Friday 30 January 2015

পুরুষদের জন্য জামাতে নামায পড়া ওয়াজিবঃ



অনেক ভাই মনে করি কিপুরুষদের জন্য জামাতে নামায পড়া ওয়াজিবনয় সুন্নত!

তাই তারা জামাতের প্রতি উদাসীনইচ্ছা হলে পড়েননা হলে অনেক দেরীকরে ওয়াক্তের শেষের দিকে পড়েন। অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও জামাতেশরীক হন না। অথবা সবসময় চেষ্টা করেন না জামাত ধরার জন্য

এইগুলো মারাত্বক ভুল!

প্লিজ আপনারা এমন করবেন নাআর হক্ক কথা হচ্ছে পুরুষদের জন্যজামাতে নামায পড়া ওয়াজিবযদিনা শরীয়তসম্মত কোনো ওযর থাকে(অসুস্থতাসফর ইত্যাদি)
নিচের হাদীসটা দেখুনএকজন অন্ধ সাহাবীকেও রাসুলুল্লাহ (সাঃজামাতত্যাগ করার অনুমতি দেন নাইআর আপনি সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষআপনার কি অনুমতি আছেজামাত ছাড়ার?

Thursday 29 January 2015

নারীর হজ ও উমরা




সূচীপত্র
ভূমিকা 

হজের অর্থ : 
হজের গুরুত্ব ও ফজিলত : 
মহিলাদের হজের গুরুত্ব: 
হজের শর্তসমূহ: 
এক. আর্থিক সক্ষমতা 
আর্থিক সংগতি বলতে কি বুঝায়? তার পরিমাণ কত ?

মাহরাম কারা?
এক. বংশীয় মাহরাম 
দুই. দুধ খাওয়া জনিত মাহরাম 
তিন. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম 
মাহরাম-এর কিছু শর্ত: 

হজের আদবসমূহ: 
আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হওয়ার জন্য শর্ত সমূহ 
হজ শুরু করার আগে যা করণীয় 
এক. হজ শুরু করার আগে আপনাকে কয়েকটি কাজ করতে হবে 
দুই. হজের সফরে আপনাকে কয়েকটি জিনিস সাথে নিতে হবে 
তিন. হজের সফরে যাওয়ার সময় আপনার বিশেষ করণীয় 
মহিলা হাজী সাহেবার জন্য যা বর্জনীয় 
এহরামের আগে ও পরে সর্বাবস্থায় বর্জনীয় বিষয়সমূহ 

হজ, উমরা ও যিয়ারতের পদ্ধতি (মাসনূন দো‘আ সহ)




ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। পবিত্র ও বরকতময় অগণিত স্ত্ততি আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা যিনি সম্মানিত ঘরকে মানুষের মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে পরিণত করেছেন, যে ঘরের প্রতি রয়েছে আল্লাহর মু’মিন বান্দাদের হৃদয়ের আকর্ষণ।
দরূদ ও সালাম প্রিয় নবী মুস্তাফার উপর যিনি ঔ সকল ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোত্তম যারা আল্লাহর ঘরে হজ ও উমরা পালন করেছেন, যাকে সারা জগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আমানতের দায়িত্ব আদায় করেছেন, উম্মাতকে নসীহত করেছেন, আল্লাহর পথে সর্বাত্মক জিহাদ করেছেন, আল্লাহ তাঁকে দ্বীন ইসলাম সহকারে পাঠিয়েছেন। তা দিয়ে তিনি বান্দাহদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন এবং কুফর ও শির্কের অন্ধকার থেকে তাদেরকে মুক্ত করে ইসলামের প্রদীপ্ত সূর্যালোকে নিয়ে এসেছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
﴿ وَكَذَٰلِكَ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ رُوحٗا مِّنۡ أَمۡرِنَاۚ مَا كُنتَ تَدۡرِي مَا ٱلۡكِتَٰبُ وَلَا ٱلۡإِيمَٰنُ وَلَٰكِن جَعَلۡنَٰهُ نُورٗا نَّهۡدِي بِهِۦ مَن نَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِنَاۚ وَإِنَّكَ لَتَهۡدِيٓ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٥٢ ﴾ [الشورى: ٥٢] 
‘‘আর এভাবে আমি আপনার কাছে অহী প্রেরণ করেছি যা আমার নির্দেশের অন্তর্গত। আপনি তো জানতেন না কিতাব কি এবং ঈমান কি ! কিন্তু আমি একে এমনই এক আলোকবর্তিকায় পরিণত করেছি যদ্বারা আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করি। আর আপনিতো নিশ্চয়ই সরল পথের দিকে পথ প্রদর্শনই করেন।’’[সুরা আশ্ শুরা: ৫২]
হে আল্লাহ আপনি যে শরীয়ত প্রদান করেছেন সে জন্য আপনার প্রশংসা। আপনি যে নির্দেশ দিয়েছেন সে জন্য আপনার প্রশংসা। আপনি যা সহজ করেছেন এবং নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে জন্য আপনার প্রশংসা।

