Tuesday 8 November 2016

দাড়ি কামিয়ে ফেলার ফলে সংঘটিত সাতটি গুনাহ



(১) অবাধ্যতা

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 
"আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল যখন কোনো ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও কোনো মুমিন নারীর তাদের সে ব্যাপারে নিজেদের কোনো রকম এখতিয়ার থাকবে না - (যে তারা তাতে কোনো রদবদল করবে); যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে, সে নিসন্দেহে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।" (আল-আহযাব ৩৬)

"তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।" (সূরা জ্বিন ২৩)


"রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।" (হাশর ৭)


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"আর আমি যাকিছু নিষেধ করেছি তা থেকে বেঁচে থাকো" [৩]

হযরত আমর ইবন শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“বার্ধক্যে (সাদাচুলকে) উপড়ে ফেলো না। কেননা তা কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য আলোকবর্তিকা হবে”। (তিরমিযি, আবু দাউদ, রিয়াদুস সালেহিন ১৬৪৬)

"যে আমার সুন্নাহ'র বিরাগভাজন হয়, তার আমার সাথে কোন লেনদেন নেই।" (বুখারী, ৪৬৭৫)

দাড়ি কিংবা মাথা থেকে চুল উপড়ে ফেলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে, যে তার দাড়ি কামিয়ে ফেলে সে কালো কিংবা সাদা উভয় প্রকার চুলের বৃদ্ধিকেই অপছন্দ করে থাকে,অথচ সাদা দাড়িকে কিয়ামতের দিন মুসলমানের জন্য নূর হিসেবে বলা হয়েছে। ইমাম গাযযালী এবং ইমাম নওয়াবী (রাহিমাহুল্লাহ) উভয়ে বলেছেন, "যখন দাড়ি গজাতে শুরু করে তখন তা উপড়ে ফেলা হল মুরদ'দের [৪] সাথে সাদৃশ্য এবং একটি বড় মুনকারাত(মন্দ কাজ)"

(২) ঔদ্ধত্য ও হেদায়েতের পথ হারিয়ে ফেলা

সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, 
"যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি"। (নিসা ৮০)

যেহেতু রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ (আদেশ, কাজ এবং গুণগতভাবে) বলছে দাড়ি বড় করার কথা, সেহেতু এটা কামিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁর সম্মানিত সুন্নাহ তথা জীবনাচরণের প্রতি একটি চরম অপমান। 
তিনি বলেছেন, 
"যে আমার সুন্নাহর বিরাগভাজন হয় সে আমার দলভুক্ত নয়"। (মুসলিম, ৩২৩৬; বুখারী, আহমদ, নাসায়ী)

"যে কেহ এমন আমল করবে যা করতে আমরা নির্দেশ দেইনি , তা প্রত্যাখ্যাত।" (মুসলিম)

আমাদেরকে সুন্দরতম গঠনে সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি নি'মা (নিয়ামত) এবং মর্যাদা। নিঃসন্দেহে দাড়ি কামানো সেই নিয়ামতকে অস্বীকার করে এবং যেই আল্লাহর রাসূল(সা) এর দেখানো পথ সর্বোত্তম পথ, সেই পথ থেকে বিচ্যুত হওয়াও বটে। এটা আমাদেরকে অবিশ্বাসীদের মতো স্তরেও নামিয়ে দেয় যাদের কাছে তাদের বদ কর্মগুলো সুশোভিত হয়ে দেখা দেয়; এভাবেই তাদের বিকৃত স্বভাব-প্রকৃতি আজকে তাদের বোধশক্তির এতটাই বিলোপ ঘটিয়েছে যে, তারা আজ বলছে, সভ্যতার অগ্রগতি ও অবস্থা অনুধাবনের জন্যে নারী পুরুষের বড় বাহ্যিক পার্থক্যগুলো (উদাহরণ স্বরুপ; দাড়ি) দূরীকরণ আবশ্যক !

