Tuesday 10 September 2019

মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা


আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “বাজারে যাওয়ার সময় মহিলার সাথে কি মাহরাম থাকা শর্ত? জাযাকুমুল্লাহু খাইরা।”
উত্তর: ❝যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ’র জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আসতে থাকা তাঁর ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:
যদি মহিলার এমন কোনো প্রয়োজন থাকে, যার ফলে তার বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়—যেমন: চিকিৎসা নেওয়া, বাজারসদাই করা, মসজিদে যাওয়া প্রভৃতি—তাহলে তার দ্বীন পালনের স্বার্থে ও স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বাড়ির বাইরে বের হওয়া জায়েজ। কেননা নাবী ﷺ সাওদাহ বিনতে যাম‘আহর উদ্দেশে বলেছেন, قَدْ أَذِنَ اللهُ لَكُنَّ أَنْ تَخْرُجْنَ لِحَوَائِجِكُنَّ “আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।” [সাহীহ বুখারী, হা/৫২৩৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২১৭০]
তবে প্রয়োজনের কারণে বৈধভাবে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই তা শরিয়তের একগুচ্ছ নীতিমালার মাধ্যমে পরিবেষ্টিত হতে হবে। নিম্নে মহিলাদের বাড়ির বাইরে যাওয়ার শার‘ঈ নীতিমালা ধারাবাহিকভাবে আলোকপাত করা হলো।
প্রথমত, মহিলাকে তার অভিভাবক কিংবা তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে বের হতে হবে, এবং তার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে স্বামীর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। মূলত উক্ত শর্ত যাবতীয় ভালোকাজে স্বামীর আনুগত্য করার আওতাভুক্ত। যাতে করে তাদের দাম্পত্যজীবন হয় সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ও কলহমুক্ত। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ “পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে ওই বিষয়ের হেফাজত করে, যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন।” [সূরাহ নিসা: ৩৪]
নাবী ﷺ বলেছেন, إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا؛ قِيلَ لَهَا: ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الجَنَّةِ شِئْتِ “যদি কোনো মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি সে দরজা দিয়ে তাতে প্রবেশ করো।” [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬১; সাহীহুল জামি‘, হা/৬৬১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)]
নাবী ﷺ আরও বলেছেন, إِذَا اسْتَأْذَنَكُمْ نِسَاؤُكُمْ بِاللَّيْلِ إِلَى المَسْجِدِ فَأْذَنُوا لَهُنَّ “তোমাদের স্ত্রীগণ রাত্রিবেলায় তোমাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তোমরা তাদের অনুমতি দাও।” [সাহীহুল বুখারী, হা/৮৬৫; সাহীহ মুসলিম, হা/৪৪২]

আপনি কি মনে করেন, 'ধর্ম যার-যার, উৎসব সবার?



আপনিও কি বিজাতীয় পরব বা শির্কী ও বিদআতী উৎসবে শরীক হওয়ার নিয়ত করেছেন?
তাহলে পড়ুন,
বহু মুসলমানই বিজাতির শির্কী ঈদ-পরবে (মেলা-উরসে) স্ত্রী-পরিজন বা ছেলে-মেয়ে সহ উপস্থিত হয়ে থাকে এবং সেখানকার নানা মনোরঞ্জনমূলক অনুষ্ঠান দর্শন করে মনের তৃপ্তি অর্জন করে থাকে, সেখানে বিক্রিত জিনিসপত্র খরিদ করে থাকে, মিষ্টান্ন খেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য উপহার এনে থাকে।
অনেক ব্যবসায়ী দোকান দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করে থাকে। অনেকে সেখানে হারাম ও শির্কী অনুষ্ঠান দেখতে হাযির হয়। অনেকে সেই মেলার মালিক, সেখানকার জায়গার মালিক, মেলার সভাপতি, সম্পাদক, সদস্য অথবা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে থাকে।
অনেকে বিজাতির উৎসবের সময় নতুন পোশাক পরে এবং আরো অন্যান্য সাজ-সজ্জা করে থাকে। উত্তম খানাপিনার ব্যবস্থা করে থাকে।
অনেকে সেই উপলক্ষ্যে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে এবং ঐ দিনকে ছুটি মেনে থাকে।
অনেক মুসলমান বাড়ির আশেপাশের মেলাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মেয়ে-জামাইকে খাস দাওয়াত দিয়ে থাকে এবং জামায়ের হাতে মেলা-খরচ দিয়ে মেলা দেখতে ও সেই সাথে শির্কী ও হারাম কাজে সহযোগিতা করে থাকে। মেলাতে না ডাকলে অনেক অভিমানী জামাই আবার গোসসাও করে থাকে।
এইভাবে জেনে না জেনে তওহীদবাদীর ছেলেরা বাতিল ও শির্কের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
পক্ষান্তরে উপর্যুক্ত অভ্যাস রহমানের বান্দাদের নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
ৎوَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًاঃ (৭২) سورة الفرقان
অর্থাৎ, যারা কোন বাতিলে অংশগ্রহণ করে না এবং কোন অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে ভদ্রের মত পার হয়ে যায়। (সূরা ফুরকান ৭২ আয়াত)

