Wednesday 11 March 2015

অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি ইসলামের উদারতা





অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি ইসলামের উদারতা

একটি মুসলিম দেশে ইসলাম মুসলিমকে শুধু অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতেই বলে না, রাষ্ট্রে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ-সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহয় একাধিক স্থানে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার তুলে ধরা হয়েছে। অমুসলিমরা নিজ নিজ উপাসনালয়ে উপাসনা করবেন। নিজ ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মালয়কে সুরক্ষিত রাখবেন। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তারা সমান। তাদের প্রতি কোনো প্রকার বৈষম্য ইসলাম বরদাশত করে না। যেসব অমুসলিমের সঙ্গে কোনো সংঘাত নেই, যারা শান্তিপূর্ণভাবে মুসলিমদের সঙ্গে বসবাস করেন তাদের প্রতি বৈষম্য দেখানো নয়; ইনসাফ করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ لَّا يَنۡهَىٰكُمُ ٱللَّهُ عَنِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يُقَٰتِلُوكُمۡ فِي ٱلدِّينِ وَلَمۡ يُخۡرِجُوكُم مِّن دِيَٰرِكُمۡ أَن تَبَرُّوهُمۡ وَتُقۡسِطُوٓاْ إِلَيۡهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ ٨ ﴾ [الممتحنة: ٨] 

‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। {সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮}
আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে নির্দেশ দিয়েছেন পরমতসহিঞ্চুতা ও পরধর্মের বা মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে। আল্লাহ ইরশাদ করেন,

﴿ وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٖۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمۡ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرۡجِعُهُمۡ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٠٨ ﴾ [الانعام: ١٠٨] 

‘তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’। {সূরা আল আন‘আম, আয়াত : ১০৮}

ইসলামের কিছু আলোচিত বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য বিভ্রান্তি




بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله و الصلاة و السلام على رسول الله و على آله و صحبه.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আর সালাত ও সালাম শ্রেষ্ঠ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি এবং শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের প্রতি ।
অতঃপর:
আমার নিকট পাশ্চাত্য রাষ্ট্রসমূহের একটি ইসলামিক সেন্টার থেকে কতগুলো প্রশ্ন এসে পৌঁছলো, যেগুলোর পেছনে উস্কানি দিয়েছে “আল-আবা আল-বীদ” তথা ‘হোয়াইট ফাদার্স’ নামক কট্টরপন্থী খ্রিষ্টান মিশনারি সংগঠন; আর যখন আমি এগুলোর ব্যাপারে জানতে পারলাম, তখন আমি সেগুলোর জওয়াব না দিয়ে পারলাম না।
আর প্রশ্নসমূহের ধরন-প্রকৃতি এবং যুবক ও অন্যান্যদের মাঝে ইসলামী দিক-নির্দেশনা যেভাবে চলছে সে প্রেক্ষাপটে উক্ত প্রশ্নমালার ছত্রে ছত্রে যা পাঠিত হচ্ছে তা বিবেচনা করে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া ব্যতীত আমার গত্যন্তর ছিল না। তাছাড়া এ প্রশ্নগুলো ও অনুরূপ কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পেছনে খৃষ্টান গির্জার যে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে তা অস্পষ্ট নয়। এগুলো মূলতঃ এমন কিছু ধারাবাহিক পর্ব যা নিরবচ্ছিন্নভাবে পূর্ব থেকেই চলে আসছে তা ইতিহাসের প্রতিটি পাঠকই সহজে বুঝতে পারে। বিশেষ করে যারা খৃষ্টানদের বিভিন্ন আন্দোলন, তাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা সমন্বিতকরণ, সার্বিক পর্যায়ে তাদের আক্রমানাত্মক যাবতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল।
অতঃপর আমি এই ব্যাপারে মহান আরশের মালিক দয়াময় আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছি; আল্লাহর দীনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য, ইসলামের অনুসারীদের আত্মসম্মানের জন্য এবং আল্লাহ চায় তো ভাষা ও কলমের মাধ্যমে সংগ্রাম করার জন্য।
প্রশ্নসমূহে উপস্থাপিত ইস্যুগুলো নিম্নোক্ত প্রধান শিরোনাম অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা যায়:
—      সাম্য বা সমানাধিকার;
—      স্বাধীনতা (ধর্মীয় স্বাধীনতা — দাসপ্রথা);
—      নারী;
—      শরী‘আত বাস্তবায়ন;
—      জিহাদ।


