Friday 16 August 2019

ঈদের দিনে যা করণীয়


প্রাবন্ধিক: যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)
[বক্ষ্যমাণ লেখাটি সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড ও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য আশ-শাইখ আল-‘আল্লামাহ আল-ফাক্বীহ আল-ইমাম ড. সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “আহকামু সালাতিল ‘ঈদ” শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রবন্ধটি সংক্ষিপ্ত, সারগর্ভ ও দলিলসমৃদ্ধ হওয়ায়, আমরা প্রবন্ধটির একাংশের সরল বঙ্গানুবাদ বাঙালি মুসলিম পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করছি। – অনুবাদক]
·
এক. গোসল ও সুন্দর পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, أن ابن عمر رضي الله عنهما كان يغتسل يوم الفطر قبل أن يغدو إلى المصلى “ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।” [মুওয়াত্বত্বা ইমাম মালিক, সনদ: সাহীহ]
ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ثبت عن ابن عمر مع شدة اتباعه للسنة أنه كان يغتسل يوم العيد قبل خروجه “ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)—যিনি কি না প্রচণ্ডভাবে সুন্নাহ’র অনুসরণ করতেন—থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি ঈদের দিন (নামাজে) বের হওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।” [যাদুল মা‘আদ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৪২]
ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে এটাও সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি দুই ঈদের দিন সুন্দর পোশাক পরিধান করতেন। ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, روى ابن أبي الدنيا والبهيقي بإسناد صحيح إلى ابن عمر أنه كان يلبس أحسن ثيابه في العيدين “ইবনু আবী দুনইয়া ও বাইহাক্বী (রাহিমাহুমাল্লাহ) ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) পর্যন্ত বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) দুই ঈদের দিন সুন্দর পোশাক পরিধান করতেন।” [ফাতহুল বারী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫১]
অত্র দুটি আসার ও অন্যান্য বর্ণনা থেকে অসংখ্য ‘আলিম দুই ঈদের দিন গোসল করা ও সুন্দর পোশাক পরিধান করাকে মুস্তাহাব সাব্যস্ত করেছেন।
·
দুই. ঈদুল ফিতরের দিন নামাজে বের হওয়ার পূর্বে বিজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া সুন্নাত। তিনটি, বা পাঁচটি, বা এর চেয়ে বেশি সংখ্যক খেজুর খাবে, কিন্তু বিজোড় সংখ্যায় খাবে। যেহেতু আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন, كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ لَا يَغْدُوْ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتّى يَأْكُلَ تَمَرَاتٍ وَيَأْكُلَهُنَّ وِتْرًا “রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে (ঈদগাহে) বের হতেন না। আর তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৯৫৩]
·
তিন. ঈদের দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে ঈদগাহে যাওয়া পর্যন্ত তাকবীর দেওয়া এবং তা সজোরে পাঠ করা—তবে মহিলারা চুপে চুপে তাকবীর দিবেন—সুন্নাত। ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, أن رسول الله كان يكبر يوم الفطر من حيث يخرج من بيته حتى يأتي المصلى “রাসূল ﷺ ঈদুল ফিতরের দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে ঈদগাহে আসার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর দিতেন।” [দারাকুতনী, সনদ: সাহীহ (শাইখ ফাওযানের মতে)]
নাফি‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, أن ابن عمر كان إذا غدا يوم الفطر ويوم الأضحى يجهر بالتكبير حتى يأتي المصلى، ثم يكبر حتى يأتي الإمام، فيكبر بتكبيره “ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন যখন (নামাজের জন্য) বের হতেন, তখন ঈদগাহে আসার পূর্ব পর্যন্ত উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতেন। এরপর ইমাম আসার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাকবীর দিতেন। তারপর তিনি ইমামের তাকবীরের সাথে তাকবীর দিতেন।” [দারাকুত্বনী, সনদ: সাহীহ (শাইখ ফাওযানের মতে)]
গুরুত্বপূর্ণ অবগতি: সবাই মিলে সমস্বরে তাকবীর পাঠ করা বিদ‘আত। এটি নাবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীবর্গ থেকে প্রমাণিত হয়নি। বরং সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে প্রত্যেকেই স্ব স্ব আওয়াজে তাকবীর পাঠ করবে।
·
চার. পায়ে হেঁটে নামাজে বের হওয়া সুন্নাত। যেহেতু ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تَخْرُجَ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا “পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।” [তিরমিযী, হা/৫৩০; সনদ: হাসান] ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন, “এ হাদীসটি হাসান। বেশিরভাগ বিদ্বান এই হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। কোনো ওজর না থাকলে যানবাহনে চড়ে না গিয়ে, বরং হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াকে তাঁরা মুস্তাহাব বলেছেন।”
·
পাঁচ. এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে গমন করে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা সুন্নাত। জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيْدٍ خَالَفَ الطَّرِيق “নাবী ﷺ ঈদের দিন (ঈদের মাঠে) যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৯৮৬]
·
