Friday 16 August 2019

বরকত লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল ﷺ এর কবর স্পর্শ ও চুম্বন করার বিধান


[এটি একটি আরবি নিবন্ধের অনুবাদ। নিবন্ধটির প্রণেতা সম্মানিত শাইখ ড. ‘আলাউয়ী বিন ‘আব্দুল ক্বাদির আস-সাক্বক্বাফ (হাফিযাহুল্লাহ)। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধটি সংক্ষিপ্ত, তথ্যবহুল ও সারগর্ভ হওয়ায়, আমরা সম্পূর্ণ নিবন্ধের সরল বঙ্গানুবাদ বাঙালি মুসলিম পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করছি। – অনুবাদক]
·
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য। আমি কৃতজ্ঞ বান্দাদের ন্যায় প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক শেষ নাবী ও রাসূল, আমাদের পয়গম্বর ও নেতা মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল্লাহর ওপর, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীবর্গের ওপর এবং যারা কেয়ামত অবধি উত্তমরূপে তাঁদের অনুসরণ করে তাদের ওপর।
অতঃপর: বিদ‘আতীরা সর্বদাই মহান অাল্লাহ’র দ্বীনের ত্রুটিমুক্ত বিষয়গুলোতে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি করে। যেমন: গাইরুল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করা, নাবী ও সৎব্যক্তিদের অসিলায় প্রার্থনা করা, কবরের মাধ্যমে বরকত কামনা করা প্রভৃতি। কখনো তারা দুর্বল ও মিথ্যা আসার (হাদীস) উপস্থাপন করে, আবার কখনো তারা সালাফদের বড়ো বড়ো ইমাম ও ‘উলামাদের উদ্ধৃতি বর্ণনা করে। আর সেসব বর্ণনাকৃত উদ্ধৃতি বিরল হয়ে থাকে, নতুবা হয়ে থাকে ভুল বুঝ। এগুলো হয়ে থাকে মুসলিমদের নড়বড়ে ‘আক্বীদাহর কারণে, কিংবা তাদের ‘আলিমদের উক্তিসমূহকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করার কারণে, অথবা মুসলিমদের মধ্যে ‘আলিমদের দুর্বল অবস্থানের কারণে।
·
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এ জাতীয় বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হলো—“নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ করা, তা চুম্বন করা এবং তার মাধ্যমে বরকত কামনা করা।” অধুনা এ ব্যাপারে যে বিতর্ক চলছে, তা ‘আব্দুল্লাহ বিন ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুমাল্লাহ)’র একটি উক্তি নিয়ে। তিনি বলেছেন,
سألته –يعني: أباه– عن الرَّجُلِ يمسُّ منبرَ النبي صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ ويتبرُّك بمَسِّه ويُقَبِّله، ويَفعَلُ بالقبرِ مِثلَ ذلك، أو نَحوَ هذا؛ يُريدُ بذلك التقرُّبَ إلى الله جلَّ وعزَّ؟ فقال: لا بأسَ بذلك.
“আমি তাঁকে—অর্থাৎ, তাঁর পিতাকে—ওই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, যে নাবী ﷺ এর মিম্বার স্পর্শ করে, স্পর্শ করার মাধ্যমে বরকত কামনা করে, তা চুম্বন করে এবং তাঁর কবরের সাথেও অনুরূপ কাজ করে; আর সে ব্যক্তি এ কাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের আশা করে। তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেছেন, ‘এতে কোনো সমস্যা নেই’।”
·
এই বর্ণনার ব্যবচ্ছেদ করার পূর্বে আমি প্রশ্ন করতে চাই। যে ব্যক্তি ইমাম আহমাদের উক্ত কথার উদ্ধৃতি দেয়, সে কি আল্লাহ’র নৈকট্য অর্জনের জন্য কবর স্পর্শ ও চুম্বন করা বৈধ—বলে বিশ্বাস করে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করার নিমিত্তে তা বর্ণনা করছে?
না কি সে ইমাম আহমদের অনুসারীদের—যে অনুসারীরা কবরকে স্পর্শ ও চুম্বন করা হারাম মনে করে—চ্যালেঞ্জ করার জন্য তা বর্ণনা করছে যে, তারা (অনুসারীরা) ইমাম আহমাদের কথা ব্যাখ্যা করুক এবং সেই কথার মুখোমুখি হোক। না কি তাদেরকে উপহাস করার জন্য তা বর্ণনা করছে?
আল্লাহ’র কসম, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, তাওহীদকে সুরক্ষিত করার ব্যাপারে একজন ত্বালিবে ‘ইলমের যে আগ্রহ আছে, উক্ত বিতর্ক সে আগ্রহ নষ্ট করে দিচ্ছে। তারা একজন ব্যক্তিকে বা একদল লোককে উপহাস করছে, তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ করছে, একটি মতাদর্শকে লালন করার জন্য, যা ‘উলামাদের ঐক্যমত অনুযায়ী বিদ‘আতী মতাদর্শ হিসেবে বিবেচিত। আর তা হলো কবরকে স্পর্শ ও চুম্বন করার মাসআলাহ। এমনকি কমসে কম তারা আহলুস সুন্নাহ’র একজন ইমামের উদ্ধৃতি বর্ণনা করছে, আর তা দিয়ে মুসলিমদের পথভ্রষ্ট করছে!
