর ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিননামা একটি আইনি দলিল। (বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ই-তথ্যকোষ)
--------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

কুরআন তিলাওয়াতে উদ্দেশ্যে ওযু করা হলে সে ওযু দ্বারা কি ফরয সালাত আদায় করা বৈধ হবে?


উত্তর:
কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে ওযু করা হলে উক্ত ওযু দ্বারা ফরয, সুন্নত, নফল ইত্যাদি সালাত আদায় করা বৈধ। কেননা, সালাতের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করা শর্ত। আর এখানে তা বিদ্যমান রয়েছে।
সুতরাং কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য কৃত ওযু দ্বারা সালাত আদায় করতে কোনো বাধা নেই। আল হামদুলিল্লাহ।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

বিয়েতে কাজি (ম্যারেজ রেজিস্ট্রার) এর উপস্থিতি কি জরুরি?


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমি এক জায়াগায় পড়েছিলাম যে, “বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কাজি উপস্থিত থাকা জরুরি নয়। তার কাজটা অন্য কেউ করলেও চলে।” এ কথাটা কি সঠিক?
উত্তর:
বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য কাজি তথা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার এর উপস্থিতি জরুরি নয়-এ কথা ঠিক। বরং বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের অভিভাবকের সম্মতি, দেনমোহর নির্ধারণ ও দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ইজাব-কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ) এর মাধ্যমে আকদ সম্পন্ন হলেই বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিয়ে পড়ানোর যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোনও মুসলিম তা করতে পারে।
তবে বর্তমান যুগে নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খল রোধে কাজির মাধ্যমে সরকারীভাবে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

ফেরেশতা ও জিনের মধ্যে পার্থক্য কি? ইবলিস শয়তান কি ফেরেশতা ছিল?


▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: জিন এবং ফেরেশতার মধ্যে পার্থক্য কি? কেউ কেউ বলে থাকে যে, ইবলিস শয়তান জিন ছিল; ফেরেশতা নয়। এটা কতটুকু সত্য?
উত্তর:
ফেরেশতা ও জিনের মাঝে অনেক দিক দিয়ে পার্থক্য আছে। সেগুলোর মধ্যে মৌলিক চারটি পার্থক্য উপস্থাপন করা হল:
1⃣ ১ম পার্থক্য: ফেরেশতাগণ সৃষ্টি হয়েছে নূর বা আলো থেকে। আর জিন সৃষ্টির হয়েছে আগুন থেকে।
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«خُلِقَتِ المَلاَئِكَةُ مِنْ نُورٍ، وَخُلِقَ الجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ، وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ»
"ফিরিশতাদেরকে জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে অগ্নিশিখা হতে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বস্তু থেকে, যা তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। [অর্থাৎ মাটি থেকে]।" মুসলিম)
ইবলিস শয়তান ছিল জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে বলেছে:
قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
“সে (ইবলিস) বলল: আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।”
2⃣ ২য়: ফেরেশতাগণ কখনো আল্লাহর আনুগত্য করেন। তারা কখনও তাঁর অবাধ্যতা করেন না। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেছেন:
لَّا يَعْصُونَ اللَّـهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
“তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।” (সূরা আত তাহরীম: ৬)
পক্ষান্তরে জিন জাতির মধ্যে কিছু আছে ঈমানদার আর কিছু আছে কাফের। কিছু আছে নেককার এবং কিছু আছে পাপিষ্ঠ -যেমন রয়েছে মানুষের মধ্যে।
জিনদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন: (জিনরা বলেছিল)
وَأَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُونَ وَمِنَّا الْقَاسِطُونَ ۖ فَمَنْ أَسْلَمَ فَأُولَـٰئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا - وَأَمَّا الْقَاسِطُونَ فَكَانُوا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا
“আমাদের কিছুসংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়, তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে। আর যারা অন্যায়কারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন।” সূরা জিন: ১৪ ও ১৫)
ফেরেশতাগণ মানুষকে সর্বদা ভালো কাজের আদেশ করেন; কখনও খারাপ কাজের আদেশ করেন না। পক্ষান্তরে ভালো ও সৎ জিনরা মানুষকে ভালো কাজের আর খারাপ জিনরা পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের নির্দেশ দেয়।
3⃣ ৩য়: ফেরেশতাদের মধ্যে জৈবিক চাহিদা নাই। পক্ষান্তরে জিনদের মাঝে জৈবিক চাহিদা আছে।
4⃣ ৪র্থ: ফেরেশতা ও জিন উভয়েই বিভিন্ন আকার-আকৃতি ধারণ করতে সক্ষম কিন্তু ফেরেশতারা কখনও খারাপ ও ভয়ঙ্কর জিনিসের রূপ ধারণ করেন না বরং তারা কখনও কখনও সুন্দর ও ভালো জিনিসের আকার ধারণ করে মানুষের সামনে হাজির হয়। যেমন, বিখ্যাত হাদিসে জিবরাঈল। জিবরাঈল ফেরেশতা একজন সুদর্শন যুবকের আকৃতিতে দ্বীন ইসলাম শিখানোর জন্য সাহাবীদের সামনে উপস্থিত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কতিপয় প্রশ্নের মাধ্যমে তাদেরকে দ্বীন শিখিয়েছেন।
পক্ষান্তরে জিনরা ভালো-মন্দ উভয় জিনিসের আকার ধারণ করে। খারাপ জিনগুলো কখনও কখনো ভয়ঙ্কর ও নোংরা জিনিসের আকার ধারণ করে মানুষকে ভয় দেখায়।
 ইবলিস শয়তান কি জিন ছিল না কি ফেরেশতা ছিল?
এর উত্তরে আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীটি যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ
“যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম: আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলিস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল।”
(সূরা কাহফ: ৫০)
আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