প্রিয় মুসলিম ভাই! মক্কা সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যেখানে রয়েছে মাসজিদুল হারাম ও সম্মানিত কাবা ঘর। সকল স্থানেই মুসলিমদের ক্বিবলারূপে আল্লাহ্ একে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহর অনুগত হয়ে ও তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তারা প্রতিদিন পাঁচবার সে ঘর অভিমুখী হয়। মক্কা নবীগণের লালনভূমি, আমাদের পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামের অবস্থানস্থল ও আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির স্থান।

ফতোওয়া হজ্জ: হজ্জ সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৯০টি প্রশ্নোত্তর



ফতোওয়া হজ্জ: হজ্জ সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৯০টি প্রশ্নোত্তর
মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী 

প্রশ্নঃ (৪৪৯) বেনামাযীর হজ্জের বিধান কি? যদি এ ব্যক্তি তওবা করে, তবে সমস্ত ইবাদত কি কাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃ নামায পরিত্যাগ করা কুফরী। নামায ছেড়ে দিলে মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। একথার দলীল হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ্‌ ও ছাহাবায়ে কেরামের উক্তি। অতএব যে লোক নামায পড়ে না তার জন্য মক্কা শরীফে প্রবেশ করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন,
]يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَذَا[
“হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা হচ্ছে একেবারেই অপবিত্র, অতএব তারা যেন এ বছরের পর মসজিদুল হারামের নিকটেও আসতে না পারে।” (সূরা তাওবাঃ ২৮)

যে ব্যক্তি নামায পড়ে না, তার হজ্জ বিশুদ্ধ হবেনা এবং কবূলও হবেনা। কেননা কাফেরের কোন ইবাদতই সঠিক নয়। আল্লাহ্‌ বলেন,
]وَمَا مَنَعَهُمْ أَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ[
“আর তাদের দান খায়রাত গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এজন্যে যে, তারা আল্লাহ্‌র সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, তারা শৈথিল্যের সাথে ছাড়া ছালাত আদায় করে না। আর তারা দান করে না, কিন্তু অনিচ্ছার সাথে করে।” (সূরা তাওবাঃ ৫৪)

যে সমস্ত আমল তারা পূর্বে পরিত্যাগ করেছে তা কাযা আদায় করা আবশ্যক নয়। কেননা আল্লাহ বলেন,
]قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ[
“(হে নবী ব!) আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন, তারা যদি অনাচার থেকে বিরত থাকে (এবং আল্লাহর দ্বীনে ফিরে আসে) তবে পূর্বে যা হয়েছে তা আল্লাহ্‌ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আনফালঃ ৩৮)

সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ অন্যায় করেছে সে যেন আল্লাহর কাছে খাঁটিভাবে তওবা করে। নেক কাজ চালিয়ে যায়। বেশী বেশী তওবা ইসে-গফার ও অধিকহারে ভাল কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। আল্লাহ্‌ বলেন,
]قُلْ يَاعِبَادِي الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ[
“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো তোমরা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গুণাহ্‌ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা যুমারঃ ৫৩)

যারা তওবা করতে চায় আল্লাহ্‌ তাদের জন্য এই আয়াতগুলো নাযিল করেছেন। সুতরাং বান্দা যে পাপই করে না কেন্ত যদি শির্কও হয় এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহই সরল সঠিক পথে হেদায়াতদানকারী।

প্রশ্নঃ (৪৫০) ব্যাপকভাবে দেখা যায় অনেক মুসলমান বিশেষ করে অনেক যুবক ফরয হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে শীথিলতা প্রদর্শন করে। এবছর নয় ঐ বছর এভাবে বিলম্ব করে। কখনো কর্ম ব্যস্ততার ওযর পেশ করে। এদেরকে আপনার নছীহত কি? কখনো দেখা যায় কোন কোন পিতা যুবক ছেলেদেরকে ফরয হজ্জ আদায় করতে বাধা দেয় এই যুক্তিতে যে, এখনো তাদের বয়স হয়নি, হজ্জের ক্লান্তি সহ্য করতে পারবে না। অথচ হজ্জের পূর্ণ শর্ত তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। পিতার এ কাজের বিধান কি? এধরণের পিতার আনুগত্য করার বিধান কি?