ভূমিকা:
১.
এই প্রশ্নগুলোর জন্ম বর্তমান সময়ে হয়নি; বরং এগুলো হল কতগুলো প্রশ্ন এবং সন্দেহ-সংশয়, যা ইসলামের উপর আঘাত হানার মতই পুরাতন।
আর যিনি এসব প্রশ্ন এবং অনুরূপ আরো যা কিছু এখানে বর্ণিত হয়েছে তার ব্যাপারে অবগত আছেন, তিনি জানেন যে, বিভিন্ন যুগে ও নানা উদ্দেশ্যে এসব প্রশ্ন প্রণয়নকারীগণ সেগুলোর জবাব পাওয়ার উদ্দেশ্যে তা করে নি এবং সত্যের অনুসন্ধান করাটাও তাদের লক্ষ্য ছিল না; বরং তারা সমাজের অভ্যন্তরে ও তার চিন্তা-গবেষণার ময়দানকে উত্তপ্ত করার উদ্দেশ্যে একটা বড় ধরনের শোরগোলের মধ্যে এসব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। অতঃপর সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়েছে এবং তাদের আঙুলসমূহ তাদের কর্ণকুহরে ঢুকিয়ে দিয়েছে এ আশঙ্কায় যে, তারা এসব প্রশ্নের সুষ্ঠু জবাব শ্রবণ করবে অথবা পেয়ে যাবে; সুতরাং মনে হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য হল প্রচণ্ড ভিড়ের ময়দানে কতগুলো টাইম বোমা নিক্ষেপ করা, অতঃপর তা বিস্ফোরিত হয়ে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই দ্রুত সেখান থেকে পলায়ন করা।

পর্নোগ্রাফী দেখলে মস্তিষ্ক যেভাবে বদলে যায়




পর্নোগ্রাফী দেখলে মস্তিষ্ক যেভাবে বদলে যায়

স্নায়ুবিজ্ঞান (Neuroscience) এখন স্বীকার করে যে, মানুষের মস্তিষ্ক অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতা লাভের মধ্যদিয়ে মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে এবং আমরা যা দেখি, শুনি বা জানি, তার সবকিছুর সাথেই মস্তিষ্কের সংযোগ গড়ে ওঠে। দর্শন ক্লাসের আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন কোনো শহরের পথঘাট চেনা, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থেকে কোনো গান শোনা কিংবা টিভি দেখা — আমাদের প্রতিটি কাজের সাথেই মস্তিষ্কের তাৎক্ষনিক সংযোগ গড়ে ওঠে এবং মানুষ হিসেবে আমরা কে, কেমন, এই সংযোগগুলোই সেটা নির্ধারণ করে দেয়। পর্নোগ্রাফী দেখা একটি নীরব অথচ ভয়ঙ্কর সমস্যা যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে নারীদের চাইতে পুরুষরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এই বিষয়টির ক্ষতিকারক দিক সংক্রান্ত অধিকাংশ নিবন্ধগুলোতে বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক এবং/অথবা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়। তবে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নোগ্রাফী দেখার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্পর্কে আলোপাত করা হবে।

প্রচলিত যে মডেলটির (model) মাধ্যমে মানুষের শেখা এবং মনে রাখার প্রক্রিয়াটিকে ব্যাখ্যা করা হয়, সেই মডেলটির ভিত্তি হলো সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি (synaptic plasticity)। সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি হলো মস্তিষ্কের সেই ক্ষমতা যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতায় সাড়া দিতে মস্তিষ্ক তার নিউরনসমূহের (মস্তিষ্ক কোষ) মধ্যকার সংযোগগুলোর শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কি পরিমাণ এবং কোন ধরণের স্নায়বিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং সেইসাথে কি পরিমাণ নিউরোট্রান্সমিটারের (neurotransmitter – আনবিক গঠন সম্পন্ন স্নায়বিক সংবাহক) নির্গমন ঘটবে, তা নিয়ন্ত্রণ করাও এই ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ মানুষ ডোপামিন সম্পর্কে যা কিছু জানে তা বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি যেমন, মুহাম্মাদ আলি বা মাইকেল জে. ফক্সের পারকিন্‌সন্‌ (Parkinson) রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থেকে। শরীরে ডোপামিনের কার্যকারিতায় ত্রুটি দেখা দিলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