যাতে করে ইমাম আহমাদকে ডিফেন্ড করার বিষয়টি—শির্কের মাধ্যম ও বিদ‘আত থেকে তাওহীদকে সুরক্ষিত করার ভূমিকায় পরিণত না হয়। আমি এ বিষয়েই সামনে আলোচনা করব এবং এ ব্যাপারে ‘উলামাদের বক্তব্য পেশ করব। এরপর আমরা দেখব, এই উক্তিকে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)’র দিকে সম্পৃক্ত করার বিশুদ্ধতা ঠিক কতটুকু।
·
১ম মাসআলাহ:
নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ করা এবং তা চুম্বন করা বৈধ—মর্মের মতটি যে বাতিল, তার বর্ণনা।
·
প্রথমত উক্ত কথার দলিল:
এ কাজ বাতিল হওয়ার ব্যাপারে এই প্রমাণই যথেষ্ট যে, এ মর্মে নাবী ﷺ এর একটি হাদীসেও এ কথা বর্ণিত হয়নি যে, এর মাধ্যমে ব্যক্তি মহান আল্লাহ’র নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হয়। আসলে এটি নবউদ্ভাবিত কর্মের অন্তর্ভুক্ত, যে ব্যাপারে ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَن أَحْدَثَ في أمْرِنا هذا ما ليس فيه، فهو رَدٌّ “যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু তৈরি করল, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” [সাহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সাহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮]
মুসলিমের বর্ণনায় আরও এসেছে, مَن عَمِلَ عَمَلًا ليس عليه أَمْرُنا، فهو رَدٌّ “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে কাজের ব্যাপারে আমাদের কোনো (শার‘ঈ) নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” [সাহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮]
·

আর এই কাজটি যে কবরকে সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, لَعْنةُ اللهِ على اليَهودِ والنَّصارى؛ اتَّخَذوا قُبورَ أنبيائِهم مَساجِدَ “ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ওপর আল্লাহ’র অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। তারা তাদের নাবীদের কবরগুলোকে মাসজিদ হিসেবে গ্রহণ করেছে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৩৪৫৩; সাহীহ মুসলিম, হা/৫৩১]
তিনি ﷺ আরও বলেছেন, لا تَجْعَلوا قَبري عِيدًا، وصَلُّوا عليَّ؛ فإنَّ صَلاتَكم تبلُغُني حيثُ ما كنتُم “তোমরা আমার কবরকে ঈদের স্থান হিসেবে গ্রহণ কোরো না। আর তোমরা আমার ওপর দরুদ পড়ো। কেননা তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছানো হবে।” [আবূ দাঊদ, হা/২০৪২; আহমাদ, হা/৮৮০৪; সনদ: হাসান; শব্দগুচ্ছ আবূ দাঊদের]
·
একজন সাহাবী থেকেও প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি নাবী ﷺ এর মৃত্যুর পর তাঁর কবর ও (ব্যবহৃত দ্রব্যাদির) অবশিষ্টাংশ স্পর্শ বা চুম্বন করার মাধ্যমে বরকত কামনা করেছেন। অথচ তাঁরা নাবী ﷺ কে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর শরীরের মাধ্যমে এবং শরীর থেকে নির্গত ঘামের মাধ্যমে বরকত নিতেন। এগুলোর সবই বিশুদ্ধ হাদিস ও আসারে বর্ণিত হয়েছে। কবর স্পর্শের মাধ্যমে বরকত কামনা করা যদি এ ধরনের কিছু হতো, তাহলে তাঁরা অবশ্যই তাঁর মৃত্যুর পরে তা করতেন।
ইমাম বুখারী তাঁর ‘আস-সাহীহ’ গ্রন্থে বলেছেন, باب: ما ذُكِرَ من دِرعِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، وعصاه، وسَيفِه وقدَحِه، وخاتَمِه، وما استَعمَلَ الخُلفاءُ بعدَه من ذلك ممَّا لم يُذكَر قِسمتُه، ومِن شَعَره، ونَعْلِه، وآنيتِه ممَّا يَتبَرُّك أصحابُه وغيرُهم بعدَ وفاتِه “পরিচ্ছেদ: নাবী ﷺ এর বর্ম, লাঠি, মোহর, আংটি ও তাঁর পরে খলিফাগণ সেসব দ্রব্য হতে যা ব্যবহার করেছেন, আর যেসব দ্রব্য বণ্টনের কথা অনুল্লেখিত রয়েছে এবং তাঁর চুল, পাদুকা এবং পাত্র, নাবী ﷺ এর মৃত্যুর পর তাঁর সাহাবীগণ এবং অন্যরা যার মাধ্যমে বরকত কামনা করেছেন।” [সাহীহ বুখারী, ‘খুমুস (এক পঞ্চমাংশ)’ অধ্যায় (৫৭); পরিচ্ছেদ- ৫]
·
সাহীহ মুসলিমে রয়েছে, باب: طِيبُ رائحةِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ ولِينُ مَسِّه والتبرُّك بمسحِه “পরিচ্ছেদ: নাবী ﷺ এর শরীরের সৌরভ, কোমলতা এবং তাঁকে স্পর্শ করার মাধ্যমে বরকত লাভ করা।” [সাহীহ মুসলিম, ‘ফজিলত’ অধ্যায় (৪৪); পরিচ্ছেদ- ২১]
সাহীহ মুসলিমে আরও রয়েছে, طِيبُ عَرَقِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ والتبرُّك به “পরিচ্ছেদ: নাবী ﷺ এর ঘামের সুরভি এবং তা দ্বারা বরকত লাভ করা।” [সাহীহ মুসলিম, ‘ফজিলত’ অধ্যায় (৪৪); পরিচ্ছেদ- ২২]
এখানে তাঁর কবরের কথা কোথায়? তাঁর ঘরের কথা কোথায়? প্রাচীরের কথা কোথায়?!
বরং ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, كان يَكرَهُ مَسَّ قَبرِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ “তিনি নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ করা অপছন্দ করতেন।” [মাজমা‘উশ শুয়ূখ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৪১৫০]
·
দ্বিতীয়ত ‘উলামাদের বক্তব্য:
এই কাজটি বাতিল হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ‘আলিমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এখানে আমি চার মাযহাবের অনুসারী ও ‘আলিমদের এমন বক্তব্য উদ্ধৃত করব, যাতে বর্ণিত হয়েছে, তাঁরা এই কাজে বাধা দিয়েছেন, নিষেধ করেছেন এবং তাঁদের কেউ কেউ এটাকে বিদ‘অাত—এমনকি ইহুদি-খ্রিষ্টানের কর্ম হিসেবেও গণ্য করেছেন।
·
ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম অাহমাদ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে এবং এ ব্যাপারে সালাফদের ঐকমত্যের বর্ণনা:
·
১. শাইখ খালীল অাল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭৬ হি.] বলেছেন,
روى ابنُ وهبٍ في المختصَرِ قال: سُئِلَ مالكٌ: من أين يقِفُ من أراد التَّسليمَ؟ فقال: مِن عندِ الزاويةِ التي تلي القِبلةَ مِمَّا يلي المِنبرَ، ويَستقبِلُ القبلةَ، ولا أحِبُّ أن يمسَّ القبرَ بيَدِه.