নির্যাতনে মৃত ব্যক্তির শহিদি মর্যাদা লাভ, অন্যায়ভাবে হত্যা করার ভয়াবহ পরিণতি এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম হত্যাকাণ্ড


▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: কোনও ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে কি শহিদ হিসেবে গণ্য হবে? অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করার ভয়াবহতা কতটুকু? পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম কে হত্যাকাণ্ডের সূচনা করেছিলো এবং তার পরিণতি কী হবে?
উত্তর:
নিন্মে উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের সংক্ষেপে উত্তর প্রদান করা হল: و بالله التوفيق
🌀 ক. কোনও ব্যক্তি যদি অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে কি শহিদ হিসেবে গণ্য হবে?
হ্যাঁ, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে অন্যায়ভাবে নির্যাতিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে আখিরাতে আল্লাহর নিকট শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه قَالَ : صَعِدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى " أُحُدٍ " وَمَعَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ فَرَجَفَ بِهِمْ ، فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ ، قَالَ : (اثْبُتْ أُحُدُ ، فَمَا عَلَيْكَ إِلاَّ نَبِيٌّ ، أَوْ صِدِّيقٌ ، أَوْ شَهِيدَان- رواه البخاري
আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আবু বকর রা. উমর রা. ও উসমান রা. সহকারে ওহুদ পাহাড়ে উঠলে তা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। তখন তিনি পাহাড়ের গায়ে পদাঘাত করে বললেন:
“হে ওহুদ, তুমি স্থির হও। কারণ তোমার উপরে আছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং দু জন শহিদ।” (সহিহ বুখারী হা/ ৩৪৮৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আল্লাহর ওহির মারফতে অগ্রিম ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে, সে দিন ওহুদ পাহাড়ে তাঁর সাথে থাকা তিন জন অতি সম্মানিত সাহাবীর মধ্যে দু জন শহিদ হবেন।
ইতিহাস সাক্ষী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সালাম এর ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর তিরোধানের পর মুসলিম জাহানের ২য় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ফজর সালাতে ইমামতি করা অবস্থায় আবু লুলু নামক এক অগ্নিপূজক ঘাতক কর্তৃক পেছন থেকে অতর্কিত বর্শাঘাতে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। আর ৩য় খলিফা উসমান বিন আফফান রা. তাঁর খিলাফতকালে একদল খারেজী বিদ্রোহী জঙ্গিদের হাতে মাজলুম অবস্থায় শাহাদত বরণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আমীন।