ইসলামে দাস বিধি




ইসলামে দাস বিধি

بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জনগণ ও রষ্ট্রের সংশোধন ও সংস্কারের জন্য শরী‘য়ত অবতীর্ণ করেছেন; সালাত ও সালাম তাঁর উপর, যিনি মানুষকে যুলুম ও দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন; শান্তি বর্ষিত হউক তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবী ও তাবে‘য়ীগণের উপর, যাঁরা যমীনে আল্লাহর একত্ববাদ, স্বাধীনতা ও জ্ঞানের নীতিমালা প্রচার করেছেন; তাঁদের প্রতিও শান্তি বর্ষিত হউক, যাঁরা কিয়মতের দিবস পর্যন্ত তাঁদের দা‘ওয়াত দ্বারা অন্যকে দা‘ওয়াত দান করেন এবং তাঁদের পথনির্দেশের দ্বারা যথাযথভাবে হেদায়েত লাভ করেন।

অতঃপর:
আমার ‘কিসসাতুল হিদায়াত’ [হিদায়াতের কাহিনী] নামক গ্রন্থটিতে কতগুলো মূল্যবান বক্তৃতা ( Lecture ) ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ... পাঠক সে হিদায়াতের কাহিনী গ্রন্থের তার প্রাসঙ্গিক স্থানে তা পাবে।
অতঃপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি আলোচনাগুলো একটার পর একটা বের করে আনব, অতঃপর তার মধ্যে যা কিছু আছে তা দেখব; অতঃপর যখন আলোচনাটিতে কোনো কিছু বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে, তখন আমি তাতে বৃদ্ধি করব; আর যখন ঐখানে কোনো কিছু কাটছাট করা জরুরি মনে করব, তখন তা কাটছাট করবে ... শেষ পর্যন্ত যখন আমি তার পরিমার্জন ও পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ করব, তখন আমি বক্তব্য বা আলোচনাটি ‘বাহুসুন ইসলামীয়াতুন হাম্মাহ’ ( بحوث إسلامية هامة ) [গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আলোচনা] নামক সিরিজের অন্তর্ভুক্ত করব; আশা করা যায় “সিরিজ” -এর পাঠকগণ এসব বক্তৃতা ও আলোচনা থেকে উপকৃত হবেন এবং আরও আশা করা যায় যে, তারা এসবের মধ্যে এমন অনেক প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে যাবেন, যেগুলো ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে করা হয়ে থাকে। আর তা ইসলামের শত্রুদের অকপট সাক্ষ্যের মাধ্যমেই সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়ে যাবে।
আর এসব বক্তৃতাসমূহ (Lecturers) থেকে তার প্রাসঙ্গিক স্থানে দেওয়া আমার বক্তব্যের মধ্যে অন্যতম একটি বক্তৃতা হলো “আর-রিক্বু ফিল ইসলাম” (الرق في الإسلام) [ইসলামে দাস]; যে বক্তৃতাটি তার যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল যখন আবুল ফাতহ এর মত ব্যক্তিত্বদের উত্থান ঘটেছিল।
আমার পাঠক ভাই! অবশ্যই আপনি “দাস” প্রবন্ধের আলোচনায় “দাস-প্রথা” কে কেন্দ্র করে ইসলামের শত্রুগণ কর্তৃক উত্থাপিত প্রত্যেকটি প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে যাবেন অকাট্য দলীল, গ্রহণযোগ্য কারণ এবং সুন্দর ও আকর্ষণীয় উপস্থাপনার মাধ্যমে।
আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন মুসলিম যুবকদেরকে সুপথ ও সঠিক বুঝ দান দান করেন, তাদেরকে ঈমান ও জিহাদের উষ্ণতার দ্বারা দা‘ওয়াতিমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে ধাবিত করেন ... এবং এই উম্মতের প্রতি সম্মান, শক্তি ও জাগরণের উপায়সমূহ নির্দেশ করেন ... যাতে আমরা আমাদের নিজ চোখে ইসলামের পতাকাকে উড্ডীন অবস্থায় এবং মুসলিমগণের রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত অবস্থায় দেখতে পারি ... আর এটা আল্লাহর জন্য কঠিন বা কষ্টকর কোনো কাজ নয়।

Tuesday 10 March 2015

আশুরা : আনন্দ না শোক দিবস?




