Saturday 16 July 2016

জিহাদ, কিতাল ও খিলাফাহ ( পর্ব – ১ )


শায়খ মুজাম্মেল হক
জিহাদ, কিতাল ও খিলাফা শব্দগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এছাড়া আরও শতাধিক এমন শব্দ রয়েছে যার সঠিক অর্থ মুসলমানের মস্তিষ্কে স্থান না পেলে ইসলামের প্রকৃত চিত্র বিকৃত হতে বাধ্য। দ্বীনের কল্যাণ সাধনের স্থলে অকল্যাণই সাধিত হবে, তাতে সন্দেহ কারার কোন অবকাশ নেই। ঐ সব গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সঠিক অর্থ যারা তুলে ধরবেন তাঁরা হলেন প্রকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন নিরপেক্ষ আলেম-উলামা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রকৃত ও নিরপেক্ষ এমন আলেমের অভাব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা রয়েছেন তাদেরকে ফেরকাবাজ, হিজবীরা দরবারী, পাচাটা দালাল, নাস্তিক ইত্যাদি ট্যাগ লাগিয়ে উপেক্ষা করেছে। এমন অবস্থা যতদিন বিরাজ করবে, আলেমদের স্বল্পতা যতদিন অপূরণীয় থাকবে, ইসলামের দৈন্যদশা ততদিন বাড়তেই থাকবে। এমনটি মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, প্রকৃত আলেমগন পরপারে যাচ্ছেন আর তাদের স্থান পূরণের জন্যে লোক তৈরি হতে পারছেনা। আগামীতে হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছেনা। এক দিক থেকে আলেম তৈরির কারখানা বন্ধ করার সকল চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। অপর দিক থেকে চালু গুলোর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে চুরমার করার প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চলছে। দলীয় ভাবে যেসব চলছে তা দলের খেদমতেই আত্মনিয়োগ করছে। সঠিক প্রডাকশন বের হয়ে আসার সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছেনা।
কেন এমন হচ্ছে?
এর প্রতিকার কি; এসব নিয়ে ভাববার সময় মুসলমানদের আছে বলে মনে হয়না। কারণ তারা ব্যস্ত, খুবই ব্যস্ত। স্কুল-কলেজ। ব্যবসা, চাকুরী, সংসার ও সমাজ তাদেরকে অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে ফেলেছে! আসলে যতটা না ব্যস্ত তার চেয়ে বেশী তারা শয়তানের ধোঁকার শিকার!
‪#‎সে_কু_লার‬ ও তাদের সহযোগীরা অতীত কাল থেকেই মনে করতেন ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখেনা। হাল জামানায় আরও যোগ হয়েছে আরেকটি জোরালো অভিযোগ তাহলো, দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকি চরমপন্থীদের জন্ম দান করে থাকে! বর্তমান মিডিয়ার বরকতে ঐ সব অভিযোগ আরেক মাত্রা অগ্রসর হয়ে পুরা ইসলামকেই চরম পন্থা (টেররিজম) এর ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে। ফলে দুনিয়ার সকল শক্তি এক হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে যাতে টেররিজম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমান একসাথে। এ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার নিমিত্তে আমাদের কি কিছুই করার নেই?
জিহাদ এক মহান কাজ। ইসলামের উচ্চতম স্থানের উচ্চে এর অবস্থান। এ জিহাদ কে কি কলুষমুক্ত করার উপায় নেই? ইসলাম এক মহা যুগান্তকারী অনুপম আদর্শের নাম। এ আদর্শের ঝাণ্ডা কাঁধে বহন করা কি আমাদের দায়িত্ব নয়?
قال -النبي صلى الله عليه وسلم-: «وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ – الترمذي/ رقم 2616
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “এবং ইসলামের চূড়ার উপরে জিহাদের স্থান।”
সুনানে আত-তিরমিযিঃ ২৬১৬।

আল আকীদা আত-তাহাবিয়া

লেখক : আবু জা‘ফর আত-ত্বাহাওয়ী
অনুবাদ: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া - শাইখ আব্দুল মতীন ইবন আব‌দুর রহমান সালাফী
সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস:
ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ





বর্ণনা

আল আকীদা আত-তাহাবিয়া : প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা আবু জাফর আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন সালামা আল-ইযদী আত-তাহাবী (মৃতু ৩২১ হিজরী) কর্তৃক সংকলিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জাসাআতের আকীদা সমগ্রের সারসংক্ষেপ এ বইটি সকল মাজহাবের অনুসারী আহলে সুন্নাহর সকল ইমাম ও আলেমদের নিকট সমাদৃত হয়েছে সমানভাবে। আরবিসহ বহু ভাষায় এর তর্জমা ও ব্যাখ্যা লেখা হয়েছে।
ডাউনলোড করুন-  আল আকীদা আত-তাহাবিয়া  পিডিএফ

DOC file ডাউনলোড করুন এখান থেকে 

Wednesday 13 July 2016

ইমাম বুখারী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী




রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

সংকলনঃ আব্দুল্লাহ বিন শাহেদ আল-মাদানী   |   ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

ভূমিকা:

