Tuesday 5 July 2016

ঈদের বিধিবিধান


admin-ajax
গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد:
ভূমিকা: অবারিত আনন্দের বার্তা নিয়ে যখন ঈদের এক ফাঁলি চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ভেসে উঠে তখন সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। শিশু-কিশোরগণ আনন্দে  উদ্বেলিত হয়ে প্রজাবতীর মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। এই ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে  একটি বড় নে’য়ামত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করে দেখলেন, মদীনাবাসী খেলা-ধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কি? তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলী যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্যদিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” (সুনান আবূদাঊদ, হাদীস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানী) (রহঃ) ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা  ঈদ ঊদ্যাপন করি তবে একদিকে যেমন ঈদের অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে আমাদের পার্থিব জীবন অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে আমাদের পরকালিন জিন্দেগী।
ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ছাড়া অন্য কোন ঈদ-উৎসব পালন করা: উপরোল্লিখিত হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামী শরীয়তে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতিরেকে তৃতীয় কোন ঈদ বা উৎসব পালন করার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে কত ধরণের ঈদ ও ঊৎসব  জমজমাট ভাবে পালন করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন, ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম উৎসব। বরং এটাকে ‘সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের  সুস্পষ্ট বিরোধী। অনুরূপভাবে তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, খৃষ্ট নববর্ষ, এপ্রিল ফুল, বড় দিন (Xmas Day), ইত্যাদি অগণিত  উৎসব আমদের মুসলানগণ অবলিলায় পালন করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও চিন্তা করে দেখে না যে, আসলে এগুলোর উৎস কোথায়? এসব মূলত: হিন্দু ও খৃষ্টানদের থেকে আমদানিকৃত সংষ্কৃতি যার সাথে মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে গেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (আবূদাউদ হাদীস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী)

মসজিদে হারামের জুমার খুতবা: আইএসের ভ্রান্তির চিত্র


77076

মসজিদে হারামের জুমার খুতবা
আইএসের ভ্রান্তির চিত্র
শায়খ ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ বিন হুমাইদ
কোনো ভূমিকা ও পূর্বকথা ছাড়াই সব মুসলিম বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য আইএস নামক বিপথগামী গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি। আঞ্চিলক ও আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট রক্তপিপাসু দুর্বৃত্ত দলটি যে অন্যায় পথ ও ভুল পন্থা অবলম্ব্বন করছে তা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির কাছে অস্পষ্ট নয়। আলেমসমাজ ও সাধারণ মুসলিম সমাজমাত্রই জানে, সীমা লঙ্ঘনকারী খারেজি সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান চরিত্র হলো তারা অন্যান্য সাধারণ মুসলামানকে কাফের আখ্যায়িত করে, এমনকি সাহাবায়ে কেরামকেও তারা কাফের বলে বেড়ায়। ইসলামপন্থীদের হত্যা করে। পৌত্তলিকদের নিমন্ত্রণ জানায়। পথভ্রষ্ট আইএস গোষ্ঠীও খারেজিদের পথ ও মত অবলম্ব্বন করেছে। মুসলিম দেশ ও তার মুসলিম অধিবাসীকে কাফের বলে ঘোষণা করেছে। তাদের বিরোধিতাকারী সবার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গেও তারা লড়াইয়ে জড়িয়েছে। কেউ তাদের বিরোধিতা করলেই তাদের ওপর মুরতাদ ও কাফের হওয়ার হুকুম আরোপ করছে।
মানুষ তাদের কাছে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত- হয়তো নিরেট কাফের অথবা মুরতাদ অথবা মোনাফেক। আর তাদের সরকারি মুখপাত্রের ভাষ্য অনুযায়ী মুরতাদের মাথা তাদের কাছে হাজারটা কাফের শত্রুর চেয়েও অধিক প্রিয়। অথচ বিশিষ্ট হক্কানি আলেম কাজী আবুল ওয়ালিদ বলেন, একজন মুসলিমের রক্ত প্রবাহে ভুল করার চেয়ে হাজারটা কাফেরকে ছেড়ে দেয়ার ভুলের চেয়ে হালকা। এখন এই দুই শরিয়ত ও ফতোয়ার মাঝে তুলনা করে দেখুন কারা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ ভ্রষ্ট দলের অনুসারীরা গর্ব করে বলে, তাদের পানীয় হলো রক্ত, তাদের সহচর হলো খ-িত মস্তক। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে এদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।