জিন ও শয়তান: পরিচয়, প্রকারভেদ ও পার্থক্য




▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: জিন ও শয়তান কি একই না কি তাদের মাঝে পার্থক্য আছে?
উত্তর:
নিন্মে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে শয়তানের পরিচয়, প্রকারভেদ এবং জিন ও শয়তানের মাঝে পার্থক্য তুলে ধরা হল:
🌀 শয়তান কাকে বলে?
শয়তান বলতে কী বুঝায় সে ব্যাপারে আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
◈ বিশিষ্ট ভাষাবিদ, ফিকাহ বিদ ও হাদিস বিদ আবু উবাইদ কাসেম বিন সাল্লাম [জন্ম: ১৫৭ হি:-২২৪ হি:] বলেন:
الشيطان كل عات متمرد من إنس, أو جن
“প্রত্যেক অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘণকারীকে শয়তান বলা হয়।” (বাহরুল উলুম লিস সামারকান্দি ১/২৭৭)
◈ আবু বকর মুহাম্মদ বিন ইসহাক [জন্ম ৮৫ হি:-মৃত্যু: ১৫১ হি;] বলেন:
إنما سمي شيطاناً لأنه شطن عن أمر ربه، والشطون البعيد النازح
“শয়তানকে এই জন্যই শয়তান বলা হয় যে, সে আল্লাহর নির্দেশ পালন থেকে দূরে থাকে। কেননা আরবিতে الشطون-শাতূন শব্দের অর্থ হল, দূরে অবস্থানকারী ও পলাতক।” [আয যীনাহ ফিল কালিমাতুল ইসলামিয়্যাতিল আরাবিয়াহ ২/১৭৯]
◈ কোন কোনো আলেম বলেন: যে নিজে আল্লাহর অবাধ্যতা করে এবং নানা অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত থাকার পাশাপাশি অন্যকে আল্লাহর আনুগত্য করতে বাধা দেয় এবং দ্বীন ও কল্যাণের পথ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে তাকেই ইসলামের পরিভাষায় শয়তান বলা হয়-চাই সে জিনের মধ্য থেকে হোক অথবা মানুষের মধ্য থেকে হোক।
🌀 শয়তান দু প্রকার। যথা:

ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান


▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: হিজড়াদের সংগে মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া করা যাবে কি?
এবং তাদের কাছে টাকা ধার নিয়ে হালাল ব্যবসা করা যাবে কি?
উত্তর:
প্রথমত: আমাদের জানা আবশ্যক যে, একজন হিজড়া এবং সাধারণ মানুষের মাঝে মৌলিক কোন পার্থক্য নাই যৌন সংক্রান্ত তারতম্য এবং এ বিষয় সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধান ছাড়া। তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান-কুফরি, আল্লাহর আনুগত্য-নাফরমানি, ইবাদত-বন্দেগী, ইসলামের বিধিবিধান পালন এবং সামাজিক সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই। তারাও ইসলাম, ঈমান, তাকওয়া-পরহেযগারিতা, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত। তারা যদি নেকির কাজ করে তাহলে আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত হবে এবং যদি কোন অন্যায় করে আখিরাতে শাস্তির সম্মুখীন হবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হল, হিজড়াদেরকে আমাদের সমাজে ভিন্ন চোখে দেখা হয় এবং সামাজিকভাবে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে তারাও জীবন-জীবিকার তাগিদে এমন কিছু কাজ করে যা অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়-জুলুম এবং অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর।
সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে এবং তাদের প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূর করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাও জরুরি যে, বর্তমানে হিজড়া হিসেবে পরিচিত কিছু মানুষ প্রকৃত হিজড়া নয় বরং তারা কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে হিজড়া বেশ ধারণ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে আবার কিছু মানুষকে দুষ্কৃতিকারীরা বাধ্য করে হিজড়া বানিয়ে রেখেছে বিশেষ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।
যাহোক, যারা সৃষ্টিগতভাবে প্রকৃতই হিজড়া ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের সাথে সাধারণ মেলামেশা, উঠবস, লেনদেন, খাওয়া- দাওয়া করতে কোন আপত্তি নেই এবং তাদের নিকট টাকা ধার নিয়ে হালাল ব্যবসা করতেও কোন বাধা নেই। আল্লাহু আলাম।
http://bit.ly/2kgnrt2
আরও পড়ুন:
হিজড়াদের অশালীন আচরণের ক্ষেত্রে করণীয় এবং তাদেরকে দান করার বিধান
http://bit.ly/2kLrlKM

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

হিজড়াদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং তাদের পক্ষ থেকে অন্যায় আচরণের শিকার হলে করণীয়


▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: বর্তমানে আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ হিজড়া দেখা যায়। এরা ট্রেনে চলাচলের সময় যাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে সমস্যা করে থাকে এবং অনেক সময় শরীরেও হাত দিয়ে দেয়। এর জন্য কী আমাদের গুনাহ হবে? এদের কবল থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করব?
হিজড়াদের প্রতি আমাদের কী দায়িত্ব-কতর্ব্য আছে দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
মনে রাখতে হবে, হিজড়ারা আর দশজন মানুষের মতই মানুষ-আশরাফুল মাখলুকাত-সৃষ্টির সেরা জীব। তারাও আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান, সৎকর্ম, ইবাদত-বন্দেগি ও হালাল-হারাম মেনে চলার ক্ষেত্রে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত। কারণ আল্লাহ তাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন। তারা আল্লাহর বিধান পালন করলে যেভাবে সওয়াব অর্জন করবে তেমনি আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করলে গুনাহগার হবে।
অত:এব তারা যদি কারো উপর জুলুম-অবিচার করে বা কারো সাথে অন্যায় আচরণ করে তাহলে তাদেরকে আখিরাতে আল্লাহর কাঠগড়ায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন)
🌀 হিজড়া এবং আমাদের সামাজিক বাস্তবতা:
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে হিজড়ারা মারাত্মক অবহেলা, অনাদর ও বৈষম্যের শিকার। তারা অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে জ্ঞানার্জন ও পড়ালেখার সুযোগ পায় না। ইসলাম শিক্ষার সুযোগ পায় না। সামাজিক মর্যাদা পায় না। মানুষ তাদেরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার কারণে তারা মনে কষ্ট পায়। মানুষের আচার-আচরণে বৈষম্যের শিকার হয়। এ সব কারণে তারা তারা পরিবার ও সমাজ থেকে দূরে সরে যায়। ফলশ্রুতিতে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মানুষে তাদেরকে একত্রিত করে সমাজে তাদের মাধ্যমে নানা অপরাধ মূলক কার্যক্রম করে থাকে।
🌀 হিজড়াদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
তারা ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার হকদার। তাদের মধ্যে বিপথগামীদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দিয়ে সমাজে অন্যান্য মানুষের মতই সুন্দরভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দিতে হবে। কোনোভাবেই তাদের প্রতিপন্ন করা যাবে না। সর্বোপরি হিজড়াদের প্রতি সর্বস্তরের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
যা হোক, রাস্তা-ঘাট, বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদিতে চলার সময় কখনো যদি তাদের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্খীতভাবে খারাপ আচরণের সম্মুখীন হতে হয় তাহলে যথাসাধ্য প্রতিবাদ করতে হবে, তা সম্ভব না হলে সাধ্যানুযায়ী নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে তৎসঙ্গে সম্ভব হলে পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরণের খারাপি ও অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন। আমীন
http://bit.ly/2lQBoOQ
আরও পড়ুন:
👇👇👇
- ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়াদের সাথে মেলামেশা, লেনদেন, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির বিধান
http://bit.ly/2kgnrt2
- হিজড়াদের অশালীন আচরণের ক্ষেত্রে করণীয় এবং তাদেরকে দান করার বিধান
http://bit.ly/2kLrlKM
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

হঠাৎ মৃত্যু: ভালো না কি খারাপ?