আশুরা : আনন্দ না শোক দিবস?

আমাদের সম্মুখে উপস্থিত পবিত্র মাস মুহাররম। এ মাসে এমন একটি দিবস রয়েছে যাকে মানুষ বিভিন্নভাবে উদযাপন করে। সেটি হলো আশুরা দিবস। এদিন দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে যে কারণে এ দিবসের আমলে ভিন্নতা দেখা যায়। 

প্রথম ঘটনা :

গোত্রসহ মুসা আলাইহিস সালামের পরিত্রাণ ও সদলবলে ফেরাউনের পতন :
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুমার উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন, 
لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ وَجَدَ اليَهُودَ يَصُومُونَ عَاشُورَاءَ، فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ، فَقَالُوا: هَذَا اليَوْمُ الَّذِي أَظْفَرَ اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَبَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ، وَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ، ثُمَّ أَمَرَ بِصَوْمِهِ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করে দেখলেন স্থানীয় ইহুদীরা আশুরা দিবসে রোযা পালন করছে। ফলে তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো। তারা উত্তর দিল এ এমন এক দিবস যাতে আল্লাহ তা‘আলা মুসা আলাইহিস সালামকে বিজয়ী করেছিলেন এবং বানী ইসরাঈলকে ফেরাউনের ওপর আধিপত্য দান করেছেন। এ দিনে সম্মানার্থে আমরা সিয়াম পালন করি। এতদশ্রবণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘তাহলে তো এ দিন রোযা রাখার ব্যাপারে আমরাই অধিক হকদার। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিবসে রোযা রোযা পালনের নির্দেশ দেন। (বুখারী : ৩৯৪৩; মুসলিম : ১১৩০)

দ্বিতীয় ঘটনা : 

নবী দৌহিত্র হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুর শাহাদাত বরণ: 
ইরাকের কারবালা প্রান্তরে মর্মবিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছিল ৬১ হিজরির পবিত্র জুমাবারে।[আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ১১/৫৬৯] এটি ছিল উম্মতের ওপর নেমে আসা সবচে বড় বিপদগুলোর একটি।
আল্লামা ইবনু তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘হুসাইনের রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু শাহাদতের ঘটনাটি মহা বিপদগুলোর একটি। কারণ, হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু এবং তাঁর আগে উসমান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু-এর শহীদ হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই পরবর্তীতে উম্মতের ওপর নেমে এসেছে অনেক মহা দুর্যোগ। আর তাঁদের শহীদ করেছে আল্লাহর নিকৃষ্ট বান্দারা। [মাজমু‘ ফাতাওয়া ৩/৪১১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিন রোযা রাখতে বলেছেন, মুসা আলাইহিস সালামের মুক্তি ও ফেরাউনের ভরাডুবির শুকরিয়া হিসেবে। এ রোযার সঙ্গে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুর শাহাদতের কোনো সম্পর্ক নেই। এ দিবস সম্পর্কে শুদ্ধ-অশুদ্ধ অনেক হাদীস বর্ণনা করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর মাহাত্ম্য রোযা পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর আশুরার ব্যাপারে এটিই মধ্যমপন্থী এবং সঠিকতম দৃষ্টিভঙ্গি। [দেখুন, লাতায়েফে মাআরেফ : ১০২-১১৩]

মুহররম মাসে শিয়া সম্প্রদায়ের মাতম বিষয়ক বিদ’আত




(পর্ব : ১)