“ইবনু ওয়াহাব ‘আল-মুখতাসার’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইমাম মালিককে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কেউ যদি সালাম দেয়ার ইচ্ছা করে, তাহলে সে কোথায় দাঁড়াবে?’ তিনি বলেছেন, ‘মিম্বারের পার্শ্ববর্তী যে প্রান্তটি কিবলার নিকটে, সে প্রান্তে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে; আর আমি হাত দিয়ে কবর স্পর্শ করা পছন্দ করি না’।” [আত-তাওদ্বীহ ফি শারহি মুখতাসার ইবনি রাজাব, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০১]
·
২. ইমাম নাবাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
قالوا: ويُكرَهُ مَسحُه باليدِ وتَقبيلُه، بل الأدبُ أن يُبعَدَ منه كما يُبعَدُ منه لو حَضَره في حياتِه صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، هذا هو الصوابُ الذي قاله العلماءُ وأطبقوا عليه.
“তারা (শাফি‘ঈ মাযহাবের অনুসারীরা) বলেন, হাত দিয়ে কবর স্পর্শ করা এবং তাতে চুমা দেওয়া মাকরূহ। বরং এ থেকে দূরে থাকা হলো শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত, যেমনভাবে সে তাঁর ﷺ জীবদ্দশায় তাঁর নিকটে উপস্থিত থাকলে তা থেকে বিরত থাকত। এটাই সঠিক মত, যা ‘আলিমগণ উল্লেখ করেছেন এবং এর ওপর একমত হয়েছেন।” [আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাজ্জাব, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৭৫]
·
৩. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
لا يُسَنُّ باتِّفاقِ الأئمَّة: أن يُقَبِّلَ الرَّجُلُ أو يستَلِمَ رُكنَيِ البيت -اللَّذين يَليانِ الحِجْرَ- ولا جُدرانَ البيتِ، ولا مَقامَ إبراهيم، ولا صخرةَ بيت المَقدِس، ولا قَبْرَ أحدٍ مِن الأنبياء والصالحين.
“ইমামদের ঐক্যমতে হাজারে আসওয়াদের পাশে অবস্থিত কাবাগৃহের দুই খুঁটি, কাবাগৃহের প্রাচীর, মাকামে ইবরাহীম, বাইতুল মাক্বদিসের পাথর এবং কোনো নাবী ও সৎ বান্দার কবর চুম্বন কিংবা স্পর্শ করা সুন্নাত নয়।” [মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৭; পৃষ্ঠা: ৭৯]
·
৪. আশ-শারীফ আস-সামহুদী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৯১১ হি.] বলেছেন, আল-আক্বশাহরী বলেন,
قال الزَّعفرانيُّ في كتابه: وضعُ اليد على القَبرِ ومَسُّه وتقبيلُه: مِن البِدَعِ التي تُنكَرُ شرعًا، ورُوِيَ أنَّ أنسَ بنَ مالكٍ رضِي اللهُ عنه رأَى رجُلًا وضَع يدَه على قبرِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ فنهاه، وقال: (ما كنَّا نَعرِف هذا على عَهدِ رسولِ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، وقد أنكره مالكٌ والشافعيُّ وأحمدُ أشدَّ الإنكارِ.
“আয-যা‘আফরানী তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন, কবরে হাত রাখা, কবর স্পর্শ করা এবং তাতে চুম্বন করা শার‘ঈভাবে নিষিদ্ধ বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণিত হয়েছে যে, আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) একজন ব্যক্তিকে রাসূল ﷺ এর কবরের ওপর হাত রাখতে দেখে তাকে ওই কাজ থেকে নিষেধ করেন। আর বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে আমরা এই কাজ সম্পর্কে জানতাম না।’ অনুরূপভাবে মালিক, শাফি‘ঈ এবং আহমাদ কঠিনভাবে এ কাজের বিরোধিতা করেছেন।” [ওয়াফাউল ওফা, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২১৫]
·
৫. শাইখ মারা‘ঈ বিন ইউসুফ আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৩৩ হি.] বলেছেন,
أمَّا تَقبيلُ القبورِ والتمَسُّحُ بها، فهو بِدعةٌ باتِّفاق السَّلف؛ فيشَدَّدُ النكيرُ على مَن يفعل ذلك، ممَّن تَزيَّا بزيِّ أهل العِلم؛ خوفَ الافتِتان به، والاقتداءِ بفِعلِه.
“কবরে চুমো দেওয়া এবং তা স্পর্শ করা সালাফদের ঐক্যমত অনুযায়ী বিদ‘আত। ‘আলিমদের পোশাক পরিধান করে থাকে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যে এ কাজ করে, তাকে কঠিনভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যেন তার দ্বারা মানুষ ফিতনায় পতিত না হয় এবং তার কাজের অনুসরণ করা না হয়।” [শিফাউস সুদূর ফী যিয়ারাতিল মাশাহিদি ওয়াল কুবূর, পৃষ্ঠা: ৪২]
·
৬. ‘আল্লামাহ মু‘আল্লিমী আল-ইয়ামিনী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৮৬ হি.] বলেছেন,
عُلماءُ الأُمَّة سَلَفًا وخَلَفًا مُجمِعون على أنَّ التبرُّك بالقُبور، بالاستلامِ والتمسُّح والتقبيل ووضعِ العينينِ ونحوه؛ كلُّه مُحادَّةٌ للهِ ورسولِه، وخروجٌ عن سواءِ سَبيلِه؛ فالعلماء بين مُكفِّرٍ ومُفسِّق. ولا يصِحُّ قياسُ قبرِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وآله وسلَّمَ على آثارِه؛ لأنَّ القبورَ -ولا سيَّما قُبورُ الأنبياء والصالحين- مَظِنَّةُ افتِتان الناسِ وضلالِهم.
