Wednesday 26 February 2020

ওয়াক্ত শুরুর পূর্বেই আজান দেওয়ার বিধান


·
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়া—
س:‏ ما حكم من أذن قبل دخول الوقت بعشر دقائق، وهل عليه الإعادة، أرجو الجواب‏؟‏ جزاكم الله خير الجزاء‏.‏
جـ‏:‏ لا يجوز الأذان قبل دخول الوقت، ومن أذن وتبين له أن أذانه وقع قبل دخول وقت الصلاة التي أذن لها وجب عليه أن يعيد الأذان بعد دخول الوقت، إلا صلاة الفجر فإنه يؤذن لها الأذان الأول قبل دخول الوقت، ثم يؤذن لها بعد دخول الوقت‏.‏ وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم‏.‏
প্রশ্ন: “ওয়াক্ত শুরু হওয়ার মিনিট দশেক আগেই যে ব্যক্তি আজান দিয়েছে, তার বিধান কী? তাকে কি পুনরায় আজান দিতে হবে? আমি (এ ব্যাপারে) উত্তর আশা করছি। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম পারিতোষিক দান করুন।”
উত্তর: “ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে আজান দেওয়া জায়েজ নয়। যে ব্যক্তি আজান দিয়েছে, এবং তার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, যেই নামাজের জন্য সে আজান দিয়েছে, সেই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বেই তার আজান সম্পন্ন হয়েছে, তাহলে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে পুনরায় আজান দেওয়া তার জন্য ওয়াজিব (আবশ্যক)। কেবল ফজরের নামাজ ব্যতীত। ফজরের নামাজের জন্য ওয়াক্ত শুরুর পূর্বে প্রথম আজান দিতে পারবে, এরপর ওয়াক্ত শুরু হলে (দ্বিতীয়) আজান দিবে। [১]
আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
ফতোয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ক্বা‘ঊদ (রাহিমাহুল্লাহ)।
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. যেহেতু হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, “বিলালের আজান যেন তোমাদেরকে সেহরি খাওয়াতে বাধা না দেয়।” (আবূ দাঊদ, হা/২৩৪৬; সনদ: সাহীহ) রাসূল ﷺ আরও বলেন, “ইবনে উম্মে মাকতূমের আজান না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা পানাহার করো। কারণ সে ফজর উদয় না হলে আজান দেয় না।” (সাহীহ বুখারী, হা/১৯১৮)
·
তথ্যসূত্র:
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, ফতোয়া নং: ৫৯৫৩; প্রশ্ন নং: ২০; গৃহীত: আল-ইমান ডট কম।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

Tuesday 25 February 2020

একটি বিভ্রান্তি ও তার অপনোদন


ইমাম ইসহাক (রহ।) কে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল সালাতে কয়টা ফরজ? জবাবে তিনি বলেছিলেন: ‘সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই অপরিহার্য। যেটা আমরা বলি সালাতে তাকবির থেকে সালাম পর্যন্ত সবই অপরিহার্য।’ তারপর তিনি বলেছেন –‘কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে সে বলবে সালাতের ৭টি কিংবা ৮টি ফরজ, অনুরুপ সুন্নাতও!’ অতপর তিনি বলেছেন –‘কোন ব্যক্তি যদি সালাতে ফরজ সুন্নাত ভাগ করে তবে জেনে রাখ এটা একটা বিদ’আত এবং সে ব্যক্তি বিদ’আতি।’ ক্ষমাসায়েলে ইমাম আহম্মদ ও ইসহাক -১৯১ পৃষ্টাঁ
অনুরূপ উক্ত ভাগাভাগিকে ইমাম ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) 'যিনদীক' (নাস্তিক)দের কথা বলেছেন। (সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' ৮/১১৪)
ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'নামাযের প্রত্যেকের কর্ম আমাদের নিকট ফরয।' (মানাক্বিবুশ শাফেয়ী)
আর এখান থেকেই অনেকে ধারণা করেন, যাঁরা নামাযের কর্মাবলীকে ফরয-সুন্নত ভাগাভাগি ক'রে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা কাফের বা বিদআতী। অনেকে ধারণা করেন, নামাযে রফয়ে-য়্যাদাইন ইত্যাদি (সুন্নতী আমল) না করলে নামায বাতিল!
জ্ঞানীরা প্রশ্ন করেন, তাহলে নামাযে ভুল হলে কোন ভুলের জন্য নামায বাতিল হয়ে যায়, কোন ভুলের জন্য সহু সিজদা করলে নামায শুদ্ধ হয়ে যায়, আবার কোন কোন ভুলের জন্য সহু সিজদাও দিতে হয় না এবং নামায শুদ্ধ হয়ে যাও। এ কথাও তো ইমাম ও উলামাগণ উল্লেখ করেছেন। তাহলে এর মানে কী?
ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াইহ (রাহিমাহুল্লাহ)ও স্পষ্ট বলেছেন, 'নামাযে যা কিছু (কথা ও কর্ম) আছে, সবই ওয়াজেব। অবশ্য তার কিছু বর্জন করলে নামায ফিরিয়ে পড়তে হয় এবং কিছু বর্জন না করলে নামায ফিরিয়ে পড়তে হয় না। (নামায শুদ্ধ হয়ে যায়।)'
তাহলে কেন তাঁরা এমন ঢালাও কথা বলে গেলেন?
এর উত্তরে ইবনে রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত, যেহেতু (নামাযের কোন অংশকে) 'সুন্নত' বললে এই পরিভাষা অনেক সময় তার প্রতি শৈথিল্য, অবজ্ঞা বা বর্জনের দিকে ঠেলে দেয়। আর সেটা হবে শরীয়তের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। যাতে আছে এমন বহু পদ্ধতিতে উৎসাহ প্রদান ও অনুপ্রেরণা দান, যার ফলে কর্ম করতে ও তার সওয়াব অর্জন করতে নামাযী উদ্বুদ্ধ হয়। আর 'ওয়াজেব' (বা ফরয) শব্দ প্রয়োগ করলে সেই কর্ম করতে এবং তাতে আগ্রহী হতে বেশি উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। (যদিও প্রকৃতপ্রস্তাবে সে কর্ম ওয়াজেব নয়।)
শরীয়তের পরিভাষায় এমন কর্মের ব্যাপারে 'ওয়াজেব' শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে, যা বর্জন করলে গোনাহ হয় না এবং অধিকাংশের মতে তার বর্জনকর্তা শাস্তিযোগ্য নয়। যেমন জুমআর গোসল এবং অনেক অথবা অধিকাংশ উলামার নিকট অর্ধ রাতের গোসল (উদ্দেশ্য অজানা)। এই গোসল ওয়াজেব বলার উদ্দেশ্য, তা করার উপর উৎসাহ ও তাকীদ প্রদান করা।' (জামেউল উলূমি ওয়াল-হিকাম ১/২৭৯)
এ মর্মে শায়খ মুহাম্মাদ বিন উষাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'কোন মানুষের জন্য সঙ্গত নয়, যখন সে রসূল ﷺ-এর নির্দেশ শুনবে, তখন জিজ্ঞাসা করবে, তা ওয়াজিব না মুস্তাহাব? যেহেতু তিনি বলেছেন,
(( فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيءٍ فَأتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَن شَيْءٍ فَدَعُوهُ ))।

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...