মুহররম মাসে রাফিযী[১] সম্প্রদায়ের শোক প্রকাশে বিদয়াতি কাণ্ড

মুহররম মাসের দশম দিবস, যে দিবস আশুরা নামে পরিচিত, আল্লাহ তা-আলা হুসাইন বিন আলী বিন আবুতালিব - রাদিয়াল্লাহু আনহুমা- কে শহীদের মর্যাদা দান করেছিলেন. এটা হয়েছিল হিজরি ৬১ সনে . শহীদ হওয়া ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে তার উঁচু সম্মান ও মর্যাদার বিষয়, কারণ তিনি এবং তার ভাই হাসান জান্নাতি যুবকদের নেতা. সুউচ্চ মাকাম- সম্মান অর্জিত হয় পরীক্ষা দ্বারা. নবী ―সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ―প্রশ্ন করা হয়েছিল―
أي الناس أشد بلاء؟ فقال : الأنبياء ثم الصالحون ثم الأمثل فالأمثل، يبتلى الرجل على حسب دينه، فإن كان في دينه صلابة زيد في بلائه، وإن كان في دينه رقة خفف عنه، ولا يزال البلاء بالمؤمن حتى يمشي على الأرض وليس عليه خطيئة.( رواه أحمد:১৪০০)
সবচে' বেশি পরীক্ষা কোন মানুষের? বললেন― ' নবীগণের, তারপর সৎকর্মশীলদের, তারপর যারা উৎকৃষ্ট তাদের এবং এভাবেই. ব্যক্তিকে তার ধর্মের উপর দৃঢ়তানুযায়ী পরীক্ষা করা হয়, যদি সে তার ধর্মে অবিচল থাকে তার পরীক্ষা কঠিন হয়, আর যদি সে ধর্মের বিষয়ে নমনীয় হয় পরীক্ষা ও হয় তুলনামূলক সহজ, আর মুমিনের উপর পরীক্ষা, নির্যাতন চলতেই থাকবে এরই মাঝে এমন এক সময় আসবে, সে জমিনে বিচরণ করছে, অথচ তার আমলনামাতে একটিও গুনাহ নেই.'

হাসান-হুসাইন ―রাদিয়াল্লাহু আনহুমা― এর মর্যাদা ও সুউচ্চ মাকাম যা আল্লাহ তা-আলার নিকট পূর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল, তাদের পূর্বসূরিদের ন্যায় ইতিপূর্বে তারা কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হন নি। তাদের জন্ম গৌরবময় ইসলামে হয়েছে, লালিত হয়েছেন মহিমান্বিত ইসলামের শীতল ছায়াতলে, মুসলিমগণ তাদের সম্মান করতেন, মর্যাদা দিতেন, প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন, তখনও তাদের ভালো-মন্দ পার্থক্যের বুঝটুকু পূর্ণতা লাভ করেনি, তো এ পরীক্ষা তাদের ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যাতে তারা তাদের পূর্বসূরিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন. যেমন তাদের থেকে শ্রেষ্ঠ, আলী বিন আবুতালিব পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন, যে তাঁকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছিল।
হুসাইন এর হত্যাকাণ্ড জনগণের মাঝে গোলযোগের ও বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছিল, যেমন উসমান বিন আফ্‌ফানের হত্যাকাণ্ড মহা বিপদ ও ফিতনা ছড়িয়েছিল যা আজকে মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির বড় কারণ.
আব্দুর রহমান বিন মুলজিম যখন আমিরুল মুমিনীন আলী বিন আবুতালেব ―রাদিয়াল্লাহু আনহু― কে হত্যা করল, এবং সাহাবা আজমাঈন তার সুযোগ্য সন্তান হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন. যার শানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন―

কাদিয়ানীরা নিন্দনীয় কেন?



