Tuesday 12 August 2014

যে ব্যক্তি জীবনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে তার তওবা শুদ্ধ হবে।

প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তির জিন্দেগী রাশি রাশি পাপে ভরপুর। বর্তমানে সে এক জটিল রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা নেয়ার বহু চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। ডাক্তার বলেছেন, এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। এ পর্যায়ে এসে তিনি অত্যন্ত অনুতপ্ত এবং গুনাহ থেকে তওবা করতে ইচ্ছুক। যে রোগ থেকে মুক্তির আশা নেই এমন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত এই ব্যক্তির তওবা কী শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ
 যে ব্যক্তি জীবনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে তার তওবা শুদ্ধ হবে। তার এ নিরাশার কারণ কোন রোগ হোক যেমন- ক্যান্সার। অথবা হত্যার শাস্তি তথা শিরোচ্ছেদের মুখোমুখি হওয়া এবং জল্লাদ তলোয়ার নিয়ে তার মাথার উপরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হোক। অথবা বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচারের শাস্তি তথা পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য পাথর স্তূপ করার কারণে হোক। এদের সবার তওবা শুদ্ধ হবে। কেননা মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন।

দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেনযারা ভলবশতঃ মন্দ কাজ করেঅতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করেএরাই হল সেসব লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানীরহস্যবিদ[সূরা নিসা, আয়াত ১৭]।
অনতিবিলম্বে তওবা করে এ কথার অর্থ হলো- মৃত্যুর আগে তওবা করে।
যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
আর এমন লোকদের জন্য তওবা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি। [সূরা নিসা, আয়াত ১৮]
 কিন্তু তওবার পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো পূর্ণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- ইখলাস (অকপটতা), কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, অনতিবিলম্বে পাপ ছেড়ে দেওয়া, ভবিষ্যতে পুনরায় গুনাহ না-করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা। অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে।
শাইখ উছাইমীনের “লিকাউল বাব আল-মাফতুহ” ৫৩/৭৩
প্রশ্নঃ আমি প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নারী হতে চাই। আমি কিভাবে শুরু করতে পারি। আমি এখনও সে রকম খারাপ নই। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সবগুলো পড়া হয় না। এখনো পুরোপুরি ইসলামি পোশাক পরিধান করি না। আমি এখন কিভাবে শুরু করব।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
প্রকৃত ইসলাম মানে ইসলামের সকল হুকুম-আহকাম মেনে চলা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- নামায। যেহেতু নামায হচ্ছে- ইসলাম ধর্মের ভিত্তিমূল। কেয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নামায হচ্ছে- ঈমানদার ও কাফেরের মাঝে পার্থক্যকারী অঙ্গীকার। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করে সে কাফের। তাই আপনার অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে- যথাসময়ে নামায আদায় করা এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ অবহেলা না-করা।
এরপর শরিয়তের অন্যসব বিধিবিধান পালন করাও আপনার কর্তব্য। যেমন- হিজাব। যেসব উপায় উপকরণ গ্রহণ করলে ইসলামি বিধিবিধান পালন করা সহজ হয় তার মধ্যে রয়েছে- কুরআন তেলাওয়াত করা, নবীর সিরাত পড়া, নেককারদের জীবনী ও তাদের বিভিন্ন ঘটনা পড়া এবং আমরা আপনাকে কিছু মুসলিম সৎ বান্ধবী নির্বাচন করার উপদেশ দিচ্ছি। সৎসর্গের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি ইসলামের উপর অবিচল থাকতে পারবেন।
প্রিয় বোন, আপনার উচিত হবে- আত্মসমালোচনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।[সূরা হাশর, ৫৯:১৮]
এই আয়াতে দুই দুই বার আল্লাহকে ভয় করার (তাকওয়ার) নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এ দুই নির্দেশের মাঝে আত্মসমালোচনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভেবে দেখুন, আগামীকালের জন্য আপনি কি কি ভালকাজ করেছেন এবং কি কি মন্দকাজ পরিহার করেছেন। এই আত্মসমালোচনা নিজেকে পরিবর্তন করার সবচেয় বড় উপায়। কেয়ামতের দিন বড় কঠিন, অতি দীর্ঘ, চরম ভীতিপ্রদ, সেই দিন চেহারাগুলো ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। সুতরাং ভেবে দেখুন আপনি সেই দিনের জন্য কী কী নেক আমল প্রস্তুত করতে পেরেছেন। বেশী বেশী নেক আমল করুন। নিয়্যতকে একনিষ্ঠ করুন। সব ধরনের পাপাকার্য ছেড়ে দিন। পাপ কামাই হচ্ছে- সেদিনের সবচেয়ে মন্দ প্রস্তুতি। আপনি আপনার সবচেয়ে ভাল আমল নিয়ে আখেরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার চেষ্টা করুন। আল্লাহর নিকট দোয়া করতে ভুলে যাবেন না। যেন আল্লাহ আপনাকে সরল পথের হেদায়েত দেন এবং এর উপর আপনাকে অবিচল রাখেন।
আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য ও আপনার জন্য তাওফিক প্রার্থনা করছি, হেদায়েত ও ভাল মৃত্যুর দোয়া করছি। আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
ইসলামিক প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...