ছয়. সূর্যোদয় ও সূর্য ওপরে ওঠার পর আজান ও ইকামত ছাড়াই ঈদের নামাজ পড়া বিধেয়। এই নামাজ দুই রাকাত। প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর দিবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর দিবে। সুন্নাত হলো, ইমাম এ দুই রাকাতে সূরাহ আ‘লা ও সূরাহ গাশিয়াহ অথবা সূরাহ ক্বাফ ও সূরাহ ক্বামার উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করবেন। ঈদের খুতবা হবে নামাজের পরে। আর মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। উক্ত কথাগুলোর দলিল নিম্নরূপ:
১. ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى فِي الأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا ‏ “রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে প্রথম রাকাতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাচঁবার তাকবীর বলতেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১১৪৯; সনদ: সাহীহ]
২. নু‘মান বিন বাশীর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ كَانَ يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ بِـ ‏{سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى}‏ وَ ‏{هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ}‏ ‏ “রাসূলুল্লাহ ﷺ উভয় ঈদের নামাজে সূরাহ ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’ ও সূরাহ ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়া’ পড়তেন।” [ইবনু মাজাহ, হা/৯০৩; সনদ: সাহীহ]
৩. ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، سَأَلَ أَبَا وَاقِدٍ اللَّيْثِيَّ مَا كَانَ يَقْرَأُ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فِي الأَضْحَى وَالْفِطْرِ فَقَالَ كَانَ يَقْرَأُ فِيهِمَا بِـ ‏{‏ ق وَالْقُرْآنِ الْمَجِيدِ‏}‏ وَ ‏{‏ اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ‏}‏ “উমার ইবনুল খাত্বত্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) আবূ ওয়াক্বিদ আল-লাইসী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজে কী (সূরাহ) পাঠ করতেন?’ আবূ ওয়াক্বিদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, তিনি উভয় ঈদের নামাজে ‘কাফ, ওয়াল কুরআনিল মাজীদ (সূরাহ কাফ)’ এবং ‘ইক্বতারাবাতিস সাআতু ওয়ান শাক্বক্বাল ক্বামার (সূরাহ ক্বামার)’ পাঠ করতেন।” [সাহীহ মুসলিম, হা/৮৯১; ‘দুই ঈদের নামাজ’ অধ্যায় (৯); পরিচ্ছেদ- ৩]
৪. উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেছেন, أُمِرْنَا أَنْ نُخْرِجَ الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيْدَيْنِ وَذَوَاتَ الْخُدُوْرِ فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَدَعْوَتَهُمْ وَتَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلَّاهُنَّ “দুই ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশিন মহিলারা যাতে মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আয় অংশ নিতে পারে, সেজন্য তাদেরকে (গৃহাভ্যন্তর থেকে) বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমাদেরকে। তবে ঋতুবতীগণ যেন নামাজের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৩৫১; সাহীহ মুসলিম, হা/৮৯০]
৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, شَهِدْتُ الْعِيدَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ فَكُلُّهُمْ كَانُوا يُصَلُّونَ قَبْلَ الْخُطْبَةِ “আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ, আবূ বাকর, ‘উমার ও ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর সাথে ঈদের নামাজে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সকলেই খুতবার আগে নামাজ পড়তেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৯৬২]
৬. ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, أَنَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلَّى الْعِيدَ بِلَا أَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ “রাসূলুল্লাহ ﷺ আজান ও ইকামত ছাড়াই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১১৪৭; সনদ: সাহীহ]
·
সাত. একই দিনে ঈদ ও জুমু‘আহ উপস্থিত হলে, যে ব্যক্তি ঈদের নাম নামাজ পড়েছে তার ওপর জুমু‘আহর নামাজ পড়া আবশ্যক (ওয়াজিব) নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, قَدِ اجْتَمَعَ فِي يَوْمِكُمْ هَذَا عِيدَانِ فَمَنْ شَاءَ أَجْزَأَهُ مِنَ الْجُمُعَةِ وَإِنَّا مُجَمِّعُونَ “আজ তোমাদের এ দিনে দুটি ঈদের (ঈদ ও জুমু‘আহ) সমাগম হয়েছে। অতএব যার ইচ্ছা সে জুমু‘আহর নামাজ ছেড়ে দিতে পারে (তার জন্য ঈদের নামাজই যথেষ্ট হবে)। তবে আমরা দুটিই (ঈদ ও জুমু‘আহর নামাজ) আদায় করব।” [আবূ দাঊদ, হা/১০৭৩; সনদ: সাহীহ]
·
আট. মুসলিমদের সাথে যার ঈদের নামাজের জামা‘আত ছুটে যায়, তার জন্য ঈদের নামাজের স্বাভাবিক পদ্ধতি অনুযায়ী তার (নামাজের) কাজা আদায় করা বিধেয়। লোকেরা যদি দ্বিপ্রহরের পর জানতে পারে, আজ ঈদের দিন, তাহলে তারা সবাই মিলে পরের দিন ঈদের নামাজ পড়বে। আবূ ‘উমাইর বিন আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি তাঁর এক চাচা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি ছিলেন সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, أَنَّ رَكْبًا جَاءُوْا إِلَى النَّبِيِّ ﷺ يَشْهَدُوْنَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلَالَ بالْأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذا أَصْبَحُوُا أَن يَغْدُوْ إِلى مُصَلَّاهُمْ “একবার একদল আরোহী নাবী ﷺ এর নিকট এসে সাক্ষ্য দিল যে, তারা গতকাল (শাওয়াল মাসের) নতুন চাঁদ দেখেছে। তিনি ﷺ তাদের রোজা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন সকালে ঈদগাহের ময়দানে যেতে আদেশ করলেন।” [আবূ দাঊদ, হা/১১৫৭; সনদ: সাহীহ]
.