অনুবাদকের ভূমিকা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন যে, কিয়ামত এর পূর্বে ৩০ এর মত মিথ্যুক লোক নবুওয়াতের দাবী করবে, তাঁর সে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই গোলাম আহম্মেদ কাদিয়ানীর নবুওয়াতের দাবীর মাঝ দিয়ে। আমাদের দেশের আলেমগণ অনেক আগ থেকেই বিভিন্ন ভাবে তার দাবীর অবৈধতা প্রমাণ করেছিলেন, এবং এক সময় আলেমরা সবাই তার বিরুদ্ধে এজমা, বা ঐক্যমত পোষণ করে অমুসলিম ভন্ড নবুওয়াতের দাবীদার বলে তার ফেৎনা কে সাময়িক ভাবে রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অনেকে তার সাথে বিতর্কে গিয়েছিলেন এবং তাকে বিতর্কেও হারিয়েছিলেন, মনে পড়ে কাজী দানভিল্লা অমৃতসরী সাহেবের সাথে তার তর্কের কথা, ভন্ড তার নবুওয়াতের সমর্থনে দলীল হিসাবে কুরআনে করিমের সূরায় ছফ-এর() শদ্ব দ্বারা দলীল নিলে কাজী সাহেব বললেন তোমার নাম তো গোলাম আহমদ এখানে বলা হয়েছে আহমদ, অর্থাৎ তুমি আহমদের গোলাম, আহমদ নও, তখন সে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে নামের প্রথম অংশ যেখানে উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ তা ত্যাগ করে বলে উঠল, আমার নামের শেষাংশই নয়,
কাজী সাহেব দেখলেন তার সাথে তর্কে যাওয়া বৃথা, কারণ সে গোড়ামী করে কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করার পরও প্রমাণ হাজির করতে না পেয়ে আরবী ভাষার ব্যাকরণের বিপরীতে গিয়ে তার নামের দ্বিতীয়াংশ  আহমদ কেই প্রকৃত নাম বলে সাব্যস্ত করতে যাচ্ছে, তখন তিনি সম্পূর্ণ তর্কের খাতিরে বললেন, যদি নামের শেষাংশই উদ্দেশ্য হয় তবে আমার নাম সানাউল্লাহ, আমার নামের শেষাংশ আল্লাহ, তা হলে আমি তোমার আল্লাহ হয়ে তোমার মত খবিসকে কক্ষনো মানুষের জন্য নবী হিসাবে পাঠাই নি।”
অনুরূপভাবে এক সময় কাদিয়ানী নিজকে মারিয়াম (আ) বলে দাবী করলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাদের ঋতুস্রাব হয়ে থাকে, তোমার কি তাও হয়?
সে নির্লজ্জের মত  বলে উঠল হ্যাঁ অমুক রাত থেকে অমুক রাত পর্যন্ত আমার ঋতুস্রাব ছিল। যেহেতু তার জীবনের সব সময়ই সে বিভিন্ন নতুন নতুন দাবী নিয়ে বের হত, কখনো, ঈসা, আবার কখনো মাহদী, আবার কখনো নবী, আবার কখনো ধর্ম সংস্কারক, আবার কখনো বা সকল ধর্মের বিচারক ইত্যাদি দাবীর থুবড়িতে মুখরিত ছিল, আলেমগণ তাকে মাতাল জ্ঞানে ত্যাগ করাই সমীচিন ছিল, বরং তাকে শরীয়তের কাঠগড়ায় আসামী করে শরীয়তের হুকুম অনুসারে তার ফয়সালা করা জরুরী ছিল কিন্তু তখন ছিল উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ সরকারের রাজত্ব, মূলত তারাই তাকে এগুলো বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তারা তাকে সব রকম সহযোগিতা ও সহানুভূতি দ্বারা সর্বদা রক্ষা করেছে সেহেতু আলেমগণ তার বিরুদ্ধে মোনাজেরা  বা বিতর্কে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ পাননি, সে অবশ্য ব্রিটিশ সরকারেরজন্য বিরাট পুরুস্কার ছিল কারণ, সে যখন দাবী করল যে, সে ঈসা (আ) তখন মুসলিমদের হাদীস মতে  ঈসা (আ) এর আবির্ভাবের পর আর জিযিয়া কর গ্রহণ করা হবে না এবং জ্বিহাদ এর হুকুমে পরিবর্তন হবে বলা হয়ে থাকে এজন্য সে ইংরেজদের জন্য অতি মূল্যবান পুরস্কার স্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে জ্বিহাদ বা আযাদী আন্দোলন কে হারাম ঘোষনা দিয়ে দিল, আর তখনি দিবালোকের মত স্পষ্ট হলো যে, কার হাতের ক্রিড়নক হিসাবে সে এসব কাজ করছিল

কেউ যদি তার যিম্মায় থাকা (ছুটে যাওয়া) সালাতের ও ফরয সাওমের সংখ্যা মনে করতে না পারে, তবে সে কী করবে?




ফাত্‌ওয়া নং - 72216 

প্রশ্ন : যদি কোন মুসলিমের ছুটে যাওয়া সালাত ও সিয়ামের সংখ্যা মনে না থাকে, তবে সে কিভাবে তার কাযা করবে?

উত্তর : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য
প্রথমত:
ছুটে যাওয়া সালাতের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা হতে পারে :
প্রথম অবস্থা :
ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত ছুটে যাওয়া এ অবস্থায় তার উপর কাযা করা ওয়াজিব এর দলীল রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী :
من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها رواه البخاري (572 ) ومسلم ( 684 )  واللفظ له - .
যে সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তার কাফফারাহ হলো সে যখনই তা মনে করবে তখনই (সাথে সাথে) সালাত আদায় করে নিবে [বুখারী (৫৭২) ও মুসলিম (৬৮৪)। (শব্দ চয়ন) সহীহ মুসলিমের]

এবং সে তা ধারাবাহিকভাবে আদায় করবে যেমনটি তার উপর ফরয হয়েছে, প্রথমটি প্রথমে করবে এর দলীল জাবির ইবনু আবদুল্লাহ এর হাদীস -
أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه جاء يوم الخندق بعد ما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال : يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب، قال النبي صلى الله عليه وسلم : والله ما صليتها ، فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلَّى العصر بعد ما غربت الشمس , ثم صلى بعدها المغرب . رواهالبخاري ( 571 ) ومسلم ( 631 )
“উমার ইবনুল খাত্তাব-রাদিয়াল্লাহু-আনহু-খানদাকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে লাগলেন, তিনি বললেন : হে রাসূলুল্লাহ, আমি আসরের সালাত আদায় করতে যেতে যেতে সূর্য ডুবে যেতে লাগল !” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন : আল্লাহর শপথ, আমিও এর (আসরের) সালাত আদায় করি নি এরপর আমরা বাত্বহান-এ দাঁড়ালাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সালাতের জন্য ওযু করলেন, আমরাও সালাতের জন্য ওযু করলাম এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আসরের সালাত  আদায় করলেন, এরপর মাগরিব এর সালাত আদায় করলেন [বুখারী (৫৭১) ও মুসলিম (৬৩১)]

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সূচী



পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সূচী

প্রশ্ন: আসরের ওয়াক্ত কখন শেষ হয়? বিশেষ করে ঘড়ির কাঁটার হিসেবে?

মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের উপর দিবানিশি মোট ৫ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। সাথে সাথে এগুলো আদায়ের জন্য তাঁর সুসামঞ্জস্যপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী পাঁচটি সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাতে করে বান্দাহ্‌ এ সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে তার প্রতিপালকের সাথে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। এটা মানব অন্তরের জন্য অনেকটা বৃক্ষের গোড়ায় পানি সিঞ্চনের মত বিষয়। বৃক্ষকে যেমন বেড়ে উঠার জন্য নিয়মিত পানি দিতে হয়; মানব অন্তরকেও স্রষ্টার ভালোবাসায় স্থিতিশীল থাকার জন্য নিয়মিত সালাতের আশ্রয় নিতে হয়। একবারে সব পানি ঢেলে দিয়ে যেমন বৃক্ষের সঠিক প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না, মানব হৃদয়ও তদ্রূপ।  

একই ওয়াক্তে পাঁচটি নামায আদায় করা ফরয করা হলে বান্দার মাঝে ক্লান্তি ও বিরক্তিবোধ উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক ছিল। তাই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাঁচটি সালাত আদায় করা ফরয করা হয়েছে- যেন বান্দার মাঝে অবসন্নতা ও বিরক্তিবোধ না আসে। বস্তুতঃ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন অধিক প্রজ্ঞাবান। [শায়খ উছাইমীনের ‘মুকাদ্দিমাতু রিসালাতু আহকামি মাওয়াকিতুস সালাত] 

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, 
“জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত।

আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

Monday 9 March 2015

প্রশ্নঃ বাথরুমে থাকা অবস্থায় আজান শুনলে কি আজানের উত্তর দিতে হবে?