প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা (২য় পর্ব)




১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

১৭শ অধ্যায়
বিবিধ মাস্‌আলা

প্রঃ ১৮২- আমরা জানি যে, শিশুদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। কিন্তু তারা হজ্জ করলে তা কি শুদ্ধ হবে?
উঃ- হাঁ। শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সাওয়াব পাবে শিশুর মাতা-পিতা। তবে বালেগ হওয়ার পর যদি পূর্বে বর্ণিত চারটি শর্ত (প্রশ্ন নং-১০) পূরণ হয় তবে তাকে আবার ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে।
প্রঃ ১৮৩- মেয়েরা কি একাকী হজ্জে যেতে পারবে?
উঃ- না। মেয়েলোক হলে তার সাথে পিতা, স্বামী, ভাই, ছেলে বা অন্য মাহরাম পুরুষ থাকতে হবে। দুলাভাই, দেবর, চাচাতো-মামাতো-খালাতো-ফুফাতো ভাই তথা গায়রে মাহরাম হলে চলবে না।
প্রঃ ১৮৪- মৃত ব্যক্তি যার উপর হজ্জ ফরজ ছিল বা মান্নতী হজ্জ ছিল এমন ব্যক্তির হজ্জ পালনের বিধান কি?
উঃ- মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ দিয়েই তার পরিবারের লোকেরা কাযা হজ্জ করিয়ে নিবে।
প্রঃ ১৮৫- সুস্থ অবস্থায় হজ্জ ফরজ হওয়ার পর বিলম্ব করার কারণে পরে যদি অসুস্থ বা রোগাগ্রস্ত হয়ে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কিভাবে হজ্জ করবে?
উঃ- অন্য কাউকে পাঠিয়ে ফরজ হজ্জ কাযা করিয়ে নিতে হবে।
প্রঃ ১৮৬- নিজে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন অবস্থায় কাউকে পাঠিয়ে বদলী হজ্জ করিয়ে নেয়ার পর যদি আবার সুস্থতা ফিরে আসে তাহলে কি নিজে আবার হজ্জে যাওয়া লাগবে?
উঃ- না, আর যেতে হবে না। কেননা, ফরজ তার আদায় হয়ে গেছে।
প্রঃ ১৮৭- যে কেউ কি বদলী হজ্জ করতে পারবে?
উঃ- না। যে ব্যক্তি কারোর বদলী হজ্জে যাবে তার নিজের হজ্জ আগে করে নিতে হবে। (আবূ দাঊদ, ইবনে মাজাহ)
প্রঃ ১৮৮- বদলী হজ্জ হলে কোনটি উত্তম-তামাত্তু, কিরান, নাকি ইফ্‌রাদ?
উঃ- যিনি বদলী হজ্জ করাবেন তাঁর পক্ষ থেকে কোন শর্ত না থাকলে যেকোনটি করা যায়।

প্রঃ ১৮৯- কর্জ করে হজ্জ করা কেমন?
উঃ- স্বচ্ছলতা না থাকলে কর্জ করে হজ্জ করার অনুমতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেননি। (বাইহাকী)
প্রঃ ১৯০- হারাম টাকা দিয়ে হজ্জ করলে তা আদায় হবে কিনা?
উঃ- অধিকাংশ আলেমের মতে হজ্জের ফরয আদায় হয়ে যাবে, তবে মাল হারাম হওয়ার কারণে গোনাহ হবে। তবে হাম্বলী মাযহাবে হারাম টাকা দিয়ে হজ্জ হবে না।
প্রঃ ১৯১- হজ্জে গিয়ে ব্যবসা করা কেমন?
উঃ- এটা জায়েয আছে।

