Tuesday 17 May 2016

বিদায় হজ্জের ভাষণ


নবম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়। আর তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দশম হিজরীতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ আদায় করলেন। একলক্ষ চৌচল্লিশ হাজার মুসলমান তাঁর সঙ্গেঁ হজ্জ আদায় করেন। এটিই ছিল "হাজ্জাতুল ওয়াদা" বা বিদায় হজ্জ। ইমাম মুসলিম (রহঃ) সংকলিত নবীজির (সাঃ) প্রিয় সাথী হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলঃ
শুক্রবার, ৯ জিলহজ, ১০ হিজরী সনে আরাফার দিন দুপুরের পর রাসুল সাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম এক লক্ষের অধিক সাহাবীর সমাবেশে হজের সময় এই বিখ্যাত ভাষণ দেন। হামদ ও সানা (আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের) পর নবী (সাঃ) তার ভাষণে ইরশাদ করেনঃ
"আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন। আর তিনি একাই বাতিল শক্তিগুলোকে পরাজিত করেছেন।
হে আল্লাহর বান্দারা! আমি তোমাদের আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর বন্দেগির জন্যে ওসিয়ত করছি এবং এর নির্দেশ দিচ্ছি। হে লোক সকল! তোমরা আমার কথা শোন। এরপর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারব কি না জানি না। হে লোক সকল! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন,
"হে মানবজাতি! তোমাদের আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পারো। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর দরবারে অধিকতর সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অবলম্বন করে)।" (অর্থাৎ, সব বিষয়ে আল্লাহর কথা অধিক খেয়াল রাখে)।
ইসলামে জাতি, শ্রেণীভেদ ও বর্ণবৈষম্য নেই। আরবের ওপর কোনো আজম (অনারবে), বা কোন আজমের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি সাদার ওপর কালোর বা কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদার ভিত্তি হলো কেবলমাত্র তাকওয়া।
আল্লাহর ঘরের হিফাযত, সংরক্ষণ ও হাজিদের পানি পান করানোর ব্যবস্থা আগের মতো এখনো বহাল থাকবে। হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকরা! তোমরা দুনিয়ার বোঝা নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন আল্লাহর সামনে হাযির না হও। আমি আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের কোনোই উপকার করতে পারব না।
যে ব্যক্তি নিজের পিতার স্থলে অপরকে পিতা বলে পরিচয় দেয়, নিজের মাওলা বা অভিভাবককে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বা অভিভাবক বলে পরিচয় দেয় তার ওপর আল্লাহর লা’নত।
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। প্রত্যেক আমানত তার হকদারের কাছে অবশ্যই আদায় করে দিতে হবে। কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়, তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয়। সুতরাং তোমরা একজন অপরজনের ওপর জুলুম করবে না। এমনিভাবে কোনো স্ত্রীর জন্য তার স্বামী সম্পত্তির কোনো কিছু তার সম্মতি ব্যক্তিরেকে কাউকে দেয়া হালাল নয়।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...