সাহাবাদিগকে গালমন্দকারীদের খণ্ডনে সালাফদের মূল্যবান উক্তি


ইসলামের সূত্র ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের সম্বন্ধে যারা কটূক্তি করে ও অপবাদ দেয়, তাদের ব্যাপারে আমাদের বিচক্ষণ সালাফগণ বহু মূল্যবান কথা বলেছেন। কারণ তারা এর ভয়াবহ পরিণাম বুঝতেন এবং এসব অপবাদ যে দ্বীনের মৌলিক বিধানের বিপরীত তাও তারা জানতেন। আমরা এ পর্বে তাদের সেই মূল্যবান উক্তি সমূহের কিছুটা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ তা’আলা।
১- ইমাম মালিক রাহ. বলেন:
{ إنما هؤلاء اقوام أرادوا القدح في النبي صلى الله عليه وسلم، فلم يمكنهم ذلك، فقدحوا في اصحابه، حتى يقال رجل سوء ولو كان رجلا صالحا لكان أصحابه صالحون }. ( الصارم المسلول ص580 )
‘এরা এমন গোষ্ঠী যারা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুর্নাম করার ইচ্ছা রাখে কিন্তু তা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা তাঁর সাহাবীদের দুর্নাম করে ও তাদের অপবাদ দেয় যেন বলা হয় যে, সে মন্দ ছিল। যদি তিনি সৎ ব্যক্তি হতেন, তাহলে তাঁর সাথীরাও সৎ হত’। [আস্ স্বরিম আল মাসলূল, ইবনু তায়মিয়া/৫৮০]
২- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহ. বলেন:
‘যদি কোনও ব্যক্তিকে দেখ সে কোনও সাহাবীর দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করছে, তাহলে তার ইসলামে সন্দেহ আছে’। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনু কাছীর ৮/১৪২]
৩-আবু যুরআহ আর রাযী রহ. বলেন:
‘যদি কোনও ব্যক্তিকে দেখ সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীদের মধ্যে কারো দোষ বর্ণনা করছে, তাহলে জেনে নিও সে ইসলাম শত্রু নাস্তিক। কারণ আমাদের নিকট রাসূল সত্য এবং আল কুরআন সত্য। আর এই কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর সাহাবাগণ। ( অর্থাৎ তারা ইসলামের সূত্র ও সাক্ষী) ইসলাম শত্রুরা আমাদের সাক্ষীদের অভিযুক্ত করতে চায় যেন কিতাব ও সুন্নাহ বানচাল হয়ে যায়। প্রকৃতার্থে তারাই অভিযুক্ত। তারা হচ্ছে নাস্তিক’। [আল কিফায়া, খতীব বাগদাদী, পৃ: ৯৭]
৪- আবু আব্দুর রাহমান নাসাঈ রাহ. কে আল্লাহর রাসূলের সাহাবী মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
‘ইসলামের উপমা একটি দরজাযুক্ত ঘরের ন্যায়। আর ইসলামের দরজা হচ্ছে সাহাবাগণ। তাই যে সাহাবীকে কষ্ট দেয়, তার উদ্দেশ্য ইসলাম। ঐ ব্যক্তির মত যে দরজা ঠকঠকায় কারণ তার উদ্দেশ্য ঘরে প্রবেশ করা। তিনি বলেন: তাই যে মুয়াবিয়াকে উদ্দেশ্য করে আসলে তার উদ্দেশ্য সাহাবাগণ’। [তাহযিবুল কামাল,১/৩৩৯/ বুগইয়াতুর রাগিব পৃ: ১২৯]