প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা



بسم الله الرحمن الرحيم

ভূমিকা

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله
সরল ভাষায় হজ্জ ও উমরা বিষয়ে একটি বই লেখার পরিকল্পনা করেছিলাম অনেক আগেই। বিগত ২০০৬ এর জানুয়ারীর (১৪২৬ হিঃ) হজ্জে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে হাজীদের কিছু ভুল-ত্রুটি আমার নযরে আসায় বইটি লিখার আগ্রহ বেড়ে যায় বহুগুণে। আল্লাহর রহমতে রেফারেন্স হিসেবে পেয়ে গেলাম ২০-এর কাছাকাছি শুধু আরবী গ্রন্থকারদের কিতাব। পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য হাদীসে জিবরীলের মত এটাকে প্রশ্নোত্তর আকারে সাজালাম। পড়লে মনে হবে যেন দু'জন বসে কথা বলছেন। এদেশের হাজীদের আনুমানিক ৯৫% ভাগই সাধারণ শিক্ষিত। একটা নির্ভুল হজ্জ আদায়ের জন্য তারাই আমার এ বইয়ের প্রধান টার্গেট। প্রতিটি মাসআলা বিশুদ্ধ দলীলের ভিত্তিতে সাজাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। চারজন বিশেষজ্ঞ ফকীহসহ আরো কয়েকজন অভিজ্ঞ আলেম এর বিশুদ্ধতা যাচাই ও এ বিষয়ে সুন্দর পরামর্শ প্রদানে আমাকে সহায়তা করেছেন। তাদের পুরস্কার আল্লাহর কাছে রইল। ছোট্ট কলেবরে সর্বাধিক তথ্য দিতে চেষ্টা করেছি। বইটি যাতে সর্বমহলের কাছে সহজসাধ্য হয় সেজন্য খুব জটিল, সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ ও বিস্তারিত মাসআলায় যাইনি। এ বইটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হবে বিষয়বস্তুর সহজ উপস্থাপনা, অতি সহজে হজ্জ-উমরা বুঝতে পারা। অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা ও আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমার কাম্য। ২০০৬ ডিসেম্বরে বইটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে আল্লাহর রহমতে ২০০৮ এর এপ্রিলে মাত্র দেড় বছরে চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের ও লক্ষ লক্ষ মুসলমানের উমরা ও হজ্জ কবূল করুন এবং আখিরাতে আমাদের নাজাত দিন। আমীন।

বিনীত
মোঃ নুরুল ইসলাম

সূচীপত্র 

১ হজ্জের ধারাবাহিক কাজ
২ হজ্জ ও উমরার ফযীলত
৩ হজ্জ ও উমরার আহকাম
৪ মীকাত
৫ ইহরাম
৬ মক্কায় প্রবেশ ও উমরা পালন
৭ তাওয়াফ করা
৮ সাঈ করা
৯ চুলকাটা
১০ ৮ই যিলহজ্জ তারিখের কাজ
১১ আরাফাতের মাঠে অবস্থান
১২ মুযদালিফায় রাত্রি যাপন
১৩ কংকর নিক্ষেপ
১৪ হাদী (পশু জবাই), কুরবানী, দম
১৫ তাওয়াফে ইফাদা
১৬ মিনায় রাত্রিযাপন
১৭ বিবিধ মাসআলা
১৮ বিদায়ী তাওয়াফ
১৯ মসজিদে নববী যিয়ারত
২০ সফরের আদব
২১ কুরআনে বর্ণিত দোয়া
২২ হাদীসে শিখানো দোয়া
২৩ তথ্যপুঞ্জি

বইঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর - ফ্রি ডাউনলোড



শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

লেখক: শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী
লিসান্স: মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদিআরব
(সৌদী আরবের আল-মাজমাআ অঞ্চলের দাওয়াত সেন্টারে কর্মরত দাওয়াত-কর্মী এবং বাংলা ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক ও অনুবাদক।) 


বইটি স্ক্যান করে পিডিএফ ভার্সনে প্রদান করা হয়েছে। তাই বইটি পড়তে আপনার কম্পিউটারে ‘এডোব রিডার’ সফটোওয়্যারটি থাকা অপরিহার্য। এটি আপনার কম্পিউটারে আগে থেকে না থাকলে http://get.adobe.com/reader/ লিংকে ক্লিক করে এখনই তা ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিন।



Tuesday 27 January 2015

ধর্ষকের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করা কি ওয়াজিব?



প্রশ্ন: কেউ যদি কোন নারীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় তখন সেই নারীর উপর আত্মরক্ষা করা কি ওয়াজিব? আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করা জায়েয হবে কি?

