Saturday 13 August 2022

খলীফাগণের সময়কালে মুআবিয়া (রায:) এর গ্রহণযোগ্যতা

==============================

নবুওতের যুগেই মুআবিয়ার উৎকর্ষতা প্রকাশ পায়; যদিও ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে তিনি বহু মুহাজির ও আনসারের পিছনে ছিলেন। আল্লাহর রাসূল অহীর লেখক হিসাবে তার উপর আস্থা করেন। তাই তিনি আকাশ হতে অবতীর্ণ অহী লেখকের একজন। গর্বের জন্য এটাই যথেষ্ট।
মুআবিয়া রাসূল স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হুনাইনের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ হতে একাধিক হাদীস বর্ণনা করেন যা স্বহীহাইন, সুনান সহ মাসানীদ গ্রন্থে বিদ্যমান এবং তার থেকে সাহাবা ও তাবেঈনদের একদল হাদীস বর্ণনা করেছেন। দুই হিদায়েতপ্রাপ্ত খলীফার যুগে তিনি আস্থা ও সম্মানের পাত্র ছিলেন এবং জিহাদ ও অন্য দায়িত্বভার প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আবু বাকর রাযিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালে –যদিও এই খেলাফতকাল সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ছিল- তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ইবনু আসাকির বলেন: অনেকের ধারনা তিনিই মুসায়লামাকে হত্যা করেছিলেন। ইবনু কাসীর উক্ত ঘটনায় এই বলে টিপ্পনি করেছেন যে, হতেপারে তার হত্যায় তার সাথে অন্য কেউ শরীক ছিল। মুসায়লামাকে আঘাত করে একজন ওয়াহশী ব্যক্তি এবং তার মরদেহকে ঢেকে দেয় আবু দাজানা। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৮/১২৭]
ফারুক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) যুগে খলিফা তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ অনুভব করেন; যদিও তার বয়স কম ছিল। তিনি একটি এমন প্রদেশের নেতৃত্বের যোগ্য ছিলেন যেই প্রদেশটির বিশেষ গুরুত্ব ছিল। উমার (রাযি:) তাকে তার ভাই ইয়াযীদের মৃত্যুর পর সিরিয়ার গভর্নর নিযুক্ত করেন । আর মানুষেরা যখন এ সম্বন্ধে সমালোচনামূলক কথা-বার্তা বলেছিল, তখন উমার (রাযি:) বলেন: তার নেতৃত্বের ব্যাপারে আমাকে দোষারোপ করো না; কেন না আমি রাসূলুল্লাহর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন: (হে আল্লাহ! তাকে সঠিক পথ প্রদর্শক ও হিদায়েতপ্রাপ্ত করো এবং তার দ্বারা অন্যকে হিদায়েত দাও)। [ইবনু কাসীর বলেন: এটি সূত্র বিচ্ছিন্ন বর্ণনা ইতিপূর্বের বর্ণনাটি এটিকে শক্তিশালী করে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/১৩২, কিন্তু হাদীসটি আহমাদ তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছেন ৪/২১৬, তিরমিযী তাঁর সুনানে বর্ণনা করেছেন ৫/৬৭৮, ত্বাবারানী আল মুজাম আল আউসাতে বর্ণনা করেছেন ১/৩৮০, সহীহ হাদীস সিরিজে শাইখ আলবানী স্বহীহ বলেছেন ৪/৬১৫, দেখুন, ড. আব্দুল্লাহ আল খারআন কর্তৃক লিখিত আছারুল উলামা ফিল হায়াতিস সিয়াসিয়্যাহ ফিদ্ দাউলাহ আল্ উমাভিয়্যাহ, পৃ ৬২]
উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) যুগে রোম সম্রাজ্যকে ভীত ও শঙ্কিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে মুআবিয়ার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ত্বাবারী ২৩ তম বছরের উল্লেখ্য ঘটনাবলীর আলোকে বর্ণনা করেছেন যে, মুআবিয়া সাইফার যুদ্ধ করেন এমনকি আমুরিয়া পর্যন্ত পৌছেঁ যান। সেই সময় তার সাথে ছিল সাহাবী উবাদাহ বিন সামিত, আবু আইয়্যুব আনসারী, আবু যার এবং শাদ্দাদ বিন আউস রাযিয়াল্লাহু আনহুম।
তার থেকে সম্মানিত ব্যক্তি কে হতে পারে, যাকে উমার (রাযি:) নেতৃত্ব দান করেন এবং যার নেতৃত্বে মর্যাদাবান সাহাবাদের এক দল উপস্থিত ছিলেন। বরং উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন যখন মুআবিয়া সিরিয়া প্রদেশের সীমান্তের গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। উমার (রাযি:) তাকে এতই ভালবাসতেন যে তিনি তাকে এই উপাধি দ্বারা সম্বোধন করতেন যে, এ হচ্ছে আরব সম্রাট। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৮/১৩৬]
আর যতদূর উসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর যুগের কথা তো সেই সময় তার মর্যাদা অন্যরকম ছিল। তিনি ইসলামী রাজত্বের সবচেয়ে বড় গভর্নর নিযুক্ত হোন। সেই সময় তার রাজত্বের সীমা বৃদ্ধি পায় এবং তার ক্ষমতাও উন্নিত হয়। ফলে সমগ্র সিরিয়ায় তার রাজত্ব কায়েম হয়। বরং খলীফা উসমান সিরিয়া প্রদেশের সাথে সাথে তাকে ফুরাত উপদ্বীপ এবং উভয় প্রদেশের সীমান্তেরও দায়িত্ব প্রদান করেন। [বেলাযুরী, ফতুহুল বুলদান: পৃ ১৮৭-১৮৮]

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...