Wednesday 23 December 2020

কুরআনের_আয়াত_সংখ্যা_কত?


আমার একজন ভক্ত বললেন, 'হুজুর! কুরআনের আয়াত-সংখ্যা কত?
আপনি আপনার তফসীর 'আহসানুল বায়ান’এর ভূমিকায় লিখেছেন, 'প্রসিদ্ধ মতানুসারে মোট আয়াত …
See More
Like
Comment
Share
, 'হুজুর! কুরআনের আয়াত-সংখ্যা কত?
আমার একজন ভক্ত বললেন, আপনি আপনার তফসীর 'আহসানুল বায়ান’এর ভূমিকায় লিখেছেন, 'প্রসিদ্ধ মতানুসারে মোট আয়াত ৬৬৬৬টি।’
কোন কোন শায়খ বলছেন, 'এটা মারাত্মক ভুল।’
তাহলে নির্ভুল সঠিক কোনটি?
আসলে ভাই দেখুন, কুরআনের আয়াত-সংখ্যা সঠিকভাবে কত, তা নবী ﷺ কর্তৃক প্রমাণিত নয়। সুতরাং এ মর্মে সাহাবা, তাবেঈন ও উলামাদের ইজতিহাদ কাজ করেছে এবং তার ফলে এর সংখ্যায় মতভেদ রয়ে গেছে। তাই কেউই কারো মতকে 'মারাত্মক ভুল’ অথবা 'নির্ভুল সঠিক’ বলতে পারবে না। যেহেতু এটা ইজতিহাদী ব্যাপার।
অনেকে বলেন, 'আরে মশাই কুরআনের কোন সূরায় কত আয়াত লেখাই তো আছে। সুতরাং গুনে যোগ ক’রে দেখে নিলেই তো হয়।’ তিনি ব্যাপারটাকে এতই সহজ মনে করেন। কিন্তু সে গণনাটাই যে সঠিক, তার কোন নিশ্চয়তা নেই---এ কথা তিনি জানেন না।
সূরা ফাতিহার ব্যাপারটাই দেখুন না, ৭টি আয়াতের কোনটি প্রথম এবং কীভাবে ৭টি আয়াত হয়, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
কেন এ মতবিরোধ?
আয়াতের শেষ অংশ কোনটি বা আয়াতটি কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, সে ব্যাপারে মতভেদের কারণে।
আমরা জানি, বাক্য শেষ হলে পূর্ণচ্ছেদ বা দাঁড়ি ব্যবহার হয়। কিন্তু বাক্যটা আসলে কোথায় শেষ হল, তা নিয়ে মতভেদ থাকার ফলে আয়াত গণনায় মতভেদ স্বাভাবিক আকার ধারণ করেছে।
হাদীস-সংখ্যা নিয়েও অনেকে এই শ্রেণীর প্রশ্ন তুলে থাকেন। রেফারেন্সের সময়ে অনেক ক্ষেত্রে হাদীস-নম্বর মিল খায় না। যার ফলে অনেকে ভুল মনে করে থাকেন। অথচ হাদীস গণনাতেও ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কেবল বুখারীর হাদীস-সংখ্যাটাই ধরুন, এক মুহাক্কিকের গণনা অন্য মুহাক্কিকের গণনার সাথে মিলে না। এক প্রকাশনীর ছাপা অন্য প্রকাশনীর ছাপার সংখ্যার সাথে মিল দেখতে পাওয়া যায় না। সেই কারণেই বুখারীর হাদীস-সংখ্যা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ গুনেছেন ৭৫৬৩, কেউ ৭১২৪ এবং আরো কমবেশি সংখ্যা গুনেছেন অনেকেই। আর এটা অস্বাভাবিক নয়। বিধায় কেউ অন্যেরটা জন্য বলতে পারবেন না যে, এটা 'মারাত্মক ভুল’।
কুরআনের মোট আয়াত-সংখ্যা কত, তা উক্তরূপ মতভেদের কারণেই কম-বেশি হয়েছে। কোনটাই নিশ্চিত সঠিক নয়।
এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, কুরআনের আয়াত-সংখ্যা ৬০০০ এর কম নয়। কিন্তু তার উপরের সংখ্যা নিয়ে রয়ে গেছে মতভেদ। মূল কুরআনের মধ্যে নয়, বরং তার বাক্যাবলীর শেষাংশ নিয়ে মতভেদ হয়েছে।
সুতরাং কেউ গণনা করেছেন, ৬২০৪
কেউ গণনা করেছেন, ৬২১৪
কেউ গণনা করেছেন, ৬২১৯
কেউ গণনা করেছেন, ৬২২৫
কেউ গণনা করেছেন, ৬২৩৬
কেউ এর সাথে ১১২টি 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ কে যোগ ক’রে বলেছেন ৬৩৪৮ আয়াত।
অর্থাৎ, এখানে সূরা ফাতিহার শুরুর 'বিসমিল্লাহ’ কে তার প্রথম আয়াত গণনা করেছেন এবং যেহেতু সূরা তাওবার শুরুতে 'বিসমিল্লাহ’ নেই, সেই হিসাব গণ্য করেছেন।
কুফীদের নিকট আয়াত-সংখ্যা ৬২৩৬ এবং অকুফীদের নিকট ৬৬৬৬টি।
যেহেতু মনে রাখা সহজ বলে চট ক’রে লোকে শেষেরটাই বলে থাকে। আর এ জন্যই আমি লিখেছি 'প্রসিদ্ধ মতে’, 'সঠিক মতে’ নয়।
তবে বলতে পারেন, সঊদী আরবের ছাপাটা যখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে, তখন সেটাই গ্রহণ করা উত্তম। অবশ্যই এ কথা মেনে নিতে কোন দোষ নেই।
বিনীত---------
আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

Sunday 20 December 2020

যারা বিবাহ বন্ধনে উদ্যোগ নিচ্ছেন-

 যারা বিবাহ বন্ধনে উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাঁদের এক আরব বেদুঈনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ মনে রাখা প্রয়োজন। তিনি তাঁর বিবাহযোগ্য পুত্রকে সম্বোধন ক’রে বলেছিলেন,

