Sunday 20 January 2019

মহান আল্লাহর স্বার্থপর বান্দা

বেনামাযী মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তার আনুগত্য করে না, সুস্থ ও সুখী থাকলে তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ে না। অবশ্য কোন কাতে পড়লে, বিপদে পড়লে, মরণের মুখে পতিত হলে ভয়ে নামায পড়ে। এমন নামাযীর উদ্দেশ্যে বিদ্রুপ করে বলা হয়, “গুঁতোয় পড়লে ছুঁচোয় নামায পড়ে!” যেমন বলা হয়, “কুঁদের মুখে বাঁশ বাঁকা থাকে না, সোজা হয়ে যায়।“ অবশ্য অনেকে সোজা হয়ে বিপদ কাটার পর আবার বাঁকা হয়ে যায়। হাসপাতালে তওবা করে এবং ওয়াদা করে, আর নামায ছাড়বে না। তারপর সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দিন কতক নামায পড়ে। কিন্তু ওয়াদা ভুলে আবার নামায ছেড়ে দেয়। চাকরি হয় না, রুযী-রুটীর টানাটানি। মা-বোন ভাত পায় না, সংসারে বড় অভাব। একটা চাকরি চাইই। আল্লাহর কাছে কাঁদাকাটি করে, দাড়ি রাখে, নামায পড়ে, মুনাজাত করে। তারপর? চাকরি হয়। সংসারে সুখের বাগানে নানা রঙের ফুল ফোটে। তারপর ধীরে-ধীরে নামায-রোযা বাদ চলে যায়। দাড়ির চেহারা নারীর চেহারায় পরিবর্তিত হয়! “কি এক আশে পড়ছিল নামায, আশা পুরিল তার,  আর রোযা নেই তাহার পরে নামায হইল ভার!” কেউ দুঃখ পেলে আল্লাহমুখী হয়। সুখ পেলে ভুলে যায়। কেউ সুখ পেলে আল্লাহর প্রতি খোশ থাকে, আর দুঃখ এলে তার প্রতি নাখোশ হয়। 

এ কেমন দ্বিমুখী মানুষ এরা? সুখে-দুঃখে সর্বদা সুমহান স্রষ্টার সন্তোষজন থাকতে পারে না এরা?
 মহান আল্লাহ বলেছেন, {وَمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَى وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ} (11) سورة الحـج “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইবাদত করে দ্বিধার সাথে; তার কোন মঙ্গল হলে তাতে সে প্রশান্তি লাভ করে এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়; সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইহকালে ও পরকালে; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।” (হাজ্জঃ ১১)। উক্ত আয়াতে উল্লিখিত “হার্ফ” মানে প্রান্ত, কিনারা। কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি স্থিতিশীল ও নির্বিচল হয় না। এ রকমই যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহ, সংশয়, দ্বিধা ও অমূলক ধারণার শিকার, সেও বিচলিত ও অস্থির হয়; দ্বীনের উপর দৃঢ়তা অবলম্বন তার ভাগ্যে জোটে না। কারণ তার উদ্দেশ্য হয় শুধু পার্থিব স্বার্থ। যদি তা অর্জিত হয়, তাহলে ভাল। নচেৎ পুর্বধর্মে, অর্থাৎ কুফরী ও শির্কের দিকে ফিরে যায়। এর বিপরীত যারা সত্যিকার মুসলিম, ঈমান ও ইয়াকীনে সুদৃঢ়, তারা সুখ-দুঃখ না দেখেই দ্বীনের উপর অটল থাকে। আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং দুঃখ-দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করে। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে এক দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তির অনুরূপ আচরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। (বুখারী, সুরা হাজ্জের তফসীর, আহসানুল বায়ান) কোন কোন মানুষ কেবল বিপদের সময় আল্লাহকে স্মরণ করে। স্বাচ্ছন্দ্যের সময় বিস্মৃত হয়! 
এমন মানুষদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন,  {وَإِذَا غَشِيَهُم مَّوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُم مُّقْتَصِدٌ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلَّا كُلُّ خَتَّارٍ كَفُورٍ } (32) سورة لقمان “পর্বত (বা মেঘমালা সম তরঙ্গমালা যখন ওদেরকে ঢেকে নিতে চায়, তখন ওরা আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ-চিত্ত হয়ে তাঁকে ডাকে। কিন্তু তিনি যখন ওদেরকে কুলে ভিড়িয়ে উদ্ধার করেন, তখন ওদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে। কেবল বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।” (লুক্বমানঃ ৩২)।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...