(৩) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন-বিকৃতি ঘটানো

দাড়ী পুরুষের সৌন্দর্য


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

দাড়ী আল্লাহর একটি মহান ও বড় নে’য়ামত। দাড়ী দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগৃহীত করেছেন এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন।
দাড়ী শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি কেশগুচ্ছই নয়; বরং ইহা ইসলামের বাহ্যিক বড় একটি নিদর্শন। দাড়ী ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্ বলেন,
ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
“এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।” [ সূরা হাজ্জ- ৩২]
দাড়ী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ী ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন।

কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ীর প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা সত্বেও অধিকাংশ মুসলমান বিষয়টিকে অতি নগন্য ও তুচ্ছ মনে করে। যেন ঘৃণা ভরে প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুন্ডন করে না তারা আরেক ষ্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনীর উপর ছোট ছোট করে রাখে আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতী করে রাখে।
এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ লাগে অন্য দিকে তা যেন হাস্যেরও পাত্র। যে মুসলমানকে দাড়ী ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়ীকে সম্মান করতে বলা হয়েছে সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়। বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়ীকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমন্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)
মনীষীদের নিকট দাড়ীর মূল্য ও সম্মানঃ
আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সমস্ত নবী ও রাসূলের বৈশিষ্ট ছিল দাড়ী রাখা। অনুরূপভাবে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন ও আইম্মায়ে মুজতাহেদীন সকলেই দাড়ী রেখেছেন। এমন কোন বর্ণনা বা ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, তাঁদের মধ্যে কেউ দাড়ী কেটেছেন বা মুন্ডন করেছেন; বরং কারো দাড়ী না গজালে তার জন্য তাঁরা আফসোস করেছেন। সাহাবী ক্বায়স বিন সা’দ (রাঃ) দাড়ী বিহীন লোক ছিলেন। তাঁর সম্প্রদায় আনসাররা বললেন, হায় দাড়ী যদি বাজারে কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য দাড়ী কিনে নিতাম।”
প্রখ্যাত তাবেঈ আহনাফ বিন কায়স একজন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে খোঁড়া ও এক চোখ অন্ধ ছিলেন। তাঁর দাড়ীও উঠে নি। অথচ তিনি ছিলেন নিজ গোত্রের নেতা। লোকরা বলল, “বিশ হাজার দীনার খরচ করেও যদি যদি দাড়ী কিনে পাওয়া যেত তবে আমরা তাঁর জন্য তা খরিদ করতাম।” কি আশ্চর্য! লোকেরা তাঁর পা বা চোখের ত্র“টিকে ত্র“টি মনে করল না। কিন্তু তারা দাড়ী না থাকাটাকে অপছন্দ করল। কেননা তাঁরা দাড়ীকে মনে করতেন পৌরুষত্বের পরিচয়, মুসলিমের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের পূর্ণতার প্রতিক। তাঁরা দাড়ী বাঁচাতে গিয়ে এবং তার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে নিজের গর্দান দিয়ে দেয়াকে সহজ মনে করতেন।
কিন্তু আফসোস মুসলমানদের অবস্থা দেখে তারা দাড়ীর প্রতি এতই রুষ্ট যে, অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে হলেও তার বিরুদ্ধে যেন অঘোষিত লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। হাজার টাকা খরচ করেও যদি এমন হত যে আর কখনো মুখে দাড়ী গজাবে না, তারা সে পথেই অগ্রসর হতো।(নাঊযুবিল্লাহ্)
দাড়ী মুন্ডন হারাম হওয়ার দলীলঃ
আল্লাহ্ বলেন,
وَلَآَمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ
“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” [ সূরা নিসাঃ ১১৯]
দাড়ী মুন্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ গোফ কর্তন করা ও দাড়ী ছেড়ে দেয়া।" [ মুসলিম]
অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ী কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাব বিরোধী কাজ।
ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ী ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।” [বুখারী ও মুসলিম]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ
“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ী লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা কর।” [ মুসলিম]
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাবতীয় বিষয়ে মুশরিক-হিন্দু, ইহূদী-খৃষ্টান ও অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
এ জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [ আবু দাউদ, আহমাদ হাদীছ সহীহ ]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
مَنْ لَمْ يَأْخُذْ مِنْ شَارِبِهِ فَلَيْسَ مِنَّا
“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” [ তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ ]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে।
অন্য দিকে দাড়ী মুন্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়ী বিহীন। কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নতপ্রাপ্ত।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।” [ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী]
দাড়ী রাখা ওয়াজিব না সুন্নাত?
এ নিয়ে মানুষ মতোবিরোধ করলেও দাড়ী রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রনিধাণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ী রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নাত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ী নিজে রেখেছেন এবং তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলা যেমন ফরয করেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তেমনি ফরয বা ওয়াজিব করেন। তার কারণ হচ্ছে নবীজী কখনো নিজের কল্পনা প্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি তাই বলতেন। (সূরা নজমঃ ৩,৪) তাছাড়া নবীজী দাড়ীর বিষয়ে যে সকল আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদীছ খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়ীকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত যাবে।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...