يا بني لا تنكح المنانه ولا الأنانه ولا الحنانه ولا الحداقه ولا البراقه ولا الشداقه ولا عشبه الدار ولا كية القفا
অর্থাৎ, বেটা! তুমি এই (৮ প্রকার) মেয়েকে তোমার স্ত্রীরূপে নির্বাচন করো না।
১। মান্নানাহ (উপকার বা অনুগ্রহ প্রচারকারিণী)
এমন মেয়ে, স্বামীর প্রতি সে বা তার বাপের বাড়ির লোক কোন উপকার বা অনুগ্রহ করলে কথায় কথায় খোঁটা মারে। স্বামীর পরিবারের বা বাইরের লোকের কাছে বলে বা গেয়ে বেড়ায়। 'এটা আমার বাপের ঘরের। এটা আমার ভাই দিয়েছিল বলেই তো? মা দিয়েছিল বলে ঠান্ডা পানি খেতে পাচ্ছ।’ ইত্যাদি
২। আন্নানাহ (কাতর)
এমন মেয়েকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় 'আবছুদে’ বলে। মানে যে মেয়ে অল্প কিছুতে 'আঃ-উঃ, বাবারে-মারে’ করতে থাকে। সামান্য আঘাতে কাতর হয়ে যায়। সামান্য কষ্টে কাঁদতে লাগে (ছিঁছ-কাঁদুনে)। অধিকাংশ সময়ে অসুস্থ না থাকলেও অসুস্থতার ভান করে। কোনও কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাথা-ব্যথা বা অন্য কোন অসুখের ওজর পেশ করে। আজ মাথা ধরেছে, কাল পেটে বাজছে পরশু আরো কিছু বলে অজুহাত তৈরি করে।
বাংলা প্রবাদে বলা হয়,
'জারে বউ জার-কাতুরে বর্ষায় বউয়ের হাজা,
কখনো দেখলাম না আমি বউ রইল তাজা।’
৩। হান্নানাহ (অন্যাসক্তা)
যে মেয়ের আসক্তি নিজের স্বামীর সাথে সীমাবদ্ধ থাকে না। তবে সে পরকীয়া করে না। আসলে সে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার পর বিবাহিতা হয়। অতঃপর কথায় কথায় সে পূর্ব স্বামীর প্রতি আসক্তি প্রকাশ করে। যেন বর্তমান স্বামীর তুলনায় সেই ভালো ছিল, সে কথা বুঝাতে চায়। নগণ্য বঞ্চনায় অথবা সামান্য ত্রুটির ক্ষেত্রে সে তাকে স্মরণ করে। পূর্বের ভালোবাসা সে ভুলতে পারে না। যার ফলে তুলনা করতে গিয়ে সে বর্তমান স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিতা হয়।
অথবা তার গর্ভজাত পূর্ব স্বামীর সন্তান থাকে এবং সে তাদের প্রতি সর্বদা নিজ মনকে ফেলে রাখে। এমনকি সুখের সময়েও সে তাদের দুঃখের কথা তুলে বর্তমান সুখের সময়কে নষ্ট ক’রে ফেলে।
অথবা সর্বদা নিজ পরিবারের প্রতি আসক্তি প্রকাশ ক’রে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে বা ঘন ঘন মায়ের বাড়ি যেতে চায়। আর তার ফলে স্বামীর প্রতি কর্তব্যে অবহেলা ক’রে বসে।

Thursday 8 October 2020

হাশরের ময়দানে পশু-পাখীদের অবস্থা এবং দশটি পশু-পাখীর জান্নাতে প্রবেশ

 হাশরের ময়দানে পশু-পাখীদের অবস্থা এবং দশটি পশু-পাখীর জান্নাতে প্রবেশ

▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: পরকালে পশু-পাখীদেরকেও কি পুনরুত্থিত করা হবে? আর শোনা যায় যে, দশটি পশু বা প্রাণীও জান্নাতে যাবে। এ কথা কি সত্য?
উত্তর:
এ কথা সঠিক যে, হাশরের ময়দানে মানুষের পাশাপাশি সকল পশু-পাখি‌ ও জীব-জন্তুও পুনরুত্থিত হবে এবং দুনিয়াতে যে সব পশু-পাখী অন্য পশু-পাখীর উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছিলো বা একে অপরের প্রতি জুলুম করেছিলো সে দিন মহান আল্লাহ তাদের থেকে কেসাস বা সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন। তারপর আল্লাহর হুকুমে সেগুলো পুনরায় মাটিতে মিশে যাবে। অর্থাৎ সেখানেই তাদের যবনিকা ঘটবে। এরপর তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে যাওয়ার আর কোনও প্রশ্ন থাকবে না।
পক্ষান্তরে মানুষের পাপ-পুণ্য হিসাব-নিকাশ ও পারস্পারিক জুলুম-অবিচারের বিচারকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর তাদেরকে চীর সুখের নীড় জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তির স্থান জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
কুরআন-হাদিস এবং সাহাবী ও মুসলিম মনিষীদের মতামতের আলোকে এটাই সঠিক কথা।
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ
“আর যখন বন্য পশুদেরকে (হাশরের মাঠে) সমবেত করা হবে।” (সূরা তাকবীর: ৫)
কাতাদা রহ. এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেন,
هذه الخلائق موافية يوم القيامة، فيقضي الله فيها ما يشاء
"এ সকল সৃষ্টি জীবকে কিয়ামতের দিন মানুষের সাথে পুনরুত্থিত করার পর আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে তাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করবেন।"
(তাফসিরে ইবনে কাসির) তবে এর ব্যাখ্যায় ভিন্ন মতও আছে।
◈ তিনি আরও বলেছেন,
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الأَرْضِ وَلا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلا أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ
“আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখী দু’ ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়ি নি। অতঃপর সবাইকে তাদের প্রতিপালকের কাছে সমবেত করা হবে। (সূরা আনআম: ৩৮)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
يحشر كل شيء حتى الذباب
“সব কিছুকেই সমবেত করা হবে; এমনকি একটি মাছিকেও।” (তাফসিরে ইবনে কাসির)
◈ আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَتُؤَدُّنَّ الْحُقُوقَ إِلَى أَهْلِهَا حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنْ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ-صحيح مسلم- كتاب الْبِرِّ وَالصِّلَةِ وَالْآدَابِ- بَابُ تَحْرِيمِ الظُّلْمِ- حديث رقم 4807
"তোমরা অবশ্যই প্রত্যেক পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করে দিবে। (অন্যথায় কিয়ামতের দিন তা পরিশোধ করা হবে।) এমনকি একটি শিং বিশিষ্ট ছাগল যদি দুনিয়াতে কোনও শিং বিহীন ছাগলকে গুঁতা মেরে থাকে তাহলে তার থেকে শিং বিহীন ছাগলের জন্য প্রতিশোধ নেয়া হবে।" [সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: সৎকর্ম, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ: জুলুম করা হারাম]
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يقضي الله بين خلقه الجن والإنس والبهائم ، وإنه ليقيد يومئذ الجمَّاء من القرناء ، حتى إذا لم يبق تبعة عند واحدة لأخرى قال الله : كونوا ترابا ، فعند ذلك يقول الكافر : ((يا ليتني كنت تراباً)) - قال الشيخ الألباني : صحيح . انظر السلسلة الصحيحة.
‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন জিন, মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তুর মাঝে বিচার-ফয়সালা করবেন। এমনকি দুনিয়ায় কোনও শিং বিশিষ্ট জন্তু কোনও শিং বিহীন জন্তুকে আঘাত করে থাকলে সে তার প্রতিশোধ নিবে। যখন একটি পশুরও অন্য পশুর প্রতি আর কোনও দাবী-দাওয়া ও অভিযোগ থাকবে না তখন আল্লাহ বলবেন, "তোমরা মাটি হয়ে যাও।”
এ সময় কাফিররা আক্ষেপ করে বলবে, يَا لَيْتَنِي كُنتُ تُرَابًا “হায় আফসোস! আমিও যদি মাটি হয়ে যেতাম।” (সূরা নাবা: ৪০)
[তাফসিরে তাবারি ২৪/৫৫, শাইখ আলবানি সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
❑ দুনিয়ার কিছু পশু-পাখী কি জান্নাতে প্রবেশ করবে?
কিছু কিছু তাফসিরের কিতাবে দুনিয়ার বেশ কিছু জন্তু-জানোয়ারের জান্নাতে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর পক্ষে হাদিসের কোন দলিল নাই। সুতরাং দলিল ছাড়া এ জাতীয় কথা গ্রহণযোগ্য নয়।
যেসব প্রাণী জান্নাতে প্রবেশ করবে বলা হয় সেগুলো হল:
১) আসহাবে কাহফ এর কুকুর
২) সালেহ আলাইহিস সালাম এর ঊটনী।
৩) ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর গরুর বাছুর।
৪) ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর দুম্বা।
৫) ইউনুস আলাইহিস সালাম এর তিমি মাছ।
৬) উযাইর আলাইহিস সালাম এর গাধা।
৭) সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর পিপীলিকা।
৮) রাণী বিলকিস এর হুদহুদ পাখি।
৯) বনী ইসরাইল এর গাভী (যে গাভীর কথা সূরা বাকারায় আলোচিত হয়েছে)
১০) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খচ্চর।
(তাফসিরে রূহুল বয়ান)
কিন্তু মুহাক্কিক আলেমদের মতে, এ সব প্রাণী জান্নাতে যাওয়ার পক্ষে কোনও হাদিস বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয় নি। তাছাড়া পূর্বোল্লিখিত হাদিসের আলোকে আমরা জেনেছি যে, হাশরের ময়দানে সকল পশুপাখিকে পুনরুত্থানের পর তাদের মাঝে বিচারকার্য সংঘটিত হবে। তারপর আল্লাহর হুকুমে তারা আবার মাটিতে মিশে যাবে। উক্ত হাদিসেও এই দশটি প্রাণীর জান্নাতে প্রবেশের কথা বলা হয় নি।
সুতরাং দলিল ছাড়া এসব পশুপাখি জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন কথা বলার সুযোগ নাই। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Monday 21 September 2020