উত্তর: 

যে নারীর সাথে জোরপূর্বক যেনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে সে নারীর উপর আত্মরক্ষা করা ফরজ। তিনি কিছুতেই দুর্বৃত্তের কাছে হার মানবেন না। এজন্য যদি দুর্বৃত্তকে হত্যা করে নিজেকে বাঁচাতে হয় সেটা করবেন। এই আত্মরক্ষা ফরজ। ধর্ষণ করতে উদ্যত ব্যক্তিকে হত্যা করার কারণে তিনি দায়ী হবেন না। এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে- ইমাম আহমাদ ও ইবনে হিব্বান কর্তৃক সংকলিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস, 
“যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ।” 
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় এসেছে- “যে ব্যক্তি তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল সে শহীদ” অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী অথবা অন্য কোন নিকটাত্মীয় নারীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেল (সে শহীদ)।

যদি স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্য লড়াই করা ও ধর্ষকের হাত থেকে স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হওয়া স্বামীর জন্য বৈধ হয় তাহলে কোন নারী নিজের ইজ্জত নিজে রক্ষা করার জন্য প্রাণান্তকর লড়াই করা; এই ধর্ষক, জালিম ও দুর্বৃত্তের হাতে নিজেকে তুলে না দিয়ে নিহত হওয়া সে নারীর জন্য বৈধ হওয়া অধিক যুক্তিপূর্ণ। কেননা তিনি যদি নিহত হন তাহলে তিনি শহীদ। যেমনিভাবে কোন নারীর স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে যদি নিহত হন তিনি শহীদ। শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা অনেক বড়। আল্লাহর আনুগত্যের পথে, তাঁর পছন্দনীয় পথে মারা না গেলে এ মর্যাদা লাভ করা যায় না। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা এ ধরনের প্রতিরোধকে তথা কোন ব্যক্তির তার স্ত্রীর ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে এবং কোন নারীর তার নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য লড়াই করাকে পছন্দ করেন। আর যদি কোন নারী আত্মরক্ষা করতে সমর্থ্ না হন, পাপিষ্ঠ ও দুশ্চরিত্র লোকটি যদি তাকে পরাস্ত করে তার সাথে যেনাতে লিপ্ত হয় তাহলে এ নারীর উপর হদ্দ (যেনার দণ্ড) অথবা এর চেয়ে লঘু কোন শাস্তি কার্যকর করা হবে না। কারণ হদ্দ কায়েম করা হয় সীমালঙ্ঘনকারী, পাপী ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তির উপর।

আহলে সুন্নাহ, আহলে হাদীস ও আহলে বায়ত কি?