“উম্মতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ‘আলিমগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, কবরে চুমু দেওয়া, স্পর্শ করা এবং চোখ রাখা বা অনুরূপ কিছু করার মাধ্যমে বরকত কামনা করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ এবং তাঁর সঠিক পথ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শামিল।... আর নাবী ﷺ এর ব্যবহৃত দ্রব্যাদির অবশিষ্টাংশের ওপর তাঁর কবরকে কিয়াস করা ঠিক নয়। কেননা কবরগুলো—বিশেষত নাবী ও সৎ বান্দাদের কবরসমূহ—মানুষের ফিতনা ও ভ্রষ্টতায় পতিত হওয়ার সম্ভাব্য স্থান।” [আসারুশ শাইখ আল-মু‘আল্লিমী, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ২৫৫]
·
চার মাযহাবের অনুসারীদের নিকট থেকে যা বর্ণিত হয়েছে:
·
১. আবুল বাক্বা মুহাম্মদ আদ্ব-দ্বিয়া আল-মাক্কী আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৫৪ হি.] বলেছেন,
ليس مِن السُّنة أن يَمَسَّ الجدارَ أو يُقبِّلَه، بل الوقوفُ من البُعدِ أقرَبُ إلى الاحترامِ. ومن الآدابِ: ألَّا يَرفعَ صوتَه بالتسليم، ولا يَمسَّ القبرَ بيدِه، ولا يَقِفَ عندَ القبرِ طويلًا.
“(নাবী ﷺ এর কবরের) প্রাচীর স্পর্শ করা বা তাতে চুমু দেওয়া সুন্নাত নয়। বরং দূরে অবস্থান করাই তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অধিক নিকটবর্তী। এক্ষেত্রে আদব হলো—উচ্চৈঃস্বরে সালাম না দেওয়া, হাত দিয়ে কবর স্পর্শ না করা এবং দীর্ঘ সময় ধরে কবরের নিকট অবস্থান না করা।” [আল-বাহরুল ‘আমীক্ব ফী মানাসিকিল মু‘তামির ওয়াল হাজ্জি ইলা বাইতিল্লাহিল ‘আতীক্ব, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৯০০]
·
২. কুতবুদ্দীন আন-নাহরাওয়ানী আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৯৯০ হি.] বলেছেন,
ليس مِن السُّنَّةِ أن يمسَّ الجدار أو يقبِّلَه.
“(কবরের) প্রাচীর স্পর্শ করা এবং তাতে চুমু দেওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [তারীখুল মাদীনাহ, পৃষ্ঠা: ১৯২]
·
৩. মোল্লা ‘আলী ক্বারী আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০১৪ হি.] বলেছেন,
قوله: «ولا يَمسّ عند الزِّيارة الجِدارَ»، أي: لأنَّه خِلافُ الأدبِ في مقام الوقار، وكذا لا يُقَبِّله؛ لأنَّ الاستلامَ والقُبلةَ من خَواصِّ بعض أركانِ الكعبةِ.
“লেখকের কথা: ‘কবর জিয়ারতের সময় প্রাচীর স্পর্শ করবে না।’ অর্থাৎ, সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রাচীর স্পর্শ করা আদবের খেলাপ। অনুরূপভাবে কবরে চুমু দিবে না। কেননা স্পর্শ ও চুম্বন করা কাবাগৃহের কিছু বিশেষ খুঁটির (রুকন) জন্য নির্দিষ্ট।” [মানাসিকে মোল্লা ‘আলী ক্বারী, পৃষ্ঠা: ২৭৬]
·
৪. উসূলবিদ আবূ বাকর আত্ব-তুরতূশী আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫২০ হি.] বলেছেন,
ولا يَتمسَّح بقبرِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، ولا يَمْسَح كذلك المِنبرَ.
“নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ করবে না। অনুরূপভাবে তাঁর মিম্বারও স্পর্শ করবে না।” [আল-হাওয়াদিসু ওয়াল বিদা‘, পৃষ্ঠা: ১৫৬]
·
৫. আল-ফাক্বীহ ইবনুল হাজ্ব আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৩৭ হি.] বলেছেন,
فترَى مَن لا عِلمَ عنده يطوفُ بالقبرِ الشريفِ كما يطوفُ بالكعبةِ الحرامِ، ويتمسَّحُ به، ويُقَبِّله، ويُلقون عليه مَناديلَهم وثيابَهم؛ يَقصِدون به التبَرُّك، وذلك كلُّه من البِدعِ؛ لأنَّ التبركَ إنما يكون بالاتِّباعِ له عليه الصَّلاةُ والسَّلام، وما كان سَببُ عبادة الجاهلية للأصنام إلَّا مِن هذا الباب.
“তুমি দেখে থাকবে, মূর্খ ব্যক্তিরা এমনভাবে কবর শরীফকে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করে, যেভাবে তারা কাবাঘর তাওয়াফ করে থাকে। তারা কবর স্পর্শ করে, তাতে চুমু দেয়, তার ওপর নিজেদের রুমাল ও কাপড় নিক্ষেপ করে, আর এসবের মাধ্যমে তারা বরকত কামনা করে। এগুলোর সবই বিদ‘আত। কেননা বরকত অর্জিত হবে স্রেফ রাসূল ﷺ এর অনুসরণের মাধ্যমে। মূলত জাহেলী যুগে পৌত্তলিকতার কারণ এটাই ছিল।” [আল-মাদখাল, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৬৩]
·
৬. শাইখ খালীল আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭৬ হি.] বলেন,
ولْيَحذرْ ممَّا يفعلُه بعضُهم من طوافِه بقبره -عليه الصَّلاة والسَّلام- وكذلك أيضًا: تمسُّحهم بالبِناء، ويُلقون عليه مناديلَهم وثيابهم، وذلك كلُّه من البِدَع؛ لأنَّ التبركَ إنما يكون بالاتِّباع له -عليه الصلاة والسلام- وما كانتْ عِبادةُ الجاهلية الأصنامَ إلا مِن هذا الباب.
“তাদের কেউ কেউ নাবী ﷺ এর কবরকে তাওয়াফ করে, কবর স্পর্শ করে এবং তার ওপর নিজেদের রুমাল ও কাপড় নিক্ষেপ করে। এসব কাজ থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু এগুলোর সবই বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা বরকত অর্জিত হবে কেবল রাসূল ﷺ এর অনুসরণ করার মাধ্যমে। মূলত জাহেলী যুগে পৌত্তলিকতার কারণ এটাই ছিল।” [মানাসিকুল হাজ্জ, পৃষ্ঠা: ১৬৪]
·
৭. ইমাম গাযালী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫০৫ হি.] বলেছেন,
ليس مِن السُّنةِ أنْ يَمسَّ الجدارَ، ولا أن يُقَبِّله، بل الوقوفُ مِن بُعد أقربُ للاحترامِ.
“(নাবী ﷺ এর কবরের) প্রাচীর স্পর্শ করা বা তাতে চুমু দেওয়া সুন্নাত নয়। বরং দূরে অবস্থান করাই তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অধিক নিকটবর্তী।” [ইহইয়াউ ‘উলূমিদ দীন, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫৯]
·
৮. আল-ফাক্বীহ আবূ শামাহ আল-মাক্বদিসী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৬৫ হি.] মাসজিদে নাবাউয়ীতে জনসাধারণের বিদ‘আত প্রসঙ্গে আল-হুলাইমী থেকে বর্ণনা করেছেন,
عَن بعض أهل الْعلم أَنه نهى عَن الصاق الْبَطن وَالظّهْر بجدار الْقَبْر ومسحه بِالْيَدِ وَذكر أَن ذَلِك من الْبدع.
“তিনি (হুলাইমী) জনৈক ‘আলিম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কবরের প্রাচীরের সাথে পেট ও পিঠ লাগানো এবং তাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করা থেকে নিষেধ করেছেন। আর তিনি এটাকে বিদ‘আত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।” [আল বা‘ইস ‘আলা ইনকারিল বিদা‘ই ওয়াল হাওয়াদিস, পৃষ্ঠা: ৯৫]
·
৯. ইমাম নাবাউয়ী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
قالوا: ويُكرَهُ مسْحُه -أي: قَبْر النبيِّ- باليد وتقبيلُه، ....ولا يُغتَر بمخالفةِ كثيرين مِن العوامِّ وفعلِهم ذلك؛ فإنَّ الاقتداءَ والعملَ إنما يكونُ بالأحاديثِ الصحيحةِ وأقوالِ العلماء، ولا يُلتَفَت إلى مُحدَثاتِ العوامِّ وغيرِهم، وجَهالاتِهم، .... ومَن خطَر بباله أنَّ المسحَ باليدِ ونحوه أبلَغُ في البَركة؛ فهو من جَهالتِه وغفلتِه؛ لأنَّ البركةَ إنما هي فيما وافَقَ الشرعَ.
“তাঁরা (শাফি‘ঈ মাযহাবের ফাক্বীহগণ) বলেন, নাবী ﷺ এর কবরে হাত দিয়ে স্পর্শ করা এবং তাতে চুমু দেওয়া মাকরূহ। অসংখ্য আম (সাধারণ) মানুষ যে এ ব্যাপারে বিরোধিতা করেছে এবং এসব কাজে লিপ্ত হয়েছে, তাদের দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। কেননা অনুসরণ ও আমল হবে বিশুদ্ধ হাদীস এবং ‘উলামাদের কথার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে জনসাধারণের নবউদ্ভাবিত কাজ এবং মূর্খামির দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হবে না। যে ব্যক্তি মনে করে, হাত দিয়ে কবর স্পর্শ করা বা অনুরূপ কিছু করা বরকত লাভের অধিক নিকটবর্তী, তাহলে সেটা তার মূর্খামি এবং গাফিলতি। কেননা বরকত নিহিত রয়েছে কেবল শরিয়ত-সমর্থিত বিষয়ে।” [আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাজ্জাব, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৭৫]
·
১০. তাক্বীউদ্দীন আস-সুবকী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫৬ হি.] বলেছেন,
وإنَّما التمسُّحُ بالقبر وتقبيله، والسجودُ عليه، ونحو ذلك: فإنَّما يَفْعَلُه بَعضُ الجهال، ومَن فعَل ذلك يُنكَر عليه فِعلُه ذلك، ويُعَلَّم آدابَ الزِّيارة.
“কবর স্পর্শ করা, তাতে চুমু দেওয়া, কবরে সিজদা দেওয়া প্রভৃতি কাজ কিছু মূর্খ লোক করে থাকে।আর যে ব্যক্তি এ ধরনের কাজ করে, তার কাজের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাকে জিয়ারতের আদব শিক্ষা দিতে হবে।” [শিফাউস সিক্বাম ফী যিয়ারাতি খাইরিল আনাম, পৃষ্ঠা: ৩১২]
·
১১. আস-সুয়ূত্বী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৯১১ হি.] বলেছেন,
ومِن البِدع أيضًا: ... طوافُهم بالقبرِ الشريف، ولا يحلُّ ذلك، وكذلك إلصاقُهم بُطونَهم وظُهورَهم بجدارِ القَبر، وتقبيلُهم إيَّاه بالصُّندوق الذي عند رأسِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، ومسْحُه باليد؛ وكل ذلك مَنهيٌّ عنه.
“বিদ‘আতসমূহের মধ্যে আরেকটি হলো, কবর শরীফ তাওয়াফ করা। এটা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে নিজেদের পেট ও পিঠ কবরের প্রাচীরের সাথে লাগানো, রাসূল ﷺ এর মাথার নিকট অবস্থিত বাক্সে চুমা দেওয়া এবং তাতে হাত দিয়ে স্পর্শ করা বিদ‘আত। এগুলোর সবই নিষিদ্ধ কাজ।” [আল-আমরু বিল ইত্তিবা‘ ওয়ান নাহয়ু ‘আনিল ইবতিদা‘, পৃষ্ঠা: ১৮৫]
·
১২. আল-বুহুতী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৫১ হি.] বলেছেন,
لا يَمسَح قَبرَ النبي صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، ولا حائطَه، ولا يُلصق به صَدْرَه، ولا يُقَبِّله.
“নাবী ﷺ এর কবর ও কবরের পার্শ্ব স্পর্শ করবে না, তার সাথে স্বীয় বুক লাগাবে না এবং তাতে চুমু দিবে না।” [বুগইয়াতুন নাসিক ফী আহকামিল মানাসিক, পৃষ্ঠা: ১২৭]
·
১৩. ইতিহাসবিদ শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গাজী আল-মাক্কী আল-হানাফী [মৃত: ১৩৬৫ হি.] বলেছেন,
فتوى لعُلماء المدينةِ وقَّع عليها مُفتو المذاهب الأربعة آنذاك، جاء فيها: (وأمَّا التوجُّهُ إلى حُجرة النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ عند الدُّعاء؛ فالأولى منْعُه، كما هو معروفٌ من مُعتَبرات كتُبِ المذهب، ولأنَّ أفضلَ الجِهات جِهةُ القِبلة، وأمَّا الطوافُ بها والتمسُّحُ بها وتَقبيلُها، فهو ممنوعٌ مُطلقًا). توقيع: (إبراهيم بري مفتي الحنفية، ومحمد صادق العقبى مفتي المالكية، وزكي برزنجي مفتي الشافعية، وحميد بن الطيب مفتي الحنابلة، وأكثر من عشرة من علماء المدينة المنورة.
“মদিনার ‘আলিমগণের একটি ফাতওয়া আছে, যে ফাতওয়া’য় সে সময়ের চার মাযহাবের মুফতিগণ স্বাক্ষর করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, দু‘আর সময় নাবী ﷺ এর ঘরের দিকে মুখ করা থেকে বিরত থাকাই অধিক গ্রহণযোগ্য মত। যেমনটি বিভিন্ন মাযহাবের গ্রহণযোগ্য বইপুস্তকে সুপ্রসিদ্ধ। কেননা সর্বোত্তম দিক হলো কেবলার দিক। পক্ষান্তরে তা (নাবী’র ﷺ হুজরা) তাওয়াফ করা, স্পর্শ করা এবং তাতে চুমু দেওয়া নিঃশর্তভাবে নিষিদ্ধ। এই ফাতওয়া’য় স্বাক্ষর করেছেন—হানাফীদের মুফতি ইবরাহীম বারী, মালিকীদের মুফতি মুহাম্মাদ সাদিক্ব আল-‘উক্ববা, শাফি‘ঈদের মুফতি যাকী বারযানজী, হাম্বালীদের মুফতি হাদীদ বিন ত্বাইয়্যিব। এছাড়াও মদিনার আরও দশাধিক ‘আলিম উক্ত ফাতওয়া’য় স্বাক্ষর করেছেন।” [ইফাদাতুল আনাম, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৩৫]
·
‘এটি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কর্ম’—এ মর্মে যা বর্ণিত হয়েছে:
·
১. আল-গাযালী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫০৫ হি.] বলেছেন,
فإنَّ المسَّ والتقبيلَ للمَشاهِدِ: عادةُ اليهود والنَّصارى.
“পবিত্র স্থানসমূহ স্পর্শ করা এবং তাতে চুম্বন করা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের স্বভাব।” [ইহইয়াউ ‘উলূমিদ দীন, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭১]
·
২. ‘আব্দুল ক্বাদির জিলানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫৬১ হি.] বলেছেন,
وإذا زار قبرًا لا يَضَع يدَه عليه، ولا يُقَبِّله؛ فإنَّها عادةُ اليهود.
“যখন সে কবর জিয়ারত করবে, তখন কবরের ওপর স্বীয় হাত রাখবে না এবং তাতে চুমু দিবে না। কেননা এটি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের স্বভাব।” [গুনইয়াতুত তালিবীন, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯১]
·
৩. ‘আব্দুর রাহমান আল-‘ইমাদী আন-নাক্বশাবান্দী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১০৫১ হি.] বলেছেন,
يَتجنَّبُ مَسَّ الشِّباك ومسْحَه بيدِه ثُم المسْح على وجْهِه للتبرُّك؛ فإنَّ ذلك من عادة أهلِ الكِتاب، ولم يُنقَل ذلك عن أحدٍ من الأئمَّة المجتهدين، ولا مِن العلماء المعتَمَدين.
“বরকত লাভের আশায় জানালা স্পর্শ করা এবং হাত দিয়ে তা স্পর্শ করে মুখ মাসেহ করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটি আহলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিষ্টান) সম্প্রদায়ের একটি স্বভাব। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং নির্ভরযোগ্য ‘আলিমদের কারও নিকট থেকে এমন কাজের বর্ণনা উল্লিখিত হয়নি।” [আল-মুসতাত্বা‘উ মিনায যাদ লি আফক্বারিল ‘ইবাদ, পৃষ্ঠা: ১৮]
·
৪. আহমাদ আত্ব-ত্বাহত্বাউয়ী আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৩১ হি.] বলেছেন,
ولا يَمسَّ القبرَ، ولا يُقَبِّله؛ فإنَّه مِن عادةِ أهل الكتاب، ولم يُعهَدِ الاستلامُ إلَّا للحَجَرِ الأسود، والركْنِ اليَماني خاصةً.
“কবর স্পর্শ করবে না এবং তাতে চুমু দিবে না। কেননা এটা আহলে কিতাবদের স্বভাব। নির্দিষ্টভাবে কেবল হাজারে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ বা চুম্বন করার ব্যাপারে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।” [হাশিয়াতুত্ব ত্বাহত্বাউয়ী ‘আলা মারাক্বীল ফালাহ শারহু নূরিল ঈদ্বাহ, পৃষ্ঠা: ৬২০]
·
২য় মাসআলাহ:
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ ও চুম্বন করা জায়েজ বলেছেন—মর্মে তাঁর দিকে সম্পৃক্ত কথাটি বিরল হওয়ার বর্ণনা।
·
“আল-‘ইলাল ওয়া মা‘রিফাতুর রিজাল” গ্রন্থে (খ. ২; পৃ. ৪৯২) উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম আহমাদের ছেলে ‘আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা আহমাদকে জিজ্ঞেস করেন,
الرَّجُلُ يمسُّ منبرَ النبي صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ ويتبرُّك بمَسِّه ويُقَبِّله، ويَفعَلُ بالقبرِ مِثلَ ذلك، أو نَحوَ هذا؛ يُريدُ بذلك التقرُّبَ إلى الله جلَّ وعزَّ؟ فقال: لا بأسَ بذلك.