ঢাকার পাইকারী মার্কেট গুলো কোথায় এবং কোথায় কোন পণ্য পাবেনঃ

 

ঢাকার কোথায় কি- ঢাকার অদূরে কিংবা ঢাকার বাইরের জেলা শহরগুলোতে অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা তাদের প্রয়োজনীয় পন্য কেনার জন্য ঢাকামূখী হয়ে থাকেন। কিন্তু কোথায় কোন পন্যের পাইকারী বাজার তা না জানার কারনে প্রথম দিকে হোঁচট খেতে হয়। আর নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য তো খুজে পাওয়াটা আরও বেশী কষ্টকর হয়ে থাকে।
চলুন জেনে নিই পাইকারী মার্কেট গুলো কোথায়:
🎯 বঙ্গবাজার:
গেঞ্জি, প্যান্ট, শার্ট সলিড কালার: তৈরি পোশাক (জামা, প্যান্ট, জ্যাকেট, সোয়েটার, গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি), পাদুকা সামগ্রী এবং শাড়ি কেনা যায়। এখানে এসব পণ্য খুচরা ও পাইকারি হারে বিক্রয় হয়। বিদেশি ক্রেতা ও তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের যোগান দেওয়া কাঁচামাল ব্যবহারের পর দেশের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে যত কাপড়, সুতা, বোতাম, জিপার ইত্যাদি উদ্বৃত্ত থাকে মূলত সেগুলি দিয়ে তৈরি বলে বঙ্গবাজারের পোশাক দামে সস্তা।
🎯নবাবপুর:
ফেব্রিকস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, কৃষি যন্ত্রপাতি, শিল্প যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ইত্যাদি। নিমতলী পেট মার্কেট: পশু পাখির বাচ্চা, খাবার পানির পাত্র, খামারের যন্ত্রপাতি ব্রুডার ইত্যাদি। স্টেডিয়াম মার্কেট:নতুন পুরাতন মোবাইল, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স: বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়ামে দেশের নামকরা ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট অবস্থিত। এখানে প্রায় ৮০০ টি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান রয়েছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকে।
এই মার্কেটে এয়ার কন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর, কালার টেলিভিশন (লিড, এলসিডি ও সিআরটি), মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, রাইস কুকার, টোস্টার, সিলিং ফ্যান, ওয়াটার ফিল্টার, আয়রন, ষ্টীল ক্যামেরা, মুভি ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, চার্জার, মেমোরী কার্ড, টিভি কার্ড, ডিস এন্টেনা, রিসিভার, ভিসিডি প্লেয়ার, ডিভিডি প্লেয়ার, সিসি টিভি, নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং গ্যাসের চুলা পাওয়া যায়।
🎯 বায়তুল মোকাররম মার্কেট:
এ মার্কেটে বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায় বলে কোন বিশেষায়িত মার্কেট বলার সুযোগ নেই। দোতলায় দেশের প্রসিদ্ধ বিভিন্ন জুয়েলারী দোকান রয়েছে। ক্যামেরা, সিডি, ডিভিডি প্লেয়ার, টিভিসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য পাওয়া যায় এখানে। ব্যাগ, ল্যাগেজ, ঘড়ি, চশমা, ক্রোকারিজ, জামা-কাপড়, জুতা, খেলনা ইত্যাদির দোকানও রয়েছে। নিচতলায় নেমপ্লেট লেখার ব্যবস্থা রয়েছে। এই মার্কেটে ইসলামী ফাউন্ডেশন এর বই বিক্রয় কেন্দ্রসহ কয়েকটি আতর, টুপি, পাঞ্জাবী, বোরকা, জায়নামাজ প্রভৃতির দোকানও রয়েছে। এছাড়া মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসলামী বই, সিডি, ডিভিডি প্রকৃতিও বিক্রি হয়।
🎯 ধোলাইখাল:
সব ধরণের নতুন পুরাতন ইলেক্ট্রনিক্স ও ধাতব যন্ত্রপাতি: ধোলাইখাল নামটিতে খাল শব্দটি থাকলেও এখানে এলে কোন খাল কিংবা জলাশয় খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পুরনো ঢাকায় নবাবপুর রোডের মোড় থেকে শুরু করে নারিন্দা পর্যন্ত এর বিস্তৃতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই ধোলাইখালে পুরোনো যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু হয়। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় হাজার পাঁচেক খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান রয়েছে। মোটর পার্টসের দোকান ছাড়াও এখানে রয়েছে ড্রাম শিট, লেদ মেশিন, পুরনো লোহা লক্কড়ের দোকান।
রিকন্ডিশন্ড এই খুচরা যন্ত্রাংশগুলো তারা আমদানি করে চীন, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর থেকে। এখানে প্রায় সব মডেলের গাড়ির বিশেষ টয়োটা, নিশান, হোন্ডা, মিৎসুবিশি, সুজুকি, মারুতির যন্ত্রাংশ বেশি পাওয়া যায়। বাস এবং ট্রাকের মধ্যে বেড ফোর্ড, ইসুজু, নিশান, হিনো, ভলভো, টাটা, অশোক লেল্যান্ড, টারসেল, আইয়ার, ক্যান্টার প্রভৃতি গাড়ির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়।
যন্ত্রাংশের দাম জেনে রাখুন -আগেই বলা হয়েছে, যন্ত্রাংশের দাম সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এ বাজারে ক্রেতাকে পড়তে হতে পারে বিপাকে। সেক্ষেত্রে দাম জেনে রাখা ভালো। যেমন; সেলফ ১৫শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’, ডায়নামো ১৫শ’ থেকে ২ হাজার, ডিস্ট্রিবিউটর ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, কার্বোরেটর ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৬ হাজার, ফ্যান মটর ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ’, রেডিয়েটর ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৭ হাজার, গিয়ার বক্স ২ হাজার থেকে ৭ হাজার, ইঞ্জিন ব্লক ১৫শ’, থেকে ৩ হাজার, পিস্টন সেট ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ’ বাল্ব সেট ৫শ’ থেকে ১৫শ’ ক্লাচ প্লেট ৫শ’ থেকে ১ হাজার, প্রেশার প্লেট ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার, অয়েল পাম্প ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার, এসি পাম্প ৫শ’ থেকে ৮শ’, প্লাগ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, ইঞ্জিন পুুলি ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’, মবিল চেম্বার ৫শ’ থেকে ১ হাজার।
এখানে ইঞ্জিনও পাওয়া যায় বিভিন্ন মডেলের। যেমন; হানড্রেড ভাইভ এ ৩০ হাজার, ফোর ই ২৭ হাজার, নাইন টি ৫০ হাজার, নাই টি ফাইভ এ ৩০ হাজার, ফাইভ কে লাইটএজ ৬০ হাজার, ক্রাউন এক্স ১ লাখ, কোরোনা ফোর এক্স এ্যান্ড থ্রি এক্স ৩৫ হাজার টাকা।
যেভাবে ধোলাইখালে পৌঁছাবেন -গুলিস্তান থেকে ধোলাইখালে রিকশায় আসতে খরচ হয় ১৫ থেকে ৩০ টাকা এবং বাসে খরচ ৫ টাকা। মতিঝির থেকে ধোলাইখালের অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। মতিঝিল থেকে এখানে বাসে আসা না গেলেও নিকশায় আসা যায় সহজেই। মতিঝিল থেকে ধোলাইখালের রিকশা ভাড়া ১৫-২০ টাকা। সদরঘাট থেকে পায়ে হেঁটে এখানে আসতে সময় লাগে পনের মিনিট ও রিকশায় খরচ হয় ৮ টাকা।
🎯 জিঞ্জিরা:
নতুন পুরাতন ইলেক্ট্রনিক্স ও ধাতব যন্ত্রপাতি।জিঞ্জিরায় তিনটি পৃথক এলাকায় তৈরি করা পণ্যের নামানুসারে তিনটি স্থান আছে। যেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কারখানা। তাওয়াপট্টিতে আছে ছোট-বড় প্রায় ৭০০ হালকা শিল্প-কারখানা আর এখানে মূলত তৈরি হয় গ্রিল কারখানা, তালা, ছাতার জালা, কব্জা, পাওয়ার প্রেস, প্লেঞ্জার, কেলাম, শিট, কয়েল, ওয়াশার, নাট-বোল্ট, স্ক্রু, তারকাঁটা, তোপকাটা, বালতি, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল, কড়াই ইত্যাদি। টিনপট্টিতে তৈরি হয় টিন, শিট, কয়েল। এখানে ১৫-২০টি কারখানা আছে। তবে এর বাইরেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সেকেন্ডারি শিট মজুদ এবং গোপনে ঢেউটিন তৈরির কাজ হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো করোগেশন মেশিনে দিন-রাত আমদানিকৃত জিপি শিট কেটে ঢেউটিন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে থাকে।
জিঞ্জিরার বৈশিষ্ট্য হলো এখানে খুব স্বল্পমূল্যের সামগ্রী ব্যবহার করে কারিগরেরা তৈরি করতে পারেন মানসম্পন্ন অনেক পণ্য। এমনকি তাঁদের দাবি মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকা মূল্যমানের যন্ত্রে যে প্লেনশিট থেকে যে ঢেউটিন তাঁরা তৈরি করতে পারেন, তার গুণগত মান যথেষ্ট ভালো। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করার মতো কোনো প্রামাণিক দলিল পাওয়া যায়নি।
লোহার সামগ্রী তৈরিতে জিঞ্জিরার বিশেষ সুনাম রয়েছে।জিঞ্জিরা বাজারে প্রায় দুশো’রও অধিক বিভিন্ন লোহার সামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার শিল্পের বিশাল যোগান দেয় বলে অভিমত রয়েছে। জিঞ্জিরার কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে ঢেউটিন, স্ক্রু, নাট-বল্টু, ক্লাম, তারকাটা, জিআই তার, আলতালা, হ্যাসবোল্ট, কব্জা, দা-বটি, শাবল, বালতি, চাপাতি, কুড়াল, কোদাল, কুন্নি, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ডেকোরেটর সামগ্রী, ওয়াশিং টব, পিতলের বার্নার(কেরোসিন চুলা), তামা ও পিতলের ডেগ, কলসি, ক্রোকারিজ, তাওয়া, টিফিন ক্যারিয়ার, চাইনিজ সাইলেন্সার/ডাব্বু, আশকল ডুম্বরি, নিক্তিকাঁটা, সাটার, কেচি গেট, লোহার জানালা, দরজা, অ্যালুমিনিয়ামের জগ-মগ ইত্যাদি অন্যতম।
এসব উপকরণ তৈরির কাচামাল আসে ঢাকারই নবাবপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, পুরোন ঢাকা প্রভৃতি এলাকা থেকে। তাওয়াপট্টিতে তৈরিকৃত গ্রিল কারখানা, তালা, ওয়াসার, নাট-বোল্ট ইত্যাদি তৈরিতে নিজেদের তৈরি পাওয়ার প্রেসের মাধ্যমে বানানো হয়। একসময় পাওয়ার প্রেসসহ বড় বড় যন্ত্র বিদেশ থেকে আমদানি করতে হলেও স্থানীয় কারিগররা উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সেখানে প্রতিস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন সম্পূর্ণ নিজস্ব তৈরিকৃত যন্ত্র। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো এখানকার সামগ্রীতে স্ক্র্যাপ মেটাল বা পরিত্যক্ত লোহার ব্যবহার, যা সংগৃহীত হয় ভাঙা জাহাজ কিংবা বিভিন্ন কারখানার ভাঙা সরঞ্জাম থেকে।
জিঞ্জিরা লোহার বিভিন্ন সামগ্রী ছাড়াও মেলামাইন, আলকাতরা, নারিকেল তেল, শাড়ি-লুঙ্গি ইত্যাদির জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়া জিঞ্জিরার কালিগঞ্জ দেশীয় গার্মেন্টস সামগ্রী, বিশেষত জিন্স প্যান্ট তৈরিতে সুনাম অর্জন করেছে। দেশীয় বাজারের জিন্সের প্রায় ৮৫ শতাংশ চাহিদা কালিগঞ্জ থেকে পূরণ হয় বলে স্থানীয়দের অভিমত পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি রোহিতপুরের লুঙ্গি, জয়পাড়ার শাড়িও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।এছাড়াও এই অঞ্চলে ভারত, জার্মানী,মালয়েশিয়া থেকে আনা কাঁচামালনির্ভর প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে।
🎯 পাটুয়াটুলি বা পূরান ঢাকা:
পুরান ঢাকায় পাটুয়াটুলি রোড (রোড এর দুই পাশ ইলেক্ট্রনিক্স মার্কেট) জগন্নাথ বিঃ এর এর পর সদরঘাট এর আগে যদি আপনি গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এর দিকে যান ইলেক্ট্রনিক এর মার্কেট আছে, স্টেডিয়াম এর চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ।
🎯 চকবাজারঃ
পাইকারি কাপড়ের বাজার চকবাজার: পুরোন ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় বাজার। রমজান মাসে রকমারি এখানে রকমারি ইফতারের পশরা বসে। কাবাবের কথা আসলেই চকবাজারের নামটিও আসবে। চকবাজারের কাবাব খুব বিখ্যাত। ঢাকার পুরানো বাজারগুলির মধ্যে চক অন্যতম।
🎯 শ্যামবাজার :
ঢাকার অন্যতম পুরাতন বাজার। এটা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ঢাকাবাসীর বিভিন্ন দ্রব্যের যোগান দিয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্ববধানে বাজারটি পরিচালিত হচ্ছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পূর্ব দিকে ৮ – ১৫ গজ দূরে শ্যমবাজারের সীমানা শুরু।
এই বাজারে সাধারণত ফজর নামাযের পর থেকে সকাল ১১.০০ টা পর্যন্ত বেশী ভিড় হয়। কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই এবং প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত স্বাভাবিক লেনদেন হয়ে থাকে। সাধারণত প্রায় দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার সব কাঁচা বাজার ও ফলমূল পাওয়া যায়। যেমন – আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, বেগুন, মাছ, সবজি, পটল, করলা ইত্যাদি। আর ফলমূল এর মধ্যে রয়েছে – আম, জাম, কলা, লিচু, তেঁতুল, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি। এছাড়া তেল, লবণ, মসলাও পাওয়া যায়।
বাজারের বিভিন্ন ধরনের ভাগ আছে। যেমন – ১নং রোডে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু এবং অন্যান্য ফল আর নদীর পাড়ের রাস্তার বিপরীত পাশে পাওয়া যায় আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ইত্যাদি। মূল বাজারের মাঝামাঝি ও নদীর পাড় ঘেঁষে বিভিন্ন রকম শাক-সবজির বাজার বসে।
🎯 বাংলাবাজার:
বর্তমানে বাংলাবাজার বাংলাদেশের মধ্যে বইয়ের বৃহত্তম মার্কেট। বাংলাদেশের প্রকাশনা ব্যবসা আবতির্ত হচ্ছে বাংলাবাজারকে ঘিরে। পাঠ্যবইসহ অন্যান্য অনেক ধরনের বই পাওয়া যাচ্ছে যেখান থেকে। বাংলাদেশের বড় বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসও বাংলাবাজারেই অবস্থিত। এছাড়াও পোশাক সামগ্রীর জন্যও এটি বিখ্যাত।
🎯 মতিঝিল:
ঢাকা শহরের প্রধান বানিজ্যিক এলাকা। এটি ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক জনতা ব্যাংক সহ বহু প্রতিষ্ঠানের মূল কার্যালয় । আরামবাগ: বিভিন্ন ক্রীড়া সংঘ, কম্পিউটার্স, কম্পোজ, ডিজাইন, প্রিন্টিং প্রেস ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত।
🎯 এলিফ্যান্ট রোড:
জুতা, ব্যাগ, সিরামিকস/চীনামাটির বাসনপত্র, কাপড়, পর্দা, দর্জা জানালার পর্দা, বেডিং সামগ্রী নতুন পূরাতন কম্পিউটার, ক্রয় বিক্রয় ও মেরামত।
🎯 মাল্টিপ্লান:
এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক্স, ক্যামেরা সামগ্রীর বৃহৎ মার্কেট। ইষ্টার্ণ মল্লিকা, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা কাঁটাবন: ইসলামি বইপত্র, সিডি, বোরখা, হিজাব, সুগগ্ধি, অ্যাকুরিয়াম পাখি, কোম্পানি নেমপ্লেট,সাইনবোর্ড ব্যানার প্রিন্ট ব্রান্ডিং সামগ্রী
🎯 নিউমার্কেট:
১৯৫২-৫৪ সালে নির্মিত একটি বিপণি কেন্দ্র। পর্যায়ক্রমে এটি ঢাকার বাইরের ক্রেতাদেরও আকর্ষণ করে। মার্কেটটি আজিমপুরে অবস্থিত, যার পূর্বদিকে রয়েছে মিরপুর রোড, উত্তরে ঢাকা কলেজ, পশ্চিম পার্শ্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং দক্ষিণে পিলখানা রোড।
মার্কেটটির পাশেই খুচরা দোকানের একটি কেন্দ্র আছে। সেখানে কাপড়-চোপড়, ঔষধ, টয়লেট সামগ্রী ও গৃহস্থালি ব্যবহারের টুকি-টাকি দ্রব্যাদি বিক্রয় হয়। এছাড়া, বেশ কয়েকটি দোকানে বিক্রয় হয় প্রসাধনী সামগ্রী, স্যুভেনির ও শোপিস সামগ্রী, তৈজসপত্র, হালকা বৈদ্যুতিক দ্রব্য ও আসবাবপত্র। মার্কেটটির উত্তর দিকে মুদির দোকান এবং মাছ, মাংস, ফল-মূল ও সবজির বাজার রয়েছে।
আজকের দিনে ‘নিউমার্কেট’ বলতে ভিতরে এবং বাইরে বৈচিত্র্যপূর্ণ দোকানের এক বিপুল সমাহারকে বোঝায়। মূল মার্কেটে তিনটি উঁচু খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে, ভিতরে আছে বই-পত্র ও লেখা-লেখির সামগ্রী, ঘড়ি, চশমা, চামড়ার সামগ্রী ও ভ্রমণের উপকরণাদি, মুদি দ্রব্যাদি, কাপড়-চোপড়, অলঙ্কার ও বৈদ্যুতিক দ্রব্যাদি এবং দরজি, ফাস্টফুড ও ছবি তোলা ও প্রসেসিং-এর দোকান। দোকানগুলির সামনে একটা আচ্ছাদিত টানা বারান্দা রয়েছে।
মার্কেটটিতে মোট ৪৬৮টি দোকান রয়েছে এবং বাজার করতে আসা ক্রেতারা এখানে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সব জিনিস-পত্রই পেয়ে থাকে।
নিউমার্কেটের বিপরীতে, পোশাক সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট: নিউমার্কেটের উত্তরে অবস্থিত পোশাক সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত।
🎯 নীলক্ষেত:
ঢাকা শহরের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকদের নিকট নীলক্ষেত অত্যন্ত পরিচিত এবং অতি প্রয়োজনীয় মার্কেট। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছেও এ মার্কেট গুরুত্ব বহন করে। কেননা, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকদের বই তথা প্রয়োজনীয় সকল বই-পত্রের জন্য নীলক্ষেত বই মার্কেটের বিকল্প নেই ঢাকা শহরতো বটেই, সারা দেশেও। বইয়ের মার্কেটের ক্ষেত্রে নীলক্ষেত বই মার্কেট তাই একচ্ছত্র আধিপত্য ভোগ করছে।
এখানে বইয়ের পাশাপাশি ফটোকপির দোকান, বাইন্ডিং অর্থাৎ বাঁধাইয়ের দোকান, কম্পিউটারে বিবিধ কাজ করার দোকান, ছাপাখানা, সাইবার ক্যাফে, অটো ক্যাড প্রিন্টিংয়ের দোকান, টেইলার্সের দোকান ও খাবার দোকান অবস্থিত। ৫ টি মার্কেটের সমন্বয় হচ্ছে নীলক্ষেত বই মার্কেট এখানে নতুন ও পুরাতন বোর্ড বই, রেফারেন্স বুক, ম্যাগাজিন প্রভৃতি সকল ধরনের বই পাওয়া যায়।
🎯 ইসলামিয়া বহুমুখী সমবায় সমিতি:
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, ইংরেজী মাধ্যম স্কুল, বিসিএস এবং অন্যান্য প্রতিযোগতামূলক পরীক্ষার নতুন ও পুরাতন বই পাওয়া যায়।
🎯 বিসিএস কম্পিউটার সিটি:
বেগম রোকেয়া স্বরণী, আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা – ১২০৭। ২০০০ ইং সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শপিং মলটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন, নিজস্ব স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং টাইলস সজ্জিত নতুন ভবনে অবস্থিত। মার্কেটটিতে মোট দোকানের সংখ্যা ৩৫০ টি। মার্কেট মালিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শপিং মলটি পরিচালিত হয়। এটি দেশের বৃহত্তম কম্পিউটার মার্কেট।
🎯 মোতালেব প্লাজা হাতির পুল:
মোবাইল ফোন সামগ্রী বিক্রয় মেরামত ও পাইকারি বিক্রয় শপিং মলটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন, এস্কেলেটর সুবিধা, নিজস্ব স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত এবং টাইলস সজ্জিত নতুন ভবনে অবস্থিত। এখানে মোট দোকান সংখ্যা ১২০০ টি। মালিক সমিতি কর্তৃক শপিং মলটি পরিচালিত হয়। হাতিরপুল বাজার: সিরামিক টাইলস, বাথরুম ফিটিংস সামগ্রী, কাঁচাবাজার,ইত্যাদি। আজিজ সুপার মার্কেট,শাহবাগ: পোশাক সামগ্রী,কারুপন্য, হস্তশিল্প
🎯 গাউসুল আজম মার্কেট:
নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সাথে অবস্থিত। এখানে রয়েছে ২০০ এর অধিক দোকান। এখানে যে সব সুবিধা পাওয়া যায়- ফটোকপি, সাইবার ক্যাফে, মুদ্রন ও প্রিন্টিং, টেইলার্স, ছবি বাঁধাইয়ের দোকান, কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ।
রাস্তার সামনের অংশটিকে সিটি কর্পোরেশন মার্কেট বলা হয়। এখানে রয়েছে খাবার দোকান,ফটোকপির দোকান A3, A4 অটো ক্যাড প্রিন্টিং এর দোকান।
🎯 ইস্টার্ন প্লাজা:
১ম তলা – প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক, থালা বাসন ইত্যাদির দোকান। ২য় তলা – শাড়ী, সেলয়ার কামিজ, টি-র্শাট, টেইলার্স ইত্যাদির দোকান ৩য় তলা – গয়না, সোনা, রূপা, ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান। ৪র্থ তলা – জুতার দোকান, বিভিন্ন ব্রান্ডের জুতার দোকান। ৫ম তলা – মোবাইলের দোকান, এবং মোবাইল সার্ভিসিং করার দোকান। ৬ষ্ট তলা – মার্কেট মালিক সমিতি অফিস। ৭ম তলা – ডাক্তার চেম্বার। ৮ম তলা – ডাক্তার চেম্বার, অফিস। ৯ম তলা – ঘটক পাখি ভাই।
🎯 কারওয়ান বাজার:
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ও ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় পাইকারী ও খুচরা বাজার। ঢাকা শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে এখানে অনেক বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দৈনিক প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ), দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং আরও অনেক খবরের কাগজের প্রধান অফিস কাওরান বাজারে অবস্থিত। এছাড়াও একুশে টেলিভিশন, এনটিভি, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ বাংলাভিশন আরটিভি টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয় এবং স্টুডিও কাওরান বাজারে অবস্থিত।
🎯 বেনারশী পল্লী: বেনারশী পল্লী একসময় শুধুমাত্র বেনারশী শাড়ির জন্যই বিখ্যাত ছিল। গত বছর কয়েক ধরে মিরপুর বেনারশী পল্লিতে বেনারশী শাড়ি ছাড়াও অন্যান্য সব ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়। বেনারশী শাড়ি-Old + New, টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি (কটন)। টাঙ্গাঈল হাফ সিল্ক। রাজশাহী সিল্ক। ধুপিয়ান। ঢাকাই মসলিন। কাতান। কোটা শাড়ি। ব্রোকেট শাড়ি। জামদানী শাড়ি। জর্জেট শাড়ি ইত্যাদি। এ ছাড়াও আরো নতুন নতুন কালেকশন পল্লীতে তৈরী হচ্ছে।
.
.
🎯🎯 আপনাদের উপকারে আসলে পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন। (collected)

Monday 14 September 2020

ডা. জাহাঙ্গীর কবির এর ডায়েট চার্ট : নতুনরা যেভাবে শুরু করবেন

 

মূল- ডা. জাহাঙ্গীর কবির
শ্রুতিলিখন- আবুল কালাম আজাদ
————————————–
“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর” কথাটি অনেকের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা না পেলেও যখন বিশ্বাসটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত এবং অনেক মানুষ কর্তৃক পরীক্ষিত। তখন কিন্তু আর বিশ্বাসটি অবিশ্বাসের জায়গায় বসে থাকে না, বা তার গ্রহণ যোগ্যতা নিয়েও কোন প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না।
কথা বলছিলাম ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের দেওয়া ডায়েট প্রসঙ্গ নিয়ে। আপনারা হয়তো নানা জনের মুখ থেকে বা স্যারের ভিডিওগুলো দেখে বুঝতে পারছেন ডায়াবেটিস রোগী, ওষুধবিহীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন এবং মোটা বা স্থূল মানুষগুলো খুব অল্প দিনেই শরীরের স্থূলতা কমিয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে উঠেছেন, কিন্তু আপনারা অনেকেই ডায়েটে যেতে বা শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন, তার একটাই কারণ- আপনাদের মস্তিষ্কের একটি বদ্ধমূল ধারণা, আর সেটা হলো, জন্মের দুই তিন বছর পর থেকেই যেখানে আমাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে ভাত, রুটি, মাছ, মাংসের উপর সেখানে ভাত রুটিবিহীন জীবন যাপন যেন পাগলের প্রলাপ। কিন্তু এই বদ্ধমূল ধারণা বা ঐতিহ্য, স্যারের পরামর্শে কিছু মানুষ যখন কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয় তখন হয়তো আপনাদের মনে বিশ্বাস প্রতিস্থাপন হয়। আর তাদের জন্যই আমার এই লেখা।
প্রতিজ্ঞা, ধৈর্য, এবং সহনশীলতা, এই তিনটা জিনিস আপনাকে ডায়েট শুরু করার আগে নিজের অনুকূলে আনতে হবে।
প্রতিজ্ঞা হলো সেই বিষয়টা, আপনার এমন একটা মনোভাব থাকতে হবে, আমাকে পারতেই হবে। দশজনে যেটা পারছে সেটা আমি কেন পারবো না?
প্রতিটি বিষয়ে কিছু ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। হুট করেই আপনার এক দিনে দশ কেজি ওজন কমে যাবে না বা এক দিনেই দশ বছরের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, অনুশীলন করতে হবে এবং নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মানতে হবে।
আর সহনশীলতা হলো সেটাই। আপনার পরিবার, পরিজন, বন্ধু বান্ধব বা সমাজের মানুষ গুলোর কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে তিরস্কার বা অনীহা আসবে আর সেটা হাসি মুখে গ্রাহ্য করাটাই সহনশীলতা। অনেক জনে অনেক কথা বলবে সেগুলোকে এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ, কিন্তু আপনি যখন সফল হবেন তখন আপনিই হবেন তাদের কাছে আইডল। সবাই তখন আপনার কাছে পরামর্শের জন্য লাইন ধরবে।
তো কথা না বাড়িয়ে কিভাবে ডায়েট শুরু করবেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করা যাক। আশা করি বিষয় গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং মানার চেষ্টা করবেন। যা কিছু উল্লেখ করছি তা সম্পূর্ণটাই ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির স্যারের বিভিন্ন ভিডিও এবং রোগীদের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া।
আপাতত মোটেও খাওয়া যাবে না-
- চালের তৈরি সব কিছু ( ভাত, চাউলের রুটি, চাল দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি)
- গমের তৈরি সব কিছু (রুটি, পাউরুটি, বিস্কুট যে কোন প্রকার, গম দিয়ে বানানো অন্যান্য দ্রব্যাদি)
- কোন প্রকার ডাল খাওয়া যাবে না।
- আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলু সাদৃশ্য অন্যান্য আলু, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমন: মূলা।
- চিনি এবং চিনি দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে।
- দই, টক দই, দুধ এবং সরাসরি দুধ দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি।
- মধু এবং মিষ্টি ফলমূল খাওয়া যাবে না। (কেন খাওয়া যাবে না সেটা পরে ব্যাখ্যা করছি।
- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্রান ওয়েল, ক্যানোলা ওয়েল এবং সাধারণ কোন তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না।
- ফার্মের মুরগি, যে মুরগীগুলোকে ট্যানারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য ও সয়া খাওয়ানো হয়। গরুর মাংস, যে গরু বা ষাঁড়গুলোকে ইনজেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয়। একই ব্যাপার খাসির ক্ষেত্রেও ।
যা খাওয়া যাবে বা খেতে বাঁধা নেই-
- সবুজ শাক-সবজি (গাজর, কচি সবুজ মিষ্টি কুমড়া খেলে অল্প পরিমাণ )
- টক জাতীয় ফল। যেমন- জলপাই, আমলকী, কচি ডাবের পানি।
- মাছ, যে কোন প্রকার খেতে পারবেন, তবে তৈলাক্ত দেশীয় মাছের ভেতর পাঙ্গাশ, - বোয়াল, ইলিশ, সরপুঁটি, ব্রীগেড, গ্রাসকার্প, বাইম (তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ হলে আরো ভালো)।