বিসমিল্লাহ, ওয়ালহা'মদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বা'দ।
‪#‎আহলে_সুন্নাহ‬ কি?
“আহলে সুন্নাহ” – অর্থ হচ্ছে সুন্নাহর অনুসরণকারী। যারা শিরক-বিদআত মুক্ত থেকে পরিপূর্ণভাবে সত্যিকার অর্থে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাহর অনুসরণ করে, ঠিক সেইভাবে যেইভাবে সাহাবারা করেছিলেন তারাই হচ্ছে প্রকৃত আহলে সুন্নাহ, যাদেরকে সংক্ষেপে অনেক সময় “সুন্নী” বলা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন - এই উম্মত ৭৩টা দলে ভাগ হবে - যার মধ্যে ৭২টা দলি জাহান্নামে যাবে। আর একটা মাত্র দল জান্নাতে যাবে। নাজাত প্রাপ্ত সেই দলটা হলো - যারা মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবারা যে তরীকার উপরে ছিলেন সেটাকে অনুসরণকরবে – শুধু মাত্র তারাই নাজাত পাবে। তাবেয়ীদের যুগ থেকে বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের দল বের হয়, যেমন খারেজী, শিয়া, মুহতাজিলা ইত্যাদি। সেই ভ্রান্ত দলগুলো থেকে সত্যিকারের নাজাতপ্রাপ্ত দলকে পরিচয় দেওয়ার জন্যে তাবেয়ীদের যুগ থেকেই “আহলে সুন্নাহ” বলে পরিচয় দেওয়া শুরু হয়। যেমন - তাবে'ঈ ইমাম ইবনু সীরীন র'হিমাহুল্লাহ বলেনঃ
"মানুষেরা আগে হাদীসের সনদের ব্যাপারে জিগ্যেস করতোনা। কিন্তু যখন ফিতনাহ এসে পড়ল, তখন তারা বলা শুরু করলেন, তোমাদের হাদীসের রাবী বা বর্ণনাকারীর নাম বল। এরপর কেবল "আহলুস সুন্নাহ" ব্যক্তিদের হাদীস গ্রহণ করা হত আর "আহলুল বিদ'আ হলে গ্রহণ করা হতনা।"
সহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দিমাহ অধ্যায়।
উল্লেখ্য, কেউ নিজেকে আহলে সুন্নাহ দাবী করলেই সেসুন্নী হয়ে যায়না। ভারত বাংলাদেশে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত বা সুন্নী পরিচয় দেয় এমন কিছু মানুষ আছে (আসলে তারা রিজভী/ব্রেলভী) – এরা হচ্ছে খালেস কবরপূজারী, পীরপূজারী। আজমীর, শাহজালাল, বায়েজীদ বোস্তামী ওয়ালা, মাইজভান্ডারী, দেওয়ানবাগী,কুতুববাগী - এরাই হলো সেই এই দলের নেতা। এদের ঈমান আছে কিনা সেটাই আলোচনার বিষয়।
আরো কিছু দল আছে যারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাহ বলে পরিচয় দেয় – কিন্তু তাদের মাঝেও সুন্নাহ থেকে দূরত্ব দেখা যায়। বহুল প্রচলিত এমন দুটি দল হলো – তাবলিগ জামাত ও জামাতে ইসলামী। এরা মুসলিম কিন্তু এদের মাঝে অনেক ভুল-ভ্রান্তি আছে যা সংশোধন করে নেওয়া তাদের জন্য "ওয়াজিব"।
তাই শুধু আহলে সুন্নাহ নাম দাবী করলেই হবেনা। ঈমান ও আমলে কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের মতো হলেই প্রকৃত আহলে সুন্নাহ হওয়া যাবে।
‪#‎আহলে_হাদীস‬ কি?
“আহলে হাদীস” – অর্থ হচ্ছে হাদীসের অনুসারী। যারা কোনো মানুষ বা মানুষের বানানো মতবাদ যেমন (মাযহাব, তরীকা, পীর, ইমাম) অন্ধ অনুসরণ করেনা, বিশুদ্ধভা্বে হাদীসকে অনুসরণ করে তারাই হচ্ছে আহলে হাদীস। এখানে “হাদীস” দ্বারা কুরানুল কারীম ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। কারণ কুরআন ও হাদীসে “কুরানুল কারীমকেও” হাদীস বলা হয়েছে। যেমন –
“যদি তারা (কাফেররা) এই হাদীসের (কুরানুল কারীম) প্রতি ঈমান না আনে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবতঃ আপনি আফসোস করতে করতে আপনি নিজের প্রাণ ধ্বংস করে দেবেন! (সুরা আল-কাহফঃ ৬)।
“আল্লাহ নাযিল করেছেন “উত্তম হাদীস” (উত্তম বাণী,কুরানুল কারীম),যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, বার বার পাঠ করা হয়।” (সুরা যুমারঃ ২৩)।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ফা ইন্না খায়রাল হাদীসি কিতাবুল্লাহ” – জেনে রাখো নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস (কথা/বাণী) হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কুরানুল কারীম)।
সহীহ মুসলিম, মিশকাত।

Monday 26 January 2015

মৃত-ব্যক্তির প্রতি সাওয়াব প্রেরণের মাসনূন পদ্ধতি



মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সফলতা, মুক্তি, শান্তি ও নেয়ামত লাভের ইচ্ছা ও চেষ্টা সকল ধর্মের অনুসারিগণই করেন। এই জাতীয় সকল কর্ম একান্তই ধর্মীয় ও বিশ্বাসভিত্তিক। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ধর্মহীনতা ও অজ্ঞানতার প্রসারের ফলে এ বিষয়ে অনেক কুসংস্কার ও উদ্ভট ধারণা বিরাজমান। যেমন, অনেক সমাজে মনে করা হয়, মৃতের জীবিত আত্মীয়স্বজনের দান, খাদ্য প্রদান বা কিছু অনুষ্ঠান পালনের উপরে মৃতব্যক্তির পারলৌকিক মুক্তি নির্ভরশীল।