Monday 9 September 2019

আশুরার কতিপয় বিদ‘আত, যা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক


·
মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মাসজিদে নাবাউয়ী’র সম্মানিত মুদার্রিস, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—
❝আল্লাহ তোমাদের ওপর রহম করুন। তোমরা জেনে রেখ, আশুরার (মহরমের দশ তারিখের) দিনে রোজা ব্যতীত অন্য কোনো আমল করা শরিয়তসম্মত নয়। সুতরাং আশুরার দিনে রোজা ব্যতীত পালন করার মতো আর কোনো মুস্তাহাব আমল নেই। কিছু লোক আশুরার দিবসকে কেন্দ্র করে বিদ‘আতী ক্রিয়াকলাপ তৈরি করেছে। কেউ কেউ এই দিনকে শোকদিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে, যে দিবসে মাতম করে গাল চাপড়ানো হয়, পরনের কাপড় ছেঁড়া হয় এবং জাহেলী যুগের মতো হাঁকডাক করা হয়। এগুলো সত্তাগতভাবেই মন্দকাজ।
তাহলে ওই সকল কাজ কত মন্দ ও কদর্য হতে পারে, যখন সেসবের সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীদেরকে গালি দেওয়ার মতো অপরাধ এবং উম্মতে মুহাম্মাদের ﷺ সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে অমর্যাদা করার মতো অন্যায় সংযুক্ত হয়?!
অপরদিকে উক্ত দলের বিরোধিতা করে আরেক দল লোক আশুরার দিবসকে উৎসবের দিন বানিয়ে নিয়েছে। তারা এই দিনে করণীয় কিছু আমলের কথা উল্লেখ করে, যেগুলোকে তারা ভালো মনে করে। তার মধ্যে অন্যতম হলো—আশুরার দিনে সুরমা ব্যবহার করা, আশুরার দিবসে গোসল করা, আশুরার দিনে পরিবার-পরিজনের জন্য কেনাকাটা করা, এবং এই দিবসকে উৎসবের দিন হিসেবে গ্রহণ করা। এগুলো সবই নবআবিষ্কৃত বিদ‘আতী কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত।
হাফিয ইবনু রজব এবং তাঁর পূর্বে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুমাল্লাহ) বর্ণনা করেছেন যে, রোজা ব্যতীত আশুরার দিবসে পালনীয় অন্যান্য ফজিলতপূর্ণ আমলসমূহের ব্যাপারে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর সবই জাল ও মিথ্যা বর্ণনা; এগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত নয়।❞
·
তথ্যসূত্র:
https://youtu.be/mjoM7KX_xSE (অডিয়ো ক্লিপ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

Sunday 8 September 2019

টিভি সিরিয়ালের দর্শকদের প্রতি ইমাম ফাওযানের নসিহত


·
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
উপস্থাপক: “বারাকাল্লাহু ফীকুম। প্রশ্নকারী বলছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত টিভি ফিল্ম দেখার বিধান কী? তিনি আরও বলছেন, কেউ কেউ বলে, যে ব্যক্তি সেসব ফিল্ম দেখে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।”
শাইখ: “যেসব টিভি সিরিয়ালে মন্দ বিষয় আছে, বিদ‘আতী কর্মকাণ্ড আছে, অথবা তারচেয়েও ভয়ংকর বিষয় তথা আল্লাহ’র সাথে শরিক স্থাপন করার মতো কর্মকাণ্ড আছে, সেসব সিরিয়াল কোনো মুসলিম দেখতে পারে না। কোনো মুসলিম এসব টিভি সিরিয়াল দেখবে না। কেননা সে ওই সকল মন্দ কর্মকাণ্ডে নিমজ্জিত হতে পারে, শয়তান তার কাছে সেসব কাজকে সুশোভিত ও সুকুমার করে তুলতে পারে। তাই কোনো মুসলিম এসব টিভি সিরিয়াল দেখবে না। কারণ এসব টিভি সিরিয়াল হয় ‘আক্বীদাহ-বিধ্বংসী, আর নাহয় চরিত্রনাশী হয়ে থাকে। তাই সে এসব সিরিয়াল থেকে বেঁচে থাকে। সে কেবল সেসবই শুনবে ও দেখবে, যার মধ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসরণ নিহিত রয়েছে, আর যেসব কাজের জন্য আল্লাহ’র নিকট পুরস্কার ও প্রতিদান রয়েছে। না‘আম।”
উপস্থাপক: “প্রশ্নকারী চল্লিশ দিন নামাজ কবুল না হওয়ার ব্যাপারে লোকদের কথা বর্ণনা করেছেন। এটা কি এর অন্তর্ভুক্ত হবে?”
শাইখ: “এই ভীতিপ্রদর্শনের কোনো দলিল নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি এসব (টিভি সিরিয়াল) দেখবে, তার সওয়াব নষ্ট হবে, কিংবা তার সওয়াব হ্রাস পাবে।”
·
উৎস:
ফতোয়ার ভিডিয়ো ক্লিপটি ইউটিউব (omar abo omar) থেকে নেওয়া হয়েছে।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