- গরু এবং খাসির মাংস খাওয়া যাবে তবে যে গরু বা খাসিগুলো ইনজেকশন মুক্ত এবং ঘাস, লতা পাতা বা খড়কুটো খেয়ে লালিত পালিত তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না।
- এ ছাড়া গরু বা খাসির পায়া খাওয়া যাবে, যেটা খাওয়া এই সময়ে খুবই উপকারী। তবে এটাও অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
মুরগির ডিম (ফার্ম হলে সমস্যা নেই তবে ওমেগা ৩ বা দেশী মুরগী বা হাস হলে বেশি ভালো)। মাছের ডিমও খেতে চেষ্টা করবেন যথা সম্ভব।
- ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra virgin cold pressed কোকোনাট ওয়েল। এগুলো সব ভাল শপে পাওয়া যায়। তবে নিজে তৈরী করাটাই শ্রেয়।
- যে কোন প্রকার বাদাম। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম বা অন্যান্য বাদাম যা আছে। চাইলে বাদাম ব্লেন্ড করে সাথে উপরে উল্লেখিত নারকেল তেল দিয়ে বানাতে পারেন। পিনাট বাটার যেটা খেতে তুলনাহীন তবে খাবেন অল্প।
- রং চা বা কফি দুধ চিনি ছাড়া। সবুজ চায়ের সাথে লেবু, আদা, সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। কফির সাথে, MCT ওয়েল, মাখন বা ঘি এবং অর্গানিক কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে বাটার কফি বানিয়ে খেতে পারেন, এতে ভালো কাজ হবে।
কিভাবে ডায়েট শুরু করবেন
সকালের নাস্তা
———————-
যাদের সকালে খাওয়ার অভ্যাস তারা আটটা বা সাড়ে আটটার দিকে দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা, আদা, লেবু, সামান্য লবণ দেওয়া যেতে পারে। কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা কোকোনাট ভিনেগার খেতে পারেন এবং কুসুম গরম পানির সাথে লেবু চিপে খেতে পারেন। এছাড়া যাদের দেরিতে নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস, তারা এগারোটার দিকে নাস্তা করবেন এবং দুপুরের খাবার আড়াইটা তিনটায় খাবেন। আর সকাল আটটায় নাস্তা খেলে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে।
দুপুরের খাবার
———————
দুপুরের খাওয়ার আগে অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে না এবং চর্বি কাটতে সাহায্য করবে। শাক, সবজি অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন এবং মাছ ভাজলে (ডীপ ফ্রাই থেকে বিরত থাকবেন এতে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়) বা রান্না করলে এই তেল দিয়েই করবেন। সবজি যতটুকু সম্ভব কম সেদ্ধ করবেন। যেন সবজির গুণগত মান ঠিক থাকে। ডিম কুসুমসহ ঘি বা মাখন দিয়ে ভেজে খাবেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুমসহ খেতে পারবেন কোন সমস্যা নেই। কারণ, ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস। তবে একবার ফ্যাট অ্যাডাপটেশন হয়ে গেলে চাইলেও এত খেতে পারবেন না। দেশি মুরগি খেতে পারেন, এক দুই টুকরো অথবা উল্লিখিত গরুর মাংস। মাছ খেলে গোস্ত খাবেন না। গোস্ত খেলে মাছ খাবেন না। এছাড়া প্রবাসীরা ফার্মের মুরগি এক টুকরো করে খেতে পারেন, কারণ আমার জানা মতে সেখানে ফার্মের মুরগিকে আদর্শ খাবার খাওয়ানো হয় (যদিও মুরগী ব্যায়াম করে না যেটা দেশী মুরগী করে )। দুম্বা, উট, ভেড়ার, মাংস খেলে এক টুকরোর বেশি নয়। দুপুরের মেন্যুতে , শাক, সবজি মাছ অথবা মাংস , ঘি এ ভাজা ডিম, ঘি’য়ে ভাজা বাদাম সাথে বাটার রাখতে পারেন এবং অবশ্যই শসা বা শসার সালাদ রাখবেন টমেটো গাজরও।
বিকেলে ক্ষুধা লাগলে উপরে উল্লেখিত চা, বাটার কফি এবং বাদাম খাবেন যে কোন প্রকার মাখন বা ঘি দিয়ে ভাজা বা মেশানো।
রাতের খাবার
——————–
রাতের খাবারের পূর্বেও ভিনেগার মিশ্রিত এক গ্লাস পানি খেয়ে নেবেন এবং রাতের খাবার দুপুরের অনুরূপ খাবেন। আইটেম দুই একটা কম বেশি হোক কোন সমস্যা নেই। রাত আটটার আগেই সমস্ত খাবার শেষ করুন। এরপর আর পানি ছাড়া কিছুই খাবেন না।
প্রয়োজনীয় উল্লেখযোগ্য বিষয়
———————————————–
উপরে উল্লিখিত খাবারের বাইরে ডায়েট অবস্থায় আর অন্য কোন কিছুই খাবেন না।
মধু ও মিষ্টি ফল কেন খাওয়া যাবে না?
মধু এবং মিষ্টি ফলে আছে চিনি যা শর্করা হিসাবে আমাদের শরীর গ্রহণ করে। আপনি যখন ডায়েট শুরু করবেন, তখন শর্করা জাতীয় খাদ্য না খাওয়ায় শরীরে শর্করার ঘাটতি দেখা দেবে, তখন শরীর গ্লাইকোজেন পোড়াবে। এরপর গ্লাইকোজেন শেষ হয়ে গেলে কিন্তু আমাদের শরীর তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শরীরে জমে থাকা চর্বি গলিয়ে সেখান থেকে শক্তি গ্রহণ করবে। কই’য়ের তেল দিয়ে কই ভাজার মতো। একেই বলে ফ্যাট অ্যাডাপটেশন। এখন যদি আপনি মধু, মিষ্টি ফল, চিনি জাতীয় শর্করা খাবার খান তবে আপনার শরীর ফ্যাট বার্নিং না করে এখান থেকেই তার প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করবে। যার ফলশ্রুতিতে আপনার ফ্যাট বার্নিংও হবে না এবং আপনার স্বাস্থ্য এবং ডায়াবেটিসও কন্ট্রোলে থাকবে না। এ কারণেই ডায়েট অবস্থায় সমস্ত প্রকার শর্করা, মধু , মিষ্টি ফল ও চিনি খেতে নিষেধ করা হয়। একটা মিষ্টি খাবেন, দুই তিনটা মিষ্টি ফল খাবেন, এক চামচ চিনি বা মধু খাবেন, এক বেলা ভাত বা রুটি খাবেন, আপনার শরীর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ফ্যাট বার্নিং বন্ধ করে দেবে!