Monday 4 July 2016

কোন কোন প্রকারের খাবার দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়?



উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

মানুষ যে যে প্রকারের খাবারকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেসব খাবার দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়। যেমন- গম, ভুট্টা, চাল, সীমের বিচি, ডাল, ছোলা, ফূল (একজাতীয় ডাল), নূডুলস, গোশত ইত্যাদি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিতরা হিসেবে এক স্বা’ খাবার প্রদান করা ফরয করেছেন। যেসব খাবার সাহাবীগণের প্রধান খাদ্য ছিল তাঁরা সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করতেন। সহিহ বুখারী (১৫১০) ও সহিহ মুসলিমে (৯৮৫) আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেন: “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যামানায় ঈদের দিন এক স্বা খাদ্যদ্রব্য (ফিতরা) হিসেবে প্রদান করতাম। আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন: তখন আমাদের খাদ্য ছিল— যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।” অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেন: “যখন আমাদের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন তখন আমরা ছোট-বড়, স্বাধীন-ক্রীতদাস সবার পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে এক স্বা’ খাদ্য কিংবা এক স্বা’ পনির কিংবা এক স্বা’ যব কিংবা এক স্বা’ খেজুর কিংবা এক স্বা’ কিসমিস আদায় করতাম।”

অনেক আলেম হাদিসে উল্লেখিত ‘খাদ্যদ্রব্য’ এর ব্যাখ্যা করেছেন: গম। আবার কোন কোন আলেম বলেন: ‘খাদ্যদ্রব্য’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: কোন এলাকার মানুষ যে খাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত; সেটা গম হোক, যব হোক কিংবা অন্য কিছু হোক। এটাই সঠিক অভিমত। কারণ ফিতরা হচ্ছে- ধনীদের পক্ষ থেকে গরীবদের প্রতি সহমর্মিতার প্রকাশ। স্থানীয় খাদ্য ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করা মুসলমানের উপর ফরয নয়। বর্তমানে হারামাইনের দেশে ভাত হচ্ছে- প্রধান খাদ্য এবং এটি দামী ও ভাল খাদ্য। তাই যব এর চেয়ে চাউল দিয়ে ফিতরা দেয়া উত্তম; যদিও যব দিয়ে ফিতরা দেয়া জায়েয মর্মে দলিলে উল্লেখিত হয়েছে। এভাবে জানা গেল যে, চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই।[সমাপ্ত]

[মাজমু ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (১৪/২০০)]