উত্তরঃ না, বাথরুমে থেকে আযানের উত্তর দেওয়া যাবেনা। শুধু আযানের উত্তরই না, বাথরুমে সমস্ত প্রকার যিকির, দুয়া, দুরুদ ও কুরআন তেলাওয়াত নিষিদ্ধ। কারণ অপবিত্র জায়গায় আল্লাহর যিকির করা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থী। তবে কেউ যদি বাথরুমে প্রবেশ করার দুয়া ও বের হওয়ার দুয়া পড়ে – ঐ সময়টা ইবাদতের মধ্যেই গণ্য হবে।
বাথরুমে প্রবেশ করার আগে দুয়াঃ
(بِسْمِ اللهِ) اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
বিসমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-ঈসি।
অর্থঃ আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে অপবিত্র পুরুষ জিন ও অপবিত্র নারী জিন হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
[বুখারীঃ ১/৪৫, মুসলিমঃ ১/২৮৩]
বাথরুম থেকে বের হওয়ার দুয়াঃ
غُفْرَانَكَ.
উচ্চারণঃ গুফরা-নাকা।
অর্থঃ (হে আল্লাহ) আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
[আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ]
উল্লেখ্যঃ জিকির বলতে এখানে মুখে উচ্চারণ করে বা ঠোট নেড়ে আমরা নিয়মিত যে দুয়া সুবহা’নআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, বা আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা...কে বুঝানো হয়েছে। এটা নিষিদ্ধ। তবে কেউ অন্তরে আল্লাহর কথা মনে করতে পারে, বা আল্লাহ অথবা আল্লাহর কুদরত, মহিমা ও বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করতে পারে।

Sunday 8 March 2015

দু‘আ




দু‘আ

আভিধানিক অর্থে দুআ :
দুআ শব্দের অর্থ আহ্বান, প্রার্থনা। শরীয়তের পরিভাষায় দুআ বলে কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধকল্পে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। দুআ শব্দ পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল।

১- ইবাদত :
মহান আল্লাহ বলেন :
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِين. (المؤمن : ৬০ )
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব, যারা আমার ইবাদতে অহংকার করে তারা অচিরে জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্চিত হয়ে।' (আল-মু'মিন-৬০)

২ -সাহায্য প্রার্থনা :
আল্লাহ বলেন :
وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ. (البقرة: ২৩ )
যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সব সাহায্যকারীদেরকে আহবান কর।' (আল-বাকারা-২৩)
আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তার নৈকট্য লাভ করা ব্যতীত মানুষের কোন উপায় নেই, আর দুআ হল আল্লাহর নৈকট্যলাভের বিশেষ বাহন ও মাধ্যম। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, প্রত্যাশা ও সাহায্য কামনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিকটবর্তী হয়। এ দ্বারা মানুষ তার প্রতিপালকের ইবাদত করে, উদ্দেশ্যে উপনীত হয়, তার সন্তুষ্টি লাভ করে।

অসুস্থ মানুষের জন্য যে সব দো‘আ বলা হয়




অসুস্থ মানুষের জন্য যে সব দো‘আ বলা হয়

1/906 عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ النَّبيَّ ، كَانَ إِذَا اشْتَكَى الإنْسَانُ الشَّيْءَ مِنْهُ، أَوْ كَانَتْ بِهِ قَرْحَةٌ أَوْ جُرْحٌ، قَالَ النَّبيُّ  بِأُصْبُعِهِ هكَذا- وَوَضَعَ سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَة الرَّاوي سَبَّابَتَهُ بِالأَرْضِ ثُمَّ رَفَعَها- وَقَالَ: «بِسمِ اللهِ، تُرْبَةُ أرْضِنَا، بِرِيقَةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى بِهِ سَقِيمُنَا، بِإِذْنِ رَبِّنَا». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯০৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিতযখন কোন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিজের কোন অসুস্থতার অভিযোগ করত অথবা (তার দেহে) কোন ফোঁড়া কিংবা ক্ষত হততখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ আঙ্গুল নিয়ে এ রকম করতেন। (হাদীসের রাবী) সুফ্য়ান তাঁর শাহাদত আঙ্গুলটিকে যমীনের উপর রাখার পর উঠালেন। (অর্থাৎ তিনি এভাবে মাটি লাগাতেন।) অতঃপর দোআটি পড়তেনঃ বিসমিল্লাহি তুরবাতু আরদ্বিনাবিরীক্বাতি বাযিবনায়্যুশফা বিহী সাক্বীমুনাবিইযনি রাব্বিনা।’ অর্থাৎ আল্লাহর নামের সঙ্গে আমাদের যমীনের মাটি এবং আমাদের কিছু লোকের থুতু মিশ্রিত করে (ফোঁড়াতে) লাগালাম। আমাদের প্রতিপালকের আদেশে এর দ্বারা আমাদের রুগী সুস্থতা লাভ করবে। (বুখারী ও মুসলিম) [1]

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...