যে বিষয় গুলো মানতে হবে এবং করতে হবে
রাত দশটা, এগারোটার ভেতর আপনাকে ঘুমিয়ে যেতে হবে। কারণ রাত দশটা থেকে দুইটার ভেতর আমাদের শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয় এবং এই গ্রোথ হরমোনগুলো ফ্যাট বার্নিং এ প্রচুর সহায়তা করে। আপনি যদি এই প্রাকৃতিক বিষয়টি অগ্রাহ্য করেন তবে আপনার ডায়েট অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং ভাল ফল পেতে ব্যর্থ হবেন। তারপর খুব সকালে উঠবেন, নামাজ পড়ে (মুসলমানেরা) হাঁটতে বের হবেন। হাঁটার গতি নির্ভর করবে আপনার বয়স অনুসারে। বয়স যদি চল্লিশের ঊর্ধ্বে হয়, স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন ৪০/৬০ মিনিট। বয়স যদি চল্লিশের নিচে হয় তবে জগিং করুন নয়তো জোরে জোরে হাঁটুন ৪০/৬০ মিনিট। তবে খেয়াল রাখবেন হাঁটতে হাঁটতে যেন হাঁপিয়ে না যান বা শ্বাসকষ্ট না হয়। যতটুকু হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন শরীরের সাথে মানিয়ে করুন। দ্রুত মেদ ভুরি কমানোর জন্য ইয়োগা করতে পারেন ( ইয়োগো করার পদ্ধতি YouTube এ দেখে নিন)
উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে সাত থেকে আট দিন নিয়ম করে চলুন। এই সময়টায় আপনার শরীর ফ্যাট বার্নিং বা চর্বি গলাতে শিখে যাবে। তারপর শুরু করুন শুধু সাহরিতে পানি খেয়ে রোজা রাখা, স্বাভাবিক রোজার মতো দিনে পানি এবং সমস্ত কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ইফতার করবেন বাদাম সাথে মাখন এবং শসা দিয়ে সাথে টক ফল রাখতে পারেন। ভিনেগার মিশ্রিত পানি খেয়ে রাতের খাবার উপরে উল্লিখিত অনুরূপ খাবেন এবং অবশ্যই আটটার আগে সমস্ত খাবার শেষ করুন। বেশী ভালো ফল পেতে ইফতারের এক ঘণ্টার ভেতর খাবার শেষ করুন এরপর পানি খেতে থাকুন।
রোজা রাখা শুরু করলে বসা থেকে দাঁড়ালে মাথা সামান্য ঘুরতে পারে, সেক্ষেত্রে সামান্য লবণ মিশ্রিত পানি খাবেন প্রতিদিন এছাড়া এর জন্য ডাবের পানি খেতে পারেন প্রতিদিন একটি কচি ডাব খাওয়া খুবই জরুরী। একটানা যতগুলো ফাস্টিং (রোজা) করতে পারবেন আপনি তত দ্রুত ফল পেতে থাকবেন। (তবে ৭ দিন পর দুইদিন রোজা রাখবেন না ঐ দুইদিনও চেষ্টা করবেন চার ঘণ্টার ভেতর খাবার খেয়ে শেষ করতে ) রোজা রাখলে আপনার শরীরে অটোফেজি শুরু হবে। অটোফেজি হলো, এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শরীর তার খারাপ কোষকে খেয়ে ফেলে এবং সেখান থেকে নতুন কোষের সৃষ্টি করে। বসন্তের নতুন পাতা গজানোর মত; এতে দেখা যাবে আপনি নতুন করে জন্মগ্রহণ করছেন এবং আপনি আপনার হারানো তারুণ্য ফিরে পাচ্ছেন।
কিছুদিনের ভেতর খেয়াল করবেন আপনার ক্ষুধা কমে গেছে । যারা বারবার খেতেন বা খেতে বাধ্য হতেন তাদেরও খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না এর কারণ হলো আপনার শরীরে যে প্রচুর জমাকৃত চর্বি, সেখান থেকেই দেহ তার সমস্ত চাহিদা পূরণ করে নিচ্ছে তাই আর বাড়তি খাবারের প্রয়োজন অনুভব হচ্ছে না। সেটা এক অন্যরকম অনুভূতি। আপনি না খেয়েও বেশ শক্তিশালী হচ্ছেন আগে যেখানে খাবার খেয়েও দুর্বল হতেন ।এই অনুভূতি বলে বোঝানোর মত না।
আর যদি এক টানা রোজা না রাখতে পারেন তবে সপ্তাহে অন্তত দুইটা করে রোজা রাখুন এবং নিয়মিত হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন। আশা করা যায় দেড় দুই মাসের ভেতরেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। তবে অন্যদিনগুলোতে দুইবেলা খাবেন চার ঘণ্টার ব্যবধানে বাকী সময় ওয়াটার ফাস্টিং করবেন অর্থাৎ গ্রিন টি, ভিনেগার, লেবু, সবুজ চা এগুলো খেয়ে খেয়ে বিশ ঘণ্টা।
এছাড়া যারা ডায়াবেটিস এর রোগী আছেন তারা উল্লেখিত নিয়মাবলী ফলো করে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তবে ডায়েট শুরু করার আগে ডায়াবেটিস এর সমস্ত ওষুধ এবং ইনসুলিন বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে টানা রোজা না রাখলেও চলবে। ডায়াবেটিস এর খুব বেশি জটিল রোগী হলে স্যারের পরামর্শ নিয়ে তারপর শুরু করুন। যাই করবেন বুঝে শুনে নিয়মিত ডায়াবেটিস এবং প্রেশার মাপা খুবই জরুরী এবং কোন খাবার শর্করা সেটা জানাও জরুরী ।
আরও যা কিছু করা প্রয়োজন:
যতটুকু সম্ভব টেনশন ফ্রী থাকার চেষ্টা করবেন। হাসি খুশি থাকবেন। প্রতিদিন হাঁটার সময় বা পরে সকালের স্নিগ্ধ রোদ গায়ে লাগানোর চেষ্টা করবেন কারণ রোদে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। রাত আটটার ভেতর সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এতে করে আপনার ঘুমের কোয়ালিটি ভালো হবে।
সমস্ত বিষয়টি একটি প্যাকেজ প্রোগ্রাম। আপনি যতটুকু মেনে চলবেন ঠিক ততটুকু ফল পাবেন। মুসলমান হলে নিয়মিত নামাজ পড়বেন। বেশী বেশী নফল নামাজ পড়বেন, এতে আপনার ফরজ আদায় হওয়ার পরেও শারীরিক কিছু ব্যায়াম হবে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আর সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখুন এবং ভরসা রাখুন। অবশ্যই আপনি সফলকাম হবেন। যেমনটি আলহামদুলিল্লাহ আমার মতো অনেকেই হয়েছেন।
উৎস: মাসিক আদর্শ নারী

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...