ইসলামে এ সকল কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে মানুষের পারলৌকিক মুক্তি, শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে তার নিজের কর্মের উপরে। সৎকর্মশীল মানুষের মৃত্যুর পরে বিশ্বের কোথাও কিছু না করা হলে, এমনকি তাঁর দেহের সৎকার করা না হলেও তাঁর কিছুই আসে যায় না। অপরদিকে জীবদ্দশায় যিনি শির্ক, কুফর, ইসলাম বিরোধিতা, ইসলামের বিধিনিষেধের ও ইসলামী কর্ম ও আচরণের প্রতি অবজ্ঞা, জুলুম, অত্যাচার, অবৈধ উপার্জন, ফাঁকি, ধোঁকা ইত্যাদিতে লিপ্ত থেকেছেন তার জন্য তার মৃত্যুর পরে বিশ্বের সকল মানুষ একযোগে সকল প্রকার ‘শ্রাদ্ধ’, অনুষ্ঠান, ‘প্রার্থনা’ ইত্যাদি করলেও তার কোনো লাভ হবে না।

তবে যদি কোনো ব্যক্তি বিশুদ্ধ ঈমানসহ ইসলামের ছায়াতলে থেকে সৎকর্ম করে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে জীবিত ব্যক্তিগণ তাঁর জন্য প্রার্থনা করলে প্রার্থনার কারণে দয়াময় আল্লাহ তাঁর সাধারণ অপরাধ ক্ষমা করতে পারেন বা তাকে সাওয়াব ও করুনা দান করতে পারেন। এছাড়া এই ধরনের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কোনো জীবিত মানুষ দান বা জনকল্যাণমূলক কর্ম করলে সেই কর্মের সাওয়াব করুনাময় আল্লাহ উক্ত মৃতব্যক্তিকে প্রদান করতে পারেন। এই ধরনের কর্মকে সাধারণত আরবিতে ‘‘ঈসালে সাওয়াব’’ ও ফারসিতে ‘‘সাওয়াব রেসানী’’ বলা হয় যার অর্থ: সাওয়াব পৌঁছানো।

তাহলে আমরা দেখছি যে, মানুষের মুক্তি নির্ভর করে মূলত নিজের কর্মের উপর। তবে বিশুদ্ধ ঈমানদার সৎ মানুষদের জন্য দু‘আও দান করা যায়। কুরআন কারীমে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, দু‘আ ও দান-সদকা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে জীবিত ব্যক্তির এ সকল কর্মের সাওয়াব তাঁরা লাভ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মৃতের দায়িত্বে হজ্জপালন বাকি থাকলে তা তাঁর পক্ষ থেকে পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মৃত ব্যক্তির জন্যে ইছালে ছাওয়াব: শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি


  
ইছালে ছাওয়াব কি :
‘ইছালে ছাওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সওয়াব’। আভিধানিক অর্থ সওয়াব পৌঁছে দেয়া। অনেকে বলে থাকেন ‘সওয়াব রেসানী।’ এ শব্দটি ফারসি ভাষার হলেও, বাংলায় বহুল ব্যবহৃত বলে সাধারণ সমাজে খুবই পরিচিত। কেহ কেহ বলেন—‘সওয়াব বখশে দেয়া।’ নানা প্রকাশে শব্দগুলোর অর্থ ও মর্ম একই : পুণ্য বা সওয়াব প্রেরণ করা।
পরিভাষায় ইছালে ছাওয়াব হল, মৃত ব্যক্তির কল্যাণের জন্য কোন নেক আমল (সৎকর্ম) বা ইবাদত-বন্দেগী করে তা উক্ত ব্যক্তির জন্য উৎসর্গ করা।

ইছালে ছাওয়াবের প্রচলিত পদ্ধতিসমূহ
যে প্রিয়জন আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন, আমরা সকলেই তার জন্য এমন কিছু করতে চাই যা হবে তার জন্য কল্যাণকর ও শুভ পরিণতির বাহক। তাদের আত্মার কাছে উপহার হিসেবে পৌঁছে যাবে সে কাজের প্রতিফল ; ফলে আল্লাহ তাদের ইহকালিন পাপ মোচন করে সুখে রাখবেন তাদেরকে, ভরিয়ে দিবেন নানা সমৃদ্ধিতে। এ উদ্দেশ্যে কিছু সৎকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগী করে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। এ মহৎ উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের বাঙ্গালী মুসলমান সমাজের লোকেরা নিজেদের বিশ্বাস, প্রথা, রেওয়াজ অনুসারে বিভিন্ন ধরনের কাজ বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল:—