“এক ব্যক্তি নাবী ﷺ এর মিম্বার স্পর্শ করে, স্পর্শ করার মাধ্যমে বরকত কামনা করে, তা চুম্বন করে এবং তাঁর কবরের সাথেও অনুরূপ কাজ করে; আর সে এ কাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ’র নৈকট্য লাভের আশা করে। তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেন, ‘এতে কোনো সমস্যা নেই’।”
এই উদ্ধৃতি উল্লিখিত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। এটি উক্ত কিতাবে বর্ণিত হওয়ার ব্যাপারে কেউ সন্দিহান নয়। কিন্তু এই বর্ণনা চারটি দিক থেকে বিরল এবং প্রত্যাখ্যাত। এসব দিকের মধ্যে এটি নেই যে, ইমাম আহমাদ নাবী ﷺ এর কবরের মাধ্যমে বরকত কামনা করার মাসআলাহ সূক্ষ্মভাবে গবেষণা করেননি। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে এ কথা বলার স্পর্ধা দেখাবে না। আহমাদ হলেন আহলুস সুন্নাহ’র ইমাম। ‘তিনি বরকত লাভের মাসআলাহ ভালোভাবে গবেষণা করেননি’—এ কথা বলার অনেক ঊর্ধ্বে রয়েছেন তিনি।
·
প্রথম দিক:
ইমাম আহমাদের ছেলে ব্যতীত তাঁর অন্য ছাত্ররা আলোচ্য উদ্ধৃতির বিপরীত বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন আবূ বকর আল-আসরাম। তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ ছাত্রদের একজন। তিনি বলেছেন,
قلتُ لأبي عبد اللهِ: قَبرُ النبيِّ -صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ- يُمسُّ ويُتمسَّحُ به؟ فقال: ما أعرِفُ هذا. قلتُ له: فالمنبرُ؟ قال: أمَّا المنبرُ(أي: قبل احتراقه) فنَعَمْ؛ قد جاء فيه. قيل لأبي عبدِ الله: إنَّهم يُلصِقون بُطونَهم بجدارِ القَبر! وقيل له: رأيتَ مِن أهلِ العِلمِ مِن أهل المدينةِ لا يَمَسُّون ويقومون ناحيةً فيُسَلِّمون؟ قال أبو عبدِ الله -رحمه الله-: نعم، وهكذا كان ابنُ عُمَرَ يَفعَلُ.
“আমি আবূ ‘আব্দুল্লাহকে (ইমাম আহমাদকে) বললাম, ‘নাবী ﷺ এর কবর কি স্পর্শ করা যাবে এবং তা দিয়ে কি শরীর মাসেহ করা যাবে?’ তিনি বলেন, ‘(সালাফদের কেউ এমনটি করেছেন বলে) আমি জানি না।’ আমি তাঁকে বললাম, ‘মিম্বারের বিধান কী হবে?’ তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, মিম্বারের ব্যাপারে আমল উল্লিখিত হয়েছে (অর্থাৎ, তা পুড়িয়ে ফেলার পূর্বে)’। আবূ ‘আব্দুল্লাহকে বলা হয়, ‘তারা তাদের পেটকে কবরের প্রাচীরের সাথে লাগায়!’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনি কি মদিনার এমন ‘আলিমদের দেখেছেন, যাঁরা কবর স্পর্শ না করে একপাশে দাঁড়াতেন এবং অভিবাদন জানাতেন?” আবূ ‘আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ; ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এমনটি করতেন’।” [আল-মুগনী, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪৭৯]
এমনকি আবুল ফাদ্বল সালিহ তাঁর পিতা ইমাম আহমাদ থেকে স্বীয় ভাইয়ের বর্ণনাকৃত ঘটনার বিপরীত কথা বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি মদিনায় প্রবেশ করবে, তার ব্যাপারে তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেছেন,
ولا يَمسّ الحائطَ، ويَضَع يدَه على الرُّمَّانة والموضِعِ الذي جَلَس فيه النبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، ولا يُقَبِّل الحائطَ.
“সে যেন (কবরের) প্রাচীর স্পর্শ না করে, তার হাতকে রাসূল ﷺ এর বসার স্থানে না রাখে এবং প্রাচীরে চুম্বন না করে।” [মাসাইলুল ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল, রিওয়াইয়াতু ইবনিহি আবিল ফাদ্বল সালিহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬১]
·
দ্বিতীয় দিক:
‘আব্দুল্লাহ নিজেই তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর পিতা সুফইয়ান বিন ‘উয়াইনাহকে এই কাজ করা থেকে নিষেধ করতে শুনেছেন। আর তিনি তাঁর বিরোধিতা করেননি। ‘আব্দুল্লাহ বলেছেন,
حدثني أبي قال: سمعت أبا زيد حماد بن دليل قال لسفيان بن عيينة: كان أحد يتمسح بالقبر؟ قال: لا، ولا يلتزم القبر.
“আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি শুনেছি, আবূ যাইদ হাম্মাদ বিন দালীল—ইমাম সুফইয়ান বিন উয়াইনাহকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘(সালাফদের) কেউ কি কবর স্পর্শ করতেন?’ তিনি বলেন, ‘না, কেউ কবর স্পর্শ করতেন না’।” [আর-রাদ্দু ‘আলাল ইখনাঈ, পৃষ্ঠা: ৪১৬]
·
তৃতীয় দিক:
ইমাম আহমাদ হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়া কাবাগৃহের কোনো রুকন স্পর্শ করা জায়েজ মনে করতেন না। তিনি কুরঅানের মুসহাফ (পাণ্ডুলিপি) চুম্বনের হুকুম কী হবে, সে ব্যাপারেই তাওয়াক্বকুফ (স্থগিত হওয়া, হুকুম না দেওয়া) অবলম্বন করেছেন। অথচ এই মুসহাফের মধ্যে বিশ্ব পালনকর্তার বাণী রয়েছে! তাহলে তিনি কীভাবে কবর স্পর্শ করা এবং তাতে চুম্বন করা জায়েজ মনে করতে পারেন?!
ইসহাক্ব বিন মানসূর আল-কূসাজ ইমাম আহমাদকে প্রশ্ন করে বলেন,
قلتُ: يستلمُ الأركانَ كُلَّها؟ قال: لا، إلَّا اليماني والحَجَر.
