Friday 16 August 2019

ইন্টারনেটে বেগানা মহিলার সাথে মেসেজ আদানপ্রদানের বিধান


·
আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل يجوز مراسَلةُ الأجنبيات عن طريق الإنترنت للتعرُّف والزواج؟ وجزاكم الله خيرًا.
الجواب: الحمدُ لله ربِّ العالمين، والصلاة والسلام على مَن أرسله اللهُ رحمةً للعالمين، وعلى آله وصحبه وإخوانه إلى يوم الدِّين، أمَّا بعد:
فمراسَلةُ المرأةِ الأجنبيةِ وتكليمُها ولو بحُجَّةِ التعرُّف أو دعوى الزواجِ غيرُ جائزةٍ شرعًا، سواءٌ بالوسائل العاديَّة أو عبر الإنترنت؛ لِمَا في ذلك مِن فتحِ باب الفتنة، وتوليدِ دوافعَ غريزيةٍ تبعث في النفس حُبَّ الْتِمَاسِ سُبُلِ اللقاءِ والاتِّصال، وما يترتَّب على ذلك مِن محاذيرَ لا يُصان فيها العِرْضُ ولا يُحفظ بها الدِّين، لقوله صلَّى الله عليه وسلَّم: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»، وقولِه صلَّى الله عليه وسلَّم: «فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ؛ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ»؛ ذلك لأنه مهما احترز مِن الشيطان وعداوتِه له في موضعِ المفسدة فإنه يُوقِعه في المحظور بإغرائه بها وإغرائها به، قال تعالى: ﴿إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لَكُمۡ عَدُوّٞ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا يَدۡعُواْ حِزۡبَهُۥ لِيَكُونُواْ مِنۡ أَصۡحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ ٦﴾ [فاطر]، وقال تعالى: ﴿أَفَتَتَّخِذُونَهُۥ وَذُرِّيَّتَهُۥٓ أَوۡلِيَآءَ مِن دُونِي وَهُمۡ لَكُمۡ عَدُوُّۢۚ بِئۡسَ لِلظَّٰلِمِينَ بَدَلٗا ٥٠﴾ [الكهف].
هذا، والأصلُ وجوبُ إبعادِ مفسدةِ الفتنة والإثارة، ودرؤُها مقدَّمٌ على مصلحةِ التعرُّف والزواج؛ عملًا بقاعدة: «دَرْءُ المَفَاسِدِ أَوْلَى مِنْ جَلْبِ المَصَالِحِ».
والعلمُ عند الله تعالى، وآخِرُ دعوانا أنِ الحمدُ لله ربِّ العالمين، وصلَّى الله على محمَّدٍ وعلى آله وصحبه وإخوانه إلى يوم الدِّين، وسلَّم تسليمًا.
প্রশ্ন: “পরিচিত হওয়ার জন্য এবং বিয়ে করার জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেগানা মেয়েদের সাথে মেসেজ আদানপ্রদান করা কি জায়েজ? জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”
উত্তর: “যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:
বেগানা মহিলার সাথে মেসেজ আদানপ্রদান করা এবং কথা বলা—যদিও তা পরিচিত হওয়ার অজুহাতে কিংবা বিয়ে করার জন্য করা হয়ে থাকে—শার‘ঈভাবে না-জায়েজ। তাদের মধ্যকার যোগাযোগ প্রচলিত মাধ্যমযোগে হয়ে থাকুক কিংবা ইন্টারনেটযোগে হয়ে থাকুক, উভয় ক্ষেত্রে বিধান একই। কেননা এর মাধ্যমে ফিতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়, এবং স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রবণতার উদ্রেক হয়, যা ব্যক্তিকে সরাসরি যোগাযোগ ও সাক্ষাতের পথ অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ করে। মেসেজ আদানপ্রদানের ফলে এমন কিছু আশঙ্কাজনক বিষয় অপরিহার্যভাবে এসে পড়ে যে, সেসবের মাঝে ইজ্জতও রক্ষা করা যায় না, আর তা দিয়ে (ব্যক্তির) ধার্মিকতার হেফাজতও হয় না।
রাসূল ﷺ বলেছেন, “পুরুষ জাতির জন্য নারীদের অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোনো ফিতনা আমি রেখে গেলাম না।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫০৯৬; সাহীহ মুসলিম, হা/২৭৪০; তিরমিযী, হা/২৭৮০; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৯৮; আহমাদ, হা/২১৭৪৬]
তিনি ﷺ আরও বলেছেন, “সুতরাং তোমরা দুনিয়ার মোহ থেকে বেঁচে থাক এবং নারীদের ব্যাপারে সাবধান থাক। কেননা বানী ইসরাঈল জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম নারীদের মাঝেই ফিতনা সংঘটিত হয়েছিল।” [সাহীহ মুসলিম, হা/২৭৪২; তিরমিযী, হা/২১৯১; ইবনু হিব্বান, হা/৩২২১; আহমাদ, হা/১১১৪৩; বাইহাক্বী, হা/৬৭৪৬]
তাই সে ফিতনাময় অবস্থার মধ্যে যতই শয়তান থেকে এবং তার প্রতি শয়তানের বিদ্বেষমূলক কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুক না কেন, শয়তান তাকে পরস্পরের প্রতি প্ররোচিত করার মাধ্যমে—তথা ছেলেকে মেয়ের প্রতি এবং মেয়েকে ছেলের প্রতি প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে—নিষিদ্ধ কর্মে নিপাতিত করবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য করো। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে, যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়।” [সূরাহ ফাতির: ৬]
মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, “তোমরা কি শয়তানকে ও তার বংশধরকে আমার পরিবর্তে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে, অথচ তারা তোমাদের শত্রু? জালেমদের জন্য কতই না মন্দ বিনিময়!” [সূরাহ কাহফ: ৫০]
মূলকথা হলো—ফিতনা ও গোলযোগের অনিষ্টকে দূরীভূত করা আবশ্যক। তাই পরিচিত হওয়া ও বিবাহ করার কল্যাণের ওপর ফিতনার রাস্তা রূদ্ধ করাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর তা এই (শার‘ঈ) মূলনীতি অনুযায়ী করা হবে যে, “কল্যাণ আনয়নের চেয়ে অকল্যাণ প্রতিরোধ করা অধিক জরুরি।”
বস্তুত প্রকৃত ‘ইলম আল্লাহ’র নিকট রয়েছে। সর্বোপরি যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃবর্গের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
·
তথ্যসূত্র:
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...