ইমাম বুখারী। কাল প্রবাহে একটি বিস্ময়ের নাম। স্মৃতির প্রখরতা, জ্ঞানের গভীরতা, চিন্তার বিশালতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অটুট সততা আর বিশাল পর্বত সম হিম্মতের এক মূর্ত প্রতীক এই মহাপুরুষ। তিনি ইলমে হাদীসের এক বিজয়ী সম্রাট। তার সংকলিত হাদীসের মহামূল্যবান সংকলন সহীহুল বুখারী বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের পরেই যার অবস্থান। কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তার সাধনার কাছে ঋণী। আসুন, খুব সংক্ষেপে আমরা এই মনিষীকে জানার চেষ্টা করি।

নামজন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ

তিনি হচ্ছেন সমকালীন মুহাদ্দিছদের ইমাম হাফেয আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরা বিন বারদিযবাহ আলজু’ফী। তাঁকে আমীরুল মুমিনীন ফীল হাদীছও বলা হয়। ১৯৪ হিঃ সালের ১৩ই শাওয়াল জুমআর রাত্রিতে তিনি বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন।

শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জনঃ

শিশুকালেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁর অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এতে তাঁর মাতা আল্লাহর কাছে খুব ক্রন্দন করলেন এবং স্বীয় সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য তাঁর কাছে অবিরাম দুআ করে যাচ্ছিলেন।
হঠাৎ এক দিন তাঁর মা স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ ওহে! তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফেরত চেয়ে আল্লাহর দরবারে তোমার ক্রন্দনের কারণে তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তখন তিনি প্রকৃত ঘটনা যাচাই করার জন্য স্বীয় সন্তানের কাছে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে।

ইমাম বুখারীর স্মরণ শক্তির প্রখরতাঃ

১৮ বছর বয়সে তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীছের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিছের নিকট তেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য সারা রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। বলা হয় যে তিনি সনদসহ ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে নিতেন।

Tuesday 12 July 2016

আহলুল 'ইলমদের দৃষ্টিতে- "মানহাজ"


আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু।
এই পোস্টের বিষয়বস্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা হলো আক্বীদা এবং মানহাজ।
কাজেই ধৈর্যসহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।
:
আক্বীদা মানে বিশ্বাস বা creed বা belief system. আর মানহাজ মানে methodology বা চলার পথ। আভিধানিকভাবে মানহাজ মানে চলার পথ। শরী’আহ-এর পরিভাষায় দ্বীনের ক্ষেত্রে সলফে-সলিহীনগণের অনুসৃত পথে চলার নামই মানহাজ, যাকে আমরা বলে থাকি সলফে-সলিহীনগণের মানহাজ অথবা সালাফী মানহাজ। এক্ষেত্রে দ্বীনের ব্যাপারে পরিপূর্ণভাবে সলফে-সলিহীনগণের নীতিকে মেনে চলাকেই বোঝায়। মানহাজটাই মূলত সীরাতে মুস্তাক্বীম।
আক্বীদাসহ দ্বীনের সকল বিষয়ই মানহাজের মধ্যে শামিল। এছাড়া আরেকভাবে বলা যায় যে, যখন বলা হয় সলফে-সলিহীনগণের মানহাজ, তখন আক্বীদাসহ যা কিছু আছে সব কিছুই মানহাজের মধ্যে শামিল। আর যখন বলা হয় সলফে-সলিহীনগণের আক্বিদা-মানহাজ, তখন সেক্ষেত্রে আক্বীদার বিষয় ছাড়া বাকি সবকিছুই মানহাজের মধ্যে শামিল।
[উস্তায হাম্মাদ বিল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-এর লেকচার থেকে সংগৃহীত ও সংযোজিত এবং পরিমার্জিত]
:
এবার তাহলে একটি প্রশ্ন এসে যায় যে, আক্বীদা এবং মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? এছাড়া আরো প্রশ্ন এসে যায় যেমন কেউ আক্বীদায় সালাফী আর মানহাজে ভিন্ন হলে সেক্ষেত্রে তার বিধান কি এবং যারা সলফে-সলিহীনগণের মানহাজের বিরোধিতা করে তাদের বিধান কি। আসুন এই সকল বিষয়েই আমরা বিভিন্ন আহলুল ‘ইলমদের উক্তি থেকে জেনে নিই। এই প্রত্যেকটি ব্যাপারেই নিম্নে বিভিন্ন আহলুল ‘ইলমদের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।
:
==========================================================
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডে আক্বীদা ও মানহাজের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারে ফতোয়া জিজ্ঞেস করা হয়। নিম্নে দেয়া হলো,
প্রশ্ন:- আজকাল আক্বীদা এবং মানহাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে মর্মে অনেক কথা শোনা যায়, মানুষ এখন এও বলা শুরু করেছে যে, “অমুক ও অমুকের আক্বীদা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা” অথবা সালাফীয়্যাহ এর আক্বিদা, তবে তার মানহাজ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজ নয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ, তারা জামাতুত তাবলীগের বা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের, অথবা অন্যকোন গ্রুপের কিছু কিছু কথা বলে থাকে। কাজেই, এর কী কোনো মূলনীতি আছে যার দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বা সালাফিয়্যাহ-এর মানহাজ সম্পর্কে জানা যেতে পারে? এবং আক্বিদা ও মানহাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কী?

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...