“আমি বললাম, ‘মুসলিম কি সকল রুকন স্পর্শ এবং চুম্বন করবে?’ তিনি বললেন, ‘না, কেবল রুকনে ইয়ামিনী এবং হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করবে’।” [মাসাইলুল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ওয়া ইসহাক বিন রাহওয়াইহ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২৩২৮]
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
سُئِل أحمدُ عن تقبيله -يعني المصحفَ- فقال: ما سمعتُ فيه شيئًا.
“আহমাদকে কুরআনের মুসহাফ চুম্বন করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই শুনিনি’।” [মুখতাসারুল ফাতাওয়া আল-মিসরিয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ২৬৫]
·
চতুর্থ দিক:
ইমাম আহমাদের মাযহাবের অনুসারীরা কবর স্পর্শ করা এবং তাতে চুম্বন করা থেকে বারণ করেন। তাঁর মাযহাব সম্পর্কে মানুষদের মধ্যে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি জানেন। তাঁর মতের বিরুদ্ধে একমত হওয়া তো দূরের কথা, তাঁরা তাঁর বিরোধিতা করেন না বললেই চলে। তাঁরা তাঁর বর্ণনা সম্পর্কে মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবগত। কিন্তু তুমি ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমদের বর্ণনাটি তাঁদের কিতাবে পাবে না বললেই চলে।
·
১. ইবনু কুদামাহ আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
ولا يُستحَبُّ التمسحُ بحائطِ قبرِ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ ولا تَقبيلُه، قال أحمد: ما أعرفُ هذا؛ قال الأثرمُ: رأيتُ أهلَ العِلمِ مِن أهل المدينةِ لا يَمسُّون قبرَ النبي صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ.
“নাবী ﷺ এর কবরের প্রাচীর স্পর্শ করা এবং তাতে চুমু দেওয়া মুস্তাহাব (পছন্দনীয় আমল) নয়। আহমাদ বলেছেন, ‘এ সম্পর্কে আমি জানি না।’ আসরাম বলেছেন, ‘আমি মদিনার ‘আলিমদের দেখেছি, তাঁরা নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ করতেন না’।” [আল-মুগনী, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ৪৬৮]
·
২. আল-মারদাউয়ী হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
لا يُستحَبُّ تمسحُه بقبرِه -عليه أفضلُ الصَّلاةِ والسَّلام- على الصَّحيحِ من المذهبِ. قال في المستوعب: بل يُكرَهُ. قال الإمامُ أحمد: أهلُ العِلم كانوا لا يَمسُّونه.
“বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নাবী ﷺ এর কবর স্পর্শ করা মুস্তাহাব নয়। “মুস্তাও‘আব” গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘বরং এটি মাকরূহ।’ ইমাম আহমাদ বলেছেন, ‘আলিমগণ কবর স্পর্শ করতেন না।” [আল-ইনসাফ ফী মা‘রিফাতির রাজিহি মিনাল খিলাফ, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৫৩]
·
৩. আল-হাজ্জাউয়ী হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
ولا يَتمَسَّحُ ولا يَمسُّ قَبرَ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، ولا حائطَه، ولا يُلصِق به صَدْرَه، ولا يُقَبِّله.
“নাবী ﷺ এর কবর ও তার প্রাচীর স্পর্শ করবে না, তার সাথে নিজের বুক লাগাবে না এবং তাতে চুম্বন করবে না।” [আল-ইক্বনা‘ ফী ফিক্বহিল ইমাম আহমাদ, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৬৯]
দ্রষ্টব্য: ইবনু মুফলিহ প্রণীত “আল-মুবদি‘ ফী শারহিল মুক্বনি‘” (খ. ২; পৃ. ২৩৭) এবং বুহুতী প্রণীত “কাশফুল কান্না‘” (খ. ২; পৃ. ৫১৭)।
·
আমি (প্রাবন্ধিক) বলছি, হাম্বালী মাযহাবের শায (অপ্রচলিত, বিরল) ফাতওয়া অনুযায়ী এটি জায়েজ। কিন্তু ফাতওয়া গৃহীত হবে মাযহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলি থেকে।
যে হাম্বালী মাযহাবকে ভালোভাবে পরখ করেছে, সে অবগত হয়েছে যে, উপরিউক্ত ইমামগণ অত্র মাযহাবের ইমামদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। তাঁরা এই মাযহাবের গবেষক, পরিমার্জক এবং পরিশোধক। তাঁরা ইমাম আহমাদের বিভিন্ন বর্ণনা এবং সেসবের মধ্যে অগ্রাধিকার প্রদানের (তারজীহের) ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অবগত।
এই মাযহাবের ইমামগণের উক্ত বর্ণনা পরিহার করা প্রমাণ করে যে, তাঁরা এই বর্ণনাকে শায ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। তাঁরা মাযহাবটির কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। তাই তাঁরাই তাঁদের ইমামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবগত। সুতরাং একজন ত্বালিবে ‘ইলমের উচিত, সে যখন কোনো ইমামের একটি বর্ণনা দেখবে, যা তাঁর অন্য বর্ণনাগুলোর বিপরীত, তখন সে ওই বর্ণনাটি গোপন করবে, তা বর্ণনা করবে না।
সে তাঁর মুতাশাবিহ (অস্পষ্ট) বর্ণনাকে মুহকাম (স্পষ্ট) বর্ণনার দিকে ফিরিয়ে দিবে। যখন সে এরকম কিছু পাবে, তখন সংশ্লিষ্ট শায বর্ণনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করবে। এই কাজে একদিকে যেমন ইমামগণের মর্যাদা রক্ষিত হয়, অপরদিকে বিভ্রান্তি ও বক্রতা থেকে মুসলিমদের ‘আক্বীদাহকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য শরিয়ত ও তাওহীদ সুরক্ষিত হয়।
আমি আল্লাহ’র অনুগ্রহ এবং মহত্ত্বের সাথে সাথে তাঁর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের ও সকল মুসলিমদের নিকট সত্যকে সত্য হিসেবে দেখান, এবং তা অনুসরণ করার তাওফীক্ব দেন, আর আমাদের নিকট বাতিলকে বাতিল হিসেবে দেখান এবং তা বর্জন করার তাওফীক্ব দেন।
·
তথ্যসূত্র:
·
অনুবাদক: ‘আব্দুর রহমান মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...