শাইখুল ইসলাম (রহঃ) ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (২৫/৬৮) গ্রন্থে বলেন: “উল্লেখিত খাদ্যসমূহের কোনটি যদি কোন এলাকার মানুষের প্রধান খাদ্য হয়ে থাকে তাহলে সন্দেহাতীতভাবে সে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয। প্রশ্ন হচ্ছে- তারা অন্য যেসব খাদ্য গ্রহণ করে থাকে সেটা দিয়ে কি ফিতরা দেয়া যাবে? যেমন কারো প্রধান খাদ্য যদি হয় ভাত কিংবা ভূট্টা তারা গম কিংবা যব দিয়ে কি ফিতরা আদায় করতে পারবে? নাকি চাউল বা ভূট্টা দিতে হবে? এ বিষয়ে বিশাল মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে শুদ্ধ অভিমত হচ্ছে- হাদিসে উল্লেখিত শ্রেণীর মধ্যে না থাকলেও যেটা তাদের খাদ্য সেটা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে পারবে। এটি অধিকাংশ আলেমের অভিমত, যেমন- ইমাম শাফেয়ি ও অন্যান্য আলেম। কারণ ফিতরা ফরয করা হয়েছে দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতাস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন: “মধ্যম মানের খাদ্য যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী-পরিবারকে খাইয়ে থাক”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে এক স্বা’ খেজুর কিংবা এক স্বা’ যব ফরয করেছেন। কারণ তখন এগুলো ছিল মদিনাবাসীর খাদ্য। যদি এগুলো তাদের খাদ্য না হয়ে অন্য কিছু হত; তাহলে তাদেরকে তাদের খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে ফিতরা আদায় করার দায়িত্ব দিতেন না; যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা কাফফারার ক্ষেত্রে নির্দেশ দেননি।[কিছুটা পরিমার্জিতভাবে সমাপ্ত]

ঈদের নামাযে তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্যের কারণে তারা সে ইমামের পিছনে নামায পড়ে না


প্রশ্ন: ঈদের নামাযের তাকবীর কি ৬ টি; নাকি ১২ টি? কারণ এখানে এ মাসয়ালা নিয়ে হানাফী মাযহাবের অনুসারী ও সালাফীদের মধ্যে তীব্র বিরোধ হচ্ছে। সালাফীরা বলেন: ‘তারা কিছুতেই হানাফীদের পিছনে নামায পড়বে না; যদি তারা দুই রাকাত নামায ১২ তাকবীর দিয়ে পড়তে প্রস্তুত না থাকে’। অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে হানাফীরা এটি করতে প্রস্তুত নয়। এ কারণে একই স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঈদের নামায দুইবার পড়া হয়। এ ব্যাপারে শরিয়তের হুকুম কি? এ ক্ষেত্রে কোন মধ্যমপন্থী সমাধানে পৌঁছা কি সম্ভব; যাতে করে এক ঈদের নামায হানাফী মাযহাব অনুযায়ী পড়া হবে এবং দ্বিতীয় ঈদের নামায সালাফী মাযহাব অনুযায়ী পড়া হবে?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

এটি একটি ইজতাহিদী মাসয়ালা। এ নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও পরবর্তী ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য আছে এবং এ মাসয়ালায় ১০টিরও অধিক মতামত রয়েছে।

‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা’ (১৩/২০৯) তে এসেছে-

মালেকী ও হাম্বলি মাযহাবের আলেমগণ বলেন: ঈদের নামাযের প্রথম রাকাতে তাকবীর সংখ্যা ৬টি এবং দ্বিতীয় রাকাতে ৫টি। এটি মদিনার সাত ফকীহ, উমর ইবনে আব্দুল আযিয, যুহরী ও মুযানি থেকে বর্ণিত আছে।

বুঝা যাচ্ছে- প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমাকে তারা সপ্তম তাকবীর হিসেবে গণ্য করেন এবং দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর তাকবীরকে তারা বর্ণিত পাঁচটি তাকবীরের অতিরিক্ত তাকবীর হিসেবে গণ্য করেন।

আর হানাফী মাযহাবের অভিমত ও এক বর্ণনা মতে ইমাম আহমাদের মত হচ্ছে: দুই ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিতে হবে। প্রথম রাকাতে ৩ তাকবীর, দ্বিতীয় রাকাতে ৩ তাকবীর। এটি ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু মুসা আশআরী (রাঃ), হুযাইফাতুল ইয়ামান (রাঃ), উকবা বিন আমের (রাঃ), ইবনে যুবায়ের (রাঃ), আবু মাসউদ আল-বদরী (রাঃ), হাসান বসরী (রহঃ), মুহাম্মদ বিন সিরিন (রহঃ), ছাওরী (রহঃ), কুফার আলেমগণ ও এক বর্ণনা মতে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর অভিমত।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...