আশুরার রোজার বিধান


সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন—
❝কেউ চাইলে পুরো মহরম মাস, অথবা মহরম মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রাখতে পারে। [১] তবে এই মাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো দশ তারিখের রোজা। আশুরার (মহরম মাসের দশ তারিখের) রোজা রাখলে বিগত এক বছরের (ছোটো) গুনাহ মোচন করা হয়। [২] তবে ইহুদিদের বিরোধিতা করার জন্য দশ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন রোজা রাখা সুন্নাত। কেননা ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে।
নাবী ﷺ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমরা এই দিনে রোজা রাখ কেন?” তারা বলেছিল, “কারণ এই দিন মহান আল্লাহ মূসা ﷺ ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছিলেন, আর ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। তাই মূসা (‘আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) আল্লাহ’র জন্য শুকরিয়াস্বরূপ ওই দিন রোজা রেখেছিলেন। সেজন্য আমরাও এই দিনে রোজা রাখি।” এ কথা শুনে নাবী ﷺ বললেন, “মূসার (আদর্শের) ব্যাপারে আমরাই তোমাদের চেয়ে বড়ো হকদার।” এই বলে তিনি ﷺ সেদিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে এই রোজা করার নির্দেশ দিলেন। [৩]
কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّه ُفَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ “এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন। অতএব তুমি তাদের হেদায়েত (আদর্শ) অনুসরণ করো।” [৪] আয়াতে যাদেরকে হেদায়েত দেওয়ার কথা বিবৃত হয়েছে, তাঁরা হলেন (পূর্ববর্তী) রাসূলগণ।
তাই রাসূল ﷺ এই দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে এই রোজা করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু এই রোজা ওয়াজিব নয়, বরং তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এরপর নাবী ﷺ বলেছেন, لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لأَصُومَنَّ التَّاسِعَ “আমি যদি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে অবশ্যই (দশ তারিখের সাথে) নয় তারিখেও রোজা রাখব।” [৫]
ইহুদিদের বিসদৃশ করার জন্য তিনি এই কথা বলেছেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তোমরা দশ তারিখের একদিন আগে অথবা একদিন পরে একটি রোজা রাখ।” [৬] কিন্তু একদিন আগে রোজা রাখার বর্ণনাটি একদিন পরে রোজা রাখার বর্ণনার চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ। না‘আম।❞
উপস্থাপক: “তাহলে আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে?”
শাইখ: ❝হ্যাঁ। আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে। অর্থাৎ বিগত বছরে যেসব সগিরা (ছোটো) গুনাহ করেছে, তা মোচন করে। পক্ষান্তরে কবিরা (বড়ো) গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করা হয় না। কিন্তু বিভিন্ন সৎকর্মের মাধ্যমে সগিরা গুনাহ বিমোচিত হয়। সেসবের মধ্যে আশুরার রোজা অন্যতম। না‘আম।❞
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. সুন্নাত রোজাসমূহের মধ্যে মহরম মাসের (সব বা অধিকাংশ দিনের) রোজা অন্যতম। রমজানের পরেই রয়েছে এই রোজার মর্যাদা। রাসূল ﷺ বলেছেন, “রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহ’র মাস মহরমের রোজা।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৩; ‘রোজা’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ: ৩৮)
[২]. সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৩; ‘রোজা’ অধ্যায় (১৪); পরিচ্ছেদ: ৩৬।
[৩]. সাহীহ বুখারী, হা/২০০৪; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৩০।
[৪]. সূরাহ আন‘আম: ৯০।
[৫]. সাহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪; ‘রোজা’ অধ্যায় (১৪); পরিচ্ছেদ: ২০।
[৬]. ইবনু খুযাইমাহ, হা/২০৯৫; সনদ: দ্ব‘ঈফ (তাহক্বীক্ব: আলবানী), হাসান (তাহক্বীক্ব: আহমাদ শাকির)।
·
উৎস:
ফতোয়ার ভিডিয়ো ক্লিপটি ইউটিউব (الشيخ صالح الفوزان) থেকে নেওয়া হয়েছে।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