১-কুলখানি     
              
কুলখানি ফারসি শব্দ। আভিধানিক অর্থ কুল পড়া—পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারার যে সকল সূরার শুরুতে কুল শব্দ রয়েছে সেগুলো পাঠ করা। কিন্তু পরিভাষায় কুলখানির অর্থ একটু ভিন্ন: কোন ব্যক্তির ইন্তেকালের তিন দিনের মাথায় তার মাগফিরাত ও আত্মার শান্তি কামনা করে মীলাদ বা কুরআন খতম অথবা অন্য কিছু পাঠের মাধ্যমে দুআ-মুনাজাতের অনুষ্ঠান করা। অনুষ্ঠান শেষে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য খাবার বা মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা করা হয়, যাকে বলা হয় তাবারুক। কুলখানির আভিধানিক অর্থ ও পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে বিধান করা যেতে পারে যে, কোন এক সময় মৃত ব্যক্তিদের ইছালে ছাওয়াবের জন্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুল বিশিষ্ট তিনটি অথবা চারটি সুরা পাঠ করা হত, অথবা সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করা হত ; পরবর্তীতে এ অনুষ্ঠানটিকে সম্প্রসারিত করে তাতে অন্যান্য বিষয় যোগ করা হয়েছে। তবে কুলখানি নামটি রয়ে গেছে।

মৃত ব্যক্তির জন্যে ইছালে ছাওয়াব: শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি


  
ইছালে ছাওয়াব কি :
‘ইছালে ছাওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সওয়াব’। আভিধানিক অর্থ সওয়াব পৌঁছে দেয়া। অনেকে বলে থাকেন ‘সওয়াব রেসানী।’ এ শব্দটি ফারসি ভাষার হলেও, বাংলায় বহুল ব্যবহৃত বলে সাধারণ সমাজে খুবই পরিচিত। কেহ কেহ বলেন—‘সওয়াব বখশে দেয়া।’ নানা প্রকাশে শব্দগুলোর অর্থ ও মর্ম একই : পুণ্য বা সওয়াব প্রেরণ করা।
পরিভাষায় ইছালে ছাওয়াব হল, মৃত ব্যক্তির কল্যাণের জন্য কোন নেক আমল (সৎকর্ম) বা ইবাদত-বন্দেগী করে তা উক্ত ব্যক্তির জন্য উৎসর্গ করা।

ইছালে ছাওয়াবের প্রচলিত পদ্ধতিসমূহ
যে প্রিয়জন আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন, আমরা সকলেই তার জন্য এমন কিছু করতে চাই যা হবে তার জন্য কল্যাণকর ও শুভ পরিণতির বাহক। তাদের আত্মার কাছে উপহার হিসেবে পৌঁছে যাবে সে কাজের প্রতিফল ; ফলে আল্লাহ তাদের ইহকালিন পাপ মোচন করে সুখে রাখবেন তাদেরকে, ভরিয়ে দিবেন নানা সমৃদ্ধিতে। এ উদ্দেশ্যে কিছু সৎকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগী করে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে নিবেদন করতে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। এ মহৎ উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের বাঙ্গালী মুসলমান সমাজের লোকেরা নিজেদের বিশ্বাস, প্রথা, রেওয়াজ অনুসারে বিভিন্ন ধরনের কাজ বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল:—

১-কুলখানি     
              
কুলখানি ফারসি শব্দ। আভিধানিক অর্থ কুল পড়া—পবিত্র কুরআনের ত্রিশতম পারার যে সকল সূরার শুরুতে কুল শব্দ রয়েছে সেগুলো পাঠ করা। কিন্তু পরিভাষায় কুলখানির অর্থ একটু ভিন্ন: কোন ব্যক্তির ইন্তেকালের তিন দিনের মাথায় তার মাগফিরাত ও আত্মার শান্তি কামনা করে মীলাদ বা কুরআন খতম অথবা অন্য কিছু পাঠের মাধ্যমে দুআ-মুনাজাতের অনুষ্ঠান করা। অনুষ্ঠান শেষে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য খাবার বা মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা করা হয়, যাকে বলা হয় তাবারুক। কুলখানির আভিধানিক অর্থ ও পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে বিধান করা যেতে পারে যে, কোন এক সময় মৃত ব্যক্তিদের ইছালে ছাওয়াবের জন্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুল বিশিষ্ট তিনটি অথবা চারটি সুরা পাঠ করা হত, অথবা সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করা হত ; পরবর্তীতে এ অনুষ্ঠানটিকে সম্প্রসারিত করে তাতে অন্যান্য বিষয় যোগ করা হয়েছে। তবে কুলখানি নামটি রয়ে গেছে।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...