Thursday 7 August 2014

“তাগুত” কাকে বলে?



আল্লাহ তাআ'লা মানুষের প্রতি ১ নাম্বার আদেশ করেছেন - একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য ও সমস্ত তাগুত থেকে দূরে থাকার জন্য। 

"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক"।
সুরা আন-নাহলঃ ৩৬। 

*আল্লাহ তাআ'লা এই আদেশ সমস্ত নবী ও তাদের উম্মতকেই করেছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ তাগুত কি? তাগুত কারা?

আপনি যদি তাগুত না চিনেন তাহলে কি করে তাগুত থেকে বেঁচে থাকবেন?

যারা তাগুত কি জানেন না, আপনি কি বুঝতে পারছেন - ইসলাম শিক্ষার দিক থেকে আপনি কতটা পেছনে। এমন হতে পারে অজ্ঞতাবশত আপনি হয়তো কোনো এক তাগুতের শিরকে লিপ্ত (নাউযুবিল্লাহ)!

ইসলাম শেখা জরুরি - আর আপনি মনে করবেন না - শুধু ফেইসবুকে ২-৪টা পোস্ট পড়েই ইসলাম শিখে ফেলবেন। এর জন্য আপনাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে, ছোট্ট এই জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেই সময় বের করে সত্যিকারের আলেমদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

তাগুতের অনুসরন করা শির্ক ও কুফুরীঃ



তাগুত শব্দ এসেছে “তাগা” যার অর্থ “সীমা লংঘন করা”, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এবং যে এতে রাজি-খুশি থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়।

তাগুত এর সংজ্ঞাঃ
১. আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তির ইবাদত করা হয় আর সে তার ইবাদতে সন্তুষ্ট থাকে তাকেই তাগুত বলে।
২. প্রত্যেক অনুসৃত অথবা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করা হয় তাদেরকেও তাগুত বলা হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
“আমি প্রত্যেক উম্মাত(জাতির) কাছেই রাসুল পাঠিয়েছি, যেন তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বেচে থাকে।
সুরা আন-নাহলঃ ৩৬।

তাগুত কত প্রকার?
তাগুত অনেক প্রকারের আছে তার থেকে প্রধান ৫ প্রকার উল্লেখ করা হলোঃ
১. ইবলিশঃ সে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে আহব্বান করে।
“হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।
সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১।

২. আল্লাহর আইন বিরোধী অত্যাচারী শাসকঃ যে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে দেয় এবং মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র কায়েম করে। যেমন কেউ যদি বলে, “চোরের শাস্তি হাত কাটা বর্বরতা, হত্যার শাস্তি (কেসাস), জিনার শাস্তি (রজম) বর্তমান যুগে চলবেনা”...আল্লাহ কি বলেছেন দেখুনঃ

“হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।”
সুরা বাকারাহঃ ১৭৮-১৭৯।

“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যেঃ যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ করা হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাগুতকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।
সুরা আন-নিসাঃ ৬০-৬১।

“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (নবী সাঃ কে) ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে”।
সুরা আন-নিসাঃ ৬৫।

৩. আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন (কুরআন+সুন্নাহ) তা বাদ দিয়ে যে বিচারক/শাসক বা নেতাগন অন্য আইন/বিধান/সংবিধান দিয়ে ফয়সালা করে। যেমন কুরান-হাদীস বিরোধী কোনো আইন রায়, কিয়াস, কারো ফতোয়া, অলিদের কথা, পীর মাশায়েখর কথা মানা, সংসদে আইন পাশ করে সমাজে চাপিয়ে দেয়া এবং বিজাতিদের মন গড়া সংবিধান মানা। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
“যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের”।
সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪৪।

৪. যে “ইলমে গায়েব” বা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে জ্যোতিষী, গণক, রাশি-চক্র ইত্যাদি। যেমন আল্লাহ বলেনঃ

“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”।
সুরা আনআ’মঃ ৫৯।

৫. আল্লাহ ছড়া যার ইবাদত/পূজা/উপাসনা করা হয়, এবং এতে যে রাজী-খুশি থাকে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে সেইন্ট, ঠাকুর, পীর-ফকির, ধর্মীয় গুরু, নেতা ইত্যাদি যাদেরকে পূজা করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেনঃ

“তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি”।
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯।
মূলঃ শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রাহিমাহুল্লাহ)

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...