ইয়াযীদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র অবস্থান


·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়ায় বলা হয়েছে—
وأما يزيد بن معاوية فالناس فيه طرفان ووسط، وأعدل الأقوال الثلاثة فيه أنه كان ملكًا من ملوك المسلمين له حسنات وسيئات ولم يولد إلاَّ في خلافة عثمان رضي الله عنه، ولم يكن كافرًا ولكن جرى بسببه ما جرى من مصرع الحسين وفعل ما فعل بأهل الحرة، ولم يكن صاحبًا ولا من أولياء الله الصالحين. قال شيخ الإِسلام ابن تيمية رحمه الله : وهذا قول عامة أهل العقل والعلم والسنة والجماعة، وأما بالنسبة للعنه فالناس فيه ثلاث فرق: فرقة لعنته، وفرقة أحبته، وفرقة لا تسبه ولا تحبه، قال شيخ الإِسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى: وهذا هو المنصوص عن الإِمام أحمد وعليه المقتصدون من أصحابه وغيرهم من جميع المسلمين، وهذا القول الوسط مبني على أنه لم يثبت فسقه الذي يقتضي لعنه أو بناء على أن الفاسق المعين لا يلعن بخصوصه إما تحريمًا وإما تنزيهًا، فقد ثبت في [ صحيح البخاري ] عن عمر في قصة عبد الله بن حمار الذي تكرر منه شرب الخمر وجلده رسول الله صلى الله عليه وسلم لما لعنه بعض الصحابة قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا تلعنه، فإنه يحب الله ورسوله ، وقال صلى الله عليه وسلم: لعن المؤمن كقتله متفق عليه.
وهذا كما أن نصوص الوعيد عامة في أكل أموال اليتامى والزنا والسرقة فلا يشهد بها على معين بأنه من أصحاب النار لجواز تخلف المقتضى عن المقتضي لمعارض راجح: إما توبته، وإما حسنات، وإما مصائب مكفرة، وإما شفاعة مقبولة، وغير ذلك من المكفرات للذنوب هذا بالنسبة لمنع سبه ولعنه. وأما بالنسبة لترك المحبة فلأنه لم يصدر منه من الأعمال الصالحة ما يوجب محبته، فبقي واحدًا من الملوك السلاطين، ومحبة أشخاص هذا النوع ليست مشروعة، ولأنه صدر عنه ما يقتضي فسقه وظلمه في سيرته، وفي أمر الحسين وأمر أهل الحرة. وبالله التوفيق. وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم.
“ইয়াযীদ বিন মু‘আউয়িয়াহর ব্যাপারে মানুষ দুটো প্রান্তিক ও একটি মধ্যপন্থি দলে বিভক্ত। ইয়াযীদের ব্যাপারে তিনটি অভিমতের মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ মত হলো—সে মুসলিমদের একজন রাজা ছিল, তার ভালোকর্ম ছিল, আবার মন্দকর্মও ছিল। সে ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র খেলাফত-আমলে জন্মগ্রহণ করে। সে কাফির ছিল না। কিন্তু তার কারণে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকাণ্ড ও হার্রাহ’র যুদ্ধের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। সে না ছিল সাহাবী, আর না ছিল সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহ’র ওলি।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এটাই অধিকাংশ প্রাজ্ঞ ও বিবেকবান আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত।” [১]

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...