▬▬▬◄◉►▬▬▬
প্রশ্ন: একজন মুসলিমের জন্য হঠাৎ মৃত্যু ভালো না কি খারাপ?
উত্তর:
হঠাৎ মৃত্যু ভালো ও মন্দ উভয়টাই হতে পারে। তা নির্ভর করছে ব্যক্তির অবস্থার উপরে।
➤ সে যদি দ্বীনদার, সৎকর্মশীল ও তাকওয়াবান হয় তাহলে যে অবস্থায়ই মৃত্যু হোক না এটি তার জন্য কল্যাণকর। বরং হঠাৎ মৃত্যু (যেমন: দুর্ঘটনা বশত: মৃত্যু) তার জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত। কারণ এতে তাকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট পোহাতে হল না, রোগ-ব্যাধিতে পড়ে বিছানায় কাতরাতে হল না, অবস্থা নাজেহাল হল না, কারো প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হল না। এতে আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, গুনাহ মোচন হয় এবং দুনিয়ার সকল কষ্ট-ক্লেশকে বিদায় জানিয়ে সে রবের সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে এগিয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا،
“মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে এখন সে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায়।” (সুনানে নাসাঈ, অধ্যায়: জানাযা, অনুচ্ছেদ: মৃত্যুতে মুমিনের নিষ্কৃতি প্রাপ্তি. হা/১৯৩০-সহিহ)
➤ পক্ষান্তরে সে যদি আল্লাহর নাফরমান ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে যে অবস্থায় মৃত্যু হোক কেন তা তার জন্য মহা বিপদের কারণ। বিশেষ করে হঠাৎ মৃত্যুর কারণে সে পাপাচার থেকে তওবা করার সুযোগ পেলো না, নিজের অবস্থা সংশোধন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল, মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে পারলো না এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবের দিকে ধাবিত হল।
আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে তারা বলেন:
أسف على الفاجر وراحة للمؤمن
“(হঠাৎ মৃত্যু) পাপীর জন্য আফসোস আর মুমিনের জন্য নিষ্কৃতির কারণ।” (মুসাননাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৩৭০ ও বায়হাকী ৩/৩৭৯)
উল্লেখ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ মৃত্যু থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন মর্মে বর্ণিত হাদিসের সনদ সহিহ নয়।
ফিরোযাবাদি রহ. বলেন: “এ বিষয়ে কোন সহিহ হাদিস নেই।” (সাফারুস সাআদাহ, পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)
উল্লেখ্য যে, হঠাৎ মৃত্যু কিয়ামতের একটি আলামত। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
حديث أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال : (إن من أمارات الساعة أن يظهر موت الفجأة)، رواه الطبراني وحسّنه الألباني.
আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“কিয়ামতের একটি আলামত হল, ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রকাশ পাওয়া।” (ত্বাবারানী, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন) আ্ল্লাহু আলাম।
পরিশেষে আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন, আমাদেরকে এমন ঈমান ও আমলের উপর মৃত্যু দান করেন যা দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা অর্জন করতে পারি। নিশ্চয় তিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় ক্ষমাশীল।
▬▬▬◄◉►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক


▬▬▬◄◉►▬▬▬
প্রশ্ন: যখন মনের মধ্যে পাপ করার প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হয় তখন তা দমন করার জন্য কী করণীয়?
উত্তর:
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে পাপ প্রবণ। শয়তান ও কু প্রবৃত্তি তাকে প্রায়ই পাপাচার, অন্যায় ও আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজের দিকে তাড়িত করে। সব মানুষের মধ্যেই এমন পাপের মনোবৃত্তি জাগ্রত হয়। কিন্তু সফল তো সে ব্যক্তি যে সুযোগ থাকার পরও আল্লাহর আযাবের ভয়ে পাপ ও অন্যায় থেকে আত্ম সংবরণ করে আর হতভাগ্য ও ধ্বংস প্রাপ্ত তো সে ব্যক্তি যে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে কিংবা কামনা-বাসনার ডাকে সাড়া দিয়ে পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
"যে নিজের আত্মাকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্র করে সেই সফল হয় আর যে তাকে কলুষিত করে ধ্বংস হয়।" (সূরা শামস: ও ১০)
যা হোক যখন অন্তরে অন্যায় ও পাপকাজের চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখন কী করণীয় সে ব্যাপারে কিছু আইডিয়া পেশ করা হল। এগুলো থেকে এক বা একাধিক আইডিয়া কাজে লাগালে আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাপ পঙ্কিলতায় ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাকে সহ প্রতিটি মুসলিমকে আল্লাহর নাফরমানী ও পাপাচার থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
১) মনে পাপের চিন্তা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম’ “বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি” পাঠ করা। আল্লাহ তাআলা এ মর্মে বলেন:
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ ۚ
"আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।" (সূরা আ'রাফ: ২০০)
২) মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। অর্থাৎ এই চিন্তা করা যে, আল্লাহর অবাধ্যতা করলে তিনি ক্রোধান্বিত হবেন এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, পৃথিবীর কোনও মানুষ না দেখলেও আল্লাহর চোখকে কোনোভাবেই ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়। তিনি অবশ্যই বান্দার গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু দেখেন এবং প্রতিটি কর্ম সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
তাছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত আমাদের কাঁধের ফেরেশতা দ্বয় আমাদের প্রতিটি কর্ম দিনরাত অবিরামভাবে লিখে চলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ كِرَامًا كَاتِبِينَ يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
“অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।" (সূর ইনফিতার: ১০, ১১ ও ১২)

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...