নয়. ঈদের শুভেচ্ছা জানানো এবং ঈদ উপলক্ষে ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে ইবাদত কবুল করুন)’ বলায় কোনো সমস্যা নেই। ইবনুত তুরকুমানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, في هذا الباب حديث جيد... وهو حديث محمد من زياد قال: كنت مع أبي أمامة الباهلي وغيره من أصحاب النبي، فكانوا إذا رجعوا يقول بعضهم لبعض: تقبل الله منا ومنك “এই অধ্যায়ে একটি বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। হাদীসটি মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি আবূ উমামাহ আল-বাহিলী-সহ আরও কিছু সাহাবীর সাথে ছিলাম। তাঁরা যখন (ঈদগাহ থেকে) ফিরে আসতেন, তখন পরস্পরকে বলতেন, ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে ইবাদত কবুল করুন)’। আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘এ হাদীসের সনদ জায়্যিদ’।” [আল-জাওহারুন নাক্বী, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩২০]
[গুরুত্বপূর্ণ অবগতি: ঈদের শুভেচ্ছা বা অভিবাদন জানানো কোনো ইবাদত নয়। সুতরাং ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ বলাকে সুন্নাহ হিসেবে প্রচার করা অনুচিত। ঈদ উপলক্ষে যে কোনো ভালো শব্দ দ্বারা পরস্পরকে মুবারকবাদ জানানো জায়েজ আছে। ঈদ উপলক্ষে ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’, ‘ঈদ মুবারক’, ‘কুল্লু আম ওয়া আনতুম বি খাইর’ প্রভৃতি শব্দযোগে মুবারকবাদ জানানোর মৌলিক মান হলো বৈধতা। অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে না জেনে ‘ঈদ মুবারক’ বলাকে বিদ‘আত আখ্যা দিয়ে থাকেন, অথচ ঈদ উপলক্ষে অভিবাদন জানানো কোনো ইবাদতই নয়। আসলে তাঁদের এ অবস্থান ভুল, অযৌক্তিক ও শার‘ঈ মুলনীতির বিরোধী। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে “ঈদ মুবারক না কি ভিন্ন সম্ভাষণ?” শিরোনামের নিবন্ধটি পড়তে পারেন। নিবন্ধের লিংক: https://tinyurl.com/y2x3lkwr। – অনুবাদক]
·
দশ. ঈদের দিন হলো আনন্দ ও খুশির দিন। আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, قَدِمَ النَّبِيُّ ﷺ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ: مَا هذَانِ الْيَوْمَانِ؟ قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: قَدْ أَبْدَلَكُمُ اللّهُ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحى وَيَوْمَ الْفِطْرِ “নাবী ﷺ মাদীনাহ’য় আগমন করার পর তাদের দুটি দিন ছিল, যে দিন দুটিতে তারা খেলাধূলা ও আমোদপ্রমোদ করত। (এ দেখে) তিনি ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুটি দিন কীসের?’ তারা বলল, জাহিলি যুগে এ দিন দুটিতে আমরা খেলাধূলা করতাম। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘এ দুই দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। এর একটি হলো ঈদুল আজহার দিন ও অপরটি ঈদুল ফিতরের দিন’।” [আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪; সনদ: সাহীহ]
·
এগারো. মুসলিম ভাইকে বলছি, আপনি শরিয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকুন। যেসব কর্মকাণ্ড সংঘটন করছে কিছু মানুষ। যেমন হারাম সাজসজ্জা—উদাহরণস্বরূপ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা—গ্রহণ করা, দাড়ি মুণ্ডন করা, হারাম উৎসব—যেমন গান শোনার অনুষ্ঠান—পালন করা, হারাম দৃষ্টিপাত, মহিলাদের বেপর্দা হওয়া এবং পুরুষদের সাথে সংমিশ্রিত হওয়া। সুতরাং, হে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন পিতা, স্বীয় পরিবারকে নিয়ে অশ্লীল প্রমোদশালা, ওয়াটারসাইড ও পার্কে যাওয়া থেকে সাবধান হোন, যেসব জায়গায় সংঘটিত হয় অন্যায় ও খারাপ কর্মকাণ্ড।
·
তথ্যসূত্র:
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...