৭১১ খৃষ্টাব্দে বীরসেনা তারেক্ব বিন যিয়াদের সেনাপতিত্বে মুসলিমগণ ইউরোপের 'স্পেন' জয়লাভ করেন। ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি মুসলিম শাসনাধীন রাষ্ট্র ছিল। এই দীর্ঘ আটশত বছরে মুসলিমগণ ইউরোপকে ঢেলে সাজালেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ইত্যাদিতে দেশকে নূতন রূপ দিয়েছিলেন।
মুসলমানদের যখন লক্ষ লক্ষ গ্রন্থরাজি, তখন রানী ইথাবিলার গ্রন্থাগারে মাত্র ২০১ খানা বই। ফ্রান্সের শাহী কুতুব-খানায় ৯০০ খানা বই ছিল। মুসলমানদের যেখানে বহু বিষয়ের বই ছিল, সেখানে খৃষ্টানদের কেবল ইনজীল ও তওরাতের বিভিন্ন সংস্করণ। (তথ্য সংগ্রহ, উর্দু তরজুমান, ১লা নভেম্বর ১৯৮২ খৃঃ সংখ্যা থেকে)
এরপর পতনঃ
বিলাসিতা ও আপোষ-দ্বন্দ্বের জন্য খৃষ্টানরা মওকা পেয়ে গেল। রানী ইথাবিলা ও রাজা ফার্ডিন্যান্ড বৈবাহিকসূত্রে আবদ্ধ হয়ে মুসলিম নিধনে উঠে পড়ে লাগলেন। মুসলিমগণ পরাজিত হতে লাগলেন। শেষে তদানীন্তন স্পেনের রাজধানী গ্রানাডায় আশ্রয় নিলেন। রাজা ফার্ডিন্যান্ড বললেন, মুসলিম বাহিনী যদি নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে মসজিদে অবস্থান করে, তবে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে। মুসলমানরা আল্লাহর উপর 'তাওয়াক্কুল' হারিয়ে রাজার কথায় বিশ্বাস করে মসজিদে মসজিদে নিরস্ত্র অবস্থায় প্রবেশ করলেন। অমনি রাজা নিজের সেনাদেরকে আদেশ করলেন যে, মসজিদগুলোতে শিকল তুলে আগুন ধরিয়ে দাও।
যেমনি আদেশ তেমনি কাজ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে মাছ পোড়া করে দিল। পতনোত্তর কালে বিদ্রোহীর নির্দেশে গ্রানাডায় ৮০ হাজার গ্রন্থ পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হল। আর সারা দেশ থেকে আরাবী ক্লাসের লক্ষাধিক গ্রন্থ পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করা হল!
এর দুঃখ কেবল মুসলমানদেরই নয় বরং ঐতিহাসিক 'স্কট' বলেছেন, 'এ এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, এমন এক মুসীবত যার উপর শুধু বর্তমান যুগ নয়, বরং আগামী দিনের প্রত্যেক জ্ঞান-পিপাসু ব্যক্তিকে অশ্রু বিসর্জন করতে হবে। স্পেনের পতনের মত অত বড় পতন বুঝি মুসলিমদের আর হয়নি। এই পতনের তারীখ, ১৪৯২ খৃষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল।
এই দিনে রাজা ফার্ডিন্যান্ড ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, হে মুসলিম! তোমরা 'এপ্রিল ফুল' Fool অর্থে বোকা। বোকা মুসলমান আজও পয়লা এপ্রিলে সেই রসিকতার খেলা খেলে থাকে। এই খেলাতে যে, মুসলমানদের অভিশাপ ও পতন লুকিয়ে আছে তা মুসলমানদের জানা নেই। এ ইতিহাস কান্নার ইতিহাস। এপ্রিল ফুলের রসিকতা খেলা খৃষ্টানদের পক্ষেই শোভা পায়। মুসলমানদের জন্য এটা মোটেই শোভা পায় না।
খৃষ্টানবাহিনী রাজত্ব করায়ত্ব করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা মুসলমানদের রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধন ভান্ডার মূল্যবান গ্রন্থগুলি না পুড়িয়ে যত্ন করে গচ্ছিত করে নিজেদের করায়ত্ত করেছে। পরবর্তী কালে ল্যাটিন ইত্যাদি ভাষাতে অনুবাদ করে মুসলমানদের নাম উচ্ছেদ করে নিজেদের নাম বসিয়ে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আরবী কবি এরই শোক-কাহিনী বড় ব্যাথাতুর মনে গেয়েছেন। তার বাংলা অনুবাদটি এই রকমঃ-
রাজ্য গেছে, তাতে কান্না কেন? সে তো ক্ষণেকের বস্তু!
শাশ্বত আইন মেনে নিতে হয়
নিষ্কৃতি নেই তা হতে;
কিন্তু ঐ বিদ্যাধন, মতিসম গ্রন্থরাজী
নিয়ে গেছে ইংরেজ জাতি,
দেখিলে কান্না আসে
হৃদয় দগ্ধ হয় ক্ষতে।
(বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, 'এপ্রিল ফুলের বেড়াজালে মুসলিম সমাজ' থেকে সংগৃহীত)
বইঃ বক্তৃতাসম্ভার
উস্তায মওলানা আব্দুর রঊফ শামীম (রাহিমাহুল্লাহ)
(মতান্তরে এই প্রেক্ষাপট ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়। উক্ত করুণ ইতিহাসের সাথে ১লা এপ্রিলের যোগসূত্র নেই। আমি নিজে মদীনা ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ উস্তাযকে সরাসরি এপ্রিল ফুলের ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি মুসলিমদের দুর্ভাগ্যের ঐ ইতিহাসের সাথে ১লা এপ্রিলের কোন যোগ থাকার কথা পড়েননি বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।)
---আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী